আব্বাস কিয়ারোস্তামির সিনেমাগুলো গভীররকম প্যারাডক্সিক্যাল হয় তা দর্শকের অনুভূতির ক্ষেত্রেই হোক বা সমালোচকদের বিশ্লেষণের জন্যেই হোক। এককথায়, এই অসাধারণ পরিচালকের কাজগুলো কিছুটা নিষ্ক্রিয় ধরনের। নিষ্ক্রিয় বলা হচ্ছে কারণ একটা ফিচার ফিল্মে যে ধরনের কাহিনীগত, বিষয়গত, আবেগপূর্ণ ও মনস্তাত্ত্বিক উপাদানগুলোর পরিপূর্ণ সম্মেলন পাওয়া যায় তা কিয়ারোস্তামির ছবিতে থাকেনা। যদিও এই আপাত বাহুল্যবর্জিত শালীনতা বা অনেকের মতে ‘ঘাটতি’ সিনেমাগুলোকে দর্শককে নিজের মতো করে পরিপূর্ণ করার সুযোগ অনেক বেশি দেয়। এর চালিকাশক্তি হিসেবে থাকে দৃশ্যের মাঝে মাঝে উপস্থিত অনেকগুলো সম্ভাবনাময় শূন্যস্থান যেগুলো দর্শককে তীব্রভাবে আহবান করে নিজেদের ভাবনা দিয়ে পূরণ করার জন্যে। এভাবে গল্পের প্রতিটা টার্ন, প্রতিটা দৃশ্যের মাঝখানে গিয়ে নতুন নতুন অনেক সম্ভাবনা জন্ম নেয় আবার হয়তো পরের কোনো দৃশ্যে গিয়ে এই সম্ভাবনাগুলোর পতনও ঘটে। পরিষ্কারভাবেই বোঝা যাচ্ছে কিয়ারোস্তামির সিনেমার এলিপসিস সাধারণ লিনিয়ার গল্পের মতো কাজ করে না। এক্ষেত্রে কিয়ারোস্তামির একটি উক্তি না বললেই নয়:
When we tell a story, we tell but one story, and each member of the audience, with a peculiar capacity to imagine things, hears but one story. But when we say nothing, it’s as if we said a great number of things. … It’s necessary to envision an unfinished and incomplete cinema so that the spectator can intervene and fill the void, the lacks.
‘টেস্ট অফ চেরি’ আব্বাস কিয়ারোস্তামির অন্যতম শ্রেষ্ঠ সিনেমা। ১৯৯৭ সালের কান ফিল্ম ফেস্টিভালে ছবিটি যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ সিনেমার পুরষ্কারটি জিতে নিলেও তার অন্যান্য কাজগুলোর মতোই এটিও সমালোচকদের দ্বিধাবিভক্ত করে ফেলেছিল।
টেস্ট অফ চেরির মূল চরিত্র বাদি নামের একজন মধ্যবয়স্ক মানুষ। শুরুর দৃশ্য থেকেই তাকে নিজের রেঞ্জ রোভারে করে তেহরান শহরে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। মানুষে পরিপূর্ণ শহরটি প্রথম দেখায় বেশ প্রাণবন্তই মনে হবে। রাস্তার আশেপাশে অনেক দিনমজুরকে দেখা যায় যারা কাজ খুঁজে বেড়াচ্ছে। তাদের কেউ একা, কেউ বা দলবদ্ধ। এদের মধ্যেই অনেকে বাদিকে প্রশ্ন করে তার কাজ করার জন্যে কাউকে দরকার কি না। বাদি সবাইকে না করে দিলেও শহরের রাস্তাগুলোয় তার অবিরত একইরকমভাবে ঘুরে বেড়ানো এবং শ্রমিকদের দেখে বারবার গাড়ির গতি কমিয়ে আনা দেখে সহজেই অনুমান করা যায় সে কাউকে খুঁজছে।
