লন্ডনের ওয়েস্টমিনিস্টার শহরের ‘বাকিংহাম প্যালেস’ ব্রিটেনের রাজতন্ত্র ও রাজকীয় আভিজাত্যের প্রতীক। আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাজ্যের রাজপরিবার তথা রাজার বাসভবন বাকিংহাম প্যালেস, বিশ্বের সবচেয়ে পরিচিত, অন্যতম বিলাসবহুল এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি ভবন। ব্রিটেনের সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ রাষ্ট্রীয় এবং রাজকীয় অনুষ্ঠানগুলো এখানেই অনুষ্ঠিত হয়। স্টেট রুমগুলো রাজকীয় ও জাতীয় কাজকর্মের অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পাশে অবস্থিত ‘বাকিংহাম প্যালেস গার্ডেন’ লন্ডনের সবচেয়ে বড় ব্যক্তিগত বাগান।
যুক্তরাজ্যের যেকোনো জাতীয় আনন্দোৎসব এবং বিপরীতক্রমে সংকটময় পরিস্থিতিতে মানুষের সমাবেশস্থলে পরিণত হয় এই বাকিংহাম প্যালেস। পৃথিবীতে পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা স্থাপনাগুলোর মধ্যে এই রাজপ্রাসাদ অন্যতম। মধ্যাহ্নভোজ ও নৈশভোজ ছাড়াও বিভিন্ন অভ্যর্থনাকেন্দ্রিক ভোজন অনুষ্ঠান এবং রয়্যাল গার্ডেন পার্টিতে শুধু অতিথি হিসেবেই প্রতি বছর প্রায় ৫০ হাজারের অধিক মানুষ বাকিংহাম প্যালেস ঘুরে যায়। দর্শনার্থীর সংখ্যা তো অজানাই! ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের একসময়কার দোর্দণ্ড প্রতাপ ও রাজবংশের আভিজাত্যের প্রতীক এই প্রাসাদের ইতিহাস আজ জানবো আমরা।
প্রাসাদের শুরু
১৫৩১ সালে ইংল্যান্ডের রাজা অষ্টম হেনরি ওয়েস্ট মিনিস্টার অ্যাবেতে সেন্ট জেমস হাসপাতাল ও ইটন কলেজ খরিদ করেন। ৪ বছর পর ‘ম্যানর অব ইবুরি’ এর মালিক হন। আর এতে করেই ঐতিহাসিক বাকিংহাম প্যালেসের স্থানটি আবার ইংল্যান্ডের রাজপরিবারের মালিকানাধীন হয় যা প্রায় ৫০০ বছর আগে অর্থাভাবে ‘উইলিয়াম দ্য কনকারার’ বিক্রয় করে দিয়েছিলেন!
বাকিংহাম প্যালেসের আদি ভবনটি বাকিংহাম হাউজ নামে পরিচিত। ১৭০৩ সালে এই ভবনটি ডিউকের দরবার হল হিসেবে নির্মিত হয়। ১৭৬২ সালে এই ভবনটি আয়ত্তে আনেন রাজা তৃতীয় জর্জ। তিনি এর পরিবর্ধনের কাজ শুরু করেন এবং নাম পরিবর্তন করে ‘দ্য কুইন’স হাউজ’ রাখেন। এই সময়ে কখনো জন নাশ কখনো বা এডওয়ার্ড ব্লোরের মতো স্থপতিদের হাতে এই ভবনের রূপ বদলাতে থাকে। বাকিংহাম প্যালেসের সর্বশেষ কোনো বৃহত্তর সংস্কার কাজ হয় বিশ শতকের শুরুর দিকে। এরপর থেকে ছোটোখাটো অনেক কিছুই পরিবর্তন করা হয়েছে, তবে প্রাসাদের রূপ আক্ষরিক অর্থে তেমন একটা বদলায়নি।
রাজপরিবারের বাসভন
