Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

অভিবাদনের আদবকেতা: নানান দেশের নানা রীতি

কারো সাথে প্রথম দেখা হলে আপনি কী করেন? করমর্দন (হ্যান্ডশেক) করে ‘হ্যালো’ বলেন কিংবা কোলাকুলি করে কুশলাদি জিজ্ঞাসা করেন। এটি আপনার কাছে একটি সাধারণ ভদ্রতা, কিন্তু একজন তিব্বতী কিংবা জাপানী ব্যক্তির কাছে অভদ্রতাও মনে হতে পারে। মুহূর্তেই সেই অচেনা মানুষটির নিকট আপনি হয়ে যেতে পারেন একজন অভাজন। কারণ ‘যস্মিন দেশে যদাচার’ বলে কথা। তাই আজ আমরা জানবো বিভিন্ন দেশের একটু ভিন্ন ধারার কিছু আদবকেতা কিংবা অভিবাদন ও শুভেচ্ছা জানানোর পদ্ধতি সম্পর্কে। বিশ্বভ্রমণে বের হলে কাজে লাগতে পারে আজকের লেখাটি।

তিব্বতী অভিবাদন

মনে করুন, আপনি তীব্বতের অপরূপ সৌন্দর্য অবলোকন করতে কোনো এক তিব্বতী গ্রামে উপস্থিত হলেন। খেয়াল করলেন, আপনাকে দেখে আশেপাশের লোকজন জিহ্বা বের করে তাকিয়ে আছে। নিশ্চয়ই অবাক হবেন কিংবা ভাববেন আপনাকে দেখতে কি খাবারের মতো লাগছে কিংবা অচেনা এই মানুষগুলো কি আপনাকে ভেঙাচ্ছে? কিন্তু ব্যাপারটি মোটেও তা নয়। তিব্বতী এই সাধারণ মানুষগুলো আপনাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। জিহ্বা বের করে অভিবাদন জানানো তিব্বতের এক প্রাচীন রীতি। এর পেছনে কারণও রয়েছে।

এভাবেই জিহ্বা বের করে তিব্বতীরা অন্তরের বিশুদ্ধতা প্রকাশ করে; Source: poltrips.com

খ্রিষ্টীয় অষ্টম শতকের মাঝামাঝি সময়ে লাং দারমা নামক এক অত্যাচারী রাজা তিব্বত শাসন করতো। শাসনের নামে বৌদ্ধধর্মালম্বীদের উপর ভয়ঙ্কর নির্যাতন চালিয়েছিলো এই রাজা। পরে এক বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর হাতেই দারমার মৃত্যু হয়। লাং দারমার জিহ্বার রঙ ছিলো কালো। পুনর্জন্মে বিশ্বাসী তিব্বতীরা মনে করে, অজানা-অচেনা কিংবা চেনাজানা কারো মাঝেই যেকোনো সময় লাং দারমার পুনর্জন্ম হতে পারে। আর তাদের অন্তর যে পঙ্কিলতামুক্ত, সেটি প্রদর্শন করতেই নিজেদের জিহ্বা প্রদর্শন করে তারা।

ওরা কিন্তু আপনাকে ভেঙাচ্ছে না! Source: thewonderlist.net

আবার কারো কারো মতে, শয়তান বা খারাপ আত্মার জিহ্বার রঙ কালো হয় কিন্তু বাকি সব অঙ্গ প্রত্যঙ্গ মানুষের মতোই দেখতে। প্রথম দর্শনে মানুষ থেকে এদের আলাদা করা মুশকিল। তাই জিহ্বা দেখে নেওয়ার এই রীতি আজও তিব্বতে প্রচলিত।

আফ্রিকান আদবকেতা

আফ্রিকা মহাদেশের কিছু কিছু দেশে পিতা-মাতা, সম্মানিত ব্যক্তি কিংবা গুরুজনের পায়ের উপর প্রায় শুয়ে পড়ে কিংবা হাত এবং হাঁটুর উপর ভার দিয়ে পায়ের কাছে মাথানত করে সম্মান প্রদর্শনের প্রথা রয়েছে। বেশ কিছুকাল আগেও ছেলেদের একদম শুয়ে আর মেয়েদের হাঁটু গেড়ে মাথানত করে সম্মান প্রদর্শনের প্রথা চালু ছিল। আফ্রিকার সেসব অঞ্চলে ছেলেমেয়েরা সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথমে বাবা-মায়ের পায়ের কাছে শুয়ে কিংবা হাঁটু গেড়ে রাতে বাবা-মায়ের ঘুম কেমন হয়েছে, শারীরিক অবস্থা ও অন্যান্য কুশলাদি জিজ্ঞাসা করে। তারপর বাবা-মা কিংবা গুরুজন মাথার উপর হাত দিয়ে আশীর্বাদ জানান কিংবা কিছু বলার থাকলে বলেন। তারপর ওঠার জন্য বললে উঠতে হয়।

