Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ঝলমলে অভিষেকের পর সাদামাটা ক্যারিয়ার

টেস্ট ক্রিকেটের পথচলা ১৮৭৭ সাল থেকে শুরু হলেও ম্যাচে সেরা ক্রিকেটারকে পুরস্কার দেওয়ার প্রচলন শুরু হয় গত শতকের আশির দশক থেকে। এরপর থেকে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ম্যাচে ম্যাচসেরার পুরস্কার জয়ী ক্রিকেটারের সংখ্যা ৪৬ জন। যার মধ্যে অনেকেই শেষ পর্যন্ত নিজেদের ক্যারিয়ার দুর্দান্তভাবে শেষ করেছেন এবং কয়েকজন এখনও দাপটের সাথে খেলে যাচ্ছেন। স্টিফেন ফ্লেমিং, অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস, মাইকেল ক্লার্ক এবং গ্রায়েম থর্প অভিষেক টেস্টে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতার পর শতাধিক টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন।

রবিচন্দ্রন অশ্বিন, ভার্নন ফিল্যান্ডার, ফ্যাফ দু প্লেসি এবং প্যাট কামিন্সের মতো ক্রিকেটাররা অভিষেক টেস্টে ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতার পর অসাধারণভাবে খেলে চলেছেন। ফিল্যান্ডার শুধুমাত্র প্রথম ম্যাচেই নয়, নিজের প্রথম ১১ ম্যাচের মধ্যে পাঁচবার ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছিলেন। তবে বেশ কয়েকজন ক্রিকেটার অভিষেক ম্যাচে ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতার পর ক্যারিয়ারে আর কখনও ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতেননি। এদের মধ্যে অনেকেই আছেন, এরপর আর নিজের সামর্থ্যানুযায়ী খেলতেই পারেননি।

অভিষেক টেস্টে ম্যাচসেরার পুরস্কার পাওয়ার পর ক্রিকেট ক্যারিয়ারের বাকিটা পথে খুব একটা আলো ছড়াতে না পারা ক্রিকেটারদের সম্পর্কে জেনে আসা যাক, চলুন।

ইয়াসির হামিদ

পাকিস্তানের হয়ে অভিষেক টেস্টে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছেন পাঁচজন ক্রিকেটার। এর মধ্যে শুধুমাত্র আজহার মাহমুদই এরপর আবার ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছেন। এছাড়া মোহাম্মদ সামি, মোহাম্মদ জাহিদ এবং অভিষেক টেস্টে ১৬১ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতা ফাওয়াদ আলম তাদের টেস্ট ক্যারিয়ারে অভিষেক টেস্টের পর আর ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতেননি। সামি এবং জাহিদ ফিটনেসের অভাবে এরপর খুব টেস্ট খেলতে পারেননি। ফাওয়াদ আলম ঘরোয়াতে দুর্দান্ত পারফর্ম করলেও ফিরতি ডাক পাননি টেস্ট দলে।

অভিষেক টেস্টের দুই ইনিংসেই শতক হাঁকিয়েছিলেন ইয়াসির হামিদ ; Image Source: Getty Images

পাকিস্তানের হয়ে অভিষেক টেস্টে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতার পর পুনরায় ম্যাচসেরা নির্বাচিত না হওয়া ক্রিকেটারদের মধ্যে ইয়াসির হামিদ অন্যতম। ২০০৩ সালে করাচীতে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে ইয়াসিরের। ম্যাচে টসে জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাংলাদেশ। প্রথমে ব্যাট করার আমন্ত্রণ পেয়ে বাংলাদেশ ২৮৮ রান সংগ্রহ করে। জবাবে ব্যাট করতে নেমে মাত্র পাঁচ রানের মাথায় ওপেনার হাফিজের উইকেট হারায় পাকিস্তান। এরপর ব্যাটিংয়ে নামেন অভিষিক্ত ইয়াসির হামিদ। তিনি একাই রানের চাকা সচল রাখেন। দলীয় ২৭০ রানের মাথায় ৫ম ব্যাটসম্যান হিসাবে আউট হওয়ার আগে ১৭০ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলেন তিনি।

ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসেও দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন তিনি। বাংলাদেশের দেওয়া ২১৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান দশ রানের মাথায় তৌফিক উমরের উইকেট হারায়। এরপর আবারও দলের হাল ধরেন ইয়াসির হামিদ। তিনি যখন তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসাবে সাজঘরে ফেরেন, তখন দলের সংগ্রহ ১৭০ রান, যার মধ্যে তিনি একাই করেন ১০৫ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে শতক হাঁকানোর মধ্যে দিয়ে ইয়াসির হামিদ টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসাবে অভিষেক টেস্টে জোড়া শতক হাঁকানোর রেকর্ড গড়েছিলেন। তার আগে অভিষেক টেস্টে জোড়া শতক হাঁকিয়েছিলেন লরেন্স রো।

ইয়াসির হামিদ ; Image Source: Getty Images

অভিষেক টেস্টে জোড়া শতক হাঁকিয়ে দলের মোট রানের ৪৮% রান সংগ্রহ করেছিলেন ইয়াসির হামিদ। এরপর আরও ২৪টি টেস্ট খেললেও কখনো ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতেননি তিনি। এমনকি টেস্ট ক্যারিয়ারে আর কখনো শতকও হাঁকাতে পারেননি। অভিষেক টেস্টের পর সর্বোচ্চ ৯১ রানের ইনিংস খেলেছিলেন ভারতের বিপক্ষে মুলতানে, যে ম্যাচে বীরেন্দর শেবাগ ৩০৯ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। এছাড়া ২০০৫ সালে সিডনিতে গ্লেন ম্যাকগ্রা, জেসন গিলেস্পি, শেন ওয়ার্ন, স্টুয়ার্ট ম্যাকগিলদের মতো বোলারদের বিপক্ষে জোড়া অর্ধশতক হাঁকিয়েছিলেন। তার ২৫ টেস্টের ক্যারিয়ারের ইতি ঘটে ২০১০ সালে লর্ডস টেস্টের মধ্য দিয়ে।

জেমস কার্টলি

তৎকালীন ইংল্যান্ডের কোচ ডানকান ফ্লেচার নতুন ক্রিকেটারদের নিয়ে বাজি ধরতে সিদ্ধহস্ত ছিলেন। তিনি ২০০৩ সালে নতুন দুই আনকোরা পেসারকে খেলান, দুইজনেই অভিষেক ম্যাচে দুর্দান্ত নৈপুণ্য প্রদর্শন করে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন। প্রথমে অভিষেক ঘটে রিচার্ড জনসনের। তিনি নিজের প্রথম তিন ম্যাচে দুইবার ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছিলেন। তার কয়েক ম্যাচ পরই জেমস কার্টলির অভিষেক ঘটে এবং তিনিও ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতেন।

নটিংহ্যামে ২০০৩ সালের ১৪ই আগস্ট সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে মুখোমুখি হয় ইংল্যান্ড। প্রথম দুই ম্যাচশেষে দক্ষিণ আফ্রিকা ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে ছিল। প্রথম টেস্ট শেষে নাসের হুসেইন অধিনায়কের দায়িত্ব ছেড়ে দিলে দ্বিতীয় টেস্ট থেকে অধিনায়কের দায়িত্ব পান মাইকেল ভন। নিজের প্রথম ম্যাচেই বড় ব্যবধানের হারের স্বাদ পান তিনি।

জেমস কার্টলি ; Image Source: Getty Images

তৃতীয় টেস্টে কোচ ডানকান ফ্লেচারের পরামর্শে অভিষেক ঘটে ২৮ বছর বয়সী ডানহাতি পেসার জেমস কার্টলির। অভিষেক টেস্ট খেলার আগে তার ১১৫টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা ছিল। দলের অন্তর্ভুক্তি ঘটবার পর ইংল্যান্ডের ভাগ্য বদলে যায়। নটিংহ্যামে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে মার্ক বুচার এবং নাসের হুসেইনের শতকের উপর ভর করে ইংল্যান্ড ৪৪৫ রান সংগ্রহ করেছিল। জবাবে দক্ষিণ আফ্রিকা ৩৬২ রানে সবক’টি উইকেট হারায়। জেমস অ্যান্ডারসন পাঁচটি এবং জেমস কার্টলি পরপর দুই বলে রুডলফ এবং ডিপেনারকে ফিরিয়ে ইংল্যান্ডকে ৮৩ রানের লিড এনে দেন।

