Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মানসিক অসুস্থতার ৯টি শারীরিক লক্ষণ

মানসিক সমস্যা নিয়ে অধিকাংশ মানুষের প্রাথমিক ধারণা হলো “এটি দুর্লভ” এবং “এটি হলে অন্য কারো হবে”। মূলত ব্যাপারটা উল্টো। মাথা থাকলে যেমন মাথাব্যথা হবেই, তেমনি মন থাকলে মানসিক সমস্যাও হবেই। এক সমীক্ষায় বলে, আমেরিকায় প্রায় ৫৪ মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ বিভিন্ন প্রকার মানসিক সমস্যায় ভুগছে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের দেশেও দিনকে দিন মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তির পরিমাণ বেড়েই চলেছে। কিন্তু যে হারে বাড়ছে মানসিক রোগী, সে হারে নেই সচেতনতা। কাউকে মানসিক সাহায্য নিতে বললে প্রথমেই যে প্রতিবাদটি আসে তা হলো, “আমি কি পাগল?” এই কথাটি একই সাথে মানসিক রোগ বিষয়ে অজ্ঞতা ও অসহনশীলতার পরিচায়ক।

মানসিক অসুস্থতার মানেই ‘পাগলামি’ না। আমাদের চারপাশে এমন অগণিত মানসিক রোগী ঘুরে বেড়াচ্ছে যারা বাইরে যথেষ্ট সুস্থ, স্বাভাবিক, যারা আপনার সাথে এক টেবিলে বসে চা পান করবে, রাজনীতি বা সমাজব্যবস্থা নিয়ে সুগভীর আলোচনা করবে, আপনি ঘুণাক্ষরেও টের পাবেন না তার ভেতরের অস্থিরতার। বিশেষ বিশেষ মুহূর্তে অকস্মাৎ এদের অসুস্থ সত্ত্বাটি বাইরে বেরিয়ে আসে। অনেক সময় অসুস্থতার শিকার এই ব্যক্তিরা পারস্পরিক ব্যক্তিগত ও সামাজিক সম্পর্কগুলো নষ্টের পেছনে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। এতে তাদের দোষ দেয়া যায় না। তারা নেহাৎ অসুস্থ, শারীরিক অসুস্থদের মতো তাদেরও প্রয়োজন স্বাস্থ্যগত সাহায্য।

বিজ্ঞানীরা প্রায় ২০০ রকমেরও বেশি মানসিক অসুস্থতা শ্রেণিবদ্ধ করেছেন। বিভিন্ন মানসিক রোগের পেছনে মূল কারণ থাকে পরিস্থিতিগত চাপ, জেনেটিক ফ্যাক্টর, জৈব রাসায়নিক পদার্থের ভারসাম্যহীনতা অথবা এর সবগুলোই। খুব সাধারণ ও পরিচিত কিছু মানসিক সমস্যার মধ্যে রয়েছে উদ্বিগ্নতা, বিষণ্ণতা, ডিমেনশিয়া, বাইপোলার ডিজঅর্ডার, স্কিৎজোফ্রেনিয়া ইত্যাদি। এসবের লক্ষণ হিসেবে মেজাজ, ব্যক্তিত্ব, অভ্যাস ও সামাজিক ব্যবহারের পরিবর্তন বা তারতম্য। যেকোনো মানসিক সমস্যার মোকাবেলা করতে হলে আগে দরকার সমস্যার স্বীকৃতি দেয়া। তারও আগে প্রয়োজন সমস্যার লক্ষণগুলো চিহ্নিত করা। বলা হয়, “মনে আঘাত লাগলে শরীরও কাঁদে”। যখন মনে কোনো অস্থির অবস্থার উৎপত্তি হয়, তখন তার বিভিন্ন শারীরিক লক্ষণ প্রকাশ পায়। এই ৯টি শারীরিক লক্ষণই করবে আপনার মানসিক অসুস্থতার বহিঃপ্রকাশ।

