দেখতে দেখতে মেসির বার্সা ছেড়ে পিএসজি যাবার এক মৌসুম পার হয়ে গেল। কিন্তু পিএসজিতে মেসির প্রথম মৌসুমের যাত্রাটা মোটেও সুখকর ছিল না। বার্সেলোনার জার্সিতে উড়তে থাকা মেসি পিএসজিতে এসে হুট করে কেমন যেন ফিকে হয়ে গেলেন। বার্সেলোনার জার্সিতে নিজের সর্বশেষ মৌসুমে ৩৮ গোল করা মেসি পিএসজির হয়ে নিজের প্রথম মৌসুমে করতে পেরেছেন সর্বসাকুল্যে ১১ গোল!
যে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার আশায় পিএসজি এত ঘটা করে সময়ের অন্যতম সেরা ফুটবলারকে নিজেদের দলে ভেড়াল, তাদের সেই স্বপ্নই তো মেসি পূরণ করতে পারেনইনি, উল্টো চোখের সামনে থেকে রিয়াল মাদ্রিদের শিরোপাজয় প্যারিসবাসীদের জ্বালাই কেবল বাড়িয়েছে। তারকাবহুল দল নিয়েও কেবল লিগ শিরোপা জিতে সমর্থকদের সন্তুষ্ট হওয়ার কথাও নয়। চ্যাম্পিয়নস লিগে ব্যর্থতার কারণে মেসিকেও সমর্থকদের দুয়োর মুখে পড়তে হয়েছে বেশ কয়েকবারই।
এত বছর বার্সেলোনায় থাকার পর নতুন ক্লাবে এসে মানিয়ে নিতে মেসিও বেশ খানিকটা সময় নিয়ে ফেলেছেন। এছাড়াও পিএসজির হয় মাঠে নিজের খেলাটাকে তিনি খুব একটা উপভোগ করতে পারেননি, সেটাও তার খেলার ধরন দেখেই আন্দাজ করা যায়। এর সাথে ক্রমাগত একের পর এক চোট আর প্রথমবারের মতো কোভিড পজিটিভ হওয়া – মাঠের খেলায় মেসিকে থিতু হতে দেয়নি একেবারেই। যে কারণে পিএসজির জার্সিতে নিজের প্রথম মৌসুমটাকে হয়তো বা মেসি নিজেও ভুলে যেতে চাইবেন।
এত বছর মেসিকে বার্সেলোনার জার্সিতে দেখার পর ভাগ্যদেবতাও হয়তো বা মেসিকে পিএসজির জার্সিতে মেনে নিতে পারেননি, যে কারণে বেজায় চটেছেন মেসির উপর! মেসির মতো ফিনিশার একের পর এক সহজ গোলের সুযোগ মিস করেছেন, পুরো মৌসুমে ১০ বার বল বারে লাগিয়েছেন; এর ব্যাখ্যা আর কী-ই বা হতে পারে!
মেসির মেসিসুলভ খেলতে না পারার পেছনে কে দায়ী – ক্রমাগত ইনজুরি, নতুন পরিবেশ, নাকি অন্য কোনো ফ্যাক্টর? আজ আমরা আলোচনা করবো সেসব নিয়েই।
স্কোরার হিসেবে চরম বাজে একটা মৌসুম কাটানোর পর মেসি তবে ফুরিয়ে গেলেন কি না, সেই রবও উঠতে শুরু করেছে কোথাও কোথাও। আগের মৌসুমে লিগে ৩০ গোল করা মেসি গত মৌসুমে লিগ ওয়ানে করতে পেরেছেন সর্বসাকুল্যে ৬টি গোল, যেটা কোনোভাবেই মেসির নামের পাশে মানানসই নয়। তবে মেসির এই বাজে গোলস্কোরিং ফর্মের পেছনে শুধুই তার বাজে ফর্মই দায়ী, নাকি পচেত্তিনোর দুর্বল ট্যাকটিক্সেরও কিছুটা দায় রয়েছে, সেটা নিয়েও প্রশ্ন তোলা যায় বৈকি। অন্তত পরিসংখ্যান ভিন্ন কিছুরই জানান দিচ্ছে।
