
“কার্পে ডিয়াম, শব্দটি শুনেছ আগে? কার্পে ডিয়াম, বর্তমানকে লুফে নাও। নিজেদের জীবনকে অসাধারণ করে তোলো”- ডেড পোয়েট’স সোসাইটি

ডেড পোয়েট’স সোসাইটি (১৯৮৯) চলচ্চিত্রের হাস্যোজ্জ্বল কিন্তু গম্ভীর, প্রাণবন্ত কিন্তু কিছুটা স্থবির প্রফেসর জন কিটিংয়ের বক্তব্য এটি। তার অভিনীত চরিত্রের মতোই রবিন উইলিয়ামস নিজেও বিশ্বাস করতেন, বর্তমানকে লুফে নিতে হবে। তার জীবন তিনি যথেষ্ট অসাধারণই করতে পেরেছিলেন কর্ম এবং মেধার জোরে। ৪ বছর আগের আজকের দিনে তিনি তার অসাধারণ জীবনের ইতি ঘটান, যার বেদনা আজও পৃথিবী বয়ে চলছে।
শৈশব
রবিন ম্যাকলরিন উইলিয়ামসের জন্ম ১৯৫১ সালে উত্তর শিকাগোতে। তার বাবা রবার্ট ফিটজেরাল্ড উইলিয়ামস ফোর্ড মোটর কোম্পানির নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন এবং মা লরি ম্যাকলারিন একজন মডেল ছিলেন। রবিন উইলিয়ামসের শৈশব বেশ স্বাচ্ছন্দ্যের ছিল। তার বাবা-মা দুজনেরই পূর্বের বিয়ে থেকে দুই ছেলে ছিল এবং রবিন ছিলেন তাদের একমাত্র সন্তান। জন্ম শিকাগোতে হলেও বাবার কাজের জন্য রবিন মিশিগানের ডেট্রয়েট এবং পরবর্তীতে সান ফ্রান্সিসকোতে পাড়ি জমান।

রবিন উইলিয়ামসের স্কুল-কলেজের জীবন ছিল বেশ অগোছালো। আট বছরের মধ্যে তিনি ছয়বার স্কুলবদল করেন। রবিন স্টেজে যতই প্রাণবন্ত হোন, পরিচিত মহল ও ব্যক্তিজীবনে ছিলেন লাজুক, নিশ্চুপ। কমেডি ক্লাবের স্টেজগুলোতে তার ‘পাগলপনা’ যারা দেখেছেন, তাদের এটি বিশ্বাস করতে কষ্টই হয়।
ডেট্রয়েট কাউন্টি স্কুলে পড়ার সময় তিনি স্কুলের ফুটবল দলে ছিলেন, ক্লাসে ক্যাপ্টেন ছিলেন, এমনকি কুস্তিগিরদের দলেও ছিলেন! কিন্তু সহপাঠীরা তার সম্পর্কে মন্তব্য করতেন, “রবিন খুবই লাজুক ও চুপচাপ ছিল। কিন্তু ও অনেক হাস্যকর ছিল”। হ্যাঁ, রবিন উইলিয়ামস মানুষকে হাসাতে ভালোবাসতেন। তার অন্য সব পরিচয় ছাপিয়ে সবাই তাকে মনে রাখতো একজন হাস্যকর মানুষ হিসেবে, যে সবুজ হাফ প্যান্ট আর সুইম ক্যাপ পরে স্কুলের ময়দানে অদ্ভুত ভঙ্গিতে হাঁটতো। এমন মানুষকে গম্ভীরভাবে নেয়া কঠিন বটে।
যার জীবনটাই অভিনয়
রবিন উইলিয়ামস অত্যন্ত সফল এক অভিনেতা হলেও তার আসল খ্যাতি ও পরিচয় গড়ে উঠে ১৯৬০ এর দশকে সান ফ্রান্সিসকো ও ক্যালিফোর্নিয়ার বিভিন্ন কমেডি ক্লাবে। তাকে বলা হয় সান ফ্রান্সিসকোর কমেডি রেনেসাঁর জনক! কিন্তু কী করে শুরু হলো তার কমেডির প্রতি ঝোঁক?
