ইতিহাসের পাতায় হয়তো বা ম্যাচটিকে আমরা চিনতাম অন্যভাবে। এটি হতে পারত ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা একটি রোমাঞ্চকর সেমিফাইনাল, বা হতে পারত প্রোটিয়াদের নতুন ইতহাসের সোনালী প্রথম পাতা, কিংবা তাদের ‘চোকার’ নামের অঙ্কুরে বিনাশ। কিন্তু খেলার চেয়ে যখন ব্যবসায়িক দিকটিকে বেশি অগ্রাধিকার দেয়া হয়, তখন কি আর খেলা তার খেলার রূপে থাকে?
লক্ষ্যে পৌছাতে ১৩ বলে লাগত ২২ রান, সেখান থেকে ৭ বলে ২২ রান; হুট করেই আবার সেখান থেকে ১ বলে ২২ রান। বল কমলেও খেলা হয়নি একটি বলও। অদ্ভুত এক ‘বৃষ্টি আইন’ আর সম্প্রচারকদের স্বেচ্ছাচারিতা সেদিন সম্মান শেষ করে দিয়েছিল ক্রিকেটের।
বর্ণবাদের অভিযোগে ক্রিকেট থেকে নির্বাসনে যাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকার সেটি ছিল ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তনের মঞ্চ। তাদের কিন্তু বিশ্বকাপে খেলার কথা ছিল না। দক্ষিণ আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার অনুরোধে আইসিসি রাজি হয় তাদের বিশ্বকাপে খেলতে দিতে। এজন্য তারা পরিবর্তন করে বিশ্বকাপের ফরম্যাট, রাউন্ড রবিন লিগে ৯টি দল একে অপরের মোকাবিলা করে। তবে শর্ত দেওয়া হয় দক্ষিণ আফ্রিকাকেও; যদি তাদের গণভোট কোনো কারণে ব্যর্থ হয়ে জাতিবিদ্বেষ থেকে যায়, তবে তাদের খেলতে দেওয়া হবে না। গণভোটের তারিখ পড়ে বিশ্বকাপে চলাকালীন সময়ে। তাই আইসিসি বিষয়টি বিবেচনা করে তাদের সাময়িকভাবে খেলার অনুমতি দেয়, তবে বলে দেয় যে গণভোটের ফলাফল জাতিবিদ্বেষের পক্ষে গেলে এবং তা থেকে গেলে তাদের টুর্নামেন্টের মাঝপথ থেকেই দেশে ফিরে যেতে হবে। অর্থাৎ কোনটি তাদের শেষ ম্যাচ হবে, তা তারাও জানে না। তাই আফ্রিকা খেলতে নামে প্রতিটি খেলাকে উপভোগ করার উদ্দেশ্যে।
তবে প্রতিযোগিতায় তাদের প্রথম ম্যাচেই তারা চমকে দেয় ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে। সেখান থেকে তারা পৌছে যায় টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে। এরই মধ্যে সেমিফাইনালের আগে হয়ে যায় গণভোট। ৬৬% মানুষের ভোটে শেষ হয়ে যায় জাতিবিদ্বেষ। ফলে দক্ষিণ আফ্রিকার আর সেমিফাইনালে খেলায় কোনো বাধা থাকে না আর। কিন্তু কে জানত, বাধাটা আসছে স্বয়ং ভাগ্যদেবীর থেকেই! সেটাও আবার এমনই বাধা, যা তারা অতিক্রম করতে পারবে না পরবর্তী দুই দশকের মধ্যেও! কে জানত, তাদের নতুন দুর্ভাগ্যের সূচনাও হবে এখানেই!
