ফুটবল মাঠে কে সেরা? মেসি না রোনালদো? রিয়াল মাদ্রিদ না বার্সেলোনা? একদল ফুটবল সমর্থকের মধ্যে এমন আলোচনা উস্কে দিলে তা রীতিমতো বিতর্কের ঝড় তৈরি করবে। এ ব্যাপারটি কেবল ফুটবলের ক্ষেত্রেই সত্য নয়। অন্যান্য যেকোনো খেলার ক্ষেত্রেও এমন দ্বৈরথ লেগে থাকে। সমর্থকেরা নিজ নিজ পছন্দের দল ও খেলোয়াড়ের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে নানা যুক্তিতর্কে লিপ্ত হয়। কে, কার থেকে এগিয়ে তা নিয়ে চলে বিস্তর আলোচনা। বিপক্ষ খেলোয়াড় বা দলের কোনো প্রকার ভুল এক্ষেত্রে ক্ষমার চোখে দেখা হয় না।
এ তো গেলো খেলার মাঠের জগৎ। এখন আরেকটা জগতের কথা বলি। এই জগতের নাম কমিকবুক জগৎ। আরো সহজ করে বললে সুপারহিরোদের জগৎ। এই সুপারহিরো জগতের সমর্থকেরাও দুই দলে বিভক্ত। একটি দল মারভেল কমিকসের সমর্থক এবং আরেকটি দল ডিসি কমিকসের সমর্থক। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি, প্রায় একই সময়ে এই দুই সুপারহিরো তৈরির কারখানা যাত্রা শুরু করে। সেই থেকে শুরু হয় এদের মাঝে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা। প্রত্যেক কমিকবুক কোম্পানিই তৈরি করতে থাকে একের পর এক জনপ্রিয় সুপারহিরো চরিত্র। বাড়তে থাকে এদের ফ্যানবেজ। এসব সুপারহিরো চরিত্র কেবল কমিকবুকের পাতায়ই সীমাবদ্ধ থাকেনি। ধীরে ধীরে এদের বিস্তার ঘটতে থাকে অন্যান্য বিনোদন মাধ্যমেও। প্রথমে অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র এবং এখন লাইভ অ্যাকশন চলচ্চিত্রে এরা নিজেদের জায়গা তৈরি করে নিয়েছে। এদের সাথে জড়িত স্টুডিওগুলো প্রতিবছর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আয় করতে থাকে চলচ্চিত্রগুলোর মাধ্যমে।
তাহলে কে সেরা? মারভেল না ডিসি? এই একটা প্রশ্নের মাধ্যমে আরেকটি তর্কযুদ্ধ শুরু করে দেওয়া যায়। দুই পক্ষেরই নিজস্ব ব্যাখা রয়েছে। এসব সমর্থকদের আধুনিক ভাষায় ফ্যানবয় বলা হয়। একজন মারভেল ফ্যানবয়ের প্রথম যুক্তিই হবে লাইভ অ্যাকশন মুভি। যে যা-ই বলুক, মারভেল সিনেমা জগতের দিক দিয়ে ডিসি থেকে অনেক বেশি এগিয়ে রয়েছে। তবে ডিসি ফ্যানবয়রাও থেমে থাকবে না। তারা টেনে আনবে অ্যানিমেটেড মুভি, অ্যানিমেটেড সিরিজ ও নানা নতুন কমিকবুক সংস্করণে ডিসি কমিকসের সাফল্যকে। এটি এমন এক তর্কযুদ্ধ, যা কখনো শেষ হবে না।
যা-ই হোক, আমরা এখানে কোন কমিকবুক কোম্পানি সেরা তা নিয়ে কোনো আলোচনা করবো না। আলোচনা করবো কিছু নির্দিষ্ট কমিকবুক চরিত্র নিয়ে।