বলা হয়, বিশ্বের সব নামকরা কমেডিয়ানদের জীবনে একটি অন্ধকার অংশ থাকে। যারা কমেডি করে লোক হাসান তাদের মূল উদ্দেশ্য শুধু লোক হাসানো নয়, বরং হাসির আড়ালে নিজেদের দুঃখ ও অপূর্ণতাকে ঢাকার চেষ্টা করেন তারা। কিন্তু রবিন উইলিয়ামসের সম্পর্কে এমন ‘অন্ধকার তত্ত্ব’ শুনতে চাইলেন না ভক্তরা। তারা বিশ্বাস করলেন না তাদের প্রিয় এই অসাধারণ কমেডিয়ানের হাস্যরসের পিছনে অবর্ণনীয় বেদনা লুকনো আছে।
এবার কথা না ঘুরিয়ে সংক্ষেপে তার ‘বেদনা’র অংশটুকু বলা যাক। রবিন উইলিয়ামস তীব্রভাবে হতাশায় ভুগতেন। কিন্তু তার জীবন ও শৈশবে আপাতদৃষ্টিতে তেমন কোনো কমতি ছিল না। তার বাবা-মা যথেষ্টই বিত্তশালী ছিলেন। তারা মিশিগানের ব্লুমফিল্ডে ৩০ রুমের এক বিশাল বাড়িতে থাকতেন। কিন্তু অর্থ থাকলেও তাদের জীবনে প্রকৃতপক্ষে সুখের কমতি ছিল।
লাভ মি সিনড্রোম
রবিন যখন জন্মান, তার বাবার বয়স তখন ৪৬ বছর। তিনি তার কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন অনেক। অন্যদিকে মা মডেল হওয়ার পাশাপাশি সমাজসেবামূলক নানা কাজের সাথে জড়িত ছিলেন। রবিনকে দেখাশোনা করতেন একজন আয়া। তিনি এক সাক্ষাতকারে বলেন, “কমেডির ক্ষেত্রে প্রথম অনুপ্রেরণা আমি আমার মায়ের কাছে পেয়েছি”। লরি প্রায়ই অন্যদের হাসাতেন, মজা করতেন। রবিন ভাবলেন, মায়ের মনোযোগ পেতে হলে তাকে হাসাতে হবে। তাই ছোটবেলা থেকেই মায়ের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য সেই ছোট রবিন উঠে পড়ে লাগলেন। এভাবেই কমেডি জীবনে তার হাতেখড়ি।

অন্যদিকে রবিন তার শারীরিক গঠনের জন্য একটু অস্বস্তিতে ভুগতেন। খাটো এবং কিছুটা মোটা ছিলেন তিনি। স্কুলের পথে ছেলেরা প্রায়ই ঠাট্টা করতো তার সাথে। ভয়ে সেঁটে থাকতেন তিনি। তিনি বলেন, “ঐ ছেলেদের সাথে হাতাহাতিতে আমি কখনো পারতাম না জেনেই বুদ্ধি বের করলাম”, এখানেও সেই একই বুদ্ধি, “আমি ঠিক করলাম, তাদের হাসাবো। প্রতিদিন তারা আমার পথ আটকালে আমি তাদের কৌতুক বলতাম”।
অর্থাৎ, দেখা যাচ্ছে, অনেকটা আত্মরক্ষার কৌশল হিসেবেই বাধ্য হয়েই তিনি মানুষকে হাসানোর পথ খুঁজে নিয়েছিলেন। রবিন নিজেই স্বীকার করেন, ছোটবেলায় তিনি লাভ মি সিনড্রোমে ভুগতেন। এর অর্থ হলো, কারো (বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাবা-মা) ভালোবাসা পাওয়ার জন্য কেউ যখন নিজেকে অন্যের ইচ্ছানুযায়ী পরিবর্তন করতেও দ্বিধা করে না।
রবিনের বাবা-মা তাকে যথেষ্টই স্নেহ করতেন, কিন্তু সেই বিশাল বাড়িতে ৮-৯ বছরের বাচ্চার দিন কাটতো না। তাই সময় কাটানোর জন্য নিজেই তৈরি করে নিলেন নিজের কাল্পনিক কিছু বন্ধু। তার খেলনাগুলোকে কথা বলিয়ে, নিজেই অন্যদের চরিত্রে ‘অভিনয়’ করে অজান্তেই ভেতরের প্রতিভা ঝালাই করে নিলেন উইলিয়ামস।