১৮৩৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বাকিংহাম হাউজ’ ইংল্যান্ডের রাজপরিবারের বাসভবন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। রানী ভিক্টোরিয়ার সিংহাসনে আরোহণের মাধ্যমেই বাকিংহাম প্যালেসের পরিচয় চিরতরে বদলে যায়। তবে নতুন প্রাসাদে উঠেই রানী দেখেন যে রাজপরিবারের রাজকীয় মানদণ্ডের সাথে প্রাসাদটি মানানসই না। দ্রুতই নানাবিধ সমস্যা দেখা দিতে থাকে। ধোঁয়া ওঠার চিমনি, ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা, ভেতরের সাজসজ্জা, পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা সবকিছুতেই সমস্যা দেখা দেয়। রানী একটি নতুন প্রাসাদের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে থাকেন। ১৮৪০ সালে তিনি প্রিন্স আলবার্টের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এবং একই সাথে বাকিংহাম প্যালেসে সাময়িকভাবে সংস্কার কাজ করেন।
সংস্কার করার পর ত্রুটিমুক্ত বাকিংহাম প্যালেসে ধরা পড়লো নতুন সমস্যা। রাণী ভিক্টোরিয়া ও তার স্বামী আলবার্ট অনুভব করলেন প্রাসাদটি রাজদরবার হিসেবে ব্যবহারের জন্য যথেষ্ট বড় নয়। তখনই এডওয়ার্ড ব্লোর এর নতুন একটি অংশ নির্মাণের কাজ শুরু করেন। এই অংশটিই মূলত বাকিংহাম প্যালেসের সবচেয়ে পরিচিত অংশ। কারণ এই অংশটি ‘দ্য মল’ এর দিকে মুখ করে তৈরি করা হয়েছে এবং এখানে রয়েছে বিখ্যাত সেই ‘ব্যালকনি’ বা ঝুল বারান্দা যার কথা শুনলেই আমাদের মনে পড়ে যায় সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে রানীর হাত নাড়ানোর দৃশ্য।
বাকিংহাম প্যালেস পরিচিতি
প্রাসাদের পেছনে অবস্থিত বাকিংহাম প্যালেস গার্ডেন। লন্ডনের বৃহত্তম ব্যক্তিগত এই বাগানে রয়েছে নয়নাভিরাম একটি লেকও। এই বাগানে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উপলক্ষে আড়ম্বরপূর্ণ পার্টির আয়োজন করা হয়। তবে সবচেয়ে আকর্ষণীয় যে পার্টি এখানে হয় সেটি হলো বাৎসরিক গার্ডেন পার্টি। ২০০২ সাল থেকে এই পার্টির প্রচলন করেন রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। প্রতি বছর গ্রীষ্মকালে এই পার্টির আয়োজন করা হয়।
বাকিংহাম প্যালেসের আরেকটি বিশেষ আকর্ষণ হলো এর ‘রয়্যাল মিউজ’ বা রাজকীয় পরিবহন রাখার স্থান, যেখানে রয়েছে বিশাল অশ্বশালা বা আস্তাবল। এই স্থানটি বছরের অধিকাংশ সময়ই দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকে। সারি করে রাখা রাজকীয় পরিবহন, স্টেট ও সেমি স্টেট কার এবং ৩০টি ঘোড়া এই রয়্যাল মিউজের শোভা বর্ধন করে। গোল্ডেন স্টেট কোচ, আইরিশ স্টেট কোচ, গোল্ডেন জুবিলি কোচের মতো ঐতিহাসিক আর জাঁকালো পরিবহণগুলো একনজর দেখার জন্যও চলে যেতে পারেন বাকিংহাম প্যালেসে।
বাকিংহাম প্যালেসের আরেকটি আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে ‘দ্য মল’। এটি হচ্ছে একটি সংযোগ রাস্তা যা ট্রাফালগার স্কয়ার এবং বাকিংহাম প্যালেসকে সংযুক্ত করেছে। যেকোনো রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে এবং সরকারি ছুটির দিনগুলোতে দর্শনার্থীদের সুবিধা করে দিতে যান চলাচল বন্ধ থাকে এই রাস্তায়। ‘অ্যাডমিরালটি আর্চের’ ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া এই রাস্তাটি তৈরি করা হয়েছিল রানী ভিক্টোরিয়ার ‘গ্র্যান্ড মেমোরিয়াল’-এর একটি অংশ হিসেবে। দ্য মলের কাজ শেষ হয় ১৯১১ সালে। স্থপতি স্যার অ্যাসটন ওয়েব এর নকশা প্রণয়ন করেন।
