Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

কনজুরিং ইউনিভার্স: গোথিক রোমানিয়া থেকে বৃষ্টিস্নাত ইংল্যান্ড

১৯৭১ সাল। ইংল্যান্ডের রোড আইল্যান্ডে অবস্থিত একটি ফার্ম হাউজকে কেন্দ্র করে এ সালের একটি গল্প খুবই জনপ্রিয়। গল্পটি একটি পরিবার ও অস্বাভাবিক কর্মকান্ডের। সত্যিকার প্যারানরমাল কার্যকলাপের তদন্তকারী এখন এই উন্নত দুনিয়ায় দেখা পাওয়া যায় না। তবে সেসময় খুব জনপ্রিয় এক দম্পতি জড়িত ছিলেন এই কাজে। তারা এসেছিলেনও এই রোড আইল্যান্ডের ভূতুড়ে ফার্ম হাউজে।

এড ওয়ারেন ও লরেইন ওয়ারেন নামক সেই দম্পতির প্যারানরমাল তদন্তের শতাধিক কেস আছে। তাদের ভাষায়, একটি ঘটনা খুবই বিপদজনক ও বিতর্কিত। তারা সেই ঘটনাকে প্রকাশ করতে রাজি ছিলেন না। এখনও পর্যন্ত সেই কেস ফাইল সবার জন্য উন্মোচিত নয়। ১৯৭১ সালের “পেরন ফ্যামিলি হান্টিং” নামক কেস ফাইল পরিচালক জেমস ওয়ানকে খুবই অভিভূত করেছিলো। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, এ ঘটনাকে সিনেমার পর্দায় আনবেন। অনেক চেষ্টার পর তিনি ২০১৩ সালে প্যাট্রিক উইলসন ও ভেরা ফার্মিগোকে মূল চরিত্র করে ‘দ্য কনজুরিং’ নামে একটি সিনেমা নির্মাণ করেন।

হরর সিনেমার জগতে আলোড়ন সৃষ্টি হয়ে যায় এর মাধ্যমে, জন্ম নেয় বিখ্যাত কনজুরিং ইউনিভার্স, যাকে অনেকেই বলেন হরর সিনেমার জগতের এমসিইউ ইউনিভার্স। কারণ প্রথম সিনেমায় জেমস ওয়ান দর্শককে কৌতূহলী করার জন্য অনেক উপাদান রেখেছেন, অনেক প্রশ্ন রেখেছেন অসমাপ্ত। এবং পরের সিনেমার কাহিনীকে আগে-পিছে করে সৃষ্টি করেছেন নানা ধোঁয়াশা এবং উত্তর দিয়েছেন পরের সিনেমাতে, যেমনটা মারভেল সিনেমাটিক ইউনিভার্স করে থাকে।

আসল ওয়ারেন দম্পতি; Image Source: Getty Image

এই কনজুরিং ইউনিভার্সের সাথে সত্য, অতীত ও কল্পিত গল্পের মিশ্রণ আছে। আছে প্রাচীন লোকগাঁথাও। যদি শুনতে হয় সেসব গল্প, ফিরে যেতে হবে একদম অতীতে। শুরু করতে হবে একদম প্রথম থেকে, যেখানে এমন ভয়াল চরিত্র ও অবিশ্বাস্য গল্পের জন্ম।

দ্য নান (রোমানিয়া, ১৯৫২)

কনজুরিং ২ সিনেমার শুটিং ততদিনে শেষ। কিন্তু পরিচালক তার সিনেমার ভিলেনের অবয়ব তৈরি করতে পারেননি। তিনি কিছুটা ভিন্নতা চাচ্ছিলেন। এ বিষয়ে লরেন ওয়ারেনের শরণাপন্ন হন। লরেন তার জীবনের একটি ঘটনা জানান জেমন ওয়ানকে। তিনি একবার কোনো অতিপ্রাকৃত কিছুর দ্বারা আক্রমণের শিকার হয়েছিলেন। এবং তা দেখতে ছিলো ঘোমটা ঢাকা ও হুড জাতীয় কালো পোশাকের। লরেন ওয়ারেনের এ অভিজ্ঞতা থেকে পরিচালক খুঁজে পান ‘দ্য নান/ ভ্যালাক’ চরিত্র।

