‘ইয়োতুনহেইমে উর্দের কুয়ার কাছে পৌঁছালেন ওদিন। আট দশটা সাধারণ কুয়া না; জ্ঞানকুয়া। পানি পানে অর্জিত হয় অতীত ও ভবিষ্যতের প্রজ্ঞা। কুয়ার তদারককারী মিমিরকে পানি দিতে অনুরোধ করলেন ওদিন। কিন্তু এতো বড় উপহার বিনামূল্যে দেয়া যায়? তাই মিমিরের প্রস্তাব, পানির মূল্য বাবদ একটা চোখ দিতে হবে কুয়ায়। শেষমেশ কিন্তু ওদিন পানি পেয়েছিল নিজের একটা চোখ বিসর্জন দিয়েই। সেই থেকে ওদিন এক চোখওয়ালা। আর সেই দিন থেকেই ওদিন প্রবল প্রজ্ঞার অধিকারী।’
নর্স মিথের এই আখ্যানটায় দুনিয়াবি চোখ কোরবানি করার মধ্য দিয়ে আধ্যাত্মিক চোখ লাভকে প্রতীকায়িত করা হয়েছে। অবশ্য ভাইকিংদের নাম শুনলেই সংস্কৃতি না; তরবারি হাতে নৌকায় দাপিয়ে বেড়ানো বাদামি বর্ণের দুর্ধর্ষ যোদ্ধাদের মুখ চোখে ভাসে আজকাল। এর কারণ বোধ হয় পৃথিবীর উত্তর প্রান্তের সেই মানুষগুলো সম্পর্কে জ্ঞানের স্বল্পতা। তাদের সম্পর্কে পাওয়া তথ্যের সিংহভাগই প্রতিপক্ষের নথিবদ্ধ ক্রোধের প্রকাশ। সেখানে তারা খলনায়কের রূপে অঙ্কিত। অথচ নর্স সংস্কৃতি অন্য যেকোনো সংস্কৃতির চেয়ে বেশি বৈ কম সমৃদ্ধ না। তার অন্যতম স্বাক্ষর পুরাণ।
দেবরাজ ওদিন
নর্স মিথের অন্যতম প্রভাবশালী এবং জটিল চরিত্র সর্বপিতা ওদিন (প্রচলিত শব্দ ওডিন ঠিক নয়)। ওদিন শব্দটা ওদর (অর্থ- প্রেরণা) এর সাথে ইন প্রত্যয় যোগে গঠিত। অবশ্য উন্মাদ অর্থও করা হয় কখনো। একসময় যোদ্ধা, জাদুকর, জ্ঞানী এবং ভ্রমণকারী প্রত্যেকেই ওদিনকে স্মরণ করতো কর্মে দৃঢ়তা এবং কেন্দ্রীভূত মনোযোগের জন্য। প্রাচীন ইংরেজিতে Woden শব্দটি প্রাচীন স্যাক্সনে Wuotan এবং প্রাচীন জার্মানে ভোতান; যাকে ভারতীয় ঋগবেদের দেবতা বাত্যার পাশে রেখে পাঠ করা যায়। ইংরেজিতে Wednesday শব্দটি এসেছে মূলত Woden’s day থেকে।
ওদিন বুদ্ধিমান এবং প্রাজ্ঞ। কেবল ভবিষ্যতই দেখতে পারেন না, সেই সাথে কথা বলতে পারেন আত্মা এবং মৃতদের সাথেও। মুহূর্তেই নিজের আকৃতি বদলে ফেলে সাপ, ঈগল কিংবা অন্যান্য শক্তিধর প্রাণীর রূপ ধারণ করতেও সক্ষম। মানুষকে মোহিত করে কাজ আদায় করে নেয়া তার সাধারণ স্বভাবের মধ্যেই পড়ে। তার কথায় বাক্য বিন্যাস হয় কবিতার ধাঁচে। নর্স মিথের কোনো দেবতাই পুরোপুরি ভালো বা মন্দ না। ওদিনের ক্ষেত্রেও সেই কথা প্রযোজ্য।
