নিউ মেক্সিকোর ধুলো ওড়া প্রান্তরে দাবড়ে বেড়াচ্ছে বেশ কয়েকটা বুনো ঘোড়া। লিংকন সিটির জেল হাউজের ভিতর থেকে সেদিকেই অন্যমনস্কভাবে তাকিয়ে আছে বিলি দ্য কিড। আর মাত্র পনেরটা দিন, তারপরেই ফাঁসির দড়িতে ঝুলে পড়তে হবে! জাজ ব্রিস্টল দিনখানাটাও ঠিক করেছে ভাল মতো, একেবারে মে মাসের ১৩ তারিখ, দিনটাও শুক্রবার! নাহ, আর দেরি করাটা ঠিক হবে না, হাত থেকে এই বিচ্ছিরি হ্যান্ডকাফটা খুলতে হবে। অনেক কষ্টে কোনোমতে হ্যান্ডকাফটা খুলে ফেলল কিড, ছড়ে গিয়ে ব্যথায় টনটন করছে জায়গাটা। কোনো ব্যাপার না, একবার বের হতে পারলেই আর কোনো চিন্তা থাকবে না।
কিডের চিৎকার শুনে বিরক্তি নিয়ে বিড়ি ফুঁকতে ফুঁকতে হাজির হলো জেলখানার গার্ড বেল। কাছে আসতেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল সে। কিডের হাত থেকে ভেল্কির মতো খুলে গেল হ্যান্ডকাফটা, সশব্দে আঘাত করল জেলহাউজের কাঠের মেঝেতে। তবে তার আগেই কিড ক্ষিপ্র হাতে বেলের হোলস্টার থেকে পিস্তল কেড়ে নিয়েছে, নিজের পিস্তলের বুলেটের আঘাতেই মুখ থুবড়ে পড়তে হলো লিংকন কাউন্টি জেলহাউজ গার্ডকে।
গুলির শব্দ শুনে রাস্তা পার হয়ে জেল হাউজের দিকে দৌড়ে আসতেই পতন হলো দ্বিতীয় গার্ড ওলিঙ্গারের, জেল হাউজে রাখা ডাবল ব্যারেল শটগানের দুটো গুলিই বিদীর্ণ করে দিয়েছে তার বুক। তারপর কুড়ালের আঘাতে ছিটকে গেল দ্য কিডের ক্ষিপ্র জোড়া পাকে আটকে রাখা শিকলও। বিশ্বাসঘাতকদের শহর থেকে যত দূরে যাওয়া যায় ততই মঙ্গলকর, লিংকন কাউন্টির জেল হাউজের বার্নে রাখা ঘোড়াটা নিয়ে শেষবারের মতো বেরিয়ে গেল পশ্চিম আমেরিকার মোস্ট ওয়ান্টেড ব্যক্তিটি।
বিলি দ্য কিড।, ওয়েস্টার্ন গল্প পড়েছেন কিংবা সিনেমা দেখেছেন অথচ এই নামটি শোনেননি এরকম কাউকে মনে হয় না খুঁজে পাওয়া যাবে। বেশিরভাগ ওয়েস্টার্ন উপন্যাসের নায়কেরই আসল গুণ অসম্ভব ক্ষিপ্রগতির ড্র, অন্তত বুনো পশ্চিমে এই গুণ ছাড়া টিকে থাকার কথাও না। আর তাদের ড্রয়ের গতির তুলনা করতে গেলেই চলে আসবে বিলি দ্য কিডের নাম!
