Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

অলীক মানুষ: ব্যক্তিসত্ত্বা বিবর্তনের এক নির্মোহ আখ্যান

আধুনিক বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ উপন্যাসগুলোর তালিকা করা হলে তাতে সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ‘অলীক মানুষ’ অবশ্যই থাকবে। ভাষা, গল্পের গাঁথুনি, চরিত্রায়ন, অঙ্গবিন্যাস সবদিক দিয়েই এই উপন্যাস অনন্য। বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৮৮ সালের এপ্রিল মাসে, গৌতম রায়ের প্রচ্ছদে। কলকাতার দে’জ পাবলিশিং থেকে প্রকাশিত হার্ডবাউন্ড বইয়ের পৃষ্ঠাসংখ্যা ৩২০। মাখনরঙা, ঈষৎ খসখসে কাগজে ছাপা বইটির বাঁধাই, ছাপার মান সন্তোষজনক। বইয়ের প্রচ্ছদে নব্বইয়ের দশকের বাংলা সিনেমার পোস্টারের ছোঁয়া পাওয়া যায়।

সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের জন্ম ১৯৩০ সালে, মুর্শিদাবাদ জেলার খোশবাসপুর গ্রামে, শিক্ষিত মৌলানা পরিবারে। তার দাদা খোশবাসপুর গ্রামের ধর্মগুরু ছিলেন। তিনি সংস্কৃত, আরবি এবং ফার্সি এই তিন ভাষাতেই দক্ষ ছিলেন যার প্রভাব আমরা ‘অলীক মানুষ’ উপন্যাসে লক্ষ্য করি। ছোটবেলায়, পড়ালেখা শেষ না করেই বাড়ি থেকে পালিয়ে তিনি প্রথমে বাম রাজনীতি ও পরবর্তীতে যাত্রাপালার দলে যোগ দিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুড়ে বেড়ান। হয়তো এই কারণেই তিনি লেখায় গ্রামীণ জীবন, মানুষের স্বভাব, চাল-চলন অত্যন্ত সূচারুভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারতেন।

গৌতম রায়ের প্রচ্ছদ; Image Source: Asif Khan Ullash

‘অলীক মানুষ’ উপন্যাসটি মোটাদাগে দুজন মানুষের জীবনের বিবর্তনের গল্প- বদিউজ্জামান ওরফে বদিপির এবং তার কনিষ্ঠপুত্র শফিউজ্জামান ওরফে শফি। দুজন দু’ই ‘মেরুর মানুষ, একজন পরহেজগার পিউরিটান মুসলিম এবং আরেকজন ধর্মত্যাগী নাস্তিক।

উপন্যাসের শুরুটা পরাবস্তব এক আবহের মধ্যে দিয়ে হয়: খুনের দায়ে সদ্য ফাসীর দন্ডপ্রাপ্ত আসামী শফিউজ্জামান এক ঝটকায় নিজেকে নিয়ে যায় তার কৈশোরের একদিনে, যেদিন সে ও তার পুরো পরিবার তাদের বসতী পরিবর্তনের নিমিত্তে যাত্রা করছিল। সেখানে তারা ভাগ্য পরিক্রমায় দুটি অতিপ্রাকৃত ঘটনার সম্মুখীন হয়- প্রথমটিতে এক কালো জ্বীন তাদের পথভ্রষ্ট করে, ও দ্বিতীয় দফায় এক সাদা জ্বীন তাদের সঠিক পথ দেখায়। এখানে যে বিষয়টি লক্ষ্যণীয় সেটি হচ্ছে লেখকের নির্মোহ আচরণ। তিনি এই অলৌকিক ঘটনার পক্ষ যেমন নেননি, তেমনি বিপক্ষেও কোনো যুক্তি দেখাননি। লেখকের এই নির্মোহ আচরণ পুরো উপন্যাসেই অক্ষুণ্ণ থেকেছে।

