
বইয়ের চাইতে শক্তিশালী খাবার এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি!
– মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন
‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো খেতে আসেন নি’- কেমন অদ্ভুত একটা নাম, তাই না? শুধু শুধু এমন নামকরণের কী দরকার, যেখানে বইটা থ্রিলার; আর রবীন্দ্রনাথ তো আর থ্রিলার সাহিত্য নিয়ে লেখালেখিও করেননি। “পাঠককে আকৃষ্ট করার জন্যই এমন নামকরণ“- এরকম অনেক ধরনে মন্তব্যই শোনা গিয়েছিল যখন মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন এই শিরোনামেই তাঁর সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার বইটির ঘোষণা ফেসবুকে দিয়েছিলেন।
অতঃপর কী হলো? এই বই শুধুমাত্র বাংলাদেশেই নয়ম বরং কলকাতাতেও ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পেল। যার ফলস্বরূপ সম্প্রতি জানা গেছে, এই বইয়ের কাহিনীর উপর ভিত্তি করে কলকাতা থেকে ওয়েব সিরিজ বের হচ্ছে। তাই, পাঠক নাম দেখে করবেন না ঠাট্টা, আড়ালে তার জনপ্রিয়তার উপাদান হয়তো লুকিয়ে আছে! যা-ই হোক, যেহেতু আজকের আয়োজন এই বই নিয়ে, তাই আগে কিছু বিষয় সম্পর্কে জেনে আসা যাক।
সমস্ত রহস্য আর অব্যাখ্যাত ব্যাপারগুলো আসলে সাময়িক বিভ্রম। অজ্ঞানতা। একসময় রহস্য ভেদ করে ঠিকই সত্য জানা যায়।
– মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন
অক্টোবর ১৩, ১৯৭২ সাল। চিলি থেকে উড়ে আসা ৪৫ জন যাত্রীসহ বিমানটি বিধ্বস্ত হয় আন্দিজ পর্বতমালার এক দুর্গম অঞ্চলে। বেশ কয়েকদিন খুব খোঁজাখুঁজি করা হলেও দুই সপ্তাহ পেরিয়ে যাওয়ার পর সবাই আশা ছেড়ে দিয়েছিল তাদের বেঁচে থাকার। কেননা বরফের সেই পর্বতমালার কোনে কোনে লুকিয়ে ছিল বিপদ আর মৃত্যু। বিশ্ব তাদের কথাই ভুলেই গিয়েছিল। দুই মাস পর সেই দুর্গম আন্দিজ পর্বতমালায় বিধ্বস্ত বিমানের বেঁচে থাকা যাত্রীদের উদ্ধার করা হয়।
কিন্তু কীভাবে টানা দুই মাস কিছু না খেয়ে এরকম একটি দুর্গম অঞ্চলে বেঁচে ছিল তারা? এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিল সেই ঘটনার সাক্ষী বিধ্বস্ত বিমানের এক যাত্রী। তিনি জানিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে যারা ইতিমধ্যেই মারা গিয়েছিল তাদেরই মৃত শরীর থেকে মাংস ছিঁড়ে খেয়ে বেঁচে ছিল তারা। জ্বি হ্যাঁ, এটা একদমই সত্য ঘটনা। বেঁচে থাকার জন্য মানুষ যে অবিশ্বাস্য অনেক কিছুই করতে পারে- এটা তারই এক জ্বলন্ত প্রমাণ।
খিদের কাছে সব পরাজিত হয়। সবার আগে পরাজিত হয় স্বাদ-রুচি। তারপর যুক্তি-বুদ্ধি, সভ্যতা, মানবিকতা।
– মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন
ছোটবেলায় রূপকথার গল্পে পড়া ডাইনী বুড়িদের কথা মনে আছে? যারা হাজার হাজার বছর ধরে নিজেদের বার্ধক্যকে লুকিয়ে রাখতে তরুণ-তরুণীদের রক্ত কিংবা মাংস খেত। শুধু রূপকথার গল্পই নয়, বাস্তবেও এমন গল্পের বহু নজির খুঁজে পাওয়া যাবে। কিন্তু কেন? মানুষ কেন বার্ধক্যকে ভয় পায়? মনস্তাত্ত্বিক বিষয়গুলো বিচার-বিবেচনা করলে যা দাঁড়ায় তা হচ্ছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নার্সিসিজম বা নিজের প্রতি ভালোবাসা থেকেই মানুষের মনে এমন বিরূপ আচরণের সৃষ্টি হয়। নার্সিসিজম প্রতিনিয়ত নিজেদের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয় এবং যখন বার্ধক্যজনিত কারণে শরীরের চামড়া ঝুলে পড়ে, সুঠাম দেহ ধীরে ধীরে ভঙ্গুর হতে থাকে, শারীরিক সৌন্দর্য যখন ম্লান হতে থাকে, তখন নিজের যৌবনকে ধরে রাখতে তারা ব্যাকুল হয়ে ওঠে। আর মানুষের রক্ত বা মাংসে যে চিরযৌবনের উপাদান আছে তা যুগ যুগ ধরেই মানুষের মনে মিথের মতোই গেঁথে আছে। তাই নার্সিসিস্টদের চিরযৌবনের লোভে প্রাণ হারাতে হয় নিরীহ মানুষজনদের।
মানুষের মন জয় করতে হলে আগে তার পেট জয় করা চাই।
– মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন
মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের বেগ-বাস্টার্ড সিরিজের প্রথম বইয়ের গল্পের প্রেক্ষাপট নিয়েই তুমুল আলোচনার ঝড় বয়ে গিয়েছিল। তারপর থেকে তার বইয়ের শিরোনাম নিয়েও আলোচনা-সমালোচনা দুই-ই হয়েছে। তবে তার লেখা সবচাইতে বেশি আলোচিত-সমালোচিত বইটির নাম হচ্ছে ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো খেতে আসেন নি’। একজন পাঠক বইটি হাতে নিয়েই বলতে পারে, “এ আবার কেমন নাম?” তবে শিরোনামের আবহে গল্প প্রস্তুত করা এবং গল্পের আবহে শিরোনামের যৌক্তিকতায় মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন যে পরিপক্ব তা আবারো প্রমাণ করলেন। জ্বি, এই অদ্ভুত নামকরণের স্বার্থকতা পাবেন বইয়ের গল্প পড়া শেষে। চলুন গল্পপ্রসঙ্গ জেনে নেয়া যাক এখন।

গল্পপ্রসঙ্গ
সুন্দরপুর। ছবির মতোই সুন্দর মফস্বল শহর। একমাত্র প্রকৃতির শোভা ছাড়া দেখার মতো অথবা বলার মতো উল্লেখযোগ্য কিছুই নেই। একদমই যে কিছু নেই তা কিন্তু নয়; অদ্ভুত আর অপ্রচলিত নামের পাশাপাশি অদ্ভুতুড়ে এক রেস্টুরেন্টও আছে এই মফস্বলে। বড় রাস্তার পাশেই একতলা একটি বাংলোতে গড়ে উঠেছে এই রেস্তোরাঁ। রেস্টুরেন্টের সামনের লম্বা বারান্দার উপরে সবুজ রঙের টিনের ছাউনি; সাথে বড় বড় ফ্রেঞ্চ জানালা এবং নক্সা করা বিশাল কাঠের দরজা– সত্যিই মনোমুগ্ধকর।