কিডের চেয়ে বেশি হওয়া দূরে থাক, উপন্যাসের নায়ককে কিডের সমকক্ষ বানাতেও ভয় পান লেখকেরা। কারণ ২১ বছর বয়সী বাস্তবের বিলি দ্য কিডকে মারতে অ্যামবুশ করেও দুইবার বুলেট ছুঁড়তে হয়েছিল শেরিফ প্যাট গ্যারেটকে! তো বিলি দ্য কিডের গালগল্প, গুজব আর জনশ্রুতিকে একপাশে সরিয়ে রেখে বিলি দ্য কিডের আসল ইতিহাস শুনতে তৈরি হন। অবশ্য উপরের ঘটনাটাও গালগল্প বলে উড়িয়ে দেওয়ার কোনো কারণ নেই, আপনার কাছে ওয়েস্টার্ন মুভি-উপন্যাসের কাহিনী মনে হতে পারে কিন্তু ঘটনাটা একেবারেই বাস্তব।
জন্ম ও শৈশব
আয়ারল্যান্ডের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ে ক্যাথেরিন ম্যাককার্টি যখন নিউ ইয়র্কে পৌঁছালেন ততদিনে আয়ারল্যান্ড ফাঁকা হয়ে গিয়েছে ১০ লক্ষ লোকের মৃত্যু আর অন্যান্য দেশে লোকজনের পাড়ি জমানোর কারণে। আরও কয়েক বছর পর নিউইয়র্কের কোনো এক জায়গাতেই ক্যাথেরিনের কোলে জন্ম নিল উইলিয়াম হেনরি ম্যাককার্টি; যাকে আজ সবাই চেনে “বিলি দ্য কিড” নামে। স্বামী প্যাট্রিক মারা যাবার পর দুই ছেলে উইলিয়াম আর জোসেফকে নিয়ে পাড়ি জমান ইন্ডিয়ানায়, সেখানেই পরিচয় হয় উইলিয়াম অ্যান্ট্রিমের সাথে। পরিচয় থেকে প্রেম এবং শেষে বিয়েই করে বসেন উইলিয়ামকে, বাড়ির বড় ছেলে উইলিয়াম হেনরিকে ডাকা হতে থাকে মিডল নেম “হেনরি” নামে। এদিকে ক্যাথেরিন দুর্ভিক্ষ থেকে রক্ষা পেলেও বাঁধিয়ে বসেন আরেক ভয়াবহ রোগ, “যক্ষা”! ইন্ডিয়ানা থেকে কানসাস, কানসাস থেকে কলোরাডো এবং শেষমেশ কলোরাডো থেকে নিউ মেক্সিকোর সিলভার সিটিতেই থিতু হয়ে বসে ম্যাককার্টি পরিবার; গরম পরিবেশে থেকে যদি যক্ষাটা একটু ভাল হয়। অবশেষে ১৮৭৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর মর্ত্য থেকে বিদায় নেন ক্যাথেরিন ম্যাককার্টি।
স্ত্রী মারা যাওয়ার পর দুই সৎ ছেলেকে ফেলে রেখেই অ্যারিজোনায় পাড়ি জমান উইলিয়াম অ্যান্ট্রিম; সম্পূর্ণ এতিম হয়ে পড়ে দুই ভাই উইলিয়াম আর জোসেফ। এতিম দুই ছেলের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেন সারাহ ব্রাউন; তবে বিনামূল্যে নয়, খাওয়া-থাকার বিনিময়ে কাজ করে দিতে হবে দুই ভাইকে। অভিভাবকের অভাবে কুসঙ্গে পড়তে দেরি হয়নি; খাবার চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ল উইলিয়াম। দশ দিনের মাথায় আবারও ধরা পড়ল; তবে এবার আর ছাড়া পেল না সে, লন্ড্রি থেকে জামাকাপড় চুরির অপরাধে জেলে পুরে দেওয়া হলো তাকে।
