Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

১০০ বল ক্রিকেট: কী ও কেন?

টেস্ট, ওয়ানডে পার করে এখন ক্রিকেট বিশ্ব মেতে আছে টি-টোয়েন্টিতে। এমনকি আরব আমিরাতে এরই মধ্যে টি-টেন খেলাও শুরু হয়ে গেছে। টি-টেন হলো ১০ ওভারের ক্রিকেট। সিঙ্গাপুরসহ পৃথিবীর কোথাও কোথাও ‘সিক্স এ সাইড’ নামে ৬ ওভারের ক্রিকেটের প্রচলন আছে। এরই মধ্যে ক্রিকেট দুনিয়কে কাঁপাতে ইংল্যান্ড নতুন এক ফরম্যাট নিয়ে আসছে-১০০ বল ক্রিকেট।

এই সেপ্টেম্বরেই ট্রেন্টব্রিজে অনুষ্ঠিত হবে ১০০ বল ক্রিকেটের মহড়া ম্যাচ। আর ২০২০ সাল থেকে নিয়মিত একটা আট দলীয় শহরভিত্তিক টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে যাচ্ছে ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)। শুরু হচ্ছে বিশ্বে নতুন এক ঘরানার ক্রিকেট।

এই সুযোগে জেনে নেওয়া যাক ১০০ বল ক্রিকেটের খুটিনাটি।

অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের সেই ঐতিহাসিক টি-টোয়েন্টি; Image Source: Cricket Country

১০০ বল ক্রিকেট কী?

প্রায় টি-টোয়েন্টির মতো একটা খেলা।

এক ইনিংস করে খেলা অনুষ্ঠিত হবে। টি-টোয়েন্টিতে প্রতি ইনিংসে খেলা হয় ১২০ বল। এখানে সেটা ২০ বল কমিয়ে আনা হবে। কিভাবে কমানো হবে?

এটাই মজার ব্যাপার।

প্রথম ১৫ ওভার স্বাভাবিক খেলা হবে। এই ১৫ ওভার ৬ বলের একটা করে ওভার হবে। মানে দাঁড়ালো ৯০ বল খেলা হয়ে গেলো। এবার ১০ বলের একটা লম্বা ওভার অনুষ্ঠিত হবে। মোট তাহলে ১০০ বল খেলা হলো।

এই ১০ বলের ওভারটি যিনি করবেন, তিনি আগে কয়টা ওভার করতে পারবেন, এটা এখনও ইসিবি পরিষ্কার করেনি। কিংবা এক বোলার সর্বোচ্চ কয়টি ওভার বল করতে পারবেন, সে হিসাবটাও জানানো হয়নি। তবে এগুলো নিশ্চয়ই সেপ্টেম্বরে মহড়ার আগে জানা হয়ে যাবে।

প্রথম টুর্নামেন্টে কেমন হবে?

ইংল্যান্ডের আটটি শহরভিত্তিক দলকে নিয়ে ২০২০ সাল থেকে শুরু হবে এই টুর্নামেন্ট। সাউদাম্পটন, বার্মিংহাম, লিডস, লন্ডন, ম্যানচেস্টার, কার্ডিফ ও নটিংহাম শহরকে বেছে নেওয়া হয়েছে এই টুর্নামেন্টের জন্য। নিশ্চয়ই তাদের চমৎকার কোনো একটা করে নামকরণ করে ফেলা হবে টুর্নামেন্ট শুরুর আগে।

লর্ডস ও ওভালে খেলা হবে। এছাড়া অ্যাগাস বোল, এজবাস্টন, হেডিংলি, ওল্ড ট্রাফোর্ড, সলেক স্টেডিয়াম ও ট্রেন্টব্রিজে অনুষ্ঠিত হবে খেলা।

২০২০ থেকে ২০২৪ সাল অবধি প্রথম চক্রে অনুষ্ঠিত টুর্নামেন্ট সম্প্রচারের জন্য ইসিবি ইতিমধ্যে বিবিসি ও স্কাই স্পোর্টসের সাথে চুক্তি করে ফেলেছে। প্রতি গ্রীষ্মে অনুষ্ঠিত হবে ছেলেদের ও মেয়েদের ১০০ বলের আলাদা দুটো টুর্নামেন্ট। ছেলে ও মেয়েদের দলগুলো হবে একই নামের এবং তারা একই ফরম্যাটে খেলবে।

