
(পর্ব ২ এর পর থেকে)
“আমাদের ওপর, ১৭ কোটি মানুষের একটি জাতির সন্তানদের ওপর, গণপ্রজাতন্ত্রী মঙ্গোলিয়ার শ্রমজীবী জনসাধারণকে ঘৃণ্য হানাদারদের হাত থেকে রক্ষা করার উচ্চ সম্মান ন্যস্ত হয়েছে… আমি তোমাদেরকে স্পর্ধা, শৌর্য, ঔদ্ধত্য, সাহসিকতা এবং বীরত্ব প্রদর্শনের আহ্বান জানাচ্ছি। ঘৃণ্য কাপুরুষ এবং বিশ্বাসঘাতকরা নিপাত যাক!” [গিওর্গি ঝুকভ, ১৩ জুলাই, ১৯৩৯]
১১ মে, ১৯৩৯। মঙ্গোলীয়–মাঞ্চুকুয়োয়ান সীমান্তবর্তী খালখিন গোল নদীর তীরে মঙ্গোলীয় ও মাঞ্চুকুয়োয়ান সৈন্যদের মধ্যে সংঘটিত একটি সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে শুরু হলো খালখিন গোলের যুদ্ধ। মঙ্গোলিয়া ছিল তদানীন্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে মিত্রতার বন্ধনে আবদ্ধ একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র এবং তাদের সঙ্গে সোভিয়েতদের সামরিক সহযোগিতা চুক্তি ছিল। অন্যদিকে, মাঞ্চুরিয়া ছিল আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন কিন্তু কার্যত সম্পূর্ণভাবে জাপানি–নিয়ন্ত্রিত একটি রাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র। ফলে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও জাপান উভয়েই এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। আর এই যুদ্ধের মধ্যেই উত্থান ঘটে একজন অনন্যসাধারণ সোভিয়েত সমরনায়কের, যিনি পরবর্তীতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সবচেয়ে সফল কমান্ডারে পরিণত হবেন। তিনি গিওর্গি ঝুকভ।
১৯৩৯ সালের শুরুতে ‘কমদিভ’ (ডিভিশনাল কমান্ডার) ঝুকভ ছিলেন সোভিয়েত ইউনিয়নের অপর প্রান্তে, পোল্যান্ড সীমান্তবর্তী সোভিয়েত বেলোরুশিয়ায় (বর্তমানে বেলারুশ)। সেখানে তিনি ছিলেন লাল ফৌজের অতি গুরুত্বপূর্ণ বেলারুশীয় সামরিক জেলার উপ–কমান্ডার। ক্রমবর্ধমান লাল ফৌজের একজন উদীয়মান কর্মকর্তা হিসেবে ঝুকভ বিগত দশকে একের পর এক পদোন্নতি পেয়ে আসছিলেন, কিন্তু তখন পর্যন্ত দেশের জনসাধারণ তাকে চিনত না। সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে জাপানের যুদ্ধ এই পরিস্থিতিতে পরিবর্তন এনে দেয়।
খালখিন গোল যুদ্ধের পটভূমি
সোভিয়েত–জাপানি দ্বন্দ্বের উৎস নিহিত ছিল ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে শুরু হওয়া রুশ–জাপানি দ্বন্দ্বের মধ্যে। রাশিয়া ও জাপান উভয়েই চীনে প্রভাব বিস্তারের জন্য আগ্রহী ছিল এবং এটি ছিল তাদের মধ্যবর্তী দ্বন্দ্বের মূল কারণ। ১৮৯৪–১৮৯৫ সালে সংঘটিত প্রথম চীনা–জাপানি যুদ্ধে জাপান চীনকে পরাজিত করে এবং পরাজিত চীনের কাছ থেকে ফরমোজা (বর্তমানে তাইওয়ান) ও দক্ষিণ মাঞ্চুরিয়ার লিয়াওদং উপদ্বীপ দখলের পাশাপাশি কোরিয়ায় প্রভাব বিস্তার করে।
