আজ আপনাদের সামনে তুলে ধরবো রুপালী পর্দার এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের গল্প। পৃথিবী থেকে অনেক অনেক বেশি দূরে হওয়ার কারণে আকাশের তারার আলো যেমন ক্ষীণ হয়ে পৌঁছায়, ঠিক সেভাবেই তিন-তিনবার মনোনয়ন পেয়েও অস্কার নামক গ্রহটিকে আলোকিত করতে পারেননি এই জনপ্রিয় অভিনেতা। তিনি আমাদের অতি পরিচিত জনি ডেপ।
আসল নাম ছাড়াও তিনি ভক্তদের কাছে ‘ক্যাপ্টেন জ্যাক স্প্যারো’ হিসেবেই বহুল পরিচিত। এছাড়াও তার আরো একটি নাম রয়েছে, সেটা হচ্ছে মি. স্টেঞ্চ। অবসরে ভ্রমণরত অবস্থায় জনপ্রিয় ব্যক্তিরা হোটেলে ওঠার সময় পাপারাজ্জি আর পাগল ভক্তদের এড়াতে বিশেষ ছদ্মনাম ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু জনি ডেপ বিশ্বাসযোগ্য কোনো ছদ্মনামের পরিবর্তে সবসময় ‘মি. স্টেঞ্চ’ নামটি ব্যবহার করেন।
জনি ডেপ নিঃসন্দেহে বর্তমান সময়ের বহুমুখী প্রতিভাধর অভিনেতাদের মধ্যে অন্যতম। উদ্ভট সব চরিত্রে অদ্ভুত সুন্দর অভিনয় করে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি দর্শকদের মনে। তার অফিশিয়াল সোশ্যাল পেজ না থাকা সত্ত্বেও ভক্তদের বানানো সোশ্যাল পেজগুলোতে ফলোয়ারদের সংখ্যা দেখলেই বোঝা যায়, তিনি কতটুকু জনপ্রিয়।
জনি ডেপের জন্ম ১৯৬৩ সালের ৯ই জুন, উত্তর আমেরিকার কেনটাকি প্রদেশে। চার ভাইবোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। তার বাবা জন ক্রিস্টোফার ডেপ একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার এবং মা স্যু পালমার ছিলেন একজন ওয়েট্রেস।
প্রায়ই তার চিত্রনাট্য বাছাই নিয়ে দর্শকদের কাছ থেকে অভিযোগ শোনা যায়। তবে চিত্রনাট্য যেমনই হোক না কেন, জনির অভিনয় প্রতিভা নিয়ে কারো কোনো সংশয় নেই। প্রত্যেকটি চলচ্চিত্রেই তার অভিনয় প্রশংসনীয়। তিনি ‘পাইরেটস অফ দ্য ক্যারিবিয়ানে’ ক্যাপ্টেন জ্যাক স্প্যারো চরিত্রটি এত চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন যে, তার পরিবর্তে সেখানে কাউকে কল্পনা করাই অসম্ভব। এই চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমেই তার পরিচিতি আর ভক্তদের সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়ে যায়।
জনপ্রিয়তার তুলনায় তার পুরষ্কারের ঝুলি খুব হালকাই বলা যায়। তার বেশ কিছু চরিত্র সমালোচকদের কাছে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হওয়ার পরেও তিনি কখনও অস্কার জিততে পারেননি। ‘সুয়েনি টড: দ্য ডিমন বার্বার অফ ফ্লিট স্ট্রিট’ সিনেমাতে মূল চরিত্রে অভিনয় করে তিনি জিতেছেন গোল্ডেন গ্লোবস। স্ক্রিন অ্যাক্টর্স গিল্ড পুরস্কার জিতেছেন ‘পাইরেটস অফ দ্য ক্যারিবিয়ান: দ্য কার্স অফ দ্য ব্ল্যাক পার্ল’ চলচ্চিত্রের ক্যাপ্টেন জ্যাক স্প্যারো চরিত্রের জন্য। যুক্তরাষ্ট্রের পিপল ম্যাগাজিন তাকে ২০০৩ ও ২০০৯ সালে সবচেয়ে আকর্ষণীয় পুরুষ হিসেবে নির্বাচিত করে।
