পছন্দের তারকাদের সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে কে না ভালোবাসে! নব্বইয়ের দশকের হিন্দি গান যাদের পছন্দের তালিকায় আছে, তাদের প্রত্যেকের কাছেই লাকি আলি এক অপার ভালোবাসার নাম! এই লাকি আলি সম্পর্কে গুগল সার্চ অপশনে করা অন্যতম প্রশ্নটি হলো, কোথায় গেলেন তিনি? কোনো খোঁজ নেই কেন তার? এখন কী-ই বা করছেন তিনি?
লাকি আলির বিরহে যারা ভুগছেন, তারা আসলে মিস করেন নব্বইয়ের দশকের সেই সময়টাকে, যখন ‘ও সানাম’- এর মতো মিউজিক ভিডিওর মাধ্যমে তাদের সামনে খুলে গিয়েছিলো গানের এক অন্য ভুবন! ২০১৮ তে এসে লাকি আলি আসলে এক নস্টালজিয়ার নাম; আমাদেরকে যা মনে করিয়ে দেয় সেইসব দিনের কথা, যখন বলিউডের গতানুগতিক গানের বাইরে এসে স্বপ্নালু চোখের এক খোঁচা খোঁচা দাড়ির মানুষ অদ্ভুত সুর আর অনন্য এক কণ্ঠে এমন সব গান শুনিয়ে চলেছেন, যেগুলোর কথা ঠাঁই পাচ্ছে হৃদয়ের একেবারে গভীরে।
লাকি আলির সেসব গান ছিলো সহজ সব সুরের। কথাগুলোও সহজ। কিন্তু কী অনায়াসে সেসব সহজ চরণে তিনি শুনিয়ে যেতেন বন্ধুতা, ভালোবাসা, আর জীবনের গভীর বোধের কথা!
প্রথম অ্যালবাম ‘সুনোহ’ দিয়েই পেয়েছিলেন অপ্রত্যাশিত জনপ্রিয়তা। ‘সফর’, ‘আকস’, ‘গোরি তেরি আঁখে কাঁহে’র মতো অ্যালবাম দিয়ে পাকাপাকিভাবে স্থান করে নিয়েছিলেন ভারতের সংগীতজগতে। বলিউডেও ‘এক পল কা জিনা’, ‘না তুম জানো না হাম’, ‘আ ভি জা’র মতো গান দিয়ে তৈরি করেছিলেন অনন্য এক স্থান। কিন্তু ২০১১ সালের পর আর কোনো স্টুডিও অ্যালবাম প্রকাশ করেননি লাকি আলি। সর্বশেষ ইমতিয়াজ আলির ‘তামাশা’ সিনেমায় এ আর রহমানের নির্দেশনায় ‘সফরনামা’ গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন। কিন্তু এর বাইরে ভারতের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে তার দেখা মেলাটাই ভার এখন।
কোথা থেকে এসেছিলেন লাকি আলি, আর কোথায়ই বা গেলেন তিনি? চলুন ঘুরে আসি, ভারতে ইন্ডি-পপ ঘরানার এই পথপ্রদর্শকের জীবন থেকে।
মেহমুদ ও তার দ্বিতীয় পুত্র মাকসুদ
সময়টা হিন্দি সিনেমার স্বর্ণযুগের। রাজ কাপুর, দিলীপ কুমারদের মতো তারকারা তখনও দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন মুম্বাইয়ের সিনে জগৎ। কিন্তু তাদের ছায়া থেকে বেরিয়ে গড়ে উঠেছে আরেকটি প্রজন্ম; কিশোর কুমার, অশোক কুমারদের হাত ধরে কমেডি হয়ে উঠেছে সিনেমার অন্যতম সফল ধারা। সেই ধারার অন্যতম শক্তিশালী অভিনেতা হিসেবে সেই ষাটের দশকেই নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মেহমুদ, যার হায়দ্রাবাদী টানের উর্দু উচ্চারণের সংলাপ আজও মনে রেখেছে দর্শক।
মেহমুদ ছিলেন একদম শূন্য থেকে নিজেকে গড়ে তোলা এক চরিত্রাভিনেতা মুমতাজ আলির পুত্র। তিনি নিজেও খ্যাতি অর্জনের আগে পাড়ি দিয়েছেন কঠিন সংগ্রামের পথ। বিয়ে করেছিলেন তখনকার বিখ্যাত অভিনেত্রী মীনা কুমারীর বোনকে। আলি পরিবারের তৃতীয় প্রজন্ম থেকেও অভিনয় প্রতিভার স্ফূরণ ঘটবে- এমন প্রত্যাশাতেই ছিলেন তিনি।
এ কারণেই নিজের সাত সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয়টি অভিনয়ে যথেষ্ঠ প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও গান-বাজনা আর নেশার অন্তরালে ডুবে যাচ্ছে- স্বাভাবিকভাবেই তা বেশ চিন্তায় ফেলে দিয়েছিলো মেহমুদকে!