রাশিয়া কোরিয়ায় পাল্টা প্রভাব বিস্তার শুরু করে এবং ফ্রান্স ও জার্মানির সহায়তায় ১৮৯৬ সালে লিয়াওদং উপদ্বীপ থেকে জাপানকে সরে যেতে বাধ্য করে। পরবর্তীতে রাশিয়া চীনের কাছ থেকে লিয়াওদং উপদ্বীপ ইজারা নেয় এবং সেখানে চীনা পূর্বাঞ্চলীয় রেলপথ ও উষ্ণ জলীয় বন্দর পোর্ট আর্থার নির্মাণ করে। ১৮৯৯–১৯০১ সালে চীনে সংঘটিত বিদেশিবিরোধী বক্সার বিদ্রোহ দমনের সুযোগে রাশিয়া মাঞ্চুরিয়ায় বিপুল সংখ্যক সৈন্য মোতায়েন করে এবং মাঞ্চুরিয়া কার্যত একটি রুশ প্রদেশে পরিণত হতে থাকে।

জাপান মাঞ্চুরিয়াকে রুশ প্রভাব বলয় ও কোরিয়াকে জাপানি প্রভাব বলয়ে রেখে একটি সমঝোতায় পৌঁছানোর জন্য রাশিয়াকে প্রস্তাব করে, কিন্তু রাশিয়া এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে এবং মাঞ্চুরিয়া ও কোরিয়ার উত্তরাংশকে রুশ প্রভাব বলয়ে রেখে কোরিয়ার দক্ষিণাংশকে জাপানি প্রভাব বলয়ের অন্তর্ভুক্ত করার পাল্টা প্রস্তাব দেয়। জাপান এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে এবং ১৯০৪ সালে অতর্কিতে পোর্ট আর্থারে রুশ নৌঘাঁটির ওপর আক্রমণ চালায়। ১৯০৪–১৯০৫ সালের রুশ–জাপানি যুদ্ধে জাপানের নিকট রাশিয়া পরাজিত হয়, এবং জাপান পরাজিত রাশিয়ার কাছ থেকে পোর্ট আর্থারসহ লিয়াওদং উপদ্বীপ, চীনা পূর্বাঞ্চলীয় রেলপথের দক্ষিণাংশ ও শাখালিন দ্বীপের দক্ষিণাংশ হস্তগত করার পাশাপাশি কোরিয়াকে নিজেদের প্রভাব বলয়ের অন্তর্ভুক্ত করে নেয়। ১৯১০ সালে জাপান কোরিয়া দখল করে নেয় এবং সেটিকে একটি জাপানি উপনিবেশে পরিণত করে।
১৯১৮–১৯২২ সালে রুশ গৃহযুদ্ধ চলাকালে জাপান শ্বেত ফৌজের পক্ষাবলম্বন করে এবং ব্রিটেন, ফ্রান্স ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে সাইবেরিয়া ও রুশ দূরপ্রাচ্যে আক্রমণ চালায়। জাপানিরা শাখালিন দ্বীপের উত্তরাংশ এবং রুশ দূরপ্রাচ্য ও সাইবেরিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল দখল করে নেয়, কিন্তু বলশেভিকদের তীব্র প্রতিরোধের মুখে তারা ১৯২২ সালে সাইবেরিয়া ও রুশ দূরপ্রাচ্য থেকে এবং ১৯২৫ সালে উত্তর শাখালিন থেকে পশ্চাৎপসরণ করতে বাধ্য হয়। ১৯৩১ সালে জাপান চীনের কাছ থেকে মাঞ্চুরিয়া দখল করে নেয় এবং সেখানে ‘মাঞ্চুকুয়ো’ নামক একটি জাপানি–নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্র স্থাপন করে। এর ফলে সোভিয়েত নিয়ন্ত্রণাধীন চীনা পূর্বাঞ্চলীয় রেলপথ নিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও জাপানের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাঁধার উপক্রম দেখা দেয়, কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন রেলপথটিকে জাপানের কাছে বিক্রি করে দিয়ে এই সমস্যার সমাধান করে।
