সময়টা গত বছরের মাঝামাঝিতে; এপ্রিলের কোনো এক শুক্রবার সম্ভবত। ঢাকার মোহাম্মদপুর শেখেরটেক এলাকার এই গলি সেই গলি ধরে যে ঠিকানার খোঁজ করা হচ্ছিলো, তা পাওয়া বেশ দুস্কর ছিল। একরকম অনুমানের উপর ভর করে দুপুরের রোদে এলাকার একের পর এক গলিগুলোতে ঢুকছিলাম। কারণ, যে ঠিকানাটা আছে, সেটা কতটা সঠিক সে বিষয়ে একটা অনিশ্চয়তা ছিলো। দু-তিনবার তো ভুলবশত অন্যের দরজাতেই কড়া নাড়া হলো।
নিরাশ হওয়ার পথে ঘন্টা দেড়েকের মাথায় শেখেরটেকের ৬ নং প্রধান সড়কের কাছে হঠাৎ এক পান দোকানি বললেন,
অনেকক্ষণ এই রাস্তায় আসা-যাওয়ার মধ্যে আছেন। কাউকে কি খুঁজতাছেন?
এবার আর বাড়ির সেই আনুমানিক নাম্বারটা বললাম না, সরাসরি ‘তার’ ছবিটা দেখিয়ে বললাম,
চিনেন উনাকে! বাসাটা কোনদিকে?
ওহ রানী খালারে খুঁজতাছেন? ডানের মোড় দিয়া প্রথম যে বিল্ডিং ঐটার নিচ তলায় থাকে।
ছবি দেখে নাম বলে ফেললেন মানে সঠিক তথ্যই দিয়েছেন, তা-ও পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছিলো না। দেড় ঘন্টা যাবত অনেকেই তাদের সর্বোচ্চ কনফিডেন্স নিয়ে একের পর এক ভুল পথ দেখিয়েছেন কি না!
ক্লান্ত শরীরে পা যখন চলতে নারাজ, তখন কেবলই মনের জোরে এগিয়ে গেলাম ডানের মোড়ে পুরাতন সেই বাড়ির দিকে। নিচতলায় কড়া নাড়ার মিনিট পনেরও পর কেউ একজন দরজা খুললো। ভেতরের ঘুটঘুটে অন্ধকারে তার চেহারা দেখা মুশকিল। তবে ছায়া আকারে কেউ একজন তড়িঘড়ি করে ঘরের জিনিস এদিক সেদিন করে গুছিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন সেটা দেখতে না পারলেও বুঝতে পারছিলাম।
লাইট জ্বালানোর পর হাসি হাসি মুখের যে মানুষটিকে দেখতে পেলাম, তার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। মোবাইলে থাকা টানা চোখে সুরমা দেয়া ‘তার’ ছবিটার সাথে সামনের মানুষটার অনেক মিল থাকলেও কোথায় যেন একটা ‘কিন্তু’ রয়ে গেলো!
অন্ধকরা খুপড়ির একদিকে ভাঙ্গা সোফা, পাশেই একটা চৌকি, যেখানে ছেড়া একটি মশারি ঝুলে রয়েছে। অন্যদিকে একটা আলনা, যাতে দুটো শাড়ি আর একটি পেটিকোট রয়েছে। পাশ দিয়ে একে একে একটা তিন পায়ার টেবিল, যার অন্য পায়াটা টিকে আছে একটি খুটির উপর, তার পাশে একটি পানি ধরার কলস, আর দু-চারটা হাড়িপাতিল। জীর্ণ-শীর্ণ এই ঘরে ছেড়া একটি শাড়ি পরে কাচুমাচু করে দাঁড়িয়ে আছেন ভদ্রমহিলা। গায়ের হাড়গুলো যেন আংগুলের কড়ায় গোনা যাবে। তবুও হাসিটা যেন পুরো ঘর আলোকিত করে দিচ্ছে।
বলছিলাম ষাটের দশকের পর্দা কাঁপানো ‘চান্দা’, ‘তালাশ’, ‘কাচের দেয়াল’, ‘অরুণ বরুণ কিরণমালা’সহ বহু সফল সিনেমার চিত্রশিল্পী আমিরুন নেসা খানমের কথা। পরে চিত্রজগতে এসে যিনি পরিচিত হয়ে উঠে রানী সরকার হিসেবে।
শৈশবে রানী সরকার