বিভিন্ন সময়ে একটি কমিকবুক কোম্পানি নতুন নতুন চরিত্র বের করার পরিকল্পনা করে থাকে। মাঝে মাঝে এসব নতুন চরিত্র তাদের বিপক্ষ কোম্পানির আগেই বের হওয়া কোনো চরিত্রের সাথে হুবহু মিলে যায়। কখনো এ সাদৃশ্য ঘটে কাকতালীয়ভাবে, আবার কখনো ইচ্ছাকৃতভাবে অন্য কোম্পানির চরিত্রকে নকল করা হয়।
আজ আমরা এখানে আলোচনা করবো এমন কিছু চরিত্র নিয়ে, যেগুলো মারভেল কমিকস ডিসি কমিকস থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বানিয়েছে। এগুলোর মধ্যে কোন চরিত্রগুলো অনুপ্রাণিত ও কোনগুলো সরাসরি নকল তা বিবেচনা করার দায়িত্ব পাঠককে দেওয়া হলো।
১. ডেথস্ট্রোক থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি হয়েছে ডেডপুল
ডেডপুলকে এখন কে না চিনে? কিন্তু তিন বছর আগেও মারভেলের এই অ্যান্টি-হিরো সম্পর্কে খুব কম দর্শকই জানতো। ২০১৬ সালে যখন প্রথম ডেডপুল সিনেমাটি মুক্তি পায়, সাধারণ দর্শক এক নতুন সুপারহিরো সম্পর্কে জানতে পারে। এমন এক সুপারহিরো, যে নিজেকে হিরো বলতে নারাজ। এমন এক সুপারহিরো, যে জানে যে, সে এক কাল্পনিক কমিকবুক চরিত্র। বাচাল স্বভাব, কৌতুকময় ব্যক্তিত্ব তাকে রাতারাতি জনপ্রিয় করে তোলে। তার সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো কমিকসের পৃষ্ঠা ও সিনেমার পর্দা ভেদ করে দর্শকের সাথে কথা বলা। কিন্তু কেউ কি জানেন যে, এটি আসলে ডিসি কমিকসেরই একটি চরিত্র থেকে অনুপ্রাণিত।
ডিসি কমিকসের এই চরিত্রের নাম স্লেড উইলসন, ওরফে ডেথস্ট্রোক দ্য টার্মিনেটর। অন্যদিকে ডেডপুলেরও আসল নাম ওয়েড উইলসন। শুধু নামের মিল ছাড়াও তাদের মাঝে আরো অনেক মিল রয়েছে। যেমন- দুজনই অ্যান্টি-হিরো। দুজনই তাদের নতুন রূপ ধারণ করার আগে মার্সেনারি (বিদেশী সৈন্যদলে কর্মরত বেতনভোগী সৈনিক) ছিল। তাদের দুজনেরই প্রধান অস্ত্র দুটি তলোয়ার ও পিস্তল। দুজনেরই ক্ষত আপনা আপনি সেরে যাওয়ার ক্ষমতা আছে। তবে ডেডপুলের এই ক্ষমতা ডেথস্ট্রোক থেকে অনেক বেশি। অবশ্য এই দুই চরিত্রের ব্যক্তিত্ব সম্পূর্ণ বিপরীত।
ডেথস্ট্রোকের ডিসি কমিকসে প্রথম আবির্ভাব ঘটে ১৯৮০ সালে ‘দ্য নিউ টিন টাইট্যানস’ কমিকসের দ্বিতীয় ইস্যুর মাধ্যমে। অপরদিকে এর প্রায় ১১ বছর পর ‘দ্য নিউ মিউট্যান্টস’ কমিকসের ৯৮তম ইস্যুর মাধ্যমে ডেডপুলের কমিকবুক জগতে আগমন ঘটে। দুই চরিত্রের মাঝে ব্যাপক মিল থাকলেও ডেডপুলের স্রষ্টা রব লিফেল্ড এ ব্যাপারে ভিন্নমত পোষণ করেছেন। গত বছর লস অ্যাঞ্জেলস কমিক কনে তিনি এ ব্যাপারে খোলাসা করেছেন,
আমাকে বিষয়টি ব্যাখা করতে দিন। আমি আসলে স্পাইডারম্যানের অনেক বড় ফ্যান। আবার উলভ্যারিনও আমার অনেক ভালো লাগে। আমি স্পাইডারম্যানের মতো এমন একটি চরিত্র বানাতে চেয়েছিলাম, যা তলোয়ার ও পিস্তল উভয় ব্যবহারে সমান পারদর্শী।
