বেশ কয়েকবছর আগেও ডিসি সুপারহিরো বলতে সাধারণ দর্শক কেবল সুপারম্যান, ব্যাটম্যান ও ওয়ান্ডার ওমেনকে চিনতো। বিভিন্ন টিভি সিরিজের বদৌলতে আমরা আরো কিছু নতুন সুপারহিরো সম্পর্কে জানতে পারি। কিন্তু ডিসি সুপারহিরোদের চলচ্চিত্রের কথা বিবেচনা করলে একটা লম্বা সময় ধরে কোনো নতুন সুপারহিরোর আনাগোনা ছিল না। কমিকবুক ও অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্রের অনেক বিখ্যাত সব চরিত্র লাইভ অ্যাকশনের পর্দায় অনুপস্থিত ছিল। অবশেষে জ্যাক স্নাইডারের হাত ধরে ডিসি এক্সটেন্ডেড ইউনিভার্সের সূচনা হয় এবং ব্যাটম্যান, সুপারম্যান ছাড়াও অন্যান্য সুপারহিরোদের সিনেমার পর্দায় আগমন ঘটতে থাকে।
২০১৮ সালের শেষ দিকে মুক্তি পায় অ্যাকোয়াম্যান চলচ্চিত্রটি। যারা কমিকবুক ও অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্রের খুব একটা খোঁজখবর রাখেন না, তাদের কাছে এই অ্যাকোয়াম্যান একেবারে নতুন এক সুপারহিরো। জাস্টিস লিগের মাধ্যমে সিনেমা জগতে অ্যাকোয়াম্যানের যাত্রা শুরু হলেও নিজের একক চলচ্চিত্রের মাধ্যমেই চরিত্রটি সব থেকে বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করে। নোলানের ডার্ক নাইট ট্রিলজিকে পেছনে ফেলে অর্জন করে নেয় সর্বাধিক আয়কৃত ডিসি চলচ্চিত্রের খেতাব।
অ্যাকোয়াম্যানের পর ডিসি এক্সটেন্ডেড ইউনিভার্সের পরবর্তী যে চলচ্চিত্রটি মুক্তি পেতে যাচ্ছে তা-ও সম্পূর্ণ অপরিচিত এক সুপারহিরোকে নিয়ে। খুব বেশি মানুষ এই সুপারহিরো সম্পর্কে জানেন না। এই সুপারহিরোর নাম শাজাম। সুপারহিরো হিসেবে অনেকের কাছে নামটা একটু অন্যরকম লাগতে পারে। তবে এই নামের পেছনেও অনেক কাহিনী রয়েছে। অ্যাকোয়াম্যানের বক্স অফিস কাঁপানো সাফল্যের পর দর্শক শাজামকে নিয়েও অনেক আগ্রহী। তবে সামান্য ট্রেইলার ও টিজার থেকে এই চরিত্র সম্পর্কে খুব একটা তথ্য জানা সম্ভব না। তাই আজকের এই লেখাটিতে আলোচনা করা হবে ডিসি ইউনিভার্সের এই সুপারহিরোর কমিকবুক অরিজিন সম্পর্কে।
সুপারহিরো জগতের প্রথম ক্যাপ্টেন মারভেল
ক্যাপ্টেন মারভেল নামটি শুনলেই আমাদের সবার চোখের সামনে ভেসে ওঠে সোনালী চুলের এক নারীর চিত্র। জ্বি, এখানে মারভেল কমিকসের ক্যাপ্টেন মারভেলের কথাই বলা হচ্ছে। সম্প্রতি মারভেল সিনেমাটিক ইউনিভার্সের প্রথম নারীকেন্দ্রিক সুপারহিরো হিসেবে ক্যাপ্টেন মারভেল মুক্তি পেয়েছে। কিন্তু একটা ব্যাপার হয়তো অনেকেই জানেন না। শাজাম নামের ডিসি কমিকসের এই চরিত্রটির আসল নাম কিন্তু আগে ক্যাপ্টেন মারভেল ছিল।
