দুর্ঘটনা, যুদ্ধজনিত কারণ, প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো বিষয়গুলো বাদ দিয়ে, প্রতি বছর ৬৬ হাজার নারীর বিদ্বেষপ্রসূত মৃত্যু হচ্ছে! ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসের এক গবেষণায় এই ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে। নারীহত্যার এই ঘটনাগুলোর ৫০ শতাংশই ঘটে লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে। যে ২৫টি দেশে এমন ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে, সেই তালিকায় রয়েছে একটি আফ্রিকান এবং তিনটি এশিয়ান দেশের নাম। তবে বিস্ময় জাগানিয়া ব্যাপার হচ্ছে, শিক্ষাদীক্ষায় ও ধ্যান-ধারণায় অনেক এগিয়ে যাওয়া এবং নারীর ক্ষমতায়নে সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া ইউরোপেরই সাতটি দেশের নাম রয়েছে এই তালিকায়। দিন দিন পৃথিবী নিজেকে যত সভ্য দাবি করছে, নারীদের প্রতি তার আচরণ যেন বিপরীত দিকেই অগ্রসর হচ্ছে। এই বিপরীতমুখী যাত্রা রুখতে হলে জানতে হবে, কী এই বিদ্বেষপ্রসূত নারীহত্যা?
ইচ্ছাকৃতভাবে নারীবিদ্বেষ থেকে কোনো নারীকে হত্যা করাই হচ্ছে বিদ্বেষপ্রসূত নারীহত্যা। ইংরেজি শব্দ ‘ফেমিসাইড’ থেকে বাংলায় বিদ্বেষপ্রসূত নারী হত্যার ধারণাটি এসেছে। লেখার সুবিধার্থে এই আর্টিকেলে ‘ফেমিসাইড’ শব্দটিই ব্যবহার করা হবে। বিশিষ্ট নারীবাদী ডিয়ান রাসেলের মতে, পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা পুরুষের মনে নারীদের চেয়ে নিজেদেরকে শ্রেয় ভাববার খোরাক যোগায় এবং নানা কারণে প্রবল নারীবিদ্বেষ সৃষ্টি করে।
ফলে এ ধরনের লিঙ্গভিত্তিক বিদ্বেষমূলক অপরাধ সংঘটিত হয়। ১৮০১ সালে ইংল্যান্ডে নারীবিদ্বেষের বিরুদ্ধে বড়সড় আওয়াজ উঠলে প্রথম ‘ফেমিসাইড’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। তবে বর্তমান যে অর্থ, অর্থাৎ লিঙ্গ বিদ্বেষ থেকে নারী হত্যা, এর প্রচলন হয় অনেক পরে। গত শতাব্দীর ‘৭০ এর দশকে বিশ্বজুড়ে ‘ফেমিনিস্ট মুভমেন্ট’ সচল হয় এবং সে সময় থেকে ‘ফেমিসাইড’ শব্দটির ব্যবহার সার্বজনীন রূপ পায়।
ফেমিসাইড অনেক প্রকারের হয়ে থাকে। সিরিয়াল ফেমিসাইড, অনার কিলিং, নারী গণহত্যা, জাতিগত নারী হত্যা, লেসবিয়ান হত্যা, ইন্টিমেট পার্টনার কিলিং বা অন্তরঙ্গ সহযোগীর হাতে নারী হত্যা ইত্যাদি হচ্ছে ফেমিসাইডের বিশ্বজুড়ে পরিচিত কিছু প্রকরণ। আর বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে যৌতুকপ্রথার বলি হচ্ছেন কত নারী, তার তো হিসাবই নেই। সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য, বিশ্বজুড়ে পরিচিত এবং বারংবার ঘটে এরকম কিছু ফেমিসাইডের ব্যাপারে জানা যাক।
ইন্টিমেট পার্টনার ফেমিসাইড
ফেমিসাইডের অন্যান্য ধরনের মধ্যে ইন্টিমেট পার্টনার ফেমিসাইড বেশ প্রকট। অন্তত ৩৫ শতাংশ ফেমিসাইড ঘটে ইন্টিমেট পার্টনারের দ্বারাই! শাব্দিক অর্থ থেকে সহজেই ব্যাপারটা অনুধাবন করা যায়। ইন্টিমেট পার্টনার বা ঘনিষ্ঠ সহযোগী বলতে সাবেক কিংবা বর্তমান প্রেমিক কিংবা স্বামীর কথাই বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ কোনো নারী তার প্রেমিক কিংবা স্বামীর হাতে খুন হলে, তা হবে ইন্টিমেট পার্টনার ফেমিসাইড।
অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও ব্যাপারটি সত্য যে, একজন নারী যার কাছে নিজেকে সবচেয়ে নিরাপদ ভেবে সমর্পণ করেন, তার হাতেই প্রাণ হারান। যুক্তরাষ্ট্রে যত ফেমিসাইড ঘটে, তার ৫০ শতাংশই ঘটে ইন্টিমেট পার্টনারের দ্বারা। ভারতে প্রতি বছর ৫ হাজার নারী তার স্বামী কিংবা প্রেমিকের হাতে প্রাণ হারাচ্ছেন। প্রকৃত সংখ্যাটা আরো বেশিই হবে, কারণ সরকারি হিসাবে সর্বদাই কম রাখার একটা প্রবণতা দেখা যায় ভারতীয় উপমহাদেশে। আমাদের দেশেও এরকম ঘটনা নিছক কম ঘটে না, কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের কোনো কার্যকর সংস্থা এ ব্যাপারে কোনো হিসাব রাখে না।
বছরে কয়টি ইন্টিমেট পার্টনার ফেমিসাইডের ঘটনা ঘটছে, তা জানলেই হবে না, জানতে হবে এর পেছনের কারণ, ভাবতে হবে এর সমাধান। পাকিস্তানের মতো রক্ষণশীল দেশগুলোতে এসব ব্যাপারে সচেতনতা অত্যন্ত কম এবং এসব তথ্যও সঠিকভাবে প্রচার প্রকাশ করা হয় না সেখানে। অথচ এরকম ঘটনা অহরহই ঘটছে।
গবেষকদের দাবি, স্বামী কিংবা প্রেমিকের হাতে খুন হওয়াটাই সম্ভবত একজন নারীর জন্য সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্যের বিষয়। এর পেছনে পুরুষের কঠোর পিতৃতান্ত্রিক এবং কর্তৃত্বপূর্ণ মনোভাব কাজ করে। আরো হতাশাজনক ব্যাপার হচ্ছে, ভারতীয় উপমহাদেশের যৌতুকের ব্যাপারটা বাদ দিলে, ইন্টিমেট ফেমিসাইডের শিকার হওয়া নারীদের মধ্যে সিংহভাগই অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী। বিশ্লেষকরা এই ব্যাপারটিকে এভাবে ব্যাখ্যা করেছেন যে, স্বাবলম্বী নারীরা সংসারে কিংবা প্রেমের সম্পর্কে সকল বিষয়ে বিনা বাক্যব্যয়ে পুরুষের সকল সিদ্ধান্ত মেনে নিতে চান না। ফলে পুরুষের মনে ধীরে ধীরে একপ্রকার ক্ষোভের সৃষ্টি হয়, যার চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে ফেমিসাইড।
সিরিয়াল ফেমিসাইড
সিরিয়াল কিলিং ব্যাপারটার সাথে আমরা সবাই পরিচিত। অনেক বিখ্যাত সিনেমায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সিরিয়াল কিলারদের মানসিক অবস্থা এবং কর্মকাণ্ড। সেগুলোর মধ্যে ‘মেমোরিজ অব মার্ডারস’ সিনেমাটি একটু ব্যতিক্রম। কারণ এই সিনেমার সিরিয়াল কিলার তার শিকার হিসেবে বেছে নেয় কেবলই কোনো নারীকে।
আর এ ধরনের লিঙ্গভিত্তিক ধর্ষকামী নারী হত্যাকে বলা হয় সিরিয়াল ফেমিসাইড। সিরিয়াল কিলিং এমনিতেই একটি ভয়াবহ ব্যাপার। তার উপর সিরিয়াল ফেমিসাইড নারীদের জন্য নতুন আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে। জর্জ হেনার্ড, টনি কস্তা, কেন্ডাল ফ্রাংকোয়েস, ওয়াল্টার এলিস, জো বল, ডেনিস রাডার, রোবার্ট ইয়েটস সহ আরো অসংখ্য দুর্ধর্ষ সিরিয়াল কিলারের নাম আমরা গণমাধ্যমে দেখেছি, যারা সিরিয়াল ফেমিসাইড ঘটিয়েছেন।
রেসিজম
রেসিজম বা বর্ণবাদ বর্তমানে ফেমিসাইডের অন্যতম প্রধান একটি ধরন। এক্ষেত্রে একটি হতাশাব্যঞ্জক তথ্য হচ্ছে, বিশ্বে নারীর ক্ষমতায়নে সবচেয়ে সোচ্চার কণ্ঠ যুক্তরাষ্ট্রেই এ ধরনের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে! প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্রে অসংখ্য কৃষ্ণাঙ্গ নারী খুন হচ্ছেন, কিন্তু সেগুলো না পুলিশ খুব একটা আমলে নিচ্ছে, না মিডিয়া ফলাও করে প্রচার করছে। প্রশাসনের অনীহা এবং মিডিয়ার প্রচারের অভাবে এ ধরনের রেসিস্ট ফেমিসাইডের মতো অপরাধের বিচার হচ্ছে না, বরং ক্রমাগত বেড়েই চলেছে।
লেসবিসাইড
