Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

নেটফ্লিক্স, ডিজনি কিংবা বায়োস্কোপ: পাল্টে যাচ্ছে পৃথিবীর বিনোদন জগত

২০২০ সাল যেন আমাদের জীবনে এসেছে সবকিছু পাল্টে দিতে। করোনা মহামারিতে যখন গোটা বিশ্ব বিপর্যস্ত, তার প্রভাবে পাল্টে যাচ্ছে প্রতিদিনের চেনা সবকিছুর খোলনলচে। প্রভাব পড়েছে আমাদের চিরচেনা বিনোদন দুনিয়াতেও। বন্ধ রয়েছে সিনেমা হলগুলো। টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতেও সেভাবে চোখে পড়ছে না খুব আকর্ষণীয় কোনো অনুষ্ঠান। অবশ্য এই একটি ক্ষেত্রে শুধু ২০২০ বা করোনাকেই দোষারোপ করে হয়তো পার পাওয়া যাবে না। এই শতাব্দীতে এসে সারা দুনিয়ার মানুষের জীবন এতটাই ব্যস্ত আর যান্ত্রিক হয়ে উঠেছে যে, সিনেমা হলে যাওয়া কিংবা নির্দিষ্ট সময়ে টিভি সেটের সামনে বসার সময় আর সুযোগটুকু ধীরে ধীরে যেন নাই হয়ে যাচ্ছে জীবন থেকে।

কিন্তু সেইসাথে এসেছে বিকল্পও। আমাদের সিনেমা আর সিরিজ দেখা যেন বন্ধ করার কোনো জো নেই! আর আমরা সবচেয়ে জনপ্রিয় বিকল্প হিসেবে বেছে নিয়েছি অনলাইনকে। ল্যাপটপ, মোবাইল বা ট্যাবে অনায়াসেই দেখে ফেলছি সবকিছু। আবার সেখানেও লেগে চলেছে বিবর্তনের ছোঁয়া।

আমাদের সিনেমা আর সিরিজ দেখা যেন বন্ধ করার কোনো জো নেই! Image Source: Danilo Jr. Pinzon/123rf

 

এই ক’দিন আগেও একটি নতুন সিনেমা বা সিরিজ বের হলে হন্যে হয়ে খোঁজা লাগত সেটির ডাউনলোড লিংক। বিশ্ববিখ্যাত সব সিনেমা বা সিরিজের সিডি কেনা বা হলে গিয়ে দেখা বা সরাসরি টিভিতেই দেখার সুযোগ তো সবার ছিল না। কিন্তু এখন আর সেসবেরও প্রয়োজন হয় না। রিলিজ হওয়া মাত্রই সেগুলো সম্পূর্ণ বৈধ উপায়ে, সম্ভাব্য শ্রেষ্ঠ অডিও ও ভিডিও কোয়ালিটিতে দেখে নিতে পারি আমরা। এমনকি ডাউনলোড শেষ হওয়া পর্যন্তও আর অপেক্ষা করতে হয় না। এক ক্লিকেই স্ট্রিম শুরু করে দিতে পারি!

এই যে পছন্দের বিনোদন কনটেন্ট এত সহজে উপভোগের ক্ষেত্রে এক বিপ্লবের সৃষ্টি হয়েছে, এর নেপথ্যে অবদান হলো ওটিটি বা ওভার দ্য টপ প্ল্যাটফর্মগুলোর। হ্যাঁ, নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম ভিডিও কিংবা ডিজনি প্লাসের মতো অনলাইন ভিডিও স্ট্রিমিং সার্ভিসগুলোর কথাই বলছি। এই প্ল্যাটফর্মগুলোর সুবাদেই বিনোদন উপভোগের সম্পূর্ণ নতুন ও বিশাল আকারের এক ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠেছে, যা মাত্র এক দশক আগেও কেউ ভাবতেও পারত না।