কিন্তু জাপান কর্তৃক মাঞ্চুরিয়া দখলের ফলে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও মঙ্গোলিয়ার সঙ্গে জাপানের একটি বিস্তৃত সীমান্ত স্থাপিত হয় এবং অচিরেই সীমান্ত নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। ১৯৩২ সাল থেকে উভয় পক্ষের মধ্যে ছোট ছোট সীমান্ত সংঘর্ষ শুরু হয়। জাপানিরা কোরিয়া ও মাঞ্চুরিয়ায় প্রচুর সৈন্য ও সামরিক সরঞ্জাম মোতায়েন করে এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের এশীয় ভূখণ্ড দখল করে নেয়ার পরিকল্পনা করতে থাকে। এদিকে ১৯৩৩ সালে জার্মানিতে তীব্র সোভিয়েতবিরোধী ও তীব্র কমিউনিজমবিরোধী নাৎসিরা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয় এবং তারা সোভিয়েত ইউনিয়নে একটি বিস্তৃত জার্মান সাম্রাজ্য বিস্তারের পরিকল্পনা করতে থাকে। ১৯৩৬ সালে জার্মানি ও জাপান কমিন্টার্নবিরোধী চুক্তিতে স্বাক্ষর করে, যেটির মূল লক্ষ্য ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। ১৯৩৭ সালের জুলাইয়ে জাপান চীন আক্রমণ করে এবং বেইজিং, সাংহাই ও নানচিংসহ চীনের বিস্তৃত ভূখণ্ড দখল করে নেয়। এমতাবস্থায় সোভিয়েত ইউনিয়ন চীনকে ব্যাপক সামরিক সহায়তা প্রদান করতে শুরু করে।
১৯৩৮ সালে জাপান সোভিয়েত ইউনিয়নের খাসান হ্রদ অঞ্চলে আক্রমণ চালায়, কিন্তু সোভিয়েতরা তাদের পরাজিত ও বিতাড়িত করে। ১৯৩৯ সালে জাপান মঙ্গোলিয়ার খালখিন গোল অঞ্চলে একটি বিস্তৃত আক্রমণ পরিচালনার পরিকল্পনা করে এবং সেই মোতাবেক ১১ মে আক্রমণ শুরু করে। সেখানে মোতায়েনকৃত লাল ফৌজের ৫৭তম বিশেষ কোরের সঙ্গে জাপানিদের তীব্র সংঘর্ষ শুরু হয়। কিন্তু লড়াইয়ে সোভিয়েত সৈন্যদের প্রদর্শিত সক্ষমতা নিয়ে মস্কো সন্তুষ্ট ছিল না, ফলে সোভিয়েত প্রতিরক্ষামন্ত্রী ক্লিমেন্ত ভরোশিলভ যুদ্ধক্ষেত্রের পরিস্থিতি সরেজমিনে তদন্ত করার জন্য একটি পরিদর্শক দল প্রেরণ করেন। পরিদর্শক দলের সদস্যদের মধ্যে ছিলেন গিওর্গি ঝুকভ এবং লাল বিমানবাহিনীর উপপ্রধান ইয়াকোভ স্মুশকেভিচ। ২৪ মে ঝুকভ যুদ্ধক্ষেত্রে পৌঁছান।
খালখিন গোলে ঝুকভ: পরিদর্শক থেকে কোর কমান্ডার এবং রণপ্রস্তুতি
২৮–২৯ মে সোভিয়েত ও জাপানি সৈন্যদের মধ্যে একটি খণ্ডযুদ্ধ হয়। এই খণ্ডযুদ্ধে সোভিয়েতদের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। তাদের ৭১ জন সৈন্য নিহত, ৮০ জন আহত এবং ৩৩ জন নিখোঁজ হয়। এই পরিস্থিতিতে ৩০ মে ঝুকভ ভরোশিলভের কাছে একটি প্রতিবেদন প্রেরণ করেন। প্রতিবেদনে তিনি এই খণ্ডযুদ্ধটিকে ‘ব্যতিক্রমীভাবে অসংগঠিত’ হিসেবে বর্ণনা করেন এবং মন্তব্য করেন যে, নিম্নমানের