একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের ছয় বছরের শিশু তার দিনকাল কীভাবে কাটায়? মায়ের হাতে তুলে দেয়া খাবার খাওয়া, প্রথম স্কুলে যাওয়া শুরু করা কিংবা বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা করা ছাড়া খুব বেশি ব্যতিক্রম পাওয়া যাবে না। কিন্তু আপনাকে যদি বলা হয়, ৬ বছরের এক শিশু তার দাদার দোকান থেকে ৬টি কোকাকোলা ২৫ সেন্টে কিনে তার বন্ধুদের কাছে প্রতিটি বোতল ৫ সেন্ট করে বিক্রি করে এবং ৫ সেন্ট লাভ করে, সেটা কি আপনি বিশ্বাস করবেন? এমন কাজটিই করেছিল আজ থেকে ৮০ বছরেরও আগে এক ৬ বছরের শিশু। তিনি বর্তমানে বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ ধনী ব্যক্তি এবং সম্ভবত সর্বকালের সেরা বিনিয়োগকারী। তার নাম ওয়ারেন এডওয়ার্ড বাফেট, যিনি ওয়ারেন বাফেট নামেই পরিচিত।
ওয়ারেন বাফেট ১৯৩০ সালের ৩০ আগস্ট আমেরিকার নেব্রাস্কার ওমাহাতে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা হাওয়ার্ড বাফেট শেয়ার বেচা-কেনার কাজ করে দিতেন। মায়ের নাম ছিল লেইলা বাফেট। বাফেটের জন্মের সময় শেয়ার বাজারে ধ্বস নামায় আমেরিকায় ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয়। তার বাবা যে ব্যাংকে কাজ করতেন আর সংসারের সঞ্চয় জমা রাখতেন সেই ব্যাংকটি মন্দার প্রভাবে বন্ধ হয়ে যায় তার প্রথম জন্মদিনের আগেই। ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে তার বাবার চাকরিও চলে যায়। এতে বেশ কিছু বছরের জন্য তাদের গভীর আর্থিক সংকটে পড়তে হয়। তার মাকে মাঝে মাঝে দেখতেন রাতের খাবার খাননি, যাতে তার বাবা খেতে পারেন ঠিকমতো।
পরিবারের দুরবস্থা দেখে ছোটবেলা থেকেই বাফেট বুঝে গেলেন জীবনে টাকা-পয়সা থাকার গুরুত্ব কতটুকু। এটা তাকে ধনী হওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা এনে দেয়। তার বয়স যখন ১৩ বছর, তখন এক বন্ধুকে বলেন, ৩০ বছর বয়সে যদি মিলিয়নিয়ার না হন, তবে ওমাহার সবচেয়ে উঁচু ভবনের ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করবেন। তিনি অবশ্য টাকার ব্যাপারে বলেন, “আমি টাকা চাই বিষয়টা এমন নয়। টাকা আয় করার প্রক্রিয়া এবং একে বাড়তে দেখাটা আমি উপভোগ করি।”
বিনিয়োগের ধারণা যেন তার রক্তের সাথেই মিশে ছিল। তার মা গণিতে খুবই ভালো ছিলেন। ওয়ারেন বাফেটও অনেক বড় হিসাব নিকাশ সঠিকভাবে বলে দেয়ার জন্য বিখ্যাত হয়ে গিয়েছিলেন ছোটবেলা থেকেই। তিনি দাদার দোকানে যখন কাজ করতেন, তখন সততা, নিয়মানুবর্তিতা, ভালো ব্যবহারের শিক্ষা পেয়েছিলেন। একইসাথে খুচরা বিক্রির কিছু কৌশলও শিখে ফেলেন। তিনি বন্ধুদের সাথে রাস্তায় দাঁড়িয়ে গাড়ি যাওয়া-আসা করা দেখতেন। অন্য বাচ্চারা শুধু যাওয়া-আসাই দেখতো। কিন্তু তিনি তো আর অন্যদের মতো নন! তাই যে গাড়িগুলো যেত তাদের লাইসেন্স নাম্বারগুলো খাতায় টুকে রাখতেন। সারাদিন দেখার পর সন্ধ্যায় মিলিয়ে দেখতেন কোন বর্ণের লাইসেন্স প্লেট সবচেয়ে বেশি।