৮,২৮,৮১৮ স্কয়ার ফুটের বাকিংহাম প্যালেস পৃথিবীর ১৩ তম বৃহত্তম রাজপ্রাসাদ। ‘পিয়ানো নবিল’ বা কোনো ভবনের প্রধান মেঝের একেবারে কেন্দ্রে রয়েছে একটি ‘মিউজিক রুম’। পিয়ানো নবিলেই প্রাসাদের সবচেয়ে প্রধান কামরাগুলো অর্থাৎ স্টেট রুম অবস্থিত। মিউজিক রুমের পাশেই অবস্থিত ‘ব্লু’ এবং ‘হোয়াইট’ ড্রয়িং রুম। এই ড্রয়িং রুমের সাথে স্টেট রুমের সংযোগ করে একটি করিডোর যা আদতে একটি বিশাল চিত্রশালা। এই করিডোরের শোভাবর্ধন করছে র্যামব্র্যান্ডট, ভ্যান ডিক, রুবেনস আর ভার্মিয়ার-এর মতো ভুবনখ্যাত সব চিত্রশিল্পীদের চিত্রকর্ম। এই করিডোরের সাথে আরো যা সংযুক্ত তা হচ্ছে ‘থ্রোন রুম’ বা সিংহাসনের কক্ষ এবং গ্রিন ড্রয়িং রুম। এই গ্রিন ড্রয়িং রুমটি হচ্ছে থ্রোন রুমের অভ্যর্থনাকক্ষ। তাছাড়াও আছে একটি বিশাল গার্ড রুম যার ভেতরে আছে রানী ভিক্টোরিয়া এবং প্রিন্স আলবার্টের দুটি সাদা পাথরের ভাস্কর্য।
এ তো গেল স্টেট রুম তথা পিয়ানো নবিলের কথা। এর নিচের মেঝেতে অবস্থিত ‘সেমি স্টেট রুম’ যা কিনা আভিজাত্যে স্টেট রুমগুলোর চেয়ে খানিকটা পিছিয়ে! এখানে রয়েছে একটি মার্বেল হল। এই হলে বিভিন্ন ছোটোখাটো পার্টি বিশেষ করে মধ্যাহ্নভোজ পার্টি অনুষ্ঠিত হয়। তাছাড়াও এখানকার কক্ষগুলো বিশেষ অতিথিদের জন্য বিশেষভাবে সাজানো হয়। রয়েছে একটি ‘বাউ রুম’ যার পেছনে রয়েছে বাকিংহাম প্যালেস গার্ডেন। রানীর গার্ডেন পার্টিতে আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ এই কক্ষের মধ্য দিয়েই পার্টিতে অংশ নেন। তবে এখানকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কক্ষটি হচ্ছে রানীর ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য একটি কক্ষ যা একেবারে দক্ষিণে বিশেষভাবে সংরক্ষিত।
উপরে উল্লেখিত কামরাগুলো ছাড়াও রয়েছে বলরুম, ইয়োলো ড্রয়িংরুম, চাইনিজ লাঞ্চন রুম, রয়্যাল ক্লোজেট এবং ‘গ্র্যান্ড স্টেয়ারকেস’ বা রাজকীয় সিঁড়ি। এসবই বাকিংহাম প্যালেস এর ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতীক হয়ে আছে। তাছাড়া বাকিংহাম প্যালেস এর বিখ্যাত ব্যালকনির কথা তো সকলেরই জানা আছে। এই প্রাসাদের প্রবেশপথ দুটি। একটি ‘গ্র্যান্ড এন্ট্রান্স’ তথা সদর দরজা। অন্যটি হচ্ছে বিভিন্ন দেশ থেকে আগত দূত ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের প্রবেশের জন্য বিশেষ দরজা। প্রাসাদে মোট ১৯টি স্টেট রুম, ৫২টি প্রধান শয়নকক্ষ, ১৮৮টি কর্মচারীদের শয়নকক্ষ, ৯২টি অফিস এবং ৭৮টি শৌচাগার রয়েছে। বাকিংহাম প্যালেসের বর্তমান নেট মূল্য বাংলাদেশি টাকায় আনুমানিক ২৩ হাজার কোটি টাকা!
