এই যুগে নিজের ফিটনেস নিয়ে সতর্ক নয় এমন মানুষের সংখ্যা নেই বললেই চলে। আর বাড়তি ওজনের চিন্তায় মাথা ভনভন করার কথা না-ই বা বললাম! নানান রকমের ব্যায়াম থেকে আরম্ভ করে কত কিছুই না করা হয়। তবে কিছু নিয়ম মেনে খাওয়ার অভ্যাস করলেই কিন্তু ওজনটা সহজেই কমিয়ে ফেলা যায়। ওজন কমাতে কাজে লাগাতে পারেন এই টিপসগুলো।
এক সপ্তাহে আপনি কী কী খেলেন তা নোট করে রাখুন
গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, যারা নিয়মিত ফুড ডায়েরি লেখে, তারা বাকিদের চাইতে অপেক্ষাকৃত ১৫% কম খাবার খেয়ে থাকে। বন্ধের দিনে ১১৫ ক্যলরি অতিরিক্ত খাওয়া হয়ে থাকে। কারণ বন্ধের দিনে বিভিন্ন ধরনের সফট্ ড্রিংকস, স্ন্যাকস্, সস, সালাদ ড্রেসিং খাওয়া হয়। এসব আইটেম ওজন কম-বেশি হওয়ার ক্ষেত্রে তারতম্য ঘটাতে পারে।
সাহায্য নিতে পারেন বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন-এর
হাতের মুঠোয় যদি সমাধান থাকে, তাহলে কিন্তু আর বিষয়টিকে নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত করতে কষ্ট হবে না। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় বিভিন্ন ফিটনেস সেন্টারে ভর্তি হয়েও অলসতার জন্য মাঝপথে ছেড়ে দিতে হয় বা নিয়মিত যাওয়া হয় না। তাই আপনার মুঠোফোনে বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করে নিতে পারেন। যেমন- অ্যান্ড্রয়েড ফোনের জন্য- Pedometer & Weight Loss Coach, Lose It! – Calorie Counter, 30 Day Fit Challenge Workout – Lose Weight Trainer, আইফোনের জন্য- Calorie Counter & Diet Tracker by MyFitnessPal, Sworkit – Workouts & Fitness Plans, Fitstar Personal Trainer এবং উইন্ডোজ ফোনের জন্য- Endomondo- এই অ্যাপগুলো ব্যবহার করতে পারেন।
সকালের নাস্তার পর থেকে পানিই পান করুন
সকালের নাস্তার মেন্যুতে আপনি রাখতে পারেন কমলার জুস। এরপর সারাদিনে শুধু পানি পান করুন এবং যেকোনো ধরনের সফট্ ড্রিংক এড়িয়ে চলুন। কারণ সুগার জাতীয় যেকোনো পানীয়তে ক্যালরি থাকে, যাতে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা থাকে।
টিভি এক ঘণ্টা কম দেখুন
৭৬ জন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীর উপর করা এক জরিপে দেখা গিয়েছে টিভি দেখার সময় ঘন ঘন খাওয়া হয় আর সেজন্য ওজন বেড়ে যায়। তাই আপনার ওজন কমানোর স্বার্থে আপনার একটি প্রিয় অনুষ্ঠান দেখা বাদ দিতেই পারেন এবং সে সময়টাতে হাঁটতে পারেন।
সপ্তাহে অন্তত একদিন ঘর পরিষ্কার করুন
জানালা, ঘরের মেঝে বা বাথরুম ধোওয়ার মতো কাজগুলো থেকে যেকোনো একটি কাজ বেছে নিন। এসব কাজের যেকোনো একটি করলে প্রতি মিনিটে আপনার শরীর থেকে ৪ ক্যালরি পরিমাণ ওজন কমে যাবে।
এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকুন নীল রঙের দিকে
