Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

আমেরিকান গৃহযুদ্ধের জন্য দায়ী করা হয় যে বইকে

“If you want a heart-wrenching book that explores one of the greatest evils of humanity, whilst still retaining a small piece of hope for change, Uncle Tom’s Cabin is for you.”
– The Guardian

Uncle Tom's Cabin
প্রথম প্রকাশকালীন সম্মুখপট; Image: Public Domain

আঙ্কল টম’স কেবিন আমেরিকান ঔপন্যাসিক হ্যারিয়েট বিচার স্টো’র এক অমর সাহিত্যকর্ম। তৎকালীন যুক্তরাষ্ট্রে আফ্রিকান-আমেরিকান দাসদের দুর্দশার দিকে ইঙ্গিত করে বইটি রচিত হয়েছিল। আমেরিকায় গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার জন্য অনেকেই এই বইটিকে দায়ী করে থাকেন। তেমনি গৃহযুদ্ধ শুরু হলে স্বয়ং প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনও বইটির বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছিলেন।

এটি একসময় দক্ষিণাঞ্চলে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল এবং ভ্যাটিকানেও প্রায় নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। যুবক বয়সে বইটি লেনিনের পছন্দের থাকা সত্ত্বেও জারের রাশিয়ান আমলেও নিষিদ্ধ ছিল। কেননা এসব অঞ্চলের রাষ্ট্র পরিচালকেরা তাদের অনৈতিক রাষ্ট্র পরিচালনায় বইটিকে হুমকিস্বরূপ মনে করেছিলেন। বিদ্রোহের উদ্রেককর এ বইয়ের মূল পটভূমি শুধু আমেরিকাই নয়, সমস্ত বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের প্রতি সহমর্মিতার সঞ্চার করে এবং প্রতিবাদী হয়ে উঠার জন্য বিস্ময়কর মনোশক্তির যোগান দেয়। এজন্য অনেকে বইটিকে ‘Anti slavery tool’ হিসেবে আখ্যায়িত করতো।

জনাব শেলবি একজন সহানুভূতিশীল মনিব, যিনি ঋণের দায়ে বাধ্য হন প্রভুভক্ত দাস টমকে দাসব্যবসায়ীদের নিকট বিক্রি করতে। তা দেখে মিসেস শেলবির ক্রীতদাসী এলিজা ভয় পেয়ে যান তার পুত্র হ্যারিকেও কিনা হ্যালে-তে বিক্রি করে দেওয়া হয়। এজন্য তিনি হ্যারিকে নিয়ে ওহিওতে পালিয়ে যান। একই সময়ে অন্য এক মনিবের কাছ থেকে এলিজার স্বামী জর্জ হ্যারিসও পালিয়ে যান, যখন তিনি জানতে পারেন তার নিষ্ঠুর মনিব তাকে দয়ালু ফ্যাক্টরি মালিক মি. উইলসনের নিকট তাকে ধারে দিতে অস্বীকৃতি জানায়। হ্যারিস পরিবার দাস-ধরাদের হাত থেকে পালিয়ে একসময় কানাডায় পৌঁছাতে সক্ষম হয়।

এদিকে ছোট্ট ইভা সহজ-সরল টম আঙ্কলের বন্ধুতে পরিণত হলে সেইন্ট ক্লেয়ার তাকে হ্যালে থেকে ক্রয় করেন। সেখানে টমের ভালোই দিন যাচ্ছিল। বহুদিনের রোগে ভোগার পরে ইভার মৃত্যু হলে সেইন্ট ক্লেয়ার সিদ্ধান্ত নেন টমকে তার দাসত্ব জীবন হতে মুক্ত করে দেবেন। কিন্তু কাগজপত্র প্রস্তুত করার পূর্বেই দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেইন্ট ক্লেয়ারও হত্যার শিকার হন। ফলে টমকে পুনরায় বিক্রি করে দেওয়া হয় লুসিয়ানার এক বাগান মালিক সাইমন লেগ্রির নিকট। সেখান হতে দু’জন দাস পালিয়ে গেলে টম তাদের অবস্থান জানাতে অস্বীকার করেন, ফলে সাইমন লেগ্রি তাকে প্রচুর মারধোর করে, যা তাকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে সাহায্য করে।