সাতক্ষীরা জেলার কালীগঞ্জ থানার সোনাতলা গ্রামে বেড়ে ওঠেন রানী সরকার। ১৯৩২ সালে জন্ম নেয়া রানী মরহুম সোলেমান মোল্লা ও আছিয়া খাতুনের দ্বিতীয় সন্তান; ছোট থেকেই গানের প্রতি আসক্ত ছিলেন। সোনাতলার ইউপি স্কুল থেকে প্রাথমিক পাঠ্যক্রম শেষ করে খুলনা করোনেশন গার্লস স্কুল থেকে মেট্রিক পাস করেন।
স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়ার দরুণ নিজের সম্পর্কে অনেক কথাই বলতে পারেনি তিনি। কোথাও কোথাও আবার এক ঘটনাকে অন্য ঘটনায় নিয়ে গিয়ে কথা জড়িয়ে ফেলেছেন। নিজের জন্ম তারিখটাও বলতে পারছিলেন না।
দীর্ঘক্ষণ চুপ করে থেকে এক চিলতে হাসি নিয়ে হঠাৎ বললেন,
শুনো মেয়ে, তোমারে একটা মজার কথা বলি। যখন ছোট ছিলাম তখনকার কথা। আমার চেহারা-কাটিন কিন্তু মাশাল্লাহ সুন্দরই ছিল। আমাদের গ্রামে তখন ছোট-বড় সবাই আমার জন্য এককথায় পাগলই ছিলো বলা চলে। দিনে পাঁচ-ছয় জায়গা থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসতো। শুধু কি তাই! রাত-বিরাতে ঘরের চালে ঢিল মারতো। আমার বয়স তখন কেবল সাত কি আট কিংবা আরো কম। তখন আমার মুখে আমার মা পাতিলের কালি লাগায় দিতো। কালি মুখে আমি বের হতাম, কাজ করতাম।
কিন্তু মজার বিষয় হলো জীবনের শেষ সময়ে চলে এসেছি, অথচ বিয়ের সানাই আমার জীবনে কোনোদিনই বাজে নাই।
বলেই হাহা করে হেসে দিলেন তিনি।
কেন বিয়ে করে নিজের সংসার গোছাননি তিনি!
অনেকেই মনে করে থাকেন, চলচ্চিত্রে অভিনয়ে আত্মদান করার ব্রতে নিয়োজিত থাকার কারণে হয়তো এই বরেণ্য শিল্পীর কখনো বিয়ে করা হয়নি। কিন্তু এ বিষয়ে সঠিক উত্তর নিয়ে নিজেই মুখ খোলেন।
একসময় বিয়ের প্রস্তাব ফেরত পাঠাতে পাঠাতে ক্লান্ত হয়ে যেত আমার পরিবার। তখন খুব ছোট ছিলাম। কিন্তু যখন সত্যিকার অর্থে বিয়ের সময় হয় তখন আরো একটি বাস্তব সত্য সামনে এসে পড়েছিলো। আর তা হলো আমার মায়ের দেখাশোনা করা। আমার মা ছিলেন মানসিক প্রতিবন্ধী। মাত্র ২১ বছর বয়সে আব্বাকে হারানোর পর মাকে দেখার জন্য আমি ছাড়া আর কেউ ছিলো না। বড় ভাই নিজেও ছিল গুরুতর অসুস্থ। মায়ের সুখের জন্য আমি নিজের সুখ বিসর্জন দিয়েছিলাম।
বলে যাচ্ছিলেন তিনি,
কিন্তু তার সবথেকে ভালোবাসার মানুষটাও তাকে বেশিদিন সঙ্গ দিতে পারেনি। ১৯৯৩ সালে না ফেরার দেশে চলে যান মা আছিয়া। ততদিনে অসুস্থ বড় ভাই, ছোট ভাইসহ পুরো পরিবারের দায়িত্ব এসে পড়ায় বিয়ের কথা ভাবার আগেই যেন গায়ের চামড়া ঝুলে পড়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও বাবর রোডের বাড়িটি
সবাই এদিক সেদিক পালাচ্ছে। আমার সখি হাত টেনে ধরে বললো রানী চল, রানী চল। আমি তখন দেশ ছাড়িনি। মনে মনে ঠিক করেছিলাম যেখানে জন্ম নিয়েছি সেখানেই মরবো।
একাত্তরের যুদ্ধে সবাই যখন ভারতে পালাচ্ছিলো, তখন রানী থেকে যান দেশেই। শুধু তা-ই নয়, জীবনের বাজি নিয়ে নিজের ঘরে মুক্তিযোদ্ধাদের থাকতে দিতেন, পাহারা দিতেন তাদের।
মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা এবং গুণী শিল্পী হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কাছেও কদর ছিলো শিল্পী রানীর। যুদ্ধের পরপর বঙ্গবন্ধু বাবর রোডে ২০/৩ ঠিকানার একটি বাড়ি দেন রানীকে থাকার জন্য। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর অকাল প্রয়াণের পর সেই বাড়িটি ছিনিয়ে নেয়া হয় তার থেকে।
যুদ্ধের পরে শেখ সাহেব আমারে বাড়িটা দিছিলো থাকার জন্য। কিন্তু তিনি মারা যাওয়ার তিন মাসও যায়নি আমাকে কুকুর বেড়ালের মতো সে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। কারা করেছে আমি জানি না।
বাবর রোডের বাড়ি হারায় এদিক সেদিক ঘুরে ফিরে এখন এই দুই রুমের খুপড়িতে আমরা ছয়জন থাকি। সেটার ভাড়াটাও ঠিক করে দিতে পারি না। এই ছিল আমার তকদিরে। আমি এ দেশের শিল্পী। না আছে আমার নাম না আছে আমার সম্পদ।
বলেই চোখের জল মুছতে লাগেন তিনি।
সিনেমার পর্দায় চার দশক!
মূলত সংসারের হাল ধরতেই অভিনয়ে নাম লেখান রানী; যদিও বা ছোট থেকে অভিনয়ই ছিলো তার নেশা। ১৯৫৮ সালে খালাতো ভাই, সঙ্গীতশিল্পী শেখ মুহিতুল হকের হাত ধরে বঙ্গের বর্গী মঞ্চনাটকের মাধ্যমে অভিনয়ে তার অভিষেক ঘটে। মেজবা দাদু ও ননী দার যৌথ নির্দেশনায় ‘বঙ্গের বর্গী’ নামে এই নাটকে লুৎফা নামের একজন বালিকার চরিত্রে কাজ করেন তিনি। এই একই বছরে চলচ্চিত্রেও তার প্রথম অভিষেক হয় এ জে কারদারের পরিচালিত ‘দূর হ্যায় কা গাঁও’ সিনেমার মধ্য দিয়ে।
এরপর একে একে ১৯৬১ সালে চলচ্চিত্রকার এহতেশামের ‘নতুন সুর’ এবং ১৯৬২ সালে ‘চান্দা’তে অভিনয় করেন। চান্দাতে অভিনয় করার পর থেকেই পিতৃপ্রদত্ত নাম আমিরুন নেসার বদলে নতুন নাম রানী সরকার হয়ে উঠে সবার সুপরিচিত।
সিনেমায় রানী সরকার
স্মৃতি হাতরিয়ে সময়টা তখন ১৯৬২ এর শেষের দিকে। পুরান ঢাকার নামকরা সিনেমা হল ‘তাজমহল’ এ মুক্তি পেলো এহতেশামের ‘নতুন সুর’ ছবিটি। এ ছবি দিয়েই অভিনয়জগতে পা রাখেন নায়িকা শাবানা, রানী সরকার সেখানে মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেন।
মুক্তির পর ছবিটি দেখতে রানী সরকারকে সাথে নিয়েই হলে গেলেন শিল্পী দিলীপ বিশ্বাস আর সুমিতা দেবী। কীভাবে কীভাবে যেন হলে ছবি দেখতে আসা দর্শকরা টের পেলেন রানী সরকার হলে আছেন। ছবি শেষ হতে দেরি, রানী সরকারকে দেখা নিয়ে হলজুড়ে হৈ-হল্লা শুরু হয়ে যায়। হল মালিক পরিস্থিতি সামলাতে রানী সরকারকে দ্রুত হলের উপরে একটি ঘরে নিয়ে বসিয়ে রাখলেন। লোকজন কমার পরে নিজ গাড়িতে করে বাসায় পৌঁছে দেন।