 কনজুরিং ২ সিনেমায় ভ্যালাক ডেমন; Image Source: Wallscover

১৭ শতকের তান্ত্রিক ও মন্ত্রসাধকদের গ্রন্থে এ নাম উল্লেখ আছে। কিন্তু দেখতে কেমন তার কোনো বিবরণ নেই। এ গ্রন্থে ৭২টি শয়তানের নাম উল্লেখ আছে তাদের পদবীসহ। এগুলোর ভেতর ‘ভ্যালাক’ হচ্ছে ৬২ তম, যার পদবী ‘নরকের প্রধানমন্ত্রী’। এই শয়তানকে বিভিন্ন গোপন  গুপ্তধন খুঁজে পাবার জন্য কালো জাদুর সাহায্যে ডাকা হয়। তবে ভ্যালাকের বিশেষত্ব হলো, সে তখনই আসে, যখন যে ডাকছে সে তার সাথে শক্তি আদান-প্রদানে রাজি হয়।

‘দ্য নান’ সিনেমার ঘটনা ১৯৫২ সালের রোমানিয়ার প্রেক্ষাপটে নির্মিত। ক্যাথলিক চার্চে সিস্টার ভিক্টোরিয়ার আকস্মিক আত্মহত্যার খবর শুনে একজন পাদ্রী ও চার্চের সিস্টার আসেন ঘটনার তদন্ত করতে। এভাবেই গল্পের কাহিনী শুরু হয়। এ গল্পের সাথে কনজুরিং ১ ও ২ এর সরাসরি সম্পর্ক আছে। দ্য নান কনজুরিং ১ এর একটি ভিডিও ফুটেজের ঘটনা বর্ণনা করে ও কীভাবে ওয়ারেন দম্পতির সাথে ভ্যালাক যুক্ত হয় তার বিশদ বিবরণ দেয়।

গল্পকে ছাপিয়ে দ্য নান সিনেমায় ক্যামেরার কাজ ছিলো দারুণ; Image Source: Warner Bros. Pictures

অ্যানাবেলা ক্রিয়েশন (দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া,১৯৫৫)

টাইমলাইন ঠিক রাখার জন্য অ্যানাবেলা ক্রিয়েশন সিনেমায় ১৯৫৫ সালের গল্প বলা হয়েছে। যদিও এ সিনেমা দ্য কনজুরিং ও অ্যানাবেলা সিনেমার সরাসরি প্রিকুয়েল। অ্যানাবেলা সিনেমাতে অ্যানাবেলা নামক ভূতুড়ে পুতুলের কর্মকান্ড দেখালেও অ্যানাবেলা ক্রিয়েশনে দেখানো হয়েছে পুতুলটি কীভাবে এমন ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। তবে অ্যানাবেলা পুতুল নিয়ে যে কাহিনী সবথেকে বেশি পরিচিত সেটা ১৯৭০ সালের ঘটনা। এখানেও ওয়ারেন দম্পতি জড়িত।

সিনেমায় দেখানো  অ্যানাবেলা পুতুল ; Image Source: IMDb

গল্পটি ডোনা নামক এক কিশোরীকে কেন্দ্র করে। তার মা তার জন্মদিনে একদম বিশেষত্বহীন একটি পুতুল উপহার দেন। যদিও সেই পুতুলটি সিনেমায় দেখানো পুতুলের মতো কুৎসিত নয়। পুতুলটি পাবার কয়েকদিনের মাথায় ডোনা কিছু অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করে। তার ভাষ্যমতে, পুতুলটি একা একা স্থান পরিবর্তন করতো। এবং তার জায়গা বদল এতটাই চোখে লাগার মতো যে, মনে হতো পুতুলটি সারা বাড়ি ঘুরে দেখছে।