দ্বিতীয় ইনিংসে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি ইংল্যান্ড। শন পোলক মাত্র ৩৯ রানে ছয় উইকেট শিকার করলে মাত্র ১১৮ রানে গুটিয়ে যায় তারা। এতে করে প্রোটিয়াদের জয়ের জন্য ২০২ রান প্রয়োজন পড়ে। দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য এই রান কঠিন করে তোলেন কার্টলি। তিনি প্রথমে গ্রায়েম স্মিথকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন। পরের ওভারে এসে শূন্য রানে ফেরান রুডলফকে। নিজের ফিরতি স্পেলে বল করতে এসে নিল ম্যাকেঞ্জি, অ্যান্ড্রু হল, পল অ্যাডামস এবং অর্ধশতক হাঁকানো মার্ক বাউচারের উইকেট শিকার করেন। মাত্র ৩৪ রানের বিনিময়ে ছয় উইকেট শিকার করে ইংল্যান্ডের ৭০ রানের জয়ে বড় অবদান রাখেন তিনি।

জেমস কার্টলি ; Image Source: Getty Images

নিজের অভিষেক ম্যাচে ১১৪ রানের বিনিময়ে আট উইকেট শিকার করে ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতা জেমস কার্টলি এরপর আর মাত্র তিনটি টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। ঐ তিন টেস্টে তিনি ১১ উইকেট শিকার করেছিলেন। সাসেক্সের ডানহাতি এই পেসার টেস্ট ক্যারিয়ার ভালোভাবেই শুরু করেছিলেন, কিন্তু অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের কারণে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের আগেও বেশ কয়েকবার অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের দায়ে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত তিনি নিজেকে প্রমাণ করতে একটু বেশিই সময় লাগিয়ে দেন। এই সুযোগে দলে নিজেদের জায়গা পাকাপোক্ত করে ফেলেছিলেন স্টিভ হার্মিসন এবং সাইমন জোন্স।

পিটার টেইলর

অস্ট্রেলিয়ার অভিষেক ম্যাচে ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতা সর্বশেষ স্পিনার জেসন ক্রেজা। তিনি ভারতের বিপক্ষে নাগপুরে ৩৫৮ রানের বিনিময়ে ১২ উইকেট শিকার করে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছিলেন। তার আগে স্পিনার হিসাবে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতা ক্রিকেটারের নাম খুঁজতে হলে যেতে হবে ১৯৮৭ সালে। সিডনিতে ১৯৮৭ সালে নিজের অভিষেক ম্যাচে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতেছিলেন ৩০ বছর বয়সী পিটার টেইলর। অ্যাশেজ সিরিজের শেষ ম্যাচে আকস্মিকভাবে দলে তার অন্তর্ভুক্তি ঘটে। ততক্ষণে ইংল্যান্ড ২-০ তে এগিয়ে থেকে অ্যাশেজ নিজেদের করে নিয়েছিল।

দলে টেইলরের অন্তর্ভুক্তির পর অনেকেই সেটা স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেনি। অস্ট্রেলিয়ান টিভি নেটওয়ার্ক তো বলে বসেছে, ‘পিটার হু?’

গুজব রয়েছে, নির্বাচকরা মূলত মার্ক টেইলরকে দলে নিতে নিয়েছিলেন। কিন্তু তার জায়গায় পিটারকে ডেকে বসলেন। ৩০ বছর বয়সী পিটার টেইলর টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেকের আগে ছয়টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছিলেন, যার মধ্যে শেষ ম্যাচে মাত্র এক উইকেট শিকার করেছিলেন। তাই এত কানাঘুষো।

পিটার টেইলর ; Image Source: Getty Images

তার বোলিং অ্যাকশন অন্যান্য স্পিনারদের চেয়ে ভিন্ন রকমের ছিল। তেড়েফুঁড়ে এসে শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে বল করতেন। সিডনিতে নিজের অভিষেক ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ৭৮ রানের বিনিময়ে ছয় উইকেট শিকার করে সমালোচকদের মুখ বন্ধ করে দেন তিনি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অ্যাশেজের ৫ম টেস্টে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। ডিন জোন্সের ৪২১ বলে অপরাজিত ১৮৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংসের উপর ভর করে অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংসে ৩৪৩ রান সংগ্রহ করে। জবাবে পিটার টেইলরের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ইংল্যান্ড ২৭৫ রানে সবক’টি উইকেট হারায়, যার ফলে ৬৮ রানের লিড পায় অস্ট্রেলিয়া।

