ইসলামী সঙ্গীতের ভক্তরা জিন্স, জ্যাকেট আর মাথায় ড্যাপার ক্যাপ পরা সাধারণ বেশভূষার আড়ালে অসাধারণ এক কন্ঠশিল্পীকে খুব ভালোভাবেই চেনেন। ইসলামী সঙ্গীতের জগতে ডুব দিতে ভালবাসেন যারা তাদের পক্ষে ইসলামী সঙ্গীতে বিপ্লব সাধনকারী এই শিল্পীকে না চেনা প্রায় অসম্ভব। বলছি মাহের জেইনের কথা।
পুরো নাম মাহের মুস্তফা মাহের জেইন। ইসলামী সঙ্গীতপ্রেমীদের কাছে মাহের জেইন একটি গভীর আবেগ আর ভালবাসার নাম। মাহের জেইনের বলিষ্ঠ এবং সুমধুর কন্ঠে শোনা যায় ইসলামের পবিত্র বাণী। তার সুললিত কন্ঠের সূরমূর্ছনা মনে সৃষ্টি করে আনন্দের অবারিত স্রোতধারা আর গভীর প্রশান্তি। আজকের আয়োজন বিখ্যাত ইসলামী সঙ্গীত শিল্পী মাহের জেইনকে নিয়েই।
জন্ম ও বেড়ে ওঠা: মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইউরোপে
মাহের জেইনের জন্ম ১৯৮১ সালের ১৬ জুলাই, মধ্যপ্রাচ্যের দেশ লেবাননে। উত্তর লেবাননের বৃহত্তম শহর ত্রিপলীতে কাটে তার শৈশবের প্রথম অংশ।
তার বয়স যখন ৮, তখন তার পরিবার পাড়ি জমায় সুইডেনে। মাহের জেইন সুইডেনের স্কুল থেকে পড়াশোনা শেষ করেন। তারপর এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন।
সঙ্গীতের মায়াময় জগতে জেইন
মাহের জেইনের সঙ্গীতে হাতেখড়ি ১০ বছর বয়সে। প্রথম কী-বোর্ডটি হাতে পান সেই বয়সেই। তখন তারা ছিলেন সুইডেনে। স্কুলে বন্ধুবান্ধবের সাথে রাতভর আড্ডায় গান গাইতেন, লিখতেন, সুর করতেন অসংখ্য গানের। স্কুলজীবনের পুরোটা সময়েই গান নিয়ে তার পরীক্ষা নিরীক্ষা চলেছে অবিরাম। একসময় স্কুলগামী বালক থেকে হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। চারপাশের সবকিছুই সময়ের সাথে বদলে যাচ্ছিল।
মাহের জেইন আবিষ্কার করলেন যে, বদলায়নি শুধু একটি জিনিস। গানের প্রতি তার গভীর অনুরাগ। তাই তিনি স্নাতক সম্পন্ন করার পর ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু না করে সুইডেনের সঙ্গীত জগতে প্রবেশ করেন সঙ্গীত প্রযোজক হিসেবে। সেই সময় তার পরিচয় হয় মরোক্কান বংশোদ্ভুত সঙ্গীত প্রযোজক নাদির খায়াতের সাথে, যিনি রেডওয়ান (RedOne) নামেও পরিচিত।
২০০৫ সালে খায়াতের সাথে জুটি বাঁধেন তিনি। ২০০৬ সালে খায়াত নিউইয়র্ক চলে যান। মাহের জেইনও দ্রুত তাকে অনুসরণ করে নিউইয়র্কে পাড়ি জমান সঙ্গীত জগতে পাকাপোক্ত আসন গড়ার প্রত্যাশায়। খায়াত ও মাহের জেইন নিউইয়র্কের মেধাবী কিছু তরুণ শিল্পীর সাথে কাজ করেন। এরই মধ্যে খায়াত লেডি গাগার দ্রুত বিখ্যাত হয়ে ওঠার পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং হয়ে ওঠেন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম নামী সঙ্গীত প্রযোজক। তিনি তখন কাজ করতেন লিওনেল রিচি, মাইকেল জ্যাকসনদের মতো খ্যাতনামা তারকাদের সাথে। মাহের জেইনের এই সময়টাতে খায়াতের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা তার প্রথম এ্যালবাম ‘Thank you Allah’ নিয়ে কাজ করার ব্যাপারে বেশ সহায়তা করেছিল।