নর্স মিথ জুড়ে ওদিনের বহু কাজে জ্ঞানের প্রতি আকর্ষণ স্পষ্ট হয়েছে। কোনো সীমানা, নিয়ম কিংবা আইন তার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। এমনকি মৃত্যুও থামাতে পারেনি জ্ঞানের ক্ষুধা। ওদিনের ঘোড়া স্লেইপনিরের পা আটটা; যা তাকে অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে দ্রুতগামী করেছে। সাথে থাকে দুটি নেকড়ে- গেরি (ক্ষুধার্ত) এবং ফ্রেকি (লোভী)। ভ্রমণে কিংবা যুদ্ধক্ষেত্রে তারা ওদিনের অন্যতম সঙ্গী। তাছাড়া ব্যক্তিগত গোয়েন্দার কাজ করে এক জোড়া কাক। তাদের নাম যথাক্রমে হুগিন (চিন্তা) ও মুনিন (স্মৃতি)। কাকদ্বয় প্রতিদিন সকালে বের হয়ে নর্স মিথে বর্ণিত নয়টা জগৎ ঘুরে বেড়ায়। রাতে ফিরে এসে সকল তথ্য তুলে দেয় ওদিনের কানে।
জন্মসূত্র এবং পরিবার
নর্স সৃষ্টিতত্ত্বে সবার আগে জন্ম নেয়া দানবের নাম ইমির। নর্স সৃষ্টিতত্ত্ব পড়ে আসুন এখানে। ইমিরের জন্য উত্তপ্ত লাভা এবং শীতল বরফের মিলনস্থলে। তার সাথে জন্ম নেয় আওদুমলা নামের এক শিংবিহীন গাভী। ইমির আওদুমলার দুধ পান করতো আর গাভী নিজে জিভ দিয়ে চাটতো নোনতা বরফ। এভাবে বরফ ক্ষয় হতে থাকে। প্রথম দিনে ক্ষয় হওয়া বরফ থেকে উঁকি দেয় কালো চুল। দ্বিতীয় দিনে বের হয় মাথা আর তৃতীয় দিনে শরীর। বরফ গলে বের হওয়া এই ব্যক্তিটিই দেবতাদের আদিপুরুষ বুরি। দানবদের মধ্য থেকে স্ত্রী গ্রহণের মধ্য দিয়ে জন্ম নেয় বুরির সন্তান বোর। বোর পরবর্তীতে বিয়ে করে বেস্তলাকে। বেস্তলাও ছিলেন দানবসন্তান। যাহোক, বোর আর বেস্তলার ঘরে জন্ম নেয় সর্বপিতা ওদিন এবং তার দুই ভাই- ভিলি আর ভে।
জ্ঞান এবং উর্বরতার দেবী ফ্রিগকে বিয়ে করেন ওদিন। সেই ঘরে জন্ম নেয় এসির দেবতাদের মধ্যে অন্যতম সাহসী ও জ্ঞানী বালদর। ওদিনের আরো সন্তানের খবরাখবর পাওয়া যায় অন্যান্য সূত্রে। জর্দ (তুলনার জন্য আর্থ) বা পৃথিবীদেবীর সাথে মিলনের মাধ্যমে জন্ম নেয় থর। মার্ভেল কমিক এবং হলিউড সিনেমার সুবাদে হ্যামার হাতে মারমুখী থর বেশ জনপ্রিয়। পুরাণে তিনি বিদ্যুৎচমক, বজ্রপাত, ঝড় এবং শক্তির দেবতা হিসাবে স্বীকৃত। গ্রিদরের সাথে ওদিনের বিয়ে হলে জন্ম নেয় ভিদার। ভবিষ্যদ্বাণী আছে, মহাপ্রলয় বা র্যাগনারকের সময়ে পিতা ওদিনের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে ফেনরিরকে হত্যা করবে ভিদার। ওদিনের আরো এক সন্তান আছে রিনদরের সাথে; নাম ভালি। যদিও ভালিকে ভুলভাবে লোকির ছেলে দাবি করা হয়। যাহোক, মহাপ্রলয়ের সময় ভাই বালদরের হত্যার প্রতিশোধ স্বরূপ হোদরকে হত্যা করবে ভালি।
মার্ভেলে লোকিকে ওদিনের পালকপুত্র হিসাবে বর্ণনা করা হলেও তা সত্য না। নর্স পুরাণের কোনো উৎসেই এমন দাবি নেই। বরং লোকি ফারবাউতি এবং লাওফির পুত্র।