মেসি গত মৌসুমে পিএসজির হয়ে প্রতি ম্যাচে গড়ে শট নিয়েছেন ৩.৭২টি, যার ১.১৭টি ছিল অন টার্গেট; যে পরিসংখ্যান কি না তার বিগত কয়েক মৌসুমের শটের পরিসংখ্যানের চেয়ে অনেকটাই মলিন। অর্থাৎ শট নেবার পজিশনে আসতে মেসিকে বেশ সংগ্রাম করতে হয়েছে। মেসির এক্সপেক্টেড গোলও কমেছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক। গত মৌসুমে লা লিগায় বার্সেলোনার জার্সিতে তার এক্সপেক্টেড গোল ছিল ২৩.৬টি, এই মৌসুমে যেটি কমে দাড়িয়েছে কেবল ১০টিতে। মেসির মতো ফিনিশারও এই মৌসুমে তার এক্সপেক্টেড গোলের তুলনায় কম গোল করেছেন, কিন্তু সময়ের অন্যতম সেরা গোলস্কোরারকে গোলের পজিশনে পৌছাতে না পারার ব্যর্থতার দায় কোচ হিসেবে পচেত্তিনোরও কোনো অংশে কম নয়।
গত মৌসুমে মেসিকে কাগজে-কলমে রাইট উইঙ্গারের ভূমিকায় খেলতে দেখা গেছে। কিন্তু মাঠের খেলায় তাকে মাঝমাঠের কিছুটা উপরের অংশেই বেশিরভাগ সময় দেখা গিয়েছে। মেসিকে দলের মূল প্লেমেকারের ভূমিকাতে খেলিয়েছেন সদ্যই পিএসজির ডাগআউট সামলানোর দায়িত্ব থেকে অব্যহতি পাওয়া আর্জেন্টাইন এ কোচ। এ কারণে মেসি বক্সের আশেপাশে যাওয়ার খুব একটা সুযোগই পাননি। বার্সেলোনাতেও মেসি মূল প্লেমেকারের ভূমিকাতেই খেলতেন। তাই প্রশ্ন আসাই স্বাভাবিক, বার্সেলোনায় প্লেমেকারের ভূমিকায় খেলে ভূরি ভূরি গোল করা মেসি পিএসজিতে এসে গোল করা ভুলে গেলেন কীভাবে!
বার্সেলোনার বিল্ডআপ এবং আক্রমণ দুটোই ছিল মেসিকেন্দ্রিক। মেসি যেমন মিডফিল্ড থেকে সতীর্থদের উদ্দেশ্যে প্রতিপক্ষের বক্সে ডিফেন্সচেরা পাস বাড়াতেন, তেমনি তার সতীর্থরাও তাকে দিয়ে গোল করানোর জন্য বক্সের আশেপাশে মেসির আসার অপেক্ষায় থাকত। কিন্তু পিএসজিতে ফাইনাল থার্ডে গোল করার পজিশনে থাকার দিক থেকে মেসি এমবাপে, নেইমার, ডি মারিয়া, এমনকি কখনো কখনো ভাইনালদুম এবং ইদ্রিস গানার চেয়েও পিছিয়ে রয়েছিলেন। মেসির হিটম্যাপ থেকেও এটা পরিষ্কার, পিএসজির হয়ে মেসি বক্সে ঢোকার খুব একটা সুযোগ পাননি। ফলে মেসি গোলে শট নেওয়ার সুযোগও অনেক কম পেয়েছেন; পেলেও বেশ দুঃসাধ্য কোণ থেকে, যেগুলো থেকে তার পক্ষে গোলে লক্ষ্যভেদ করা সম্ভব হয়নি।
তবে এরপরও বার্সেলোনায় মেসি একাই মিডফিল্ড থেকে বক্সে ঢুকে গোলের চেষ্টা করেছেন এবং সফলও হয়েছেন, গত মৌসুমে যা খুব একটা দেখা যায়নি। গত মৌসুমে পিএসজির হয়ে মেসির ড্রিবলিংয়ের হিটম্যাপ দেখেও এটা বোঝা যাচ্ছে যে তিনি ড্রিবল করে প্রতিপক্ষ বক্সের কাছাকাছি এসে প্রায়শই থেমে যেতে বাধ্য হয়েছেন; হয় বলের দখল ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন, অথবা কাছাকাছি থাকা কোনো সতীর্থকে পাস দিয়ে দিয়েছেন। এর পেছনে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি দায় রয়েছে পিএসজির লেফটব্যাক নুনো মেন্ডেজের।