ওয়ারেন দম্পতির অকাল্ট মিউজিয়ামে রাখা আসল পুতুলটি; Image Source: Getty Image

ডোনার সাথে থাকা অ্যানজিও এ বিষয়গুলো টের পান। এমনকি অনুভবও করতে পারেন। তাদের বন্ধু লৌ পুতুলকে ঘৃণার চোখে দেখার পর কয়েকটি অতিপ্রাকৃত ঘটনার সম্মুখীন হন। বিষয়টি অতিরিক্ত পর্যায়ে চলে যাবার পর ডোনারা স্থানীয় পাদ্রীর সহায়তা চান। কিন্তু পাদ্রী ব্যর্থ হবার পর তিনি ডেকে আনেন ওয়ারেন দম্পতিকে।

অ্যানাবেলা ক্রিয়েশন সিনেমার একটি দৃশ্য; Image Source: Warner Bros. Pictures 

ওয়ারেন দম্পতি এক্সরসিজম করেন। সাথে বের করেন কিছু তথ্য। বর্তমানে ডোনারা যে বাড়িতে থাকেন, সেখানে আগে একটি খেলার মাঠ ছিলো। সে মাঠেই রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয় এক মেয়ের, নাম অ্যানাবেলা হিগিন্স। তারই আত্মা রয়েছে ঐ পুতুলের ভেতরে। যদিও অ্যানাবেলা কাউকে ক্ষতি করেনি, সে শুধু ডোনা ও অ্যানজির সাথে থাকতে চেয়েছিলো। কিন্তু ভূতুড়ে পুতুল আর ডোনা রাখতে রাজি হয়নি। এরপর থেকে এই রহস্যময় পুতুল ওয়ারেন দম্পতির অকাল্ট মিউজিয়ামে বিশেষ স্থানে সংরক্ষিত আছে।

অ্যানাবেলা (সান্তা মনিকা, ১৯৬৭)

কনজুরিং ইউনিভার্সে প্রথম অ্যানাবেলার আগমন দেখানো হয়েছিলো এই সিনেমা দিয়ে। এরপরই রিলিজ পায় অ্যানাবেলা ক্রিয়েশন। তাই অ্যানাবেলা রিলিজের সময় ঐ পুতুল কোথা থেকে এসেছিলো বা রহস্য কী তা কেউ জানতো না। তাই এ সিনেমাটি শুধুমাত্র কল্পনাপ্রসূত একটি গল্প।

অ্যানাবেলা সিনেমার দৃশ্য; Image Source: Warner Bros. Pictures

তবে গল্প হলেও বেশ কিছু দিক ও রহস্যে কারণে এ সিনেমাটি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সিনেমা চলাকালীন সময়ে বা শেষ হবার পরও যেসব প্রশ্নের উত্তর দরকার ছিলো, তা পরবর্তী সিনেমাগুলোতে ঠিকই দেওয়া হয়ে গেছে। আর যখন অ্যানাবেলা ক্রিয়েশন মুক্তি পায়, তখনই অ্যানাবেলা পুতুলের ইতিহাস নিয়ে পরিপূর্ণ দুটি সিনেমা খুঁজে পাওয়া যায়।

দ্য কনজুরিং (রোড আইল্যান্ড,১৯৭১)

এটি কনজুরিং ইউনিভার্সের প্রথম সিনেমা, যা নির্মাণ করা হয় ১৯৭১ সালে একটি পরিবারের ভূতুড়ে কর্মকান্ডকে কেন্দ্র করে। সিনেমায় পেরন পরিবারের সেই ঘটনা সত্যের সাথে কিছুটা কল্পনা মিশ্রিত হলেও ইতিহাসমতে এ কাহিনী অনেকাংশে সত্য।

