Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

গডজিলা এবং মনস্টার ইউনিভার্সের দানবগুলো

গডজিলা নামটি শুনলেই আমাদের মনে যে বিশালাকার দানবের ছবি ভেসে উঠে সিনেমার জগতে তার অস্তিত্ব বহু আগের। আমাদের ছোটবেলায় দেখা বাংলাদেশ টেলিভিশনে গডজিলা কার্টুন থেকে ‘গডজিলা : দ্য কিং অব দি মনস্টারস’ নামে নতুন গডজিলা সিনেমার মধ্যে যে গডজিলা এবং অন্যান্য দানবসমূহকে দেখা যায় তাদের ইতিহাস প্রচুর গভীর!

পঞ্চাশের দশকে জাপানে প্রথম গডজিলা সিনেমা মুক্তি পায়। প্রথম থেকেই মানুষের মনে জায়গা করে নেয়া এই দানবকে নিয়ে বহু সিনেম্যাটিক ইউনিভার্স তৈরি হয়েছিলো। সিক্যুয়েল সিনেমার সাফল্যে টোহো কোম্পানিকে (গডজিলা সিনেমাগুলোর প্রস্তুতকারক) আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। 

যুগে যুগে গডজিলাকে কেন্দ্র বিভিন্ন সিনেমা, সিরিজ, গেমস তৈরির ফলে গডজিলার সাথে সাথে আরো অনেক দৈত্য-দানব জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এসব দৈত্য-দানবকে নিয়ে মোট ২৯টি জাপানী সিনেমা, ৫টি আমেরিকান সিনেমা, বেশ কিছু টেলিভিশন সিরিজ, ৩৪টি ভিডিও গেম, অনেকগুলো কমিক্স/মাঙ্গা এবং বই রয়েছে! 

আজকের এই লেখার উদ্দেশ্য হলো টোহো কোম্পানির ওপর ভিত্তি করে ওয়ার্নার ব্রাদার্সের তৈরি মনস্টার ইউনিভার্সের বিখ্যাত এবং কুখ্যাত কিছু দৈত্য-দানবকে পরিচয় করিয়ে দেয়া।

গডজিলা

‘গজিরা (১৯৫৫) ‘ সিনেমাতে গডজিলা; Image Source : slashfilm.com

দৈত্য দানবদের ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় গডজিলার প্রথম আবির্ভাব হয় ১৯৫৫ সালে মুক্তি পাওয়া জাপানী সিনেমা ‘গজিরা’র মাধ্যমে। শুরুর দিকের সিনেমাগুলো গডজিলা মানবজাতির ক্ষতি করা এক দানব হিসেবে থাকলেও পরবর্তীতে সিনেমাগুলোতে মানবজাতির বন্ধুবর হিসেবেই থাকে প্রায় সাড়ে তিনশো ফুট লম্বা এই দানব। 

গরিলার জাপানী গরিরা এবং কুমিরের জাপানিজ কুজিরা মিলে জাপানিজে এ গজিরা (গডজিলা) নামটি এসেছে। গডজিলা হলো অনেকটা ডাইনাসোরদের মতো দেখতে প্রাণী যা শত শত বছর পর জেগে ওঠে সাগরের তলদেশ থেকে।

গডজিলাকে এই ইউনিভার্সের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং শক্তিশালী দানব মানা হয়। সাগরের তলদেশ থেকে উঠে আসা পারমাণবিক শক্তিসম্পন্ন এই দানব বহুবার পৃথিবীকে অন্যান্য দানবের হাত থেকে রক্ষা করে। গডজিলাকে সমস্ত দানবদের রাজা ‘কিং অব দি মনস্টারস’ও ডাকা হয়।

গত ষাট বছর ধরে দৈত্য-দানবদের নিয়ে যত সিনেমা, গেমস ইত্যাদি তৈরি হয়েছে প্রায় সবগুলোতে গডজিলার কিছুটা ছায়া ছিলো!