তার উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলো হলো: দ্য পাইরেটস অফ দ্য ক্যারিবিয়ান সিরিজ, এডওয়ার্ড সিজরহ্যান্ডস, ফাইন্ডিং নেভারল্যান্ড, পাবলিক এনিমিস, ব্ল্যাক ম্যাস, ট্রানসেন্ডেন্স, সুইনি টড: দ্য ডিমন বার্বার অফ ফ্লিট স্ট্রিট, স্লিপি হলো, ব্লো, দ্য নাইন্থ গেইট, ডার্ক শ্যাডো দ্য লোন রেঞ্জার, এলিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড, চার্লি অ্যান্ড দ্য চকোলেট ফ্যাক্টরি, র্যাংগো, দ্য টুরিস্ট, দ্য রাম ডায়েরি, সিক্রেট উইন্ডো, ডনি ব্রাস্কো এবং হোয়াটস ইটিং গিলবার্ট গ্রেপ।
জনি ডেপের যত জানা-অজানা
- ফ্লোরিডার মিরামারে বেড়ে উঠলেও তার বাল্যকাল কেটেছে ২০টি ভিন্ন শহরে। রকস্টার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বেড়ে ওঠা জনির গান-বাজনার প্রতি আগ্রহ দেখে বারো বছর বয়সেই তার মা তাকে একটি গিটার কিনে দিয়েছিলেন। তিনি সারাক্ষণ সেই গিটার নিয়ে মেতে থাকতেন।
- তার শৈশব খুব একটা সুখময় ছিল না। প্রতিনিয়ত মা-বাবার ঝগড়া দেখতে দেখতে অসহ্য হয়ে মাত্র বারো বছর বয়সেই তিনি সিগারেট আর বিভিন্ন ড্রাগ সেবন করতে শুরু করেন। সারাদিন নিজেদের গ্যারেজের দরজায় তালা মেরে সেখানে পড়ে থাকতেন এবং গিটার বাজাতেন। এক সময় নিজের শরীরের বিভিন্ন অংশে কাটাকুটি শুরু করেন যার কিছু চিহ্ন তার শরীরে আজও রয়ে গেছে। ১৯৯৩ সালের এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন “একটি দৃষ্টিকোণ থেকে আমার শরীর হচ্ছে একটা জার্নাল; অনেকটা নাবিকরা যেমন করে, প্রতিটি উল্কির আলাদা আলাদা অর্থ থাকে। জীবনের কিছু কিছু সময়ে ছাপ পড়ে যায় নিজের উপরে, নিজের কারণে, সেটা ছুরি দিয়ে নিজে নিজে হোক কিংবা পেশাদার ট্যাটু আর্টিস্ট দিয়ে।” তার পনের বছর বয়সের সময় তার মা-বাবার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।
- ষোল বছর বয়সে স্কুল ছেড়ে দিয়ে তিনি ‘দ্য কিডস’ ব্যান্ডে যোগ দেন। যদিও দুই সপ্তাহ পর আবার তিনি স্কুলে ফিরে গিয়েছিলেন। তবে স্কুলের প্রিন্সিপাল তাকে পুনরায় ভর্তি করে নেননি, বরং তাকে তার স্বপ্ন পূরণের জন্য উৎসাহ দেন।
- ১৯৮৩ সালে বিশ বছর বয়সে তিনি তার ব্যান্ডের বেস প্লেয়ারের পঁচিশ বছর বয়সী বোন লরি এলিসনকে বিয়ে করেন। লরি ছিলেন একজন মেকআপ আর্টিস্ট। আঞ্চলিক সাফল্যের পর সে বছরই এ্যালবাম রেকর্ডের লক্ষ্যে তিনি ব্যান্ড-মেম্বারদের নিয়ে লস এঞ্জেলেসের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান।
- ‘দ্য কিডস’ একবার রক সঙ্গীতের কিংবদন্তী ‘ইগি পপ’এর কনসার্ট ওপেনার হিসেবে পারফর্ম করলেও সফলতার জন্যে তাদের অনেক কষ্ট করতে হয়ছিল। রাতে স্টেজ মাতিয়ে বেড়ালেও, জীবিকার টানে দিনের বেলা তাদের ছোটখাটো নানান কাজ করতে হতো। ব্যান্ড মেম্বারদের সাথে নিয়ে জনি বেশ কিছুদিন কলম বিক্রি করে বেড়ান।
- জনিকে অভিনয়ে নিয়ে আসার জন্যে ধন্যবাদ প্রাপ্য নিকোলাস কেইজের। লস অ্যাঞ্জেলেসে আসার পরের বছর লরি তার প্রাক্তন প্রেমিক নিকোলাসের সাথে জনির পরিচয় করিয়ে দেন। জনির প্রতিভা দেখে নিকোলাস তাকে অভিনয় শুরু করার পরামর্শ দেন এবং হলিউডের এক এজেন্টের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন।