সত্যি বলতে কী, এখন বাস্তবতা এমন দাঁড়িয়েছে যে, পৃথিবী যদি সুস্থও থাকত, তবু সিনেমা হলের সামনে গিয়ে টিকিটের জন্য লাইন দিত কিংবা একটি সিরিজের এক পর্ব দেখার জন্য সারাদিন অপেক্ষা করে ঘড়ির কাঁটা মেনে পূর্বনির্ধারিত সময়ে টিভির সামনে বসত খুব কম মানুষই। বরং বেশিরভাগ মানুষকেই দেখা যেত রাস্তায় যানজটের মাঝে, অফিসে কাজের অবসরে, ওয়েটিং রুমে বসে থাকার বিরক্তি দূর করতে কিংবা রাতে সব কাজকর্ম শেষ করে বিছানায় আধশোয়া হয়ে বিশ্রাম নিতে নিতে পছন্দের সিনেমা-সিরিজগুলো দেখে নিচ্ছে!

এরকমভাবে যখন-তখন, যত-খুশি দেখা এবং দারুণ অডিও-ভিডিও কোয়ালিটি লাভের সুবিধা ছাড়াও অনলাইন স্ট্রিমিং সার্ভিসগুলোর আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তার পেছনে রয়েছে আরও কিছু কারণ।

এখন যে কেউ এক ক্লিকেই স্ট্রিম শুরু করে দিতে পারে! Image Source: Amelia Holowaty Krales / The Verge

প্রথমত, কনটেন্টের বৈচিত্র্য। বিনোদন দুনিয়ায় একটি কথা খুবই প্রচলিত যে, কনটেন্ট ইজ দ্য কিং। সত্যিই তা-ই। দর্শকরা দিনের পর দিন একই ধরনের কনটেন্ট দেখতে চায় না। তারা চায় নতুন কিছুর স্বাদ নিতে। দর্শকের এই প্রত্যাশাগুলো সবচেয়ে ভালোভাবে পূরণ করতে পারে অনলাইন স্ট্রিমিং সার্ভিসগুলোই। সেকারণেই দেখা যায়, যুগ যুগ ধরে প্রচলিত সিনেমা হলে বা টিভিতে যে ধরনের কনটেন্টের খোঁজ করেও দর্শক পায়নি, এখন সেগুলো খুব সহজেই ধরা দিচ্ছে অনলাইনে।

আরেকটি বড় কারণ হলো ডাবিং বা সাবটাইটেলের সুব্যবস্থা। অন্য কোনো মাধ্যমে কিন্তু চাইলেই একটি সিনেমা বা সিরিজের জন্য নিজের পছন্দসই ভাষায় ডাবিং বা সাবটাইটেল বেছে নেওয়া যায় না। এতে করে দর্শকের মনে যথেষ্ট আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও, স্রেফ ভাষাগত সীমাবদ্ধতার জন্য ওই সিনেমা-সিরিজগুলো তাদের উপভোগ করা হয়ে ওঠে না। কিন্তু এখন সব জনপ্রিয় সিনেমা-সিরিজেরই থাকে একাধিক ডাবিং ও সাবটাইটেল ল্যাঙ্গুয়েজ। তাই নিজের পছন্দের ভাষায় বিনোদন উপভোগে আর কোনো প্রতিবন্ধকতাই থাকছে না।

অনলাইন স্ট্রিমিং সার্ভিসগুলো দারুণ সাশ্রয়ীও বটে। আপনি সিনেমা হলেই যান কিংবা বাসায় ডিশ কানেকশন নেন, তার পেছনে আপনাকে বেশ বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় করতেই হবে। অথচ সেই খরচের তুলনায় অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাসিক খরচ নিতান্তই কম। তাই হিসাব কষে দেখা যাবে, বিনোদনের জন্য অনলাইনে অর্থ বিনিয়োগ করাই সবচেয়ে লাভজনক, বিশেষত তরুণ প্রজন্মের জন্য!