মথ্রা

‘গডজিলা: কিং অব দি মন্সটার্স’ সিনেমার মথ্রা পোষ্টার; Image Source : zedge.net

গডজিলা ইউনিভার্সের দানবদের নিয়ে যতগুলো সিনেমা তৈরি হয়েছে তার মধ্যে গডজিলার ঠিক পরপরই মথ্রার অবস্থান। বিশালাকার এই মথও (প্রজাপতি) গডজিলার মতো মানবজাতির বন্ধুবর বলা যায়। গডজিলাকে যেমন ‘কিং অব দি মনস্টারস’ ডাকা হয়, তেমনি মথ্রাকেও ‘কুইন অব দি মনস্টারস’ ডাকা হয়। 

১৯৬১ সালে ‘মথ্রা’ সিনেমাতে প্রথম এই দানবের আবির্ভাব হয়। সেসময় থেকেই বিশালাকার এই দানব দর্শকদের মনে জায়গা করে নেয়। যার ফলে হালের ‘গডজিলা: কিং অব দি মনস্টারস’সহ যুগে যুগে গডজিলার বহু সিনেমাতে মথ্রার আগমন ঘটেছে। 

অন্য দানবদের মতো অতটা শক্তিশালী না হলেও মথ্রাকে মনস্টার ইউনিভার্সের সবচেয়ে বুদ্ধিমতী এবং দক্ষ দানব অতি সহজেই বলা যায়। অনেকটা মানুষের মতো আবেগ এবং সহমর্মিতা আছে বলেই মথ্রাকে অন্যান্য দানব থেকে সহজেই আলাদা করা যায়। 

‘গডজিলা ভার্সেস মথ্রা’ সিনেমার মতো শুরুর দিকে গডজিলার বিপক্ষে থাকা মথ্রা পরবর্তীতে গডজিলার পক্ষে থেকে লড়াই করে। লড়াইয়ের সময় মানবজাতির খাতিরে মৃত্যুবরণ করে নিতে রাজি এই দানব। বলা যায়, দায়িত্ববোধই মথ্রার সবচেয়ে বড় অস্ত্র।

গিদোরা

‘গিদোরা: দ্য থ্রি হেডেড মনস্টার্স’ সিনেমাতে গিদোরা; Image Source : nerdist.com

গিদোরা নামক তিন মাথাওয়ালা এই ড্রাগনকে গডজিলার চিরশত্রু মানা হয়। মথ্রার মতো অনেকগুলো গডজিলা সিনেমাতে দানবীয় এই হাইড্রার দেখা পাওয়া যায় এবং প্রায় সবগুলো সিনেমাতেই গডজিলার বিপক্ষে ছিলো গিদোরা। গ্রিক মিথলজির দানব ‘হাইড্রা’র উপর ভিত্তি করে তিন মাথা, দুই লেজ এবং পাখা বিশিষ্ট এই দানবের জন্ম।

উড়তে পারা এই দানবের প্রথম আবির্ভাব হয় ১৯৬৪ সালে মুক্তি পাওয়া ‘গিদোরা: দ্য থ্রি হেডেড মনস্টার্স’ সিনেমাতে। নতুন ‘গডজিলা: দ্য কিং অব দি মনস্টার্স’ সিনেমাটিতেও গডজিলার বিপক্ষে থাকে এই গিদোরা। গিদোরা ছাড়াও এই দানবকে ‘কিং গিদোরা’, ‘দ্য ফলস কিং’ এবং ‘মেকা কিং গিদোরা’ ডাকা হয়।

রোডান

‘গডজিলা: কিং অব দি মন্সটার্স’ সিনেমার রোডান; Image Source : zedge.net

নতুন গডজিলা সিনেমাতে গডজিলা এবং মথ্রার বিপক্ষে লড়তে দেখা যায় গডজিলা ইউনিভার্সের আরেক পরিচিত দানব রোডানকে। প্রাচীনকালের একপ্রকারের উড়ন্ত ডাইনাসোর ট্যারাডাক্টলের মতো দেখতে রোডানকে প্রথম ‘গিদোরা: দ্য থ্রি হেডেড মনস্টার্স’ সিনেমার পর্দায় এনেছিলো টোহো কোম্পানি। সিনেমাটিতে গিদোরার পক্ষে থেকে গডজিলার সাথে লড়াই করে রোডান।