- নিকোলাসের উপকারের কথা জনি কখনো ভোলেননি। ২০০৭ সালে একবার তিনি যখন আর্থিক সমস্যায় পড়েন, তখন পুরনো কথা মনে করে কৃতজ্ঞতা স্বরূপ জনি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন।
- ১৯৮৫ সালে তার ব্যান্ড ভেঙে যাওয়ার পর স্ত্রী লরির সাথেও তার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এর কিছুদিন পর ‘জেনিফার গ্রে’র সাথে তার বাগদান হয়। তবে সেটা বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়নি। এছাড়াও শেরলিন ফেন (১৯৮৫–১৯৮৮), উইনোনা রাইডার (১৯৮৯-১৯৯৩), তাজানা প্যাটিটজ (১৯৯৩), কেট মস (১৯৯৩-১৯৯৮) এবং অভিনেত্রী/গায়িকা ভ্যানিসা প্যারডিসের (১৯৯৮-২০১২) সাথে তার সম্পর্ক ছিল। জনি এবং ভানিসার সম্পর্কটি দীর্ঘদিন স্থায়ী ছিল। তাদের দুটি সন্তান রয়েছে, লিলি রোজ ডেপ এবং তৃতীয় জ্যাক জন ক্রিস্টোফার ডেপ। ভ্যানিসার সাথে ব্যবচ্ছেদের পর ২০১৫ সালে জনি অ্যাম্বার হার্ডকে বিয়ে করেন। অ্যাম্বার হার্ডের সাথে তার পরিচয় হয় ‘দ্য রাম ডায়েরি’র সেটে। ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে এই দম্পতির ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।
- ১৯৮৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘এ নাইটমেয়ার অফ এল্ম স্ট্রিটে’ তিনি প্রথমবারের মতো মৌলিক কোনো চরিত্রে অভিনয় করেন। তবে তার পরিচিতি বৃদ্ধি পায় ‘২১ জাম্প স্ট্রিট’ টেলিভিশন ড্রামার মাধ্যমে। ১৯৮৭ সালে টিভিতে দেখানো ‘২১ জাম্প স্ট্রিটে’ টমি হ্যানসন চরিত্রে জেফ ইয়াগের পরিবর্তে জনি ডেপকে নেয়া হয়। এই সিরিজ শেষ হবার তিনি আরো কিছু টিন চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। পরে ১৯৯০ সালে ‘এডওয়ার্ড সিজরহ্যান্ডস’ চলচ্চিত্রের কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করে তিনি ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হন। প্রায় তিন বছর একটি টেলিভিশন সিরিজের অভিনয়ের মাধ্যমে একমুখী পরিচিতির উপর বিরক্তি ধরে গেলে, এই চরিত্রে অভিনয় করার পর জনি ঠিক করেন তিনি প্রতিবার ভিন্ন ভিন্ন ধারার চরিত্রে অভিনয় করবেন।
- এডওয়ার্ড সিজরহ্যান্ড চলচ্চিত্রের মাধ্যমে পরিচালক টিম বার্টনের সাথে জনির ভালো খাতির হয়। ফলস্বরূপ, পরবর্তীতে বেশ কিছু চলচ্চিত্রে তাদেরকে একসাথে কাজ করতে দেখা যায়। এখন পর্যন্ত তাদেরকে সর্বমোট ৮টি চলচ্চিত্রে একসাথে কাজ করতে দেখে গেছে।
- মজার ব্যাপার হচ্ছে, একজন অভিনেতা হয়েও তিনি সবচেয়ে বেশি ভয় পান নৃত্যকে। তাকে কখনো কোনো অনুষ্ঠানে নাচতে দেখা যায়নি। শুধু মাত্র একটি সিনেমাতে তাকে কোরিওগ্রাফি অনুযায়ী নাচতে হয়েছিল।