শিশু অবস্থায় নিজের পরিচালিত ‘ছোটে নবাব’ সিনেমায় ছেলেকে দিয়ে করিয়েছিলেন অভিনয়। তারুণ্যে আরও কয়েকটি সিনেমা এবং শ্যাম বেনেগালের মতো পরিচালকের টিভি সিরিজ ‘ভারত এক খোঁজ’-এ অভিনয় করেন মেহমুদের মেজ ছেলে। কিন্তু সিনেমার সেটে অভিনয়ের চাইতে রাহুল দেব বর্মণ, কিশোর কুমারদের মতো তারকাদের সংগীতই আকর্ষণ করতো তাকে বেশি। আশির দশকেই তিনি ঠিক করে ফেললেন, অভিনয়ে নয়, গানেই গড়বেন ক্যারিয়ার।
মেহমুদ নিজে ছিলেন অসম্ভব ব্যস্ত একজন শোম্যান। অভিনয়, প্রযোজনা, পরিচালনা- সবকিছু নিয়েই সারাক্ষণ কাজে ডুবে থাকতেন তিনি। ছোট্টো মাকসুদকে মাত্র আড়াই বছর বয়সেই বোর্ডিং স্কুলে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। দশ মাস পর ফিরে এসে বাবাকে চিনতে পারেনি মাকসুদ। মেহমুদের দিকে আঙুল তুলে ছেলেমানুষের মতো বলে উঠেছিলো, “ঐ যে, ফিল্মস্টার মেহমুদ আমাকে নিতে এসেছে!”
স্বাভাবিকভাবেই জীবদ্দশায় পুত্রদের সঙ্গে খুব একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি মেহমুদের। বিশেষ করে মাকসুদের সঙ্গে সম্পর্কটা আরও খারাপ হলো, যখন আবিষ্কার করলেন গানের সঙ্গে সঙ্গে সে ধীরে ধীরে নেশার জগতেও প্রবেশ করে ফেলেছে।
ছেলেকে শিক্ষা দিতেই ১৯৯৬ সালে তৈরি করে ফেললেন মাদকবিরোধী বার্তার সিনেমা ‘দুশমন দুনিয়া কা’। বলাই বাহুল্য, এই সিনেমার ‘দুশমন’ মাদকসেবী এক তরুণ, যার নামও কি না দিয়েছিলেন ছেলের ডাকনামেই!
সেই সিনেমার গল্প পছন্দ না হওয়ায় মাকসুদ তাতে অভিনয় করেননি। তবে সুর বসিয়েছিলেন গানগুলোতে। আর সে বছরই বাবার সাহায্য না নিয়ে, বহু প্রযোজকের দ্বারে দ্বারে ঘুরে সাড়া না পেয়ে শেষতক নিজের পুঁজিতেই বের করে ফেলেন নিজের প্রথম অ্যালবাম ‘সুনোহ’।
মেহমুদের এই দ্বিতীয় পুত্রের নাম মাকসুদ আলি; পরবর্তীতে সবাই যাকে চিনেছে ‘লাকি আলি’ নামে।
‘সুনোহ’ থেকে ‘সফরনামা’
আগেই বলেছি, লাকি তার প্রথম অ্যালবাম নিয়ে সংগীত প্রযোজকদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। কিন্তু সেই সময়টাতে হিন্দি সিনেমার সাউন্ডট্র্যাক অ্যালবামের উপরেই নির্ভরশীল ছিলো ভারতের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি। তাই কোথাকার কোন নতুন গায়ক (হোক সে মেহমুদের ছেলে) কী সব ‘অদ্ভুতুড়ে’ গান নিয়ে এসেছে- সেসব নিয়ে মাথা ঘামাতে রাজি ছিলো না কেউ। লাকি আলি তখন ভাবলেন, গান নিয়ে নতুন কিছু করা যায় কি না! আর সেই ভাবনা থেকেই ছুটে গেলেন মিশরে, বানিয়ে ফেললেন ‘ও সনম’ গানটির মিউজিক ভিডিও!