দুই দিনের মাথায় দ্য কিড যখন জেলখানার চিমনি দিয়ে পালিয়ে অ্যারিজোনায় থাকা সৎ বাবার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমিয়েছেন; ততদিনে সংবাদপত্রে আসল সত্য প্রকাশিত হয়ে গেছে। বিলি দ্য কিডের সহযোগী সমব্রেরো জ্যাকই চুরিটা করেছিল, কিন্তু সহযোগিতা করতে গিয়ে বমাল সমেত ধরা পড়ে যায় সে। অ্যারিজোনায় সৎ বাবাকে খুঁজে পেলেও চুরির অপরাধে অভিযুক্ত সৎ ছেলেকে আর নিতে রাজি হলেন না অ্যান্ট্রিম। এভাবেই শুরু হলো বুনো পশ্চিমে ১৬ বছর বয়সী দ্য কিডের একাকী পথচলা।
কেতাদুরস্ত অপরাধী
আইরিশ মা’র কাছ থেকে পাওয়া নীল চোখ, সোনালী চুল আর পাঁচ ফুট নয় ইঞ্চির একহারা গঠন ওয়েস্টার্ন নায়কের জন্য নিখুঁতভাবে মানানসই, যেমনটা ছিল বিলি দ্য কিডের। আর সৎ বাবার কাছ থেকে শেখা রুচিশীল পোশাক আর ক্লিন শেভড চেহারার জন্যেও নাম হয়ে গিয়েছিল “ক্ষুদে অ্যান্ট্রিম” হিসেবে। কিডের চেহারায় যদি খুঁত বলে কিছু থাকে তবে তা হলো খরগোশের মতো লম্বা দুটো দাঁত।
সৎ বাবার কাছ থেকে পরিত্যক্ত হয়ে মেক্সিকোর সীমান্তবর্তী অ্যারিজোনার দক্ষিণ-পূর্ব কোণার এক র্যাঞ্চে রাঁধুনি হিসেবে নতুন জীবন শুরু করে বিলি দ্য কিড। তবে মাসের বেতন যা পেত, তার সবটুকুই উড়িয়ে দিত তাসের আড্ডাতে। এমন সময় বিখ্যাত র্যাঞ্চার হেনরি হুকারের চোখ পড়ে তার উপর, নিজের র্যাঞ্চে কাজ দেন কাউবয় হিসেবে। হুকারের র্যাঞ্চে যোগ দেওয়ার পর পরিচয় হয় জন ম্যাকির সাথে; কম পরিশ্রমে টাকা উপার্জনের পথ বাতলে দিল এই স্কটিশ। ব্যস, রাতের আঁধারে ফোর্ট গ্রান্টের সেনাদের ঘোড়া চুরি যাওয়া শুরু হল। বেশ কয়েক মাস পর দুই রাসলারকেই ধরে ফেলল ক্যাভালরি সৈন্যরা। কিন্তু রাত নামতেই বিলি দ্য কিডের আবারও প্রস্থান, দুই বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বার জেলের খাঁচা থেকে পালানো!
বিলি দ্য কিডকে আবারও দেখা গেল চার মাস পর, “বোনিটা” বারে। কিডকে দেখেই যেচে এসে ঝগড়া বাঁধাল উইন্ডি কাহিল, যাচ্ছেতাই গালিগালাজ করে অপমান করা শুরু করল। দ্য কিড প্রত্যুত্তর দিতেই কিডকে স্রেফ ছুঁড়ে ফেলে দিল। তারপর ধস্তাধস্তি, পিস্তলের দিকে হাত বাড়ানো এবং গুলি… বিলি দ্য কিড নিজের প্রথম খুনটা করল আত্মরক্ষা করতে গিয়ে। এক দিন পর কাহিল গুলির আঘাতে কাহিল হয়ে যাওয়ার পর মারা গেলে পাহাড়ে কিছুদিন লুকিয়ে থাকার পর আবারও অ্যারিজোনায় ফিরে আসে বিলি। এবার খুনের অপরাধে অভিযুক্ত আসামী সে, ক্যাম্প গ্রান্টের গার্ডহাউজে আটকে রাখা হলো কিডকে। কিন্তু বিধি বাম, আইন প্রয়োগকারীরা ক্যাম্পে পৌঁছানোর আগেই নিউ মেক্সিকোর উদ্দেশ্যে চম্পট দিল উইলিয়াম হেনরি ম্যাককার্টি ওরফে বিলি দ্য কিড।