সংস্কার ও বিশ্বযুদ্ধ
১৯০১ সালে রাজা ষষ্ঠ এডওয়ার্ড ক্ষমতায় আসলে বাকিংহাম প্যালেসের আসল সংস্কার শুরু হয়। বলরুম, গ্র্যান্ড স্টেয়ারকেস, গ্যালারি, গ্র্যান্ড এন্ট্রেন্স- এসব তার আমলেই পরিকল্পিত এবং স্থাপিত। তবে অনেক রক্ষণশীল ব্যক্তিবর্গ এ সময় এডওয়ার্ডের সংস্কার কাজের সমালোচনা করেন। তাদের মতে জন নাশের প্রাথমিক কাজের প্রতি অসম্মান দেখিয়ে রাজা সংস্কার কাজ চালিয়েছিলেন। সে যা-ই হোক, রাজা পঞ্চম জর্জের শাসনামলে বাকিংহাম প্যালেসের সর্বশেষ বৃহৎ কোনো সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়। জর্জের স্ত্রী তথা রানী মেরি ছিলেন ভীষণ শৌখিন। তিনি রাজপ্রাসাদকে ঢেলে সাজানোর কাজ সামনে থেকে পরিচালনা করেন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বাকিংহাম প্যালেসের খুব একটা ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তথাপি এ সময় প্রাসাদের সকল দামি ও গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র উইন্ডসর দুর্গে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বাকিংহাম প্যালেসের যথেষ্ট ক্ষতিসাধন হয়। বাকিংহাম প্যালেস ধ্বংস করতে পারলে ব্রিটিশরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বে, এমন ধারণা থেকে নাৎসি বাহিনী এক-দুবার নয়, বরং সাতবার এই প্রাসাদে বোমা ছুড়েছিল। এর মধ্যে একবার তো রাজা ষষ্ঠ জর্জ এবং রাণী এলিজাবেথ প্রাসাদে অবস্থানকালীন বাকিংহাম প্যালেসে নাৎসিদের বোমা আঘাত করে। তবে সৌভাগ্যক্রমে রাজা ও রানী অক্ষত ছিলেন। তবে এসব আক্রমণের খবর মিডিয়ার আড়ালে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিল রাজপরিবার। যুদ্ধের পর বাকিংহাম প্যালেসেই লক্ষ লক্ষ মানুষের সাথে বিজয় উদযাপন করেন রাজা জর্জ ও রানী এলিজাবেথ।
রাজকীয় অনুষ্ঠানসমূহ
বাকিংহাম প্যালেসে অনুষ্ঠিত রাজসভা ও অন্যান্য উৎসব ও রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান পালনের রীতিনীতি বর্তমানে ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। একসময় এসব অনুষ্ঠানে কেবল সমাজের উঁচু শ্রেণীর লোকজনের প্রবেশাধিকার ছিল। এখন সে প্রথা বিলুপ্ত। অন্যদিকে পোষাক ছিল নির্দিষ্ট। বর্তমানে কোনো আনুষ্ঠানিক ড্রেস-কোডও নেই। এই ড্রেস-কোড প্রথম শিথিল হয় রানী প্রথম এলিজাবেথের সময় থেকে। পরে বর্তমান রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ একেবারেই পোষাকের উপর বাধ্যবাধকতা তুলে নেন। রাজার অভিষেক অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয় প্রাসাদের সবচেয়ে বড় কামরা বলরুমে। তবে এই অনুষ্ঠান প্রাথমিকভাবে অনুষ্ঠিত হতো থ্রোন রুমে। বর্তমানে থ্রোন রুমে বিভিন্ন জাতীয় পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান হয় যেখানে রাণী সিংহাসনের সামনের বেদীতে দাঁড়িয়ে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
