Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পটা বাংলাদেশের

বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল ২০১৫ সালটাকে সফলতার ক্যালেন্ডারে সবার উপরে রাখতে চাইবে। সেই যে ২০১৪  সালের শেষদিকে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ জয় দিয়ে শুরু, ২০১৫ সালে সেই জয়ের ধারা থেকেছে সমুন্নত। বিশ্বকাপের সেরা সাফল্যের পর ঘরের মাঠে ভারত, পাকিস্তান আর দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর মতো সফলতা আর কখনোই আসেনি লাল-সবুজ জার্সিধারীদের ভাগ্যে। সেই বছর থেকে এখনও রঙ্গিন পোশাকে বাংলাদেশ টানা সফলতার ধারা অব্যাহত রেখেছে।

২০১৮ সালে বিশ্বকাপ নেই বটে, কিন্তু এ বছর ক্রিকেট দুনিয়ায় সেরা তিন দলের মাঝে এখন পর্যন্ত নিজেদের নাম ধরে রেখেছে। রবিবার থেকে উইন্ডিজের বিপক্ষে শুরু হতে যাওয়া ওয়ানডে সিরিজ বাদ দিলে এই দলের জয়ের হার এখন পর্যন্ত ৬৪.৭১ শতাংশ, আগে আছে কেবল ইংল্যান্ড ও ভারত। এই হার ২০১৫ সালে আরও উপরে ছিল, সে বছরে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল দুই নম্বরে (৭২.২২%)। এক নম্বরে ছিল অস্ট্রেলিয়া (৭৮.৯৫%)।

মাশরাফির উদযাপন, এশিয়া কাপে;  Image Source: CricketCountry.com

সবকিছু মিলিয়েই বাংলাদেশ সরাসরি ২০১৯ বিশ্বকাপে খেলতে যাচ্ছে। তার আগে ররিবারে অনুষ্ঠেয় সিরিজটি বাংলাদেশের বছরের শেষ আন্তর্জাতিক সিরিজ। শত শত পাওয়ার এই বছরেও বাংলাদেশ দলের ওয়ানডে অধিনায়কের চোখে গৌরবের রশ্মি ম্লান করে দিচ্ছে স্রেফ দু’টি হার। দুর্ভাগ্য, দু’টি হারই ছিল ফাইনালে।  একটি বছরের শুরুতে জিম্বাবুয়ে ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ত্রিদেশীয় সিরিজে, আরেকটি এবারের এশিয়া কাপের ফাইনাল ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে।

শনিবার উইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ শুরুর আগে মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সংবাদ সম্মেলন কক্ষে বসে সে কথাই মনে করিয়ে দিলেন মাশরাফি। বললেন,

‘দু’টি ফাইনাল খেলার পাশাপাশি এ বছর আমাদের জয়ের হার অনেক ভালো। তবে এশিয়া কাপের ফাইনাল ম্যাচটা আমাদের জেতা উচিত ছিল। আমরা চাইব বছরটা ভালোভাবে শেষ করতে (উইন্ডিজ সিরিজ)। আমাদের দলের সবগুলো বিভাগ একসঙ্গে সেরাটা দিতে পারলে এই সিরিজ জয়ের বড় সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে আমাদের ব্যাটিং লাইনআপের ক্লিক করাটা জরুরী।’

এক্ষেত্রে ররিবারের উইকেটটা বড় ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে সবার সামনে। বলা হচ্ছে, মিরপুরের এই উইকেট এমনভাবেই করা হয়েছে যে দু’দলের জন্যই উইকেট একরকম ‘আনপ্রেডিক্টেবল’।  

ইনজুরি  কাটিয়ে ফিরে  প্রস্তুতি ম্যাচে তামিমের সেঞ্চুরি: Image Source: BCB

মাশরাফি বলেন,

‘ডিউ কতটা প্রভাব ফেলবে, সেটার উপর অনেক কিছু ম্যাটার করে। যেহেতু রাতের খেলা, ওই সময়ে ডিউ এফেক্টটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সবকিছুর উপরেই নির্ভর করছে স্পিনাররা কতটা সাহায্য পাবে। তবে আমাদের পেস বোলাররাও ভালো ব্যাকআপ করছে। আপনি যদি ২০১৫ সাল থেকে দেখেন, আমরা একটা রিদমে খেলছি। তিনজন পেসার সবসময় খেলছে। এমনকি কখনও কখনও চারজন পেসারকেও খেলানো হচ্ছে। অর্থাৎ, টেস্ট ম্যাচের উপর বেজ করে আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। আপনাকে ওভাবেই খেলতে হবে। আমি এবারও তিনজন পেসার খেলাবো, এবং খেলাতে চাই এটা নিশ্চিত।’

