আপনি কি জানেন যে, প্রাচীনকালে অলিভ অয়েলকে ‘লিকুইড গোল্ড’ বলা হতো? খাবারে তো বটেই ত্বকেও ব্যবহারের জন্য অলিভ অয়েলের গুনাগুণের কমতি নেই! জানেন কি? ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে সবচাইতে বেশি অলিভ অয়েল উৎপাদন ও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আর তাই কার্ডিওভাস্কুলার রোগের কারণে সেই অঞ্চলের মৃত্যুহার সবচাইতে কম!
অলিভ অয়েলের রয়েছে অনেক গুণাগুণ। ওজন কম করা, ব্লাড সুগার, রক্তচাপ, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ, ক্যান্সার ও আর্থাইট্রিস রোগের প্রতিরোধে অলিভ অয়েল বেশ উপকারী।
সংক্ষেপে অলিভ অয়েল সম্পর্কে কিছু তথ্য
অলিভ অয়েল হলো জলপাই থেকে নিষ্কাশিত তেল। রান্না থেকে শুরু করে সৌন্দর্যচর্চায় সারা বিশ্বে বহুলভাবে ব্যবহৃত হয় এই তেল। বাজারে গিয়ে নিশ্চয়ই নানান রকমের অলিভ অয়েল চোখে পড়েছে আপনার। বিভিন্ন ধরনের অলিভ অয়েল সম্পর্কে ধারণা নিয়ে নিন তাহলে
১। ভার্জিন অলিভ অয়েল: এই ধরনের অলিভ অয়েলটি রান্নার কাজে ব্যবহার করার জন্য বেশ জনপ্রিয় এবং এতে এসিড বা ক্ষারের পরিমাণ কম। এই তেলটি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
২। এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল: এই তেলটি শরীরের ত্বকের জন্য ভালো। তবে মানের সাথে পাল্লা দিয়ে এর দামটাও অপেক্ষাকৃত বেশি হয়ে থাকে।
৩। পিওর অলিভ অয়েল: এই তেলটি মূলত পরিশোধিত এবং ভার্জিন (বিশুদ্ধ) তেলের মিশ্রণ। এতে উচ্চ মাত্রার এসিড বা ক্ষার থাকায় এটি ব্যবহারের অযোগ্য বলে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
৪। ল্যাম্পান্তে অয়েল: এই ধরনের তেলটি শুধুমাত্র জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে এবং রান্নার অনুপযোগী।
যত শত ত্বক পরিচর্যাকারী পণ্য ব্যবহার করেন না কেন, অলিভ অয়েলের মতো উপকার কোনো কিছুতেই নেই! এক কথায়, অলিভ অয়েল স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বকের রহস্য। অলিভ অয়েলের বিভিন্ন প্রকারভেদ সম্পর্কে জানার পর চলুন ত্বকের যত্নে এর উপকারিতার কথা জানা যাক। আর নিচের কারণগুলো দেখে বুঝে যাবেন যে, কেন অলিভ অয়েল ত্বকের যত্নে অন্য যেকোনো কিছুর চাইতে সেরা!
১) ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে
ত্বকের যত্নে কি আপনি এমন কিছু চান যা নিয়মিত ব্যবহারে কোনো রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকবে না? তাহলে আপনার জন্যই অলিভ অয়েল! এই তেলে রয়েছে বেশ ভালো পরিমাণে ভিটামিন ই এবং এমন একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করে। হালকা গড়নের হওয়ায় এই তেলটি একদম তেল চিটচিটে ভাব হয় না এবং যেকোনো ধরনের ত্বকে মানিয়ে যায়। এছাড়াও ত্বকে এর স্থায়িত্বের সময়ও অনেক বেশি হয়।
যা দরকার
- ১ চামচ এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল
যা করতে হবে
- গোসল থেকে আসার পরপরই ভেজা থাকা অবস্থায় ত্বকে লাগিয়ে নিন।
- ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
মনে রাখবেন, যদি আপনার ত্বক শুষ্ক হয়ে থাকে, তবে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ত্বকে লাগিয়ে নিন এবং সারা রাত রেখে নিন। সকালে উঠে কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
২) ত্বককে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল রাখে