রণকৌশল, খারাপ ব্যবস্থাপনা ও শত্রুপক্ষের গতিবিধি আন্দাজ করার ক্ষেত্রে ব্যর্থতার ফলে এই দুরবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি স্থানীয় কমান্ডারদের প্রায় সকলকে অদক্ষতার দায়ে অভিযুক্ত করেন। স্মুশকেভিচ ঝুকভকে কোরটির কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত করার জন্য ভরোশিলভের কাছে প্রস্তাব করেন এবং ভরোশিলভ এই প্রস্তাবে সম্মত হন।

যুদ্ধক্ষেত্রে পৌঁছেই ঝুকভ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার প্রচেষ্টা চালাচ্ছিলেন। ইতিমধ্যে ১৯৩৯ সালের ১২ জুন ঝুকভকে ৫৭তম কোরের কমান্ডার নিযুক্ত করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার উদ্দেশ্যে ঝুকভ একটি কার্যকর তথ্য সংগ্রহ ব্যবস্থা স্থাপন করেন এবং এজন্য শত্রুপক্ষের মধ্যে গুপ্তচর প্রেরণ, বিমানের সাহায্যে শত্রুপক্ষের ওপর নজরদারি ও যুদ্ধবন্দিদের জিজ্ঞাসাবাদ আরম্ভ হয়। একই সঙ্গে ঝুকভ সোভিয়েত সৈন্যদের প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতির মান বৃদ্ধি করা এবং শৃঙ্খলা আনয়নের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
জুলাইয়ে পুনরায় যুদ্ধ আরম্ভ হয় এবং জাপানিরা খালখিন গোল নদীর পূর্ব তীরে অবস্থানরত সোভিয়েত সৈন্যদের সেখান থেকে বিতাড়িত করে নদীটির পশ্চিম তীরে নিজেদের ঘাঁটি স্থাপনের প্রচেষ্টা চালায়। যুদ্ধে সোভিয়েতদের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং ১৬ মে থেকে ৫ জুলাইয়ের মধ্যে অন্তত ৫,০০০ সোভিয়েত সৈন্য হতাহত হয়। স্বভাবতই ঝুকভ সৈন্যদের মধ্যে শৃঙ্খলা আরো বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন এবং যেকোনো ইউনিটের ব্যর্থতার জন্য ঐ ইউনিটের কমান্ডার ও কমিশারকে ব্যক্তিগতভাবে জবাবদিহি করতে হবে বলে ঘোষণা করেন। ১৩ জুলাই ঝুকভ দুইজন সৈন্যকে কাপুরুষতার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন।
৩১ জুলাই তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘কমকর’ (কোর কমান্ডার) নিযুক্ত করা হয়। উল্লেখ্য, ‘কমকর’ পদটি ছিল প্রচলিত সেনাবাহিনীর জেনারেল পদমর্যাদার সমতুল্য। এই যুদ্ধ চলাকালে ঝুকভের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন সাইবেরিয়া ও দূরপ্রাচ্যে মোতায়েনকৃত সমস্ত সোভিয়েত সৈন্যদলের কমান্ডার গ্রিগোরি স্তের্ন এবং যুদ্ধের পরিকল্পনা প্রধানত তিনি ও তার স্টাফরাই করেছিলেন। কিন্তু যুদ্ধ পরিচালনার স্বার্থে ঝুকভকে স্তের্নের কমান্ড থেকে যথেষ্ট স্বাধীনতা দেয়া হয়েছিল এবং স্তের্নের পরিকল্পনাগুলো পরিমার্জন ও বাস্তবায়নের দায়িত্ব ঝুকভের ওপরেই ন্যস্ত ছিল।
জাপানিদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত যুদ্ধের জন্য ঝুকভ সৈন্য সমাবেশ শুরু করেন এবং চূড়ান্ত যুদ্ধের আগে সোভিয়েতরা প্রায় ৫৭,০০০ সৈন্য, প্রায় ৯০০টি ট্যাঙ্ক ও আর্মার্ড কার, ৫০০টির বেশি আর্টিলারি পিস এবং প্রায় ৫০০টি বিমান মোতায়েন করেছিল। এই বিরাট সৈন্যদলকে যুদ্ধক্ষেত্রে মোতায়েন করা ছিল এক অতি জটিল কাজ। কারণ যুদ্ধক্ষেত্রের ভূমি ছিল দুর্গম, রাস্তাগুলোর অবস্থা ছিল খারাপ এবং যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সবচেয়ে কাছে রেলস্টেশন ছিল সেখান থেকে ৪০০ মাইল দূরে। এই পথ যেতে ও ফিরে আসতে প্রায় ৫ দিন সময় লাগত। এই অবস্থায় সোভিয়েতরা ৫,০০০ ট্রাক ব্যবহার করে যুদ্ধক্ষেত্রে ১৮,০০০ টন কামানের গোলা, ৬,৫০০ টন বিমানের গোলাবারুদ, ১৫,০০০ টন জ্বালানি ও লুব্রিক্যান্ট, ৭,৫০০ টন কঠিন জ্বালানি, ৪,০০০ টন খাবার এবং ৪,০০০ টন অন্যান্য রসদ পৌঁছে দেয়।

ঝুকভ এই সৈন্য সমাবেশ যতদূর সম্ভব গোপনে করার চেষ্টা করেন এবং এর মাধ্যমে জাপানিদের বিভ্রান্ত করার প্রয়াস পান। ‘মাসকিরোভকা’ নামে পরিচিত এই কৌশল অনুযায়ী তিনি সৈন্য ও রসদ পরিবহন যতদূর সম্ভব গোপনে করার চেষ্টা করেন এবং যুদ্ধক্ষেত্রে একেবারে শেষ মুহূর্তে আক্রমণকারী বাহিনীকে মোতায়েন করেন। ভুয়া বেতার বার্তা প্রচার করে তিনি জাপানিদের এই ধারণা প্রদানের প্রচেষ্টা চালান যে, সোভিয়েত আক্রমণ নয়, বরং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সৈন্যদের আক্রমণের জন্য যে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছিল, সেটিও সম্পূর্ণ গোপনে করা হয়। যুদ্ধের খসড়া পরিকল্পনাগুলো কেবল শীর্ষ কমান্ড ছাড়া অন্য কাউকে জানতে দেয়া হয়নি। একজন মাত্র বিশ্বস্ত টাইপিস্টকে দিয়ে সব কাগজপত্র কপি করানো হতো। তদুপরি, জাপানিরা যেন প্রকৃত আক্রমণস্থল সম্পর্কে আন্দাজ করতে না পারে, সেজন্য ঝুকভ বিভিন্ন স্থানে জাপানিদের ওপর ছোট ছোট আক্রমণ পরিচালনা করেন। এই ব্যাপক সতর্কতা ও গোপনীয়তার ফলে চূড়ান্ত আক্রমণের সময় ঝুকভের সৈন্যরা পূর্ণ অপারেশনাল সারপ্রাইজ অর্জন করে।
ঝুকভের আক্রমণ পরিকল্পনা
১৭ আগস্ট ঝুকভ ১ম আর্মি গ্রুপকে চূড়ান্ত আক্রমণের সাধারণ নির্দেশনা প্রদান করেন এবং ২০ আগস্ট আক্রমণ শুরু হবে বলে ঘোষণা দেন। আক্রমণটির উদ্দেশ্য ছিল খালখিন গোল নদীর পূর্বে অবস্থিত জাপানি সৈন্যবাহিনীকে ঘিরে ফেলা এবং ধ্বংস করে দেয়া। জাপানি সৈন্যদলটিতে প্রায় ৭৫,০০০ সৈন্য ছিল এবং সোভিয়েত সৈন্যদলটির অনুরূপ সংখ্যক আর্টিলারি পিস ও বিমান ছিল, কিন্তু তাদের ট্যাঙ্ক ও আর্মার্ড কারের সংখ্যা ছিল সোভিয়েতদের চেয়ে কম। সংখ্যার দিক থেকে এগিয়ে থাকা জাপানিদের ওপর আক্রমণ পরিচালনার উদ্দেশ্যে ঝুকভ তার বাহিনীটিকে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত করেন – দক্ষিণাঞ্চলীয়, কেন্দ্রীয় এবং উত্তরাঞ্চলীয়।
