মুন নাইট সিরিজের মাধ্যমে মারভেল দাবাঘরে ঘোড়ার আড়াই ঘরের অনবদ্য চাল দিয়ে বাজিমাত করে দিয়েছে। শুরু থেকেই দর্শকমহলে এই সিরিজ নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ ও উদ্দীপনা বজায় ছিল। একে একে যত এপিসোড এগিয়েছে, দর্শকরা ততই অভিভূত হয়েছেন। এর আগেও দুবার মুন নাইটকে রূপালি পর্দায় চিত্রায়িত করার চেষ্টা করা হলেও দুর্ভাগ্যবশত তা আর হয়ে ওঠেনি। তবে শেষবারে সেই ভুলের আর সুযোগ দেননি মারভেল বস কেভিন ফেইগি।
একটা কমিক বুক চরিত্র মনস্তাত্ত্বিকভাবে কতটা প্রভাব খাটাতে পারে, তার চমৎকার এক উদাহরণ হয়ে থাকবে এই সিরিজ। অভিনয় থেকে শুরু করে পরিচালনা, সেট ডিজাইন, প্লট, মিউজিক সবকিছুই ছিল সোনায় সোহাগা। ওটিটি প্লাটফর্মে আগুন ঝরানো এই সিরিজের অজানা কিছু দিক নিয়েই আজকের এই আলোচনা।
রূপালী পর্দায় মুন নাইট
টিভি সিরিজ হিসেবে অভিষিক্ত হবার পূর্বে কমিক জগতের রঙিন পাতা থেকে মুন নাইটকে সেলুলয়েডের পর্দায় জীবন্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে মোট দুবার। ২০০৬ সালে প্রথমবারের মতো ‘Spike TV‘-তে প্রিমিয়ার হওয়া ‘Blade: The Series‘ নামক সিরিজের দ্বিতীয় সিজনে মুন নাইটের একটি ক্যামিও থাকার কথা ছিল, যা থেকে পরবর্তীতে পরিকল্পনামাফিক স্পিন-অফ টিভি সিরিজ সেট আপ হতো। কিন্তু প্রথম সিজনের পরেই এই সিরিজ আর আলোর মুখ দেখেনি। ফলে মুখ থুবড়ে পড়ে মুন নাইট প্রজেক্টও। ঐ বছর অক্টোবরে মার্ভেল স্টুডিওজ ‘নো ইক্যুয়াল এন্টারটেইনমেন্ট’-এর সাথে পার্টনার হয়ে মুন নাইটকে নিয়ে আলাদা টেলিভিশন সিরিজ আনতে চেয়েছিল। এজন্য ২০০৮ সালে লেখক জন কুকসেকে সিরিজের ডেভেলপার হিসেবে নিযুক্ত করলেও এই সিরিজ এগোতে পারেনি।
২০১৭ সালে হলিউড পরিচালক জেমস গান মুন নাইটকে মারভেল সিনেম্যাটিক ইউনিভার্সে শুরু করার একটা প্রস্তাবনা দিয়েছিলেন। কিন্তু সেটা ব্যাটে-বলে হয়ে উঠেনি। পরবর্তীতে কেভিন ফেইগি ২০১৯ সালে ‘ডি২৩-এ’ মুন নাইট প্রজেক্টের কথা ঘোষণা করেন।
করুণ দৃশ্যের কাটছাট
মুন নাইট সিরিজে স্টিভেনের বিরহব্যথার শুরুটাই ঘটে প্রথম এপিসোডে, যখন স্টিভ তার এক সহকর্মীর সাথে নৈশভোজে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু যখন সে বুঝতে পারল, সহকর্মীর সাথে দেখা করার সময় দু’দিন আগেই গত হয়ে গেছে, তখন বিষণ্ণ মনে রেস্তোরাঁতে বসেই সে কাবাব অর্ডার করে। কিন্তু নিরামিষভোজী স্টিভ জানত না কীভাবে সেই কাবাব পেটে চালান করতে হয়। ঐসময় তার প্রত্যক্ষ মনোবেদনা ফুটিয়ে তোলার একটা শট নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রোডাকশন কোম্পানি সিরিজ থেকে সেই দৃশ্য ছাটাই করে দেয়। এতে দারুণ ব্যথিত হন সিরিজের পরিচালক মোহাম্মদ দিয়াব। এই দৃশ্যের মাধ্যমে দিয়াব বোঝাতে চাইছিলেন ডিসঅ্যাসোসিয়েট আইডেন্টিটি ডিসঅর্ডারে ভোগা স্টিভেনের জীবন কতটা জটিলতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।