১৯৩৯ সালের কথা। শাজাম নামে ডিসি কমিকসের কোনো সুপারহিরো চরিত্র তখনো তৈরি হয়নি। চিত্রশিল্পী সি সি বেক ও লেখক বিল পার্কার একটি নতুন সুপারহিরো তৈরি করেন। তার নাম দেওয়া হয় ক্যাপ্টেন মারভেল। ফসেট কমিকস নামক একটি কমিকবুক সংগঠনের হাতে এই চরিত্রের কমিকসের দুনিয়ায় যাত্রা শুরু হয়।
বিলি ব্যাটসন নামের ১২ বছরের এক কিশোর একটি জাদুকরী মন্ত্র উচ্চারণ করলেই এক মধ্যবয়স্ক সুঠামদেহী সুপারহিরোতে পরিণত হয়। লাভ করে বেশ কিছু অতিমানবীয় ক্ষমতা। উচ্চারিত এই জাদুকরী মন্ত্রটি ছিল ‘শাজাম’। এই শব্দটি উচ্চারণ করার সাথে সাথেই বজ্রের আঘাতে সে প্রাপ্তবয়স্ক সুপারহিরো ক্যাপ্টেন মারভেলে রূপান্তরিত হয়।
১৯৪০ সালের শুরু থেকেই ফসেট কমিকসের ক্যাপ্টেন মারভেল অনেক বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করতে থাকে। এর জনপ্রিয়তা এতটাই তুঙ্গে ওঠে যে, এটি সমসাময়িক কালে ডিসি কমিকসের অন্যতম ব্যবসাসফল সুপারম্যান চরিত্রকে টেক্কা দিতে শুরু করে। ফসেট কমিকসের তৎকালীন পরিচালক রালফ ডেই ব্যাপারটি লক্ষ্য করেন। তিনি সংশ্লিষ্ট লেখক ও চিত্রকরদের সাথে আলোচনা করে ক্যাপ্টেন মারভেলের জগতকে আরো বিস্তৃত করার সিদ্ধান্ত নেন। আর এভাবে আবির্ভাব ঘটে ‘মারভেল ফ্যামিলি’ ও ‘ক্যাপ্টেন মারভেল অ্যাডভেঞ্চারস’ নামক কমিকবুক সিরিজের। এই কমিকবুক সিরিজগুলো সেই সময়ে প্রচুর বিক্রি হতে শুরু করে। ক্যাপ্টেন মারভেলকে পুঁজি করে ফসেট কমিকস তখন সাফল্যের বাতাসে উড়তে থাকে। তবে এই সাফল্য বেশিদিন স্থায়ী হয়নি।
ফসেট কমিকসের ক্যাপ্টেন মারভেল কমিকবুক জগতে পা রাখার সাথে সাথেই এটি ডিসি কমিকসের শত্রুতে পরিণত হয়। ১৯৪১ সালে ডিসি কমিকস ফসেট কমিকসের বিরুদ্ধে কপিরাইট লঙ্ঘনের মামলা করে বসে। ডিসি কমিকস দাবি করে, বাচ্চা থেকে প্রাপ্তবয়স্ক সুপারহিরো হওয়া ব্যতীত ক্যাপ্টেন মারভেলের সকল অতিমানবীয় ক্ষমতা সুপারম্যানের সাথে হুবহু মিলে যায়।