আগ্নেয়গিরির থেকে জন্ম নেয়া এই বিশালাকার দানবের ওড়ার শক্তির সাথে বিভিন্ন শহর ধ্বংস হয়ে যেতে থাকে! বিশেষ শক্তির মধ্যে সনিক বুম সৃষ্টি করে প্রতিপক্ষকে আঘাত হানতে পারে রোডান।

এই দানবটি কখোনো গডজিলার মূল শত্রু না হয়ে বরাবরই খলচরিত্রের পাশ্বচরিত্র হিসেবে ছিলো।

কিং কং 

‘কং: দ্য স্কাল আইল্যান্ড’ সিনেমাতে কিং কং; Image Source : hdwallpapers.in

কিং কং অথবা শুধু কং নামে পরিচিত বিশালাকার এই গরিলা গডজিলার পরপরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে পরিচিত দানব। এতটা পরিচিত পাবার রহস্য হলো পিটার জ্যাকসন পরিচালিত ২০০৫ সালে মুক্তি পাওয়া সিনেমা ‘কিং কং’। সিনেমাটি তৎকালীন সময়ে অনেক জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো। কিং কং মুক্তি পাবার পরেও অনেকে জানতেন না যে কং নামের দানবটি গডজিলা ইউনিভার্স অর্থাৎ টোহো কোম্পানির সৃষ্টি। প্রায় পঞ্চাশ মিটার উঁচু এই দানবের প্রথম আবির্ভাব ঘটে ষাটের দশকের সিনেমা ‘কিং কং ভার্সেস গডজিলা’ সিনেমাটিতে। শুরুতে গডজিলার শত্রু হিসেবে থাকলেও পরবর্তীতে হিরো, এন্টি-হিরো দুটির ভূমিকাই পালন করে কং। 

টোহো কোম্পানির সিনেমাগুলোতে কিং কং আজগুবি সব শক্তির অধিকারী ছিলো। কং বৈদ্যুতিক শক্তি নিক্ষেপ করতে পারতো এবং নিজের আকার বাড়িয়ে গডজিলার সমান করতে পারত!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিং কং অনেকটাই আলাদা ছিলো টোহোর কিং কং থেকে। অনেকটা বন্ধুবর এবং আবেগময় হিসেবে কংকে দেখা যায় আমেরিকান সিনেমাগুলোতে।

পিটার জ্যাকসনের ‘কিং কং’ ছাড়াও ২০১৭ সালে মুক্তি পাওয়া ‘কং: দ্য স্কাল আইল্যান্ড’ সিনেমাতে কিং কংকে দেখা যায়। ‘কং: দ্য স্কাল আইল্যান্ড’ সিনেমাটি ওয়ার্নার ব্রাদার্সের তৈরি করা মনস্টার ইউনিভার্সের অংশ। ২০২০ সালে ‘কং ভার্সেস গডজিলা’ মুক্তি পাবার কথা রয়েছে।

বেহেমথ 

‘গডজিলা: কিং অব দি মনস্টার্স’ সিনেমাতে বেহেমথ ; Imagesource : godzillapedia

বেহেমথ একমাত্র দানব যাকে ‘গডজিলা: কিং অব দি মনস্টার্স’ সিনেমাটির আগে কোনো সিনেমাতে দেখা যায়নি। দানবটিকে শুধুমাত্র এই সিনেমাটির জন্যই তৈরি করা হয়েছে।

প্রাচীনকালের বিশালাকার হাতি ম্যামথ আর গরিলার সংমিশ্রণ বলা চলে বেহেমথকে। সিনেমাটির পরিচালক মাইকেল ডোহার্টি মূলত বেহেমথকে তৈরি করেন আরেক বিশালাকার গরিলা কংকে সমর্থন দেয়ার জন্য।

মেকাগডজিলা

‘গডজিলা ভার্সেস মেকাগডজিলা’ সিনেমার দৃশ্য; Image Source : Imdb.com

গডজিলার এই চিরশত্রু নতুন মনস্টার ইউনিভার্সের সদস্য না হলেও পুরোনো টোহো সিনেমাগুলোর অনেকটুকু জুড়েই ছিলো। মেকাগডজিলার প্রথম আবির্ভাব হয় ১৯৭৪ সালের সিনেমা ‘গডজিলা ভার্সেস মেকাগডজিলা’তে। মেকাগডজিলাকে এন্টি-গডজিলা নামেও ডাকা হয়।