ভাইয়ের সহযোগিতা
অস্কার আইজ্যাকের অভিনয় দেখে মনে হয়েছিল এই চরিত্র শুধু তার জন্যই। তবে তাকে কাস্ট করার আগে মূল চরিত্রে অভিনয়ের জন্য মার্ভেল স্টুডিওর শর্ট লিস্টে ছিল অলিভার জ্যাকসন কোহেন, পেদ্রো প্যাসকেল, সি এম পাংক, শায়া লাবফয়ের নাম। কিন্তু শেষমেশ সেই সুযোগ ধরা দেয় অস্কার আইজ্যাকের কাছেই। স্টিভেন চরিত্রে কাস্ট হবার পর অস্কার আইজ্যাকের সামনে পাহারসম এক চ্যালেঞ্জ এসে দাঁড়ায়। তাকে মার্ক স্পেক্টর ও স্টিভেন গ্রান্ট নামে দুটো আলাদা চরিত্রে অভিনয় করতে হবে, তা-ও একইসময়ে। যোগ্যতার বিচারে অস্কার তুখোড় মাপের একজন অভিনেতা হলেও ডিসঅ্যাসোসিয়েট আইডেন্টিটি ডিসঅর্ডারে ভোগা একজন রোগীর চরিত্রে অভিনয় করা মুখের কথা নয়।
কিন্তু তাকে কী করতে হবে, তা তিনি ভালো করেই জানতেন। আইজ্যাক তার ভাই মাইকেল হার্নান্দেজকে নিয়ে এসেছিলেন দ্বৈত চরিত্র অভিনয়ে সহায়তার জন্য। অস্কার মার্কের চরিত্রে অভিনয় করলে ওই সময় স্টিভেনের হয়ে কথা বলতেন মাইকেল। তারপর ভিজুয়াল ইফেক্টের কারিশমায় একজন ব্যক্তিকেই একই সময়ে দুজন করে দেখিয়েছে। এজন্য ‘ফ্রেমস্টোর’, ‘ইমেজ ইঞ্জিন’, ‘ম্যামাল স্টুডিওস’, ‘ওয়েটাএফএক্স’, ‘জইক স্টুডিও’র মতো খ্যাতনামা ভিএফএক্স কোম্পানি কাজ করেছে মার্ভেল স্টুডিওর সাথে।
ইথান হকের যোগদান
মার্ভেল সিনেম্যাটিক ইউনিভার্স বর্তমান বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ও সফল ফ্র্যাঞ্চাইজি হিসেবে দর্শকদের সিনেমা/সিরিজ উপহার দিয়ে আসছে। সেজন্য সিনেমা বা সিরিজের স্ক্রিপ্ট না পড়েই তাতে স্বাক্ষর করা বিরাট এক ঝুঁকির কাজ। কিন্তু সেই ঝুঁকিই যেন সানন্দে গ্রহণ করলেন সিরিজে আর্থার হ্যারো চরিত্রে অভিনয় করা ইথান হক। বাস্তব জীবনে তিনি অস্কার আইজ্যাকের প্রতিবেশী। নিউ ইয়র্কের এক কফি শপে সাক্ষাতের পর অস্কার আইজ্যাক ইথান হককে এই চরিত্রের ব্যাপারে বুঝিয়ে বলেন, আর সেই চরিত্রে অভিনয় করার জন্য আমন্ত্রণ জানান। দীর্ঘ ৩৫ বছরে সিনেমার বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে ইথান হক কখনো স্ক্রিপ্ট না পড়ে সিনেমার জন্য চুক্তিবদ্ধ হননি। কিন্তু মোহাম্মদ দিয়াবের কাজের ভক্ত আর অস্কার আইজ্যাকের সাথে ভালো সম্পর্ক থাকায় তিনি মুন নাইটের স্ক্রিপ্ট না পড়েই এই সিরিজের সাথে সম্পৃক্ত হন।
