Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

রাশিয়ায় মাদকাসক্তি: রুশ সমাজের এক বিস্তৃত সমস্যা

রুশ ফেডারেশন। রাশিয়া। ব্রিটিশ লেখক ও সাংবাদিক টিম মার্শালের ভাষায়, “আমরা উত্তর–দক্ষিণ, পূর্ব–পশ্চিম যেদিকেই যাই না কেন, সবখানেই রাশিয়া রয়েছে। রাশিয়ার বিশালত্ব আমাদের সামগ্রিক চেতনায় গ্রন্থিত হয়ে আছে।” রাশিয়ার নাম শুনলেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে এক বিশাল ভূখণ্ড, ১১টি টাইম জোন জুড়ে যার বিস্তৃতি! রাশিয়া বলতে আমরা বুঝি বরফাচ্ছন্ন সাইবেরিয়া, দৃষ্টিনন্দন ক্রেমলিন, বিপ্লবের প্রাণকেন্দ্র রেড স্কয়্যার, বাল্টিকের ভেনিস সেন্ট পিটার্সবার্গ কিংবা চিত্তাকর্ষক ভ্লাদিভোস্তক! রাশিয়া বলতে আমরা বুঝি লেনিন-স্তালিন-পুতিন, কিংবা পুশকিন-তলস্তয়-দস্তয়ভস্কি, কিংবা মেন্দেলিভ-পাভলভ-শাখারভ, কিংবা গ্যাগারিন-কাসপারভ-শারাপোভা! রাশিয়া বলতে আমরা বুঝি মিগ, সুখোই, টি-৭২ আর একে-৪৭!

কিন্তু ভৌগোলিক বিস্তৃতি, রাজনৈতিক দাপট, সামরিক শৌর্য বা সাংস্কৃতিক নান্দনিকতার বাইরে রাশিয়ার একটি অন্ধকার জগৎ রয়েছে, যেটি রুশরা বহির্বিশ্বের কাছে প্রকাশ করতে আগ্রহী নয়। জাতীয়তাবাদী, রক্ষণশীল, আত্মসচেতন রুশরা তাদের দেশকে একটি শক্তিশালী উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপন করতে ভালোবাসে। যখন রাশিয়া সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল, তখন এই উপস্থাপনা কার্যকর ছিল, কারণ তখন রাশিয়ার সঙ্গে বহির্বিশ্বের যোগাযোগ ছিল সীমিত। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঘটেছে, তথ্যের ওপরে সোভিয়েত আমলের কঠোর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণও আর নেই। বিশ্বায়নের এই যুগে রাশিয়ার অন্ধকার জগতের প্রকৃত চিত্র তাই কৌতূহলী মানুষের কাছে সহজেই ফুটে ওঠে। এই জগতেরই একটি বিধ্বংসী দিক হচ্ছে মাদকাসক্তি।

মদ্যপানের জন্য অবশ্য রুশরা জারের শাসনামল থেকেই বিখ্যাত (বা কুখ্যাত)। রুশদের সঙ্গে ‘ভোদকা’র নামটি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। দীর্ঘ সময় ধরেই অতিরিক্ত মদ্যপান ছিল রুশদের জন্য একটি মারাত্মক স্বাস্থ্যগত সমস্যা। রুশ পুরুষদের গড় আয়ু মাত্র ৬৭ বছর, যা উন্নত বিশ্বের প্রায় সকল রাষ্ট্রের তুলনায় তো কমই, বাংলাদেশের তুলনায়ও কম (সরকারি হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের পুরুষদের গড় আয়ু ৭১ বছর)। রুশ পুরুষদের এই স্বল্পায়ুর অন্যতম প্রধান একটি কারণ হচ্ছে অতিরিক্ত মদ্যপানজনিত কারণে সৃষ্ট বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত সমস্যা। কিন্তু সময়ে সময়ে বিভিন্ন রুশ (বা সোভিয়েত) সরকার এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করলেও কোনোভাবেই এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হয়নি।

মস্কোয় একজন গৃহহীন ব্যক্তি মাদক গ্রহণের পূর্ব মূহুর্তে; Source: Robin Hammond/Daily Mail

রুশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, প্রতি বছর রাশিয়ায় প্রায় ৫০,০০০ মানুষ অতিরিক্ত মদ্যপানজনিত কারণে এবং প্রায় ৩ থেকে ৪ লক্ষ মানুষ ধূমপানজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করে। ২০০৯ সালে রুশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাশিদ নূরগালিয়েভ জানিয়েছিলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে একজন মানুষের জন্য বছরে ৮ লিটারের বেশি অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় পান করা স্বাস্থ্যগতভাবে নিরাপদ নয়, কিন্তু একজন রুশ গড়ে প্রতি বছরে কমপক্ষে ১৮ লিটার অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় পান করে। এরপর অবশ্য রাশিয়ায় মদ্যপানের হার হ্রাস পেয়েছে এবং ২০১৯ সালের হিসেব অনুযায়ী, একজন রুশ এখন গড়ে প্রতি বছরে ১০ লিটারের কম অ্যালকোহলজাত পানীয় গ্রহণ করে, যদিও এই পরিমাণটিও বিপদসীমার ওপরে। উল্লেখ্য, রাশিয়ার ফেডারেল প্রশাসনিক অঞ্চলগুলোর মধ্যে ক্ষুদ্র উত্তর ককেশীয় প্রজাতন্ত্র ইঙ্গুশেতিয়ায় মদ্যপানের হার সবচেয়ে কম।

মদ্যপানের সমস্যাটি রাশিয়ার ইতিহাসে বরাবরই ছিল। কিন্তু বিগত কয়েক দশকে রাশিয়ায় একটি নতুন সমস্যার আবির্ভাব হয়েছে। সেটি হচ্ছে মাদকাসক্তি (drug addiction)। কঠোর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ এবং সীমান্ত অঞ্চলে কড়া প্রহরার কারণে প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নে মাদকাসক্ত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল তুলনামূলকভাবে অনেক কম। কিন্তু ১৯৮০–এর দশকে এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে।

১৯৭৯ সালের ডিসেম্বরে সোভিয়েত ইউনিয়ন দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রতিবেশী রাষ্ট্র আফগানিস্তানে সৈন্য প্রেরণ করে এবং ১৯৮৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে সৈন্য প্রত্যাহার সম্পন্ন করার পূর্ব পর্যন্ত সেখানে বিভিন্ন আফগান দলের সঙ্গে যুদ্ধরত ছিল। এই দীর্ঘ সময়ে প্রায় ৬ লক্ষ সোভিয়েত নাগরিক আফগানিস্তানে সৈনিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। আফগানিস্তানে এরা প্রথমবারের মতো বিপুল পরিমাণে মাদকদ্রব্যের সন্ধান পায়, যেটি সোভিয়েত ইউনিয়নের অভ্যন্তরে ছিল কল্পনাতীত।

হেরোইনের ক্যাপসুল। হেরোইন সেবনকারীর সংখ্যার দিক থেকে রাশিয়া বিশ্বের শীর্ষ রাষ্ট্র; Source: Robin Hammond/Daily Mail

আফগানিস্তানে সোভিয়েত সৈন্য প্রবেশের আগে থেকেই আফিমের চাষ হতো, এবং সোভিয়েত হস্তক্ষেপের পর বিভিন্ন আফগান মিলিট্যান্ট গ্রুপ (বা তাদের সমর্থকদের ভাষায়, ‘মুজাহিদিন’) যুদ্ধের খরচ চালানোর জন্য আফিমের চাষ শুরু করে। মার্কিন এবং পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আফগানিস্তানে মোতায়েনকৃত সোভিয়েত সৈন্যদের মধ্যে আফিম এবং আফিম থেকে প্রস্তুতকৃত হেরোইনের নেশা ছড়িয়ে দেয়ার জন্য আফগান মিলিট্যান্টদের উৎসাহিত করে। এর ফলে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সোভিয়েত সৈন্য মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে এবং এর ফলে সোভিয়েত সমাজে মাদকদ্রব্য ব্যবহারের বিস্তার ঘটে।

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর রাষ্ট্র–নিয়ন্ত্রিত সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা থেকে আকস্মিকভাবে পুঁজিবাদী বাজার অর্থনীতি চালুর ফলে রাশিয়ায় যে ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয় দেখা দেয়, এটিকে বহু অর্থনীতিবিদ ‘অর্থনৈতিক গণহত্যা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এর ফলে রুশ সমাজের সর্বস্তরে অবক্ষয় দেখা দেয়। মুক্তবাজার অর্থনীতি চালুর ফলে সীমান্তের ওপর থেকে কঠোর নিয়ন্ত্রণ তুলে নেয়া হয়, ফলে স্রোতের মতো মাদকদ্রব্য রুশ সীমান্ত অতিক্রম করে রাশিয়ার প্রতিটি প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। রাষ্ট্রব্যবস্থার অবক্ষয়ের ফলে রুশ সরকার এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় কিছুই করতে পারেনি।

