Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বিশ্বজুড়ে বড়দিনের অদ্ভুত কিছু পৌরাণিক চরিত্র

২৫ ডিসেম্বর বা বড়দিন বলতেই আমাদের সবার চোখেই হয়তো ভেসে ওঠে শহর জুড়ে ঝলমলে আলোর ছটা, উপহার বিনিময় এবং সাদা চুল-দাড়ির লাল রঙের পোশাক পরা বৃদ্ধ সান্তা ক্লজের কথা। শিশুদের কাছে বড় দিনের অন্যতম বড় আকর্ষণই এই সান্তা ক্লজ, যিনি কিনা তার বাহনে উড়ে এসে শান্তশিষ্ট বাচ্চাদের বড়দিনের আগে উপহার দিয়ে যান। তবে বড়দিনকে ঘিরে সান্তা ক্লজ ছাড়াও বিশ্বজুড়ে আরো কিছু কিংবদন্তি প্রচলিত আছে। মূলত, ছোট বাচ্চাদের দুষ্টুমি কমাতেই এ কাল্পনিক কিংবা ভূতুড়ে চরিত্রগুলোর জন্ম হয়েছে নানা সময়ে। বড়দিনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এমনই কিছু গা ছমছমে কিংবদন্তি চরিত্র দেখে আসা যাক।

ক্র্যাম্পাস

এই পৌরাণিক চরিত্রটির উৎপত্তি স্থান নিয়ে পৌরাণিকবিদরা নিশ্চিত নন। চরিত্রটি ইউরোপের দেশগুলোতে জনপ্রিয়। জার্মানি, অস্ট্রিয়া, ক্রোয়েশিয়া, ইতালি, চেক রিপাবলিক ইত্যাদি দেশে এই চরিত্রকে কেন্দ্র করে নানা আয়োজন দেখা যায়। ৫ ডিসেম্বর ক্র্যাম্পাসের মতো সেজে ক্র্যাম্পাসনটের আয়োজন হয়। মাথায় শিং, বড় দাঁতবিশিষ্ট এই পৌরাণিক দানব তার বার্চ নামক চাবুক দিয়ে দুষ্টু বাচ্চাদের শাস্তি দেয়। ক্র্যাম্পাসের ব্যাপারে শিশুদের এই ধারণা দিয়েই নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়, ঠিক যেমন আমাদের দেশের মায়েরা রাক্ষস খোক্ষসের ভয় দেখিয়ে দুষ্টু বাচ্চাদের দমিয়ে রাখতেন।

ক্র্যাম্পাস; source: USC Dornsife

ফ্রাউ পার্চটা

পূর্ব ইউরোপে সর্বাধিক পরিচিত এই চরিত্রটি ‘উইচ অফ ক্রিসমাস’ নামেও পরিচিত। জার্মান মিথোলজিস্ট জ্যাকব গ্রিমের মাধ্যমে ফ্রাউ পার্চটার ধারণা জনপ্রিয়তা পায়।

যেসব শিশু সারাবছর বাবা-মায়ের বাধ্য হয়ে চলেছে তাদের জন্য পুরস্কারস্বরূপ পার্চটা তাদের জুতোয় রুপার কয়েন রেখে যেতেন। কিন্তু অবাধ্য এবং দুষ্টুদের জন্য প্রচলিত ছিল ভয়ংকর শাস্তির কথা, পার্চটা তাদের পেট চিড়ে পাথর ও স্ট্র ঢুকিয়ে রেখে যেতো! এ ধরনের অদ্ভুত ভয় গেঁথে দিয়ে দুষ্টু শিশুদের বাধ্য রাখতেন বাবা- মায়েরা।