ওই একটি ভিডিওই চিনিয়ে দেয় সংগীতশিল্পী হিসেবে লাকির জাত। নতুন ধরনের সুরেলা গান তো বটেই, ভিডিওর নায়ক হিসেবে ঢুলু ঢুলু চোখের অসম্ভব সুপুরুষ এই গায়কেরও প্রেমে পড়ে যায় গোটা ভারত। ‘ও সনম’ ১৯৯৬-এর এমটিভি এশিয়ার টপচার্টের শীর্ষস্থানটি দখলে রেখেছিলো পুরো ৬০টি সপ্তাহ! কিন্তু কেউ যদি মনে করে থাকেন, এটা লাকি’র ‘এলাম, দেখলাম, জয় করলাম’ ধরনের গল্প, তাহলে ভুল করবেন। ‘সুনোহ’র পেছনে লাকি শ্রম দিয়েছেন টানা চার বছর। অ্যালবামটি যখন প্রকাশ পায়, লাকির বয়স ৩৮ বছর। নিজের ভবঘুরে প্রকৃতির জন্য ততদিনে জীবনের অনেকটা দেখা হয়ে গেছে তার। আর সেসব জীবনবোধই ঘুরে ফিরে এসেছে তার গানগুলোতে।
সংগীতশিল্পী হয়ে ওঠার আগে অদ্ভুত সব স্থানে অদ্ভুত সব পেশায় নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন লাকি। কখনও কাজ করেছেন তেলের খনিতে, কখনও ঘোড়ার খামারে, কখনোবা বন্ধু সৈয়দ আসলাম নূরকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে তুলেছেন কার্পেট ক্লিনিংয়ের ব্যবসা। পরে এই বন্ধুই তাকে লিখে দেন ‘ও সনম’-এর কথা!
এর ভেতরেই নিজের অ্যালবামের জন্য তৈরি করে গেছেন একের পর এক গান। আর সবগুলো গানেই যেন শ্রোতাকে তিনি পৌঁছে দিতে চেয়েছেন নতুন কোনো বার্তা।
‘সুনোহ’ লাকি আলি রেকর্ড করেছিলেন ইংল্যান্ডের ট্রাইডেন্ট স্টুডিওতে, যেখানে জন্ম নিয়েছিলো ফ্রেডি মার্কারি’র অমর গান ‘বোহেমিয়ান র্যাপসোডি’।
‘সুনোহ’ গানটি শুনলেও বোঝা যাবে গানের মাধ্যমে কোনো দর্শন ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন লাকি। গানটিতে বারবার মানুষকে শোনার আহ্বান জানিয়েছেন, নিজেকে সত্যিকার অর্থে চেনার আহ্বান জানিয়েছেন লাকি। আর তাহলেই বিশ্ব জুড়ে চলতে থাকা নিষ্ঠুরতার অবসান ঘটবে বলেও মনে করেছেন তিনি। এই কথাগুলো একদম সরাসরিই নিজের গানে তুলে ধরেছেন লাকি।
‘সুনোহ’ নিয়ে লাকির নিজস্ব মতামত,
“আমার মনে হয়েছিলো লোকে এটা শুনবে। কারণ এখানে গান আমি নিজের জন্য গেয়েছি। এবং আমি সত্যিই এটা সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে উপভোগ করেছি। এই গানগুলো তৈরি করে আমি অনেক শান্তি পেয়েছিলাম। পুরোটাই ছিলো আমার জন্য এক সফর!”