মাশরাফির হাত ধরে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ বরাবরই পেস আক্রমননির্ভর হয়ে খেলার চেষ্টা করেছে, সুফলও পেয়েছে। কিন্তু যে ‘ঝুঁকি’ মাশরাফি নিতে চান বা নিয়ে থাকেন, সেটা হয়তো সবাই নিতে পারেন না। ঝুঁকি নেওয়ার ফলটাও হাতেনাতেই পেয়েছে বাংলাদেশ। ২০১০ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত যে পরিসংখ্যান ছিল, তার আমূল পরিবর্তন হয়েছে গেল চার বছরে। ২০১০-২০১৪  পর্যন্ত সেরা পাঁচ দলের বিপক্ষে বাংলাদেশের ৩৬.১৪ শতাংশ। সেখানে ২০১৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত র‍্যাংকিংয়ের সেরা পাঁচ দলের বিপক্ষে ওয়ানডের সফলতা ৫৩.৪৫%।

এশিয়া কাপ ২০১৮  ফাইনালে হারের  পর; Image Source; Dhaka Tribune

বাংলাদেশের সাথে তুলনা করলে,  উইন্ডিজ পারফরম্যান্সের দিক থেকে একেবারে উল্টোপথে হাঁটছে। ২০১০-২০১৪ পর্যন্ত যে দলের হারজিতের ব্যবধান ছিল ৪০.৪০ শতাংশ, সেখানে ২০১৫ সসাল থেকে এখন পর্যন্ত নেমে গেছে ২৭.২৭ শতাংশতে। সবচেয়ে বড় কথা, ২০১৪ সালের আগস্টের পর এখন পর্যন্ত উইন্ডিজ কোনো ওয়ানডে সিরিজ জিততে পারেনি।

তবে সফরকারী দলের বর্তমান চলতি দায়িত্বে থাকা অধিনায়ক পাওয়েলের দাবি, তারা আশার আলো দেখছেন। তার মতে, সর্বশেষ ভারতের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে একটি ম্যাচে জয় পাওয়া ও আরেকটি ম্যাচে টাই করাটা তাদের জন্য বড় সফলতা।

মাশরাফির সংবাদ সম্মেলনের দিনেই তিনি বলেছেন,

‘এটা সত্যি যে অনেকদিন ধরে আমরা ওয়ানডে সিরিজ জিততে পারছি না। ছেলেরা স্বাভাবিকভাবেই আপসেট। সেই খরা কাটানোর ভালো সুযোগ এই মুহূর্তে বাংলাদেশেও নেই। ভারতে আমরা বেশ ভালো খেলেছি। কিন্তু যেমন ফলাফল আমরা চেয়েছিলাম, তা পাইনি। বিশ্বকাপের আগে কয়েকটি সিরিজ জিততে পারলে আমাদের জন্য অনেক ভালো হতো। তাতে করে আমরা অনেকখানি আত্মবিশ্বাস পেতাম।’