ইংল্যান্ডের চলমান ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট ‘টি-টোয়েন্টি ব্লাস্ট’কে অক্ষত রেখেই এই নতুন টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হবে।

প্রতি দলে তিনজন করে বিদেশী খেলার সুযোগ রেখে আয়োজন করা হবে প্লেয়ার ড্রাফট। খেলোয়াড়রা টি-টোয়েন্টি ব্লাস্টের চেয়ে অনেক বেশি অর্থ পাবেন, এটা নিশ্চিত করতে চায় ইসিবি। কাউন্টিগুলো প্রতি বছর এখান থেকে কমপক্ষে ১.৩ মিলিয়ন পাউন্ড করে অর্থ পাবে। সবমি লিয়ে ৩৮ দিনের এই খেলায় ৮ দল মোট ৩৬টি ম্যাচ খেলবে। প্রতিটা দল ৪টি করে হোম-গেম খেলবে।

টি-টেন ক্রিকেটও চলছে; Image Source: DND

কতটা সাড়া ফেলবে?

বলা হচ্ছে, এই টুর্নামেন্টে যে একটা ‘কাউন্ট ডাউন’ হবে, সেটাই তরুণ ও নতুন দর্শকদের ১০০ বল ক্রিকেটে টেনে নিয়ে আসবে।

প্রতিটা ইনিংসের শুরু থেকে একটা করে বল হবে, আর কমতে থাকবে নম্বর। শুরু হবে ১০০ বল থেকে, এরপর ৯৯ বল, ৯৮ বল, ৯৭ বল…; এভাবে কমতে থাকবে। আর এই কাউন্টডাউন স্টেডিয়াম ও সম্প্রচার মাধ্যমে একতালে উত্তেজনা তৈরি করবে বলে আশা করছেন আয়োজকরা।

ইসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা টম হ্যারিসন বলেছেন,

“এটা একেবারে সতেজ ও রোমাঞ্চকর একটা আইডিয়া। এটা তরুণ দর্শকদের খুব টেনে আনবে এবং খেলায় অনেক নতুন দর্শক আনতে পারবে বলে আমরা আশা করছি।”

২০০৩ সালে প্রথম পেশাদার টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতা, টি-টোয়েন্টি কাপ শুরুর পর এটাই ক্রিকেট বিশ্বে সবচেয়ে বড় আলোড়ন হতে যাচ্ছে বলে অন্তত ইসিবি মনে করে।

এই খেলার মাধ্যমে সেই আশির দশকের পর থেকে এই প্রথম আবার ওভারের ফরম্যাট ভাঙতে যাচ্ছে ক্রিকেট। ১৯৭৯-৮০ সালে সারা পৃথিবী একমত হয়ে ৬ বলের ওভার চালু করে। এর আগে কোথাও ৪ বল, কোথাও ৫ বল, কোথাও ৮ বলের ওভার চালু ছিলো। এই ওভারে বলের সংখ্যা এর আগে প্রায়শ বদলে যেত। কিন্তু সেই সময়ের পর থেকে আর কোনো বদল হয়নি। এবার প্রথমবারের মতো ১০ বলের ওভার দেখবে ক্রিকেট বিশ্ব। একজন বোলার ১০ বলের এক ওভার করার জন্য কতটা ফিট থাকবেন, সেটাও দেখার বিষয়।

নাকি স্পিনারদের দাম বেড়ে যাবে এই শেষ ওভারটা করার জন্য!

ইসিবি মনে করে, এটা একটা নতুন যুগের সূচনা হতে যাচ্ছে। তারা এই টুর্নামেন্ট দিয়ে বিগ ব্যাশ ও আইপিএলের সাথে প্রতিযোগিতা করতে চায়। টুর্নামেন্টের ফরম্যাটেও তাই আইপিএলের ছোঁয়া থাকছে। আইপিএলের মতো করেই সেমিফাইনালের বদলে প্লে-অফ থাকছে; কোয়ালিফায়ার ও এলিমিনেটর দিয়ে ঠিক হবে দুই ফাইনালিস্ট।

পক্ষে-বিপক্ষে

নতুন এই ক্রিকেটের দারুন পক্ষে মরগ্যান; Image Source: AP

পক্ষে যারা

১০০ বলের ক্রিকেটের পক্ষে সবচেয়ে জোরালো কণ্ঠ হয়ে উঠেছেন ইংল্যান্ডের সীমিত ওভারের অধিনায়ক এউইন মরগ্যান। তিনি এই ধারণার দারুন প্রশংসা করে বলেছেন,