আর্থার হ্যারো চরিত্রটি গড়ে তোলা হয়েছে উগ্রপন্থী ধর্মান্ধ কাল্ট লিডার ডেভিড কোরেশের আদলে। ব্রাঞ্চ ডেভিডিয়ান নামক এক ধর্মীয় গোষ্ঠীর নেতা ছিলেন তিনি। অবৈধ অস্ত্র ও যৌন হয়রানির অভিযোগ এনে তাকে ও তার অনুসারীদের এটিএফের এজেন্টরা একটি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির চেষ্টা করে। ১৯৯৩ সালে এফবিআই ও তামাক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, টেক্সাসে ডেভিডিয়ানস রেঞ্চে এক অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে আগুনে পুড়ে যায় রেঞ্চটি। আগুন নেভার পর এফবিআই কোরেশসহ ৫৪ জন প্রাপ্তবয়স্ক ও ২৮ জন শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করে।
তাউরেতের কস্টিউম
সিরিজের চতুর্থ এপিসোডের শেষদিকে মানসিক হাসপাতালে ফেঁসে যাওয়া মার্ক ও স্টিভেনের দেখা হয় জলহস্তীরূপী মিশরীয় দেবী তাউরেতের সাথে। পঞ্চম এপিসোডে এসে বেশিরভাগ স্ক্রিন টাইম ছিল তাউরেতের দখলে। ভিএফএক্সের আড়ালে তাউরেতের চরিত্র রূপালী পর্দায় ফুটিয়ে তোলার দায়িত্বটা কাঁধে নিয়েছিলেন লাবণ্যময়ী অভিনেত্রী অ্যান্টোনিয়া সালিব। মজার ব্যাপার হলো, দেবী তাউরেতকে যে পোশাকে পর্দায় দর্শক দেখেছে, অ্যান্টোনিয়া সালিবকেও মুন নাইটের শুটিং স্পটে সেই পোশাক পরতে দেওয়া হয়েছিল। অ্যান্টোনিয়া সালিব তার ইনস্টাগ্রাম আইডিতে শুটিংয়ের সময় একটি ছবি পোস্ট করেছিলেন, যেখানে তাকে প্রাচীন মিশরীয় উরস্ত্রাণ, এবং স্কার্টসমেত পুরো কস্টিউমে দেখা গিয়েছিল। সেই ছবির ক্যাপশনে তিনি লিখেছিলেন,
“So much fun working on Moon Knight and getting to play the one and only Taweret…I’m very proud of the show, and the whole team has done such an incredible job!”
মার্কের ইহুদি ঐতিহ্য
মারভেলের কিছু ইহুদি অরিজিনের সুপারহিরোর মধ্যে মুন নাইট অন্যতম। তবে, এমসিইউ-র অফিসিয়াল ইহুদি সুপারহিরো হলো মুন নাইট। প্রথম চার এপিসোডে মার্কের অরিজিন বা ধর্ম পরিচয়ের ব্যাপারে কোনো ইঙ্গিত না দেওয়া হলেও পঞ্চম এপিসোডে তা একঝলকের জন্য খোলাসা করা হয়। ওই এপিসোডে কান্নারত এক দৃশ্যে মার্ককে কিপ্পাহ (রক্ষণশীল ইহুদিদের মাথার খুলি–ঢাকা ঐতিহ্যবাহী ছোট টুপি) পরে থাকতে দেখা যায়।
সেট ডিজাইন
সেট ডিজাইনের মাধ্যমে সিরিজের কিছু জায়গায় প্রাচীন মিশরীয় ভাব ফুটিয়ে তোলাটা ছিল দারুণ এক চ্যালেঞ্জের কাজ। স্টিভেনের অ্যাপার্টমেন্ট থেকে মিশরের ভূগর্ভস্থ সমাধি- সবকিছুতেই গেছে হাড়ভাঙা খাটুনি। তবে এর মধ্যে অন্যতম কঠিন কাজ ছিল অ্যামিটের সমাধির দৃশ্যকে দর্শকের কাছে বাস্তবে রূপ দেওয়া। প্রোডাকশন ডিজাইনার স্টেফানিয়া সেলা জানান, এই দৃশ্যের শুটিং করা হয়েছিল হাঙ্গেরিতে। হাঙ্গেরিয়ান কিছু সেট ডিজাইনারও তাদেরকে এই কাজে সাহায্য করেছেন। স্টেফানিয়া বলেন,
কলা ও কারুশিল্পের এক চমকপ্রদ রীতি চালু আছে হাঙেরিতে। ওখানে দারুণ কিছু শিল্পীর সাথে দেখা হয়েছে আমাদের। আঁকাআঁকিতে সাহায্যের জন্য আমরা ওদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যোগাযোগ করেছিলাম। পরবর্তীতে ৪-৫ জন শিক্ষার্থী আমাদের সাথে এসে সমাধিক্ষেত্র সাজাতে সাহায্য করেছিল।