হাঁটু গেড়ে কিংবা প্রায় শুয়ে পড়ে সম্মান জানানো হয় বয়োজ্যেষ্ঠদের; Source: photographybyobi.co.uk

কেউ যদি গুরুজন বলার আগেই উঠে পড়ে বা তাড়াহুড়ো ভাব দেখায়, তাহলে তা অভদ্রতার লক্ষণ হিসেবে দেখা হতো। কিন্তু বর্তমানে এসব আচার-প্রথা প্রায় উঠে গেছে বললেই চলে। এখন শুধু ক্ষণিকের জন্য হাঁটু গেড়ে বসে সম্মান জানানো হয়।

তবে যে কাজ কখনোই করার কথা ভাববেনও না সেটি হলো- গুরুজন, বয়োজ্যেষ্ঠদের সাথে করমর্দন এবং কোলাকুলি করা। এটি সেখানে চুড়ান্ত অভদ্রতা হিসেবে পরিগণিত হয়।

নিউজিল্যান্ডের হোঙ্গি

নাকের সাথে নাক এবং কপালে কপাল মেলানোকে ‘হোঙ্গি’ বলে। হোঙ্গি প্রথাটি এসেছে নিউজিল্যান্ডের মাওরি আদিবাসীর এক উপকথা থেকে। উপকথা মতে, দেবতাদের দল নারীদেরকে পৃথিবীর মাটি দিয়ে গড়েছেন। কিন্তু কেউই সেই নারীদের মাঝে প্রাণ সঞ্চার করতে পারছিলেন না। এমন দুর্দিনে দেবতা ‘টেইন’ এগিয়ে এলেন। তিনি একটি নারী মূর্তি নিলেন। একে নিজের নাকের কাছে এনে নিঃশ্বাস দিলেন। সেই নিঃশ্বাস নারীমূর্তির নাক দিয়ে দেহে প্রবেশ করে। এতে নারীমূর্তি আর মূর্তি রইলো না। তার দেহে প্রাণ সঞ্চার হলো। দেবতারা খুশি হয়ে সেই নারীর নাম দিলেন হিনিয়াহুন।

হোঙ্গি; Source: dailymail.co.uk

নিউজিল্যান্ডে প্রথম দর্শন কিংবা সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে হোঙ্গি করমর্দনের চেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে। হিনিয়াহুনের দেহে দেবতার নিঃশ্বাস প্রাণের স্পন্দন সৃষ্টি করে বলে তাদের ধারণা, হোঙ্গির মাধ্যমে নিঃশ্বাসের আদান প্রদান হলে একে অপরের হৃদস্পন্দন অনুভব করবে। এতে হৃদ্যতা বাড়বে। নাকে নাক এবং কপালে কপাল মেলানোর পাশাপাশি করমর্দন হোঙ্গির আবেদনকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যায়। এ ধরনের হোঙ্গি আপনার আন্তরিকতাকে প্রকাশ করে।

মঙ্গোলীয় হাদা

মঙ্গোলিয়ায় কোনো অচেনা ব্যক্তিকে অভ্যর্থনা করা হয় ‘হাদা’ দিয়ে। হাদা হলো সিল্ক বা কটনের তৈরি কাপড়ের টুকরো বা হাওয়াই লেইস ফিতা।

হাদা গ্রহণ, Source: den-sharing.com

তবে এই কাপড়ের টুকরা যেমন-তেমনভাবে নিতে পারবেন না বা নেওয়ার সময় শুধু ‘ধন্যবাদ’ দিলেই চলবে না। হাদা গ্রহণের সময় অবশ্যই আপনাকে মাথা নুইয়ে দুই হাত সামনে বাড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করেতে হবে। আপনি চাইলে ভদ্রতাস্বরূপ চুরুট এবং নস্যির কৌটাও উপহার দিতে পারেন।

কেনিয়ার লাফানো নৃত্য

কেনিয়া ভ্রমণে গেলে মাসাই সম্প্রদায়ের ‘আদুমু’ বা লাফানো নাচ (Jumping Dance) অবশ্যই দেখবেন। গোত্রে কিংবা এলাকায় অতিথি কিংবা ভ্রমণকারীদের আগমনকে সম্মান জানাতে মাসাই সম্প্রদায়ের বীরেরা এই নাচ করে থাকে। সাধারণত নাচের শুরু হয় কোনো এক গল্প কিংবা উপকথা থেকে, তারপর তা শেষ হয় লাফালাফিতে। নাচের পর শুরু হয় লাফানোর প্রতিযোগিতা। কে কার চেয়ে কত উঁচুতে লাফ দিতে পারে, তা নিয়ে হয় এক অদম্য লড়াই।