সেমিফাইনালের আগে বৃষ্টির একটা পূর্বাভাস ছিলই। তবুও দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক টসে জিতে আগে বোলিং নেন। কেন নেন? কারণ সেই বিশ্বকাপে আফ্রিকা যে তিনটি খেলায় পরে ব্যাটিং করেছে, তার সবগুলোই জিতেছিল। কিন্তু আগে ব্যাটিং করা ৫টি খেলার ২টিতে জিতেছিল কেবলমাত্র। এর মধ্যে একটি হার ছিল এই ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই। অন্যদিকে ইংল্যান্ড তাদের ৪টি খেলার ৩টিতেই পরে ব্যাটিং করে জিতেছে। তাই দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের ভাগ্যকে পরীক্ষা করে দেখার সিদ্ধান্ত নেয়। তাদের অধিনায়ক কেপলার ওয়েসেলস টস-পরবর্তী সাক্ষাৎকারে একে বলেছিলেন ‘ক্যালকুলেটেড রিস্ক’। তো সেই ক্যালকুলেটেড রিস্কটা কী ছিল?
ঐ সময়ের অদ্ভুত বৃষ্টি আইনের মতে, যদি খেলার দ্বিতীয় ইনিংসে বৃষ্টি নামে, তবে সেখানে যদি ওভার কমানো হয়, তাহলে আগে ব্যাট করা দলের যেসব ওভারে রান সবচেয়ে কম হয়েছে, ঐগুলো বাদ যাবে। ধরুন ৫০ ওভারের খেলায় দ্বিতীয় দল যখন ব্যাটিংয়ে নামে, তখন যদি বৃষ্টির জন্য ১০ ওভার কমানো হয় তবে প্রথম দল তাদের ব্যাটিংয়ের সময় যেসব ওভারে রান সবচেয়ে কম করেছিল, ঐগুলো কাটা পড়বে। তারা যদি ৫০ ওভার খেলে ২৫০ রান টার্গেট দেয় এবং সেখানে ১০ ওভার মেডেন দেয়, তবে দ্বিতীয় দলকে ঐ ২৫০ রান করতে হবে ঐ ৪০ ওভারেই। অর্থাৎ পরে ব্যাটিং করা দলের জন্য এই আইন দারুণ এক অসুবিধার। ১৯৯২ বিশ্বকাপ এবং এর আগে-পরে এই বৃষ্টি আইনের জন্য বেশ কিছু খেলা এভাবে নষ্ট হয়েছে। সব দলই তাই চাইত এই আইন এড়িয়ে যেতে।
এর মধ্যে ১৯৯২ বিশ্বকাপের ১ম পর্বে ইংল্যান্ড এবং পাকিস্তানের একটি খেলায় পাকিস্তান আগে ব্যাট করে ৭৪ রানে অলআউট হয়। তাহলে ইংল্যান্ডের হাতে ৫০ ওভার থাকে এই ৭৪ রান তাড়া করতে। কিন্তু বৃষ্টির বাগড়ায় ম্যাচ নেমে আসে ১৬ ওভারে। তাতে ইংল্যান্ডের টার্গেট দাঁড়ায় ৬৪ রান। সেই ম্যাচ পরবর্তীতে বৃষ্টির জন্য পরিত্যক্ত হয়। যদি কোনো কারণে ম্যাচটি মাঠে গড়াত এবং ইংল্যান্ড অঘটনের শিকার হতো, তবে ব্রিটিশ মিডিয়া এই আইন আর আইসিসিকে রীতিমতো কাঠগড়ায় তুলে ধুয়ে দিত। কিন্তু খাঁড়ার ঘা-টা পড়ে গিয়ে এই দক্ষিণ আফ্রিকার উপর।
শুধু বৃষ্টিকে কেন দোষ দেওয়া হবে? এবার আসা যাক মানুষের হাতে নষ্ট হওয়ার আরেকটা কারণের দিকে। সেটি হলো টাইম রেস্ট্রিকশন।