এরপরের দৃশ্যগুলোতে দেখা যায় বাদি শহর থেকে বের হয়ে একটি মরুভূমির মতো জায়গায় পৌঁছায়। মরুভূমির স্বাভাবিকভাবেই যথেষ্টরকম রুক্ষ ও একঘেয়ে দৃশ্য দর্শকের মনেও অজান্তেই একটা কাঠিন্যের ছোঁয়া বুলিয়ে যাবে। কিন্তু জানালার ওপাশের এরকম রুক্ষ দৃশ্যেও বাদির চেহারায় বিশেষ কোনো ভাবান্তর এলো না। ছবির এই পর্যন্ত পুরো সময় জুড়ে ফ্রেমে শুধুমাত্র তার চেহারা দেখা গেলেও দর্শককে এখনও তার ব্যাপারে কিছুই জানানো হয়নি। কিন্তু গাঢ় বাতাসে পূর্ণ এই জনশূন্য মরুদৃশ্যের নিরানন্দ পটভূমির সাথে বাদির প্রশান্ত চেহারার পেছনের লুকায়িত বিষণ্ণ হৃদয়টি অনুভব করা যায়।
এই ছবিতে অভিনয়ের জন্যে কিয়ারোস্তামি রবার্ট ব্রেসন ও ডি সিকাদের অনুসরণ করে অপেশাদার অভিনেতা বেছে নিয়েছিলেন। এভাবে অভিনেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চেহারার সহজাত বৈশিষ্ট্যকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। বাদি চরিত্রের অভিনেতা হুমায়ুন এরশাদির চেহারায় এই বৈশিষ্ট্য বেশ প্রকট। নতুন অভিনেতা হওয়ায় তার মধ্যে একটা সচেতন অনভিজ্ঞতা অনুভব করা যায় যার সাথে যুক্ত হয়েছে তার চরিত্রের অনিশ্চিত মরিয়া আচরণ। ছবিটিতে চলমান প্যারালাইজড নার্ভাসনেস ফুটিয়ে তোলার জন্যে এই ব্যাপারটি খুব কাজে দিয়েছে। ছবিটি স্বভাবে শান্ত প্রকৃতির হলেও একই জায়গা ও একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তির ফলে প্রচ্ছন্ন একটা টেনশন তৈরি হয়। মূল চরিত্রকে মানসিকভাবে খুব বেশি প্রকাশ না করেই তাকে ফ্রেমের ভেতরে এত বেশি পরিচিত করে তোলা হয়েছে যে দর্শক সহজেই পর্দায় এই পরিচিত দৃশ্যটির পরিবর্তনের সময়ে কোনো জোরালো কারণ অনুসন্ধান করবে।
রাস্তায় একজন কমবয়সী সৈনিককে তার সেনানিবাসে পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাদি তাকে নিজের গাড়িতে ওঠায়। কিন্তু সরাসরি গন্তব্যে না গিয়ে সে নিকটবর্তী একটা পাহাড়ি লম্বা রাস্তা ধরে এগোতে থাকে। এর মাঝে সে বিভিন্ন রকম প্রশ্ন করে তরুণটির মধ্যে অপরিচিত ভাবটি দূর করার চেষ্টা করে। সক্রেটীয় এই প্রশ্নোত্তরের শেষে এসে প্রথমবারের মতো বাদির উদ্দেশ্য সম্পর্কে দর্শক জানতে পারে। বাদি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমনকি নিজের জন্যে একটি কবরও খুঁড়ে রেখেছে। তার পরিকল্পনা হচ্ছে রাতের বেলায় সে ঘুমের ঔষধ খেয়ে কবরে গিয়ে শুয়ে থাকবে। তার এমন কাউকে দরকার যে পরদিন সকালে তার মৃত্যু যাচাই করতে যাবে। যদি মৃত্যু নিশ্চিত হয় তাহলে মৃতদেহটি মাটিচাপা দিয়ে আসবে আর তা নাহলে তার ঘুম ভাঙিয়ে দিবে। এই কাজের জন্যে সে বেশ মোটা অংকের অর্থের প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছে।
ইসলাম ধর্মে ‘আত্মহত্যা’ নিষিদ্ধ বিধায় চলচ্চিত্রটি ইরানের বাইরে প্রদর্শনীর জন্যে নিষিদ্ধ ঘোষণা দেওয়ার রব উঠেছিল। একই কারণে বাদিকে কেউ সাহায্য করার প্রবণতা দেখায়নি। মরিয়া হয়ে সে তখন বিভিন্ন যুক্তি দেখানোর চেষ্টা করে যার মধ্যে যেমন দার্শনিক চিন্তা দেখা যায়,
All work is the same, a job is a job.