তার বয়স যখন ৯ বছর, তখন বন্ধুদের সাথে সোডা মেশিনের নিচে পড়ে থাকা ছিপিগুলো কুড়িয়ে নিয়ে দেখতেন কোন ব্রান্ডের পানীয়ের ছিপির সংখ্যা বেশি। বাবা স্টক ব্রোকার হওয়ায় শেয়ার বাজার সম্পর্কে বাবার বইগুলো পড়ে ফেলেন ছোটবেলাতেই। কিছু বই একবারের বেশিও পড়েছেন। এতে শেয়ার বাজার সম্পর্কে তার ধারণা হয়ে যায়। ১১ বছর বয়সে নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে গিয়ে সিটিস সার্ভিসের ছয়টি শেয়ার কেনেন। তিনটি তার এবং তিনটি তার বড় বোনের। প্রতি শেয়ারের মূল্য ছিল ৩৮ ডলার। তারা কেনার পরপরই সেটা ২৭ ডলারে নেমে আসে। পরে যখন ৪০ ডলারে ওঠে, তখন দ্রুত শেয়ার বিক্রি করে দেন। এটা নিয়ে তিনি পরে আফসোস করেন। কারণ শেয়ারের মূল্য পরে ২০০ ডলার হয়ে গিয়েছিল। এতে তিনি ধৈর্যশীল ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন হওয়ার শিক্ষা পান। এভাবে ছোটবেলা থেকেই তার মাঝে ব্যবসায়িক হিসাবনিকাশ এবং উদ্যোক্তা হওয়ার শিক্ষা চলে আসে।
শেষপর্যন্ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকার অর্থনীতির চাকা সচল হলে তাদের পরিবারের ভাগ্য ফেরে। ১৯৪২ সালে তার বাবা রিপাবলিকান পার্টি থেকে কংগ্রেসম্যান নির্বাচিত হন। তখন তারা ওয়াশিংটনে চলে যান। সেখানে উড্রো উইলসন হাই স্কুলে ভর্তি হন। স্কুলের প্রতি তার খুব একটা মন ছিল না। এ সময় তিনি এফসি মিনেকারের ‘ওয়ান থাউজেন্ড ওয়েস টু মেক ওয়ান থাউজেন্ড ডলার’ বইটি পড়েন, যেটা তাকে খুব অনুপ্রাণিত করে। তিনি তখন তার এলাকায় ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকা বিলির চাকরি নেন। এতে মাসে তিনি ১৭৫ ডলার আয় করতেন।
১৯৪৭ সালে তার এক বন্ধুর সাথে ২৫ ডলার দিয়ে একটি পিনবল মেশিন কেনেন। এটাকে তারা ব্যবসায়ের উৎস হিসেবে ব্যবহার করতে চাইলেন। একটি দোকানে রেখে সেখান থেকে আয় করতে লাগলেন। এক মাসের মধ্যে আরো তিন জায়গায় পিন বল মেশিন বসালেন। পরে এক যুদ্ধফেরত সৈনিকের কাছে ১২০০ ডলার দিয়ে সেই ব্যবসা বেচে দিলেন। তিনি ছিলেন খুবই সঞ্চয়ী। এ সময় পত্রিকা বিক্রি করে তিনি ৫,০০০ ডলার জমিয়ে ফেলেছিলেন। এদিকে তার বাবা পরবর্তী নির্বাচনে হেরে যান। তাদেরকে তখন পুনরায় ওমাহাতে চলে যেতে হয়। বাফেট ততদিনে হাই স্কুল থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করে ফেলেছেন।
ওমাহাতে এসে ১,২০০ ডলার দিয়ে ৪০ একর জমি কিনে সেগুলো ভাড়া দিয়ে দেন। তিনি তখন পেনসিলভানিয়ার হোয়ারটন স্কুল অব ফাইন্যান্স এন্ড কমার্সে ভর্তি হন। কিন্তু তিনি এটাও পছন্দ করতে পারলেন না। দেখা গেল, এখানে যা পড়াচ্ছে সেগুলো তিনি আগে থেকেই জানেন। বরং শিক্ষকদের চেয়ে অনেক কিছু বেশিই জানেন। তাই মাত্র ২ বছর পড়ে তিনি সেখান থেকে চলে আসেন। পরে তিনি ইউনিভার্সিটি অব নেব্রাস্কায় চলে যান। সেখান থেকে মাত্র তিন বছরে গ্রাজুয়েশন শেষ করে আসেন। ততদিনে তার সঞ্চয় দাঁড়ায় ৯,৮০০ ডলারে। এরপর তিনি হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলে আবেদন করেন। কিন্তু সেখান থেকে প্রত্যাখ্যাত হন। আর এটাই তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