- ২০০৭ সালে তার মেয়ে একবার গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে বেশ কিছুদিনের জন্যে মেয়েকে নিয়ে তাকে হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল। মেয়ে সুস্থ হবার পর হাসপাতাল কর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখাতে তিনি ‘জ্যাক স্প্যারো’ কস্টিউম পড়ে একদিন সেই হাসপাতালে ঢুকে পড়েন। ভেবেছিলেন বাচ্চাদের সারপ্রাইজ দিয়েই বের হয়ে যাবেন। তবে সেটা আর হয়নি, তিনি সেখানে দুই থেকে তিন ঘণ্টা অবস্থান করেন। পরবর্তীতে এক সাক্ষাৎকারে বলেন- সেই ঘটনাটি ছিল তার জীবনের এক মজার অভিজ্ঞতা।
- ১৯৯৩ সালে ‘হোয়াট’স ইটিং গিলবার্ট গ্রেপ’ এর শ্যুটিংয়ের সময় তিনি সহশিল্পী লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিওকে একটি পচা ডিমের গন্ধ শোঁকার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন। ডিক্যাপ্রিও সেটা করার পর তাকে তিনি ৫০০ ডলার উপহার দিয়েছিলেন।
- একই সালে অ্যারিজোনা ড্রিমে শ্যুটিংয়ের সময় অভিনেত্রী ফায়ে ডানয়ে বলেন, তার ট্রাম্পোলিনে লাফানোর খুব ইচ্ছা ছিল। এই কথা শুনে শ্যুটিংয়ের এক ব্রেকে জনি তার বন্ধুকে নিয়ে আশি মাইল দূরের একটি স্পোর্টসের দোকান থেকে ট্রাম্পোলিন কিনে নিয়ে আসেন।
- তিনি সেই সময় যৌথ মালিকানায় লস অ্যাঞ্জেলেসে ‘দ্য ভাইপার রুম’ নামে একটি নাইটক্লাব খুলেন। মালিকানাধীন থাকা অবস্থায় তিনি প্রায়ই ক্লাবের বাইরে গৃহহীন মানুষদের ৫০-১০০ ডলার করে দান করতেন।
- ২০০৮ সালে হিথ লেজারের মৃত্যুর পর, ‘দ্য ইমাজিনারিয়াম অফ ডক্টর পারন্যাসাস’ সিনেমায় যে তিনজন অভিনেতা আয়নার ওপাশের টনি চরিত্রে অভিনয় করেন, জনি ছিলেন তাদের মধ্যে একজন। তবে এই সিনেমায় অর্জিত পারিশ্রমিক তিনি নিজে না নিয়ে হিথের মেয়ে মাতিলদাকে উপহার দেন।
- তার শরীরে মোট ১৩টি উল্কি রয়েছে। এর মধ্যে একটি তার বুকের বাম পাশে, সেটায় তার মেয়ে লিলির নাম লেখা। বাম বাহুতে তার মায়ের নাম এবং তার ডান হাতে একটি চড়ুই ‘জ্যাক’ (ছেলের নাম) শব্দটি নিয়ে উড়ে যাওয়ার উল্কি রয়েছে।
- তিনি বিশ্বাস করেন, তার পুর্বপুরুষরা ছিলেন আদি আমেরিকান গোত্রের। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন “আমার মধ্যে কিছু নেটিভ আমেরিকান ব্যাপারস্যাপার আছে। আমার গ্রেট গ্র্যান্ডমাদার নেটিভ আমেরিকান ছিলেন, তিনি বেড়ে উঠেছিলেন চেরোকি নয়ত ক্রিক ইন্ডিয়ান হিসেবে। অবশ্য এতে অবাক হবার কিছু নেই, কারণ তিনি কেন্টাকির মানুষ। ওখানে চেরোকি আর ক্রিক প্রচুর আছে।“
- তিনি হলিউডের সবচেয়ে দামি অভিনেতাদের একজন। ‘দ্য পাইরেটস অফ দ্য ক্যারিবিয়ান সিরিজ’ এত বেশি সফল হয়েছিল যে, ২০১১ সালে আরেকটি সিক্যুয়েল করার জন্য প্রডিউসার জনিকে ৫০ মিলিয়ন ডলার অফার করেন। তার অভিনীত চলচ্চিত্রগুলো যুক্তরাজ্যে আয় করেছে ৩.১ বিলিয়ন ডলার এবং সারা বিশ্বে প্রায় ৭.৬ বিলিয়ন ডলার। তার মোট আয় ৩৫০ মিলিয়ন ডলার। ২০১২ সালে ‘সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত অভিনেতা’ হিসেবে গিনেজ বুকে তার নাম উঠে যায়।
- জনি তার মেয়েকে প্রচণ্ড ভালবাসেন। তার মেয়েকে নিয়ে তার একটি উক্তি রয়েছে ,”Anything I’ve done up till 27 May, 1999 was kind of an illusion, existing without living. My daughter, the birth of my daughter, gave me life.“