Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

খোনশু: মার্ভেল কমিক্সের প্রতিশোধপরায়ণ চন্দ্রদেবতা

ডিজনি প্লাস স্ট্রিমিং সার্ভিসের কল্যাণে মার্ভেল সিনেম্যাটিক ইউনিভার্সের দেবতা খোনশু এখন দর্শকমহলে সুপরিচিত। আমুন রা-র সন্তান প্রাচীন মিশরীয় এই চন্দ্রদেবতা এমসিইউ (মার্ভেল সিনেম্যাটিক ইউনিভার্স)-তে মার্ক স্পেক্টরকে নিজের অবতার হিসেবে বেছে নিয়েছে।

কমিক ও সিরিজ উভয় জায়গাতেই মুন নাইটের অরিজিন প্রায় একইরকম রাখা হয়েছে, যেখানে মরতে যাওয়া মার্ককে বাঁচিয়ে দেয় চন্দ্রদেব খোনশু। তবে সিরিজের ফোকাসে মুন নাইট ও মার্ক স্পেক্টর থাকলেও দেবতা খোনশুর অরিজিন সম্পর্কে বিশেষ কিছু দেখানো হয়নি সিরিজে। তাই খোনশুর মার্ভেল কমিকভিত্তিক গুরুত্বপূর্ণ কিছু ইভেন্ট নিয়েই আজকের এই আলোচনা।

মুন নাইটকে শক্তি প্রদান করছে খোনশু; Image Source: Marvel.

খোনশুর বয়স পৃথিবীর বয়সের থেকেও বেশি

এমসিইউতে প্রায় সকল দেবতাকে এলিয়েন হিসেবে গণ্য করা হয়। সেক্ষেত্রে ওডিন এবং খোনশুর মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই, বরং খোনশু ওডিনের থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী। সে হলো পরাক্রমশালী মহাজাগতিক সত্তাদের জাতি এনিডের সদস্য, যাদেরকে প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ পূজা করে আসছে। একজন সেলেস্টিয়াল হেলিওপোলিসের সদস্য হিসেবে, খোনশুর বয়স পৃথিবীর বয়স থেকেও বেশি। পৃথিবী যখন তৈরি হয়, তখন সে তা নিজ চোখেই দেখছিল, এবং পৃথিবীর সৃষ্টি হবার পর সে একজন দেবতা ও পৃথিবীর রক্ষাকর্তা হিসেবে দায়িত্বপালন শুরু করেছিল।

খোনশুর বয়স পৃথিবীর বয়সের থেকেও বেশি; Image Source: Marvel.

পূজারীদের অভিভাবক হতে চাওয়া

এনিডের সকল সদস্য চাইত, সকল পূজারীরা তাদের পূজা করবে এবং তারা শুধু তা বসে বসে দেখবে। কিন্তু এদিক থেকে দেবতা খোনশু ছিল ব্যতিক্রম। সে চাইতো তার পূজারীদের জন্য সে অভিভাবক ও রক্ষাকর্তার দায়িত্ব পালন করবে৷ এতে করে দারুণ ক্ষুব্ধ হয় এনিডের অন্যান্য দেবতারা। সেজন্য তারা তাকে ঝামেলায় ফেলে নানাভাবে আটকানোর চেষ্টা করেছিল। তারা খোনশুকে অদৃশ্য করে রাখতে চেয়েছিল, এবং এই উদ্দেশ্যে তারা সফলও হয়েছিল। তবে মুন নাইট তার লড়াই চালিয়ে যেতে চাইছিল, এবং সে খোনশুর সহকারী হিসেবে সকলের ন্যায্য প্রতিশোধ বুঝিয়ে দিয়েছিল।

পূজারীদের অভিভাবক হতে চেয়েছিল খোনশু; Image Source: Marvel.