“ছোটবেলায় আমার একমাত্র সঙ্গী, আমার একমাত্র বন্ধু ছিল আমার কল্পনা”
– রবিন উইলিয়ামস
সব জায়গাতেই বেমানান
স্কুল পাশ করে রবিন ১৯৬৯ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার ক্লেরমন্ট মেন’স কলেজে ভর্তি হলেন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে। তার মতো একজন মানুষের স্বভাবতই কাঠখোট্টা রাষ্ট্রবিজ্ঞান পছন্দ হলো না। হয় তিনি স্বেচ্ছায় কলেজ ছাড়লেন, নাহয় তাকে বের করে দেয়া হলো- এ ব্যাপারে এই দু’রকম কাহিনী প্রচলিত আছে। এরপর তার বাসা ক্যালিফোর্নিয়াতে ফিরে এসে কেন্টফিল্ডের কলেজ অব মেরিনে ভর্তি হলেন নাটক শিখতে। এখানে রবিন তার নিজের মতো চলার জায়গা যেন খুঁজে পেলেন। ৩ বছর তিনি মেরিন কলেজে মঞ্চনাটক করেছেন, নাট্যবিদ্যা শিখেছেন এবং ১৯৭৩ সালে বিশ্বের নামকরা শিল্পকলা শিক্ষালয় জুলিয়ার্ড স্কুলে পড়ার একটি পূর্ণ বৃত্তি অর্জন করেছেন।

অভিনয়, নাচ, গান ইত্যাদি প্রদর্শনমূলক শিল্পের আঁতুড়ঘর বলা হয় নিউ ইয়র্কের জুলিয়ার্ড স্কুলকে। এখানে তিনি জন হাউসম্যানের মতো কিছু অসাধারণ শিক্ষক খুঁজে পেলেন। কিন্তু জুলিয়ার্ডে একটু বেমানান ঠেকতেন রবিন। তিনি এর আগে হোলি সিটি জু, কমেডি স্টোর, দ্য বোর্ডিং হাউস ইত্যাদি বিভিন্ন জায়গায় মঞ্চে কমেডি করেছেন এবং এটি ভালোবাসতেন। তিনি যা-ই অভিনয় করতেন তাতেই কিছু হাস্যরস ঢোকানোর চেষ্টা করতেন। অন্যদিকে জুলিয়ার্ড অভিনয়শিল্পের ধ্রুপদী সব কায়দা মেনে চলতো। তাদের কাছে রবিন শুধুই একজন অসাধারণ সম্ভাবনাময় কমেডিয়ান ছিলেন বটে, ভালো অভিনেতা ছিলেন না।
কিন্তু জুলিয়ার্ড ও মেরিন কলেজের মঞ্চে তিনি না ভোলার মতো কিছু গম্ভীর অভিনয়ও করেছিলেন, যা তার সম্পর্কে থাকা ‘হাস্যকর কিন্তু গম্ভীর নয়’ ধারণাকে পাল্টে দিয়েছিল। এতদসত্ত্বেও তিনি জুলিয়ার্ডে টিকে থাকতে পারলেন না। তাকে বারবারই মনে করা হলো এমন একজন মানুষ, যিনি জুলিয়ার্ডের ধরনের সাথে যান না, কিন্তু আজ তিনিই জুলিয়ার্ডের অন্যতম বিখ্যাত একজন অ্যালামনাই এবং নিঃসন্দেহে বিশ্বের অন্যতম নামকরা অভিনেতা। জুলিয়ার্ড থেকে তাকে বিতাড়িত করা হয়েছিল নাকি তিনি স্বপ্রণোদিত হয়ে ছেড়েছেন তা নিয়েও দ্বিমত রয়েছে। পরবর্তীতে রবিন জুলিয়ার্ডে পড়তে চাওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য রবিন উইলিয়ামস স্কলারশিপ নামক বৃত্তিও প্রদান করেন।
হোয়েন দ্য লাফটার স্টপস