২. গ্রিন অ্যারো থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি হয়েছে হকআই
১৯৪১ সাল থেকে প্রথম যাত্রা শুরু হয় অলিভার কুইন ওরফে গ্রিন অ্যারোর। বখে যাওয়া এই বিলিয়নিয়ার প্রায় পাঁচ বছর নিখোঁজ থাকার পর নিজ শহর স্টারলিং সিটিতে ফিরে আসে। এই পাঁচ বছর লিয়ান ইউ নামের এক জনশূন্য দ্বীপে সে তীর নিক্ষেপ ও অন্যান্য মারামারির কৌশল শিখতে থাকে। এরপর নিজ শহরে ফিরে এসে সে গ্রিন অ্যারোর ছদ্মবেশ নিয়ে অপরাধ দমন করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়।
অপরদিকে মারভেল কমিকসেরও নিজস্ব তীরন্দাজ রয়েছে। ক্লিন্ট বার্টন ওরফে হকআই নামের এই তীরন্দাজের যাত্রা শুরু হয় ১৯৬৪ সালে। এই চরিত্রের সুপারহিরো হওয়ার গল্প গ্রিন অ্যারো থেকে বেশ ভিন্ন। অত্যাচারী বাবার মদ্যপ অবস্থায় গাড়ী চালানোর জন্য অনেক অল্প বয়সে ক্লিন্ট সড়ক দুর্ঘটনায় মা-বাবা দুজনকেই হারায়। এরপর সে একটি এতিমখানায় আশ্রয় নেয়। কিন্তু কিছুদিন পরই সে ঐ এতিমখানা থেকে পালিয়ে যায়। এক ভ্রমণরত সার্কাস দলের সাথে যোগ দেয় সে। এখানেই সে তীর নিক্ষেপ ও অন্যান্য মারামারি কৌশলে প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করে।
গ্রিন অ্যারো ও হকআইয়ের মাঝে প্রধান যে মিল, তা হলো তাদের অস্ত্র। তারা দুজনেই অনেক দক্ষ তীরন্দাজ। গ্রিন অ্যারো ডিসি কমিকসের সুপারহিরোদের দলীয় সংগঠন জাস্টিস লিগের সদস্য। একইভবে হক আই মার্ভেলের অ্যাভেঞ্জার্সের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। দুজনের কারোরই কোনো অতিমানবিক ক্ষমতা নেই। প্রত্যেকেই হ্যান্ড টু হ্যান্ড কমব্যাটে অনেক পারদর্শী।
৩. ক্যাটওমেন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি হয়েছে ব্ল্যাক ক্যাট
ক্যাটওমেন ও ব্ল্যাক ক্যাটের মাঝে অনেক সাদৃশ্য রয়েছে। তাদের পোশাক থেকে শুরু করে ব্যক্তিত্ব, সবকিছুতেই অনেক মিল রয়েছে। দুজনেরই নিজ নিজ ফ্র্যাঞ্চাইজির সুপারহিরোদের সাথে একটু ভিন্ন প্রকৃতির ভালোবাসার সম্পর্ক রয়েছে। তাদের কারোরই কোনো অতিমানবীয় ক্ষমতা নেই। দুজনেই আবার অনেক দক্ষ চোর।
সেলিনা কাইল ওরফে ক্যাটওমেন ১৯৪০ সালে ব্যাটম্যান কমিকসের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে। ভিলেন থেকে অ্যান্টি-হিরো, অ্যান্টি-হিরো থেকে হিরো, এভাবে তার চরিত্রে নানা সময়ে নানা পরিবর্তন আসে। নিজ ফ্র্যাঞ্চাইজির মূল চরিত্র ব্যাটম্যানের সাথে তার সম্পর্কও অনেক বিভ্রান্তিকর। কখনো তারা একে অপরের শত্রু, আবার কখনো সঙ্গী। তাদের এই বিভ্রান্তিকর ভালোবাসার গল্প কমিকবুক জগতে অনেক জনপ্রিয় একটি জুটির সৃষ্টি করেছে।