সাধারণত বড় রাস্তার পাশের রেস্টুরেন্টগুলো এরকম হয় না। সন্ধার পরই বিশাল সাইনবোর্ডটা জ্বলে ওঠে। ভেতরের সাজসজ্জায় প্রকাশ পায় যে, শুধুমাত্র টাকা কামানোই মালিকের মূল উদ্দেশ্য নয়। অদ্ভুতুড়ে নামের এই রেস্টুরেন্টের ভেতরের পরিবেশ আর সার্বক্ষণিক রবীন্দ্রসঙ্গীতের বাজনা সত্যিকার অর্থেই এক অদ্ভুতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি করে। দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিন শয়ে-শয়ে লোক এখানে খাওয়া-দাওয়া করতে আসে। এমনকি এটাও শোনা যায়, এই রেস্টুরেন্টে যে একবার খাওয়া-দাওয়া করে সে নাকি এই রেস্টুরেন্টের খাবার ছাড়া থাকতে পারে না।
অন্যান্য দিনের মতোই রেস্টুরেন্টের অপর দিকে থাকা চা-সিগারেটের টঙ দোকান খোলেন রহমান মিয়া। সুন্দরপুর থানার সাবেক ইনফর্মার আতর আলী প্রতিদিনের মতো সেদিনও রহমান মিয়ার সাথে আড্ডা দিতে আসে। যদিও রহমান মিয়া আতর আলীকে মোটেই পছন্দ করে না, কিন্তু পুলিশের ইনফর্মারের কাজ করে বিধায় মুখে তা কখনো স্বীকার করে না।
সেদিনই অপরিচিত এক লোক আসে রহমান মিয়ার দোকানে। সাধারণত প্রতিদিন অনেক অপরিচিত লোক এলেও এই অপরিচিতের আচরণ অদ্ভুত আর অস্বাভাবিক লাগে। কথায় কথায় অপরিচিত লোকটি আতর আলীকে জানায়, সে শহরের বেশ নামকরা একটা পত্রিকার সাংবাদিক। এখানে এসেছে এই রেস্টুরেন্ট এবং রেস্টুরেন্টের মালিকের উপর গবেষণাধর্মী একটি আর্টিকেলের কাজে। সাথে আতর আলীকে এটাও জানায় যে, তথ্য সংগ্রহ করে দিলে আতর আলীর পকেটও সে গরম করে দেবে। পুলিশের ইনফর্মার কাজ ছুটে গেছে বেশ কয়েকদিন (যদিও সুন্দরপুরের কেউ তা জানে না)। তাই টাকার লোভে আতর আলীও রাজি হয়ে যায় এই কাজে।
প্রাথমিক আলোচনায় লোকটি আতর আলীর কাছ থেকে জানতে পারে, এই রেস্টুরেন্টের মালিকের নাম মুসকান জুবেরী এবং তিনি থাকেন সুন্দরপুরের জোড়পুকুর জমিদার বাড়িতে, তা-ও শুধুমাত্র দুজন কাজের লোককে নিয়ে। সেদিন রাতেই আতর আলী সেই অপরিচিত লোককে নিয়ে যায় সুন্দরপুরের স্কুল মাস্টারের কাছে, যার নাম রমাকান্তকামার। সবকিছু শুনে হোটেলে ফিরে যায় দুজন, কিন্তু আতর আলী চলে যাওয়া মাত্রই লোকটা চলে যায় জমিদারবাড়িতে। রাতের নিগূঢ় অন্ধকারে পাঁচিল টপকে ভেতরে চলে যায় লোকটি। বাড়ির ভেতরে ঢুকে বেশ কিছু অদ্ভুত পরিস্থিতির শিকার হয়, যার মধ্যে মুসকান জুবেরী এবং সুন্দরপুরের গোরখোদক ফালু কর্তৃক কোনো কিছু দাফন করা, বাড়ির পেছন দিকের ডোবায় কুমিরের চাষসহ আরো বেশ কিছু বিভ্রান্তিকর ঘটনা মনের কোনে খটকার সৃষ্টি করে। কোনোমতে সেই রাতে সেখান থেকে পালাতে সক্ষম হলেও পরের দিন সুন্দরপুরের পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যায় লোকটি।