কাজাখস্তানের সঙ্গে রাশিয়ার ৬,৮৪৬ কি.মি. দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে এবং এই সীমান্তটি প্রায় অরক্ষিতই বলা যায়। এর ফলে আফগানিস্তান থেকে তাজিকিস্তান হয়ে কাজাখস্তানের মধ্য দিয়ে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য রাশিয়ায় প্রবেশ করে। সীমান্তরক্ষীদের দুর্নীতি এই সমস্যাকে আরো প্রকট করে তোলে। অর্থনৈতিক বিপর্যয়, সামাজিক অবক্ষয়, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং উত্তর ককেশাসে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্যে রুশ জনসাধারণ দিশেহারা হয়ে পড়ে এবং তাদের মধ্যে মাদকদ্রব্যের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বিস্তৃতি লাভ করে। এভাবে হঠাৎ করেই রাশিয়ায় মাদকাসক্তি একটি বিরাট সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়।

স্বল্প বেতনপ্রাপ্ত তাজিক সৈন্যরা তাজিক–আফগান সীমান্ত প্রহরা দিয়ে থাকে। এই সীমান্ত দিয়েই আফগান আফিম ও হেরোইন রাশিয়া অভিমুখে যাত্রা করে; Source: Robin Hammond/Daily Mail

তদুপরি, রাশিয়া এ সময় মাদকদ্রব্য পাচারের একটি মাধ্যমে পরিণত হয়। পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে তুর্কমেনিস্তানের মধ্য দিয়ে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য রোস্তভ শহরের মধ্য দিয়ে রাশিয়ায় প্রবেশ করে এবং সেখান থেকে ইউক্রেনের মধ্য দিয়ে পশ্চিম ইউরোপে পৌঁছে (এবং সেখান থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছে যায়)। এর ফলে মাদকদ্রব্য পাচার রুশ অপরাধ জগতের একটি বিশেষ ক্ষেত্রে পরিণত হয়। রুশ মাফিয়া এ সময় সিসিলির মাফিয়া এবং দক্ষিণ আমেরিকার অপরাধী সংগঠনগুলোর সঙ্গে হাত মেলায়, এবং এর ফলে দক্ষিণ আমেরিকা থেকে কোকেন রাশিয়ায় আসতে শুরু করে। ১৯৯০–এর দশকে রুশ তরুণ–তরুণীদের মধ্যে কোকেনের ব্যবহার ব্যাপক বিস্তার লাভ করে।

আফগানিস্তান থেকে মাদক দ্রব্য তাজিকিস্তান হয়ে রাশিয়ায় এবং এরপর সেখান থেকে ইউরোপে যায়; Source: Daily Mail

 

রুশ কেন্দ্রীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মতে, ১৯৯৬ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে রাশিয়ায় মাদকদ্রব্য ব্যবহারের হার ১৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে! রুশ জাতীয় মাদকদ্রব্য অপব্যবহার ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, বর্তমানে প্রায় ৪০ লক্ষ থেকে ৬০ লক্ষ রুশ নাগরিক নিয়মিত বিভিন্ন মাদকদ্রব্য গ্রহণ করে। রুশ মাদকসেবীদের অধিকাংশের বয়স ১৬ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে এবং এদের অনেকেই ১৪ বছর বয়স থেকেই মাদক গ্রহণ শুরু করে। বর্তমানে রাশিয়ায় হেরোইন ব্যবহারকারীদের সংখ্যা পৃথিবীর মধ্যে সর্বোচ্চ। শুধু তা-ই নয়, রাশিয়ায় মাদকদ্রব্য ব্যবহার বিস্তারের হারও বর্তমানে পৃথিবীর মধ্যে সর্বোচ্চ!

রুশ মাদকসেবীদের মধ্যে শতকরা ৯০ জন আফিম বা হেরোইনে আসক্ত। প্রতি বছর কমপক্ষে ৭০,০০০ রুশ নাগরিক মাদক সেবনের কারণে মৃত্যুবরণ করে। এদের অধিকাংশই ৪৪ থেকে ৪৫ বছর বয়সেই মারা যায়। বস্তুত রাশিয়ায় মাদকাসক্তির পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হয়ে উঠেছে যে, ২০০৭ সালে মস্কোর মেয়র ক্ষিপ্ত হয়ে মাদক পাচারকারীদের জন্য মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি নির্ধারণ করার দাবি জানিয়েছিলেন।

মস্কোয় মাদক গ্রহণকালে এক তরুণ। রুশ মাদকসেবীদের অধিকাংশের বয়স ২৫ বছরের নিচে; Source: Robin Hammond/Daily Mail

