অনেক বছর আগের কথা। আমাদের খুব চেনা ওয়েস্টেরস মহাদেশ আর সাত রাজ্য বলতে কিছু ছিল না। টারগেরিয়ান, অ্যান্ডালস বা ফার্স্ট ম্যানদের কোনো চিহ্ন ছিল না সে সময়ে। ওয়েস্টেরসের মাটিতে তখন বাস করত ‘চিলড্রেন অভ ফরেস্ট’ নামক এক প্রাণী, আর ছিল জায়ান্টরা। চিলড্রেনের উৎপত্তি কোথায়, কীভাবে, তারা এখানে এসে প্রথম বসবাস শুরু করে, সে সম্পর্কে কারও ধারণা নেই।
এরপর, বর্তমান সময় থেকে প্রায় ১২ হাজার বছর আগে ওয়েস্টেরসের বুকে প্রথম আবির্ভাব ঘটে ফার্স্ট ম্যানদের। তারা এসেছিল ইসোস মহাদেশ থেকে। তাদের সংখ্যা যেমন চিলড্রেন থেকে অনেক বেশি, তেমনি তাদের সাথে ছিল বিভিন্ন ভারি অস্ত্র ও যুদ্ধ সামগ্রী। ফার্স্ট ম্যানরা সাথে করে আরও এনেছিল তাদের দেবতা ও সম্পূর্ণ ভিন্ন ধর্মচিন্তা।
চিলড্রেন তাদের সাদরে আমন্ত্রণ জানালেও সেভাবে পছন্দ করতে পারছিল না। দুই পক্ষ এই মাটিতে বসবাস করলেও প্রথম থেকে একদম বনিবনা হয়নি। এভাবে কয়েক বছর যেতে না যেতেই তাদের সাথে ফার্স্ট ম্যানদের প্রচণ্ড যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। ফার্স্ট ম্যানরা প্রধানত এসেছিল দক্ষিণ দিক থেকে। আর চিলড্রেনরা নিজেদের ভেতর যোগাযোগ করত উইয়ারউড নামক গাছের সাহায্যে। তাই যুদ্ধে তাদের শক্তি ও যোগাযোগ ক্ষমতা কমিয়ে দিতে ফার্স্ট ম্যানরা এ গাছ গণহারে কাটা শুরু করে। এজন্য বর্তমানে দক্ষিণ দিকে এই গাছ একদমই পাওয়া যায় না।
চিলড্রেন আর ফার্স্ট ম্যানদের ভেতর এ যুদ্ধ চলেছিল প্রায় দু’হাজার বছর পর্যন্ত। এরপর তারা এক শান্তিচুক্তিতে আসে। ফার্স্ট ম্যানরাও বন্ধ করে তাদের গাছ কাটা। পরবর্তী চার হাজার বছর তাদের ভেতর এ চুক্তি বজায় থাকে। কিন্তু ততদিনে ক্ষতি যা হবার, তা হয়ে গেছে। চিলড্রেনের যোগাযোগের একমাত্র উপায় উইয়ারউড গাছ দক্ষিণ থেকে একদম সাফ হয়ে গেছে। কেবল উত্তর দিকে শীতার্ত অঞ্চলে খুবই অল্পসংখ্যক এ গাছ টিকে আছে। তাই চিলড্রেনরা বাধ্য হয়ে আরও উত্তরে সরে যায়।
শান্তিচুক্তির দুই হাজার পর, চিলড্রেন আর ফার্স্ট ম্যান – উভয়ের জন্য নতুন এক বিপদ হাজির হয় এই উত্তর দিক থেকেই। উত্তরের সবচেয়ে উত্তরের স্থান ‘ল্যান্ড অভ অলওয়েজ উইন্টার’ থেকে নেমে আসে কাঁচের মতো স্বচ্ছ এক প্রাণী। এদের আগুনে পুড়িয়ে মারা যেত না, কোনো অস্ত্র দিয়েও হত্যা করা যেত না। ফার্স্ট ম্যানরা এদের নাম দেয় ‘আদার্স’। এবং প্রায় এক প্রজন্ম ধরেই শুরু হয় ‘লং নাইট’।