সম্পূর্ণ দুই মতাদর্শের কথা একই সমান্তরালে বলে গেলেও কখনোই একটি আরেকটিকে টেক্কা দিতে পারেনি। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাত্রা দিয়ে শুরু হওয়া এই উপন্যাস পুরোটাই আসলে দুজন মানুষের যাত্রা। তবে, সেই যাত্রা ভৌগলিক কোনো যাত্রা নয়, এ হলো নিজেকে খোঁজার, নিজের স্বরূপ অনুসন্ধানের। এই উপন্যাস মূলত, দুটি ভিন্ন মতধারার, ভিন্ন আদর্শের দুজন মানুষের বিবর্তনের প্রতিচ্ছবি। তবুও প্রশ্ন থেকেই যায়- আসলেই কি ভিন্ন? শফিউজ্জামান তার পিতা বদিউজ্জামানের থেকে কতটুকু আলাদা, দিনশেষে তারা কি একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ নয়? মহাকাব্যিক এই উপাখ্যান যত না প্রশ্নের উত্তর দেয়, তার চেয়ে অনেক বেশি সংখ্যক প্রশ্ন উত্থাপন করে পাঠকের মননে।

সস্ত্রীক লেখক; Image Source: Two Circles

বদিউজ্জামান ছিলেন ফরায়েজী ধর্মগুরু। তিনি সরাসরি হাজী শরিয়তুল্লাহর মুরিদ ছিলেন। তার ইসলামের সুফি মতবাদ, পীরপ্রথা এসবের প্রতি বিতৃষ্ণা ছিল। এমনকি অনেক পীরের থানও তিনি ভেঙে দেন। তবে সময়ের বিবর্তনে তিনি নিজেই পরিণত হন বুজুর্গপির বা বদুপিরে। বদিউজ্জামান অত্যন্ত স্ববিরোধী মানুষ, যে পীরপ্রথার বিরোধ তিনি করেন নিজের কাজকর্ম, ব্যক্তিত্বের মাধ্যমে, তিনি নিজে সেই প্রথারই লালন করেন। আবার তাকে ‘লালসালু’ উপন্যাসের মজিদের মতো ভন্ডও বলা যাচ্ছে না, কেননা মজিদের সেই কুটিলতা তার মধ্যে নেই।

নিজের সহোদর ফরিদুজ্জামানকে তিনি সুফিবাদ চর্চার অপরাধে বড় চুল কাটিয়ে মাথা ন্যাড়া করে ফরায়েজি মাজহাবে টানতে চেষ্টা করেন। সেই তিনিই আবার শেষ বয়সে এসে ভাবেন স্রষ্টার প্রকৃত পরিচয় হয়তো ফরিদুজ্জামানের মতো মাজনুনরাই পেয়েছে। ভরা মসজিদে কাউকে কতল করার ফতোয়া দিয়ে সেই তিনিই আবার হত্যাসংবাদ শুনে কেঁদে বুক ভাসান, হাশরের ময়দানে নিজের নেকীর অর্ধাংশ সেই হতভাগ্যকে দান করে দিতে চান।

সাধারণ কোনো ঘটনার উপর আলৌকিকতা আরোপ করার সুযোগ তিনি ছাড়েন না, আবার গ্রামবাসী, মুরিদেরা তার মোজেজার নামে আলৌকিক গালগল্প প্রচার করলে সেগুলোর খণ্ডনও তিনি করেন না। নিজের চারপাশে এই আলৌকিকতার বিভ্রম ছড়ানোই কিন্তু বদিউজ্জামানকে পূর্ণাঙ্গভাবে তুলে ধরে না। এখানেই সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের মুন্সিয়ানা। তিনি এই উপন্যাসে জাদুবাস্তবতার ছোঁয়া নিয়ে এসেছেন বদিউজ্জামানের মোজেজার মাধ্যমে। তিনি বদিউজ্জামান চরিত্রকে ফেলে দেন এক আশ্চর্য টানাপোড়নে, যে অস্তিত্বসংকট উপন্যাসে বদুপিরের জবানীতে ফুটে উঠেছে এভাবে, “ওহাবি হয়েও আমি যেন মোজেজা দেখি। আলৌকিক ঘটনা অনুভব করি। আমাকে আল্লাহ কোন রাস্তায় নিয়ে চলেছেন? আমি যে সত্যিই পির বুজুর্গ হয়ে পড়লাম! বুকের ভেতর আর্তনাদ উঠল, আমি মানুষ! আমি মানুষ! নিতান্ত এক মানুষ!”  