১৯৪৫ সালের পর থেকে ক্যাপ্টেন মারভেলের কমিকসের বিক্রি তুলনামূলকভাবে কমতে শুরু করে। ফসেট কমিকসের এই জনপ্রিয় চরিত্রটি প্রতিযোগিতার বাজারে হোঁচট খেতে শুরু করে। তাছাড়াও কোম্পানিটি অভ্যন্তরীণ নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়। সব দিক বিবেচনা করে কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হন। তিনি মামলার বাইরে ডিসি কমিকসের সাথে একটি চুক্তি করেন। এই চুক্তি অনুযায়ী ফসেট কমিকস তাদের বেশ কিছু চরিত্রের সত্ত্ব বিক্রি করে দেয়। ১৯৫৩ সালে বের হওয়া ক্যাপ্টেন মারভেলের ১৫০ তম ইস্যুর মাধ্যমে এই চরিত্রের ইতি টানা হয়।
ক্যাপ্টেন মারভেল থেকে শাজাম হওয়ার গল্প
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর একটা লম্বা সময় ধরে কমিকবুকের বিক্রির বাজার একটু আশঙ্কাজনক ছিল। তবে ১৯৬০ সালের পর থেকে আবার এই মাধ্যম জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ফসেট কমিকস আর ক্যাপ্টেন মারভেল চরিত্রটিকে পুনরায় কমিকবুকের পৃষ্ঠায় ছাপাতে পারবে না। কারণ ডিসি কমিকস পরবর্তীতে এই চরিত্রের লাইসেন্স কিনে নিয়েছিল। তবে ডিসি নিজেদের ক্যাপ্টেন মারভেল কমিকস প্রকাশ করার সময় আরেক সমস্যার সম্মুখীন হয়। চির প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানি মারভেল কমিকস ইতোমধ্যেই ক্যাপ্টেন মারভেল নাম দিয়ে এক নারী সুপারহিরোর ট্রেডমার্ক নিয়ে রেখেছিল। এই ট্রেডমার্কের কারণে ‘ক্যাপ্টেন মারভেল’ নাম দিয়ে ডিসি কোনো কমিকবুক প্রকাশ করতে পারবে না।
ট্রেডমার্কের এই ঝামেলার জন্য ডিসি কমিকস সিদ্ধান্ত নেয় অন্য নামে এই সুপারহিরোর একক কমিকবুক সিরিজ বের করার। ক্যাপ্টেন মারভেল নামের বদলে যে শব্দটি উচ্চারণ করলে সে সাধারণ বালক থেকে সুপারহিরো হতো, সেই নামটিই বেছে নেওয়া হয়। এভাবেই ‘শাজাম’ শিরোনামে এই সুপারহিরোর কমিকবুক নতুন করে বের হতে শুরু করে। এই শিরোনামের সাথে আরো একটি ছোট শিরোনাম যোগ করা হয়- ‘দ্য ওয়ার্ল্ডস মাইটিয়েস্ট মরটাল’। শিরোনামের কারণে ও আগে থেকেই ক্যাপ্টেন মারভেল নামটি থাকায় ডিসির ক্যাপ্টেন মারভেলকে সবাই শাজাম বলেই ডাকতে শুরু করে।
শাজামের যত অতিমানবীয় ক্ষমতা
১২ বছর বয়সী বিলি ব্যাটসন ‘শাজাম’ শব্দটি উচ্চারণ করার সাথে সাথেই একজন প্রাপ্তবয়স্ক অতিমানবীয় সুপারহিরোতে রূপান্তরিত হয়। এখন কথা হলো যে, এই ‘শাজাম’ মানে কী?