১৯৭০ এর দশকে কমেডিয়ানের খাতায় নাম ওঠানোর পর থেকে আর পেছনে তাকাতে হলো না রবিনকে। কমেডিকে মনে-প্রাণে জীবিকা ধরে নিলেও কয়েকটি অসফল চলচ্চিত্রে কাজ পান উইলিয়ামস। কাহিনীর জন্য চলচ্চিত্রগুলো নাম করতে পারেনি, কিন্তু রবিন ঠিকই সবার নজর কাড়তে পেরেছিলেন। এমনিভাবে ‘৭০ এর দশকের বিখ্যাত টিভি সিরিজ হ্যাপি ডেইজ এর একটি পর্বে ভিনগ্রহের এক প্রাণীর চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। ঐ একটি পর্বের মাধ্যমেই পুরো বিশ্ব রবিন উইলিয়ামসকে চিনে ফেলে। তার অসাধারণ অভিনয়ের জন্য পরিচালকরা মর্ক নামের ঐ এলিয়েনের জন্য একটি নিজস্ব টিভি সিরিজ তৈরি করেন মর্ক অ্যান্ড মিন্ডি ( ১৯৭৮-১৯৮২) নামে।

কিন্তু তার অসম্ভব সফল অভিনয় জীবনের ছায়ায় ক্রমেই ঢেকে যেতে থাকলো তার অন্ধকার অতীত। ছোটবেলা থেকেই লাজুক, নিশ্চুপ, একাকিত্বে ভোগা ছেলেটি পর্দার আড়ালে চলে গেল। কিন্তু সে থাকলো। ছোটবেলা থেকেই রবিন জেনেরালাইজড অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার (গ্যাড), অ্যাটেশন ডেফিসিট হাইপার একটিভিটি ডিসঅর্ডার (এডিএইচডি) ও ডিসলেক্সিয়াতে ভুগতেন।
গ্যাডের কারণেই উইলিয়ামস সবসময় নিশ্চুপ এবং গম্ভীর থাকতেন। একা থাকতে তিনি ভয় পেতেন। অন্যদিকে এডিএইচডি ডিসঅর্ডারই ব্যাখ্যা করে কেন তিনি স্টেজে উড়নচণ্ডী আচরণ করতেন। দর্শকরা প্রায়ই বলতেন, রবিনের একটা কথা বুঝতে বুঝতেই তিনি আরও আট-দশটি বলে ফেলতেন। ১০ মিনিটেরও কম সময়ে তিনি শেক্সপিয়রের পুরো একটি নাটক মুখস্ত বলে দিতেন। এসব অবশ্যই তার অসামান্য মেধার পরিচয়, কিন্তু এডিএইচডির রোগীরা সবাই এই ধরনের অস্থির আচরণ করেন। অন্যদিকে ডিসলেক্সিয়ার কারণে তিনি পড়ালেখাতেও মনোযোগ দিতে পারতেন না।
শুধু লোক হাসানো দিয়ে তার এতসব সমস্যা দূর হচ্ছিলো না। তাই অন্যদের মতো তিনিও বেছে নিলেন মাদকাসক্তির পথ। ১৯৬০-৭০ এর দশকে অভিনেতাদের মদ্যপান স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু রবিন মদ থেকে শুরু করে কোকেনও নিতে শুরু করেন। তবে তিনি কখনো মাতাল হয়ে স্টেজে পারফর্ম করেননি। অনুষ্ঠানের শেষে যখন তিনি নিভৃতে চলে যেতেন, তখনই এসব নেশায় ডুবে যেতেন।
১৯৮৩ সালে তার প্রথম সন্তান জ্যাকারির জন্ম হলে ২০ বছর পর্যন্ত তিনি এসব থেকে দূরে ছিলেন। কিন্তু ২০০৩ সালে আবারো তিনি মাদক গ্রহণ শুরু করেন। মাদকের জন্য তার হৃদরোগের সমস্যা হয়েছিল, কিন্তু তা তিনি কখনো নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে দেননি। জীবনের শেষ সময়েও কিছুকাল তিনি মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রে ছিলেন।
হতাশা কি আসলেই হেলাফেলার ব্যাপার?