ফ্রাউ পার্চটা; source: Horror News Network

ফ্রাউ পার্চটা বিভিন্ন বেশে দেখা দিলেও সাধারণত সাদা পোশাকে আবৃত তরুণী ও সুন্দরী কিংবা বৃদ্ধ এবং আক্রমণাত্মক রূপে আবির্ভূত হয়। কিছু পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী, পার্চটার এক পায়ের উচ্চতা অন্য পায়ের চেয়ে বেশি। জ্যাকব গ্রিমের মতে, এটি পার্চটার শেইপশিফটার (Shapeshifter) হবার প্রতীক (শেইপশিফটার হলো পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী এমন কোনো চরিত্র, যারা নিজেদের আকৃতি পরিবর্তন করতে পারে)। ফ্রাউ পার্চটাকে ক্র্যাম্পাসের নারী রূপ হিসেবেও মানা হয় এবং ক্র্যাম্পাসনট আয়োজনে ক্র্যাম্পাসের পাশাপাশি ফ্রাউ পার্চটার সাজেও মানুষকে দেখা যায়।

গ্রিলা ইয়ুল ল্যাডস

গ্রিলা হলো আইসল্যান্ডের এক পৌরাণিক চরিত্র। গ্রিলা তার ১৩টি সন্তান, যারা ‘ইয়ুল ল্যাডস’ নামে পরিচিত, তাদের নিয়ে আইসল্যান্ডের পাহাড়ের গহীনে বাস করে। শীতের সময় ক্রিসমাসের আগে তারা বেরিয়ে আসে দুষ্টু বাচ্চাদের খোঁজে। গ্রিলার কাজই হলো দুষ্টু বাচ্চাদের খুঁজে বের করে তার বস্তায় ভরে নিয়ে যাওয়া এবং  সেদ্ধ করে খেয়ে ফেলা! আইসল্যান্ডে যেসব শিশুরা কিছুটা অবাধ্য হয়ে বেড়ে উঠতো তাদের এই গল্প শুনিয়ে বাবা-মায়েরা নিয়ন্ত্রণে রাখতেন। এই গ্রিলা এবং ইয়ুল ল্যাডসের ধারণায় আইসল্যান্ডের শিশুরাই এতটাই আতঙ্কিত ছিলো যে, সরকার এভাবে গল্পটি বলে ভীতি প্রচার নিষিদ্ধ করে। বর্তমানে প্রচলিত আছে, অবাধ্য শিশুদের গ্রিলা ও তার সন্তানেরা এসে পচা আলু রেখে যায় তাদের ঘরে। আর যেসব শিশুরা বাবা-মায়ের কথা শুনেছে সারা বছর তাদের মোজায় ছোট্ট উপহার রেখে যায়।

গ্রিলা; source: ARCTIC-IMAGES/CORBIS

জোলাকোটুরিন

জোলাকোটুরিন নামের এই বিড়ালটি ছিলো গ্রিলার পোষা বিড়াল। আইসল্যান্ডে বড়দিনের আগেই বাচ্চারা তাদের কাজ শেষ করে রাখলে উপহারস্বরূপ তাদের বড়দিনের জামা দেওয়া হয়। কেউ যদি তার কাজ শেষ না করে কিংবা অলসতার কারণে নতুন কাপড় না পরে, এই ভয়ংকর দর্শন বিড়াল রেগে গিয়ে তাকে খেয়ে ফেলে, এমনটাই প্রচলিত। বেশিরভাগ মানুষের মতে, এই কিংবদন্তিটি শিশুদের পরিশ্রমী হতে এবং অবস্থাপন্ন শিশুদের উপহার দিতে উৎসাহিত করতো।

জোলাকোটুরিন বা ইয়ুল বিড়াল; source: interesly.com

পেইরে ফুয়েটার্ড

ফ্রান্সে অবাধ্য ও একগুঁয়ে শিশুদের শায়েস্তা করার জন্য পরিচিত পৌরাণিক চরিত্র হলো ‘লা পেইরে ফুয়েটার্ড’। ‘ফাদার হুইপার’ নামেও পরিচিত, কেননা তার হাতে সবসময়ই চাবুক থাকে শিশুদের শায়েস্তা করার জন্য। চাবুক হাতে সান্তা ক্লজের সাথে ঘুরে বেড়ান ও চাবুক মেরে অবাধ্য শিশুদের শায়েস্তা করেন, এমনটাই প্রচলিত আছে মূলত ফ্রান্সের উত্তরাংশে এবং বেলজিয়ামের ও কিছু অংশে।