ভালো খারাপের উর্ধ্বে এক ধূসর জায়গায় আমরা এই চরিত্রকে খুঁজে পাই; অনেক ক্ষমতা, প্রতিপত্তি, প্রাচুর্য্য থাকার পরও যে নিজের জীবন নিজের মতো করে যাপন করতে অপারগ, পারিবারিক জীবনে অসুখী। লেখকের ভাষায়, “জীবনের অনিবার্য স্পষ্টতাগুলো নিজেকে উঁচুতে তুলে রাখার দরুন ক্রমশ অস্পষ্ট হয়ে উঠছিল তার কাছে। ” বদিউজ্জামান এমন এক চরিত্র যার রেশ পাঠকের মনে রয়ে যায় বই পড়ার অনেকদিন পরেও।

সুন্দরবনের কিংবদন্তি গাজী পীর; Image Source: Wikipedia

এই বদিউজ্জামানের কনিষ্ঠপুত্র হলো শফিউজ্জামান। বড় ছেলে নুরুজ্জামান গিয়েছিল দেওবন্দে ইসলামী দীক্ষা নিতে, মেজ ছেলে মুনিরুজ্জামান শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী, তাই বলা যায় শফি বড় হয়েছে একা একাই। লেখক শফির একাকিত্বের বর্ণনা করেছেন এভাবে, “সেই শেষ বসন্তের দিনটিতে সেই প্রথম শফি এই বিরাট পৃথিবীতে একা হয়ে গিয়েছিল, পিছিয়ে পড়েছিল দলভ্রষ্ট হয়ে- তারপর বাকি জীবন সে একা হয়েই বেঁচে ছিল। ” নিজে আলেম হয়েও বদুপির তার ছোট ছেলের পড়াশোনা শুরু করিয়েছিলেন ইংরেজি মাধ্যমে, হয়তো তার মনের সুপ্ত বাসনা ছিল শফি যেন সিদ্ধ পুরুষ না হয়ে একজন সাধারণ মানুষ হয়ে বাঁচে, যে সাধারণ জীবনের আকাঙ্ক্ষা তিনি জীবনভর করে গেছেন।

দেওয়ান বারি মিয়ার সংস্পর্শে এসে শফির মধ্যে আরো পরিবর্তন ঘটে, সে চিনতে থাকে প্রকৃতিকে, নিজেকে। এবং ধীরে ধীরে ধর্ম থেকে দূরে সরে যেতে থাকে। মূলত শফিউজ্জামানের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা ছিল দিলরুখ আফরোজ তথা রুকুর সাথে তার মেজ ভাইয়ের বিয়ে। শফি রুকুকে ভালোবেসে ফেলেছিল এবং তার সামনে সুযোগ ছিল রুকুকে আপন করে পাবার, তবুও সে প্রত্যাখ্যান করে তাকে। ফলশ্রুতিতে, রুকুকে সংসার করতে হয় জড়বৎ মনিরুজ্জামানের সাথে। এই কৃতকর্মের জন্য শফি কখনোই নিজেকে ক্ষমা করতে পারেনি, সে তার অস্তিত্বকে ঘৃণা করে গেছে আজীবন। অনুসন্ধান করে গেছে ভালোবাসার: আসমার কাছে, সিতারার কাছে, স্বাধীনবালার কাছে।