অ্যাভেঞ্জারদের প্রতি ঘৃণা পোষণ

দেবতা খোনশুর সাথে অ্যাভেঞ্জারদের সম্পর্কটা মূলত কমিক লেখকদের উপর নির্ভরশীল। সাম্প্রতিক গল্পে দেখা গেছে, অ্যাভেঞ্জারসদের আপাদমস্তক ঘৃণা করে দেবতা খোনশু। এখানে অবশ্য অ্যাভেঞ্জারদের কোনো দোষ ছিল না। জ্যাসন অ্যারন এবং জ্যাভিয়ের গ্যারনের গল্পে দেখা যায়, খ্রি.পূ. ১০,০০,০০০ অব্দে অ্যাভেঞ্জারস নামে এক সুপারহিরো দল ছিল পৃথিবীতে। তারা খোনশুকে এড়িয়ে চলত, বলতে গেলে পাত্তাই দিতো না। খোনশু তাদের দলে যোগ দিতে চাইলেও তারা খোনশুকে তাদের দলে নেয়নি।

অ্যাভেঞ্জারদের প্রতি ঘৃণাপোষণ করত খোনশু; Image Source: Marvel.

খোনশুর সময়ে ওয়েস্ট কোস্ট অ্যাভেঞ্জারস

প্রাচীন মিশরে খোনশু থেবেসের এক ফারাওয়ের উপর ভর করে ক্যাংয়ের সাথে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিল। এই সময়ে সময়-পরিভ্রমণ দুর্ঘটনায় ওয়েস্ট কোস্ট অ্যাভেঞ্জাররা মিশরে এসে পৌঁছলে, তারাও যোগ দেয় খোনশুর সাথে। ওই সময় অ্যাভেঞ্জারস দলে ছিল হক আই, আইরন ম্যান, টিগরা, এবং ওয়ান্ডার ম্যান। এই প্রাচীন আমল থেকে বের হবার পথ হন্যে হয়ে খুঁজছিল তারা।

খোনশুর পূজারীরা তখন তাদেরকে নিয়ে যায় দেবতা খোনশুর মন্দিরে। মন্দিরে প্রবেশের পর বিশেষ কিছু পদার্থ চোখে পড়ে হক আইয়ের। সেগুলো দিয়ে সে ডার্ট, বুমেরাং, থ্রোয়িং আইরনসহ বিভিন্ন অস্ত্র বানিয়ে দেয় খোনশুর অনুসারীদের, যাতে তারা যেকোনো ঝামেলা মোকাবেলার পাশাপাশি আত্মরক্ষা করতে পারে। এরপর মার্ক স্পেক্টর একসময় খোনশুর মন্দিরে গেলে প্রতিরক্ষার জন্য তাকে ওই অস্ত্রগুলো একটা হাতে ধরিয়ে দেয় খোনশুর অনুসারীরা। এভাবেই প্রথম নিজের অস্ত্র হাতে পায় মুন নাইট।

প্রাচীন মিশরীয় পুরোহিতরা খোনশুর পূজা করত; Image Source: Disney.

ক্যাংয়ের সাথে যুদ্ধ

সময়রেখা নিয়ে এমসিউতে ভালোই আলোচনা করা হয়েছে। লোকি সিরিজে এমসিইউ দর্শকদের পরিচয় করিয়েছিল ক্যাং দ্য কনকোয়েরারের সাথে, যে ছিল অ্যান্ট-ম্যান অ্যান্ড দ্য ওয়াস্প: কোয়ান্টামানিয়া মুভিতে খলনায়ক। কমিকে দেখা যায়, তাদের মধ্য শতাব্দীর পর শতাব্দী জুড়ে লড়াই বিদ্যমান ছিল।