মাসের পর মাস, বছরের পর বছর সূর্যের মুখ দেখা যেত না। অন্ধকারে জন্ম নেওয়া প্রজন্ম অন্ধকারেই মারা যেত। আদার্সের বিপক্ষে ফার্স্ট ম্যান ও চিলড্রেন এক হয়ে যুদ্ধ করলেও তাদের থামানো যাচ্ছিল না। এই দুই পক্ষের মাঝে যারা মারা যেত, আদার্স আবার তাদের জীবিত করে নিজেদের দল ভারি করত। এদের বলা হয় ‘উইট’। উইটদের কোনো জাদু ক্ষমতা নেই, জীবিত প্রাণীর মাংস খায় তারা। আদার্স যত দ্রুত উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হওয়া শুরু করল, ততই উইটদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে লাগল।
উইটদের আগুনে পোড়ানো যায়। কিন্তু হাজার হাজার উইট একত্রে আক্রমণ করলে এত আগুন জ্বালানো সম্ভব হতো না। আর আদার্সের কারণে জ্বলন্ত আগুনও নিভে যেত। তাই কোণঠাসা হয়ে পড়তে শুরু করল ফার্স্ট ম্যানরা। যেহেতু উত্তরে চিলড্রেন বেশি থাকত, তাই প্রথম আদার্সের আক্রমণের শিকার তাদেরই হতে হয়েছিল। এসময়ই চিলড্রেন প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যায়। ফার্স্ট ম্যানরাও টিকে থাকত না, যদি না একজন নায়কের আবির্ভাব হতো।
ফার্স্ট ম্যান ও চিলড্রেনের পরাজয় যখন প্রায় নিশ্চিত, তখন ‘দ্য লাস্ট হিরো’ নামক এক যোদ্ধার আগমন ঘটে। যদিও এ সম্পর্কে আরেক লোকগাথা আছে। সেখানে যোদ্ধার নাম আজর আহাই। তিনিই এগিয়ে আসেন আদার্সকে প্রতিহত করতে। তবে তার প্রয়োজন ছিল একটি তরবারির। প্রথমবার তের রাত ও তের দিন চেষ্টা করেও তিনি যোগ্য তরবারি প্রস্তুত করতে ব্যর্থ হন।
দ্বিতীয়বার পঞ্চাশ দিন ও পঞ্চাশ রাত লাগিয়ে তিনি আবার তরবারি তৈরি করেন। দ্বিতীয় এই তরবারি ছিল প্রথম তরবারি থেকে আরও ভালো মানের। বানানোর পর তা যাচাই করতে তিনি সিংহের হৃদয়ে তরবারি ঢুকিয়ে চেষ্টা করেন। কিন্তু এবারও ব্যর্থ, তরবারি ভেঙে যায়।
কিন্তু আজর আহাই হাল ছাড়েন না। তৃতীয়বার একশো দিন ও একশো রাত লাগিয়ে তিনি আবার তরবারি বানালেন। এবার তিনি ডাকলেন তার স্ত্রী, নিসা নিসাকে। তার স্ত্রীর জীবন বিসর্জন দিয়ে অবশেষে তিনি বানালেন ‘লাইটব্রিঙ্গার’। তবে দ্য লাস্ট হিরো ও আজর আহাই মূলত কিংবদন্তি গল্প। এ গল্পে বলা নেই, আজর আহাই ও দ্য লাস্ট হিরো লং নাইটের সময় এক হয়েছিল কি না; এটাও বলা নেই, তারা দু’জন একই ব্যক্তি কি না!
