Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মহাকবি গ্যোটে: এক কিংবদন্তি প্রেমিক পুরুষ

একজন রাজনীতিবিদের প্রসঙ্গ দিয়েই শুরু করা যাক। তিনি ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্ট। ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে যিনি নিজেকে ফ্রান্সের সম্রাট ঘোষণা করেন। তারপর একের পর এক রাজ্য জয় করতে থাকলেন। সমগ্র ইউরোপ তার দখলে চলে আসলো।

তখনকার ইউরোপ ছিল বর্তমান ইউরোপ থেকেও অনেক বড়। জার্মানীও তার অধীনে। তখন জার্মানী ছিল অনেকগুলো ছোট ছোট রাজ্যে বিভক্ত, সবগুলো রাজ্য মিলিয়ে গঠিত ছিল ‘পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য’। রোমান সাম্রাজ্যের অন্যতম শহর জার্মানের ইরফুর্ট। একবার ইরফুর্টে রোমান সাম্রাজ্যের সকল রাজা ও শীর্ষ স্থানীয় কর্মকর্তাদের সম্মেলন ডাকলেন নেপোলিয়ন। যথাসময়ে সম্মেলনে সবাই এসে হাজির- রাজা, রাজকুমার কিংবা রাশিয়ান জার; সবাই যার যার আসন গ্রহণ করে বসেছে। হঠাৎ সম্রাটের মনে হলো- সবাই তো আসলো, কিন্তু কী যেন নেই নেই ভাব!

হ্যাঁ, নেপোলিয়নের অনুমান ঠিকই। অনুষ্ঠানে সবাই আসলেও এই শহরে বসবাসরত এক মহামানব অনুষ্ঠানের দাওয়াত পাননি। নেপোলিয়ন সাথে সাথে তাকে ডেকে আনার জন্য লোক পাঠালেন। কোনো প্রোটোকল নয়, তাকে সরাসরি নিয়ে যাওয়া হলো সম্রাটের অন্দরমহলে। সম্রাট তাকে দেখে আনন্দ ও আবেগে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং ফরাসি ভাসায় বলে উঠলেন, “ভুজেত আঁনম!” যার বাংলা ভাবানুবাদ, “হে মহামানব, আপনি তাহলে মানুষ!” 

নেপোলিয়নের এই কথার দুটি অর্থ হতে পারে। প্রথমত, মানুষ না হয়ে ফেরেশতা হলে তো আপনার সাথে আমার দেখা হওয়ার কথা নয়! অথবা এত বড় লেখক আবার মানুষ হয় কী করে! সেই মহামানব আর কেউ নন; তিনি হলেন মহাকবি ইয়োহান ভোলফগাং ফন গ্যোটে। দুই মহান মানুষের এই সাক্ষাৎকারের সময়টি ছিল ১৮০৮ সালের অক্টোবর মাস। আজকে আমরা সেই মহান লেখক ইয়োহান ভোলফগাং ফন গ্যোটের জীবন নিয়ে খানিকটা আলোচনা করবো। 

মহাকবি ইয়োহান ভোলফগাং ফন গ্যোটের সাথে কথা বলছেন ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্ট; Image Source: shannonselin.com

ইরফুর্ট থেকে আমরা এখন জার্মানির আরেক শহর ফ্রাঙ্কফুর্টের দিকে নজর দেবো, কেননা এই ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরেই মহাকবি গ্যোটের জন্ম। ১৭৪৯ সালের ২৮ আগস্ট দুপুরবেলা তার জন্ম; বাবা ইয়োহান ক্যাস্পার গ্যোটে এবং মা এলিজাবেথ ক্যাথারিন। তাহলে কি গ্যোটের নাম তার বাবার নামের সাথে মিলিয়ে রাখা হলো? বিষয়টি আসলে তেমন নয়। গ্যোটের নাম রাখা হয় তার নানার নামানুসারে। নানার নাম ছিল ইয়োহান ভোলফগাং, আর ‘গ্যোটে’ হলো বংশের উপাধি। মাঝখানে ফরাসি শব্দ ‘ফন’ ইংরেজি ভাষার সাহায্যকারী ক্রিয়া ‘অফ’-এর মতো অর্থ দেয়। অর্থাৎ গ্যোটের নাম বিশ্লেষণ করলে অর্থ দাঁড়ায় ‘গ্যোটে বংশের ইয়োহান ভোলফগাং’। 