সিতারার কাছে নিজেকে প্রমাণ করার জন্য খুন করেছে পান্না পেশোয়ারিকে, পালিয়ে এক ব্রাহ্ম আশ্রমে গিয়ে স্বাধীনবালার পিতৃহত্যার বদলা নিতে খুন করেছে গোরা নীলকর সাহেবকে, আবার রত্নময়ীর অত্যাচারী পিতার জীবনও তার মাধ্যমেই কবচ হয়েছে। তাহলে কি শফি একজন নির্দয় খুনি? সাইকোপ্যাথ? না, লেখক তাকে সেভাবে গড়েননি। শফিউজ্জামান একটা বৈষম্য, অপরাধবিহীন সমাজ চায়, তাই তো সে স্বদেশীদের দলে নাম লেখায়। ব্রাহ্ম আশ্রমে থাকার সময় ব্যাপক পড়াশোনা করার সুযোগ তার হয়। সেখান থেকেই মার্ক্সবাদ তাকে প্রভাবিত করে। অবিচারের সাথে লড়াই করে সাধারণ মানুষের কাছে সে হয়ে ওঠে ছবিলাল, এক কিংবদন্তি বীরপুরুষ। বদিউজ্জামান ও শফিউজ্জামানের ক্রমবিবর্তনের মধ্য দিয়েই এই অনবদ্য উপাখ্যান এগিয়ে যায়।

লেখকের এই সিরিজের লেখাও অনেক জনপ্রিয়; Image Source: Amazon

সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ এই উপন্যাসে নারী চরিত্রগুলোকে অসাধারনণভাবে চিত্রিত করেছেন। প্রতিটি নারী চরিত্রই এই উপন্যাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। সাঈদা, করিমুন্নেসা, দরিয়াবানু, ইকরাতন, রুকু, রোজি, আয়মণি, সিতারা, আসমা, স্বাধীনবালা, রত্নময়ী প্রতিটি চরিত্রের নিজস্ব ব্যক্তিত্ব, স্বকীয়তা আছে। প্রতিটি চরিত্রের মধ্যেই আমরা এক স্বাধীনচেতা ভাব দেখি। সাঈদার একা হাতে বদিউজ্জামানের সংসার সামলানো, নারী মহলে স্বামীর আলৌকিকত্ব প্রচার থেকে আমাদের মনে হয় সে বুঝি বদিপিরের একান্ত অনুগত স্বত্ত্বা তার মুরিদদেরই মত। কিন্তু যখন এক ঝড়ের রাতে পরনারীতে আসক্ত সন্দেহে সাঈদা বদিউজ্জামানকে ফিরিয়ে দেয় তখন আমরা তার চরিত্রের শক্তিশালী দিকের সাথে পরিচিত হই। দরিয়াবানু নিজে কঠোর হাতে ফুর্তিবাজ স্বামীর সংসার, জমিজমা সামলেছেন ম্বামীর মৃত্যূর পরেও, দুই কন্যাকে বড় ঘরে বিয়েও দিয়েছেন। স্বাধীনবালা, রত্মময়ীর মত প্রতিবাদী চরিত্র লেখক ফুটিয়ে তুলেছেন। মূলত, এই উপন্যাসে প্রত্যেকটি নারী চরিত্রেরই একটি গল্প আছে, ভিন্ন ভিন্ন মাত্রা আছে। যেটা সমসাময়িক বেশিরভাগ উপন্যাসেই থাকতো না।  