দুর্দান্ত বোলিং করার পর ব্যাট হাতেও দলের হয়ে অবদান রাখেন তিনি। দ্বিতীয় ইনিংসে দলীয় ১৪৫ রানের মাথায় ৭ম উইকেটের পতন ঘটলে ব্যাট করতে নামেন তিনি। এরপর স্টিভ ওয়াহ’র সাথে ৯৮ রানের জুটি গড়ে দলকে ভালো অবস্থানে নিয়ে যান পিটার। তার ব্যাট থেকে আসে ৪২ রান। প্রথম ইনিংসের লিডসহ ইংল্যান্ডকে ৩২০ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। পিটার স্লিপ পাঁচ উইকেট এবং পিটার টেইলর অ্যালান লাম্ব এবং ইয়ান বোথামকে পরপর দুই বলে আউট করলে ইংল্যান্ড ২৬৪ রানে সবক’টি উইকেট হারিয়ে ৫৫ রানে পরাজিত হয়। পিটার টেইলর ম্যাচে আট উইকেট এবং গুরুত্বপূর্ণ ৪২ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতেন।

সিডনি টেস্টের পর পিটার টেইলর অস্ট্রেলিয়ার হয়ে আরও ১২টি টেস্ট ম্যাচ খেলেন। কিন্তু ১৩ টেস্টের ক্যারিয়ারে একবারই ইনিংসে পাঁচ উইকেট শিকার করেছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ১৯৯১ সালে টেস্ট দল থেকে বাদ পড়েন তিনি। তার বাদ পড়ার পর শেন ওয়ার্নের আবির্ভাব ঘটে। এতে করে তার আর টেস্ট দলে সুযোগ পাওয়া হয়ে ওঠেনি। টেস্ট দলে সুযোগ না পেলেও ওয়ানডেতে নিয়মিত ছিলেন তিনি। খেলেছেন ১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপ। মোট ৮৩টি ওয়ানডে খেলে ৯৭ উইকেট শিকার করার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ব্যাট হাতে প্রতিরোধ গড়ে তুলতেন তিনি।

ম্যাথু সিনক্লেয়ার

টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ম্যাচে দ্বিশতক হাঁকানো ব্যাটসম্যানদের তালিকা বেশ ছোট। এখন পর্যন্ত মাত্র পাঁচজন ব্যাটসম্যান অভিষেক টেস্টে দ্বিশতক হাঁকানোর কীর্তি গড়েছেন। এর মধ্যেই একজন নিউ জিল্যান্ডের ম্যাথু সিনক্লেয়ার। তিনি নিউ জিল্যান্ডের একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসাবে এই কীর্তি গড়েছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৯৯৯ সালের বক্সিং ডে টেস্ট ম্যাচে ৪৪৭ বলে ২১৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছিলেন সিনক্লেয়ার। তার অসাধারণ ইনিংসের উপর ভর করে নিউ জিল্যান্ড ইনিংস ব্যবধানে জয় পেয়েছিল।

ম্যাথিউ সিনক্লেয়ার ; Image Source: Getty Images

ওয়েলিংটনে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অভিষেক ঘটে ম্যাট সিনক্লেয়ারের। দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্ট জিতে সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে ছিল নিউ জিল্যান্ড। দ্বিতীয় টেস্টে প্রথমে নিউ জিল্যান্ডকে ব্যাট করার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ব্রায়ান লারা। তার সিদ্ধান্তটি যে ভুল ছিল, সেটা প্রমাণ করেন অভিষিক্ত সিনক্লেয়ার। তার ২১৪ রানের ইনিংসের উপর ভর করে স্বাগতিকরা নয় উইকেটে ৫১৮ রান সংগ্রহ করে। জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংসে ১৭৯ এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ২৩৪ রানে গুটিয়ে গিয়ে ইনিংস ও ১০৫ রানের ব্যবধানে পরাজিত হয়।

অভিষেক টেস্টে ২১৪ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতেছিলে সিনক্লেয়ার। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে কার্টলি অ্যামব্রোস না থাকলেও কোর্টনি ওয়ালশ, রিয়োন কিং এবং ফ্রাঙ্কলিন রোজের মতো দুর্দান্ত বোলার ছিলেন। তাদের বিপক্ষে দ্বিশতক হাঁকিয়ে ক্যারিয়ারটা দুর্দান্তভাবে শুরু করেছিলেন তিনি। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ১৫০ রানের ইনিংস খেলার পর নিজের ১২তম টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে অপরাজিত ২০৪ রান এবং ৫০ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতেন তিনি।