১) স্থূলতা

স্থূলতা বিপদজনক; source: twitter.com

দ্রুত মুটিয়ে যাচ্ছেন? বাইপোলার ডিজঅর্ডার বা স্কিৎজোফ্রেনিয়ার মতো মানসিক সমস্যাগুলো তীব্র আকারে যাদের আছে, তাদের কিন্তু স্থূলতা বা মুটিয়ে যাবার প্রবণতা থাকে। বাইপোলার ডিজঅর্ডারে মানুষের আনন্দ ও দুঃখের অনুভূতি দ্রুত পরিবর্তিত হতে থাকে; আর স্কিৎজোফ্রেনিয়ায় চিন্তা, অনুভূতি ও ব্যবহারের মধ্যে সমন্বয়হীনতা ঘটার ফলে মানুষ ভুল ধারণা, অযাচিত ব্যবহার এবং বাস্তবতা এড়িয়ে কল্পনার রাজ্যে বাস করতে বাধ্য হয়। স্কিৎজোফ্রেনিয়ার রোগীরা সাধারণ মানুষদের তুলনায় ৩.৫% বেশি এবং বাইপোলার ডিজঅর্ডারযুক্ত মানুষরা ১.৫% বেশি স্থূলতার ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। আপনার হঠাৎ অস্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধি আপনার ভেতরের অশান্ত অবস্থার বহিঃপ্রকাশ নয়তো?

২) ওজন হারানো

Source: medicomdtx.com

হঠাৎ মুটিয়ে যাওয়া যেমন মানসিক সমস্যার পরিচায়ক হতে পারে, তেমনি দ্রুত ওজন হারানোও হতে পারে অন্যতম শারীরিক লক্ষণ। সাধারণত উদ্বিগ্নতা ও বিষণ্ণতায় যারা ভোগেন, তাদের মধ্যে ওজন হারানোর হার বেশি লক্ষ করা যায়। স্বাভাবিকভাবেই, দুশ্চিন্তা, উদ্বিগ্নতা ও বিষণ্ণতা খাবার গ্রহণের প্রতি রুচি কমিয়ে দেয় এবং খাদ্য পরিপাকেও ব্যাঘাত ঘটায়। তাই আক্রান্ত ব্যক্তিরা দ্রুত ওজন হারিয়ে বসেন।

৩) বমিভাব

বমিভাব স্বাভাবিক লক্ষণ; source: pointer.de

দুশ্চিন্তা, উদ্বিগ্নতা ও বিষণ্ণতা যেভাবে খাবারে অরুচি আনে, ঠিক একইভাবে হজমে ব্যাঘাত ঘটিয়ে বমিভাব তৈরি করে। তীব্র কষ্টানুভূতির সময় বমিভাব হওয়া প্রায় স্বাভাবিক ব্যাপার। নরওয়ের একটি সমীক্ষায় ৬২,০০০ মানসিকভাবে অশান্ত মানুষকে পরীক্ষা করে দেখা গেছে এদের মধ্যে ৪৮% বমিভাবে আক্রান্ত হবার কথা বলেছেন। সুতরাং, শরীর যখন বিদ্রোহ করে বসে, তখন অবশ্যই সে বাড়তি মনোযোগের আকাঙ্খা করে।

৪) মাইগ্রেন

মাইগ্রেন হলে অবহেলা নয়; source : sabah.com.tr

মাইগ্রেন ও মানসিক সমস্যাবলী খুব ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। অনেক ক্ষেত্রেই মানসিক বিভিন্ন সমস্যা তীব্ররূপ ধারণ করলে মাইগ্রেনের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়। আমাদের দেহে কতিপয় এনজাইম রয়েছে যারা ক্ষতিকর রাসায়নিক সংকেতগুলো মস্তিষ্কে পৌঁছুতে বাধা দেয়। অনেক সময় মন অশান্ত থাকাকালে এই এনজাইমসমূহের কার্যকলাপে বিঘ্ন ঘটে এবং মস্তিষ্ক হয়ে পড়ে অরক্ষিত। তখন লাগাতার কষ্টানুভূতির সংকেত পেতে পেতে একসময় মাথায় তীব্র ব্যথাসহ মাইগ্রেন সৃষ্টি হতে পারে। মাইগ্রেনের রোগীদের ৮৩% এর পেছনে বিষণ্ণতা ও উদ্বিগ্নতা দায়ী।

৫) সাইনাস

সাইনাস; source: ar.wikihow.com

সাইকোলজি টুডে’র মতে, দীর্ঘস্থায়ী সাইনাস সমস্যার সাথে উদ্বিগ্নতা ও বিষণ্ণতার সংযোগ রয়েছে। এতে বলা হয়, দীর্ঘকাল ধরে সাইনাসে ভুগছেন এমন মানুষদের এক-চতুর্থাংশ বিষণ্ণতার শিকার। সাইনুসাইটিস নিঃসন্দেহে বেশ গা-জ্বালানো সমস্যা। আক্রান্ত ব্যক্তির সবসময় মনে হয় মুখমন্ডল এলাকায় কিছু আটকে আছে বা কোনোকিছু চাপ দিচ্ছে। মানসিক সমস্যা শারীরিক সমস্যায় পরিণত হয়ে অশান্তি বৃদ্ধি করার অন্যতম উদাহরণ এই সাইনাস সমস্যা।