লাকির জন্য আসলে গোটা জীবনটাই একটা ‘সফর’। সেই যে আড়াই বছর বয়সে ছাড়তে হয়েছিলো বাড়ি, এরপর থেকে ঘরে আর কখনও পাকাপাকিভাবে ফেরেননি তিনি। জীবনের সফর তাকে নিয়ে গেছে আমেরিকা, নিউজিল্যান্ড, ব্রিটেন, মিশরের মতো জায়গায়। আর প্রতিটি সফর থেকে কিছু না কিছু শিখেছেন তিনি।
এ কারণেই কি লাকির পরবর্তী অ্যালবামের নাম ‘সফর’? এই অ্যালবামের সবচেয়ে শ্রোতাপ্রিয় গান ‘দেখা হ্যায় অ্যায়সে ভি’তেও সেই একই সফরের গল্প, যে সফরের মাধ্যমে আসলে নিজেকেই নিজেকে খুঁজে ফিরছেন লাকি আলি।
অ্যালবামটির আরেকটি গান ‘নেহি রাখতা দিলমে কুছ’ গানটিতে আবার প্রকাশ পেয়েছে লাকি আলির নিঃসঙ্গতা।
যে প্রসঙ্গে লাকি নিজে বলেছেন,
“আমার গানে একাকিত্বের কথা বারবার ঘুরেফিরে এসেছে, কারণ আমি সত্যিই নিঃসঙ্গ। আমার প্রতিটি গান একান্তই আমার কথা বলে। গানের ব্যাপারটাই এমন। আমি আমার কথা বলে গেছি সহজভাবে। আর তাই একেবারে সরল একজন মানুষও সেটা বুঝতে পারবে। মানুষ সত্যিটা সবসময়ই বোঝে, আর আমার জন্য এটাই সবচেয়ে বড় সত্যি।”
২০০১ সালে মুক্তি পায় লাকির তুমুল জনপ্রিয় অ্যালবাম ‘আকস’। পরের তিন বছরে বের করেন আরও দুটি সফল অ্যালবাম ‘গোরি তেরি আখেঁ কাহে’ ও ‘কাভি অ্যায়সা লাগতা হ্যায়’। এই তিনটি অ্যালবামই ব্যাবসায়িকভাবে দারুণ সফল। লাকি তখন অবস্থান করছেন তার ক্যারিয়ারের মধ্যগগনে। কিন্তু খ্যাতির চূড়ায় থেকেই হঠাৎ করে ৫ বছরের জন্য ডুব দিলেন তিনি। কেন?
এক সাক্ষাৎকারে এ ব্যাপারে লাকি বলেছিলেন,
“আমার জন্য গান কখনোই ব্যবসার মাধ্যম নয়। এটা মানুষের সঙ্গে আমার সেতুবন্ধন তৈরির মাধ্যম। যখন আমি গান শুনি, তখন যারা গাইছে, তাদের সঙ্গে আমি একধরনের যোগসূত্র অনুভব করি। আমি চাই আমার গানেও সেটা হোক।”
লাকি নিজে এ কথা বললেও বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। ২০০২ সাল থেকে বলিউডের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেন তিনি। যে লাকি অভিনয়কে কখনোই খুব একটা ভালোবাসতেন না, সেই তিনিই ২০০২ সালে অভিনয় করে ফেললেন ‘কাঁটে’ আর ‘সুর : দ্য মেলোডি অফ লাইফ’ নামের দুটি সিনেমায়! এই দুই সিনেমা তাকে অভিনেতা হিসেবে ক্ষণিকের জনপ্রিয়তা দিলেও আদতে তা কুরে কুরে খাচ্ছিলো তার প্রথম ভালোবাসা- গানকে। এটা যতদিনে বুঝতে পেরেছেন লাকি, ততদিনে দেরি হয়ে গেছে অনেকটাই!
লাকি এখন অবশ্য স্বীকার করেন, বলিউড ছিলো তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় ভুল। এবং এখন সিনেমার জন্য বেছে বেছে একটি বা দুটি গান করলেও, আর সেই স্রোতে নিজেকে ভাসাতে চান না তিনি।
“আমি আর এসবের মধ্য দিয়ে যেতে চাই না। কারণ আমার জন্য অন্য কারও ভাবনার অংশ হয়ে কাজ করাটা খুব কঠিন, আর সিনেমাতে এটাই ঘটে। আমার নিজের চিন্তার জগৎটাই বিশাল। আর আমি মূলধারার এই জগৎটাকে পছন্দও করি না। আমি জানি, টিকে থাকার জন্য অন্যরা এটা করছে এবং আমি তাদেরকে দোষও দিচ্ছি না। এটা স্রেফ আমার জন্য নয়। আমি শুধু আল্লাহ্’র কাছে দোয়া করি, তিনি যেন বলিউড থেকে আমাকে শতহস্ত দূরে রাখেন!”