এসব কারণেই দিন দিন অনলাইন স্ট্রিমিং সার্ভিসগুলোর জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে সারা দুনিয়ায়। আগস্ট মাসে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে জনপ্রিয় স্ট্রিমিং সার্ভিস হলো নেটফ্লিক্স, যাদের সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা ১৯ কোটিরও বেশি! দ্বিতীয় স্থানে থাকা অ্যামাজন প্রাইম ভিডিওর সাবস্ক্রাইবার ১৫ কোটি। কেবল গত বছরের শেষ দিকে যাত্রা শুরু করে ইতোমধ্যেই ৬ কোটির বেশি সাবস্ক্রাইবার পেয়ে গেছে ডিজনি প্লাস। সেইসাথে বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছে এইচবিও কিংবা অ্যাপল প্লাসও।

নিজের পছন্দের ভাষায় বিনোদন উপভোগে আর কোনো প্রতিবন্ধকতাই থাকছে না; Image Source: Bioscope

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এরই মধ্যে বিনোদন দুনিয়ায় অনলাইন স্ট্রিমিং সার্ভিসগুলো একটি নিজস্ব অবস্থান তো গড়ে তুলেছেই, সেইসাথে খুব শীঘ্রই দেখা যাবে তাদের একচেটিয়া আধিপত্য। ২০২৫ সাল নাগাদ বিশ্বব্যাপী অনলাইন ভিডিও স্ট্রিমিং সার্ভিসগুলোর সাবস্ক্রাইবার প্রায় অর্ধ বিলিয়ন বেড়ে দাঁড়াবে ১.১৬ বিলিয়নে!

এতক্ষণ তো বলা হলো কেবল বৈশ্বিক সার্ভিসগুলোর কথা। এবার তাকানো যাক আমাদের বাংলাদেশের দিকে। যথারীতি এখানেও আধিপত্য রয়েছে উল্লিখিত তিনটি সার্ভিসের। এছাড়া জনপ্রিয়তা রয়েছে আঞ্চলিক স্ট্রিমিং সার্ভিস ডিজনি প্লাস হটস্টার, জি ফাইভ, হইচই, সনি লিভ ইত্যাদিরও। কিন্তু যদি জিজ্ঞেস করা হয় একেবারে বাংলাদেশি স্ট্রিমিং সার্ভিসের কথা, যেখানে বাংলা ভাষার বাংলাদেশি কনটেন্টই সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার পায়? যেখানে বিদেশী দারুণ সব সিরিজের বাংলা ডাবড সংস্করণও পাওয়া যায়?

সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সার্ভিসগুলোর তালিকায় আসবে বায়োস্কোপ, বঙ্গ, র‍্যাবিটহোলবিডি প্রভৃতির নাম। তবে শীর্ষস্থানে অবশ্যই থাকবে বায়োস্কোপ। দেশের এক নম্বর মোবাইল অপারেটর প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোনের মালিকানাধীন বায়োস্কোপ তাদের বেটা সংস্করণ চালু করে ২০১৬ সালে। এরপর থেকে গত চার বছরে তারা নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করেছে দেশের প্রধানতম অনলাইন স্ট্রিমিং সার্ভিসে। নেটফ্লিক্স বা অ্যামাজন প্রাইমের মতোই  দুর্দান্ত কোয়ালিটিতে বায়োস্কোপে এখন আছে অসংখ্য বাংলাদেশি চলচ্চিত্র এবং অরিজিনাল টিভি অনুষ্ঠান (নাটক, টেলিফিল্ম, সিরিজ, টকশো) ইত্যাদি। এসবের বাইরে তাদের আরও দুটি বড় আকর্ষণ হলো লাইভ টিভি এবং লাইভ স্পোর্টস।

গত চার বছরে তারা নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করেছে দেশের প্রধানতম অনলাইন স্ট্রিমিং সার্ভিসে; Image Source: Bioscope