ষাটের দশকে তখন উর্দু ছবি বানানোর বেশি চল ছিল, বাংলা ছবির শুরু হয়েছিলো কেবল। অভিনয়ের ক্ষেত্রে দুই ভাষাতেই সমান পারদর্শী ছিলেন রানী সরকার। তখনকার মোটামুটি সব ছবিতেই তাকে দেখা যেত। সবচেয়ে বেশি কাজ করেছেন তিনি জহির রায়হানের সঙ্গে।
‘নতুন সুর’ আর ‘চান্দা’তে অভিনয় করার পর থেকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি কালজয়ী এ শিল্পীর। ষাট আর সত্তরের দশকে প্রায় ২৫০টি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য চান্দা, তালাশ, বেহুলা, আনোয়ারা, অরুণ বরুণ কিরণ মালা, দস্যুরানী, সাইফুল মুলক, সিরাজ উদ দৌলা, মলুয়া, সখী তুমি কার, স্বামী স্ত্রী, চোখের জলে, রেশমি চুড়ি, নোলক, আয়না, মৎস্য কুমারী, পথে হলো দেখা, সেই তুফান, ভাওয়াল সন্ন্যাসী, মায়ার সংসার, সুতরাং, ভানুমতি, টাকার খেলা, কাঁচ কাটা হীরা, নাচঘর, বন্ধন, সঙ্গম, তিতাস একটি নদীর নাম, চন্দ্রনাথ, শুভদা, দেবদাস, কাচের দেয়াল, ঘর ভাঙ্গা ঘর, কে তুমি ইত্যাদি।
সারাজীবন নানা রকম চরিত্রে সফলতার সাথে অভিনয় করে দর্শকের মন কেড়েছেন তিনি। সর্বশেষ মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’ চলচ্চিত্রে তাকে শ্বাশুড়ির ভূমিকায় দেখা যায়। পড়ন্ত বয়সেও এই শিল্পী অভিনয় প্রতিভায় দর্শক সমালোচকের প্রশংসা অর্জন করেন।
যেভাবে কাটিয়েছেন শেষ সময়
২১ বছর বয়সে বাবাকে হারানোর পর মাকেও হারিয়েছেন অল্প সময়ের ব্যবধানে। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পরে বড় ভাই বেলায়েত হোসেনও চলে যান না ফেরার দেশে। সেই থেকে বড় ভাইয়ের স্ত্রী, দুই মেয়ে আর অসুস্থ ছোট ভাইকে নিয়ে ছয়জনের সংসার তার একার চালিয়ে নিতে হয়েছে। পুরো পরিবারকে টানার জন্য একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি রানী সরকার।
সত্তরের দশকে যেখানে এফডিসি থেকে মাত্র এক টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে বাড়ি যাওয়া যেতো, তখন রানী সরকার প্রতি চলচ্চিত্রে পারিশ্রমিক পেতেন দেড় হাজার টাকা। কিন্তু আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে চলচ্চিত্র বাজারে নেমে আসে মন্দাবস্থা। সেই মন্দাবস্থা কাটাতে পারেননি রানী সরকারও। পর্দা থেকে পিছিয়ে পড়ার সাথে সাথে হারিয়ে যান দর্শকদের মন থেকেও।
কাজ করেছেন চার দশকের মতো। তবুও তেমন কোনো সঞ্চয় করতে পারেনি বলে উল্লেখ করে বলেন,
তখন ভাবতাম দর্শকের বাহবাই সবকিছু। নেশা থেকে কজা করতাম; এমনকি যেদিন শ্যুটিং থাকতো না সেদিনও গিয়ে এফডিসিতে গিয়ে বসে থাকতাম। কাজের ক্ষেত্রে আমি কখনোই টাকা-পয়সা নিয়ে ভাবিনি। তাছাড়া আমরা সহশিল্পীরা কত টাকাই বা আর পেতাম? যা পেতাম তাতে খেয়ে-পরে যেতাম। এখন আর শিল্পীর কদর নেই। বাণিজ্যিক সিনেমা এসেছে; আর আমরাও বিতাড়িত হয়েছি। আজ না খেয়ে থাকি, চিকিৎসার অভাবে ভুগি। যেন শেষ বয়সটা দুঃখিনীর চরিত্রেই আটকে রয়েছে।