আবার হাস্যকর কিছু করুণ সংলাপও রয়েছে,
Just pretend you’re farming.
সৈনিকের প্রস্থানের পরে সাহায্য করার জন্যে সে আরো দুজনকে অনুরোধ করে। তাদের মধ্যে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলার ও আরেকজন জাদুঘরে কাজ করে। এই চরিত্রগুলো ছবিটির একটি অসাধারণ অংশ নির্মাণ করেছে। তিন ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে উঠে আসা তিনজন মানুষকে বাদির মুখোমুখি করে সিনেমাটি প্রশ্ন করতে চায় মানসিক যন্ত্রণার সাথে সংগ্রাম করতে থাকা একজন মানুষকে ধর্ম, বিজ্ঞান ও সামরিক বিভাগ কীভাবে দেখে, তাকে কীভাবে বুঝতে চায় এবং তাকে তাদের কী দেওয়ার আছে।
টেস্ট অফ চেরি দেখার সময়ে ছবিটিতে খুব বেশি পরিকল্পনার ছাপ অনুভব করা যায় না। দর্শককে সত্যিকারের অনুভূতি দিতেই হয়তো এই কাজটি করা হয়েছে। তাছাড়া ছবিটিতে খুব সতর্কভাবে একধরনের মৃদু ভিজ্যুয়াল স্টাইল বজায় রাখা হয়েছে যা ছবিটিকে জাগতিক অনুভূতি দিয়েছে। এই অনুভূতির ফলেই বাদির আত্মহত্যার পরিকল্পনা ছবিটিতে একটি ঝুঁকিপূর্ণ মেজাজ তৈরি করে।
মানুষের জীবনে মৃত্যু খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং একই সাথে তা বেদনাদায়কও বটে। কথাটি চরিত্রগুলোর জন্যে যেমন সত্য তেমনি ছবিটির জন্যেও সত্য। কিন্তু জগতের অন্য অনেক কাজের মতো মৃত্যুবরণ করতেও সাহায্যের দরকার হয় (বাদি চায়নি তার মৃতদেহটি উন্মুক্ত থাকুক)। এই ছবিতে বাদির মৃত্যু পরিকল্পনা এভাবে অন্যান্য চরিত্রগুলোর সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে। চরিত্রগুলো সম্পর্কে জানার প্রক্রিয়াটি একজন তরুণ ও একজন বৃদ্ধের চিন্তার পার্থক্য, মুক্তচিন্তার চর্চাকারী থেকে নীতিবাদীর তফাৎ ও একজন সহমর্মী মানুষ ও অন্যের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পছন্দ করে এমন মানুষের ভিন্নতা তুলে ধরে। ছবিটি এই প্রশ্নগুলোর ব্যাপারে কৌতূহল উদ্রেক করে। এর রক্ষণশীল সিনেম্যাটোগ্রাফি এখানের সবগুলো চরিত্রের জন্যে একটি ইকুয়ালাইজারের মতো কাজ করে।
সবগুলো চরিত্রকে একই গাড়ির জানালার ফ্রেমে একইভাবে দেখা যায় যারা বাদির রেঞ্জরোভারে করে একই রাস্তা দিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছে। চরিত্রগুলোকে ছবিতে কোনো ব্যাকস্টোরি দেওয়া হয়নি। ফলে গাড়িতে প্রবেশ করে বাদির অদমনীয় প্রস্তাব শোনার পরে নিজেদের নীতিবোধ ও যুক্তি ছাড়া নির্ভর করার মতো তাদের অন্যকিছু থাকে না। তাই বাদির সাথে সাথে আমরাও তাদেরকে অনেক বেশি খোলামেলা রুপে চিনতে পারি যা সাধারণত প্লটনির্ভর ছবিতে দেখা যায় না।
টেস্ট অফ চেরি তার চরিত্রগুলোর প্রতি মূলধারার ছবির তুলনায় অনেকটাই ভিন্নভাবে সহানুভূতি তৈরি করেছে। মূল চরিত্র বাদি অবশ্য এই সহানুভূতিকে তীব্রভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে,
You can’t feel what I feel.