একই কথা বলা যায় ফেলিসিয়া হার্ডি ওরফে ব্ল্যাক ক্যাটের ক্ষেত্রে। স্পাইডার-ম্যান কমিকস ফ্র্যাঞ্চাইজির অন্যতম জনপ্রিয় এই চরিত্র কখনো স্পাইডারম্যানের বন্ধু, আবার কখনো শত্রু হিসেবে আবির্ভূত হয়। ১৯৭৯ সালে প্রথম দ্য আমেজিং স্পাইডারম্যান কমিকসের মাধ্যমে ব্ল্যাক ক্যাটের যাত্রা শুরু হয়।
ছোটবেলার পারিবারিক পরিবেশ ছাড়া এই দুই চরিত্রের মাঝে তেমন পার্থক্য নেই বললেই চলে। ফেলিসিয়া হার্ডি নিউ ইয়র্কের এক ধনী পরিবারে বেড়ে ওঠে। অপরদিকে সেলিনা কাইল ছোটবেলা থেকেই এতিমখানায় ছিল। সে গোথাম সিটির রাস্তায় বড় হয়। ক্যাটওমেনের অনেক লাইভ অ্যাকশন সংস্করণ থাকলেও ব্ল্যাক ক্যাটকে এখনো কোনো লাইভ অ্যাকশন প্লাটফর্মে দেখা যায়নি।
৪. গ্রিন ল্যান্টার্ন কর্পস থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি হয়েছে নোভা কর্পস
নোভা কর্পস হলো একটি আন্তঃমহাজাগতিক শান্তিরক্ষী বাহিনী। এরা মূলত একটি মহাজাগতিক মিলিটারি দল, যা বিভিন্ন গ্যালাক্সিতে শান্তিরক্ষার কাজে নিয়োজিত থাকে। এদের নিজস্ব বিচার ব্যবস্থা রয়েছে। মিলিটারিদের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন পদ। নানারকম মহাজাগতিক যুদ্ধে এরা লড়াই করে শান্তি নিশ্চিত করে। মারভেল কমিকসের এই মিলিটারি সংঘ প্রথম পদার্পণ করে ১৯৭৯ সালে।
নোভা কর্পস নামটি থেকে নোভা শব্দটি সরিয়ে যদি সেখানে গ্রিন ল্যান্টার্ন বসিয়ে দেওয়া হয়, তবে এদের মূল উদ্দেশ্যের মাঝে কোনো পার্থক্য সৃষ্টি হবে না। গ্রিন ল্যান্টার্ন কর্পস ডিসি কমিকসের আন্তঃমহাজাগতিক মিলিটারি বাহিনী। ১৯৫৯ সালে প্রথম এদের কমিকবুক জগতে যাত্রা শুরু হয়। এদের উদ্দেশ্য ও নোভা কর্পসের উদ্দেশ্য বলতে গেলে পুরোপুরি এক।
শক্তির উৎস ছাড়া এই দুই মিলিটারি বাহিনীর মাঝে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। জ্যান্ডার হলো নোভা কর্পসের মূল গ্রহ। এখানেই তাদের বেজ অফ অপারেশন। জ্যান্ডারিয়ান ওয়ার্ল্ডমাইন্ড নামের এক জীবন্ত কম্পিউটারের মাধ্যমে নোভা সৈন্যরা তাদের শক্তি পেয়ে থাকে। এই শক্তির পরিমাণ নির্ভর করে সৈন্যদের পদমর্যাদার উপর ভিত্তি করে। অপরদিকে গ্রিন ল্যান্টার্নদের শক্তির মূল উৎস হলো একটি সবুজ রঙয়ের আংটি। এই আংটি চালিত হয় একজন ল্যান্টার্নের নির্ভীক সত্ত্বা ও ইচ্ছাশক্তি দ্বারা।