সম্প্রতি জ্যাকসন ল্যানজিন এবং ককিন কেলির লেখা ‘ক্যাং দ্য কনকোয়েরার’ সিরিজে বলা হয়েছে, ক্যাং সবার প্রথমে যার মুখোমুখি হয়েছিল, সে হলো চন্দ্রদেব খোনশু। ওয়েস্ট কোস্ট অ্যাভেঞ্জারস সময় পরিভ্রমণের সময় একবার ভুলক্রমে প্রাচীন মিশরে এসে উপস্থিত হয়েছিল। তখন খোনশু তাদেরকে বাঁচিয়েছিল। সেই থেকেই শুরু হয় ক্যাং বনাম খোনশুর টাইমস্ট্রিম যুদ্ধ, যা বছরের পর বছর ধরে চলমান ছিল।

ক্যাংয়ের সাথে যুদ্ধ লেগে থাকত খোনশুর; Image Source: Marvel.

অ্যাভেঞ্জার হবার ইচ্ছা

খোনশু যে অ্যাভেঞ্জারদের উপর ঘৃণা পোষণ করত, তারা মূলত প্রস্তর যুগের অ্যাভেঞ্জার। এই কাহিনি সম্প্রতি মুক্তি দেওয়া হয়েছে। ১৯৮০’র দশকে মুক্তিপ্রাপ্ত নন-ক্যানন স্টোরিলাইনে দেখা যায়, খোনশুর মোলাকাত হয়েছিল ওয়েস্ট কোস্ট অ্যাভেঞ্জারদের সাথে। তখন খোনশু জোর করে দখল নিয়েছিল মুন নাইটের শরীরকে।

কারণ, খোনশু ওয়েস্ট কোস্ট অ্যাভেঞ্জারস দলের সদস্য হতে চেয়েছিল। মুন নাইট যতটা সময় ধরে অ্যাভেঞ্জারদের দলে ছিল, ততটা সময় তার শরীরের নিয়ন্ত্রণ ছিল খোনশুর হাতে। খোনশু যখন মুন নাইট থেকে নিজের নিয়ন্ত্রণ সরিয়ে নেয়, তখনই অ্যাভেঞ্জারদের সঙ্গ ত্যাগ করে মার্ক স্পেক্টর।

খোনশু ওয়েস্ট কোস্ট অ্যাভেঞ্জারস দলের সদস্য হতে চেয়েছিল; Image Source: Marvel.

কমিকে মুন নাইটকে হাসপাতালে পাঠিয়েছিল খোনশু

মুন নাইট স্ট্রিমিংয়ে দর্শকরা দেখেছে, মার্ক স্পেক্টর মুন নাইট হয়ে লড়াই করছে, আবার এই লড়াইয়ের মাঝে সে হঠাৎ নিজেকে এক মানসিক হাসপাতালে আবিষ্কার করছে। তার সাথে কী সব হচ্ছে, তা সে কিছুই বুঝতে পারছিল না।

কমিকের ক্ষেত্রে এই কাহিনিটা একটু ব্যতিক্রম। জেফ লেমাইর এবং গ্রেগ স্মলওডের লেখা ২০১৬ সালের সিরিজের স্টোরিলাইনে দেখা যায়, মার্ক হাসপাতালে ভর্তি আছে। চিকিৎসক তাকে বলছে, সে এখানে বাল্যকাল থেকেই আছে, এবং মুন নাইট বলে কোনোকিছুর অস্তিত্ব নেই। কমিকে এটা ছিল খোনশুর তৈরি করা এক অলীক জগৎ, যেখানে সে এই ভ্রম সৃষ্টির মাধ্যমে মার্ককে তার আয়ত্তে ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিল।

হাসপাতালে মার্ক স্পেক্টর; Image Source: Disney.