বিদ্বেষপ্রসূত কারণ থেকে কোনো লেসবিয়ানকে হত্যা করাই হচ্ছে লেসবিসাইড। এই লেসবিয়ান বা সমকামী নারীদের উপর অত্যাচারের ইতিহাস অতি পুরনো। প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যেই লেসবিসাইডকে ‘ন্যায়’ বলে গণ্য করা হতো। মধ্যযুগীয় ইউরোপে লেসবিসাইড ঘটে সবচেয়ে বেশি। ফরাসি বিপ্লবের আগপর্যন্ত কেবল ফ্রান্সেই হাজারো লেসবিয়ানকে হত্যা করা হয়। পুরো ইউরোপের চিত্র তো আরো ভয়াবহ। ‘উইচ হান্ট’ বা ডাইনী নিধনের সময় সবচেয়ে বেশি যে দুটি অভিযোগে নিরপরাধ নারীদের হত্যা করা হতো, তার একটি হচ্ছে ‘হেরেসি’ বা বৈধর্ম্য এবং অপরটি সমকামিতা।
অভিযুক্তের বিচারে অধিকাংশ সময়ই ‘ফেমিনা কাম ফেমিনাস’ বা ‘নারীর প্রতি নারীর কাম’ অভিযোগটি আনা হতো। সে ইতিহাস আজও বদলায়নি। যদিও এখন আইন করে লেসবিয়ানিজম নিষিদ্ধ করা হয় না, তথাপি লেসবিসাইড ঘটে চলেছে প্রতিদিন, বিশ্বের প্রতিটি দেশেই। সমকামিতার প্রতি সহানুভূতিশীল দাবি করা উন্নত দেশগুলোতেও লেসবিসাইডের হার যথেষ্টই বেশি।
ধর্ষণ
ধর্ষণ নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। একটি তথ্যই আপনার অনুধাবনের জন্য সহজ হবে যে, এটি কত বীভৎস অবস্থায় গিয়ে ঠেকেছে। প্রতি বছর বিশ্বে অন্তত অর্ধকোটি নারী ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। ২০০৯ সালের হিসেবে, শুধুমাত্র দক্ষিণ আফ্রিকাতেই বছরে ৫ লক্ষাধিক নারী ধর্ষণের শিকার হন। ঐ গবেষণায় আরো বলা হয়, অন্তত ৪০ ভাগ দক্ষিণ আফ্রিকান নারী তাদের জীবনের কোনো না কোনো সময় ধর্ষিত হবেনই! কিন্তু আমাদের হতাশা আরো বাড়াবে যে তথ্যগুলো তা হলো, উন্নত বিশ্বের যে দেশগুলোকে আমরা রোল মডেল মানতে চাই, যে দেশগুলো ধর্ষণ প্রতিরোধে বিভিন্ন উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত দেশে সচেতনমূলক প্রচারণা চালায়, সে দেশগুলোতেই ধর্ষণের হার সবচেয়ে বেশি!
তালিকার উপরের দিকের নামগুলো যুক্তরাষ্ট্র, সুইডেন, কানাডা, ইংল্যান্ড, ডেনমার্ক, জিম্বাবুয়ের সাথে একমাত্র এশিয়ান দেশ হিসেবে রয়েছে ভারতের নাম। শুধু আমেরিকাতেই প্রায় ৮৫ লক্ষাধিক ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছে (২০১৪ সালের হিসাব)। তাছাড়া প্রতি বছর আমেরিকায় যে পরিমাণ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, তার ৭ ভাগের শিকার আবার পুরুষও। সংখ্যাটা ভারতেও কম নয়, আর পুরো বিশ্বে তো অভাবনীয়।
ধর্ষণের এই উদ্বেগজনক হার বাংলাদেশেও ক্রমাগত বৃদ্ধিই পাচ্ছে। ২০১৭ সালে বাংলাদেশে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে ১,৭৩৭টি, যা আগের বছরের চেয়ে সংখ্যায় ২৮৪ জন বেশি। অন্যদিকে ধর্ষণের পরে হত্যার ঘটনা ঘটেছে ৫২টি, যে সংখ্যাটা ২০১৬ সালে ছিল ৩১! অর্থাৎ এই ঘৃণ্য অপরাধ ক্রমেই বেড়ে চলেছে। অন্যদিকে, ‘কারেকটিভ রেপ’ নামে নতুন এক বিকৃত যৌনাচারের কথা সাম্প্রতিককালে প্রায়ই মিডিয়াতে আসছে। মূলত সমকামী নারীদের সাথে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক করে তার মধ্যে ‘নারীত্ব’ দেয়ার চেষ্টা কিংবা বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ জাগানোর প্রক্রিয়াই হচ্ছে সংশোধনমূলক ধর্ষণ! এর ফলাফল অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মৃত্যু।
যৌতুক