কেনিয়ার মাসাই জাতির আদুমু নৃত্য; Source:safarijunkie.com

ভ্রমণকারী হিসেবে আপনাকে একটি ব্যাপার জানিয়ে রাখা ভালো। অভ্যর্থনা জানানোর এই নাচের শুরুতে মাসাইরা গরুর দুধ এবং রক্তের মিশ্রণে একটি পানীয় পান করে। স্বাভাবিকভাবেই আপনাকেও তা পান করতে দেওয়া হবে। খাবেন কি খাবেন না, সেটি আপনার মর্জি। সেই পানীয় পান না করতে পারেন, তবে তাদের রীতির প্রতি কোনোরূপ অসম্মান না করাটাই আপনার ভদ্রতার পরিচয় দেবে।

গ্রিনল্যান্ডের কুনিক

গ্রিনল্যান্ড সহ আর্কটিক বিভিন্ন অঞ্চলে অভিবাদন জানানোর অন্যতম প্রথা হলো ‘কুনিক’। নাক এবং ঠোঁটের উপরের অংশ দিয়ে স্পর্শ করা কিংবা এক ধরনের চুমু সদৃশ অভিবাদনকে কুনিক বলে। এখানে খুব সূক্ষ্ম একটি বিষয় রয়েছে। এই চুমু দেওয়ার সময় অপরের গালে যেন একটি নিঃশ্বাস হলেও পড়ে, সেটি খেয়াল রাখতে হবে।

কুনিক বা এস্কিমো চুমু; Source: worldwithtj.wordpress.com

পশ্চিমা অনেক দেশে একে এস্কিমো চুমুও বলে। এস্কিমোরা পরিবারের সদস্য কিংবা ভালোবাসার মানুষদের প্রতি সম্মান ও ভালবাসা প্রদর্শনে এই চুমুটি দিয়ে থাকে। যে কাজটি অবশ্যই করবেন না তা হলো- আপনার যদি সর্দি হয় তাহলে অবশ্যই কুনিক করবেন না। কারণ, প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় আপনার সর্দি আক্রান্ত নাকের একটি নিঃশ্বাস অপর ব্যক্তির জন্য হতে পারে ভয়ঙ্কর কিছু।

ফিলিপাইনের মানো

ফিলিপাইনে বয়োজ্যেষ্ঠ কিংবা অচেনা কাউকে সম্মান জানানো হয় ‘মানো’র মাধ্যমে। এতে ছোটরা মাথা নিচু করে এবং ডান হাত দিয়ে বড়দের ডান হাতের উল্টো পিঠ নিজেদের কপালে ঠেকায়।

ফিলিপাইনে বয়োজ্যেষ্ঠ কিংবা অচেনা কাউকে সম্মান জানানো হয় ‘মানো’র মাধ্যমে; Source: sometag.com

আপনি যদি ফিলিপাইন ভ্রমণে যান, তাহলে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন আপনার হাত যেন অন্যের মাথায় টোকা না দেয়। অর্থাৎ খুব ধীরে অপরের কপাল স্পর্শ করবেন। কাজটি দ্রুত করতে গেলে কপালে টোকা লাগতে পারে। এতে বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে পারেন।

ট্যুভেলুর অভিবাদন

পলিনেশিয়ান এই দ্বীপের অভিবাদন জানানোর কায়দাটি অন্যান্য দেশের মতো, তবে এর একটি বিশেষত্ব রয়েছে। নিজের গালের সাথে অন্যের থুতনি ঠেসে ধরে জোরে নিঃশ্বাস নেওয়াটাই এখানকার প্রথা। তবে অবশ্যই এর আগে পেঁয়াজ খাবেন না।

নিজের গালের সাথে অন্যের থুতনি ঠেসে ধরে জোরে নিঃশ্বাস নেওয়াটাই এখানকার প্রথা; Source: mashable.com

আশা করি, বিদেশ ভ্রমণের আগে সেসব দেশের সংস্কৃতি এবং আদব কেতা সম্পর্কে ধারণা নিয়ে যাবেন। এতে যেমন ভিনদেশীদের নিকট সমাদৃত হবেন, তেমনি পড়তে হবে না কোনো বিব্রতকর পরিস্থিতিতে।

ফিচার ইমেজ – thewonderlist.net

Related Articles