পুরাণ কথা
সর্বপিতা এবং দেবরাজ হিসেবে ওদিন নর্স মিথের কেন্দ্রিয় চরিত্র। মানুষের সৃষ্টি কিংবা দেবতাদের এক শিবিরে আনা এসির বনাম ভানির সংঘর্ষে কিংবা মহাপ্রলয় বা র্যাগনারকে ওদিনের আধিপত্য স্পষ্ট। ট্যাসিটাসের বক্তব্য অনুসারে, প্রথম শতকেই ওদিন জার্মানিয় কিছু গোষ্ঠীর মধ্যে কেন্দ্রিয় মর্যাদা লাভ করে। অবশ্য ত্রয়োদশ শতকের লেখক স্টারলাসনের মতে, ওদিন দেবরাজ্য আসগার্দের অধিপতি। যোদ্ধাদের আশির্বাদ দেন আর উৎসর্গ গ্রহণ করেন।
মানুষ সৃষ্টির পেছনে ওদিন জড়িত। নর্স মিথে প্রথম পুরুষ ও নারীর নাম যথাক্রমে আস্ক এবং এমব্লা। তাদের প্রথমিক শরীর গঠন নিয়ে তেমন কিছু জানা যায় না অবশ্য। সেক্ষেত্রে কখনো দেবতা আবার কখনো বামনদের নাম আসে। যাহোক, Prose Edda-র নবম অধ্যায় অনুসারে ওদিন, ভিলি আর ভে ঘুরছিলেন সৈকতে। সেখানেই পড়ে ছিল প্রাণহীন ডাল- আস্ক এবং এমব্লা। ভিলি দিলেন বুদ্ধি এবং সংবেদন। ভে তাকে সমৃদ্ধ করলেন মুখভঙ্গি, বাহ্যিক সৌন্দর্য, বাক, শ্রবণ এবং দৃষ্টিশক্তি প্রদানের মধ্য দিয়ে। ওদিন দিলেন আত্মা এবং প্রেরণা।
এসির-ভানির যুদ্ধ
এসির এবং ভানিরের মধ্যকার সংঘর্ষে ওদিনের আধিপত্য পোক্ত হয়। গ্রীক মিথোলজিতে ট্রয়ের যুদ্ধের মতো নর্স মিথে এই যুদ্ধও তাৎপর্যপূর্ণ। গণ্য করা হয় ইতিহাসের প্রথম যুদ্ধ হিসাবে। নর্স মিথে দেবতারা দুটি শিবিরে বিভক্ত- এসির এবং ভানির। ওদিন, ফ্রিগ, থর, বালদর- এরা প্রত্যেকেই অস এবং তাদের গঠিত শিবিরের নাম এসির। বিপরীত দিকে নিয়রদর, ফ্রয়র এবং ফ্রেইয়া- এরা প্রত্যেকেই ভানর এবং এদের গঠিত শিবির ভানির। এসিরের বসবাস আসগার্দ এবং ভানিরের বসবাস ভানাহেইমারতে। এসির দুঃসাহসী যোদ্ধাদের; আর ভানির বিশেষ ধরনের জাদু ‘সেইদর’ চর্চাকারী এবং উর্বরতার দেবতাদের। বস্তুত দেবতাদের দুইটা পক্ষ সৃষ্টির আদিম দুই আদর্শিক বৈপরীত্যকে প্রতীকায়িত করে। এসির সেখানে পুরুষবাচক শক্তি আর ভানির নারীবাচক পূর্ণতা। বোঝার সুবিধার্থে তাওবাদের ইন ইয়াং তত্ত্বের কথা মনে করা যেতে পারে।
অনেকে অবশ্য এসির-ভানির যুদ্ধকে উত্তর ইউরোপের ঐতিহাসিক যুদ্ধ বলে দাবি করেন। দ্বিতীয় শতকে স্থানীয় কৃষি সমাজের উর্বরতার কাল্টগুলো যুদ্ধবাজ জার্মানিক গোত্রের উপাস্য দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছে। এভাবে দেখলে ওদিনের জনপ্রিয়তা এবং গুরুত্ব বুঝতে আরো সুবিধা হয়। একই সাথে যুদ্ধ এবং জাদুর প্রতিনিধিত্বকারী ওদিন বিভাজিত দুইটা সংস্কৃতির মধ্যে সেতুর ভূমিকা পালন করেছে। পূরণ করেছে শূন্যস্থান। সমঝোতা করেছে সংস্কৃতির ভবিষ্যত নির্মাণে।