তিনি বিখ্যাত বিনিয়োগকারী বেঞ্জামিন গ্রাহাম এবং ডেভিড ডডের কিছু বই পড়েছিলেন। তখন থেকেই তিনি তাদের ভক্ত ছিলেন। যখন দেখলেন তারা কলাম্বিয়া বিজনেস স্কুলের শিক্ষক, তখন তিনি সেখানে আবেদন করেন এবং মাস্টার ইন ইকোনমিক্সে ভর্তি হন। যারা ‘দ্য ইন্টেলিজেন্ট ইনভেস্টর’ বইটি পড়েছেন তারা বেঞ্জামিন গ্রাহামকে চিনতে পারেন। তিনিই সেই বইয়ের লেখক।
ওয়ারেন বাফেট এ সময় ওমাহাতে তার জমির ভাড়ার টাকা দিয়ে পড়াশোনার খরচ চালাতেন। এ সময় গ্রাহামের সাথে তার ভালো সম্পর্ক হয়। দ্রুতই তিনি গ্রাহামের প্রিয় ছাত্র হয়ে যান। গ্রাহাম তখন গাইকো নামে একটি ইনস্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান ছিলেন। এদিকে ওয়ারেন বাফেট গ্রাহামের একটি ক্লাসের একমাত্র ছাত্র ছিলেন যিনি এ প্লাস পেয়েছিলেন। এ সময় তিনি কার্নেগি ইনস্টিটিউট থেকে বক্তৃতা দেয়াও শেখেন। কিন্তু পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর গ্রাহাম ও তার বাবা উভয়েই ওয়াল স্ট্রিটে কাজ করতে নিষেধ করলেন। তখন গ্রাহামকে অনুরোধ করেন যেন তার সাথে বিনামূল্যে হলেও কাজ করার সুযোগ দেন। কিন্তু গ্রাহাম তাকে ফিরিয়ে দেন, কারণ বাফেট ছিলেন একজন ইহুদী। এটা তার মনে খুব কষ্ট দেয়। তখন তিনি ওমাহাতে ফিরে আসেন।
ওমাহাতে এসে তার বাবার শেয়ারিং অফিসে চাকরি নেন। তখন তার সাথে সুসান থম্পসন নামে এক তরুণীর পরিচয় হয়। একসময় তাদের মাঝে প্রেম হয়ে যায়। এপ্রিল ১৯৫২ তে তারা বিয়ে করেন। তখন তারা মাসে ৬৫ ডলারে তিন রুমের একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন। এ সময় তিনি টেক্সাকো স্টেশন আর কিছু রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় বিনিয়োগ করেন। কিন্তু কোনোটিই সফল হয়নি। তখন ইউনিভার্সিটি অব ওমাহোতে রাতের ক্লাস নিতেন বাফেট। এমন সময় একদিন ফোন পেলেন বেন গ্রাহামের কাছ থেকে। গ্রাহাম বাফেটকে তার সাথে কাজ করার আমন্ত্রণ জানালেন। তরুণ ওয়ারেন বাফেটের অবশেষে স্বপ্নপূরণ হলো। সেখানে বছরে ১২,০০০ ডলার বেতনে যোগ দিলেন।
ওয়ারেন বাফেট এবং সুসান তখন নিউ ইয়র্কে গিয়ে থাকা শুরু করেন। বাফেট তখন কোম্পানির বিনিয়োগের ক্ষেত্র খুঁজে বের করার কাজ করতেন। এ সময়ে তার সঞ্চয় ৯,৮০০ ডলার থেকে ১,৪০,০০০ ডলার হয়ে যায়। ১৯৫৬ সালে গ্রাহাম অবসর নিয়ে নেন এবং তাদের ব্যবসায়িক পার্টনারশিপও ছেড়ে দেন। তখন বাফেট আবার ওমাহাতে ফিরে যান। তখন তিনি ভাবলেন ২৬ বছর বয়সেই অবসর নিয়ে ফেলবেন। তখন তার ছোটবেলার মিলিয়নিয়ার হওয়ার স্বপ্নের কথা মনে পড়লো। তিনি ভাবলেন, তার পক্ষে আরো বড়লোক হওয়া সম্ভব। তখন তারা সাতজন পারিবারিক সদস্য ও বন্ধু মিলে ১,০৫,০০০ ডলারে গঠন করেন ‘বাফেট এসোসিয়েট লিমিটেড’। বাফেটের বিনিয়োগ ছিল মাত্র ১০০ ডলার।
বাফেটের তখন স্ত্রী ও তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে পাঁচ সদস্যের পরিবার। তিনি এ সময় ৩১,৫০০ ডলার দিয়ে পাঁচ বেডরুমের একটি বাড়ি কেনেন। এ বাড়ির বেডরুম থেকেই তিনি প্রথমে ব্যবসার যাবতীয় কাজ করতেন। পরে একটি অফিস নেন। তিনি তখন গ্রাহামের কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষাগুলো কাজে লাগান। বিনিয়োগ করার জন্য এমন কোম্পানিগুলো খুঁজতে থাকলেন, যেগুলো খুব ভালো অবস্থানে নেই, কিন্তু তাদের শেয়ারের দাম যতটা হওয়ার কথা তার চেয়ে কম। পরের পাঁচ বছরে তার ২৫১% লাভ হয়। অবশেষে ঠিক ৩০ বছর বয়সে না হলেও ১৯৬২ সালে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে মিলিয়নিয়ার হন মাত্র ৩২ বছর বয়সে।