ঝুকভের পরিকল্পনা অনুযায়ী দক্ষিণাঞ্চলীয় গ্রুপটির দায়িত্ব ছিল জাপানিদের ওপর মূল আক্রমণ পরিচালনা করা এবং খালখিন গোল অতিক্রম করে নোমোনহানের (খালখিন গোলের পূর্বে অবস্থিত একটি ক্ষুদ্র গ্রাম) দিকে অগ্রসর হওয়া, যাতে তারা খাইলাস্তিন গোলের (খালখিন গোল নদীর একটি শাখা) উত্তরে অবস্থানরত জাপানি সৈন্যদলকে ঘিরে ফেলতে পারে। সেখানে এটি ঝুকভের কেন্দ্রীয় ও উত্তরাঞ্চলীয় গ্রুপের সঙ্গে মিলিত হবে এবং ঘিরে ফেলা জাপানিদের ধ্বংস করে দেবে। উত্তরাঞ্চলীয় গ্রুপের দায়িত্ব ছিল ফুই মালভূমির উত্তর কোণে জাপানিদের ওপর আক্রমণ চালানো এবং খাইলাস্তিন গোলের উত্তরে জাপানিদের ওপর আক্রমণ পরিচালনার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ও দক্ষিণাঞ্চলীয় গ্রুপকে সহায়তা করা।

ঝুকভ তার অধিকাংশ আর্মার্ড ও মেকানাইজড ইউনিট উত্তরাঞ্চলীয় ও দক্ষিণাঞ্চলীয় গ্রুপে মোতায়েন করেছিলেন। কেন্দ্রীয় গ্রুপটি মূলত তার পদাতিক ইউনিটগুলো নিয়ে গঠিত হয়েছিল এবং এটির দায়িত্ব ছিল খাইলাস্তিন গোলের উত্তরে ও দক্ষিণে জাপানিদের ওপর সরাসরি আক্রমণ চালানো। কেন্দ্রীয় সেক্টরের হামার দাবায় ঝুকভের সদর দপ্তর অবস্থিত ছিল এবং তার ঠিক পিছেই একটি শক্তিশালী গতিশীল অতিরিক্ত সৈন্যদল অবস্থান করছিল, যাদের দায়িত্ব ছিল উত্তরাঞ্চলীয় ও দক্ষিণাঞ্চলীয় গ্রুপগুলোর আক্রমণ সফল হলে জাপানিদের ধ্বংস করার ক্ষেত্রে তাদেরকে সহায়তা করা।
জাপানিদের ওপর আক্রমণ: ঝুকভের ‘মাস্টারস্ট্রোক’
পরিকল্পনা মোতাবেক ২০ আগস্ট সোভিয়েত সৈন্যরা আক্রমণ শুরু করে। ২০ আগস্ট ছিল রবিবার, অর্থাৎ সাপ্তাহিক ছুটির দিন। ঝুকভের গৃহীত ‘মাসকিরোভকা’র কারণে অনেক জাপানি সিনিয়র কর্মকর্তা কোনো সোভিয়েত আক্রমণের আশঙ্কা করছিলেন না এবং রবিবারের দিন ছুটি নিয়েছিলেন। এজন্যই ঝুকভ আক্রমণ পরিচালনার জন্য এই দিনটিকে বেছে নিয়েছিলেন। সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে সোভিয়েত আর্টিলারি জাপানি বিমান–বিধ্বংসী কামান ও মেশিনগানগুলোর অবস্থানের ওপর প্রচণ্ড বোমাবর্ষণ শুরু করে এবং এর মধ্য দিয়ে যুদ্ধ শুরু হয়। ১৫০টির বেশি বোমারু বিমান এবং প্রায় ১০০টি জঙ্গিবিমান সোভিয়েত আক্রমণে অংশগ্রহণ করে। ৮টা ৪৫ মিনিটে সোভিয়েতদের সবধরনের আর্টিলারি ও মর্টার জাপানিদের ওপর গোলাবর্ষণ শুরু করে। একই সময়ে সোভিয়েত বিমানগুলো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জাপানি লক্ষ্যবস্তুর ওপর বোমাবর্ষণ করতে থাকে। জাপানিদের ওপর সোভিয়েত আর্টিলারি ও যুদ্ধবিমানগুলোর আক্রমণ চলা অবস্থাতেই ঠিক ৯টার সময় মূল আক্রমণ শুরু হয় এবং সোভিয়েত আক্রমণকারী ইউনিটগুলো অগ্রসর হয়।