১৮২৮ সালে তোলা এক ছবিতে মহাকবি ইয়োহান ভোলফগাং ফন গ্যোটে; Image Source : wikimedia.org

গ্যোটের নানা ইয়োহান ভোলফগাং ছিলেন এক বিশাল হোমরাচোমরা ধরনের লোক; কিছুটা ধূর্তও বটে। প্রাথমিক জীবনে ছিলেন সহায়-সম্বলহীন; একপর্যায়ে বুঝলেন রাজনীতি করলে দ্রুত উন্নতি করা যাবে। যেমন চিন্তা তেমন কাজ। রাজনীতিতে ধূর্ততা করলে তাকে কে ঠেকাতে পারে? গ্যোটের নানাকেও ঠেকাতে পারলো না কেউ। অল্প দিনে তিনি নিজের অর্থনৈতিক উন্নতি করে ফেললেন। সাংসারিক জীবনে চার মেয়ের জন্ম দিলেন। কিন্তু তিনি মেয়েদের তেমন কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ব্যবস্থা করলেন না। 

এলিজাবেথ ক্যাথারিন; Image Source: wikimedia.org

অন্যদিকে গ্যোটের দাদার নাম ছিল ফ্রেডরিশ গেওর্গ। তিনি ছিলেন একজন সাধারণ দর্জি। তা-ও ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরের বাসিন্দা নয়। প্রত্যন্ত অঞ্চল টুরিংগিয়া থেকে ফ্রাঙ্কফুর্টে এসেছিলেন দর্জির কাজ করার জন্য। কিন্তু একপর্যায়ে তার কপাল খুলে গেল। বেশিদিন দর্জির কাজ করতে হলো না। টাকা জমিয়ে একটি সরাইখানা গড়লেন। মদের ব্যাবসায় ভাগ্য পাল্টে গেলো। দ্রুত সম্পদশালী হয়ে উঠলেন। এমনকি ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরে বিলাসবহুল বাড়িও গড়ে তুললেন। গ্যোটের দাদা ফ্রেডরিশ গেওর্গ সম্পদশালী হয়ে উঠলেও নানা ইয়োহান ভোলফগাং এর মতো সন্তানদের লেখাপড়ার ব্যাপারে উদাসীন ছিলেন না। সন্তানদের পড়ালেখায় তার অর্থ খরচে কোনো আপত্তি ছিলো না। তাই ছেলে ইয়োহান ক্যাস্পারকে ভর্তি করালেন লিপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে। 

ইয়োহান ক্যাস্পার গ্যোটে; Image Source : wikimedia.org

আইন শিক্ষা সফলতার সাথে শেষ করতে পারলেও আইন ব্যবসায় ব্যর্থ হন গ্যোটের বাবা ইয়োহান ক্যাস্পার। ব্যবসাতেও তেমন সাফল্য অর্জন করতে পারেননি। কিন্তু একটি গুণ তার ছিল, তা হলো সততা ও নম্রতা।

নিজে যেমনই হোন, সন্তানের ভালো কে না চায়? সম্ভবত সেটাই ভাবলেন গ্যোটের নানা ইয়োহান ভোলফগাং। এজন্যই নিজের বড় মেয়ে এলিজাবেথ ক্যাথরিনকে অর্থবিত্ত কম অথচ নম্র, ভদ্র ও সচ্চরিত্রবান ইয়োহান ক্যাস্পারের সাথে বিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন। বিয়ে হলো ধূমধামে।

পারিবারিক জীবনেও তারা খুব বেশি সচ্ছল ছিলেন না। মনের ঐক্যও ছিল কম। তবে একটি ইতিবাচক দিক ছিল তাদের ইয়োহান ক্যাস্পারের প্রচুর বই পড়ার নেশা ছিল আগে থেকেই। অভাবের মধ্যেও লাইব্রেরি গড়ে তুলেছিলেন নিজ গৃহে। সেখানে আরেকজন তুখোড় পাঠক জুটে গেলো। সারা জীবন পড়ালেখা থেকে বঞ্চিত হওয়া এলিজাবেথ ক্যাথরিন বইয়ের নেশায় ডুব দিলেন। একপর্যায়ে ক্যাথরিন জ্ঞানের জগতের উজ্জ্বল তারকায় পরিণত হলেন। এরপর ছবি আঁকা শিখলেন। সেখানেও তার ছিল অসাধারণ সাফল্য। বাবা-মায়ের এই বইয়ের নেশাই কি ভর করেছিল মহাকবি গ্যোটের উপর? বিশেষত, তার মায়ের জ্ঞান অর্জনের লড়াই ও সৃজনশীলতা?