আর এখানেই নিহিত রয়েছে মাদকসেবীদের প্রতি রুশ সরকারের মনোভাব। রুশ সরকার মাদকসেবীদের রোগী হিসেবে নয়, অপরাধী হিসেবে বিবেচনা করে এবং এজন্য মাদকাসক্তদের উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করার পরিবর্তে তাদের কঠোর শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে সমস্যার সমাধানে আগ্রহী। এর ফলে রাশিয়ায় মাদকসেবীদের পুনর্বাসন বা চিকিৎসার সুযোগও সীমিত। রাশিয়ার প্রশাসনিক অঞ্চলগুলোর মধ্যে দুই–তৃতীয়াংশ অঞ্চলে কোনো মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র নেই। যে অঞ্চলগুলোতে এ রকম কেন্দ্র রয়েছে, সেখানকার চিকিৎসা ব্যবস্থাও কার্যকরী নয়, কারণ চিকিৎসা শেষ হওয়ার এক বছরের মধ্যেই ৯০% মাদকসেবী নতুন করে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে।

রুশ ফৌজদারি দণ্ডবিধির ২২৮ নং ধারা অনুযায়ী, মাদকদ্রব্য ক্রয়, সংরক্ষণ, বিতরণ, উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের শাস্তি অত্যন্ত গুরুতর। এই ধারায় গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা বিপুল পরিমাণ জরিমানা এবং ১৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের সম্মুখীন হতে পারে। প্রায় ২ লক্ষ রুশ নাগরিক বর্তমানে এই আইনের কারণে কারাগারে অবস্থান করছে, যাদের মধ্যে এক–তৃতীয়াংশকেই মাদকদ্রব্য ক্রয়ের জন্য গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এত কড়াকড়ি সত্ত্বেও মাদক পাচারকারীদের দমন করা রুশ সরকারের পক্ষে সম্ভব হয়নি, কারণ রুশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো ব্যাপকভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত।

শুধু তা-ই নয়, এই আইনের অপব্যবহারও ঘটে থাকে। যেমন: ২০১৯ সালের জুনে রুশ পুলিশ রুশ তদন্তকারী ওয়েবসাইট ‘মেদুজা’র সাংবাদিক ইভান গোলুনভকে মাদকদ্রব্য সংরক্ষণের মিথ্যা অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছিল। গোলুনভ স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ করে তাদের বিরাগভাজন হয়েছিলেন। পরবর্তীতে এই অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয় এবং এই ঘটনার জন্য পশ্চিম মস্কো পুলিশ বিভাগের প্রধান মেজর জেনারেল আন্দ্রেই পুচকভ ও মস্কো পুলিশের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বিভাগের প্রধান মেজর জেনারেল ইউরি দেভিয়াৎকিনকে বরখাস্ত করা হয়।

রুশ অনুসন্ধানী সাংবাদিক ইভাল গোলুনভকে ২০১৯ সালে রুশ পুলিশ মাদক সংক্রান্ত মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করেছিল; Source: Al Jazeera

রাশিয়ায় মাদকদ্রব্য ব্যবহার বিস্তারের আরেকটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে এইডসের বিস্তার। মাদকদ্রব্য গ্রহণের ক্ষেত্রে একই সিরিঞ্জ একাধিক ব্যক্তির ব্যবহার এবং মাদকসেবীদের মধ্যে অনিরাপদ শারীরিক সম্পর্কে জড়িত হওয়ার প্রবণতার ফলে রাশিয়ায় এইডস আক্রান্তদের মধ্যে মাদকসেবীদের সংখ্যাই বেশি। বস্তুত, বিশ্বের অন্যান্য অনেক রাষ্ট্রে যখন এইডসের বিস্তার কমে আসছে, সেখানে ২০১২ সাল থেকে রাশিয়ায় এইচআইভি পজিটিভ ব্যক্তির সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধারণা করা হয়, বর্তমানে রুশ জনসংখ্যার ১% এইডসে আক্রান্ত।

সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে ভ্লাদিভোস্তক পর্যন্ত বিস্তৃত রুশ ভূখণ্ডে মাত্র সাড়ে ১৪ কোটি মানুষ বসবাস করে। রাশিয়ার বর্তমান জনসংখ্যা ইন্দোনেশিয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, এমনকি বাংলাদেশের চেয়েও কম। জনসংখ্যাগত এই সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে রুশ নীতিনির্ধারকদের দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে রেখেছে। এমতাবস্থায় রাশিয়ায় মাদকাসক্তির ব্যাপক বিস্তার বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ সামরিক শক্তিধর রাষ্ট্রের জন্য মোটেই ইতিবাচক নয়।

This is a Bengali article about drug addiction in Russia. Necessary sources are hyperlinked within the article.

Source of the featured image: Huck Magazine

Related Articles