দুই কমিকবুক জগতেই এই দুই কর্পসের ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এদের নামের মিল, কাজের মিল ইত্যাদি অনেক স্পষ্ট। তাই নোভা কর্পসকে গ্রিন ল্যান্টার্ন কর্পসের মারভেল সংস্করণ ভাবা বেশ যৌক্তিক বলা যেতে পারে।
৫. ডক্টর ফেইট থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি হয়েছে ডক্টর স্ট্রেঞ্জ
২০১৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ডক্টর স্ট্রেঞ্জ সিনেমার কথা মনে আছে? মারভেল সিনেমাটিক ইউনিভার্সের সরসোরার সুপ্রিমের চরিত্রে অভিনয় করে সকলের মন জয় করে নিয়েছিলেন অভিনেতা বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচ। ১৯৬৩ সালে মারভেল কমিকসের এই যাদুকর সুপারহিরো কমিকবুক জগতে পদার্পণ করে। কিন্তু কেউ কি জানেন যে, প্রায় দুই যুগ আগেই ডিসি কমিকস ঠিক একই রকম একটি চরিত্র তৈরি করে ফেলেছিল।
প্রত্নতত্ত্ববিদ স্ভেন নেলসন ও তার ছেলে কেন্ট নেলসন মিসরের এক পিরামিডে গবেষণায় নিয়োজিত ছিল। সেখানে কেন্ট ‘নাবু দ্য ওয়াইজ’ নামের এক মৃত ব্যক্তির কবর পরীক্ষা করার সময় তাকে পুনরুজ্জীবিত করে ফেলে। কবর থেকে মুক্ত করার সময় বিষাক্ত গ্যাসের কারণে তার বাবা স্ভেন নেলসন মারা যায়। পুনরুজ্জীবিত নাবু আসলে ভিনগ্রহের এক বুদ্ধিমান প্রাণী ছিল। বাবা হারানো কেন্ট নেলসনের জন্য তার অনেক মায়া হয় এবং পরবর্তীতে সে তাকে যাদুবিদ্যার প্রশিক্ষণ দেয়। কেন্ট নেলসন থেকে জন্ম হয় ডক্টর ফেইট।
ডক্টর স্ট্রেঞ্জ আর ডক্টর ফেইটের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। দুজনেই অনেক প্রাচীন এক যাদুকরের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ লাভ করে। ডক্টর ফেইট তার যাদুকরী শক্তি লাভ করে নানা প্রাচীন বস্তু থেকে। এদের মধ্যে রয়েছে অ্যামুলেট অফ আনুবিস নামের এক কবজ, ক্লোক অফ ডেস্টিনি নামের এক আলখাল্লা এবং হেল্ম অফ ফেইট নামের হেলমেট। অপরদিকে ডক্টর স্ট্রেঞ্জেরও প্রায় একই ধরনের কিছু সরঞ্জাম রয়েছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো আই অফ আগামোতো নামের কবজ এবং ক্লোক অফ লেভিটেশন নামের এক আলখাল্লা। কেন্ট নেলসন ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন লোক ডক্টর ফেইট হওয়ার দায়িত্ব গ্রহণ করে। কিন্তু ডক্টর স্ট্রেঞ্জ ওরফে ডক্টর স্টিফেন স্ট্রেঞ্জ কেবল একজনই। এ ব্যাপারটি বাদ দিলেও দুই জগতের এই দুই যাদুকরের মাঝের অদ্ভুত মিলগুলো একেবারে এড়িয়ে যাওয়া যায় না।
৬. ডেডশট থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি হয়েছে বুলজ আই
অনেক তো সুপারহিরো আর অ্যান্টি-হিরো নিয়ে কথা হলো। এবার কথা বলা যাক কিছু ভিলেনকে নিয়ে।