১৯৯২ বিশ্বকাপের সহ-আয়োজক অস্ট্রেলিয়া ছিল সে সময়ের অন্যতম একটি বাণিজ্যিক দেশ। আয়োজকেরা প্রচারস্বত্ত্ব বিক্রি করার সময় খেলার সময়ের ব্যাপারের পুরোপুরি কর্তৃত্ব দিয়ে দেয় সম্প্রচারকদের হাতে, এজন্য তারা পেয়েছিল একটি ভালো পরিমাণ অর্থ। এর মানে, একটি টিভি চ্যানেল সিদ্ধান্ত নেবে যে একটি বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার কোনো একটি খেলা কতক্ষণ চলবে। তারা যদি বলে এই সময়ের মধ্যে ইনিংস শেষ হবে, তাহলে আপনাকে এই সময়েই বোলিং শেষ করতে লাগবে। যদি ৫০ ওভার শেষ না হয়, তাহলে যে ওভারে খেলা আছে, ঐ ওভারেই খেলা শেষ হবে। তখন বিপক্ষ দলও ঐ কয় ওভার ব্যাট করবে। তখন সম্প্রচারকদের কাছে টিভিতে দেখানোর জন্য ক্রিকেটের চাইতে অন্য অনুষ্ঠান বেশি লাভজনক ছিল। তাই তারা একদম কোনোমতে দায়সারা সম্প্রচার করেই অন্য অনুষ্ঠানে চলে যেত।
সেমিফাইনালটি শুরু হয় বৃষ্টির বাগড়া সঙ্গী করেই। ১০ মিনিট দেরিতে খেলা শুরু হলেও তখন ম্যাচের কোনো ওভার কাটা হয়নি। তবে বলে দেয়া হয়েছিল যে ৬টার মধ্যে ১ম ইনিংস শেষ করার কথা থাকলেও তা ৬:১০ পর্যন্ত নেয়া যাবে। মাঝে যে বিরতি থাকবে, সেখান থেকে ১০ মিনিট কমিয়ে সময় পুষিয়ে নেয়া হবে।
ঘড়িতে যখন ৬:১০ বাজে, তখন ইংল্যান্ডের ৪৫তম ওভারের খেলা চলছিল। এরপরেই তাদের ইনিংস শেষ ঘোষণা দেয়া হয়। একটি বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল চলছে, সেখানেও কর্তৃত্ব নেই আয়োজকদের। ইনিংস শেষ করার সিদ্ধান্ত আসে সম্প্রচারকদের কাছ থেকে। আয়োজকেরা কিন্তু চাইলেই এখানে হস্তক্ষেপ করতে পারত, এতে তাদের সামান্য কিছু টাকা হয়তো বা লস হতো, কিন্তু তাতে করে ম্যাচটা পুরোপুরি হতে পারত।
সেই ম্যাচে এই প্রথম ইনিংস পর্যন্ত ক্ষোভ ছিল ইংল্যান্ডের; তারা শেষ ওভারগুলো কাজে লাগাতে পারেনি, এই নিয়ে। শেষ ৫ ওভার, যে সময়টায় রান তোলার গতি বেশি থাকার কথা, ঐ সময়টাতেই তারা ব্যাটিং পায়নি। তাই বোলিংয়ে তারা শুরু থেকেই আফ্রিকাকে চেপে ধরে। তাদের শারীরিক ভাষাতেই বোঝা যাচ্ছিল যে তারা কতটা আগ্রাসী হয়ে এই রানের মধ্যেই আফ্রিকাকে আটকানোর চেষ্টা করছে। তবুও দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে টার্গেট ছিল ৪৫ ওভারে ২৫৩ রান। গত শতাব্দীতে এই রান করা মানে প্রথমে ব্যাট করা দল ৮০% জয়ের দাঁড়প্রান্তে আছে। ইংল্যান্ডের সেই চেপে ধরা বোলিংয়ে খেই হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ২৭ ওভারে তাদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৪ উইকেটে ১৩১ রান। জয়ের জন্য তখনও তাদের প্রয়োজন ছিল ১০৮ বলে ১২২ রান, হাতে ৬ উইকেট।
