শত বছর পরে পৃথিবীর বুকে আসা এক মহামারির কবলে মানবজাতি। করোনাভাইরাসের আক্রমণের ধাক্কা পৌঁছে গেছে বাংলাদেশসহ দুনিয়ার প্রায় প্রতিটি অংশে। ‘নিউ নর্মাল’ তথা পরিবর্তনকেই স্বাভাবিক ধরে নিয়ে চলছে আমাদের জীবন। এই মহামারির ব্যাপ্তি কতদিন হবে, সেটা এখনও অজানা, তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, খুব দ্রুতই শেষ হচ্ছে না মহামারির কাল।
আক্রমণের প্রথম ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতেই চীন, ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যে শুরু হয়েছে ‘সেকেন্ড ওয়েভ’ তথা দ্বিতীয় ধাক্কা। প্রায় দেড় কোটি মানুষের দেহে ইতোমধ্যে শনাক্ত হয়েছে এই ভাইরাস। সংখ্যাটা ক্রমাগত বাড়লেও, জীবন তো থামিয়ে রাখার কোনো উপায় নেই। শুরুতেই যেটা বলা হলো – ‘নিউ নর্মাল’ – তারই রেশ ধরে আমরা ঘর থেকে বের হচ্ছি, অফিস করছি, করছি বাজার-সদাই। মহামারি তো মিটিয়ে দেয়নি ক্ষুধা নিবারণের চাহিদা কিংবা জীবিকা উপার্জনের প্রয়োজনীয়তা! তাই যথাসম্ভব সচেতন হয়েই আমরা চালিয়ে নিচ্ছি জীবন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শগুলো এরই মধ্যে ছড়িয়ে গেছে দেশের সব প্রান্তে। আমরা এখন জানি হাঁচি-কাশির শিষ্টাচারের নিয়ম, আমরা জানি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখায় উপায়, জানি সংক্রমণ ঠেকানোর সম্ভাব্য সব উপায়। কিন্তু তাতে কি আর নিশ্চিত থাকা যায়? বছরের পর বছরের অভ্যাস এই অল্প ক’দিনে দূর করা তো এতটা সহজ নয়। তবুও সবচেয়ে আশার কথা হলো, আমরা চেষ্টা করছি সাধ্যমতো, আমরা সচেতন হচ্ছি। আর সচেতন মানুষগুলোই যখন গাড়িতে উঠছি কিংবা বাসার বাইরের কোনো জিনিসে হাত দিচ্ছি, চেষ্টা করছি হাত জীবাণুমুক্ত করে নিতে। আমাদের এমন সচেতনতাই কিন্তু আমাদের অজান্তে ঠেকিয়ে দিচ্ছে আরও অনেক আক্রমণের সম্ভাবনা।
এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ব্যক্তিগত জায়গা থেকে আমাদের প্রত্যেকের সচেতনতা যেমন জরুরি, তেমনি জরুরি প্রাতিষ্ঠানিকভাবেও। আপনি হয়তো সবরকমের সাবধানতা অবলম্বন করেই অফিসে যাচ্ছেন, কিন্তু পুরো অফিস জীবাণুমুক্ত করাটা তো আর আপনার একার পক্ষে সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে অফিস কর্তৃপক্ষকেই এগিয়ে আসতে হবে দায়িত্ব নিয়ে। ঠিক তেমনি গণপরিবহন বলুন আর সুপারশপ বলুন, যেখানে হাজারও মানুষের সমাগম ঘটে, সেসব জায়গাতে আমাদের প্রত্যেকের একক সচেতনতাই কিন্তু যথেষ্ট নয়। এসব জায়গাতে প্রয়োজন দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলোর সচেতনতা। আশার কথা হলো, দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো সত্যিই এখন পরিচয় দিচ্ছে এমন দায়িত্বশীলতার। একটি উদাহরণ দেখা যাক।
প্রতিদিনের বাজার-সদাই করার জন্য এখন ঢাকার প্রায় সব প্রান্তেই আছে ছোট-বড় সুপারশপ। সব ধরনের পণ্য এক ছাদের নিচে পাওয়ার সুবিধার কারণে এই সুপারশপের জনপ্রিয়তাও অনেক, বলা যায় আমাদের অনেকের প্রিয় বাজার হলো সুপারশপগুলো। তো এই সুপারশপে কিন্তু প্রতি মুহূর্তেই সমাগম হয় হাজারও মানুষের। স্বাভাবিকভাবেই তাই সেখানে সংক্রমণের সম্ভাবনাও এখন অনেক বেশি। আর সংক্রমণ কীভাবে হয়, তার প্রক্রিয়াটা তো আমাদের সবার জানা। একটি হলো কোনো আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে ভাইরাস সরাসরি আমাদের চোখ-মুখ-নাক দিয়ে প্রবেশ করা, আর অন্যটি হলো, আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে ভাইরাস বিভিন্ন কিছুতে লেগে থাকার পর সেখানে আমরা হাত দিয়ে সেই হাত আবার চোখ-মুখ-নাকে স্পর্শ করলে ভাইরাস আমাদের দেহে চলে আসা। এখন সুপারশপে যে আমরা ট্রলি ব্যবহার করি, সেগুলো তো স্পর্শ করছে হাজার হাজার মানুষ। সেখানে কেউ যদি আক্রান্ত হয়ে থাকে তাহলে তো সংক্রমণ ছড়াবে ভয়ানক মাত্রায়। এটি ঠেকানোর উপায় কী? এই উপায়টা করে দিয়েই আমাদের উদাহরণ হিসেবে সামনে এসেছে সেপনিল।