যারা ডিসি এক্সটেন্ডেড ইউনিভার্সের সিনেমা ‘সুইসাইড স্কোয়াড’ দেখেছেন, তাদের কাছে ডেডশট নামটি পরিচিত। সিনেমাটি খুব একটা প্রশংসা না পেলেও জনপ্রিয় অভিনেতা উইল স্মিথ এই চরিত্রে অভিনয় করে অনেক প্রশংসিত হয়েছেন। তবে এই সিনেমাটি মুক্তি পাওয়ার আগেও কমিকস জগতে ডেডশট অনেক পরিচিত একটি নাম ছিল।
ফ্লয়েড লওটন ওরফে ডেডশট একজন মার্কসম্যান বা নিখুঁত লক্ষ্যবিদ। সব ধরনের বন্দুক ব্যবহারে সে পারদর্শী। এই ভিলেনের ছোঁড়া গুলি লক্ষ্য ভেদ করবেই। নিজের অতীত জীবন ও চরিত্রের গভীরতার জন্য কমিকবুক পড়ুয়াদের মাঝে এই চরিত্রটি অনেক জনপ্রিয়। ১৯৫০ সালে ব্যাটম্যান কমিকসের মাধ্যমে এই ভিলেনের যাত্রা শুরু হয়।
মারভেল কমিকসে ঠিক এমনই একজন তুখোড় মার্কসম্যান রয়েছে। তার নাম বেঞ্জামিন পয়েনডেক্সটার ওরফে বুলজআই। অনেক ছোটবেলায়ই সে প্রথম কাউকে খুন করে ফেলে। তখন সে একজন বেজবল খেলোয়াড় ছিল। পরপর দুবার খারাপ বল করার পর সে অনেক রাগান্বিত হয়ে যায়। রাগ সামলাতে না পেরে ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যাটসম্যানের মাথার হেলমেট বিহীন অংশ বরাবর বল ছুঁড়ে মারে। ব্যাটসম্যান জায়গাতেই মৃত্যুবরণ করে।
প্রথম খুন করার পর পয়েনডেক্সটার মনে এক বিকৃত প্রশান্তি অনুভব করে। এরপর থেকে সে শুধু মনের আনন্দের জন্য খুন করে বেড়ায়। তার নির্ভুল নিশানা ও খুন করার আনন্দকে কাজে লাগানোর জন্য তাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি নিয়োগ দেয়। একজন ভাড়াটে সৈনিক হিসেবে সে এই এজেন্সির নানা গোপন হত্যার মিশনে কাজ করতে থাকে। সম্প্রতি নেটফ্লিক্সের জনপ্রিয় টিভি সিরিজ ডেয়ারডেভিলের তৃতীয় সিজনে এই ভিলেনকে দেখা যায়। যারা সিরিজটি দেখেছেন তারা এই চরিত্র সম্পর্কে আরো বেশি অবগত থাকার কথা। মারভেল কমিকসের এই কিলিং মেশিন প্রথম কমিকবুক জগতে যাত্রা শুরু করে ১৯৭৬ সালে, ডেডশট আসার প্রায় ১৬ বছর পর।
৭. ডার্কসাইড থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি হয়েছে থ্যানোস
এবার কথা বলা হবে এমন দুজন ভিলেনকে নিয়ে, যারা দুটি কমিকবুক দুনিয়াতেই ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। গত বছর মুক্তিপ্রাপ্ত অ্যাভেঞ্জার্স ইনফিনিটি ওয়্যার সিনেমাটির মাধ্যমে থ্যানোস নামে এক নতুন ভিলেন সম্পর্কে বিশ্ববাসী জানতে পারে। পৃথিবীর অর্ধেক জনসংখ্যাকে ধুলোয় মিশিয়ে দেওয়া এই সুপার ভিলেনকে অ্যাভেঞ্জার্সরা পরাজিত করতে পারেনি। সিনেমাটির মাধ্যমে মারভেল জগতের এই ভিলেন ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আর এখন সবাই অপেক্ষা করছে এই বছরের বহুল প্রতিক্ষিত অ্যাভেঞ্জার্স এন্ডগেম সিনেমাটির জন্য।
