বিশ্বের বিভিন্ন স্কুলে নিষিদ্ধ রয়েছে নানান জিনিস ও বিষয়বস্তু। আপনার কি জানা আছে সেগুলো? না থাকলে এই লেখা থেকে জেনে নিতে পারেন সেই বিষয়গুলো সম্পর্কে।
সেরা বন্ধু
লন্ডনের থমাসেস্ প্রাইভেট ডে স্কুলে ৪-১০ বছর বয়সী বাচ্চাদের মধ্যে সেরা বন্ধু হিসেবে বন্ধুত্ব করার বিষয়টি কড়াভাবে নিষিদ্ধ করেছে। কারণ এই গভীর বন্ধুত্কে তাঁরা অত্যধিক বাড়াবাড়ি ও বিপজ্জনক বলে মনে করেন। এছাড়াও এই গভীর বন্ধুত্ব ভেঙ্গে গেলে বাচ্চাদের উপর শারীরিক ও মানসিক ব্যঘাত ঘটে বলেও তাদের ধারণা! তাদের এই ধারণা ও এই বিষয়ের কার্যকারিতা কতটা যুক্তিযুক্ত বলে আপনি মনে করেন?
বাবা দিবসের কার্ড
স্কটল্যান্ডের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বাবা দিবসের কার্ড নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কারণ তাঁরা মনে করেন যে, স্কুলে যেসব বাচ্চাদের বাবা নেই, তাদের এই বিষয়টি মনে আঘাত করতে পারে।
কোলাকুলি বা আলিঙ্গন করা
ইংল্যান্ডের শহর নর্থহ্যাম্পটনের একটি প্রাথমিক স্কুলের কর্তৃপক্ষ বন্ধুদের সাথে আলিঙ্গন বা কোলাকুলি করার বিষয়টি নিষিদ্ধ করেছে। এই স্কুলের শিক্ষকেরা চাইতেন শিক্ষার্থীরা যেন শিখে যে কীভাবে একজনের ব্যক্তিগত জায়গার বিষয়টিকে সম্মান দেয়া যায়। তবে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা এই সিদ্ধান্তটি মেনে নিতে চায়নি। একজন অভিভাবকের বক্তব্য এরকম ছিলো যে, এতে করে বাচ্চাদের সামাজিক আচার-আচরণ বিকশিত হওয়ার বিষয়টি বিঘ্ন হবে। তবে তাঁর এই বক্তব্য দেয়া সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ নিষেধাজ্ঞা জারি করা থেকে পিছপা হননি।
অভিধান
ক্যালিফোর্নিয়ার মেনেফি শহরের একটি প্রাথমিক স্কুলে সাময়িক সময়ের জন্য ডিকশনারি বা অভিধান (বিশেষ করে ওয়েবস্টারস্ কলেজিয়েট ডিকশনারি) নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো। কারণ সেই স্কুলের একজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক স্পষ্ট ভাষার প্রচলন করার কথা তোলেন।
বাসায় বানানো টিফিন
শিকাগোর আঞ্চলিক জেলা স্কুলগুলোর প্রত্যেক অধ্যক্ষকেই বাসায় বানানো টিফিনের বিষয়টি পরিচালনার কাজটি করতে হয়। তাই শিকাগোর লিটল ভিলেজ একাডেমি স্কুলের অধ্যক্ষ ২০১১ সালে বাসায় বানানো টিফিন স্কুলে নিয়ে আসার বিষয়টি নিষিদ্ধ করে দেন। শিক্ষার্থীদের সবাইকেই স্কুলে তৈরি করা টিফিন খেতে হতো। শুধুমাত্র চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী যাদের খাবার খেতে হতো, তাদের ক্ষেত্রে বিষয়টি ব্যতিক্রম ছিলো।
বই
স্কুলে নিষিদ্ধ সব বিষয়গুলোর মধ্যে এই বিষয়টি হয়তবা সবচাইতে আশ্চর্যজনক। তবে বিষয়টি একদম সত্যি। কিন্তু সেগুলো কোন বই? যেসব বইতে বিপজ্জনক ধারণা সম্পর্কিত লেখালেখি আছে, সেসব বই স্কুলে নিয়ে আসা বারণ ছিলো। উদাহরণস্বরূপ, ‘দ্য এডভেঞ্চার অব টম সয়ার’ বইটি, যা কিনা জাতিগত একগুঁয়ে চিন্তাধারার প্রতিফলন ঘটায়।