অভিযানটি ঝুকভের পরিকল্পনা মতোই পরিচালিত হয়। সোভিয়েত ট্যাঙ্ক ও মেকানাইজড ইউনিটগুলো দ্রুতগতিতে জাপানি পদাতিক ও গোলন্দাজ বাহিনীকে পর্যুদস্ত করে ফেলে। সোভিয়েত যুদ্ধবিমানগুলো জাপানিদের বিরুদ্ধে শত শত আক্রমণ পরিচালনা করে এবং তাদের ওপরে প্রায় ৮৬,০০০ কিলোগ্রাম বোমা নিক্ষেপ করে। সোভিয়েত আর্টিলারি জাপানিদের অবস্থানের ওপর ব্যাপক গোলাবর্ষণ করে এবং এর ফলে জাপানিদের সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়। চার দিন ব্যাপী তীব্র যুদ্ধের পর ২৪ আগস্ট জাপানিরা খাইলাস্তিন গোলের উত্তরে তাদের আটকা পড়া সৈন্যদের ঘিরে থাকা সোভিয়েত বলয়ের ওপর প্রতিআক্রমণ পরিচালনা করে। প্রত্যুত্তরে ঝুকভ ৬ষ্ঠ ট্যাঙ্ক ব্রিগেডসহ তার অতিরিক্ত সৈন্যদলের কিছু অংশ জাপানিদের বিরুদ্ধে মোতায়েন করেন। তিন দিন প্রচণ্ড লড়াইয়ের পর জাপানিদের প্রতিআক্রমণ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
২৭ আগস্ট ঝুকভ তার ১ম আর্মি গ্রুপের কাছে ঘোষণা করেন যে, মঙ্গোলিয়ার খালখিন গোল অঞ্চলে অবস্থানরত জাপানি সৈন্যবাহিনীকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। অবশ্য যুদ্ধ তখনো শেষ হয়নি এবং ২৮ থেকে ৩১ আগস্টের মধ্যে সোভিয়েতরা জাপানিদের অবশিষ্ট কিছু সৈন্যদলের বিরুদ্ধে তীব্র যুদ্ধের পর সেগুলোকে ধ্বংস করে ফেলতে সক্ষম হয়। এভাবে ৩১ আগস্টের মধ্যে মঙ্গোলীয় ভূমিতে অবস্থানরত জাপানি সৈন্যবাহিনী সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়।
যুদ্ধের ফলাফল এবং ‘জাতীয় বীর’ ঝুকভ
খালখিন গোলের যুদ্ধে ৭,৬৭৬ জন সোভিয়েত সৈন্য নিহত হয় অথবা রোগাক্রান্ত হয়ে বা অন্যান্য কারণে মৃত্যুবরণ করে, ২,০২৮ জন সোভিয়েত সৈন্য নিখোঁজ হয়, ১৫,২৫১ জন সোভিয়েত সৈন্য আহত হয় এবং ৭০১ থেকে ২,২২৫ জন সোভিয়েত সৈন্য অসুস্থ হয়ে পড়ে। এর পাশাপাশি ৫৫৬ থেকে ৯৯০ জন মঙ্গোলীয় সৈন্য হতাহত হয়। অন্যদিকে, এই যুদ্ধে ৬০,০০০–এর বেশি সংখ্যক জাপানি ও মাঞ্চুকুয়োয়ান সৈন্য নিহত, নিখোঁজ বা আহত হয় এবং প্রায় ৩,০০০ জাপানি ও মাঞ্চুকুয়োয়ান সৈন্য সোভিয়েতদের হাতে বন্দি হয়, যদিও পরবর্তীতে জাপানিরা এই ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে দেখানোর চেষ্টা করে। যুদ্ধের এই ফলাফলের পর ১৯৩৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর সোভিয়েত ইউনিয়ন ও জাপানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি সম্পাদিত হয় এবং ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে এটি কার্যকর হয়।