‘অলীক মানুষ’ উপন্যাসে তৎকালীন গ্রামীণ সমাজের, আরো নির্দিষ্ট করে বললে মুসলিম সমাজের সংস্কৃতি, অন্তর্দ্বন্দ্ব খুব ভালোভাবে ফুটে উঠেছে। হিন্দু বর্ণপ্রথার মতো আশরাফ-আতরাফ দ্বন্দ্ব, ফরায়েজি আন্দোলন, ব্রাহ্ম আন্দোলন, তৎকালীন গ্রামীণ জীবন, সাংস্কৃতিক পরিস্থিতি সবই সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ ফুটিয়ে তুলেছেন শৈল্পিকভাবে। পুণ্ড্র, বরেন্দ্র, গৌড়, রাঢ়, সমতট, হরিকেল সবই এই বাংলার অংশ থাকলেও তাদের অন্ত্যজ সংস্কৃতির মধ্যে ফারাক ছিল অনেক, যা এখনও বিদ্যমান। সিরাজ সাহেব সেই রাঢ় অঞ্চলেরই ভিন্ন মতাদর্শের প্রভাবে সমাজ-সংস্কৃতির অথবা সমাজ-সংস্কৃতির প্রভাবে ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শের যে পারস্পরিক মেটামরফোসিস সেটিই তুলে এনেছেন শফিউজ্জামান ও বদিউজ্জামানের নিজ নিজ অস্তিত্ব সংকটের মাধ্যমে, নিজের স্বকীয় ভাষায়; পরাবাস্তবতা, আধ্যাত্মিকতা, আবার কঠোর বাস্তবতা যে ভাষায় মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে।

লেখক দেখিয়েছেন- কীভাবে বদিউজ্জামান বার বার পীরপ্রথার বিরুদ্ধে যেতে চাইলেও হেরে যাচ্ছেন নিজের কাছে, নিজের সত্তার কাছে, লোকজ সংস্কৃতির কাছে। এমনকি নুরুজ্জামান চরিত্রের মাধ্যমে লেখক দেখিয়েছেন ধর্মের ধ্বজাধারী লোকেরাও কীভাবে অন্যকে তাদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করে দিনের পর দিন। সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ উক্ত সময়কে বেধে ফেলেছেন তার গল্প বলার শক্ত গাঁথুনি ও ভাষার অবিস্মরণীয় প্রয়োগে। মূলত এটা সম্ভব হয়েছে কারণ প্রথম জীবনে তিনি মুসলিম সংস্কৃতিকে যেভাবে হৃদয়ঙ্গম করেছিলেন, পরবর্তীতে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছিলেন সনাতনী সংস্কৃতিও।  

বইটির ইংরেজি অনুবাদের প্রচ্ছদ; Image Source: Goodreads

পাঁচ দশকেরও বেশি আগে রচিত এই উপন্যাসের বিন্যাস অত্যন্ত চমকপ্রদ; লেখক কখনো তৃতীয় পুরুষে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি বর্ণনা করেছেন, আবার কখনো শফিউজ্জামান, বদিউজ্জামান বা রুকুর জবানীতে, কখনো আবার যুক্ত হয়েছে ডায়েরির পাতা, চিঠি বা খবরের কাগজের সংবাদ। এবং এই যে রূপান্তর, এটা করেছেন একেবারেই অতর্কিতভাবে; যেমন- শফিউজ্জামানের জবানী পড়তে পড়তেই একটু খটকা লাগে এবং কিছুদূর পড়ার পর বোঝা যায় এখন আসলে বলছেন বদিউজ্জামান। সেই সময়ের হিসেবে উপন্যাসের এমন গঠন প্রচন্ড উচ্চাকাঙ্ক্ষী তো বটেই। এর প্রতিদানও সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ পেয়েছেন। ‘অলীক মানুষ’ ভারতজুড়ে গৃহীত হয়েছে একটি নির্দিষ্ট সময়ের নির্মোহ ডকুমেন্টেশন হিসেবে, অনূদিত হয়েছে ১১টি ভাষায়। লেখক লাভ করেছেন ভুয়ালকা পুরস্কার, বঙ্কিম স্মৃতি পুরস্কার, সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কারসহ আরো অনেক সম্মাননা। নিঃসন্দেহে এটি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সেরা উপন্যাস হিসেবেই বিবেচিত হবে।

This is a review of Bangla novel Alik Manus by Syed Mustafa Siraz

Feature Image Source: Anandabazar

Related Articles