Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ঢাকায় ‘মিনি কক্সবাজার’ খ্যাত মৈনট ঘাট

বর্ষাকালে পদ্মায় ভেসে বেড়াচ্ছে সারি সারি তরী, সাথে পদ্মার চোখধাঁধানো জলরাশি, কূলে রয়েছে সারি সারি বাহারি রঙের ছাতার নিচে হেলানো চেয়ার। এছাড়াও পদ্মার পাড়ে অপূর্ব সূর্যাস্ত দেখে সত্যিই মুগ্ধ হবেন। বলছি রাজধানী ঢাকার দোহার উপজেলার পশ্চিমে বয়ে যাওয়া পদ্মা নদীর কোলে অবস্থিত মৈনট ঘাটের কথা। সপ্তাহের ছয় দিন কর্মব্যস্ততায় কাটিয়ে একদিনের ছুটিতে অনেকেই পাড়ি জমান এই ঘাটে।

মৈনট ঘাট অর্থাৎ পদ্মার এ-পাড় দোহার উপজেলা এবং ও-পাড় ফরিদপুরের চরভদ্রাসন। যদিও একসময় ফরিদপুরে যাতায়াতের জন্য কার্তিকপুর বাজার থেকে ঘাট পর্যন্ত সরু রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছিল, তবে পরবর্তীতে ঘাট থেকে ফেরি চলাচলের পরিকল্পনা গ্রহণ করলেও তা বাস্তবায়ন না হওয়াতে দীর্ঘদিন রাস্তাটি অকেজো পড়ে থাকে। বেশ কিছুদিন পর রাস্তাটি পুনরায় সম্প্রসারণ করায় নবাবগঞ্জ, দোহার, শ্রীনগর ও কেরানীগঞ্জের বাসিন্দারা এটি ব্যবহার করছে।

পদ্মায় ভেসে বেড়াচ্ছে পাল তোলা নৌকা; Image Source: bdnews24

মৈনট ঘাট যদিও কোনো পর্যটনকেন্দ্র নয়, তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে এর ছবি ভাইরাল হওয়াতে এটি মিনি বা ছোট কক্সবাজার হিসেবে সবার কাছে বেশ সুনাম কুড়িয়েছে।

মৈনট ঘাটের একপাশ জুড়ে রয়েছে চর বা চড়া, মূলত এই চরের জন্যই ঘাটটি বেশ খ্যাতি অর্জন করেছে। তাছাড়াও অন্যপাশে রয়েছে কীর্তিনাশা নদী বা পদ্মা নদী। মৈনট ঘাট ভ্রমণের উপযুক্ত সময় বর্ষাকাল, এবং এর আসল সৌন্দর্য উপভোগের জন্য আপনাকে এই সময়ই আসতে হবে। তবে গ্রীষ্মকালে ঘাটের একপাশ জুড়ে বাদামের চাষ করতে দেখা যায়, এবং শীতকালে নদী শান্ত থাকে, পাশাপাশি বেলাভূমিও বেশ বড় মনে হয়। তাছাড়াও খুব সকালবেলা ঘাটে আসলে দেখতে পাবেন জেলেদের জালে ধরা পড়া মাছের রাজা ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। চাইলে আপনিও কিছু টাকার বিনিময়ে হতে পারেন পদ্মার তরতাজা মাছগুলোর অংশীদার।

ভ্রমণকে আরো আনন্দময় করার জন্য পদ্মার উত্তাল ঢেউয়ে কিছু অর্থের বিনিময়ে স্পিড বোট, ট্রলার কিংবা ইঞ্জিনচালিত ছোট নৌকা নিয়ে ফরিদপুরের চরভদ্রাসন থেকে ঘুরে আসতে পারেন। চরভদ্রাসন যাওয়ার জন্য স্পিড বোটে জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ১৫০-১৭০ টাকা এবং ট্রলারে জনপ্রতি ৮০-১০০ টাকা। এছাড়াও কীর্তিনাশায় নৌযান রিজার্ভ করে ঘুরতে পারেন।

গোধূলি বেলায় মৈনট ঘাট; ছবি: সানজিদা জামান

সেক্ষেত্রে  রিজার্ভ ভাড়া পড়বে স্পিড বোটে বিশ মিনিটের জন্য ২,০০০ টাকা আর দশ মিনিটের জন্য ১,০০০ টাকা, ট্রলারে প্রতি ঘন্টার জন্য ৩০০-৫০০ টাকা এবং ইঞ্জিনচালিত ছোট নৌকায় ঘণ্টাপ্রতি ৩০০-৬০০ টাকা। এছাড়াও ছাতার নিচে হেলানো চেয়ারের জন্য প্রতি ঘন্টায় গুনতে হবে ১০০ টাকা।

যাবেন কীভাবে

মৈনট ঘাট যাওয়ার জন্য একাধিক পথ রয়েছে। যেকোনো একটি অবলম্বন করেই যাওয়া যাবে সেখানে।

প্রথমত, রাজধানী ঢাকার গুলিস্তানের গোলাপ শাহর মাজার আসতে হবে। সেখান থেকে যমুনা পরিবহনের বাস মৈনট ঘাটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ৯০-১০০ টাকা, সময় লাগবে দেড় থেকে দুই ঘন্টা। আসলে সময় নির্ভর করে রাস্তার যানজটের উপর। মনে রাখবেন, এই পরিবহনের সর্বশেষ বাসটি মৈনট ঘাট থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে সন্ধ্যা ছয়টায়।