আধ্যাত্মিক পুনর্জাগরণ
নিউইয়র্কে নাদির খায়াত এবং নামীদামী সব শিল্পীর সান্নিধ্যে কাজ করার ব্যাপারটি ছিল মাহের জেইনের কাছে স্বপ্নের মতো। তিনি তার স্বপ্নকে প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছিলেন। সফলতা ছিল প্রায় তার হাতের মুঠোয়। আন্তর্জাতিক সেলিব্রেটি হওয়ার সুযোগ তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছিল। এই সময় তিনি আবিষ্কার করলেন তিনি কিছু একটা ভুল করছেন।
দ্য গার্ডিয়ান উইকলিতে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে তিনি বলেন, “আমার মনে হচ্ছিল সঙ্গীত শূন্যতায় পরিপূর্ণ। পশ্চিমে গাওয়া সব গান শুধু ভালবাসা আর প্রেমে ব্যর্থতাজনিত আঘাত নিয়ে। কিন্তু জীবনে তো আরো অনেক কিছু রয়েছে।” এই উপলব্ধি থেকে তিনি সুইডেনে ফিরে আসেন। সুইডেনে তার নতুন কয়েকজন মুসলিম ভাইয়ের সাথে পরিচয় হয়। তিনি তাদের সান্নিধ্যে এবং মসজিদে হৃদয়ে প্রশান্তি খুঁজে পেতেন।
এরপর থেকেই তিনি পুরোপুরি ইসলামী অনুশাসন মেনে জীবনযাপন করতে সচেষ্ট হন। কিন্তু তিনি গানের সঙ্গে, গানকে ভালবেসে বড় হয়েছেন। গান তার রক্তে মিশে গিয়েছিল। তাই গান না ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন। বরং তিনি তার ধর্মীয় বিশ্বাসকে সামনে রেখে ভালো কিছু করার আশায় সেক্যুলার মিউজিক এবং সঙ্গীত প্রযোজনা ছেড়ে দেন। তার প্রথম অ্যালবাম ‘Thank you Allah’ এর টাইটেল সং Thank you Allah-তে তার উপলব্ধির পরিবর্তন প্রতিফলিত হয়েছে দারুণভাবে।
নতুনের পথে যাত্রা
২০০৯ সালের জানুয়ারী মাসে ‘Awakening Records’ এর ব্যানারে মাহের জেইন তার প্রথম অ্যালবাম ‘Thank you Allah’ এর জন্য কাজ শুরু করেন। ১৩টি ট্র্যাক ও দুটি বোনাস ট্র্যাক সম্বলিত তার এই অ্যালবামটি প্রকাশ হয় ১ নভেম্বর, ২০০৯ সালে। রেডিও বা টেলিভিশনে ইসলামী সঙ্গীতের প্রচারণার খুব একটা সুযোগ ছিল না। তবে মাহের জেইন বিকল্প পন্থা অনুসরণ করে সফলভাবে তার অ্যালবামের গানগুলোর প্রচারণা চালিয়ে যান।
তিনি ফেসবুক, ইউটিউব, আইটিউনের মাধ্যমে তার গান বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার সবরকম চেষ্টাই করেন। ফলাফল ছিল অত্যন্ত চমকপ্রদ। ২০১০ সালে আরব ও অনারব মুসলিম দেশগুলোতে, এমনকি পশ্চিমা দেশগুলোতেও মাহের জেইনের চমৎকার ইংরেজিতে গাওয়া গানগুলো ব্যাপক সাড়া ফেলে দেয়। মাহের জেইন প্রথম মুসলিম শিল্পী যার ফেসবুক ভক্তদের সংখ্যা মিলিয়ন ছাড়িয়ে যায়। ইউটিউবে তার মিউজিক ভিডিওগুলোর ৫০ মিলিয়নেরও বেশি হিট পায়।
অবিস্মরণীয় সাফল্য