অভিষেক ছাড়াও বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় ভোজন পার্টিগুলোও বলরুমের অনুষ্ঠিত হয়। যেকোনো দেশের রাষ্ট্রপ্রধান (রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী) ইংল্যান্ড সফরে গেলে তার সফরের প্রথম দিনের সন্ধ্যার ভোজ ব্রিটিশদের রীতি অনুযায়ী বাকিংহাম প্যালেসের বলরুমেই হয়। প্রতি বছর নভেম্বরে বাকিংহাম প্যালেসের সবচেয়ে বড় অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়। এসব অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে ১৫০ জনের মতো বিশিষ্ট অতিথি আমন্ত্রিত হন। পোশাক নির্দিষ্ট না হলেও পুরুষদের জন্য সাদা টাই আর মহিলাদের জন্য টায়রা (মাথায় পরিধানের জন্য তাজ) আবশ্যক। ছোটখাটো অভ্যর্থনাগুলো সেমি স্টেট অ্যাপার্টমেন্টের ‘রুম ১৮৪৪’ এ অনুষ্ঠিত হয়। এই ‘রুম-১৮৪৪’ বিশেষভাবে সজ্জিত করা হয়েছিল রাশিয়ান সম্রাট প্রথম নিকোলাসের ইংল্যান্ডে রাষ্ট্রীয় সফরের সময়। সেই থেকে তার স্মরণে এই কক্ষটি সংরক্ষিত রয়েছে।
বাকিংহাম প্যালেসের সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান হচ্ছে ‘কুঈন’স গার্ডেন পার্টি’। জাঁকজমকপূর্ণ এই পার্টিতে প্রায় আট হাজার অতিথিকে আমন্ত্রণ করা হয়। পার্টিতে চা ও স্যান্ডুইচ পরিবেশন করার জন্য অনেকগুলো ছোট ছোট তাবু খাটানো হয়। অতিথিরা সবাই জড়ো হলে রানী রাজকীয়ভাবে প্রবেশ করেন। বাউ রুম থেকে বেরিয়ে তিনি সোজা চলে যান নিজের ব্যক্তিগত চায়ের তাবুর দিকে। এ সময় তিনি পূর্ব নির্ধারিত অতিথিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
বর্তমানে বাকিংহাম প্যালেস
বাকিংহাম প্যালেস বর্তমানে ইংল্যান্ডের শাসনতান্ত্রিক রাজতন্ত্রের কেন্দ্রবিন্দু। প্রতিদিন এখানে প্রায় সাড়ে চারশ’ সরকারি কর্মকর্তা কাজ করে যাচ্ছেন। তাই একে রাজপ্রাসাদ কম, সরকারি অফিস বেশি মনে হতেই পারে! বছরে ৫০ হাজার আমন্ত্রিত অতিথি ছাড়াও আছে লাখো দর্শনার্থীর ভিড়। তবে দর্শনার্থীরা কেবল সাপ্তাহিক ছুটির দিন ও অন্যান্য রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে দ্য মল পর্যন্ত যেতে পারেন। রাজা ফিলিপ ও রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ সপ্তাহান্তে এবং রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে বাকিংহাম প্যালেসে থাকেন। অন্যান্য দিন তারা উইন্ডসর দুর্গে বাস করেন। একটি বিষয় বলে রাখা ভালো, বাকিংহাম প্যালেস ইংল্যান্ডের রাজপরিবারের নিজস্ব সম্পত্তি নয়, বরং ইংল্যান্ডের জাতীয় সম্পত্তি। সবকিছু মিলিয়ে ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের প্রতীক বাকিংহাম প্যালেস পুরোটাই যেন একটি আর্ট গ্যালারি। এর প্রতিটি কোনে থাকা দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যশৈলী ও রাজকীয় আভিজাত্যের নিদর্শন একে করেছে পৃথিবীর অন্যতম সেরা দর্শনার্থী আকর্ষণ হিসেবে।