বার্সেলোনায় থাকাকালীন প্রতিপক্ষ বক্সের আশেপাশে মেসি এবং জর্দি আলবার রসায়ন ছিল চোখে লেগে থাকার মতো। দানি আলভেসের বার্সেলোনা থেকে বিদায়ের পর মেসির গোলের একটা বড় অংশই এসেছে এই দুইয়ের যুগলবন্দীতে। আলবার কাটব্যাক পাসগুলো থেকে গোলে শট নেওয়ার জন্য রাইট উইঙ্গার পজিশনে খেলা মেসি নিজের অবস্থান পাল্টে মাঠের অনেকটা বামপাশে চলে আসতেন। মিডফিল্ড থেকে আলবাকে লক্ষ্য করে বামপাশে মেসি লং থ্রু বল বাড়াতেন এবং বক্সের দিকে রান নিতেন। সেখান থেকে আলবার কাটব্যাক খুঁজে নিত প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদের সামনে দাঁড়ানো মেসিকে।
কিন্তু পিএসজির লেফটব্যাক নুনো মেন্ডেজ মেসির সাথে নিজের রসায়নটা একেবারেই জমিয়ে তুলতে পারেননি। এর পেছনে এই পর্তুগিজের খেলার ধরনের দায়ই সবচেয়ে বেশি। নুনো মেন্ডেজ প্রথাগত লেফটব্যাকদের মতো ওভারল্যাপ করে প্রতিপক্ষ বক্সের কাছাকাছি উঠে আসার চেয়ে আক্রমণের সময় মিডফিল্ড দাগের কিছুটা উপরে অবস্থান করতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, যেটা তার পাস রিসিভিং ম্যাপ দেখলেই পরিষ্কার বোঝা যায়। তিনি বল পায়ে বেশ দক্ষ হওয়ায় বক্সে রান নেওয়ার পরিবর্তে কিছুটা নিচে অবস্থান করে সেখান থেকে বল পায়ে ড্রিবল করে প্রতিপক্ষ বক্সে উঠতেই বেশি পছন্দ করেন। এতে করে সমস্যা হচ্ছে দু’জায়গায়।
প্রথমত, নুনো মেন্ডেজ ওভারল্যাপ করে প্রতিপক্ষের বক্সে উঠে না যাওয়ায় মেসির ‘ট্রেডমার্ক’ বক্সের বাইরে থেকে বামপাশের উইংয়ে ডিফেন্সচেরা পাসগুলো খুব একটা কার্যকরী হচ্ছে না। মেসিকে বাধ্য হয়ে আরো কিছুটা মাঝের দিকে অবস্থান করা নেইমার কিংবা এমবাপেকে পাস খেলতে হচ্ছে। ফরোয়ার্ড হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই নেইমার এবং এমবাপে বক্সের অনেক বাইরে থেকে মেসির আসার অপেক্ষায় না থেকে নিজেরাই গোলে শট নিচ্ছেন।
দ্বিতীয় সমস্যাটা আরেকটু জটিল। মেসিকে আমরা প্রায়শই প্রতিপক্ষের বক্সের বাইরে একাধিক খেলোয়াড়কে কাটিয়ে বক্সে ঢুকে গোলে শট নেওয়ার চেষ্টা করতে দেখতাম। কিন্তু গত মৌসুমে এই ধরনের পরিস্থিতিতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মেসিকে অতিরিক্ত জটলার মুখোমুখি হতে হয়েছে। এর পেছনেও পরোক্ষভাবে নুনো মেন্ডেজের দায় রয়েছে। আগেই বলেছি, নুনো মেন্ডেজ লেফট উইং ধরে ওভারল্যাপিং রান নেওয়ার পরিবর্তে বল পায়ে ড্রিবল করে বক্সে ঢুকতে বেশি পছন্দ করেন। এ কারণে মেসি যখন ডানপাশ থেকে কাটইন করে জোন ১৪ কিংবা তার আশেপাশের জায়গা দিয়ে ড্রিবল করে বক্সে ঢোকার চেষ্টা করেছেন, তখন মেন্ডেজকে বক্সের বাইরে হাফস্পেসে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। এতে করে প্রতিপক্ষের রাইট উইঙ্গার এবং রাইটব্যাক, উভয়ই মেসির