ভ্যালেডিক্টোরিয়ান
ভ্যালেডিক্টোরিয়ান হলো সাফল্যের কেতাবি শিরোনাম, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, সেন্ট্রাল আমেরিকা ও ফিলিপাইনস এর শিক্ষার্থীরা তাদের সমাবর্তনের দিন বিদায়ী বক্তব্য হিসেবে প্রদান করে থাকে। উত্তর ক্যারোলাইনার একটি স্কুল এই বিষয়টি নিষিদ্ধ করেছে। কারণ এর জন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৈরি হয় অসুস্থ প্রতিযোগিতা। এছাড়াও শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র ভালো ফলাফল লাভের উদ্দেশ্যে পড়াশোনা করতো এবং নিজেদের আগ্রহের বিষয়ের প্রতি তাঁরা হেলাফেলা করতো। তাঁরা শিক্ষার্থীদের ভেতর এই বিষয়টি উপলব্ধি করাতে চাচ্ছিলো যে, নিজের ইচ্ছাটাকে যেন তাঁরা প্রাধান্য দিয়ে সে অনুযায়ী সামনে এগিয়ে যায়। তাঁরা যেন হেরে যাওয়াকে ভয় না পায় এবং তাঁরা যেন বুঝতে পারে যে স্বকীয়তার গুরুত্বটা ঠিক কতটুকু।
ব্যাকপ্যাক
যুক্তরাষ্ট্রের কিছু স্কুল কর্তৃপক্ষের মতে, ক্লাসরুমে ব্যাগ বা ব্যাকপ্যাক নিয়ে আসাটা সম্ভবত বিপজ্জনক হতে পারে। কারণ যে কেউই এর ভেতর অস্ত্র বহন করে নিয়ে আসতে পারে। তাই তাঁরা ক্লাসরুমে শুধুমাত্র বই ও ষ্টেশনারী জিনিসপত্র নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়ে থাকেন। স্কুলে ব্যাকপ্যাক নিয়ে আসা যায়। তবে তা সবার জন্য আলাদা করে বরাদ্দ করা লকারে রাখতে হয়।
LOL বা ভাব প্রকাশের সমজাতীয় শব্দাবলী
উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই বললেই চলে যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ভাব প্রকাশের এই শব্দগুলো কতোটা জনপ্রিয়! তবে ইংল্যান্ডের একটি মহানগর বিভাগ দক্ষিণ ইয়র্কশায়ারের স্কুলের শিক্ষার্থীদের এ ধরনের কিছু শব্দ ব্যবহার করার উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে! যেমন- চিয়ারস্, হিয়া এবং LOL। এই স্কুলের শিক্ষকেরা মনে করেন যে, কেবলমাত্র এই পন্থাতেই কথপোকথনের সময় শিক্ষার্থীদের মাঝে যথাযথ ইংরেজি ভাষা চর্চা করার অভ্যাসটি গড়ে তোলা সম্ভব।
রবার ব্যান্ড
যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু স্কুলে রবার ব্যান্ড বা রবার ব্যান্ড দিয়ে বানানো ব্রেসলেটও নিয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ। কারণ বেশিরভাগ সময় ক্লাস চলাকালীন শিক্ষার্থীরা এগুলো দিয়ে খেলাধুলা করে এবং এতে করে বাচ্চারা অমনোযোগী হয়ে পড়ে।
টয়লেট টিস্যু
যারা কারুকাজ করে থাকেন, তাদের কাছে টয়লেট টিস্যুর টিউব দিয়ে বিভিন্ন জিনিস বানানোর বিষয়টি পরিচিত বলা চলে। কিন্তু যুক্তরাজ্যের কিছু কিছু স্কুলে টয়লেট টিস্যুর টিউব দিয়ে তৈরি করা বিভিন্ন শৈল্পিক কাজ করা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। কারণ এতে করে জীবাণু সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে।
