Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

গানস এন্ড রোজেস: রগচটা রকস্টারদের গল্প

“The most dangerous band in the world”- অর্থাৎ “পৃথিবীর সবচেয়ে বিপদজনক ব্যান্ড”। আশির দশকে জন্ম নেওয়া হার্ড রক ধাঁচের ব্যান্ড দল ‘গানস এন্ড রোজেস’ এর উপর যারপরনাই বিরক্ত হয়ে এই শ্লেষ আউড়েছিলেন অনেক সমালোচক। ‘সুইট চাইল্ড অব মাইন’ কিংবা ‘নভেম্বর রেইন’- গান দুটি শুনেছেন নিশ্চয়ই? এমনই কিছু ক্ল্যাসিক রক গানের জন্মদাতা এই ব্যান্ড ‘গানস এন্ড রোজেস’কে নিয়েই আমাদের আজকের আয়োজন।

আশির দশকে ‘গানস এন্ড রোজেস’; Source: Pinterest

১৯৮৫ সালে লস এঞ্জেলেসে গঠিত হয় ‘গানস এন্ড রোজেস’ এর প্রাথমিক লাইন-আপ। পাঁচ সদস্যের নাম অ্যাক্সেল রোজ (ভোকাল), স্ল্যাশ (লিড গিটার), ইজি স্টারডিন (রিদম গিটার), ডাফ ম্যাককাগেন (বেজ গিটার) এবং স্টিভেন এডলার (ড্রামস)। ইজি স্টারডিন আর এক্সেল রোজ পূর্বে ‘হলিউড রোজেস’ ব্যান্ডের সদস্য ছিলেন। পরবর্তীতে অ্যাক্সেল ‘এল এ গানস’ নামের একটি ব্যান্ডে যোগ দেন। এই দুই ব্যান্ডের নাম থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই ‘গানস এন্ড রোজেস’ নামটি জন্ম নেয়। সদস্যরা বেশ কয়েকটি বিকল্প নামের চিন্তা করেছিলেন। আজ হয়তো ‘গানস এন্ড রোজেস’ এর নাম হতে পারত ‘হেডস অফ এমাজন’ বা ‘এইডস’। কারণ, ব্যান্ডের সদস্যরা এমনটাই চেয়েছিলেন। অবশেষে তারা ‘গানস এন্ড রোজেস’ পরিচয়েই থিতু হন।

অভিষেক এ্যালবাম ‘অ্যাপেটাইট ফর ডেস্ট্রাকশন’ এর মাধ্যমেই আলোচনার কেন্দ্রে আসে গানস এন্ড রোজেস। রেকর্ড পরিমাণ বিক্রি হয় এই অ্যালবাম, সংখ্যাটা গিয়ে ঠেকেছে ৩০ মিলিয়ন এর ঘরে। ‘সুইট চাইল্ড অব মাইন’ গানটি এই অ্যালবামেই ছিল। অ্যাক্সেলের শক্তিশালী কণ্ঠ আর স্ল্যাশের গিটার সলোর জাদুতে গানটি আজও তরুণদের প্লেলিস্টে বেজে চলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সর্বাধিক বিক্রিত অভিষেক অ্যালবামের তালিকায় প্রথম স্থানে আছে আশির দশকে সঙ্গীত জগতে তোলপাড় ফেলে দেওয়া এই অ্যালবাম। প্রথম অ্যালবামের সাফল্যের পরের বছরেই (১৯৮৮) দ্বিতীয় অ্যালবাম নিয়ে হাজির হন তারা, ‘জি এন আর লাইস’ নামের সেই অ্যালবামে গান ছিল ৮ টি। এরপর একে একে ‘ইউজ ইউর ইলুশ্যন’ (১৯৯১) আর ‘দ্য স্প্যাগেটি ইনসিডেন্ট’(১৯৯৩) অ্যালবামগুলো প্রকাশ করে তারা।