ভারতীয় উপমহাদেশে ফেমিসাইডের একটি বড় অংশ দখল করে রেখেছে যৌতুকের জন্য হত্যা। ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশে প্রতিবছর ঘটে যাচ্ছে অসংখ্য যৌতুক সম্পর্কিত ফেমিসাইড। ভারতীয় উপমহাদেশের বাইরে ইরান এবং অস্ট্রেলিয়াতেও যৌতুকের জন্য নারী হত্যার দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। আশার ব্যাপার হচ্ছে যৌতুকের কারণে ফেমিসাইডের সংখ্যাটা দিনকে দিন কমে আসছে। ২০১৩ সালে যেখানে ভারতে প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার নারীর মৃত্যু ঘটেছে যৌতুকের জন্য, সেখানে ২০১৫-১৭ এই তিন বছরে এরকম ঘটনা ঘটেছে ১৬ হাজারের কিছু বেশি। অন্যদিকে পাকিস্তান কিংবা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ ধরনের ঘটনার খুব একটা নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায় না।
ফেমিসাইড যে প্রকারেই হোক না কেন, এর প্রতিকার খুঁজতে হবে দ্রুত। বিশ্বজুড়ে প্রতিনিয়তই নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়ছে, ক্রমান্বয়ে উপরে উঠছে ফেমিসাইডের গ্রাফটাও। এর প্রকৃত সংখ্যাটা পাওয়া দুঃসাধ্য নয়, অসম্ভব। ধর্ষণ আর যৌতুকের ব্যাপারগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে নারীরা চেপে যান। ফলে সে সংক্রান্ত সঠিক তথ্য পাওয়া দুষ্কর।
অন্যদিকে, যতগুলো ফেমিসাইডের উপাত্ত আমরা পেয়ে থাকি, সেগুলোর সবই সরকারি হিসাব, প্রকৃত সংখ্যার চেয়ে অনেক কম। গবেষক, বিশ্লেষক এবং নারীবাদী, সকলের মতেই ফেমিসাইডের মূল কারণ আমাদের সমাজ ব্যবস্থা এবং কর্তৃত্বপরায়ণ দৃষ্টিভঙ্গি। একদিকে নারীর অধিকার এবং ক্ষমতায়নের জন্য সোচ্চার হচ্ছে পুরুষদের একাংশ, অন্যদিকে নারীর ক্ষমতায়নকেই আবার সহজভাবে মেনে নিতে পারছে না পুরুষ সমাজের আরেক অংশ। স্বাবলম্বী নারীদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাকে খুশি মনে স্বাগতম জানাতে পারছে না এই পিতৃতান্ত্রিক সমাজ। ফলে কারণে-অকারণে নারীর প্রতি বিদ্বেষ বেড়েই চলেছে।
২১ শতকে পৃথিবীতে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একথা কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার অবকাশ নেই। বরং তাত্ত্বিকদের মতে, নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে সোচ্চার হবার প্রয়োজন এখনই সবচেয়ে বেশি। যদিও বিশ্লেষণে উঠে এসেছে নারীর ক্ষমতায়নকে পুরুষ সমাজ সহজভাবে নিচ্ছে না, তথাপি নারীর অগ্রযাত্রা ফেমিসাইডের ভয়ে কোনোভাবে থামানো উচিত হবে না। বরং নারীদেরকে ‘নারী’ হিসেবে না দেখে ‘মানুষ’ হিসেবে দেখার আহ্বান জানান নারীবাদীরা। এক্ষেত্রে মিডিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
মিডিয়াই পারে নারীকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন না করে বরং সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর সহাবস্থান নিশ্চিত করার জন্য সচেতনতা সৃষ্টি করতে। আর ‘রেডিক্যাল ওম্যান’, ‘ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর ওম্যান’, ‘ফেমিনিস্ট মেজরিটি’, ‘ন্যাশনাল ব্লাক ফেমিনিস্ট অর্গানাইজেশন’ এর মতো নারীবাদী সংগঠনগুলোর ভূমিকা এক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি, তা হচ্ছে নারীর নিজে সচেতন হওয়া। পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি কিংবা পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ততদিন বদলাবে না, যতদিন নারী তাদেরকে বদলে যেতে বাধ্য করবে। তাই শেষ করছি নারীর জন্য ব্রিটিশ লেখিকা এবং দার্শনিক ম্যারি উলস্টোনক্রাফটের একটি চিরন্তন উপদেশবাক্য দিয়ে।
“আমি চাই না নারীরা পুরুষের উপর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিক, বরং আমি চাই নারীরা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ নিজেরা নিতে শিখুক!”
ফিচার ছবি: leadcampus.org