বাদি হয়তো মানুষের সম্পর্কের প্রতি ঔদাসীন্য ও একাকিত্ব দেখে জীবনকে মূল্যহীন ভাবা শুরু করেছে। কিংবা মৃত্যু সিদ্ধান্তের পেছনে তার হয়তো সরাসরি কোনো কারণ রয়েছে। ছবির একপর্যায়ে বাদি তার ছেলের কথা বলে যে সম্ভবত অসুস্থ অথবা মৃত। আবার দেখা যায় তার সাথে দেখা হওয়া সর্বশেষ চরিত্রটিরও একজন অসুস্থ ছেলে রয়েছে যার চিকিৎসার জন্যে অনেক অর্থের প্রয়োজন। তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও সে বাদির প্রস্তাবে রাজি হয়। এভাবে পরস্পরের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেওয়া দুঃখবোধ দুজন মানুষের সম্পর্ক তৈরির সবচেয়ে ভালো উপায়। কিন্তু বাদি ও তার মধ্যকার মতের অমিলটা তীব্রভাবেই লক্ষণীয়। তবে সম্পূর্ণ সিনেমাটিই মৃত্যু বেছে নেওয়ার কারণগুলোর তুলনায় জীবনকে বেছে নেওয়ার বেশি পক্ষপাতি।
If you look at the four seasons, each season brings fruit. In summer, there’s fruit, in autumn, too. Winter brings different fruit and spring, too. No mother can fill her fridge with such a variety of fruit for her children. No mother can do as much for her children as God does for His creatures. You want to refuse all that? You want to give it all up? You want to give up the taste of cherries?
বাদির আত্মহত্যা ও দুঃখবোধের কারণগুলো আড়ালে রেখে কিয়ারোস্তামি বেশ দক্ষতার সাথেই চরিত্রের ব্যাকস্টোরি বর্ণনা করার জনপ্রিয় উপায় থেকে সংযত থেকেছেন। এই উপায়ে সাধারণত এক বা একাধিক ঘটনা দাঁড় করানো হয় যেখানে একটা চরিত্র কিভাবে অনুভব করবে তার জন্যে পটভূমি তৈরি করে। এই ছবিতে সম্পূর্ণ ভিন্ন পথে হাঁটা হয়েছে, যার জন্যে রজার এবার্টসহ অনেক সমালোচকের কাছে ছবিটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু এখানে যে ব্যাপারটিতে জোর দেওয়া হয়েছে তা হলো, বাদির যন্ত্রণার উৎস যা-ই হোক না কেন তা দর্শকের সমবেদনা দাবি করার পূর্ণ যোগ্যতা রাখে। অবশ্য তাতে অন্য যে চরিত্রগুলো বাদির সিদ্ধান্তটি ভালো চোখে দেখেনি তাদেরও দোষারোপ করার মতো সুযোগ রাখা হয়নি। সমবেদনা অনুভব করা আর দায়িত্ব নেওয়া দুটি আলাদা বিষয়।
ছবির একপর্যায়ে রুপকার্থে বেশ শক্তিশালী একটা দৃশ্য দেখা যায়। একটা মরুপাহাড়ের নিচে বাদি কিছু সময়ের জন্যে গাড়ি পার্ক করেছিল। সেখানে বসে সে ট্রাক থেকে ফেলে দেওয়া বাতাসের মধ্যে পাথর ও বালুর আঘাতে তৈরি হওয়া বালুর ঘূর্ণি দেখতে পায়। ধীরে ধীরে এই বালু সম্পূর্ণ পরিবেশকে ছেয়ে ফেলে। একটা মিডিয়াম শটে ঘুরপাক খাওয়া ধুলাবালির কারণে বাদিকে ফ্রেমের মধ্যে ধীরে ধীরে অস্পষ্ট হয়ে যেতে দেখা যায়। দৃশ্যটা সুন্দর হলেও বাদির উপরে ঝরে পড়া ধুলাবালির শটটি তার আত্মহত্যা পরিকল্পনার জন্যে পরিষ্কার একটি রুপক। এরকম দৃশ্যগুলো সাধারণভাবে খুব বেশি সংলগ্ন মনে না হলেও ছবির বিভিন্ন উপসর্গ ও সৌন্দর্য দিয়ে সাজানো গাড় সম্মেলন দৃশ্যগুলোকে ফলপ্রসু করে তোলে। কিয়ারোস্তামির এরকম প্রচ্ছন্ন দৃশ্যগুলোই তার ছবির নির্লিপ্ত প্রধান চরিত্র দিয়ে এত শক্তিশালী আইডেন্টিফিকেশন তৈরি করার রহস্য। পুরো সিনেমাটি এভাবে তার সংক্ষিপ্ত প্লট থেকে বের না হয়েই সকল ধরনের দার্শনিক উপাদান যুক্ত করেছে।