কাইরন পাওয়েল; Image Credit: Getty Images

ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে উইন্ডিজের সামনে বাংলাদেশের চেয়ে আর কোনো বড় উদাহরণ নেই। দলকে উজ্জীবিত রাখা, ঐক্যবদ্ধ করে রাখার পিছনে দলের সিনিয়র ক্রিকেটারদের যে গুরুত্ব, তা বাংলাদেশ আগেই টের পেয়েছে এবং কাজেও লাগিয়েছে। কিন্তু উইন্ডিজ টিম ম্যানেজমেন্ট বারবারই জ্যেষ্ঠ ক্রিকেটারদের বঞ্চিত করেছে, সুযোগ দিয়েছে নতুনদের। তারা কখনও সফল হয়েছে, তবে ব্যর্থ হয়েছে বারবার। যে কারণে ধারাবাহিক পারফর্মার বের হয়ে আসেনি। তাই বলে এমন নয় যে দলে তরুণ ক্রিকেটার নিয়োগের ব্যাপারে বাংলাদেশ পুরোপুরি সফল। কিন্তু মুস্তাফিজুর রহমান, মেহেদি হাসান মিরাজরা বাংলাদেশের এই অভিযানে সফলতম তারকা। এই তালিকায় কয়েক বছর ধরে ছিলেন ওপেনার সৌম্য সরকারও। তবে বাজে পারফরম্যান্সের কারণে এই মুহূর্তে জাতীয় দলে আসা-যাওয়ার মাঝেই আছেন তিনি।

পরিসংখ্যান আর মাঠের পারফরম্যান্সেই বলে দেয়, উইন্ডিজের সময় হয়েছে দলের সিনিয়র ক্রিকেটারদের ফিরিয়ে আনার। বিশেষ করে মারলন স্যামুয়েলস, কাইরন পাওয়েল আর ড্যারেন  ব্রাভোদের ফেরার পাশাপাশি ফেরাতে হবে বাকিদেরকেও। সঙ্গে শিমরন হেটমায়ার কিংবা শাই হোপদের মতো তরুণরা থাকলে অভিজ্ঞতা আর তারুণ্যের মিশেলে সাফল্যের পথে অনেকটাই এগিয়ে যাবে ক্যারিবিয়ানরা।

মাশরাফির নেতৃত্বে বাংলাদেশ দল, Image  Source: Getty Image

এ কথা না বললেই নয় যে বাংলাদেশের পঞ্চপাণ্ডব, তথা তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, সাকিব আল হাসান ও মাশরাফি বিন মুর্তজাই দলের ভিত। বাকিরা দলের হয়ে নিজেদের প্রতিনিয়ত তৈরি করছে, শিখছে আর পারফর্ম করছে।

কালকের ম্যাচ দিয়ে ইনজুরি কাটিয়ে আবারও দেশের জার্সি গায়ে চড়াচ্ছেন ওপেনার তামিম ইকবাল, সঙ্গে ফিরেছেন সাকিবও। বছরশেষে দুই দলের মধ্যকার পরিসংখ্যান বাদ দিলে কালও এগিয়ে  থাকবে স্বাগতিক বাংলাদেশ, থাকবে বাড়তি আত্মবিশ্বাস।

মাশরাফির ভাষায়,

‘সাকিব-তামিম দলে থাকা আমাদের জন্য অনেক বড় অ্যাডভান্টেজ। প্রস্তুতি ম্যাচেও তামিম দারুণ খেলেছে, এটা আমাদের জন্য অনেক বড় স্বস্তির জায়গা। আমি একইসঙ্গে এটাও বলবো যে, ইনজুরি থেকে আসা এবং এসেই পারফর্ম করা সময়ের ব্যাপার। তামিম আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছে বলে আপনি প্রত্যাশা করতে পারবেন না যে, পরের ম্যাচেও মাঠে নেমে সে এক্সট্রা-অর্ডিনারি কোনো ইনিংস খেলে ফেলবে। এর চেয়ে বেটার কিছুও হতে পারে, খারাপও হতে পারে। চোট থেকে ফিরে মানিয়ে নিতে কিছুদিন সময় দিতে হয়।’

দ্বিপাক্ষিক সিরিজ হিসেবে বাংলাদেশ শেষ সিরিজ খেলেছে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। তার আগে খেলেছে উইন্ডিজের বিপক্ষে। সেবার দুই টেস্টে লজ্জার হার দেখেছিলো বাংলাদেশ, তবে ছন্দে ফিরেছিলো ওয়ানডেতে। নিজেদের ঘরের মাঠে বাংলাদেশ টেস্টের সেই লজ্জা ফিরিয়ে দিয়েছে কারিবিয়ানদের। ওয়ানডেতে কি হবে, সেটা বলে দেবে মহাকালের একমাত্র সাক্ষ্য, ‘সময়’।

This is an article on the Bangladesh national cricket team about their success in 2018 and the big picture of the upcoming ODI series.

Featured Image: Cricinfo

Related Articles