ছয়টি ইংরেজি শব্দের আদ্যাক্ষর থেকে এসেছে এই শব্দটি। প্রতিটি অক্ষর একজন নির্দিষ্ট ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব বা দেবতাকে ইঙ্গিত করে। এদের বিভিন্ন শক্তি ও গুণাবলী থেকেই শাজামের অতিমানবীয় ক্ষমতাগুলো আসে।
শাজাম শব্দের প্রথম ইংরেজি অক্ষর হলো ‘এস’। এই ‘এস’ বলতে কিং সলোমনকে বোঝায়। সলোমনের বুদ্ধিমত্তা শাজামের অতিমানবীয় ক্ষমতাগুলোর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কিং সলোমন সৃষ্টিকর্তার কাছে জ্ঞান প্রার্থনা করলে তিনি তাকে অতিপ্রাকৃত বিদ্যার সন্ধান দেন। সলোমনের এই বুদ্ধিমত্তা শাজাম ধারণ করতে পারে। শাজামের প্রাচীন নানা বিষয়ে প্রচুর জ্ঞান রয়েছে। সে আধুনিক ও প্রাচীন মিলিয়ে সকল ভাষায় কথা বলতে পারে। তার রয়েছে মানুষকে বশ করার ক্ষমতা। প্রবল ইচ্ছাশক্তির অধিকারী কিংবা অন্য কোনো জাদুকর না হলে কেউ শাজামের হিপনোসিস থেকে বের হতে পারবে না।
শাজাম শব্দের দ্বিতীয় অক্ষর হলো ‘এইচ’। এই এইচ বলতে রোমান দেবতা হারকিউলিসকে বোঝায়। হারকিউলিসের সমান শক্তিমত্তা শাজামের অতিমানবীয় ক্ষমতাগুলোর একটি। এ কারণে তাকে ‘দ্য মাইটিয়েস্ট মরটাল’ বলা হয়। এই শক্তিমত্তা দিয়ে সে সুপারম্যানকেও হারাতে সক্ষম।
তৃতীয় অক্ষর হলো ‘এ’। ‘এ’ বলতে গ্রিক পুরাণের সহনশীলতার দেবতা অ্যাটলাসকে বোঝায়। শাজামের রয়েছে দেবতা অ্যাটলাসের সমান সহ্য শক্তি। শাজাম হয়ে থাকা অবস্থায় তার কষ্ট সহিষ্ণুতা প্রচুর বেড়ে যায়। সে চাইলে একটানা ঘুম, খাদ্য ও নিঃশ্বাস ছাড়া চলতে পারে।
এবার আসবে ইংরেজি অক্ষর ‘জেড’। ‘জেড’ বলতে গ্রিক দেবতা জিউসকে বোঝায়। জিউসের শক্তি তাকে বেশ কিছু অতিমানবীয় ক্ষমতা দান করে। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন জাদুকরী আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের ক্ষমতা, নিজের কিছু জাদুকরী শক্তি, বিদ্যুৎ ও বজ্রপাত সৃষ্টি, আঘাত থেকে দ্রুত আরোগ্য লাভের ক্ষমতা ইত্যাদি। এছাড়াও বিলি ব্যাটসনের শারীরিক যে পরিবর্তন আসে তা জিউসের শক্তির কারণেই হয়।
‘শাজাম’ শব্দটিতে ‘জেড’ এর পর আসে আরেকটি ‘এ’। এই ‘এ’ – এর অর্থ হলো অ্যাকিলিসের সাহসিকতা। অ্যাকিলিস হলেন গ্রিক পুরাণের এক অপরাজেয় বীর। তার ব্যক্তিত্বের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য অ্যাকিলিস থেকে আসে। সাহসিকতা, আত্মবিশ্বাস, উৎফুল্ল ভাব ইত্যাদি এগুলোর মাঝে অন্যতম। তাছাড়া সে যেকোনো শারীরিক আঘাত প্রতিহত করতে পারে। আক্রমণের সময় যেকোনো প্রকার আঘাত সে সহ্য করে নিতে পারে। তার এই ক্ষমতা প্রায় সুপারম্যানের সমতুল্য।