জার্মানির লিপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে আইন বিষয়ে পড়ালেখা করেন গ্যোটে; Image Source: wikimedia.org

ইয়োহান ক্যাস্পার আইন ব্যবসায় ব্যর্থ হলেও তার ইচ্ছা ছিল সন্তান গ্যোটে তার সেই অভাব পূরণ করবেন। বড় আইনজীবী হবেন। সেজন্য সন্তানকেও লিপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি করলেন। সেই সূত্রে গ্যোটের ফ্রাঙ্কফুর্ট জীবনের অবসান ঘটলো। তখন তার বয়স মাত্র ১৫ বছর। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শুরুর আগেই, অর্থাৎ ফ্রাঙ্কফুর্টে থাকাকালীন সময়ে বাবার লাইব্রেরির বই পড়ে গ্যোটে জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় বুৎপত্তি অর্জন করেন। মাত্র ১৪ বছর বয়সে ছয়টি ভাষা; জার্মান, হিব্রু, ল্যাটিন, ইতালী, ফরাসি ও ইংরেজি রপ্ত করেন। শুধু তা-ই নয়, ছবি আঁকা, নৃত্য কৌশল, অসি চালনা ও কবিতার ব্যাকরণসহ নানা বিষয়ে এই অল্প বয়সেই তিনি পারদর্শী হয়ে ওঠেন। ঠিক যেন সৈয়দ মুজতবা আলীর সেই ‘ইন হরফন মৌলা’ বা সকল কাজের কাজি।

জার্মান চিত্রশিল্পী জোহান হেনরিচ উইলহেম টিশেবিনের তূলিতে আঁকা মহাকবি গ্যোটে; Image Source : wikimedia.org

কিন্তু গ্যোটের আইন পড়তে ভালো লাগে না। ভালো লাগে সাহিত্য পড়তে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা বাদ দিয়ে সাহিত্যের জগতে ডুবে থাকেন। বিষয়টি আর গোপন থাকলো না, শিক্ষকরাও টের পেয়ে গেলেন। শিক্ষকদের বারবার সতর্কতার মুখে গ্যোটের আইন পড়া চলছিল বটে, কিন্তু নিজে ডুবে গেলেন সাহিত্যের মহাসমুদ্রে। 

সাহিত্য সাধনা করতে গিয়ে তিনি সন্ধান পেলেন বিশিষ্ট সাহিত্য গবেষক ও ইতিহাসবেত্তা হেবেংকেলমানের। গ্যোটে তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করলেন। তার কাছ থেকে সাহিত্যের নানা দিক শিখতে লাগলেন। ইংরেজি ও ফরাসি সাহিত্য অধ্যয়ন করতে থাকলেন। এমন সময় জার্মানিতে বিখ্যাত একটি নাট্যগ্রন্থ প্রকাশিত হলো, নাম ‘লাওকোন’; লেখক গোটহোল্ড ইফ্রেইম লেসিং।

বইটি গ্যোটের হস্তগত হওয়ার পর নিমিষেই পড়ে ফেললেন। তিনি লেখকের প্রেমে পড়ে গেলেন। সিদ্ধান্ত নিলেন, যে করেই হোক এই লেখককে খুঁজে বের করে তার সহচর্য নিতে হবে। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন, গোটহোল্ড ইফ্রেইম লেসিং ড্রেসডেন শহরে বসবাস করেন।গ্যোটে লিপজিগ ছেড়ে ড্রেসডেনে চলে গেলেন। সেখানে গিয়ে প্রথমে এক মুচির ঘরে আশ্রয় নিয়ে শহরের আনাচে কানাচে শিল্প-সাহিত্য ও লেখকদের খুঁজে বেড়াতে লাগলেন। গোটহোল্ড ইফ্রেইমের সাথেও সাক্ষাৎ ঘটে গেল। পাশাপাশি আরও অনেক সাহিত্যিকের সাথে সেখানে তিনি পরিচিত হওয়ার সুযোগ পান।

গ্যোটের অন্যতম প্রেমিকা আনা ক্যাথারিনা শোনোকোপফ; Image Source : wikimedia.org

একপর্যায়ে গ্যোটে আবার লিপজিগে তথা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসলেন। তবে এখন তার মাথায় একটি শিল্পবোধ জন্ম নিয়েছে। তিনি চারদিকে তাকিয়ে দেখলেন, সবাই সুন্দর সুন্দর পোশাক পরেন, অথচ তার পোশাক অনেক মলিন। সাথে সাথে তিনি দর্জিখানায় গিয়ে একটি ফিটফাট পোশাক তৈরি করে নিলেন। তারপর থেকে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে রুচিশীল ছেলে হিসেবে গণ্য হলেন।