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বায়োস্কোপের লাইভ টিভি ও লাইভ স্পোর্টস পরিষেবা নিঃসন্দেহে অসাধারণ। এদেশের মোট জনসংখ্যার একটি বড় অংশ তরুণ, যাদের পক্ষে আসলে সবসময় টিভি দেখার সুযোগ বা সম্ভাবনা নেই। সবার পক্ষে হয়তো টিভি সংযোগ নেয়া সম্ভব হয় না, পরিবারের সাথে থাকলে, নিজেদের পছন্দের অনুষ্ঠানগুলো সবসময় দেখা যায় না। বায়োস্কোপের লাইভ টিভি সার্ভিস তাদের মতো সবাইকেই নিজেদের পছন্দের চ্যানেলগুলো দেখার সুযোগ করে দিচ্ছে। এছাড়া যেহেতু বাংলাদেশের তরুণরা ক্রীড়াপ্রেমী, রাস্তায় চলার পথে ক্রিকেট কিংবা রাত জেগে ফুটবল দেখতে পছন্দ করে, তাদের সেই চাহিদাও মেটাচ্ছে বায়োস্কোপ

বায়োস্কোপের সবচেয়ে চমকপ্রদ দিক হলো, এর প্রায় ৭০ শতাংশ কনটেন্টই একেবারে ফ্রি। অর্থাৎ কোনোরকম খরচ ছাড়াই তাদের সিংহভাগ কনটেন্ট দেখা সম্ভব। কিন্তু বাকি ৩০ শতাংশ কনটেন্ট অবশ্যই সর্বোচ্চ মানসম্মত, বিশ্বের শীর্ষ স্ট্রিমিং সার্ভিসের কনটেন্টগুলোর সাথে প্রতিযোগিতার উপযোগী। তাই তো প্রাইম প্যাকের (পাস+ডাটা বান্ডল) মাধ্যমে বায়োস্কোপের প্রিমিয়াম সদস্যও হয় অনেকেই।

বায়োস্কোপের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রাইম প্যাক হলো গ্রামীণফোনে ৫২ টাকায় ৩০ দিন মেয়াদী ৫ জিবি বায়োস্কোপ ডাটা এবং ৯ টাকায় ৩ দিন মেয়াদী ৩০ এমবি বায়োস্কোপ ডাটা। প্রতিনিয়তই তাদের কনটেন্ট লাইব্রেরিতে যোগ হচ্ছে নতুন নতুন এক্সক্লুসিভ বাংলাদেশি চলচ্চিত্র এবং অরিজিনাল সিরিজ, নাটক-টেলিফিল্ম ইত্যাদি। ইতোমধ্যেই সেখানে রয়েছে দেশি ও বিদেশি ৪০টিরও বেশি লাইভ টিভি চ্যানেল, যার বেশিরভাগই একদম ফ্রি। এভাবে নিত্যনতুন পরিষেবার মাধ্যমে ২০২২ সালের মধ্যেই বিশ্বের সকল বাংলা ভাষাভাষী সম্প্রদায়ের কাছে পৌঁছে যাওয়া তাদের লক্ষ্য।

নিঃসন্দেহে অনলাইন ভিডিও স্ট্রিমিং সার্ভিস বিনোদন জগতে বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ। আর এক্ষেত্রে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে, বহির্বিশ্বের পাশাপাশি এগিয়ে চলেছে বায়োস্কোপের মতো বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোও। তাদের এই অগ্রযাত্রা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে শুধু নেটফ্লিক্স, ডিজনি বা অ্যামাজন প্রাইম ভিডিওই নয়, মানসম্মত বাংলাদেশি ও বাংলা ভাষার কনটেন্ট দেখার লক্ষ্যে মানুষের প্রথম পছন্দে পরিণত হবে বাংলাদেশি অনলাইন ভিডিও স্ট্রিমিং সার্ভিসগুলোও।

This article is written on how the streaming platforms are forming the new entertainment world.

Featured Image Source: teksomolika

Related Articles