মাহের জেইনের অভিষেক অ্যালবাম ‘Thank you Allah’ প্রকাশিত হওয়ার পর এটি বিশ্বব্যাপী তুমুল জনপ্রিয়তা এবং ব্যবসা সফলতা লাভ করে। ২০১০ থেকে ২০১১ সালে মধ্যপ্রাচ্য থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তার অ্যালবাম বিক্রি বাড়তেই থাকে। মালয়েশিয়ায় এটি সেই দশকের সবচেয়ে বেশি বিক্রিত অ্যালবাম হিসেবে পরিচিতি পায়। ২০১০ সালের জানুয়ারী মাসে মিশরের সবচেয়ে বড় রেডিও স্টেশন ‘Nogoom FM’ এ মাহের জেইনের ‘Thank you Allah’ অ্যালবামটির দ্বিতীয় ট্র্যাক ‘Ya Nabi Salam Alaika’ হুসাইন আল-জিসমি, মুহাম্মাদ মুনির এবং সামি ইউসুফদের মতো প্রখ্যাত শিল্পীদের পেছনে ফেলে ২০০৯ সালের সেরা ইসলামী সঙ্গীত হিসেবে নির্বাচিত হয়।
‘Ya Nabi Salam Alaika’ মিউজিক ভিডিওটির ভিউ ১৫৬ মিলিয়ন! ২০১০ সালের মার্চ মাসে কায়রোতে তার কনসার্টে মিশর, কুয়েত, জর্ডান, এমনকি যুক্তরাজ্য থেকে ভক্তরা তার গান শুনতে ছুটে আসেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন মিশরের প্রতিষ্ঠিত অনেক শিল্পীও।
২০১০ সালে মালয়েশিয়ার ওয়ার্নার মিউজিক ‘Thank you Allah’ কে ৮ম প্লাটিনাম পুরষ্কারে ভূষিত করে। ২০১০ সালে মালয়েশিয়ায় সবচেয়ে বেশি গুগল করা সেলিব্রেটি ছিলেন মাহের জেইন। ইন্দোনেশিয়ার সনি মিউজিক ২০১১ সালে এই অ্যালবামটির দ্বিতীয় প্লাটিনাম পুরষ্কার প্রদান করে। ইন্দোনেশিয়ায় সবচেয়ে বেশি শোনা গানের তালিকার প্রথম স্থান থেকে জাস্টিন বিবারকে হটিয়ে জায়গাটি দখল করেন মাহের জেইন।
২০১০ সালে আমাজন ডট কমের ‘ওয়ার্ল্ড মিউজিক ক্যাটাগরি’র ডিজিটাল চার্টের প্রথম স্থান অর্জন করে ‘Thank you Allah’ অ্যালবামের গানগুলো। এই অ্যালবামের ‘Inshallah’ এবং ‘The Chosen One’ ২৫ মিলিয়নেরও বেশি বার দেখা হয়েছে ইউটিউবে। আপনার অবস্থা যদি এমন হয় যে, আপনি হতাশার সমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছেন, ‘Inshallah’ গানটি হতে পারে আপনার জন্য আদর্শ টনিক। এই অ্যালবামের বিবাহ নিয়ে গাওয়া ‘Barakallahu lakuma’ গানটিও দারুণ জনপ্রিয়।
এরপর ২০১২ সালে প্রকাশিত হয় মাহের জেইনের দ্বিতীয় এলবাম ‘Forgive me’ এবং ২০১৬ সালে তৃতীয় এলবাম ‘One’।
মাহের জেইন সাধারণত ইংরেজি ও আরবি ভাষায় গাইলেও ফরাসী, তুর্কি, মালয়, উর্দু এবং ইন্দোনেশিয়ান ভাষায় বেশকিছু গান গেয়েছেন। তিনি ‘Awakening record’ এর ব্যানারে কাজ করা বিখ্যাত মিশরীয় শিল্পী হামজা নামিরা, তুর্কি শিল্পী মেসুত কার্তিসের সাথে যৌথভাবে কাজ করেছেন।
পাকিস্তানি বংশোদ্ভুত কানাডীয় শিল্পী ইরফান মাক্কীর সাথে একসুরে উর্দুতে গেয়েছেন ‘Allahi Allah Kiya Karo’ গানটি। এমনকি জনপ্রিয় সঙ্গীত তারকা আতিফ আসলামের সাথেও গেয়েছেন ‘I’m Alive’ গানটিতে।
একাধারে গায়ক, গীতিকার, সুরকার, মিউজিক কম্পোজার এই মেধাবী শিল্পী। ক্ল্যাসাব্লাঙ্কা, ইস্তাম্বুল, বৈরুতসহ মুসলিম বিশ্বের নানা শহর এবং পাশ্চাত্যের অনেক দেশের কনসার্টে ভক্তদের নির্মল ভালবাসায় সিক্ত হন তিনি নিয়মিতই।