১৯৭১ সালের জানুয়ারিতে, ক্যারোলিন ও রজার তাদের পাঁচ ছেলে-মেয়ে নিয়ে রোড আইল্যান্ডের ১৫ কক্ষবিশিষ্ঠ নতুন ফার্ম হাউজে এসে থাকা শুরু করেন। নতুন বাড়িতে আসার কয়েক দিনের ভেতরই তারা অদ্ভুত কিছু অনুভব করতে থাকেন। যেন তাদের সাথে বাস করছে কেউ একজন। সে তাদের সবসময়ে নজরে রাখছে এবং কর্মকান্ড অনুসরণ করছে।

আসল পেরন পরিবার; Image Source: Youtube

ঘটনার শুরু হয়েছিলো খুবই আস্তে আস্তে। ক্যারোলিন পেরন দেখতেন বাড়িতে কোনো জিনিস কোথাও রাখলে সেটা সবসময় সেখানে থাকছে না। রান্নাঘরে নানা রকম শব্দ হতো, অথচ সেখানে কেউ নেই। ধীরে ধীরে ঘটনা আরো ভয়াবহ হতে থাকলো যখন এসব কর্মকান্ড অনুভব করতে লাগলো তাদের ছেলেমেয়েরা। তারা কয়েকদিনেই বুঝেছিলো এ বাড়িতে অশরীরী কিছু আছে এবং সে ক্রোধের আগুনে জ্বলছে।

ক্যারোলিন বাড়ির ইতিহাস ঘাটতে শুরু করেন। তিনি খুঁজে পান, তাদের আসার আগে আটটি পরিবার এমন ঘটনার শিকার হয়েছিলো। তাদের পরিবারের অনেকের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে, অনেকে বিনা কারণে আত্মহত্যাও করেছেন। আরও ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে পেরন পরিবার খুঁজে পায় বাথসেবা শেরম্যান নামক একজন মহিলার কথা। তিনি এই ফার্ম হাউজেই থাকতেন এবং মন্ত্রসাধনা ও কালো জাদুর সাথে জড়িত ছিলেন। এমনকি এই সাধনায় তিনি একবার এক কিশোরীর প্রাণ পর্যন্ত ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। শুধুমাত্র সঠিকভাবে কেউ প্রমাণ করতে পারেনি বলে বাথসেবা পার পেয়ে যান। ১৮০০ শতকের দিকে তাকে অনেকে ডাইনী বলেও আখ্যা দিয়েছিলো। এবং তার অদ্ভুত মৃত্যুর পর তাকে এ বাসার কাছাকাছি কবর দেওয়া হয়। পেরন পরিবার বিশ্বাস করতে শুরু করে, এই বাথসেবা শেরম্যানের অতৃপ্ত আত্মা তাদের বাড়িতে এখনও আছে।

সিনেমায় দেখানো বাথসেবা শেরম্যান; Image Source: Tumblr.com

পেরন দম্পতির বড় মেয়ে আন্দ্রেয়ার ভাষ্যমতে, ঐ ফার্ম হাউজে আরও অনেক অস্বাভাবিক ঘটনার শিকার হন তারা। এসব ঘটনা চলতে থাকে এবং একসময় তারা ওয়ারেন দম্পতির সাথে যোগাযোগ করেন। তারা তাদের ফার্ম হাউজে এসে তদন্তও করেন। এবং আরও কয়েকটি মারাত্মক ঘটনার পর এড পাদ্রী রূপে সেই বাড়িতে এক্সরসিজমও সম্পন্ন করেন। কিন্তু এরপর রজার পেরন তার স্ত্রী ও সন্তানদের কথা ভেবে ভয় পেয়ে ওয়ারেন পরিবারকে এসবে আর না জড়ানোর জন্য অনুরোধ করেন। পেরন পরিবার এরপরও বাড়ি ছেড়ে চলে যায়নি, কারণ তাদের আর্থিক সমস্যা ছিলো। তবে ১৯৮০ সালে দীর্ঘ ১০ বছর পর তারা ঐ ফার্ম হাউজ ত্যাগ করে। পরবর্তীতে তাদের তেমন সমস্যা হয়নি বা বিশেষ অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করেননি।