আফ্রিকার এই দলটির খেলোয়াড়েরা এখানেই ম্যাচ ছেড়ে দিতে রাজি ছিল না। এই টুর্নামেন্টের মাধ্যমে তারা তাদের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের নতুন আশা দেখেছে। সেই আশাকে সঙ্গী করে জন্টি রোডস খেলে ফেলেন মাত্র ৩১ বলে ৪৭ রানের একটি ইনিংস। তিনি আউট হওয়ার পর ব্রায়ান ম্যাকমিলান ও ডেভ রিচার্ডসন পরবর্তী ১৮ বলে নেন ২৫ রান। দক্ষিণ আফ্রিকা তখনো টিকে থাকে খেলায়। তাদের প্রয়োজন তখন ১৩ বলে ২২ রান। ক্রিকেট মাঠের যুদ্ধ তখন কোন দিকে যাচ্ছে, কেউ জানে না। এখান থেকে ঘটতে পারে যেকোনো কিছু। দুই দলই লড়ছিল সমানে সমানে। তখন মাঠে আগমন ঘটে প্রথম ভিলেনের – বৃষ্টির।
আম্পায়াররা খেলা বন্ধ করে দেন। দুই দল রওনা হয় ড্রেসিংরুমের দিকে। দক্ষিণ আফ্রিকার দুই ব্যাটসম্যান চাচ্ছিলেন আরো কিছুক্ষণ থাকতে, কিন্তু বৃষ্টি পরিস্থিতি আরো খারাপ করে দেয়। পুরো ক্রিকেটবিশ্বই তখন আটকে আছে এই ম্যাচকে ঘিরে। সবার প্রত্যাশা, কোনোরকম ওভার কাটা ছাড়াই খেলা মাঠে গড়াতে পারলে হয়।
এইরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলা মাঠেই পুরোপুরি খেলে শেষ হোক, এমন আশা সবারই। কিন্তু সম্প্রচারকরা বাধা দেয়। তাদের কথা, ম্যাচ শেষ করতে হবে ১০টা ১০-এর মধ্যেই। এই সময়সীমা আয়োজকদের অবশ্যই মানতে হবে। এই টুর্নামেন্টে আইসিসি রিজার্ভ ডে রেখেছিল। কিন্তু এই সম্প্রচারকরা এতটাই স্বেচ্ছাচারী ছিল যে তারা সেই দিনেই খেলা শেষ করতে বলে। এখানেই শুরু হয় দক্ষিণ আফ্রিকার পোড়া কপালের।
সময় যেহেতু শেষ হয়ে যাচ্ছিল, তাই ওভার কমাতে বৃষ্টি আইন ব্যবহার করা হয় তখন। দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য নতুন টার্গেট নির্ধারণ করা হয় ইংল্যান্ডের ইনিংসের সবচেয়ে কম রান আসা দুই ওভার বাদ দিয়ে। দুর্দান্ত বোলিং করা মেইরিক প্রিংগেলের দু’টি মেইডেন ওভার কাটা পড়ে। ফলে টার্গেট থেকে একটি রানও না কমলেও বল থেকে কমে যায় ১২টি বল। ইনিংস ব্রেকের সময় প্রিঙ্গেলের ওভারগুলো প্রশংসিত হলেও এই দু’টি ওভারই এখন হয়ে যায় আফ্রিকার জন্য গলার কাঁটা।
রঙ্গের শেষ হয়নি এখানেও। দক্ষিণ আফ্রিকা যখন ব্যাট করতে নামে, তখন তাদের বলা হয় তাদের আর ৭ বলে ২২ রান প্রয়োজন। স্টেডিয়ামের মাইকেও ব্যাট করতে নামার সময় বলা হয়েছিল ৭ বলে ২২ রানের কথা। কঠিন হলেও অসম্ভব ছিল না। কিন্তু তারা যখন ক্রিজে আসে, তখন জানতে পারে তাদের আসলে ১ বলে ২২ রান প্রয়োজন।
পুরো গ্যালারি থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার সমর্থকেরা দুয়ো দিতে থাকে। আত্মবিশ্বাস নিয়ে মাঠে নামা ম্যাকমিলান হয়ে যান হতভম্ভ। এমনকি ইংল্যান্ডের অধিনায়ক গ্রাহাম গুচও এমন অবাক করা কাণ্ড নিয়ে আম্পায়ারের সাথে তর্ক করেন। কিন্তু সিদ্ধান্ত একবার যখন হয়েই গেছে, তা আর কী করে পরিবর্তন হবে, অন্তত ক্রিকেটের মাঠে?