টোহো সিনেমাগুলোতে তিন ধরনের মেকাগডজিলার অস্তিত্ত্ব পাওয়া যায়। মেকাগডজিলা মূলত গডজিলার যান্ত্রিক সংস্করণ! প্রথম সিনেমাটিতে মেকাগডজিলাকে এলিয়েনরা পাঠায় পৃথিবীতে গডজিলার সাথে লড়াই করবার জন্য। দ্বিতীয় মেকাগডজিলাকে ‘জি-ফোর্স’ তৈরি করে কিং গিদোরার দেহাবশেষ থেকে এবং শেষ মেকাগডজিলাকে গডজিলার দেহাবশেষ থেকে তৈরি করা হয়।

টোহো সিনেমাগুলোতে গডজিলার সবচেয়ে ভয়ংকর শত্রু ছিলো এই মেকাগডজিলা। গডজিলার সমান শক্তি সাথে মিসাইল, লেজার ইত্যাদি অস্ত্রশস্ত্র মেকাগডজিলার ছিলো!

বর্তমান সময়ে মিসাইলসহ যান্ত্রিক গডজিলাকে দেখতে একটু আলাদাই লাগবে! কিংবদন্তী এই দানবকে নতুন মনস্টার ইউনিভার্সে যুক্ত না করার কারণ হয়তো এটিই।

মুতো’স

‘গডজিলা (২০১৪)’ সিনেমাতে ‘মুতো ১’ এবং ‘মুতো ২’; Image Source : godzilla.fandom.com

মুতো (MUTO – Massive Unidentified Terrestrial Organism); আরেক প্রকারের দানব যা শুধুমাত্র ওয়ার্নার ব্রাদার্সের মনস্টারভার্সের জন্য তৈরি করা হয়ছে। অর্থাৎ পুরোনো টোহো সিনেমাগুলোতে মুতোর কোনো অস্তিত্ত্ব ছিলো না। 

২০১৪ সালে মুক্তি পাওয়া মনস্টারভার্স এর প্রথম সিনেমা ‘গডজিলা’তে গডজিলার বিপক্ষে ‘মুতো ১’ এবং ‘মুতো ২’ নামের দানব দুটি লড়াই করে গডজিলার সাথে। ‘গডজিলা: কিং অব দি মনস্টার্স’ সিনেমাতেও একটি মুতোকে অল্প সময়ের জন্য দেখা যায়।

বিশালাকার ঘাসফড়িঙের মতো দেখতে এই দানব গডজিলার মতো পারমাণবিক শক্তির উপর বেঁচে থাকে। স্ত্রী মুতো উড়তে পারে এবং পুরুষ মুতো থেকে আকারে বড় হয়।

শক্তি হিসেবে মুতো ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক পালস তৈরি করতে পারে যা নির্দিষ্ট এলাকার ভেতরে সমস্ত বৈদ্যুতিক জিনিসের ক্ষমতা কেড়ে নেয়।

এই দানবগুলো মূলত ওয়ার্নার ব্রাদার্সের মনস্টার ভার্সে এ পর্যন্ত দেখানো হয়েছে। টোহো কোম্পানির গডজিলা ভার্সে ‘অরগা’, ‘কিং সিজার’, ‘গিগানে’র মতো আরো অনেক বিখ্যাত দানব রয়েছে যা এখনো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেমা পর্দায় দেখা যায়নি। ভবিষ্যৎ সিনেমাগুলোতে টোহো কোম্পানির অন্য কোন দানবগুলোকে দেখা যায় তা দেখার বিষয়।

সিনেমা সম্পর্কে আরও জানতে আজই পড়ুন এই বইগুলো

১) নতুন সিনেমা সময়ের প্রয়োজন

২) সিনেমা এলো কেমন করে

৩) বাঙালির সিনেমা

৪) কেমন করে সিনেমা তৈরি হয়

This is a bangla article about the monsters of godzilla universe.

Featured Image © deviantart.com

Necessary sources are hyperlinked.

Related Articles