এবার আসা যাক শাজাম নামের সর্বশেষ অক্ষর ‘এম’ এর কাছে। ‘এম’ বলতে মার্কারির দ্রুততাকে বোঝায়। রোমান দেবতা মার্কারির মাধ্যমে শাজাম তার অসামান্য গতি লাভ করে। এছাড়া উড়তে পারার ক্ষমতাও সে মার্কারির মাধ্যমে লাভ করে।
এই সকল অতিমানবীয় ক্ষমতা ছাড়াও তার আরো কিছু বিশেষ দক্ষতা রয়েছে। তবে তার সকল শক্তির উৎস হলো এই ‘শাজাম’, যার প্রত্যেকটি অক্ষরের রয়েছে আলাদা অর্থ, রয়েছে আলাদা ক্ষমতা।
শাজামের যত অরিজিন
১৯৩৯ সালে প্রথম হুইজ কমিকসের দ্বিতীয় ইস্যুর মাধ্যমে কমিকবুক জগতে শাজাম পদার্পণ করে। সময়ের দিকটা বিবেচনা করলে এটি অনেক পুরনো একটি চরিত্র। তাই এর অরিজিনও অনেক রকমের আছে। তবে মৌলিক ঘটনাগুলো সব অরিজিনেই এক।
১২ বছরের এতিম ছেলে বিলি ব্যাটসন। ছোটবেলায় সে নানা প্রতিপালক বাবা-মা বা ফস্টার প্যারেন্টসদের কাছে বড় হতে থাকে। কিন্তু বেশিরভাগ পরিবারেই সে বেশিদিন টিকতে পারে না। অনেকগুলো পরিবারে ঘোরাঘুরি করার পর অবশেষে একটি পরিবারে এসে থিতু হয়। একদিন ঘটনাক্রমে সে একটি সাবওয়ে ট্রেনের সামনে হাজির হয়। এই ট্রেন তাকে এক পরাবাস্তব জাদুকরী জগতে নিয়ে যায়। এই জগতের নাম রক অফ এটারনিটি। এখানে তার দেখা হয় উইজার্ড শাজামের সাথে। বিলি ব্যাটসনের অন্তরের কোমলতা ও অত্যাচারীদের প্রতিহত করার প্রবল ইচ্ছা জাদুকরকে মুগ্ধ করে। সে তাকে নিজের শক্তি দান করে এবং বলে যে, ‘শাজাম’ শব্দটি উচ্চারণ করলে সে এক অসাধারণ কিছুতে পরিণত হবে।
সামান্য এক বালক যখন ছয় ফুটের বেশি উচ্চতার এক বিশালদেহী মানুষের শরীরে আটকা পড়ে যায়, তখন ব্যাপারটি আসলেই কৌতূহল সৃষ্টি করে। তাছাড়া প্রত্যেক কিশোরেরই বিভিন্ন সুপাহিরো ও সুপার পাওয়ার নিয়ে আলাদা জল্পনা কল্পনা থাকে। এ কারণেই কমিকবুক পড়ুয়া কমবয়সী পাঠকদের কাছে শাজাম অনেক প্রিয় এক চরিত্র।
ফসেট কমিকস থেকে ডিসি কমিকসে আসার পর শাজামের আসল গল্পের তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। নাম ও অন্যান্য কিছু চরিত্রের ঘষামাজা ছাড়া সবই প্রায় এক। তবে ডিসি কমিকসের ‘দ্য নিউ ফিফটি টু’ সংস্করণ শাজামকে নতুন করে প্রদর্শন করে। আগে শাজামের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র নিয়ে তৈরি হয়েছিল ‘মারভেল ফ্যামিলি’। এটি পরিবর্তন করে তৈরি করা হয় ‘শাজাম ফ্যামিলি’। অনেক কমিকবুক বোদ্ধার মতে, শাজামের ‘দ্য নিউ ফিফটি টু’ সংস্করণের কাহিনীকে কেন্দ্র করেই ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে আসন্ন শাজাম চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয়েছে।
শাজামের প্রধান ভিলেনগুলোও কমিকবুক জগতে বেশ জনপ্রিয়। এদের মধ্যে ডক্টর সিভানা ও ব্ল্যাক অ্যাডাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