কনজুরিং সিনেমার ক্লাইম্যাক্সে ওয়ারেন দম্পতি ; Image Source: IMDb

পেরন পরিবারের এ গল্প আর ওয়ারেন দম্পতির তদন্তের অন্যতম সেরা কেস ফাইল (পেরন ফ্যামিলি হান্টিং) অবলম্বনে জেমস ওয়ান নির্মাণ করেন কনজুরিং ইউনিভার্সের এই প্রথম সিনেমাটি।

দ্য কনজুরিং ২ (অ্যানফিল্ড, ইংল্যান্ড, ১৯৭৭)

কনজুরিং ২ ওয়ারেন দম্পতির বিশ্ববিখ্যাত “অ্যানফিল্ড পোল্টারগাইস্ট” নামক প্যারানরমাল কেস ফাইল থেকে অনুপ্রাণিত। পেরন ফ্যামিলির ঘটনার ৬ বছর পর ইংল্যান্ডের অ্যানফিল্ডে একটি ঘটনা খুব জনপ্রিয় হয়। ১৯৭৭ সালের আগস্টে পেগি হার্ডসন নামক এক মহিলা পুলিশকে খবর দিয়ে তাদের বাড়িতে অস্বাভাবিক সব ঘটনার কথা জানায়। পেগি হার্ডসন তার ৪ ছেলেমেয়েকে নিয়ে একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। পুলিশকে তারা জানায়, তাদের বাসায় রুমের আসবাবপত্র একাই নড়াচড়া করছে ও অদ্ভুত সব আওয়াজ আসছে বাড়ির ভেতর থেকে। পুলিশ তদন্ত করতে গেলে তারাও এরকম কর্মকান্ডের সম্মুখীন হয়। খুব দ্রুত এ ঘটনা জানাজানি হয়ে যায়।

কনজুরিং ২ সিনেমায় জ্যানেট; Image Source: Wallscover

যদিও সে সময় এসব অস্বাভাবিক কর্মকান্ড খুব জনপ্রিয় ছিলো। তাই অনেকেই মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে জনপ্রিয় হবার চেষ্টা চালাতো। অ্যানফিল্ডের এ ঘটনার পর সোসাইটি অফ ফিজিক্যাল রিসার্চের সদস্য মুরিস গ্রস ও গায় লিন প্লেফায়ার সেই বাসায় আসেন ও পেগি হার্ডসনের মেয়ে জ্যানেটকে পরীক্ষা করেন। মূলত এ ঘটনা জ্যানেটকে কেন্দ্র করেই ঘটেছিলো। তারা তদন্তের পর সিদ্ধান্ত দেন, সেই বাড়িতে প্যারানরমাল কিছুর অস্তিত্ব আছে ও তারা কিছু নমুনা সংগ্রহ করেছেন। তবে এরপর অনেক সাংবাদিক বিভিন্নভাবে প্রমাণ করেন যে, জ্যানেট ও ঐ বাড়ির সম্পূর্ণ ঘটনা সাজানো। পরবর্তীতে জ্যানেটও স্বীকার করেন, তাদের ঘটনা সত্য নয়। ফলে মুরিস গ্রস ও গায় লিন প্লেফায়ার হাসির পাত্রে পরিণত হন।