খোনশুর অস্তিত্ব নিয়ে সন্দিহান

মার্ক স্পেক্টরের কমিক ডেব্যু ঘটেছিল ওয়্যারওল্ভ বাই নাইট কমিক সিরিজে, যেখানে জ্যাক রাসেলকে খুন করার জন্য ভাড়া করা হয়েছিল। এরপর পাঠকদের মাঝে ক্রমশ জনপ্রিয়তা কুড়িয়ে নিজের সলো কমিক সিরিজ পায় মার্ক। মজার ব্যাপার হলো, খোনশু তখনো মার্ভেল কমিকসে আসেনি। খোনশুকে প্রথম কমিকসের রঙিন জগতে দেখা যায় মার্কের ড্যাবু করার আরও ৫ বছর পর, মুন নাইট সিরিজের প্রথম ইস্যুতে।

এভাবে কমিক জগতে খোনশুর দুই/তিন দশক কেটে যায়। মার্ভেল ইউনিভার্সের কেউ তখন জানত না, খোনশুর অস্তিত্ব কি বাস্তবেই আছে, নাকি সে শুধুমাত্র মার্ক স্পেক্টরের কল্পনা! খোনশুর অস্তিত্ব সম্পর্কে মার্কেরও পরিষ্কার কোনো ধারণা ছিল না। তবুও সে নিজেকে খোনশুর অবতার ভেবেই লড়াই চালিয়ে যেতে লাগল। তবে, শীঘ্রই মার্ক এবং পুরো মার্ভেল ইউনিভার্স জানতে পেরেছিল খোনশুর অস্তিত্ব বাস্তবিক অর্থেই মার্ভেল ইউনিভার্সে বিদ্যমান।

খোনশুর অস্তিত্ব নিয়ে সন্দিহান ছিল মার্ক নিজে; Image Source: Marvel.

খোনশু আর মেফিস্টোর লড়াই

মার্ভেল কমিক্সের সাম্প্রতিক ইস্যুতে অ্যাভেঞ্জারদের সাথে খোনশুকে দেখা গিয়েছে। এই গল্পে মেফিস্টো পৃথিবী দখলের ফন্দি আঁটে, কিন্তু খোনশু তা হতে দিতে চায় না। যেকোনোমূল্যে খোনশু তাকে থামিয়ে নিজে পৃথিবীতে রাজত্ব করতে চায়। পৃথিবীতে সম্মানিত ও পূজনীয় হতে, মেফিস্টোকে থামাতে সে মার্ক স্পেক্টরকে ব্যবহার করেছিল। ভাগ্যিস সেখানে মেফিস্টো ও খোনশুকে থামানোর জন্য অ্যাভেঞ্জার দল উপস্থিত ছিল, নইলে এলাহি কারবার ঘটে যেত।

খোনশু আর মেফিস্টোর লড়াই; Image Source: Marvel.

বর্তমানে বন্দি অবস্থায় আছে খোনশু

মার্ক স্পেক্টর একবার বুঝতে পেরেছিল, খোনশু তাকে ব্যবহার করে স্বার্থ হাসিল করছে। তখন সে খোনশুকে শরীর থেকে বিতাড়িত করে কারারুদ্ধ করে রেখেছিল। একদিকে অ্যাভেঞ্জাররা থামিয়েছিল মেফিস্টোকে, আরেকদিক মার্ক থামিয়েছিল খোনশুকে। এর থেকে বোঝা যায়, সুপারভিলেনকে আটকের মাধ্যমে মুন নাইট শেষমেশ একজন হিরো হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে পেরেছে।

বর্তমানে বন্দি অবস্থায় আছে খোনশু; Image Source: Marvel.

এরপর অ্যাভেঞ্জার দল তাকে মুক্ত হিসেবে ঘোষণা করে, এবং একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে বলে। এখন সে গোয়েন্দা হিসেবে মিস্টার নাইটের পরিচয়ে এবং অপরাধের বিরুদ্ধে মুন নাইট হয়ে নিজের দায়িত্ব পালন করছে। খোনশুর আর কোনো নিয়ন্ত্রণ মার্কের উপর নেই।

This is a Bengali article about Marvel Comics character Khnoshu.
References have been hyperlinked inside.
Feature Image: Disney.

Related Articles