‘অ্যাপেটাইট ফর ডেস্ট্রাকশন’ অ্যালবামের কভার; source: Pinterest

‘গানস এন্ড রোজেস’ এর জনপ্রিয়তার ময়নাতদন্ত করতে গেলে বোঝা যায়, মূলত অ্যাক্সেল রোজ আর স্ল্যাশের জন্যই ব্যান্ডটি আলোচনায় এসেছিল। অ্যাক্সেল রোজ শুরু থেকেই ব্যান্ডের সাথে ছিলেন, তার অসাধারন হাই পিচের কণ্ঠ সমসাময়িক অন্যান্য গায়ক থেকে তাকে আলাদা স্থান দিয়েছে। কেতাবি নাম উইলিয়াম ব্রুস জুনিয়র হলেও কৈশোরে নাম পাল্টে অ্যাক্সেল রোজ হয়ে যান ইন্ডিয়ানাতে বেড়ে ওঠা এই গায়ক। বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়ে গেলে তার উশৃঙ্খল জীবনের সূত্রপাত হয়। নানা ছোটখাট অপরাধ করে প্রায়ই তাকে শ্রীঘরে রাত কাটাতে হয়েছে। পুলিশের কাছে এক পরিচিত মুখ হয়ে গিয়েছিল অ্যাক্সেল নামের এই কিশোর। জেলখানার হাত থেকে পরিত্রাণ পাবার জন্য তিনি লস এঞ্জেলেসে চলে আসেন। সেখানে মামুলি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছিলেন তিনি। দু-তিনটি ব্যান্ডে গান গাওয়ার পর ‘গানস এন্ড রোজেস’ এ থিতু হন অ্যাক্সেল। প্রথম অ্যালবামের আকস্মিক সাফল্যের পর ব্যান্ডের অন্যান্য সদস্যদের মতোই অ্যাক্সেলের পা যেন মাটিতে পড়ছিলই না। অসম্ভব প্রতিভাবান এই শিল্পীরা ছিলেন যারপরনাই অপেশাদার। কনসার্ট শুরু হবার নির্দিষ্ট সময়ের অনেক পরে আসতেন অ্যাক্সেল রোজ, সময়ানুবর্তীতার প্রতি কোনো তোয়াক্কাই করতেন না তিনি।

অ্যাক্সেল রোজ; source: Pinterest

অ্যাক্সেল রোজের অভূতপূর্ব কন্ঠ আর মঞ্চের ক্যারিশমা আজও ভুলতে পারে না তার ভক্তরা, কিন্তু দুর্নাম কামাবার ক্ষেত্রেও পিছিয়ে ছিলেন না তিনি। একবার এক কনসার্টে ক্যামেরা নিষিদ্ধ করা হয়। এক দর্শকের হাতে ক্যামেরা দেখে অ্যাক্সেল মঞ্চ থেকে ঝাঁপ দিয়ে ক্যামেরা কেড়ে নেন। আজ অবধি একজন বদমেজাজী আর মারমুখো রকস্টারের তকমা বয়ে বেড়াচ্ছেন ৫৫ বছরের অ্যাক্সেল রোজ।

গিটারের ম্যাজিশিয়ান ‘স্ল্যাশ’ 

লম্বা হ্যাট আর কোঁকড়া চুলের চিরায়ত বেশে ‘স্ল্যাশ’; source: Pinterest

আফ্রিকান-আমেরিকান মা আর ব্রিটিশ বাবার ঘরে জন্ম নেওয়া কোঁকড়া চুলের ছেলেটির নাম সল হাডসন। লেখাপড়ায় একদমই মনোযোগ নেই, সারাদিন শুধু বিএমএক্স সাইকেল নিয়ে স্টান্ট করেই দিন-রাত পার করে দেয় সে। এক পারিবারিক বন্ধু ঠাট্টার ছলে তার নাম দিয়ে দেয় ‘স্ল্যাশ’। সেই থেকে আজ অবধি তামাম দুনিয়ার রক মিউজিক প্রেমীরা তাকে ‘স্ল্যাশ’ নামেই চিনে থাকে। বাবা-মায়ের অবাধ্য সন্তান স্ল্যাশ ১৪ বছর বয়সে গিটার হাতে তুলে নেন। দৈনিক ১২ ঘণ্টা গিটার নিয়ে অনুশীলন করা তার কাছে মামুলি ব্যাপার ছিল। প্রথম ব্যান্ড ‘টাইডাস স্লোন’ এর সাথে ট্যুর করার জন্য স্কুল ছেড়ে দেন স্ল্যাশ। পরের বছরগুলোতে বেশ কয়েকটি ব্যান্ডে গিটার বাজান তিনি। ১৯৮৫ সালে ‘গানস এন্ড রোজেস’ এ স্থায়ী হবার পর ব্যান্ডের সদস্যরা কালজয়ী কিছু গানের লিরিকস লিখে ফেলেন। প্যারাডাইস সিটি, সুইট চাইল্ড অব মাইন, ওয়েলকাম টু দ্য জাঙ্গল- এসব গানই ব্যান্ডটির পরিচিতি বাড়ানোর জন্য মুখ্য অবদান রাখে। রোলিং স্টোনস ম্যাগাজিনের সেরা ১০০ গিটারিস্টের তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন স্ল্যাশ। স্ল্যাশের বয়স যখন ৩৫, হৃদযন্ত্রের সমস্যায় ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলেন তিনি। অবস্থা এতই বেগতিক ছিল যে ডাক্তার মুখ ফসকে বলেই ফেললেন, “তোমার হাতে আর মাত্র সপ্তাহখানেক সময় আছে”। কিন্তু স্ল্যাশও নাছোড়বান্দা। গিটার ছেড়ে কবরে যাওয়ার কোনো ইচ্ছেই নেই তার। বুকে ‘ডিফেব্রিলিয়েটর’ নামের যন্ত্র স্থাপন করে সে যাত্রায় বেঁচে গেলেন তিনি। একবার ভাবুন! ডাক্তারের কথা সত্যি হলে আমরা আর কখনো মঞ্চে স্ল্যাশ এর ‘নভেম্বর রেইন’, ‘এস্ট্রেনজড’ বা ‘ইউ কুড বি মাইন’ গানগুলোর দুর্দান্ত সব গিটার সলো আর শুনতে পারতাম না!