ঘোড়া চুরি করে অ্যারিজোনা-নিউ মেক্সিকোর বিশাল প্রান্তর পার হয়ে যাওয়ার সময়েই অ্যাপাচি ইন্ডিয়ানদের আক্রমণের তোপে পড়ে সবকিছু খুইয়ে অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ে। ঘোড়া আর খাবার-পানির অভাবে কোনোমতে পেকোস ভ্যালিতে সেভেন রাইডার্স গ্যাং-এর প্রধান বন্ধু জন জোনসের বাড়িতে পৌছতে পারে কিড। সেখানে কিছুদিন থাকার পরে সুস্থ হয়েই আবারো যোগ দেয় রাসলারদের গ্যাং-এ।
যুদ্ধ এবং প্রতিশোধ
নিউ মেক্সিকোতে আসার পর বিলি দ্য কিডকে নিজের র্যাঞ্চে কাউবয়ের কাজ দেয় ব্রিটিশ ব্যবসায়ী জন টুনস্টাল। লিংকন কাউন্টিতে র্যাঞ্চাররা দুই ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে; একপাশে নতুন র্যাঞ্চ গড়া টুন্সটাল এবং ম্যাকসুইন, অন্যদিকে তিন আইরিশ ব্যবসায়ী ডোলান-রাইলি-মারফি। তিন আইরিশ ব্যবসায়ী আগে থেকেই লিংকন কাউন্টিতে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করে রেখেছে, তাই নতুন কেউ তাদের ব্যবসাতে বাগড়া বাঁধাক এমনটা হতে দেওয়ার কথাও না। তার উপর আবার ম্যাকসুইনের কাছে আট হাজার ডলার ধার দিয়েছিল জেমস ডোলান। শেরিফের সাথে খাতির থাকায় ডোলান সাহেব পসি নিয়ে টুন্সটালের গরুর পালে হামলা চালায়। প্রায় চল্লিশ হাজার ডলার সমমূল্যের গরু বাঁচাতে গিয়ে খুন হয় টুন্সটাল, শুরু হয় লিংকন কাউন্টি যুদ্ধ।
দ্য কিড আর র্যাঞ্চের অন্যান্যরা প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য গঠন করে নতুন এক সংগঠন “দ্য রেগুলেটরস”। টুন্সটালকে খুন করার অপরাধে শেরিফ উইলিয়াম ব্র্যাডিকে অ্যারেস্ট করতে গেলে উল্টো গ্রেফতার হয়ে যায় বিলি ও তার সাঙ্গোপাঙ্গরা। ইউএস ডেপুটি মার্শালের সাথে বিলির পরিচয় ছিল আগেই, মার্শাল রব ওয়াইডেনম্যান বিলিদেরকে জেল থেকে বের করে শেরিফ ব্র্যাডির লোকজনকেই জেলখানায় পুরে দেন।
কিছুদিন পর টুন্সটালকে গুলি করে খুন করা দুই অপরাধী ফ্রাঙ্ক আর মর্টনকে পাকড়াও করে রেগুলেটর্সরা, ঐ দিনই পালানোর সময়ে ধরা পড়ে গুলি খেয়ে ইহলোক ত্যাগ করে দুইজনই। এপ্রিলের এক তারিখ দুই দলের সংঘর্ষে মারা পড়ে শেরিফ ব্র্যাডি এবং তার দুই ডেপুটি; উরুতে গুলি লাগে দ্য কিডের। এর ফলস্বরূপ, বিলিসহ আরও দুইজনের নামে ওয়ার্যান্ট বের করা হয় আর ছোটখাট সংঘর্ষ মোড় নেয় যুদ্ধে।