৬) দীর্ঘমেয়াদী ব্যথা

শরীর ব্যথা হতে পারে মনের ব্যথার প্রতিফলন; source: med.stanford.edu

শরীরের ব্যথা আর মনের ব্যথা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িত। এই দু’টোর মধ্যে পরিপূরক সম্পর্ক বিদ্যমান। অনেক ক্ষেত্রেই শারীরিক ব্যথা বিষণ্ণতায় রূপ নিতে পারে, আবার একইভাবে বিষণ্ণতা শারীরিক ব্যথানুভূতিকে বাড়িয়ে তোলে। হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুল বলে, “ব্যথা পাওয়া শরীর আর কষ্ট পাওয়া মনের প্রায়শ একই চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।” এরা আরও বলে, যাদের দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক ব্যথা আছে, তারা বিভিন্ন মানসিক সমস্যায় ভোগার ৩ গুণ বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। আবার যারা বিষণ্ণতায় ভোগেন, তাদের শরীরে দীর্ঘমেয়াদী ব্যথা শুরু হবার সম্ভাবনা সাধারণের চেয়ে ৩ গুণ বেশি থাকে। তাই মনকে অবহেলা করে শরীরের যত্ন নেয়া শুধু কঠিনই নয়, এককথায় অসম্ভব।

৭) চর্ম সমস্যা

অশান্ত মন, অস্থির চিত্ত, দুশ্চিন্তা, অতিচিন্তা ও বিষণ্ণতা বিভিন্ন চর্মজনিত সমস্যার উদ্ভব ঘটাতে পারে। মানসিক অস্থিরতা বা চাপের মুহূর্তে স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের নির্গমন হয়, যা ত্বকে তেলের নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে ব্রণ, একজিমা, র‍্যাশ, সোরিয়াসিস, এলার্জিজনিত প্রতিক্রিয়া, চুলকানি সহ বিভিন্ন রকম চর্মঘটিত সমস্যার উদ্ভব করে। তাই উৎকট চর্ম সমস্যাকে অবহেলা না করে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া বাঞ্ছনীয়।

৮) ক্যাভিটি

মুখের যত্ন নিন; source: nz.pinterest.com

একে লক্ষণ না বলে বরং পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াই বলা যায়। অদ্ভুত হলেও সত্য, দাঁতের ক্যাভিটি বা গর্ত হয়ে যাবার সাথে বিষণ্ণতা ও দুশ্চিন্তার যোগ রয়েছে। আমেরিকার একাডেমি অব জেনারেল ডেন্ট্রিস্টি- এর মতে, বিষণ্ণতার মতো মানসিক সমস্যা থেকে শুকনো মুখ, দাঁতের ক্যাভিটি এবং মাড়ির সমস্যার উদ্ভব হতে পারে। যারা অ্যান্টি-ডিপ্রেসেন্ট নিয়ে থাকেন, তাদের মুখ গহবরের বাড়তি পরিচ্ছন্নতা ও যত্নের উপর ডাক্তাররা বেশি গুরুত্ব দিতে বলেন।

৯) অ্যাড্রেনালিন রাশ

যারা জীবনে বারবার দুশ্চিন্তা ও উদ্বিগ্নতার মুখে পড়েছেন, তারা নিশ্চয়ই জানেন যে, এগুলো মানসিকভাবে উদ্ভূত হলেও কষ্টটা মূলত শরীরের উপর দিয়েই যায়। অতিরিক্ত নার্ভাসনেসের সময় স্নায়ুতন্ত্র এড্রেনালিন নিঃসরনের জন্য সংকেত প্রেরণ করে। এর মাধ্যমে শরীর লড়াই করার জন্য বা বিপদ মোকাবেলা করার জন্য তৈরি হয়ে ওঠে। কিন্তু অ্যাড্রেনালিনের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হিসেবে হার্টবিটের হার বেড়ে যায়, শ্বাস-প্রশাস দ্রুত ও ছোট ছোট হয়ে পড়ে, বুকে ব্যথা, মাথা ঘোরা এবং পেশিতে টান পড়ে।

শারীরিক এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে এদের অবহেলা না করে বরং নিজের মানসিক অবস্থার সাথে বোঝাপড়া করার প্রয়াস চালাতে হবে এবং প্রয়োজনমতো বিশেষজ্ঞের পরামর্শও নিতে হবে। আপনার সচেতনতাই আপনার সুস্থ জীবনযাপনের চাবিকাঠি।

ফিচার ইমেজ- vice.com

Related Articles