আমেরিকায় দাসপ্রথার ইতিহাস বহু পুরনো; Image Source: BBC

বইটিতে এক দুর্দান্ত প্লটের সাক্ষাৎ মেলে, যা বিভিন্ন মালিকদের অধীনে যন্ত্রণাদায়ক জীবনের মধ্য দিয়ে উপন্যাসের মূল চরিত্র আঙ্কল টমের অদম্য প্রেমময় জীবনের দেখা পাওয়া যায়। তার এ জীবনচিত্র আরো অনেক দাসের জীবনেরই প্রতিনিধিত্ব করে। বইটি একইসাথে রোমাঞ্চকর ও বিদ্রোহের উদ্রেককর হওয়ায় সে সময়ের মানুষের মনে দারুণভাবে প্রভাব ফেলেছিল।

আঙ্কল টম’স কেবিন এর অন্যতম প্রধান বিষয় হলো বিশ্বাস, যাকে সহজে টলানো সম্ভব নয়। অনুপ্রেরণাদায়ী টমের দৃঢ় বিশ্বাস সমস্ত উপন্যাস জুড়েই প্রমাণিত হয়েছে এবং যেভাবে তিনি সমস্ত কষ্ট সহ্য করেও তার বিশ্বাসকে অবিচ্ছেদ্য রেখেছেন, তা প্রতিটি পাঠকের মনেই নাড়া দিতে সক্ষম। অতি সংকটময় মুহূর্তসহ উপন্যাসের শেষ অবধি পর্যন্ত ঈশ্বরের প্রতি টমের প্রশংসনীয় ও অবিচল বিশ্বাস উপলব্ধি করা যায়, যেখানে অন্যান্য চরিত্রগুলি তাদের পারিপার্শ্বিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের আশা ও বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিল।

লেখক হ্যারিয়েট বিচার স্টো’র অন্যরকম দৃষ্টিভঙ্গির কারণে দাসদের প্রতি নিষ্ঠুরতার আরো একটা দিক আমাদের সামনে উন্মোচন ঘটে। শারীরিক নির্যাতন বা লাঞ্ছনার মাধ্যমে প্রত্যক্ষ নিপীড়নের চিত্র আমাদের চোখে ধরা পড়লেও তারা যে নিজ পরিবার-পরিজন হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে জীবনযাপন করতে বাধ্য হয়ে চরম মনোঃকষ্টে ভোগে, সে বিষয়ে আমাদের চক্ষু পুরোপুরি অন্ধ ছিল, যা লেখক দেখিয়ে দিয়েছেন।

বইটির লেখক; Image Source: Biography.com

বইটি লেখার ভঙ্গি সেন্টিমেন্টাল ও মেলোড্রামাটিক, যার মাধ্যমে লেখক পাঠকের মনে জোরালো আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছিলেন। স্টো এমনভাবে দাসত্বের চিত্রগুলো ফুটিয়ে তুলেছেন যে এটা আমাদের মনকে আবেগপ্রবণ করে তুলতে বাধ্য করে। আমরা বইয়ের চরিত্রগুলোর সাথে তাদের আনন্দ ও বেদনা প্রচণ্ডভাবে অনুভব করতে পারি, যা বইটিকে কাছে টানার জন্য যথেষ্ট। বইটি লেখক স্টোকে শূন্য থেকে একজন অতি পরিচিত লেখকে পরিণত করিয়ে দেয়।

সকলকে এই উপন্যাসটি একবার হলেও চেখে দেখার অনুরোধ জানাচ্ছি। দাসত্বের অভিশাপ আমাদের সময়কালের অনেক পূর্বেই ঘুচে গেলেও এই বইয়ের মাধ্যমেও তাদের প্রতি নির্যাতনের বিভিন্ন দিক আমাদের অন্তর্দৃষ্টি খুলে দেয়, যা আমাদের মনে দয়া-মায়ার সঞ্চার করে। যখন বইটি প্রকাশিত হয়েছিল, তখনকার সময়ে সে সমাজে বইটি পবিত্র বাইবেলের পরপরই দ্বিতীয় সর্বাধিক পঠিত বই হিসেবে বিবেচিত ছিল। এটি এমন একটি সাহিত্যকর্ম, যার তুলনা এটি নিজেই। বইটি এমনভাবে লেখা হয়েছে যে এটি আপনার হৃদয়কে নাড়া দেবে এবং কিছু অংশ বাধ্য করবে চোখকে অশ্রুসিক্ত করতে।

বইয়ের নাম: আঙ্কল টম’স কেবিন || লেখক: হ্যারিয়েট বিচার স্টো

নলাইন প্রাপ্তিস্থান: রকমারি.কম

This article is in Bangla. This is a review of the famous book 'Uncle Tom's Cabin' written by Harriet Beecher Stowe. The book is a fiction that focuses on the slavery system in US.

Featured Image: BBC

RB/AC

Related Articles