আইনের ছাত্রের যখন কবি কবি ভাব, তখন তো কত প্রেমিকাই জুটে যাওয়ার কথা! কত প্রেমিকা যে গ্যোটের জীবনে এসেছে তার হিসেব খোদ তার জীবনীকাররাও সঠিকভাবে বের করতে পারেননি।

গ্যোটের আরেক প্রেমিকা আলরাইক ভন লেভেটজোম, যার সাথে বিয়ের কথা পর্যন্ত পাকাপাকি হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু লেভেটজোমের মায়ের বাধায় সেই বিয়ে শেষপর্যন্ত হয়নি; Image Source : wikimedia.org

যা-ই হোক, গ্যোটের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রেম আসলো। প্রেমিকা তার চেয়ে বয়সে বেশ বড়। নাম আনা ক্যাথারিনা শোনোকোপফ।গ্যোটে তার প্রেমে রীতিমত হাবুডুবু খেতে লাগলেন। এ যেন কাব্যের মোক্ষম উপাদান! শত শত কবিতা আর চিঠি লিখতে থাকলেন আনা ক্যাথারিনাকে নিয়ে। ধীরে ধীরে সেই প্রেমকাহিনী এক মহাকাব্যে পরিণত হলো। গ্যোটের অমর সৃষ্টি ‘ফাউস্ট’ কাব্যগ্রন্থটির প্রধান উপজীব্য তাদের এই প্রেমকাহিনী। কিন্তু ফাউস্ট প্রকাশের পর বেশি দিন আর তাদের প্রেম টিকলো না। বিয়ের আলোচনা তো কখনো আসেইনি। গ্যোটে নতুন নতুন প্রেমিকা অভিমুখে যাত্রা শুরু করতে লাগলেন। সেই সাথে সাহিত্য তো আবিষ্কার হচ্ছেই!

গ্যোটের আইনের পড়ালেখা সাফল্যের সাথে শেষ হলো। ১৯৬৬-৬৭ সালের দিকে তিনি প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়লেন। ফলে তিনি লিপজিগ ত্যাগ করে ফের বাবা-মায়ের কাছে ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরে চলে গেলেন। সুস্থ হওয়ার পর তিনি ফ্রাঙ্কফুর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেন উচ্চতর শিক্ষার জন্য। এখানে আরও বছর দেড়েক পড়ালেখা করলেন। এই ফাঁকে আইন ব্যবসার জন্য আদালতের অনুমতিও পেয়ে গেলেন। কিন্তু আইন ব্যবসা তার আর তেমন করা হয়নি। উল্টো এ সময়ে তিনি বিজ্ঞানের দিকে ঝুঁকে পড়লেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান নিয়ে পড়া বন্ধুবান্ধবদের সাথে যোগাযোগ বাড়িয়ে দিলেন। তাদের সাথে চুপিচুপি ক্লাসও করতে থাকলেন।

শার্লট ভন স্টেইনও মহাকবি গ্যোটের প্রেমে পড়েছিলেন, যিনি কবির চেয়ে বয়সে বড় ও বিবাহিত ছিলেন; Image Source: alamy.com

পরিস্থিতি দেখে গ্যোটের বাবা বুঝতে পারলেন, ছেলে এখানে থাকলে তাকে দিয়ে আর আইন ব্যবসা হবে না। তাই তিনি পরামর্শ দিলেন উইটর্জলার শহরে গিয়ে আইন ব্যবসা শুরু করতে। বাবার আদেশ বলে কথা। মানসিকভাবে রাজি না হলেও বাবার আদেশ মেনে উইটর্জলার শহরে গিয়ে আইন ব্যবসা শুরু করলেন গ্যোটে।