বেশিরভাগ রেস্টুরেন্টই দেখা যায় যে, নীল রঙ দিয়ে সাজানো। কারণ নীল রঙ ক্ষুধা নিবারণে সাহায্য করে। তাই আপনার খাবার প্লেট বা টেবিল ক্লথটি নীল রঙের রাখতে পারেন। এছাড়া লাল, হলুদ ও কমলা রঙের কোনো জিনিস ডাইনিং স্পেসে রাখার ব্যাপারটি এড়িয়ে চলুন। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, এসব রঙ ক্ষুধা বাড়ায়।
ওজন কমাতে সিঁড়ির ব্যবহার
দিনে ১০ মিনিট সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করুন। দ্য সেন্টারস্ অব ডিজিজ কন্ট্রোলের মতে, এই অভ্যাসটি বছরে আপনার ১০ পাউন্ড ওজন কমাতে সাহায্য করবে।
অন্তত প্রতি ২ ঘণ্টায় চাই ৫ মিনিট
অফিসের কাজের চাপে নিশ্চয় সারাদিন ডেস্কেই বসে থাকতে হয়? তবে খানিকটা বিরতি নিলে কাজের খুব বেশি একটা ক্ষতি হবে বলে মনে হয় না। দিনে প্রতি ২ ঘণ্টা অন্তর অন্তর ৫ মিনিট অরে হাঁটুন। এতে করে দিনশেষে আপনার মোট ২০ মিনিট অতিরিক্ত হাঁটা হবে।
ঘুমকে প্রাধান্য দিন
বিষয়টা অদ্ভুত শোনালেও সত্যি যে, ঘুম আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করে। ঘুম ও হরমোনের কার্যকলাপের উপর করা এক গবেষণায় দেখা যায় যে, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিলে আপনার বিপাক বৃদ্ধি পায় ও ক্যালরি বার্ন হয়।
ব্যায়ামের আগে কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখা জরুরি
ব্যায়াম করার এক ঘণ্টা আগে কার্বোহাইড্রেট বা প্রোটিন সমৃদ্ধ স্ন্যাকস খেতে পারেন। যেমন- অর্ধেক আপেল বা লো-ফ্যাট চীজ দিয়ে বানানো কোনো আইটেম। ব্যায়াম করার সময় কার্বোহাইড্রেট আপনাকে এনার্জি দিবে এবং প্রোটিন আপনার হজমশক্তিকে ধীরগতিতে কাজ করতে সাহায্য করবে। তাই অধিক সময় ধরে আপনি ব্যায়াম করতে পারবেন।
করতে পারেন ‘রিং টেস্ট’
আপনার কি খাবারে লবণের পরিমাণ কমিয়ে দেয়া উচিত? উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা না থাকলেও করে নিতে পারেন এই পরীক্ষাটি। লবণযুক্ত খাবার খাওয়ার এক ঘণ্টা আগে আঙ্গুলে একটি আংটি পরে নিন। খাওয়ার এক ঘণ্টা পর আংটিটি খোলার চেষ্টা করুন। যদি স্বাভাবিক সময়ের চাইতে আংটিটি খুলতে বেশি কষ্ট হয়, তাহলে লবণ খাওয়ার ফলে আপনার শরীরে ফোলাভাব হওয়ার সমস্যাটি রয়েছে। সেক্ষেত্রে সোডিয়ামযুক্ত খাবার খাওয়ার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করুন। বিশেষ ধরনের ম্যাগনেটিক রিং কিনতে পাওয়া যায় যা দিয়ে আপনি এই পরীক্ষাটি করতে পারবেন।
স্ন্যাকসে কী কী এবং কতটুকু খাবেন
স্ন্যাকস আপনার এনার্জি লেভেল বাড়ায়, ডায়েটে নিউট্রিয়েন্টসের চাহিদা পূরণ করে ও ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। আপনার ডায়েটে যদি দিনে ১,৬০০ ক্যালরির চাহিদা থাকে, তবে দিনে ২ বারের প্রতিবারে ১৫০ ক্যালরির পরিমাণ স্ন্যাকস খান। স্ন্যাকসের আইটেম হিসেবে রাখতে পারেন এই খাবারগুলো:
১। বাদাম
যেকোনো ধরনের বাদাম, যেমন- কাঠ বাদাম, পেস্তা বাদাম ও কাজু বাদামে থাকে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, প্রোটিন ও ফাইবার। এজন্য এই বাদামগুলো খেলে পেট ভরে যায় এবং এতে করে ক্ষুধা কম লাগে। কাঠ বাদামে সবচাইতে কম ক্যালরি থাকে (প্রতি আউন্সে ১৬০ ক্যালরি)। ২৩টি কাঠ বাদাম থেকে আপনি পাবেন ৬ গ্রাম প্রোটিন ও ১৪ গ্রাম ফ্যাট, ১৬-১৮টি কাজু বাদাম থেকে আপনি পাবেন ৫ গ্রাম প্রোটিন ও ১৩ গ্রাম ফ্যাট এবং ৪৯টি পেস্তা বাদাম থেকে পাবেন ৬ গ্রাম প্রোটিন ও ৩ গ্রাম ফ্যাট।
২। পপকর্ণ
৩ কাপ পপকর্ণের উপর ১ টেবিল চামচ চিজ দিলে সেখান থেকে মাত্র ১১৫ ক্যালরি (৩ গ্রাম ফাইবার ও ৫ গ্রাম প্রোটিন) পাবেন।
৩। এগ সালাদ
ডিম দিয়ে বানানো এই সালাদটি খেলে সারাদিন আপনি তরতাজাও অনুভব করবেন এবং ওজন কমাতেও সাহায্য করবে। কুসুম ছাড়া ২টি সিদ্ধ ডিম , ১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল, ১টি সবুজ আপেল, ২টি টমেটো, পরিমাণ মতো লবণ ও গোলমরিচ গুঁড়া। কিউব করে কাটা ডিম, আপেল এবং টমেটো একসাথে মিশিয়ে নিন। এরপর এতে ধনিয়া পাতা বা লেটুস পাতা কুচি দিতে পারেন। প্রতিদিন সকালে এই সালাদটি খেলে দ্রুত ওজন কমবে।
নানান ধরনের চা-এ কমবে ওজন
১। রং চা
এক কাপ দুধ চা খেলে আপনার শরীরে জমা হবে ৪০-৫০ ক্যালরি, যেখানে এক কাপ রং চা থেকে আপনি পাবেন ১-২ ক্যালরি! আশা করছি এই অনুপাত থেকে তফাৎটা আপনি নিজেই বুঝতে পারছেন!
২। পুদিনা চা
টানা ৫ দিন প্রতি ২ ঘণ্টায় পুদিনা পাতা দিয়ে বানানো চায়ের সতেজ ঘ্রাণ শুঁকে তারপর পান করুন। এতে করে আপনার চিনি ও ক্যালরি জাতীয় খাবার খাওয়ার পরিমাণ এমনিতেই কমে আসবে। কারণ পুদিনা পাতার ঘ্রাণ বেশ শক্তিশালী ও সুস্বাদু মনে হয় যা ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে।
৩। আদা চা
আদার ঝাঁঝালো স্বাদ জ্বালাপোড়া কমায় ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। সকালের নাস্তায় আদা চা পান করলে ক্ষুধা কমে ও তৃপ্তি বেড়ে যায়।
৪। মৌরি চা
মৌরি চা শরীরে মেলাটোনিন নামক হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি করে রাতে ঘুমাতে সাহায্য করে। তাই মৌরি চা ওজন বৃদ্ধি কমায় এবং হৃদরোগের সম্ভাবনা কমায়।
৫। গ্রিন টি
গ্রিন টি-তে সাধারণ চা-এর তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম ক্যাফেইন থাকে এবং দ্রুত গতিতে ক্যালরি বার্ন করতে সাহায্য করে। এছাড়া যখন তখন এই চা পান করলেও ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে না।
আশা করছি এই টিপসগুলো নিয়ম মতো অনুসরণ করলে আপনার ওজন কমে যাবে। তাহলে আজকে থেকেই নেমে পড়ুন ওজন কমানোর কাজে!