প্রথম ১২ টেস্ট শেষে সিনক্লেয়ারের ব্যাটিং গড় ছিল ৫২.৫৫। টেস্ট ক্যারিয়ারের তিনটি শতকের মধ্যে সবকটি হাঁকিয়েছেন প্রথম ১২ টেস্টে। নিজের শেষ ২১ টেস্টে কোন শতক হাঁকাতে পারেননি তিনি। ব্যাটিং গড় ছিল ২১ এরচেয়ে কম। ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ হওয়ার পর দল থেকে বাদ পড়ে যান তিনি। সীমিত ওভারের ক্রিকেটেও নিয়মিত হতে পারেননি সিনক্লেয়ার। দু’টি টি-টোয়েন্টি খেলে রানের খাতা খুলতে পারেননি। ৫৪টি ওয়ানডেতে তার ব্যাটিং গড় ২৮ এর ঘরে। ২০১০ সালে হ্যামিল্টনে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাঠে নামার পর আর নিউ জিল্যান্ডের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা হয়নি তার।

ফিল নিউপোর্ট

১৯৮৮ সালের ২৫শে আগস্ট। লর্ডসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে মাঠে নামার আগে ইংল্যান্ড নিজেদের শেষ ৫১ টেস্টে মাত্র সাতটিতে জয় পেয়েছিল। তাই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দলে কিছু রদবদল ঘটায় ইংল্যান্ড। ম্যাচে কিম বার্নেট, জ্যাক রাসেল, ডেভিড লরেন্স এবং ফিল নিউপোর্টের অভিষেক ঘটে।

লর্ডসে অভিষেকের আগে নিউপোর্ট ১০০-র বেশি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছিলেন। এই ডানহাতি পেসার নিজের অভিষেক টেস্টে তার সমস্ত অভিজ্ঞতা কাজে লাগান। ইংল্যান্ড টসে জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিলে প্রথম টেস্ট উইকেটের জন্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি তাকে। ব্রেন্ডন কুরুপ্পুকে গুচের হাতে ক্যাচ দিতে বাধ্য করে প্রথম উইকেটের স্বাদ গ্রহণ করেন। এরপর প্রথম ইনিংসে অরবিন্দ ডি সিলভা এবং অর্জুনা রানাতুঙ্গার উইকেট শিকার করেছিলেন তিনি। এতে করে শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংসে ১৯৪ রানে গুটিয়ে যায়।

সবার মধ্যমণি নিউপোর্ট ; Image Source: Getty Images

জবাবে ইংল্যান্ড নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৪২৯ রান সংগ্রহ করে বড় লিড নেয়। দ্বিতীয় ইনিংসে শ্রীলঙ্কা প্রতিরোধ গড়লেও নিউপোর্ট দুর্দান্ত বোলিং করে চার উইকেট তুলে নেন। ম্যাচে মোট সাত উইকেট শিকার করে ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতার পাশাপাশি দলকে সাত উইকেটে জয় পেতে সাহায্য করেন তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের অভিষেক ম্যাচে দুর্দান্ত বোলিং করা নিউপোর্টকে মুদ্রার ওপিঠ দেখান স্টিভ ওয়াহ। নিজের দ্বিতীয় ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ১৫৩ রান খরচায় দুই উইকেট এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ২২ রানের বিনিময়ে উইকেট শূন্য ছিলেন।

স্টিভ ওয়াহদের হাতে নাস্তানাবুদ হওয়ার পর দল থেকে বাদ পড়েন তিনি। বাদ পড়ার দুই বছর পর নিজের তৃতীয় এবং শেষ পর্যন্ত ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাঠে নামেন নিউপোর্ট। পার্থে অনুষ্ঠিত হওয়া এই টেস্টেও বল হাতে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি, মাত্র এক উইকেট শিকার করেছিলেন তিনি। যার ফলে পুনরায় আর ইংল্যান্ড দলে ডাক পাননি কাউন্টি ক্রিকেটের নিয়মিত এই মুখ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ডাক না পেলেও ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত কাউন্টি ক্রিকেট খেলে ৮৮০ উইকেট শিকার করেছিলেন ফিল নিউপোর্ট।

This article is in Bangla language. It is about the Top Five Flop Players who made Man of the Match on debut.

Featured Image:  NZPA

Related Articles