জ্যানেট ও সিনেমার বিল উইল্কিংসের একটি দৃশ্য; Image Source: IMDb

এ ঘটনার ১ বছর পর ওয়ারেন দম্পতি সেই বাড়িতে তদন্ত করতে যান। এবং তা খুবই স্বল্প সময়ের জন্য। যদিও এই কেসের শেষ পরিষ্কার নয়, তবুও এর সাথে সত্যিকার অর্থে ওয়ারেন দম্পতি জড়িত নন। কারণ মুরিস গ্রস বলেছিলেন, “ওয়ারেন দম্পতিকে কেউ ডেকে আনেনি, তারা ঘটনা শুনে নিজ আগ্রহেই দেখতে এসেছিলেন, তদন্ত করতে নয়।”

এই ঘটনা পরে ধোঁকাবাজি বলে প্রমাণিত হলেও আসলে কী ঘটেছিলো তা সঠিকভাবে জানা যায়নি। ১৯৭৮ সালে সোসাইটি অফ ফিজিক্যাল রিসার্চের আরও একজন সদস্য সমস্ত রেকর্ড ও প্রমাণ পুনরায় পরীক্ষা করেন। তিনি সেই বাড়িতে অস্বাভাবিক উপস্থিতির উপর সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। এ ঘটনার তদন্ত ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৯ পর্যন্ত চলেছিলো। এরপর নতুন কোনো তথ্য না আসার কারণে ঘটনাটির উপর সবাই আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। ফলে কোনো মীমাংসা ছাড়াই শেষ হয় অন্যতম বিতর্কিত অ্যানফিল্ড পোল্টারগাইস্ট কেস।

কনজুরিং ২ সিনেমার একটি দৃশ্য; Image Source: Wallscover

সিনেমার গল্প এ ঘটনার সাথে যুক্ত থাকলেও তা ওয়ারেন দম্পতির সাথে জড়িয়ে ফেলা হয়েছে, দেখানো হয়েছে তাদের অতীতের কিছু গল্প এবং প্রথমবারের মতো পর্দায় আনা হয় নান বা ভ্যালাককে। অ্যানফিল্ড পোল্টারগাইস্ট কেস বাদেও এ গল্পটি অনেকটা নান ও ওয়ারেন দম্পতি কেন্দ্রিক। এছাড়াও আরেকটি চরিত্রের ‘দ্য ক্রুকেড ম্যান’ এর সাথে দর্শকদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে, তবে বিশদভাবে বলা হয়নি।

দ্য ক্রুকেড ম্যান, যার সাথে এখনও দর্শকদের পরিচয় ঘটেনি ; Image Source: Tumblr.com

কনজুরিং ইউনিভার্সের ৫টি সিনেমা ও তাদের অতীত তো খুব ভালোভাবে জানা গেল। এরপর এই সিরিজ নিয়ে নির্মাতাদের পরবর্তী পরিকল্পনা কী? অ্যানাবেলা ৩ এর কাজ শুরু হয়ে গেছে। সিনেমা আসছে আগামী বছর। খুব সম্ভবত ওয়ারেন দম্পতির মেয়ে ও অ্যানাবেলা পুতুলকে নিয়ে গল্প ফাঁদতে যাচ্ছেন তারা। যদিও জেমস এখন অ্যাকুয়াম্যান সিনেমা নিয়ে ব্যস্ত। তবে তিনি আগেই জানিয়েছিলেন, ওয়ারেন দম্পতির আরও একটি কেস ফাইল নিয়ে কনজুরিং থ্রি নির্মাণ করার কথা।

এছাড়াও আসছে দ্য ক্রুকেড ম্যান, যাকে কনজুরিং ২ তে কয়েকটি দৃশ্যে দেখানো হয়েছিলো। এ সিনেমাটি নির্মাণ হবে ১৮৪২ সালে প্রকাশিত হওয়া একটি নার্সারি ছড়া থেকে। আর দ্য নানের আরও একটা সিনেমা আসার সম্ভাবনা খুবই বেশি। তবে তা সিক্যুয়েল না প্রিকুয়েল হতে যাচ্ছে তা বলা যাচ্ছে না।

তথ্যসূত্র: 

ফিচার ইমেজ সোর্স: Wallscover

Related Articles