দিকে বেশি মনোযোগী হয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। যে কারণে মেসির পক্ষে প্রতিপক্ষের এতজন ফুটবলারকে কাটিয়ে বক্সে ঢুকে গোলে শট নেওয়াটা বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। অথচ এ সময় নুনো মেন্ডেজ যদি রান নিতেন, তাহলে প্রতিপক্ষের রাইটব্যাক এবং রাইট উইঙ্গার দু’জনের মনোযোগই তার দিকে ঘুরে যেত, মেসিও আরেকটু সহজে ড্রিবল করার সুযোগ পেতেন। এতে করে মেসি সরাসরি বক্সে ঢুকতে না পারলেও নুনো মেন্ডেজের সাথে ওয়ান-টু-ওয়ান করে হলেও গোলে শট নেওয়ার সুযোগ পেতেন।
উপরের উদাহরণে মেসি যখন লেফট হাফস্পেস দিয়ে বক্সে ঢোকার চেষ্টা করছিলেন, তখন নুনো মেন্ডেজ তার কিছুটা পেছনে দাঁড়িয়ে রয়েছিলেন। ডানপায়ের নেইমার সরাসরি রান নেবেন না বুঝতে পেরেই প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়দের মনোযোগ ছিল মেসি যাতে কোনোভাবেই বক্সে ঢুকতে না পারে সেদিকে। শেষমেশ মেসি নেইমার বরাবরই লং বল বাড়ান, সহজ গোলের সুযোগ মিস করেন এই ব্রাজিলিয়ান।
এছাড়াও এমবাপের সাথে মেসির যথেষ্ট বোঝাপড়ার অভাব রয়েছে কি না, সে প্রশ্নও তোলা যায়। তবে এক্ষেত্রে দু’জনের মধ্যকার বোঝাপড়ার চেয়ে তাদের পজিশনের দায়ই বেশি। পিএসজিতে মেসি যেখানে রাইট হাফস্পেস অথবা মাঠের একেবারে মাঝের অংশে বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন, তেমনি এমবাপে অবস্থান করেছেন লেফট হাফস্পেস বরাবর। মেসি বামপায়ের এবং এমবাপে ডানপায়ের খেলোয়াড়, এবং মাঠে তাদের দু’জনেরই অবস্থান ছিল ঠিক তার উল্টোদিকে। যে কারণে প্রতিপক্ষ বক্সের আশেপাশে নিজেদের মধ্যে বল দেয়া-নেয়া করতে চাইলে তাদের দু’জনকেই নিজেদের দুর্বল পায়ের ব্যবহার করতেই হতো।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, তাহলে মেসির পাস থেকে এমবাপে কীভাবে এত গোল করতে পেরেছেন! এর উত্তরটাও খুবই সহজ। ফাইনাল থার্ডে মেসির অবস্থান ছিল এমবাপের অনেকটাই পেছনে, যে কারণে এমবাপেকে লক্ষ্য করে মেসি খুব সাবলীলভাবেই বামপায়ে ডিফেন্সচেরা পাস বাড়াতে পেরেছেন। কিন্তু প্রায় প্রতিবারই এমবাপের অনেকটা পেছনে থাকায় এমবাপের পক্ষে মেসিকে পাস বাড়ানো সম্ভব হয়নি। যদিও কিছু সময় মেসি বলের লাইনে চলে এসেছিলেন, কিন্তু ডানপায়ে দক্ষ এমবাপের জন্য সোজাসুজি বরাবর মেসিকে পাস দেওয়ার চেয়ে সরাসরি বক্সে শট নিয়ে গোলের চেষ্টা করাটাই বেশি সহজসাধ্য ব্যাপার ছিল।
মেসিকে লক্ষ্য করে নেইমার, এমবাপে এবং নুনো মেন্ডেজের কী-পাসগুলোর দিকে যদি খেয়াল করি, এদের একটা বড় অংশই ছিল সরাসরি বক্সের বাইরে কিংবা বক্সের বামপাশে, যেখান থেকে সরাসরি গোল পাওয়াটা মেসির জন্য বেশ কঠিন ব্যাপার। গোল করার জন্য উপযোগী পজিশন থেকে শট নিতে না পারায় গত মৌসুমে গোলের বিচারে নিজের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে মৌসুম কাটিয়েছেন।