ফাদার হুইপার; source: historyanswers.co.uk

এই কিংবদন্তিটির জন্ম ১২ শতকের দিকের লোকমুখে প্রচলিত এক গল্পকে কেন্দ্র করে। ফুয়েটার্ড নামে এক সরাইখানার মালিক ৩ বালককে লুট করে হত্যা করে। সে আর তার স্ত্রী মিলে এই অপরাধ ঢাকতে মৃত বালকদের শরীর টুকরো টুকরো করে রান্না করে ফেলে। সেন্ট নিকোলাস যখন ব্যাপারটি জানতে পারেন, তিনি তাদের পুনরুজ্জীবিত করেন। ফুয়েটার্ডের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য এরপর থেকে সে প্রতি বছর সান্তা ক্লজের সাথে ঘুরে বেড়ায়।

এমনই এক অদ্ভুত গল্পকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ফাদার হুইপার নামের কিংবদন্তি এই চরিত্রটি।

নেকট রুপ্রেক্ট

নেকট রুপ্রেক্ট একটি জার্মান কিংবদন্তি চরিত্র। রুপ্রেক্টও সান্তা ক্লজের সহযোগী হিসেবে ঘুরে বেড়ায়। লম্বা কালো কিংবা বাদামী আলখেল্লা জড়ানো রুপ্রেক্টের হাতে থাকে লাঠি এবং ছাইয়ের বস্তা। ঘুরে ঘুরে সে শিশুদের জিজ্ঞাসা করে তারা প্রার্থনা করেছে কি না। শিশুরা করেছে বললে তারা জিনজার ব্রেড, ফল, বাদাম, চকলেট ইত্যাদি দ্বারা পুরস্কৃত হয়। আর না করলে রুপ্রেক্ট তাদেরকে তার হাতে থাকা লাঠি কিংবা ছাইয়ের বস্তা দিয়ে আঘাত করে।

নেকট রুপ্রেক্ট ; source: Soeller/ Wikimedia

মারি লুইড

এটি মূলত ওয়েলসের সংস্কৃতি। সাদা কাপড় সারা শরীরে জড়িয়ে মুখ ঘোড়ার কঙ্কাল দিয়ে আবৃত চরিত্রটিই হচ্ছে মারি লুইড। একদল লোক মারি লুইডকে বহন করে নিয়ে শহরে শহরে ঘুরে বেড়ায়। গান গাইতে গাইতে মানুষের বাড়িতে আবির্ভূত হয় এবং নানা কৌশলী ও চতুর কথার বাণ ছুড়ে দেয়। বাসিন্দাদেরও পাল্টা উত্তর দিয়ে এই বাকযুদ্ধে শামিল হতে হয়। বাসিন্দারা উত্তর দিতে না পারলে ধরে নেয়া হয় সামনের বছর তাদের জন্য অশুভ যাবে। আর উত্তর দিতে পারলে মারি লুইড সেই বাড়িতে প্রবেশ করে এবং ধরে নেওয়া হয় এটি আগামী বছর সেই বাড়িতে সৌভাগ্য বয়ে আনবে।

মারি লুইড; source: toprooms.com

বেলস নিকেল

বেলস নিকেল সান্তা ক্লজের আরেকটি সহযোগী চরিত্র। বেলস নিকেল অন্যান্য সহযোগী চরিত্রগুলোর মতো সান্তার সাথে না ঘুরে একলা ঘুরে বেড়ায়।

বেলস নিকেল; source: ancientartpodcast.org

তার হাতে থাকে গাছের ডাল বা কাঠের তৈরি সুইচ যা দিয়ে সে অবাধ্য শিশুদের আঘাত করে। তার কাছে ফলমূল, চকলেটও থাকে পুরষ্কার দেওয়া জন্য। এই চরিত্রটি মূলত জার্মানির। পরে জার্মানদের থেকে এটি উত্তর আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়ে। পেনিসেলভেনিয়া, নিউ ইয়র্ক ও ম্যারিল্যান্ডে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা পায় পৌরাণিক এ চরিত্রটি।

This is a Bangla article about some christmas monsters around the world. 

The sources are hyperlinked inside the article.

Feature Image: Johannes Simon

Related Articles