ঝানু কিছু মিশরতত্ত্ববিদকে সিরিজের কাজে নিযুক্ত করা হয়, যারা বিভিন্ন ঐতিহাসিক রেফারেন্সের আদলে সিরিজটি ফুটিয়ে তোলে। কস্টিউম ডিজাইনার মেঘান ক্যাস্পারলিক, মুন নাইটের পোশাকের ভাঁজে ভাঁজে প্রাচীন মিশরের বহু প্রতীক এঁটে দিয়েছিলেন। কাপড়ের মধ্যে ব্যান্ডেজ দিয়ে মূলত মিশরের মমিকেই চিত্রিত করা হয়েছে।
গ্যাস্পারের প্রয়াণ
প্রয়াত ফরাসি অভিনেতা গ্যাস্পার উলিয়েল মুন নাইট সিরিজে অ্যান্টন মোগার্ট তথা মিডনাইট ম্যানের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, সিরিজের প্রথম ট্রেলার লঞ্চ করার দুদিন পরই মাত্র ৩৭ বছর বয়সে মারা যান তিনি। ফ্রান্সের দক্ষিণ প-র্ব অঞ্চল সাভোইতে স্কি করাকালে দুর্ঘটনায় পড়েন গ্যাস্পার। মাথায় গুরুতর চোট লাগায় সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন। সাথে সাথে তাকে হেলিকপ্টার করে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ২০২২ সালের ১৯ জানুয়ারি মারা যান তিনি।
বিবিধ
- বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচ কাস্ট হবার পূর্বে অস্কার আইজ্যাক এবং ইথান হক, দুজনকেই ডক্টর স্ট্রেঞ্জ রোলের জন্য বিবেচনা করা হয়েছিল।
- মার্ক স্পেক্টর চরিত্র কাস্ট করার জন্য অনলাইনে এক ভোটের আয়োজন করা হয়। সেখানে বেশিরভাগই ভোট দিয়ে রামি মালেককে জয়যুক্ত করেছিল।
- সিরিজের লেখক জেরেমি স্ল্যাটার সিরিজটিকে ‘রাইডারস অভ দ্য লস্ট আর্ক (১৯৮১), ঘোস্টবাস্টারস (১৯৮৪); এই দুই সিনেমার টোনে সাজাতে চেয়েছিলেন। তিনি এমসিইউতে কিছু হরর এলিমেন্ট এবং দৈত্য-দানব নিতে আসতে ছিলেন বদ্ধ পরিকর। জেরেমি স্ল্যাটারের পরিকল্পনা ছিল, গল্পের বড় একটি অ্যাকশন সিকুয়েন্সে তিনি ‘ইটার্নালস’-এর তিন বা চারজন সদস্যকে রাখবেন। কিন্তু পরবর্তীতে স্টুডিও তা নাকচ করে দেয়।
- মার্ক স্পেক্টরের মুন নাইট সুটে হায়ারোগ্লিফিক্সে দেবতা খোনশুর নাম খোদাই করা ছিল।
- মুন নাইট অস্কার আইজ্যাকের প্রাচীন মিশর সম্পর্কিত তৃতীয় কাজ। ২০১৬ সালে X-Men: Apocalypse সিনেমায় মিশরীয় মিউট্যান্ট এন সাবাহ নূর, ২০০৯ সালে প্রাচীন গ্রিক-মিশরীয় নারী গণিতবিদ হাইপেশিয়া বায়োগ্রাফিক্যাল ফিল্ম অ্যাগোরা মুভিতে অরেস্টেসের চরিত্রে অভিনয় করেছেন অস্কার।
- স্টিভেন গ্রান্টের কামরা নাম্বার ছিল ৫০২, যা দিয়েছে বোঝানো হয়েছে গুয়েতেমালার আন্তর্জাতিক ডায়ালিং কোড +৫০২। গুয়েতেমালা হলো অস্কার আইজ্যাকের জন্মস্থান।
- লায়লা এল-ফৌলি হলো মার্ভেল সিনেম্যাটিক ইউনিভার্সের প্রথম আরবীয়/মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক প্রধান চরিত্র। মুন নাইট কমিকসে লায়লা এল-ফৌলির কোনো অস্তিত্ব নেই। তাকে সিরিজে যুক্ত করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছে চিত্রনাট্যকার। আরবী ও হিব্রু ভাষায় লায়লা শব্দের অর্থ হলো ‘রাত’।