ম্যাকমিলান শেষ বলটি হালকা করে মিড অনে ঠেলে দিয়ে এক রান নেন। আর কী-ই বা করার আছে তার? এক ইতিহাস লিখতে এসে দক্ষিন আফ্রিকা লিখে যায় অন্য এক ইতিহাস, আয়োজকদের নির্বুদ্ধিতার ইতিহাস।
সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডের ঘড়িতে তখনো সময় ১০ টা বেজে ৮ মিনিট। দক্ষিণ আফ্রিকার হাতে তখনো ২ মিনিট সময় বাকি ছিল। আর বৃষ্টি স্থায়ী হয়েছিল মাত্র ১২ মিনিট।
ব্যাপারটি শুধু আফ্রিকা নয়, হতাশ করেছিল ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়দেরও। সবাই হতাশ এই ধরণের অথর্ব নিয়মের জন্য। তবে স্পোর্টসম্যানশিপের অনন্য এক উদাহরণ সেদিন দেখিয়েছিল আফ্রিকা। হতাশা ঝেড়ে মাঠে নেমে ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়দের সাথে করমর্দন করে তারা। সেই সাথে দর্শকদের উদ্দেশ্যে হয় একটি ল্যাপ অফ অনার। দর্শকরাও তাদের দেয় যোগ্য সংবর্ধনা। আফ্রিকা এই ঘটনাটিকে বলেছিল, “Rules are rules”।
তবে একটা ব্যাপার আমাদের মধ্যে কখনোই আলোচনা হয় না। কী সেটা? এই ম্যাচে আরেকটু হলেই ইংল্যান্ডও বলির শিকার হতো। কীভাবে?
ইংল্যান্ড কিন্তু জানত না যে খেলা ৪৫ ওভার পর্যন্ত হবে। তারা ৫০ ওভার ধরেই ব্যাট করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। দক্ষিণ আফ্রিকা ঠিকই মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে ৪৫ ওভার ব্যাট করতে নেমেছিল। যদি সেই সময় বৃষ্টি আইন না থেকে ডাকওয়ার্থ-লুইস থাকত, তবে দক্ষিণ আফ্রিকার টার্গেট কম হলেও আরো ২০ রান বেশি হতো। বৃষ্টি আইনে এমন ক্ষেত্রে পরে ব্যাট করা দল ভালো সুবিধা পেত, ডাকওয়ার্থ-লুইস এই সমস্যাকে দূর করে। এবং দক্ষিণ আফ্রিকার যে ব্যাটিং ধ্বস হয়, তাতে করে ডাকওয়ার্থ-লুইস টার্গেটে তাদের পৌছানো ছিল রীতিমতো অসম্ভব। ম্যাকমিলান আর রিচার্ডসন আউট হয়ে গেলে তখন শুধু ব্যাট করার জন্য থাকতেন স্নেল, প্রিঙ্গেল ও ডোনাল্ড – যাদের কেউই স্বীকৃত ব্যাটার নন।
দক্ষিণ আফ্রিকা এই ম্যাচে ঠিক ‘চোক’ করেনি, বরং আটকে গেছিল দুর্ভাগ্যের বেড়াজালে। তারা ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেনি যে ‘চোকার’ নাম পাবে তারা, নিঃসন্দেহে ভাবতে পারেনি যে বহুজাতিক টুর্নামেন্টে তাদের দুর্ভাগ্যের যাত্রাও শুরু হবে এখান থেকে। শুধুমাত্র একটি টিভি চ্যানেলের আয় যাতে ঠিক থাকে, সেজন্য হত্যা করা হয় বিশ্বকাপের একটি ম্যাচকে, অসঙ্কোচে হত্যা করা হয় ক্রিকেটকে। টাকার লোভে মারা পড়ে ক্রিকেট।
১৯৯২ বিশ্বকাপের সেই কুখ্যাত সেমিফাইনাল শুধু দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য কলঙ্ক নয়, সেটি পুরো ক্রিকেট বিশ্বের জন্য একটি কলঙ্ক।