“আমার ধারণা, এটার (১০০ বল ক্রিকেট) সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হলো, এটা ভিন্ন কিছু। ইসিবি এটা চিহ্নিত করতে পেরেছে যে, গত কয়েক বছর ধরে ক্রিকেটের প্রতি দর্শকের আগ্রহ কমছিলো। ফলে আমাদের ভিন্ন কিছু ভাবতে হতো, যেটা নতুন দর্শককে টানতে পারবে। আর আমার মনে হয়, এই ফরম্যাটটা সেই কাজটা করতে পারবে।”

“যখন তারা এই ১০০ বলের ক্রিকেটের আইডিয়া নিয়ে এলো, আমি খুব উপভোগ করেছি। এটা খুব সহজ সরল এবং এটা যারা ক্রিকেটে সম্পৃক্ত নয়, তাদেরও মজা দিতে পারবে। আমার ধারণা, টেলিভিশনে এই নতুন ফরম্যাটের প্রচার ক্রিকেটারদের জন্য অনেক বড় একটা সুযোগ। এতে আমরা আবার তাদের ড্রয়িংরুমে জায়গা করে নিতে পারবো এবং আবার তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারবো। সাধারণ মানুষের সন্ধ্যা থেকে ছোট্ট একটা সময় আমরা আশা করতে পারি, যেটা ক্রিকেট খেলাটার জন্যই অসাধারণ একটা ব্যাপার হবে বলে আমার বিশ্বাস।”

মরগ্যানের মতো একই সুরে এই নতুন ফরম্যাটের প্রশংসা করেছেন টেস্ট অধিনায়ক জো রুট বা অলরাউন্ডার স্টুয়ার্ট ব্রড। সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক মাইকেল ভন ও মাইক আথারটনও আছেন এই ক্রিকেটের পক্ষে।

এই ক্রিকেটের ঘোরতর বিপক্ষে কোহলি; Image Source: PTI

বিপক্ষে যারা

বিরাট কোহলি এরই মধ্যে উইজডেনকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে ১০০ বলের ক্রিকেট নিয়ে নিজের দারুন হতাশা প্রকাশ করেছেন। এতগুলো ফরম্যাট থাকতে আরেকটা ফরম্যাট কেন আনা হচ্ছে, এ নিয়ে তিনি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ বলেই মনে হয়েছে।

কোহলি বলেছেন,

“অবশ্যই যারা এই পুরো প্রক্রিয়ার সাথে ও আয়োজনের সাথে জড়িত, তাদের জন্য এটা নিশ্চয়ই রোমাঞ্চকর একটা ব্যাপার হতে যাচ্ছে। কিন্তু সত্যি বলতে, আমি আরেকটা ফরম্যাটের কথা আর চিন্তা করতেই পারছি না।”

“আমি ইতিমধ্যে খুবই… না, হতাশ বলবো না। কিন্তু কখনো কখনো, যখন আপনি এত বেশি ফরম্যাট খেলবেন, তখন মনে হয়, এগুলো খুব বেশি নিংড়ে নিচ্ছে। আমি অনুভব করি, কোথাও না কোথাও বাণিজ্যিক চিন্তা ক্রিকেটের সত্যিকারের মানকে কেড়ে নিচ্ছে। আর এটা আমাকে খুব আহত করে।”

“সত্যি বলি, আমি একজন ক্রিকেটার হিসেবে আরেকটা নতুন ফরম্যাটে পরীক্ষা দিতে রাজি নই। আমি সেই বিশ্ব একাদশের সদস্য হতে রাজি নই, যারা এসে এই ১০০ বলের ক্রিকেটের উদ্বোধন করবে।”

বিরাট কোহলির মতো করে তীব্র ভাষায় সমালোচনা না করলেও সাবেক নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটার জিমি নিশম বলেছেন, এটা একটা অযথা চেষ্টা করছে ইসিবি। এছাড়া ডেভিড মালান ও মার্ক উডের মতো ইংলিশ ক্রিকেটাররাও এই ফরম্যাট নিয়ে নিজেদের আপত্তির কথা বলেছেন। সাবেক এমসিসি প্রধান কিথ ব্রাড শ বলেছেন, ইসিবি কিছু একটা আবিষ্কার করতে হয় বলে করছে; কিন্তু এর কোনো মূল্য আসলে নেই।

Related Articles