১৮৭৮ সালের ১৪ই জুলাই, ম্যাকসুইন আর রেগুলেটর্সের ৫০-৬০ জনের বিশাল বাহিনী লিংকন শহরের বিভিন্ন বিল্ডিং-এর অবস্থান নেয়। দুইদিন পর, নতুন শেরিফ জর্জ পেপিন শার্প শ্যুটারদেরকে (স্নাইপার) পাঠিয়ে দেয় আক্রমণের জন্য। ১৯ জুলাই, রেগুলেটর্সদের বেঁচে থাকা সাতজন ম্যাকসুইনের বাড়িতে আত্মরক্ষার শেষ চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে শেরিফের দলবল বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। রেগুলেটর্সরা পালিয়ে যাওয়ার আগেই রবার্ট বেকউইথের গুলিতে মারা যায় অ্যালেক্স ম্যাকসুইন, পরমুহূর্তেই বিলি দ্য কিডের বুলেটের ধাক্কায় বেকউইথের পতন ঘটে।
মোস্ট ওয়ান্টেড আউটল
বিলি দ্য কিড এবং তিনজন সহযোগী পালিয়ে নিউ মেক্সিকোর প্রান্তরে পৌছিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে এদিক-ওদিক চলে যায়। তবে সমস্যা মনে হয় দ্য কিডের পিছু ছাড়ত না, অবশ্য তার কারণটাও ছিল কুসঙ্গ। জেসি ইভান্সের গ্যাং-এ যোগ দেওয়ার কিছুদিন পরেই গ্যাং-এর দলবলের হাতে খুন হয় র্যাঞ্চার চ্যাপম্যান। এদিকে দ্য কিড গভর্নর ওয়েলেসের কাছে চিঠি পাঠায় চ্যাপম্যানের খুনের স্বীকারোক্তির জন্য, বিনিময়ে তাকে ক্ষমা করে দিতে হবে। গভর্নর রাজি হয় এবং দ্য কিডকে নিয়ে আসার জন্য শেরিফ জর্জ কিমবলের কাছে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পন করে। তিন মাস জেল খাটার পরেও দ্য কিড যখন দেখতে পেল ছাড়া পাবার কোনো আশা নেই, চতুর্থবারের মতো জেল ভেঙে পালালো সে।
অনেকদিন লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকার পরে নিউ মেক্সিকোর এক স্যালুনে বিলিকে বলা হয়, “গ্রান্ট নামের এক ব্যক্তি তোমাকে খুন করার জন্য খুঁজছে!” শোনামাত্রই কিড সরাসরি গ্রান্টের সামনে গিয়ে তার রিভলবার পরীক্ষা করার জন্য নিয়ে নেয় এবং এমনভাবে সাজিয়ে রাখে যেন প্রথম গুলিটি ফাঁকা চেম্বার থেকে হয়। গ্রান্টের কাছে রিভলবার ফেরত দিতেই গ্রান্ট কিডের মুখের সামনে ধরে ফায়ার করে। গ্রান্টকে আর কোনো গুলি করার সুযোগ না দিয়েই তাকে পরপারে পাঠিয়ে দেয় কিড।
এদিকে লিংকন কাউন্টি যুদ্ধে শেরিফ উইলিয়াম ব্র্যাডিকে হত্যার অপরাধে বিলি দ্য কিডকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ৫০০ ডলারের পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। নতুন শেরিফ প্যাট গ্যারেট কিডকে ধরতে উঠে পড়ে লাগলেন এবং পারলেনও। এদিকে দ্য কিডের এই ধরা খাওয়ার খবর ফলাও করে প্রচার করতে থাকল সংবাদপত্রিকাগুলো, এমনকি সুদূর নিউইয়র্কেও কিডের কাহিনী প্রকাশিত হয়। বলা যায়, এই সময়েই কিড পুরো আমেরিকায় বেশ কুখ্যাতি অর্জন করে।
গভর্নরের কাছে ক্ষমা চেয়ে বেশ কয়েকবার চিঠি পাঠিয়েও কোনো লাভ না দেখতে পেয়ে পালানোর চিন্তা করে বিলি দ্য কিড। এদিকে জাজের নির্দেশে তার ফাঁসির দিনক্ষণও ঠিক হয়ে গিয়েছে। জেলহাউজের গার্ডদের খেতে যাওয়ার সুযোগে বিলি দ্য কিড শেষবারের মতো জেল ভেঙে পালায় পাহারায় থাকা বেল এবং ওলিঙ্গারের বুক ফুটো করে দিয়ে, যা আগেই লেখা হয়েছে।