গোলস্কোরিংয়ে মেসির বাজে ফর্মের কথা একপাশে সরিয়ে রাখলে প্লেমেকার হিসেবে কিন্তু মেসি আরেকটি দুর্দান্ত মৌসুম কাটিয়েছেন। মৌসুমের শুরুর দিকে পিএসজির খেলার ধরনের সাথে মানিয়ে নিতে কিছুটা সমস্যা হলেও যত দিন গিয়েছে ধীরে ধীরে প্লেমেকার মেসির ধার তত বেড়েছে। লিগে মাত্র ২৬ ম্যাচ খেলেই ১৪ অ্যাসিস্ট করেছেন মেসি। শুধুমাত্র গোলে সুযোগ সৃষ্টি কিংবা সতীর্থদের দিয়ে গোল করানোর দিক দিয়েই নয়; বল প্রোগ্রেশন, বল পায়ে ফাইনাল থার্ডে প্রবেশ, কিংবা প্রোগ্রেসিভ পাস – সবদিক থেকেই মেসি ছিলেন দুর্দান্ত।
গত মৌসুমে ইউরোপের টপ পাঁচ ফুটবল লিগের অন্যান্য স্ট্রাইকারদের সাথে গোলের সুযোগ তৈরিতে মেসির পরিসংখ্যানের তুলনাতে বাকিদের সাথে তার পার্থক্যটা দিনের আলোর মতোই পরিষ্কার হয়ে যায়। সরাসরি গোলের সুযোগ তৈরি করা কিংবা তার চেয়েও ভালো কোনো পজিশনে থাকা সতীর্থকে দিয়ে গোলের সুযোগ তৈরি করানো – দুইক্ষেত্রেই মেসি অন্যদের চেয়ে বেশ বড় ব্যবধানে এগিয়ে।
ফাইনাল থার্ডে বল ক্যারি কিংবা মিডফিল্ড থেকে ফাইনাল থার্ডে সতীর্থদের পাস দেওয়ার দিক থেকেও মেসি ইউরোপের অন্যান্য অগ্রগণ্য মিডফিল্ডার কিংবা ফরোয়ার্ডদের চেয়ে বেশ এগিয়ে ছিলেন। অর্থাৎ গোলখরায় কাটালেও নিজের প্লেমেকিং দিয়ে মেসি তা পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন বেশ ভালোভাবেই।
পিএসজির হয়ে মেসির প্রথম মৌসুমটা মোটেও মেসিসুলভ হয়নি। প্যারিসের নতুন পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিতে বেশ সংগ্রাম করতে হয়েছে, যার প্রভাব পড়েছে মাঠের খেলাতেও। পিএসজির জার্সিতে মেসি তার ক্যারিয়ারেরই সবচেয়ে বাজে মৌসুম কাটালেন কি না, সেটা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে বেশ জোরেশোরেই। তবে মেসি খুব ভালো করেই জানেন, অন্ধকার রাতের সমস্ত বাঁধা পেরিয়ে কিভাবে নতুন ভোরের সূচনা করতে হয়। তাই পিএসজির জার্সিতে নতুন মৌসুমে ভালো করার আশার বাণী তার কণ্ঠেও,
“নিজের ব্যাপারে চিন্তা করলে গত মৌসুমটি আমার জন্য বেশ হতাশাজনক ছিল। কিন্তু আমি জানি, পরিস্থিতি কীভাবে পাল্টাতে হয়। নতুন মৌসুমে আমি যথেষ্ট ভালো করতে না পারার অনুভূতি নিয়ে চলতে চাই না। আমি জানি এ বছরটা আমার জন্য অন্যরকম হতে চলেছে, এজন্য আমি সম্ভাব্য সকল কিছুর জন্য আরো ভালোভাবে প্রস্তুত হচ্ছি। আমি এখন এ ক্লাবটাকে চিনি, ক্লাবের সবাইকে চিনি, ড্রেসিংরুমের সাথেও মানিয়ে নিয়েছি। আমি জানি, এ বছরটা নিশ্চিতভাবেই অন্যরকম হবে।”