বিচ্ছেদ… আর ফিরে আসা

আগেই বলেছি, পৃথিবীর সবচেয়ে বিপদজনক ব্যান্ড ‘গানস এন্ড রোজেস’। মাদক, বিলাসিতা আর নারী- এই তিনটি শব্দ যেন ব্যান্ডটির প্রতিচ্ছবি। সদস্যদের মধ্যে ঝগড়া আর মারামারি হতো হরহামেশা। ব্যান্ডে ফাটল ধরার আভাস পাওয়া গেছিল খানিকটা। অ্যাক্সেল রোজের উদ্ধত আচরণে হতাশ হয়ে পড়েছিল অন্য সবাই। শুরু হলো বখাটে রকস্টারদের পতন। এক এক করে সবাই ব্যান্ড ছেড়ে চলে যাচ্ছিল অ্যাক্সেলের আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে। ১৯৯৩ সালের পর অ্যাক্সেল ছাড়া মূল লাইনআপ এর আর কেউই রইলেন না। অ্যাক্সেল স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে নতুন সদস্য নির্বাচন করছিলেন, আবার মতের অমিল হলেই ব্যান্ড থেকে বের করে দিতেন নির্দ্বিধায়।

“গানস এন্ড রোজেস’ এর মূল লাইনআপ এর শেষ কনসার্ট (১৯৯৩); source: Pinterest

২৭ জুলাই, ২০১৫। সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ২৩ বছর পর ফেরার ইঙ্গিত দিল আসল ‘গানস এন্ড রোজেস’- অ্যাক্সেল রোজ, স্ল্যাশ আর ডাফ ম্যাককাগেন। দুই দশকেরও বেশি সময় একে অপরের মুখ দেখেননি স্ল্যাশ আর অ্যাক্সেল। সুযোগ পেলেই কাদা ছোঁড়াছুড়ি করেছেন। এমন সাপে-নেউলে সম্পর্ক যাদের, তারা আবার মঞ্চে একত্রিত হবেন, এটা কেউ ভাবতেই পারেনি।

২০১৬ সালে রিইউনিয়ন কনসার্টে ‘গানস এন্ড রোজেস’; source: Pinterest

অনেক সম্ভাবনাময় একটি ব্যান্ড হওয়া স্বত্ত্বেও অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে ভেঙে গিয়েছিল ‘গানস এন্ড রোজেস’। দুই দশক পর তাদের ফিরে আসায় সবার মনে প্রশ্ন, ওরা কি আবার স্টুডিওতে ফিরে যাবে নতুন অ্যালবামের কাজে হাত দেবার জন্য? নাকি শুধুমাত্র টাকার জন্য বিভিন্ন দেশে শো করে যার যার রাস্তায় চলে যাবে? এর উত্তর একমাত্র সময়ই বলতে পারবে।

ফিচার ইমেজ- Pinterest

Related Articles