সেপনিল এক্ষেত্রে সমাধানের বিষয়টা ভেবেছে খুব সহজ করে। বাংলাদেশে তারা প্রথমবারের মতো নিয়ে এসেছে ট্রলির হাতলের এক ধরনের বিশেষ জীবাণুনাশক কিট। গোলাকৃতির এই জীবাণুনাশক যন্ত্রটি ট্রলির এক প্রান্তে লাগানো থাকে। এটিকে হালকা চেপে ধরে হাতলের এক পাশ থেকে অন্যপাশে টেনে নিলেই মুহূর্তের মধ্যে হাতলটি হয়ে যায় জীবাণুমুক্ত। অর্থ্যাৎ আক্রান্ত কেউ যদি এই ট্রলি ব্যবহার করেও থাকে, তাহলেও অন্য কারো একই ট্রলি ব্যবহারের মাধ্যমে আক্রান্ত হবার আশঙ্কাটা আর থাকে না এই কিট ব্যবহারের কারণে। করোনাভাইরাসসহ সব ধরনের রোগ-জীবাণু মুক্ত করার এই পদ্ধতির কারণে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা যেমন নিশ্চিত হচ্ছে, তেমনি আমাদের মতো সংক্রমণের শঙ্কায় থাকা সাধারণ মানুষের মানসিক দুশ্চিন্তাও অনেকটা লাঘব হবে এই উদ্যোগের জন্য।
প্রাতিষ্ঠানিক জায়গা থেকে সচেতনতার এই উদাহরণটি কিন্তু নিজ নিজ জায়গা থেকে অনুসরণ করা উচিৎ দেশের সব দায়িত্বশীল ব্র্যান্ড ও প্রতিষ্ঠানের। স্কয়ার টয়লেট্রিজ যেমন এই সেপনিল জীবাণুনাশক ট্রলি কিটটি সরবরাহ করেছে ইউনিমার্ট, মিনা বাজার, সিএসডি, স্বপ্ন, শপ এন্ড সেভ, মেহেদি মার্ট, প্রিন্স বাজার, বাজার সারাবেলার মতো সুপারশপগুলোতে। ইতোমধ্যেই এই উদ্যোগ প্রশংসাও কুড়িয়েছে সাধারণ ক্রেতাদের। এই করোনার কালে সবাইকেই আসলে চরম দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকতে হয় বাইরে যাওয়া নিয়ে, কারণ বাঁচার জন্য তো বাজার-সদাইয়ের বিকল্পও নেই। এমন একটা সময়ে এই ধরনের উদ্যোগ মানুষকে কিছুটা হলেও দুশ্চিন্তামুক্ত রাখছে, অন্তত সুপারশপে গিয়ে কেনাকাটার ক্ষেত্রে হলেও ভয়টা কমাচ্ছে। সেপনিলের পরিকল্পনা রয়েছে সামনে বিমানবন্দরগুলোতেও ট্রলির জন্য এই কিটটি সরবরাহ করার।
সহজে ব্যবহারযোগ্য এই কিটটি শুধুমাত্র ট্রলিতেই নয়, ব্যবহার করা যাবে যেকোনো কিছুর হাতলেই। আবার এর মধ্যে জীবাণুনাশক প্রবেশ করিয়ে রিফিলও করা যায়, তাই একটি কিট ব্যবহার করা সম্ভব অনেকদিন ধরে।
ঠিক এমনভাবেই, যারা যেখানে যেভাবে কোনো প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন, পণ্য উৎপাদন করছেন কিংবা কোনো সেবা দিচ্ছেন- সবারই আসলে উচিৎ নিজেদের নিয়ন্ত্রিত জায়গাটুকুতে হলেও সর্বোচ্চ সাবধানতা অবলম্বনের ব্যবস্থা করা। করোনাভাইরাস আমাদের কারও পরিচয় দেখে আক্রমণ করছে না, তাই প্রত্যেকেরই আশঙ্কা আছে এতে আক্রান্ত হবার। তাই একে ঠেকানোর উদ্যোগটিও হতে হবে সম্মিলিত। সেপনিলের মতো করেই অন্যান্য ব্র্যান্ডেরও দায়িত্ব নিজেদের সাধ্যের সবটুকু দিয়ে এই মহামারিতে মানুষ বাঁচানোর মহান ব্রত পালনে উদ্যোগী হওয়া। একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে সাধারণ মানুষের তাদের প্রতি যে আশা রয়েছে, সেটি পূরণ করাটা অবশ্যই এখন সময়ের দাবি। একদিন এই মহামারি থাকবে না, সেদিন থাকবে সবার এগিয়ে আসার গল্প। এমন দারুণ সব উদ্যোগ নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর গল্পগুলোই সেদিন আমাদের আনন্দ দেবে, ভরসা দেবে, দেবে যেকোনো অশুভ সময়কে পেরিয়ে যাওয়ার সাহস।