১৯৬২ সালে চার্লি মাংগার নামে এক ভদ্রলোক ক্যালিফোর্নিয়া থেকে তার জন্মস্থান ওমাহায় চলে আসেন। তিনি এতই মেধাবী ছিলেন যে হার্ভার্ড ল স্কুলে পড়ে আসেন কোনো ব্যাচেলর ডিগ্রি ছাড়াই। এক বন্ধুর মাধ্যমে ওয়ারেন বাফেট ও চার্লি মাংগারের পরিচয় হয়। তাদের বন্ধুত্ব থেকে একসময় ব্যবসায়িক পার্টনারশিপও হয়। এ সময় তারা একটি কোম্পানির খোঁজ পেলেন, যার নাম ছিল ‘বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে’।
বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে ছিল একটি বস্ত্রশিল্প উৎপাদনকারী কোম্পানি। ১৮৩৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই কোম্পানির এক দশক ধরে অবস্থা এত খারাপ ছিল যে ১১টি কারখানার ৯টিই বন্ধ হয়ে যায়। এর শেয়ারমূল্য হয় ৭ ডলার, যার হওয়ার কথা ছিল কমপক্ষে ১১ ডলার। বাফেট তখন দ্রুত লাভের আশায় এই কোম্পানির শেয়ার কেনেন। তখন বার্কশায়ারের সিইও সিবারি স্ট্যানটন কোম্পানি থেকে যা আয় হতো তা দিয়ে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে শেয়ার কিনে ফেলতেন সাথে সাথে। ওয়ারেন বাফেটের সাথে কথা ছিল, তার কাছ থেকে ১১.৫ ডলারে কিনবেন। কিন্তু পরে দেখা গেল তিনি ১১.৩৭ ডলারে কিনতে চাচ্ছেন আর বাফেটকে প্রতি শেয়ারে ১৩ সেন্ট ঠকানোর চেষ্টা করেন। বাফেটের এই কোম্পানির প্রতি কোনো আগ্রহ ছিল না। কিন্তু সিইওর প্রতারণা দেখে আরো বেশি করে শেয়ার কিনতে লাগলেন। যখন তিনি সিংহভাগ শেয়ারের মালিক হন, তখন কোম্পানি থেকে তাকে বের করে দেন।
ওয়ারেন বাফেট তখন কোম্পানিকে শেয়ার কেনার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা শুরু করলেন। তখন তার বিনিয়োগের ধরনে পরিবর্তন আনলেন। তখন বড় বড় কোম্পানিগুলোকে ন্যায্য দামে কেনা শুরু করলেন। শুরু করেন ১৯৬৪ সালে আমেরিকান এক্সপ্রেস কোম্পানিকে দিয়ে। ১৯৬৭ সাল থেকে তিনি ইনস্যুরেন্স বা বীমা কোম্পানিগুলো কেনা শুরু করেন। ন্যাশনাল ইনডেমনিটি, সেন্ট্রাল স্টেটস ইনডেমনিটি, গাইকো- এসব বীমা কোম্পানি কিনে ফেলেন। ইনস্যুরেন্স কোম্পানিগুলো ব্যাংকের মতো টাকা জমা রাখে। এখানে গ্রাহকরা নিয়মিত টাকা দেয়, কিন্তু টাকা তোলে শুধুমাত্র বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে।
এই কোম্পানিগুলো কেনায় বাফেট বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার উৎস পেয়ে গেলেন। এই টাকাগুলো তিনি সতর্কতা ও বিচক্ষণতার সাথে বড় বড় কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগ করেন। এসব কোম্পানির মধ্যে রয়েছে অ্যাপল, ওয়াল্ট ডিজনী, কোকাকোলা, জেনারেল মোটর্স, ব্যাংক অব আমেরিকার মতো নাম। ১৯৮৩ সালে বার্কশায়ার কোম্পানি ১ বিলিয়নেরও বেশি ডলারের অধিকারী হয়। ১৯৮৬ সালে ওয়ারেন বাফেট