মার্ভেলের এই সুপার ভিলেনকে প্রথমবারের মতো সিনেমায় দেখা যায় ২০১২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত দ্য অ্যাভেঞ্জার্স মুভিতে। সিনেমার একেবারে শেষে কয়েক সেকেন্ডের উপস্থিতির মাধ্যমে সে জানিয়ে দেয় যে খুব দ্রুত সিনেমার পর্দায় আসতে যাচ্ছে সে। অপরিচিত এই ভিলেন সম্পর্কে জানার জন্য অনেকেই তখন দ্বারস্থ হয় মার্ভেলের বিখ্যাত কমিকবুক সিরিজ ‘দ্য ইনফিনিটি গন্টলেট’-এর। সেই সময় এই কমিকবুক সিরিজটির রেকর্ড সংখ্যক কপি বিক্রি হয়।
মার্ভেলের এই বহুল আলোচিত সুপার ভিলেনের সাথে মিল রয়েছে ডিসি কমিকসের আরেক বিখ্যাত সুপার ভিলেনের। এই ভিলেনের নাম ডার্কসাইড। অ্যাভেঞ্জার্সদের যেমন প্রধান শত্রু ছিল থ্যানোস। তেমনি ডার্কসাইড ছিল জাস্টিস লিগের অন্যতম প্রধান শত্রু। দুই ভিলেনের শারীরিক কাঠামোতেও অনেক মিল রয়েছে। দুজনেই বহুবার পৃথিবী ধ্বংস করার লক্ষ্যে অভিযানে নামে। যারা ডিসি কমিকস ও এর অ্যানিমেটেড সিনেমাগুলো সম্পর্কে জানেন, তাদের ডার্কসাইড সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা থাকার কথা। থ্যানোস আর ডার্কসাইড পরস্পরের মুখোমুখি হলে কে জিতবে এ নিয়ে এক কঠিন বিতর্ক শুরু করে দেওয়া যায়।
শেষ কথা
অনেকে এখন মনে করতে পারেন, শুধু মারভেলই কি ডিসির কাছ থেকে এভাবে চরিত্র ধার করেছে? কথাটি আসলে সত্য না। প্রকৃতপক্ষে দুই জগতেই শত শত চরিত্র রয়েছে। এদের মাঝে শক্তি ও বৈশিষ্ট্যের মিল খুঁজে পাওয়া খুবই স্বাভাবিক। আর মারভেল যেমন ডিসি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেক নতুন চরিত্র তৈরি করেছে, তেমনি ডিসিও এদিক দিয়ে পিছিয়ে নেই।
ডিসি এক্সটেন্ডেড ইউনিভার্সের সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত অ্যাকোয়াম্যান গত বছরের অন্যতম ব্যবসাসফল সিনেমা। এই অ্যাকোয়াম্যান চরিত্রটি কিন্তু মার্ভেলেরই এক চরিত্র নামোর থেকে অনুপ্রাণিত। এমন আরো অনেক চরিত্র তৈরিতে ডিসি মার্ভেলের শরণাপন্ন হয়েছে। ব্ল্যাক প্যান্থার থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি হয়েছে রেড লায়ন, দ্য ওয়াস্প থেকে তৈরি হয়েছে বাম্বলবি, ম্যান থিং থেকে তৈরি হয়েছে সোয়াম্প থিং ইত্যাদি। এমন উদাহরণের তালিকা অনেক বড়। মারভেল থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ডিসি কী কী চরিত্র বানিয়েছে তা নিয়ে নাহয় আরেকটি লেখায় আলোচনা করা হবে।