মৃত্যু
লিংকন জেলহাউজ থেকে পালিয়ে যাবার পর গায়েব হয়ে যায় বিলি। এদিকে শেরিফ প্যাট গ্যারেটের কানে খবর আসে বিলি ফোর্ট সামনারের কাছাকাছি কোথাও লুকিয়ে আছে। গুজব শোনামাত্রই শেরিফ তার দুই ডেপুটিকে নিয়ে ফোর্ট সামনারের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে। ফোর্ট সামনারের আশেপাশের বাড়িঘরের লোকজনদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় কিডের সূত্র খুঁজে পায় শেরিফ। এলাকার জমিদার লুসিয়েন ম্যাক্সওয়েল-এর বাড়িতেই থাকছে বিলি দ্য কিড, লুসিয়েনের ছেলে প্যাট্রিক দ্য কিডের বন্ধু যে! জমিদার ম্যাক্সওয়েল প্যাট গ্যারেট আর তার দুই শেরিফকে নিজের বাসায় লুকিয়ে রাখে। মধ্যরাতে বিলি দ্য কিড ঘড়ে ঢুকেই টের পায় কিছু একটা গোলমাল হয়েছে। অন্ধকারে প্যাট গ্যারেটের অবয়ব দেখতে পেয়েই জিজ্ঞাসা করে স্প্যানিশ ভাষায় “কে ওখানে?” প্যাট গ্যারেট মোস্ট ওয়ান্টেড ব্যক্তিটির গলা চিনতে পেরে আর বিন্দুমাত্র দেরি করেনি, সাথে সাথে গুলি চালিয়ে দেয়। বুলেট সরাসরি আঘাত করে বিলি দ্য কিডের বুকে এবং সাথে সাথেই লুটিয়ে পড়ে আমেরিকার ওয়েস্টার্ন কিংবদন্তী।
প্যাট গ্যারেট তার ৫০০ ডলার পুরষ্কারের জন্য গভর্নরের কাছে গেলে গভর্নর লি ওয়েলেস তা দিতে অস্বীকার করে। এদিকে কারণ ছাড়া রক্তপাত না ঘটানো, মার্জিত ব্যবহারের জন্য লোকজনের কাছে জনপ্রিয় বিলি দ্য কিডের খুনের অপরাধে নিউ মেক্সিকোর লোকজন শেরিফ প্যাট গ্যারেটকে ধরিয়ে দিতেই চাঁদা উঠিয়ে $৭০০০ সংগ্রহ করে!
গ্যারেটকে শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে নিজের আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য তার সাংবাদিক বন্ধু মার্শাল আপসনের সহায়তা নিতে হয়। বন্ধুর সহায়তায় গ্যারেট একটি বই বের করে, নাম “দ্য অথেনটিক লাইফ অফ বিলি দ্য কিড”। যদিও বইটি খুব একটা জনপ্রিয় হয়নি কারণ এতে আসল ইতিহাসের চেয়ে গুজবে ভরপুর, তবুও ইতিহাসের রেফারেন্সের জন্য অনেক ইতিহাসবিদই বইটি ব্যবহার করেন।
বিলি দ্য কিডের মতো পরিস্থিতির শিকার হওয়া অপরাধীকে নিয়ে অনেক গুজবই চালু আছে, যার বেশিরভাগের মধ্যেই কণাভাগও সত্যি নেই। মাত্র ২১ বছর বয়সে মারা যাওয়া এই কিংবদন্তীর শেষ ৫ বছরের জীবনই হলিউডের ৫০টি সিনেমা বানানোর জন্য যথেষ্ট, আর ওয়েস্টার্ন উপন্যাসগুলোর কথা বাদই দিলাম। বিলি দ্য কিডকে বলা যায়, ওয়েস্টার্ন জীবনের একচ্ছত্র অধিপতি।