মৈনট ঘাটের এখান থেকেই মানুষ নৌযানে পদ্মা পারাপার হন কিংবা রিজার্ভ করে থাকেন; Image Source: jagonews24

দ্বিতীয়ত, ঢাকার গুলিস্তানের সেই একই জায়গা অর্থাৎ গোলাপ শাহর মাজার থেকে এন মল্লিক পরিবহনেও আসা যাবে। তবে এই বাসে চড়ে সরাসরি মৈনট ঘাট যেতে পারবেন না। এজন্য আপনাকে নবাবগঞ্জের মাঝিরকান্দা নামক স্থানে নামতে হবে। ভাড়া পড়বে ৭০-৮০ টাকার মতো। মাঝিরকান্দা থেকে ব্যাটারি চালিত অটোতে ১৫-২০ টাকার বিনিময়ে নামতে হবে দোহারের বাঁশতলা। তারপর সেখান থেকে আবার আরেকটি অটোতে ১৫-২০ টাকার বিনিময়ে কার্তিকপুর বাজার নামতে হবে। বাজার থেকে ১০ টাকার বিনিময়ে অটো কিংবা ২০ টাকার বিনিময়ে রিক্সায় পৌঁছে যাবেন মৈনট ঘাটে।

তৃতীয়ত,  ঢাকার গুলিস্তানের ফুলবাড়ীয়া থেকে ৯০-১০০ টাকার বিনিময়ে নগর পরিবহনেও যেতে পারবেন মৈনট ঘাটে। তবে এই বাসটি অন্য রুট ব্যবহার করে, অর্থাৎ নবাবগঞ্জ হয়ে না এসে, আসে মুন্সিগঞ্জ হয়ে। এজন্য আপনাকে নামতে হবে কার্তিকপুর বাজারে। তারপর বাজার থেকে অটো কিংবা রিক্সায় চড়ে যেতে পারবেন মৈনট ঘাট। ভাড়া গুনতে হবে অটোতে ১০ টাকা এবং রিক্সায় ২০ টাকা।

এছাড়া ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়েও আসা যাবে মৈনট ঘটে।

খাবেন কোথায়

মৈনট ঘাটে খাওয়া-দাওয়ার জন্য তেমন ভালো মানের রেস্তোরাঁ নেই। তবে ঘাটের আশেপাশে কয়েকটি সাধারণ হোটেল রয়েছে যেখানে ভাত, মাছ, ডাল, ভর্তাসহ বেশ কিছু পদের খাবার পাওয়া যায়। পদ্মার পাড়ে ভ্রমণে এসে যদি পদ্মার ইলিশ না খেয়ে যান তাহলে মনে হবে যেন পুরো ভ্রমণটাই বৃথা। এখানকার প্রতিটি হোটেলেই ইলিশ পাওয়া যায়। ছোট-বড় প্রতি পিস ইলিশের দাম পড়বে ৬০-১১০ টাকা। সাথে অন্যান্য মাছও পাবেন, যেমন: চিংড়ি ৬০-৮০ টাকা, বোয়াল ৮০-১০০ টাকা। এছাড়াও হালকা খাবারের জন্য কয়েকটি মুদি দোকান এবং ফুচকা-চটপটির দোকানও রয়েছে।

মৈনট ঘাটে যাওয়ার পথে কার্তিকপুরের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টির বেশ সুনাম রয়েছে। হাতে সময় থাকলে কেরানীগঞ্জ উপজেলার রোহিতপুর গ্রামে অবস্থিত সোহানা হোটেলের বিখ্যাত ইনসার আলীর খুদের ভাতও খেয়ে যেতে পারেন। খুদের ভাতের সাথে থাকছে বিভিন্ন পদের ভর্তা এবং ভিন্ন স্টাইলের ডিম ভাজা। এক প্লেট খুদের ভাতের দাম পড়বে মাত্র ৫০-৬০ টাকা।

বিখ্যাত ইনসার আলীর খুদের ভাত; ছবি রাশেদুল আলম

নিকটস্থ দর্শনীয় স্থান

মৈনট ঘাট যাওয়ার পথে বেশ কিছু ঐতিহাসিক স্থাপনা রয়েছে। এগুলো হলো মাঝিরকান্দার আগে কলাকোপা স্থানে অবস্থিত জজবাড়ি, উকিলবাড়ি, কোকিলপ্যারি দালান, খেলারাম দাতার বাড়ি যাকে স্থানীয়রা আন্ধার কোঠা বলে থাকে, এবং দোহারের রাইপাড়া ইউনিয়নের লক্ষ্মীপ্রসাদ গ্রামে অবস্থিত পোদ্দারবাড়িখ্যাত মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জাদুঘর। চাইলে সেগুলো পরিদর্শন করেই যেতে পারেন মৈনট ঘাট।

সতর্কতা

১. কীর্তিনাশার পানির স্রোত অনেক, তাই সাঁতার না জানলে অবগাহনের সময় বেশি পানিতে না যাওয়াই উত্তম।

২. লাইফ জ্যাকেট ছাড়া স্পিড বোট নিয়ে ঘাট থেকে বেশি দূরে যাওয়া নিজের জন্য নিরাপদ নয়।

৩. চিপসের প্যাকেট, পানির বোতল এবং ময়লা-আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলুন।

৪. মনে রাখবেন, মৈনট ঘাট কোনো সমুদ্র সৈকত নয়, সুতরাং রাত্রিযাপনের পরিকল্পনা না থাকলে চেষ্টা করবেন এখান থেকে সন্ধ্যার আগে আপন গন্তব্যস্থলে ফিরে যাওয়ার।

Related Articles