২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে অনুদান দেন ২০ লক্ষ টাকা। সেখান থেকে প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা পেতেন। সেখান থেকে দুই রুমের অন্ধকার খুপড়ির জন্যও মাসে ১৪ হাজার টাকা গুনতে হয় তাকে। তাছাড়া ছয়জনের ভরণপোষণ তো আছেই। বাদবাকি পাঁচ-ছয় হাজার টাকা দিয়ে ভাতিজিদের পড়াশোনা আর পরিবার চালানো দায় হয়ে যায়। চাল কিনলে ডাল কেনা যায় না। ভাত থাকলে তরকারি থাকে না। নুন দিয়ে ভাত খেয়েই কাটিয়ে দেন রাতের পর রাত।
পত্র-পত্রিকায় সংবাদ দেখে অর্থ সাহায্যের জন্যে অনেকেই ফোন দিতেন; সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ব্যাংক একাউন্ট নাম্বারও নিয়েছেন। অথচ রুপালী ব্যাংক মোহাম্মদপুর শাখার ৪৬০২ নং একাউন্টে রানী সরকারের নামে আজ পর্যন্ত কোনো টাকার লেনদেন হয়নি।
শেষ সময়ে এসে মনের কোণে থাকা অভিমান ও অভিযোগগুলো
আমাদের দেশে যে সময়টায় নারীরা সিনেমার পর্দায় অভিনয় দূরের কথা, ঘরের বাইরের বাতাসের সাথেও পরিচিত ছিলো না, সে সময়টায় পর্দা কাঁপিয়েছেন রানী সরকার। নারী জাগরণের বড় একটি অংশে তার অবদান অভাবনীয়। কিন্তু শেষ বয়সে তাকে খুবই দুর্বিষহ জীবন কাটাতে হয়। তার মধ্যে ভাতের কষ্টটা যে তাকে খুব করে ভুগিয়েছে তা বোঝা যায় তার কথার মধ্য দিয়ে।
‘কারো সাথে দেখা হলে খুব শখ করে ছবি তুলতে আসে। অনেকেই বাসায় এসে দেখা করতে আসে, কথা বলতে আসে। আমার মাঝেমধ্যে মনে হয় তাদের বলি, তোরা আমার জন্য আসার সময় অন্তত দুইটা বিস্কুট নিয়ে আসিস। কিন্তু বলতে পারি নাই কখনো। শেষ সময়ে আমাকে ভাতের কষ্টটাও করতে হবে সেটা বুঝি নাই।’
‘হে সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ দরকারে সিনেমার সবথেকে ছোট রোলটা আমাকে দে। নয়তো আমার নাম তোরা মুছে দিয়ে যা, একেবারে মুছে দিয়ে যা।’
‘আমি রানী সরকার। আমি একজন শিল্পী। চলচ্চিত্রে যেহেতু কাজ করেছি সকল মানুষ আমাকে চিনে। সেখানে পেট বাঁচাতে ভিক্ষার কথা ভাবতে পারবো না। আর আমি ভিক্ষা চাইছিও না; আমার অভিনয় দিয়ে বেঁচে থাকতে চাই। কাজ করে খাইতে চাই। ভিক্ষা কিংবা দয়া না করে কাজ দেন, কাজের বিনিময়ে টাকা দেন।‘
রাজাহীন রানীর যতো অর্জন
২০১৬ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের আজীবন সম্মাননা পান রানী সরকার। তাছাড়া বিভিন্ন সময় নানা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে পেয়েছেন সম্মানসূচক নানা পুরস্কার।
চিরপ্রস্থান
চলচ্চিত্রের এই উজ্জ্বল নক্ষত্রের আলো নিভে যায় গত বছরের ৭ জুলাই। ধানমন্ডির এক হাসপাতালে ভোর ৪টার দিকে বাতজ্বর ও পিত্তথলিতে পাথরসহ শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।