আজর আহাইয়ের এমন গল্পের পরই ফার্স্ট ম্যানরা আবিষ্কার করে, ড্রাগনগ্লাস নামক এক বিশেষ পাথর দিয়ে আদার্সকে মারা সম্ভব। ফার্স্ট ম্যানরা এই ড্রাগনগ্লাস দিয়ে অস্ত্র তৈরি করে আদার্সদের প্রতিহত করে। এবং তাদের আবার উত্তরের গভীর অংশে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
এই যুদ্ধের পরপরই ফার্স্ট ম্যান এবং হাউজ স্টার্কের প্রতিষ্ঠাতা ব্র্যান্ডন দ্য বিল্ডার মূলত জায়ান্টদের সহায়তা ও জাদুর সাহায্য নিয়ে গড়তে শুরু করে ‘দ্য ওয়াল’, যা মানুষ ও আদার্সকে আলাদা করে রাখতে সক্ষম হয় হয়। প্রাচীর নির্মাণের পর পাহারা দেবার জন্য গঠিত হয় ‘নাইটস ওয়াচ’।
আদার্স বনাম ফার্স্ট ম্যানদের এ যুদ্ধ বর্তমান আধুনিক ওয়েস্টেরসে মিথে পরিণত হয়েছে। তাদের কাছে আদার্স বর্তমানে পৌরাণিক চরিত্র ছাড়া কিছু নয়। স্বাভাবিকভাবেই আজর আহাইকে নিয়েও বিভিন্ন গল্পগাথা চালু আছে। বলা হয়ে থাকে, আদার্স আবারও নেমে আসবে, দ্বিতীয় লং নাইটের আগমন ঘটবে, এবং তাদের আবারও প্রতিহত করতে পুর্নজন্ম ঘটবে আজর আহাইয়ের। তবে কেউই নিশ্চিত নয়, এ ধারণা আদৌ সত্যি হবে কি না। যদিও লং নাইট, আদার্স ও এই প্রফেসি সম্পর্কে মেলিসান্দ্রে একবার জন স্নো’কে বলেছিলেন,
“When the red star bleeds and the darkness gathers, Azor Ahai shall be born again amidst smoke and salt to wake dragons out of stone.”
অর্থাৎ,
“যখন লাল নক্ষত্র থেকে রক্ত পড়বে এবং অন্ধকার ঘনীভূত হবে, পাথর থেকে ড্রাগনকে জাগাতে আজর আহাই পুনরায় ধোঁয়া ও লবণের মধ্য দিয়ে আবির্ভূত হবে।”
‘আ সং অভ আইস অ্যান্ড ফায়ার’ বই থেকে বানানো টিভি সিরিজ গেম অফ থ্রোন্সে এই আদার্স নেতার নাম নাইট কিং। তবে মূল বইতে আদার্স বাহিনীর এমন কোনো নেতার কথা বলা নেই। সেখানে ‘নাইটস কিং’ নামক একজনের কথা উল্লেখ আছে, যিনি এইজ অভ হিরোসের সময়ে একজন স্টার্ক ও নাইটস ওয়াচের ত্রয়োদশ লর্ড কমান্ডার ছিলেন।
ক্যাসল ব্ল্যাকে লর্ড কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করার সময় ওয়াল পেরিয়ে উত্তরের আরও গভীরে গিয়ে এই তিনি এক সুন্দরী আদার নারীর দেখা পান। তার প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে তাকে নাইটফোর্টে নিয়ে এসে বিয়ে করে নিজেকে নাইট’স কিং হিসেবে ঘোষণা করেন। সেই নারীকে তার রানী হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
নাইটফোর্টে থেকে তারা ১৩ বছর শাসন করেন। জাদুবলে পুরো নাইট’স ওয়াচ তার ক্ষমতায় চলে আসে। সে সময়ে কিং অব উইন্টার ব্রান্ডন দ্য ব্রেকার ও কিং বিয়ন্ড দ্য ওয়াল জোরামুনের সহয়তায় নাইট’স কিংকে প্রতিহত করা হয়, কিন্তু সম্পূর্ণভাবে মেরে ফেলা যায়নি। এরপর, নাইট’স কিং নিজেকে আদার্সের কাছে সর্পে দেয়। আর উত্তরে সমস্ত তথ্য ধ্বংস করে তার নাম ইতিহাস থেকে চিরতরে মুছে ফেলা হয়।