নুরে ছফা। ডিবির ইনভেস্টিগেটর। এখন অবধি তার হাতে যেসব কেস এসেছে সেগুলোর কোনোটিই বিফলে যায়নি। তাই ডিপার্টমেন্টসহ দেশে তার নাম আছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুরোধে সুন্দরপুরে আসে একটি কেসের তদন্তে। মাস তিনেক আগে একে একে পাঁচজন যুবক এক অদ্ভুত নামের রেস্টুরেন্টে খেতে এসেছিল, কিন্তু আর ফিরে যায়নি। একদমই লাপাত্তা। এই পাঁচজনের একজন ঐ উর্ধ্বতন কর্মকর্তার আত্মীয়, তাই নুরে ছফাকে এই কেসের দায়িত্ব দেয়া হয় এবং যত ধরনের সাহায্য দরকার তা করা হবে বলেও প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। শুধু কি নুরে ছফা? ডিবির সাবেক ইনভেস্টিগেটর কে. এস খান বা খোদাদাদ শাহবাজ খানের কাছেও সাহায্য চাওয়া এই কেসের তদন্তে।
মুসকান জুবেরী। রবীন্দ্রনাথ নামের সেই অদ্ভুত রেস্টুরেন্টটির মালিক। অসম্ভব সুন্দরী এবং পাকা রাঁধুনি। জোড়পুকুর জমিদারবাড়িতে একাই থাকেন। একদিন আতর আলী কৌতূহলবশত জমিদারবাড়ির পাঁচিল টপকে ভেতরে ঢুকেছিল কী হয় তা জানার জন্যে। পরমুহুর্তেই আতর দেখেছিল মুসকান জুবেরী রক্তের মতো লাল কিছু একটা পান করছে এবং চোখ দুটো আগুনের মতো জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। এই অস্বাভাবিক ঘটনা সুন্দরপুরের সবার কাছে ছড়ালেও ঘটনাটা আরো বেশি ঘনীভূত হয় সুন্দরপুরের এমপি, এসপি থেকে শুরু করে সকল ক্ষমতাবান হর্তাকর্তাই এই মুসকান জুবেরীর কথায় উঠে বসে। এরপর থেকেই সুন্দরপুরের লোকেরা মুসকান জুবেরীকে ডাইনী আখ্যাতেই চিনে। মুসকান জুবেরী আগে ডাক্তার ছিলেন, কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে ডাক্তারি ছেড়ে এই মফস্বলে এসে কেন খাবারের রেস্টুরেন্ট দিলেন তাই বুঝতে পারেন না ডিবির প্রধান ইনভেস্টিগেটররা।
গোরখোদক ফালু। সুন্দরপুর কবরস্থানে একমাত্র গোরখোদক। তবে ফালু এই এলাকায় কামেল হিসেবেই পরিচিত। এই এলাকার সবাই জানে যে, কেউ মারা যাওয়ার পূর্বেই ফালু টের পেয়ে যায় এবং কবর খোঁড়া শুরু করে দেয়। তাই যাদের অনেক বেশি অসুখ থাকে তারা এসে ফালুর কাছে মিনতি করে যায়, ফালুকে ভালোমন্দ খাইয়্যে খুশি করে দিয়ে যায়। একদিন রাতের আঁধারে ফালুর ঘরে ঢোকে আতর আলী। খাটের নীচে খুঁজে পায় কঙ্কালের বস্তা।
সুন্দরপুরে আদতে কী হচ্ছে? অদ্ভুতুড়ে ঐ রেস্টুরেন্টে এমন কী আছে যে মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে এভাবে ছুটে আসে? রমাকান্তকামার জমিদার বাড়ি সম্পর্কে এমন কী জানে? জমিদারবাড়ির ভেতরে কী দাফন করা হচ্ছিল সেই রাতে? কিংবা কেনই বা কুমিরের চাষ করা হয় সেখানে? ডিবির জাঁদরেল অফিসার নুরে ছফা কিংবা কে. এস খান কি এই তদন্তে সফল হতে পারেন, নাকি অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ব্যর্থ হয় তারা? মুসকান জুবেরী সেদিন রাতে কী পান করছিল, আর কেনই বা চোখ দুটো অমন জ্বলজ্বল করছিল? ডাক্তারি ছেড়ে কেন এখানে এসে রবীন্দ্রনাথ খুলে বসলেন? কী এমন রহস্য আছে এখানে? ফালু কী করে মানুষের মৃত্যুর খবর আগে থেকেই জেনে যায়? ফালু কি তবে সত্যিই ভবিষ্যতদ্রষ্টা? কিন্তু তাহলে ফালুর ঘরে কঙ্কালের বস্তা কেন? আর ঐ পাঁচজন যুবক কী করে একেবারে গায়েব হয়ে গেল? এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে আপনাকে ২৭১ পৃষ্ঠার টান টান উত্তেজনার বই মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন রচিত ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো খেতে আসেন নি’ পড়তে হবে।
লেখকপ্রসঙ্গ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলাতে পড়াশোনা শুরু করলেও পরবর্তীতে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ এবং সাংবাদিকতা বিষয়ের উপর পড়াশোনা শেষ করেন লেখক ও অনুবাদক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন। বিশ্বসাহিত্যের সাড়া জাগানো উপন্যাসগুলো বাংলা ভাষায় অনুবাদ করে পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করেছেন আগেই। তারই ধারাবাহিকতায় নিজের মৌলিক থ্রিলার উপন্যাস দিয়ে নতুন করে পাঠকপ্রিয়তা অর্জনের যাত্রায় নেমে পড়েন।
তাঁর উল্লেখযোগ্য অনুবাদিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে সাড়া জাগানো উপন্যাস দ্য দা ভিঞ্চি কোড, লস্ট সিম্বল, গডফাদার, বর্ন আইডেন্টিটি, বর্ন আলটিমেটাম, দ্য সাইলেন্স অব দ্য ল্যাম্বস, দান্তে ক্লাব, দ্য গার্ল উইথ দ্য ড্রাগন ট্যাটু, ইনফার্নোসহ আরো অনেক উল্লেখযোগ্য বই। মৌলিক উপন্যাসের শুরু হয়েছিল বেগ-বাস্টার্ড সিরিজের নেমেসিস বইটি দিয়ে। এরপর একে একে কন্ট্রাক্ট, নেক্সাস, কনফেশন, করাচি দিয়ে এই সিরিজ ক্রমেই পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করে। এছাড়াও জাল, ১৯৫২, কেউ কেউ কথা রাখে এবং পেন্ডুলাম উল্লেখযোগ্য। এই বছর বইমেলায় এই বইয়ের পরবর্তী বই ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো আসেন নি’ একযোগে কলকাতার অভিযান পাবলিশার্স এবং বাংলাদেশের বাতিঘর প্রকাশনী থেকে প্রকাশ পেয়েছে। এছাড়াও লেখক বর্তমানে বেশ কয়েকটি মৌলিক বই লেখার কাজে ব্যস্ত, যেগুলো হচ্ছে দেওয়াল, পহেলা বৈশাখ, নেক্সট, এলিভেটর, গ্লুমি সানডে এবং ম্যাজিশিয়ান।

মানুষ শব্দকে ছয়টি সুরে বেঁধেছে; স্বাদকে টক-ঝাল-মিস্টি, নোনতা আর তেতো পাঁচটি ভাগে আলাদা করেছে; স্পর্শ হচ্ছে স্থূল ইন্দ্রিয়, যেমন- গরম-ঠান্ডা, নরম-কোমল, শক্ত-তরল-বায়বীয় এর বাইরে কোনো অনুভূতি নেই। কিন্তু গন্ধের বেলায় মানুষ বিপাকে পড়ে গেছে। গন্ধ কয় প্রকার- কেউ নির্দিষ্ট করে বলতে পারে না।
– মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন
মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের আগের বইয়ের রিভিউগুলোতেই বলেছি, তার লেখার ধরনটা একটু ভিন্ন ধরনের। একদম শান্তশিষ্টভাবে লিখে যান। কোনো তাড়াহুড়া নেই, কোনো অপরিকল্পিত কিছু নেই, একদম সাজানো গোছানো পরিপাটি লেখা। পাঠক তাই ধীরে ধীরে রহস্যের গভীরে ডুব দিতে বাধ্য হয়। এই বইয়ের মূল আকর্ষণই হচ্ছে এর শিরোনাম এবং রেস্তোরাঁর খাবারের বিবরণ। বেশ লোভ জাগানিয়া বর্ণনা দিয়েছেন লেখক। আরেকটি ব্যাপার লক্ষ্যণীয়, লেখক গল্পের আবহ তৈরি করতে লেখার মধ্যে চরিত্রের নাম থেকে শুরু করে প্রতিটি বাক্যেই রহস্যের খানিকটা ছোঁয়া দিয়ে গেছেন। প্রতিটি অধ্যায়ের শেষে নতুন কিছুর উন্মোচন নতুন অধ্যায়ের পড়ার গতি বৃদ্ধি করেছে।
অবশ্য পাঠক হিসেবে অসংগতিগুলোও তুলে ধরতে হয়। প্রথমত, বাস্তব দিক থেকে চিন্তা করলে বেশ কিছু ব্যাপার মানতে কষ্ট হয়। কেবল গল্পের স্বার্থেই মনকে সান্ত্বনা দেয়া গেলেও খটকা কিন্তু থেকেই যায়। দ্বিতীয়ত, থ্রিলার গল্পের প্রতিটি চরিত্রই বেশ গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রধান চরিত্রের সাথে একটু হলেও যোগসূত্র থাকে। সেই সূত্র অনুযায়ী ফালু চরিত্রের কথা আসে। কিন্তু ফালুর চরিত্র দ্বারা কেবল পাঠককে ঘোল খাওয়ানো এবং ছমছমে একটি ভাব বজায় রাখা ছাড়া গল্পের প্লটে বিশেষ কোনো ভূমিকা নজরে পড়েনি। তৃতীয়ত, ঐ আগের মতোই বলতে হয়, যুক্তিবাদীতার হিসেব করলে অনেক কিছুই কাল্পনিক এবং গাঁজাখুরি মনে হবে। তবে অসংগতি থাকা সত্ত্বেও বইটি পড়া শেষ করে এই অসংগতিগুলো আলোচনা শেষেও বইটার সব ফাঁকফোকর এক নিমেষেই হাওয়া হয়ে যায় কাহিনীর গতির কাছে।
পাঠককে আকৃষ্ট করবে যেসব কথা
প্রকৃতির প্রতিটি গন্ধেরই আলাদা আলাদা স্বাদ আছে। একটি গন্ধ আরেকটি গন্ধের সাথে মেশানো যায়; একটি স্বাদের সাথে আরেকটি স্বাদেরও মিশ্রণ হয়।
এই দেশে কেরামতিগুণসম্পন্ন বাবা হওয়াটা খুবই সহজ। একজন মস্তিষ্কবিকৃত মানুষও উদ্দেশ্যবিহীনভাবে হাঁটাহাঁটি করে বাবা হয়ে যেতে পারে।
সারাদিন এটা-ওটা করে নিজের একাকীত্ব ভুলে থাকা যায়, কিন্তু রাত খুবই নির্মম। তাকে সারারাত নির্ঘুম রেখে জানিয়ে দেয় আদতে সে বড্ড একা।
যে মারা যায় তার সাথে কেউ সহমরণে গেলেও মৃতব্যক্তির কোনো লাভ হয় না। সহমরণে যে যায় তাঁরই ক্ষতি হয়।
রাজনীতি এমনিতেই ব্যস্ততম একটি পেশা, তাঁর উপরে ক্ষমতাসীন দলের এমপি হলে ব্যস্ততা বেড়ে যায় কয়েকগুণ।
ব্যাচেলর মানুষের আর যা-ই হোক, নিজের ঘরে বেশিক্ষণ থাকতে ভালো লাগে না।