নিজেই বিলিয়নিয়ার হয়ে যান। বর্তমানে বার্কশায়ার হাথাওয়ে অত্যন্ত লাভজনক কোম্পানি হিসেবে পরিচিত। এখন তার ব্যাক্তিগত সম্পদের পরিমাণ ৮৪ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের সিইও ও চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। বিনিয়োগ ও বাজারের ক্ষেত্রে তার মন্তব্য খুবই গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়। এ কারণে তাকে ‘ওরাকল অব ওমাহা’ নামেও ডাকা হয়।
তিনি পেশাগত জীবনে সাফল্য পেলেও ১৯৭৭ সাল থেকে তার স্ত্রী সুসান তাকে ছেড়ে আলাদা থাকা শুরু করেন। যদিও তাদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়নি কখনো। এটা তাকে মানসিকভাবে ভেঙে দেয়। সুসান তার সাথে অবশ্য নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন এবং শুভকামনা জানাতেন। ২০০৪ সালে সুসান ওরাল ক্যান্সারে মারা যান।
ওয়ারেন বাফেট শুধু বিলিয়নের পর বিলিয়ন ডলার আয়ই করেননি, দানও করেছেন সেই অনুপাতে। ১৯৮১ সালে তিনি এবং মাংগার বার্কশায়ার দাতব্য পরিকল্পনা শুরু করেন। এখানে প্রত্যেক শেয়ার মালিক কোম্পানির লভ্যাংশ থেকে প্রাপ্ত অর্থের কিছু অংশ দাতব্য কাজে ব্যয় করতেন। তার তিন সন্তানের প্রত্যেকেরই দাতব্য সংস্থা আছে। সেখানে তিনি সাহয্য করেন। এছাড়া বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনে তিনি বড় অংকের অর্থ দান করে দেন। এ পর্যন্ত তিনি ২৭ বিলিয়ন ডলার দান করেছেন। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন তার সম্পদের বেশিরভাগ অংশই দান করে দেবেন।
ওয়ারেন বাফেট সম্পর্কিত কিছু চমকপ্রদ তথ্য
- ওয়ারেন বাফেট ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে একই ডেস্কে কাজ করছেন। এই ডেস্কটি তার বাবাও ব্যবহার করতেন।
- তিনি ১৯৫৮ সালে ওমাহাতে কেনা বাড়িতে এখনও থাকেন।
- তিনি কোনো স্মার্ট ফোন ব্যবহার করেন না এবং জীবনে ইমেইল পাঠিয়েছেন একবার।
- তিনি দিনের প্রায় ১২ ঘন্টা সময়ই বই পড়ে কাটান।
- তিনি ফাস্ট ফুড খেতে খুবই পছন্দ করেন। প্রতিদিনই অফিসে যাওয়ার সময় ম্যাকডোনাল্ডস থেকে বার্গার কিনে নিয়ে যান।
- বিল গেটস তার বেস্ট ফ্রেন্ড। তারা একে অন্যকে বিভিন্ন বইয়ের সাজেশন দেন, ব্যবসায়িক পরামর্শ দেন এবং একসাথে ঘুরতেও বের হন।
- ২০১২ সালে তার প্রোস্টেট ক্যান্সার ধরা পড়ে। পরে তার চিকিৎসা সফল হয়।
- তার বাবা রিপাবলিকান পার্টির হলেও তিনি ডেমোক্র্যাট পার্টির হিলারি ক্লিনটনকে নির্বাচনী প্রচারে সাহায্য করেন। এ প্রসঙ্গে এইচবিওতে প্রচারিত ‘বিকামিং ওয়ারেন বাফেট’ ডকুমেন্টারিতে বলেন, তার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে তার প্রথম স্ত্রী সুসানের অবদান ছিল।
- ছোটবেলা থেকেই তিনি বিনিয়োগ ভালো বুঝলেও তার সম্পদের ৯৯%-ই আয় করেছেন ৫০ বছর বয়স হওয়ার পরে।
- ২০১৩ সালে তিনি প্রতিদিন প্রায় ৩৭ মিলিয়ন ডলার আয় করেন।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আরও জানতে পড়ুন এই বইগুলো
১) Tap Dancing to Work: Warren Buffett on Practically Everything
২) ওয়ারেন বাফেট সাকসেস সিক্রেট