সেখানে এক বৃদ্ধের সাথে তার পরিচয় ঘটলো, নাম আমটমান বুফ। স্ত্রী মারা যাওয়ায় বৃদ্ধের দুঃখের জীবন চলে যাচ্ছে প্রায় এক ডজন ছেলেমেয়ে নিয়ে। এর মধ্যে বড় মেয়ের নাম চার্লট লোটে বফ। বৃদ্ধের কাছে আসা যাওয়ার ফাঁকে প্রেমিক পুরুষ গ্যোটের প্রেমে পড়ে গেলেন লোটে। কিন্তু এ এক জটিল প্রেম। কারণ, ইতিমধ্যেই লোটের বিয়ে ঠিক হয়ে আছে আরেক ছেলের সাথে। সেই ছেলেটির নাম কেশটন।গ্যোটের প্রেম শেষপর্যন্ত তাদের বিয়ে ঠেকাতে পারল না। প্রেমের মাস ছয়েক পরে সেই কেশটনের সাথেই লোটের বিয়ে হয়ে গেল। তবে আজীবন গ্যোটের সাথে যোগাযোগ ছিল তার। দেখা করতেন, একসাথে ঘুরতেন, চিঠি আদান-প্রদান করতেন। কেশটন বিষয়টিকে একভাবে মেনে নিয়েছিলেন আর কী! 

গ্যোটের আরেক প্রেমিকা চার্লট লোটে বফ; Image Source: ub.uni-bielefeld.de

কিন্তু কথায় আছে, কবিদের প্রেমিকা আসলেও কবির ভালো, আবার চলে গেলেও কবির ভালো! কারণ উভয় অবস্থাতেই কবির কবিতা আসে। গ্যোটে তো একজন কবি। তাই প্রেমিকা লোটেকে মনের মতো করে না পেলেও তিনি তার লেখার উপাদান পেয়েছিলেন ঠিকই। সেই দুঃখবোধ নিয়ে ১৭৭৪ সালে রচনা করলেন তার বিখ্যাত উপন্যাস ‘দি সরও অফ ইয়াং ওয়ার্থার’ বা ‘যুবক ওয়ার্থারের কষ্ট’। 

এরপরও গ্যোটের জীবনে বহু প্রেম এসেছে, পাশাপাশি সাহিত্য সাধনাও অব্যাহত ছিল। তার সুখ্যাতি ইতিমধ্যেই বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছিল। ১৭৭৪ সালের শেষের দিকে একটি ভিন্ন ঘটনা ঘটলো। তার কাছে উইম্বার রাজদরবারের এক প্রতিনিধি আসলো। সাথে দুই রাজকুমারও আছেন। তারা সবাই মিলে গ্যোটেকে তাদের রাজদরবারে নিমন্ত্রণ জানালো। দরবারে গেলে প্রথমে তাকে সাহিত্যিক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হলো। তারপর তার উপরে আসলো মন্ত্রিত্বের ভার। তিনি যথাক্রমে কৃষি, খনিজ সম্পদ, অর্থ ও সামরিক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। এ সময়ে ফের তিনি বিজ্ঞান চর্চায় মনোযোগী হন। ব্যস্ততা বহুগুণে বেড়ে যায়। তবুও সাহিত্যচর্চা অব্যাহত রাখেন তিনি।

গ্যোটের অন্যতম প্রেমিকা ও একমাত্র স্ত্রী ক্রিস্টিনা ভলপিয়াস; Image Source: e-pic.info

গ্যোটের জীবনের বহু প্রেমের মাঝে একটি প্রেম অবশেষে বিশেষ হয়ে উঠলো। ক্রিস্টিনা ভলপিয়াস নামের এক নারীর সাথে তার দীর্ঘদিনের প্রেম ছিল। তার সাথে বিয়ে হলো। সংসারও টিকে ছিল তার সাথে। কিন্তু যখন বিয়ে হলো, তখন তাদের প্রথম সন্তানের বয়স ১৭ বছর। আর প্রেমের বয়স ২০ বছর। গ্যোটের বয়স ৫৭ বছর। গ্যোটে মোট ৫ সন্তানের জনক হয়েছিলেন। কিন্তু সকল সন্তানই তার জীবদ্দশায় মারা যান, স্ত্রী-ও তার জীবদ্দশায় মারা যান। এমন শোকার্ত গ্যোটে ১৮৩২ সালের মার্চে হঠাৎ ঠান্ডা লেগে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন। এর কয়েকদিন পর, ২২ মার্চ, তিনি পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। তার কফিন রাখা হয় উইম্বার রাজদরবারের সংরক্ষিত স্থানে। আজও তা জার্মানিতে সংরক্ষিত আছে।

মহাকবি গ্যোটের সংরক্ষিত কফিন (বাম পাশে); Image Source : wikimedia.org

ফিচার ইমেজ- dw.com

Related Articles