প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে ত্বকের যত্নের সাথে অন্য কোনো কিছুরই তুলনা হয় না। আর অলিভ অয়েলের তো তুলনাই হয় না। অলিভ অয়েলে যে ভিটামিন ই রয়েছে তা ত্বকের জ্বালাপোড়াভাব ও ব্রণের সমস্যা দূর করে ত্বককে রাখে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল। এছাড়াও ত্বকের বিভিন্ন ধরনের রোগ, যেমন- সোরিয়াসিস ও ত্বকের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বক পেতে অলিভ অয়েলের সাথে মধু ও টক দই ব্যবহার করতে পারেন। মধু ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং টক দই ত্বক পরিষ্কার রাখে।
যা দরকার
- ১/৩ কাপ টক দই
- ১/৪ কাপ মধু
- ২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল
যা করতে হবে
- সব উপকরণ ঘন করে মিশিয়ে নিন।
- এই মিশ্রণটি ত্বকে লাগিয়ে ২০ মিনিটের জন্য অপেক্ষা করুন।
- এরপর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।
- এই ফেস প্যাকটি সপ্তাহে অন্তত একদিন হলেও ব্যবহার করুন।
৩) মেকআপ তুলতে সাহায্য করে
কোন ব্র্যান্ডের মেকআপ রিমুভার ব্যবহার করবেন তা নিয়ে দ্বিধার শেষ নেই। যদি বলি যে, অলিভ অয়েল এই বিষয়েও জাদুকরী কাজ করে তবে কেমন হবে বলুন তো? আর বাজারের সব মূল্যবান মেকআপ রিমুভারের চেয়ে এর দামও কম! এছাড়াও এমন পণ্য খুঁজেও পাওয়া যাবে না যা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখবে। আর সেনসিটিভ (সংবেদনশীল) ত্বক হলে তো কোনো কথাই নেই! র্যাশ বা যেকোনো ধরনের অ্যালার্জির সমস্যা দূর করবে এই অলিভ অয়েল।
যা দরকার
- ১/৩ কাপ টক দই
- ১/৪ কাপ মধু
- ২ চা চামচ অলিভ অয়েল
যা করতে হবে
- একটি বাটিতে এগুলো একসাথে নিয়ে তাতে তুলা ভিজিয়ে মেকআপ মুছে নিন।
- এছাড়াও শুধু অলিভ অয়েলে তুলা ভিজিয়ে মেকআপ তুলে নিতে পারেন। চোখের চারপাশের মেকআপও অলিভ অয়েল দিয়ে তুলে নিতে পারেন।
৪) বয়সের ছাপ দূর করে
বয়সের সাথে সাথে ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ে যায় এবং বলিরেখা দেখা যেতে থাকে। তবে অলিভ অয়েলের মাধ্যমে ত্বকের এই বয়সের ছাপ দূর করা সম্ভব।
যা দরকার
- ২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল
- ১ টেবিল চামচ লেবুর রস
- এক চিমটি লবণ
যা করতে হবে
- কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল নিয়ে মুখে ম্যাসাজ করুন।
- বাকি যতটুকু তেল বাকি থাকে তার সাথে লবণ মিশিয়ে এক্সফোলিয়েটর তৈরি করে নিন।
- ফ্রেশভাব আনার জন্য কয়েক ফোঁটা লেবুর রস নিয়ে নিন।
- ত্বকের শুষ্ক ও রুক্ষ জায়গায় এই মিশ্রণটি ম্যাসাজ করুন।
৫) ঠোঁটের স্ক্র্যাব হিসেবে
ঠোঁটের কালো দাগ, ঠোঁট ফাটা নিয়ে সমস্যায় জর্জরিত? অলিভ অয়েল আছে না! হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন! অলিভ অয়েল এই সমস্যাটিরও সমাধান করে!
যা দরকার
- ব্রাউন সুগার গুঁড়ো
- কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল
- কয়েক ফোঁটা লেবুর রস
যা করতে হবে
- সব উপকরণ একসাথে মিশিয়ে সেই মিশ্রণটি ঘুমাতে যাওয়ার আগে ৫ মিনিট ঠোঁটে ঘষে নিন।
- অলিভ অয়েল রুক্ষ, শুষ্ক ও ফাটা ঠোঁট নরম করতে সাহায্য করে। চিনি ও লেবুর রস এক্সফোলিয়েটর হিসেবে কাজ করে।
৬) ফাটা গোড়ালির সমস্যা সমাধান করে
ফাটা গোড়ালির জন্য পেডিকিউর সহ কত কিছুই না করেছেন! তবুও আশানুরূপ কোনো ফল পাচ্ছেন না, তাই তো? অলিভ অয়েল ব্যবহার করে দেখুন! জাদুর মতো এই সমস্যাটি গায়েব হয়ে যাবে। কুসুম গরম পানিতে লেবুর রস নিয়ে তাতে কিছুক্ষণ পা ভিজিয়ে রেখে অলিভ অয়েল দিয়ে গোড়ালির ফাটা জায়গায় কিছুক্ষণ ম্যাসাজ করুন। দেখবেন যে গোড়ালিতে ময়েশ্চার চলে এসেছে এবং নরমও হয়েছে। এর পরপরই কিছুক্ষণের জন্য মোজা পরে থাকলে দ্রুত সমস্যাটির সমাধান হবে।
এছাড়াও অলিভ অয়েল চুলের যত্নেও বেশ উপকারি। আপনি যদি নিয়মিত নারিকেল তেল ব্যবহার করে থাকন তবে এর সাথে কিছুটা অলিভ অয়েলও মিশিয়ে নিতে পারেন। এতে করে আপনার চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।
Feature Image Source: Health For All Women