এসির-ভানির যুদ্ধটি দীর্ঘস্থায়ী এবং বিপর্যয়ী ছিল। এসির পক্ষের যোদ্ধাদের টিকে থাকতে হতো ভানির পক্ষের জাদুশক্তির বিপরীতে। সেই জাদুতে মৃতরাও হয়ে উঠতো জীবিত। ক্রমে উভয়পক্ষই বুঝতে পারল, এই যুদ্ধ আসলে অনন্তকালেও শেষ হবে না। তার বদলে শান্তিচুক্তি এবং পরস্পরের হেফাজতে প্রতিনিধি রাখলো। ওদিন পাঠালো হোনির এবং জ্ঞানী মিমিরকে। ভানিরের পক্ষ থেকে আসলো নিয়রদর এবং ফ্রয়র। কিন্তু খুব বেশি স্থায়ী হয়নি শান্তি। ভানির পক্ষ সন্দেহ করলো নতুন বিপদ। মিমির আসলে ঘরে ঢুকে স্পাইয়ের কাজ করছে ওদিনের পক্ষে। সুতরাং তাকে হত্যা করে খণ্ডিত মাথা পাঠিয়ে দেয়া হলো এসিরের কাছে। ওদিন লতাপাতা দিয়ে মাথাটা পেচিয়ে মন্ত্র আওড়ালেন। জীবিত হয়ে উঠলো মিমিরের মাথা। তখন থেকে মিমির ওদিনকে নানা গোপন বিষয়ে উপদেশ দেন।
দেবতাদের অতীতই কেবল উঠে আসেনি। এসেছে ভবিষ্যতও। র্যাগনারকের অর্থ করা যায় ‘দেবতাদের নিয়তি’ হিসেবে। ওদিনের মৃত্যু, পৃথিবীর সমাপ্তি, পুনর্জন্মের মতো বেশ কিছু ঘটনা ঘটবে বলে নর্সম্যানদের বিশ্বাস। ভয়ানক বিশৃঙ্খলায় ভেঙে পড়বে সমস্ত নিয়ম-নীতি। ওদিনকে হত্যা করবে দানব ফেনরির। পৃথিবীর ধ্বংসের পর আবার জন্ম নেবে। দেবতারাও ফিরে আসবে ওদিনের অবদান উদযাপন করতে।
ওদিন এবং রুনিক বর্ণমালা
ল্যাটিনের আধিপত্য কিংবা পরবর্তী ধাক্কা আসার আগে বিভিন্ন জার্মান ভাষাগোষ্ঠীর লেখায় বিশেষ ধরনের বর্ণমালা ব্যবহৃত হতো, যা রুনিক বর্ণমালা নামে পরিচিত। আসলে তা ছিল চিত্রকে বর্ণ হিসাবে ব্যবহারের একটা পদ্ধতি বা পিকটোগ্রাফ। প্রতিটা রুনজ্ পৃথক ধ্বনি নির্দেশ করতো। নর্স মিথ অনুসারে, ওদিন এই জ্ঞান আবিস্কার করে মানবজাতিকে দান করেন। রুনজ্ বস্তুত মহাজাগতিক শক্তিকে ধারণ করে। ফলে, রুনজ্ সম্পর্কে জ্ঞানের মানে প্রতীকায়িত মহাবিশ্বের জ্ঞান। আর জানতে পারা মানেই শাসন করতে পারা।
নর্স ধারণায়, মহাবিশ্বের ঠিক কেন্দ্রে অবস্থিত মহাবৃক্ষ ইগদ্রিসিল। যার ডালগুলো ধারণ করতো নয়টা জগৎকে। কেবল রুনজ্-এর জ্ঞানের জন্য ওদিন সেই ইগদ্রিসিলে নিজেকে ঝুলিয়ে দিলেন। উপোস থাকলেন নয় দিন ধরে। নিজেকে কাটলেন বল্লম দিয়ে। গোপনে নিজেকে উৎসর্গ করলেন। রুনজ্ এবার তার কাছে কেবল আকৃতি নিয়েই ধরা দিল না; উন্মুক্ত করে দিল ভেতরে লুকানো সমস্ত গোপন বিদ্যা। ওদিন পরিণত হলেন মহাজগতের সবথেকে শক্তিশালী এবং সম্পূর্ণ সত্তায়।