২০১৪ সালের ১১ আগস্ট সকালে, মাত্র ৬৩ বছর বয়সে, ক্যালিফোর্নিয়ায় নিজ বাড়িতে এই প্রতিভাধর অভিনেতা আত্মহত্যা করেন। পুরো পৃথিবী এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় স্তব্ধ হয়ে যায়। যে মানুষটি তার চতুর্দিকে হাসি বিকিরণ করতেন, তিনিই স্বেচ্ছামৃত্যু গ্রহণ করলেন- এই ব্যাপারটি কেউই মেনে নিতে পারলো না। কিন্তু উইলিয়ামসের আত্মহত্যা জনমনে হতাশা সম্পর্কে একেবারে নতুন ধারণার জন্ম দিল।
সবাই হতাশার ব্যাপারে সচেতন হলো। রবিন উইলিয়ামসের অভিনয় জীবন ছিল বর্ণাঢ্য ও অত্যন্ত সফল- এটি সবাই জানে। কিন্তু আজ তার ৪র্থ প্রয়াণ দিবসে আমাদের কাছে তার ব্যাক্তিগত জীবনই মুখ্য। কেননা কমেডিয়ান ও অভিনেতা রবিন উইলিয়ামসকে সবাই চিনলেও, হাতেগোনা কয়েকজনই কেবল সত্যিকার অর্থে চিনতেন আসল রবিনকে।

তার মৃত্যুর পর ‘রবিন উইলিয়ামস-হোয়েন দ্য লাফটার স্টপস ১৯৫১-২০১৪’নামক একটি বইয়ে লেখক এমিলি হারবার্ট মৃত্যুর পর তার পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে লেখেন। সেখানেই এক সাক্ষাতকারে উইলিয়ামসের স্ত্রী সুসান স্নেইডার বলেন, মৃত্যুর কয়েকমাস আগে রবিনের পারকিনসন্স ডিজিজ ও লিউই বডি ডিমেনশিয়া ধরা পড়ে, যা তিনি তখনই গণমাধ্যমে জানাতে চাননি। এই রোগে শুরুতে হাঁটাচলায় সমস্যা দেখা দেয়, এবং তা পরবর্তীতে মানসিক অবস্থা ও আচরণে পরিবর্তন আনে। আলঝেইমারস রোগের মতোই এখানে ব্যক্তি তার মানসিক দৃঢ়তা হারিয়ে ফেলে, তার শরীরের নিয়ন্ত্রণও ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলে। এছাড়া উদ্বেগ, হতাশা, হ্যালুসিনেশন তো আছেই। সুসানের মতে, নিজের ক্ষয়ে যাওয়া শরীরের জন্যই রবিন আত্মহত্যা করেন, শুধু হতাশা তাকে হত্যা করেনি।
কিন্তু ভক্তরা ভালো করেই জানেন, রবিন তার পুরো জীবনে হতাশার সঙ্গে লড়াই করেছেন। কমেডি বা অভিনয়ের জন্য তার প্রকৃতিগত প্রতিভা থাকলেও আত্মরক্ষার জন্য না হলে তিনি তা কখনো ব্যবহার করতেন না। পৃথিবী রবিন উইলিয়ামসকে পেত না। যে হতাশা তাকে পৃথিবীর অন্যতম শিল্পী বানিয়েছে, সে হতাশাই তাকে সবার থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে।
আজ তার ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকীতে আমরা রবিন উইলিয়ামসকে সম্মান জানাতে পারি হতাশা বা ডিপ্রেশন নিয়ে আরেকবার ভেবে। যদি আপনি ডিপ্রেশনে ভুগে থাকেন, তাহলে কথা বলুন, মানুষকে জানান। তেমনই আপনার কাছের কেউ হতাশায় ভুগছে কি না তা-ও নিশ্চিত করুন। এটি একটি গুপ্ত ঘাতক, যা সফল-অসফল সবাইকে গ্রাস করে।
মনে রাখবেন, রবিন বলেছিলেন, “মানুষকে হাসানো একটি মুক্তি, অন্ততপক্ষে এটি থেরাপির চেয়ে সস্তা”।
তথ্যসূত্র-
Robin Wiliams-When the Laughter Stops (1951-2014), Emily Herbert
Featured Image: uncut.co.uk