একক কনসার্ট ছাড়াও ‘Awakening records’ এর শিল্পীদের সাথে যৌথ কনসার্টেও তাকে দেখা যায়।
আরব বিশ্ব ও মাহের জেইন
২০১০ সালে বের হওয়া মাহের জেইনের অ্যালবাম Thank you Allah অ্যালবামটিতে মূলত রিদম ও ব্লুজ (R&B) ঘরানার গানগুলোকে স্থান দেয়া হয়েছে। গতানুতিক আরএন্ডবি ধাঁচের গানের সাথে মাহের জেইনের অ্যালবামের প্রচ্ছদের ছবির মিল ও অমিল দুটোই ছিল। প্রচ্ছদের ছবিটিতে মাহের জেইনকে দেখা যায় জিন্স, কালো জ্যাকেট আর মাথায় ড্যাপার ক্যাপ পরিহিত অবস্থায়। কিন্তু তিনি ইসলামী মোনাজাতের ভঙ্গিতে সামনে দু’হাত তুলে বসে ছিলেন।
তাকে দেখা যায় পাশ্চাত্য ধাঁচের পোশাক পরতে, কিন্তু তার গানগুলো হয় ইসলামী বিশ্বাস ও মূল্যবোধ কেন্দ্রিক। আধুনিক আরব মুসলিমরা, বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের আরব মুসলিমরা আধুনিকতা নাকি ইসলাম কোনটিকে বেছে নেবেন তা নিয়ে দ্বন্দ্বে ভোগেন। মাহের জেইন এই দ্বন্দ্বের অবসান ঘটিয়েছেন। তিনি তার গান ও মিউজিক ভিডিওতে ইসলাম ও আধুনিকতার সমন্বয় ঘটিয়েছেন। তিনি দেখিয়েছেন, আধুনিকতা ইসলামের পথে বাঁধা নয়। তিনি বলেন, “আমি শিখেছি কোনো ব্যক্তি বা সময়ের সাথে ইসলাম সাংঘর্ষিক নয়। ইসলাম সবার জন্য, সবসময়ের জন্য।”
এদিক থেকে বিবেচনা করলে তিনি আরবে তরুণদের মাঝে নবজাগরণ ঘটিয়েছেন- এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। অনেকে মাহের জেইনের এই ভূমিকাকে আরব বসন্তের সাথে তুলনা করেন। আরব বসন্তে আরব যুবকদের রাজনৈতিক পদ্ধতির পরিবর্তনের দাবীতে সফল গণআন্দোলনের মুখে যেমন আরবে একটি নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থার সূচনা হয়েছিল, তেমনি মাহের জেইনের সক্রিয় প্রচেষ্টা আরব যুবকদের মাঝে প্রচলিত দ্বন্দ-সংশয় নিরসনে কার্যকরী ভূমিকা রেখেছে। আরব বসন্তের প্রভাবও মাহের জেইনের গানে লক্ষ্যণীয়।
২০১২ সালে প্রকাশিত তার ‘Forgive me’ অ্যালবামটিতে গাওয়া ‘Freedom’ গানটি আরব বসন্ত চলাকালীন সময়ে ইতিবাচক সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়।
চ্যালেঞ্জ যখন ইসলামোফোবিয়া
মাহের জেইন একজন আরব বংশোদ্ভুত মুসলিম হলেও তিনি বড় হয়েছেন ইউরোপে। তার গানে আরব, মুসলিম এবং ইউরোপীয় এই তিনটি পরিচয়ের প্রতিফলনই চোখে পড়ে। তার মিউজিক ভিডিওতে তাকে দেখা যায় ফিলিস্তিনের যুদ্ধবিধ্বস্ত শহর থেকে আমেরিকার আধুনিক শহর শিকাগো সবখানেই। ইউরোপে যেখানে ইসলামফোবিয়া বড় একটি সমস্যা সেখানে মাহের জেইনের ইসলামী সঙ্গীত নিয়ে কাজ করা তারা কিভাবে নেবে বা ইসলাম সম্পর্কে ইউরোপীয়দের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনকে কতটুকু প্রভাবিত পারবে দ্য গাডিয়ান উইকলির এই ধরনের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমি দেখেছি মানুষ ইতিবাচক বার্তাযুক্ত ভালো গান শুনতে পছন্দ করে। আমি আশা করি আমার গান নতুন নতুন মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে এবং আমার গানের বিষয়গুলো এবং গুনগত মান তাদেরকে গানগুলো শুনতে উদ্বুদ্ধ করবে।”
বিতর্কিত মাহের জেইন
মুসলমানদের অনেকেই মাহের জেইনে গানের সমালোচনা করেন, কারণ জেইন গানে মিউজিক ব্যবহার করেন। গানে বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা যাবে কিনা ইসলামী আইনে এটি একটি ব্যাপক বিতর্কিত বিষয়। ইসলামের কোনো কোন পন্ডিত বলেন, যদি গানের কথা শালীন ও পরিচ্ছন্ন হয় তাহলে মিউজিক ব্যবহার করা যাবে। আবার অনেকে সরাসরি হারাম বলেন। মাহের জেইন এ প্রসঙ্গে বলেন,
“আমি গানের সাথে বড় হয়েছি। তাই বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার তখন খুব স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল। আমি গানে মিউজিক ব্যবহার নিয়ে অবশ্য ভয় পাই যে মুসলিমরা এটা কিভাবে নেবে। আমি কিছু মুসলিম ভাইদের সাথে কথা বলেছি ব্যাপারটা নিয়ে। তারা আমাকে নিশ্চিত করেছেন যে, যতক্ষণ গানের বিষয়বস্তু ঠিক আছে, ততক্ষণ এটি কোনো সমস্যা নয়।”
তিনি আরও বলেন, ‘”আমার গান ইসলামের বার্তা বহন করে। আমি মানুষকে ইসলামের কথা জানাতে চাই। আমি তাদের বোঝাতে চাই যে ইসলাম শান্তি, ভ্রাতৃত্ব, মানবিকতা, সম্মান আর ভালবাসার কথা বলে।”
মানবসেবার মহান ব্রতে
২০১৩ সালে কানাডায় ভ্রমণকালে তিনি ‘Islamic relief’ আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে ফিলিপাইনের টাইফুন আক্রান্ত লোকদের অর্থসাহায্যের জন্য গান গেয়েছিলেন। যুক্তরাজ্যে ‘Human appeal International’ এর উদ্যোগে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে সিরিয়ায় অসহায় লোকদের সেবায় অর্থ যোগানোর জন্য গেয়েছিলেন। তিনি তার মিনি অ্যালবাম “Love will prevail” সিরিয়ার মানুষজনকে উৎসর্গ করেন। মাহের জেইন একবার তার ৩.৯ মিলিয়ন ফেসবুক ভক্তের সাথে তার জন্মদিন পালন করেন। সেবার তার ভক্তদের তিনি আফ্রিকায় মিঠাপানির নলকূপ স্থাপনের জন্য চাঁদা দিতে বললেন তার ভক্তরা অল্প কয়েকদিনের মধ্যে পনের হাজার মার্কিন ডলারের বেশি টাকা দান করেন।
ব্যক্তিগত জীবন
মাহের জেইনের স্ত্রী জে.আইশা মাহের জেইন। ৩৬ বছর বয়সী এই শিল্পী এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক।
গানে মিউজিক ব্যবহার নিয়ে বিতর্ক থাকলেও বিশ্বের কোটি কোটি মুসলিম মাহের জেইনের গান শোনেন। তার গানের অসাধারণ ছন্দ, সুর আর শান্তির বার্তায় মুগ্ধ হন। তার ভক্ত হন। ইসলামী সংস্কৃতির প্রসারে মাহের জেইনদের মতো শিল্পীদের অবদান কখনোই অস্বীকার যাবে না।
ফিচার ইমেজ: positive sounds