লাকির গান ও তার দর্শন
গান আসলে লাকি আলির জন্য কী? লাকির কাছে জীবনের মানেটাই বা কী? একসময় যেভাবে গানের মাধ্যমেই নিজেকে প্রকাশ করতেন তিনি, এখন সেটি আর করছেন না কেন? এসব প্রশ্নের উত্তর লাকি আলি নিজেই দিয়েছেন বহুবার।
লাকির ভাষ্যে, তার গান তার জীবনের কথা বলে। তবে জীবনকে কেবল গান দিয়েই বেঁধে রাখতে নারাজ তিনি।
তিনি বলেন,
“আমার সবসময় মনে হয়েছে গানে জীবনের গভীরতম বোধ আর সত্য উঠে আসতে হবে। গান আমার জন্য প্রার্থনা, যা আমাকে সরাসরি ঈশ্বরের সঙ্গে যুক্ত করে। যুক্ত করে মানুষের সঙ্গেও। আমার জন্য এটাই দাওয়াই, আবার একইসঙ্গে বাস্তবতা থেকে পালিয়ে যাওয়ার রাস্তাও।”
তবে জীবন থেকে সত্যিকার অর্থে কখনও পালাননি লাকি। গান ছাড়িয়ে মানুষের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করার প্রয়াস তিনি চালিয়ে গেছেন আরও অনেক মাধ্যমে, আরও অনেক অন্যরকমভাবে।
লাকির ভাষ্যে,
“আমি মানুষের সঙ্গে সুন্দর সম্পর্ক তৈরি করতে ভালোবাসি। যারা ইতিবাচক, আমি যেখানেই যাই না কেন, তাদের সঙ্গে থাকতে পছন্দ করি। এটা যে কেবল বলিউড বা ভারতেই হতে হবে- তা নয়। এটা যে কেবল অ্যালবাম তৈরি করেই বা সিনেমায় গান গেয়েই করতে হবে- তা নয়। এটা কারো সাথে মিলে একটা গাছের চারা লাগানোতেও হতে পারে। এটা কৃষির মাধ্যমেও হতে পারে। এটা যে কোনো কিছুর মাধ্যমেই হতে পারে।”
লাকির এই প্রয়াস তাকে করে তুলেছে কৃষির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এমনকি ‘ও সনম’-এর ব্যাপক সাফল্যের পরও লাকি চলে গিয়েছিলেন নিউজিল্যান্ডে, যেখানে আলুর চাষ করতে করতে তিনি তৈরি করেছিলেন তার পরবর্তী অ্যালবাম। এই প্রচেষ্টা তিনি অব্যাহত রেখেছেন আজ অব্দি। ভারতেই গড়ে তুলেছেন রাসায়নিক সার ও কীটনাশকমুক্ত সবজির খামার।
তবে গানকে একেবারে ভুলে গেছেন লাকি- এটাও ঠিক নয়। কাছের মানুষদের সঙ্গে নিয়ে করে বেড়ান লাইভ কনসার্ট। এর মাধ্যমেই শ্রোতাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগটা বজায় রাখেন। আর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও ধরে রেখেছেন সরব উপস্থিতি।
সে কারণেই লাকির ভক্তরা এখনও মন রেখেছে তাকে। কয়েকমাস আগেই যখন টুইটারে ক্যান্সার সংক্রান্ত একটি পোস্ট করেছিলেন, তোলপাড় হয়ে গিয়েছিলো উপমহাদেশ জুড়ে। লাকি নিজেই পরে জানিয়েছেন তিনি নন, ক্যান্সারে আক্রান্ত তার এক বন্ধু। তবে ৬০ বছর বয়সে এসেও ভক্তদের কতটা কাছের তিনি- এই একটি ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে তা।
লাকি তার একটি গানে নিজেই বলেছিলেন,
“হাসতে হাসাতে ইউঁ সবকো মানাতে হাম জায়েঙ্গে… বারসো কি দুরি কো মিলকে হাম সাথ মিটায়েঙ্গে… পেয়ার রহে উনকে লিয়ে, যো ঢুঁনঢে ও উনকো মিলে…।”
সত্যিই, নব্বইয়ের সেই দিনগুলোতে লাকি আমাদের হাসিয়েছেন, কাঁদিয়েছেন। এত বছর পরও তাই লাকির সাংগীতিক সফর শ্রোতাদের কাছে প্রাসঙ্গিক। তার গানই জাগতিক সব দূরত্বকে একপাশে সরিয়ে এখনও তাকে আসীন রেখেছে ভক্তদের হৃদয়ে।