- শুরুর দিকে সিরিজটির নাম ছিল ‘Good Faith‘।
- সিরিজের অরিজিনাল সাউন্ডট্র্যাকের সংখ্যা মোট ৩৩টি। প্রায় ৮৫ মিনিটের মতো।
- প্রথম এবং ফাইনাল দুই এপিসোডের সাথে একটা কিউআর কোড যুক্ত করে দেওয়া হয়েছিল, যার মাধ্যমে দর্শকরা একটা ওয়েবসাইটে গিয়ে বিনামূল্যে মুন নাইট সম্পর্কিত ডিজিটাল কমিকস বিনামূল্যে পড়তে পারবে। এটা সাপ্তাহিক হালনাগাদ করা হতো। সিরিজকে আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য বিভিন্ন রেফারেন্স দেওয়া ছিল ওই কমিকগুলোতে। ডিজনির হিসেবমতে, এই ওয়েবসাইটটি ১.৫ মিলিয়ন বারেরও বেশি ভিজিট করা হয়েছে, এবং এতে কমিকের পাঠক সংখ্যা ছিল ৫ লক্ষাধিক।
- Parrot Analytics সাইটের মতে, প্রিমিয়ারের হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে ২০২২ সালের প্রথম চতুর্ভাগে মুন নাইট ছিল ‘মোস্ট ডিমান্ডেবল’ টিভি সিরিজ। প্রথম ৩০ দিনে যুক্তরাষ্ট্রের চলা অন্য সব টিভি সিরিজের চেয়ে গড়পড়তায় এর চাহিদা ছিল ৩৩.৪ গুণ বেশি।
- ডিজনি+ চ্যানেলে এই সিরিজের নির্মাণ ও ক্যামেরার পেছনের বিভিন্ন কাহিনি নিয়ে নির্মিত হয়েছে ‘Assembled: The Making of Moon Knight‘, যা ডিজনি প্লাস অনলাইন স্ট্রিমিংয়ে মুক্তি পেয়েছে ২০২২ সালের ২৫ মে।
সিরিজের ভবিষ্যৎ
মুন নাইটকে মূলত মিনি-সিরিজ হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে। মিনি-সিরিজ সাধারণত সামান্য কিছু এপিসোড নিয়ে প্রথম সিজনেই সমাপ্তি ঘটায়। এ কারণে একে মিনি সিরিজের ছাঁচে ফেলা যায়। সিরিজের বহু পাঁড় ভক্ত মুন নাইটের দ্বিতীয় সিজনের অপেক্ষা করলেও এর আর কোনো সিজন আসার সম্ভাবনা নেই। এমসিইউ-র খুবই গুরুত্ব চরিত্রের ক্যামিও থাকার কথা ছিল সিরিজটিতে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে ফাইনাল কাটে তা ছাটাই করা হয়েছে। ক্যামিওর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন কেভিন ফাইগি নিজেই। পপ কালচার এন্টারটেইনমেন্ট প্লাটফর্ম The Direct এর খবর অনুযায়ী, মুন নাইট সিরিজটি বর্তমান এমসিইউ টাইমলাইনের সাথে যুক্ত নয়। এর সাথে মার্ভেলের বাকি মুভি/সিরিজের কোনো সম্পর্ক নেই।
মুন নাইটের সমাপ্তি এমন এক জায়গায় ঘটেছে, যেখান থেকে দ্বিতীয় সিজন কন্টিনিউ না করাটা আসলেই দুঃখজনক। সিরিজের পরিচালক মোহাম্মদ দিয়াবও চান এর দ্বিতীয় সিজন আসুক। যেহেতু সিরিজটি দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে, তাই মার্ভেল এই সুযোগ হাতছাড়া না-ও করতে পারে। সিরিজের নতুন সিজন আসার পর তা মার্ভেল সিনেম্যাটিক ইউনিভার্স এর বর্তমান টাইমলাইনের সাথে যুক্ত হয়ে চমক দেখালেও দেখাতে পারে। তবে সেটা স্রেফ সম্ভাবনার গণ্ডিতেই আবদ্ধ। ভবিষ্যতে কী হবে, সময়ই তা স্পষ্টভাবে জানাবে।