অপূর্ব শরাব
সব শরাব ওদিন পান করলেও ‘কাব্য শরাব’ -এর প্রতি ছিলো অদ্ভুত টান। কাব্য শরাব একধরনের মদ; যা পান করলে পানকারী কবিতা এবং জ্ঞানের অধিকারী হয়। কিছু ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এসির-ভানির যুদ্ধের শেষে এই মদের জন্ম হয়। দুই পক্ষের দেবতারাই শান্তির জন্য একমত হলো। তার স্বাক্ষর স্বরূপ একটা বড় পাত্রে সকলেই থুথু ফেললো। দেবতাদের জমাট থুথু থেকে জন্ম নেন কাসির নামের এক প্রাজ্ঞ পুরুষ। এমন কোন প্রশ্ন নেই; যার উত্তর কাসিরের জানা নেই। নিজের জ্ঞান বিলি করতে থাকেন কাসির। হঠাৎ একদিন ফিয়ালার এবং গালার নামে দুই দুষ্ট বামুনের বাড়ি গেলে তারা কাসিরকে হত্যা করে। তারপর বোদন, সোন এবং ওদরেরির নামের তিনটি পাত্রে উঠানো হয় রক্ত। সাথে মধু মিশিয়ে তৈরি করা হয় শরাব। অবশ্য খুব শীঘ্রই তারাও নিহত হয়। শরাবের মালিক হয় তখন দানব সাতাঙ্গর।
ওদিন ছলে বলে কৌশলে সাতাঙ্গরের থেকে শরাব হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছেন। প্রথমে শ্রমিকের ছদ্মবেশে তার গম চাষ করে দেবার প্রস্তাব দেন। শর্ত ছিল এক চুমুক শরাব পান করতে দিতে হবে। কাজ শেষ হলেও তাকে শরাব দিতে অস্বীকার করে সাতাঙ্গর। তাতে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেন ওদিন। সাতাঙ্গরের মেয়ের কাছ থেকে কৌশলে তিন রাতে তিন চুমুক পান করে নেন। কিন্তু ওদিনের চুমুক বলে কথা। তিন চুমুকেই তিন বোতল খালি। যাহোক, শেষটুকু মুখে জমিয়ে ঈগলের বেশে ফেরার পথ ধরেন ওদিন। ফিরে এসে মুখ থেকে বের করে দেন শরাব। সেই শরাব ভাগ করে নেয় এসির দেবতারা। যুগে যুগে যতো কবি জন্মগ্রহণ করে; তারা ওদিনের সেই শরাব পানের কারণেই কবি।
শেষের আগে
উনিশ শতকে জার্মান জাতীয়তাবাদের উত্থানের কারণে আবার সামনে আসে পুরাণ কথা। পুনরুত্থিত হতে থাকে দেবরাজ ওদিনের অবস্থান। বর্তমানে জনপ্রিয় মাধ্যমগুলোতেও ওদিনের চরিত্র অঙ্কিত হয়। নিল গেইমেনের আমেরিকান গডস্ উপন্যাসে কিংবা ‘গড অব ওয়ার’ ভিডিও গেইমে ওদিন বেশ পরিচিত মুখ।
তবে, ওদিনকে আন্তির্জাতিক পরিচিতি দিয়েছে মার্ভেল কমিক। মেলে ধরা হয়েছে থরের পিতা হিসাবে। মার্ভেলের সিনেমাগুলোতে ওদিন রূপে দেখা মেলে সফল অভিনেতা এন্থনি হপকিন্স-এর। এই উপস্থাপন অবশ্য কিছুটা বিভ্রান্তিকর। ওদিনের স্বরূপ এখানে অনেকটা গ্রীসের জিউস বা রোমের জুপিটারের মতো। কিন্তু বাস্তবের ওদিনে পিতৃসুলভ ভাবের চেয়ে কৌশলি ও আধিপত্য বিস্তারকারী এক দলনেতার চরিত্রই মুখ্য।