ডক্টর সিভানা একজন পাগল বিজ্ঞানী। যে বিভিন্ন সময়ে তার খারাপ কাজগুলো সম্পাদন করার সময় শাজামের মুখোমুখি হয়। শাজামের ক্যাপ্টেন মারভেল হিসেবে পদার্পণ করার শুরু থেকেই অর্থাৎ সেই ফসেট কমিকসের সময় থেকেই ডক্টর সিভানা শাজামের প্রধান ভিলেন ছিল। নিজের গবেষণা ও ব্যক্তিগত পরীক্ষানিরীক্ষায় বাধা প্রদানের জন্য ডক্টর সিভানা সব সময় শাজামের অনিষ্ট সাধনের চেষ্টা করতো। এছাড়া সে শাজামের জাদুকরী ক্ষমতাগুলো নিয়েও গবেষণায় লিপ্ত ছিল। ডিসি এক্সটেন্ডেড ইউনিভার্সের ‘শাজাম’ চলচ্চিত্রেও ডক্টর সিভানা প্রধান ভিলেন হিসেবে নিজের আগমন ঘটাতে যাচ্ছে।
ব্লাক অ্যাডাম হলো শাজামের আরেক গুরুত্বপূর্ণ প্রধান ভিলেন। তবে তাকে ভিলেন না বলে অ্যান্টিহিরো বললে তা বেশি যুক্তিযুক্ত। শাজামের সাথে ব্ল্যাক অ্যাডামের অনেক মিল রয়েছে। প্রথমেই বলা যাক শক্তির উৎস সম্পর্কে। টেথ অ্যাডাম নামের মধ্যবয়স্ক মিশরীয় এক লোক শাজামের মতোই তার শক্তি লাভ করে। তবে শাজামের শক্তি আসে বিভিন্ন গ্রিক ও রোমান দেবতাদের থেকে। আর ব্ল্যাক অ্যাডামের শক্তি আসে কয়েকজন মিশরীয় দেবতাদের থেকে।
ব্ল্যাক অ্যাডাম তার আবাসভূমি ও প্রাচীন শহর কানদাখের রক্ষাকর্তা। আখতোন নামের এক ভিলেনের আক্রমণে এই শহর ধসে পড়ে এবং ব্ল্যাক অ্যাডাম তার পরিবারকে হারায়। এই ঘটনার প্রেক্ষিতেই সে এক অ্যান্টিহিরোতে পরিণত হয়। ডিসি এক্সটেন্ডেড ইউনিভার্সের প্রথম চলচ্চিত্র ‘ম্যান অফ স্টিল’ মুক্তি পাওয়ার পরপরই ব্ল্যাক অ্যাডামকে নিয়ে চলচ্চিত্র বানানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। পর্দায় এই চরিত্রকে রূপদান করার কথা ছিল হলিউড অ্যাকশন অভিনেতা ডোয়াইন জনসন ওরফে দ্য রকের। তবে সময়ের সাথে এই চলচ্চিত্র নিয়ে আর নতুন কোনো খবর আসেনি। এমনকি আসন্ন শাজাম চলচ্চিত্রেও ব্ল্যাক অ্যাডামের উপস্থিতির সম্ভাবনা নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া ডিসি এক্সটেন্ডেড ইউনিভার্সের আগামী দুই বছরে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্রের তালিকাতেও ব্ল্যাক অ্যাডামের আগমনের কোনো আভাস নেই।
আগামী ৫ এপ্রিল সারা পৃথিবীতে মুক্তি পেতে যাচ্ছে শাজাম চলচ্চিত্রটি। অনেকের কাছে অ্যাকোয়াম্যানের মতো এটিও অনেক অচেনা একজন সুপারহিরো। তাছাড়া সুপারহিরো মুভির হিসেবে এটি অন্যতম কম বাজেটের একটি সুপারহিরো মুভি হতে যাচ্ছে। তবুও পর্দার শাজামের জন্য আগ্রহের কমতি নেই। অভিনেতা জ্যাকারি লেভি ও অন্যান্য চরিত্রগুলো ট্রেইলার ও টিজারের মাধ্যমে অনেকের মন জয় করে নিয়েছে। এখন শুধু এপ্রিল মাস আসার পালা। দেখা যাক, এই নতুন সুপারহিরোকে দর্শক অ্যাকোয়াম্যানের মতো বরণ করে নেয়, নাকি বক্স অফিসে জাস্টিস লিগের মতো বিপর্যয়ের শিকার হয়।