টেস্ট অফ চেরির শেষ কিছু মিনিট আরো অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ও ছবির অন্যান্য অংশের তুলনায় বিশ্লেষকদের জন্যে অনেক বেশি উন্মুক্ত। ছবির এই পর্যায়ে এসে দর্শক ও সমালোচকরা দুই ভাগ হয়ে যায়। কিয়ারোস্তামির আগের ছবি ‘Close-up’ ও ‘Through the olive trees’ এর মতো এই পর্যায়ে এসে টেস্ট অফ চেরি একধরনের চঞ্চল ও শিল্পসম্মত কৌতূহল ধরে রাখে। তাছাড়া বেশ পরিপূর্ণভাবে মানুষের মানবিক সমবেদনার সীমা ও অবস্থা বিশ্লেষণের আগ্রহ দেখায়। এর সমাপ্তি দর্শক গ্রহণ বা অগ্রাহ্য যা-ই করুক না কেন কিয়ারোস্তামি ছবিতে যা দেখিয়েছেন তা প্রকৃতভাবে বিবেচনা বা মূল্যায়ন না করে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো প্রায় অসম্ভব। নিজের ভেতরে একটা মানবিক ভ্রমণ না করে কেউ টেস্ট অফ চেরি দেখা শেষ করে উঠতে পারবে না। দর্শকের প্রতিক্রিয়া অনেকাংশেই হবে নিজের একপ্রকার আত্মস্বীকৃতি। বাদিকে দর্শক কীভাবে যুক্তি দেখাবে, কোন চরিত্রের সাথে কীভাবে নিজেকে সংশ্লিষ্ট হিসেবে ভেবে নিবে এই চিন্তাগুলোই তার আত্মস্বীকৃতির সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে। টেস্ট অফ চেরিতে একটা চরিত্র যেভাবে বলেছে,
The main thing is to think hard.
বাদির গম্ভীর ও নিজের ব্যাপারে অন্তর্মুখ বৈশিষ্ট্য থাকা সত্ত্বেও কিয়ারোস্তামি ভেতর থেকে তার জীবনকে টেনে বের করেছেন। তার অভিব্যক্তিটিকে কাব্যিক বলে বিবেচনা করা যায়। আবার দর্শকের ভেতরের চিন্তা ও অনুভূতিগুলোও তিনি উন্মোচন করতে সক্ষম হয়েছেন যার জন্যে তাকে অত আড়ম্বর করতে হয়নি। টেস্ট অফ চেরির বিভক্ত হয়ে যাওয়া দর্শক ও সমালোচকদের জন্যে কিয়ারোস্তামি বলেছেন,
This is not a movie about suicide—it’s about the choice we have in life, to end it whenever we want. We have a door we can open at any time, but we choose to stay, and the fact that we have this choice is, I think, God’s kindness.
জীবন আমাদের উপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয়নি। ছবিটি বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলে, প্রেরণা দেয় এবং কিভাবে আমাদের বেঁচে থাকার স্বাধীন একটা ইচ্ছা রয়েছে সে ব্যাপারে পথ দেখিয়ে দেয়। বিশ্ব সিনেমায় টেস্ট অফ চেরি অন্যতম শ্রেষ্ঠ অন্তর্মুখী ছবি হিসেবে টিকে থাকবে।
বই ও সিনেমা সম্পর্কিত চমৎকার সব রিভিউ আমাদের সাথে লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কে: https://roar.media/contribute/
সিনেমা সম্পর্কে আরও জানতে পড়তে পারেন এই বইগুলোঃ
১) নতুন সিনেমা সময়ের প্রয়োজন
২) সিনেমা থেকে চিত্রালী
৩) সিনেমা হলে তালা