জন্মদিনের নিমন্ত্রণ
যুক্তরাজ্যের একটি স্কুলে নিয়ম করে দেয়া হয়েছে যে, যদি সেই ক্লাসে উপস্থিত সব শিক্ষার্থীদের জন্মদিনের দাওয়াত দেয়া হয়, তবেই কেবল সবার সামনে এর নিমন্ত্রণপত্র দেয়া যাবে। অন্যথায়, বিষয়টি খুব নিষ্ঠুর দেখায়। তাই শিক্ষার্থীদের নিমন্ত্রণ দেয়ার এই বিষয়টির প্রতি অভ্যাস গড়ে তুললে তাদের মাঝে দয়া ও সবার সাথে মিলেমিশে থাকার প্রবণতা তৈরি হবে বলে স্কুল কর্তৃপক্ষের ধারণা।
স্পিনার
ফিজেট স্পিনার; মূলত এডিএইচডি (অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাক্টিভিটি ডিসঅর্ডার) ও অটিজমের চিকিৎসার কাজে ব্যবহার করা হতো এটি। বর্তমান সময়ে কিশোর-কিশোরী এবং তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ঝড় ফেলে দেয় এই জিনিস। তাই আর নতুন করে এর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার দরকার নেই। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের স্কুলগুলোতে এই প্রজন্মের প্রিয় খেলনাটি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের মূল কারণ ছিলো নিরাপত্তা ও অমনোযোগ।
ডজবল
১৭ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলগুলো ডজবল নিষিদ্ধ করা শুরু করে। সেখানে সবচাইতে বেশি যে খেলাগুলো খেলা হতো সেগুলোর মধ্যে এটি ছিলো একটি। এই খেলা নিষিদ্ধ করা কারণ হলো, এটি উগ্র ও অনিরাপদ একটি খেলা। এখনও যুক্তরাষ্ট্রের স্কুলগুলোতে এই খেলাটি খেলার জন্য শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করা হয় না।
ইউজিজি
ছবিতে যেই জুতোটি দেখতে পাচ্ছেন সেটই হলো ইউজিজি বুট জুতো। যুক্তরাষ্ট্রের একটি স্কুলে এই জুতো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কারণ এই জুতোতে লুকিয়ে শিক্ষার্থীরা ক্লাসরুমে মোবাইল নিয়ে প্রবেশ করে।
হুডি
যুক্তরাষ্ট্রের কানেক্টিকাটের একটি স্কুলের ক্লাসরুমে শিক্ষার্থীদের হুডি পরে প্রবেশ করার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। কারণ ইউজিজি বুটের মতো হুডিতেও শিক্ষার্থীরা মোবাইল ফোন লুকিয়ে ক্লাসে নিয়ে আসে। বেশ কয়েকবার কিছু শিক্ষার্থী ক্লাস চলাকালীন হুডির পকেটে মোবাইল লুকিয়ে রেখে চ্যাটিং করার সময় হাতেনাতে শিক্ষকদের কাছে ধরা পড়েছে।
লাল কালি
যুক্তরাজ্যের একটি স্কুলের কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার খাতায় নম্বর দেয়ার সময় শিক্ষকদের লাল কালি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ এতে করে শিক্ষার্থীদের মাঝে উদ্বেগ সৃষ্টি হয় বলে তাদের ধারণা। এছাড়াও এর জন্য শিক্ষার্থীদের উপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে বলেই তাদের এই সিদ্ধান্ত।
Feature Image Source: Complete Wellbeing