খালখিন গোলের যুদ্ধে অর্জিত বিজয় ছিল সোভিয়েতদের জন্য একটি বৃহৎ সামরিক, কৌশলগত, রাজনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক বিজয়। এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে লাল ফৌজের সমরনৈপুণ্য ও কার্যকারিতা প্রমাণিত হয় এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিদ্বন্দ্বীদের নিকট লাল ফৌজের মর্যাদা বৃদ্ধি পায় (যেটি ১৯৩৭–১৯৩৮ সালে লাল ফৌজে স্তালিন কর্তৃক পরিচালিত শুদ্ধি অভিযানের ফলে হ্রাস পেয়েছিল)। এই বিজয়কে সোভিয়েতরা ১৯০৪–১৯০৫ সালের রুশ–জাপানি যুদ্ধে জাপানের নিকট রাশিয়ার পরাজয়ের উপযুক্ত প্রতিশোধ হিসেবে বিবেচনা করে। এই বিজয়ের কৌশলগত ফলাফলও ছিল অপরিসীম।
১৯৩০–এর দশকে জাপানিরা উত্তর ও দক্ষিণ উভয় দিকে সাম্রাজ্য বিস্তারের পরিকল্পনা করছিল। জাপানি সেনাবাহিনী ছিল প্রথমে উত্তর দিকে (অর্থাৎ মঙ্গোলিয়া এবং সোভিয়েত দূরপ্রাচ্য ও সাইবেরিয়ার দিকে) আক্রমণ পরিচালনার পক্ষে, অন্যদিকে জাপানি নৌবাহিনী ছিল প্রথমে দক্ষিণ দিকে (অর্থাৎ দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত মার্কিন, ব্রিটিশ ও অন্যান্য ইউরোপীয় উপনিবেশগুলোর দিকে) আক্রমণ পরিচালনার পক্ষে। এমতাবস্থায় সোভিয়েতদের জন্য সবচেয়ে বড় কৌশলগত হুমকি ছিল জার্মানি ও জাপান কর্তৃক একযোগে সোভিয়েত ইউনিয়নের ওপর যথাক্রমে পশ্চিম ও পূর্ব দিকে আক্রমণ পরিচালনা।
কিন্তু খালখিন গোলের যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে জাপানিরা আশঙ্কা করতে থাকে যে, উত্তর দিকে আক্রমণ চালালে সাইবেরিয়ায় তাদেরকে সোভিয়েতদের বিরুদ্ধে একটি প্রলম্বিত যুদ্ধে লিপ্ত হতে হবে। খালখিন গোলে জাপানি সৈন্যদের লাশের স্তূপ দেখে জাপানি সৈন্য ও অফিসাররা মনোবল হারিয়ে ফেলে। এমতাবস্থায় জাপানে যারা প্রথমে দক্ষিণ দিকে আক্রমণ চালানোর পক্ষপাতী ছিল, তাদের প্রভাব বৃদ্ধি পায় এবং শেষ পর্যন্ত তারা দক্ষিণ দিকে আক্রমণ চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এরই পরিণাম ছিল পার্ল হারবারের ওপর জাপানি আক্রমণ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও অন্যান্য ইউরোপীয় রাষ্ট্রের সঙ্গে জাপানের যুদ্ধ। এভাবে খালখিন গোলের যুদ্ধে পরাজয় জাপানকে পার্ল হারবার আক্রমণের দিকে ঠেলে দেয়।

এই বিরাট বিজয়ে ঝুকভের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। খালখিন গোলের যুদ্ধ ছিল কম্বাইন্ড আর্মস অপারেশনের একটি আদর্শ উদাহরণ এবং এই যুদ্ধে আধুনিক মেকানাইজড সৈন্যবাহিনীর শক্তি ও গতি প্রমাণিত হয়। এই যুদ্ধকে ঝুকভের একটি ‘ট্যাকটিক্যাল মাস্টারস্ট্রোক’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই যুদ্ধে প্রথমবারের মতো ঝুকভের যুদ্ধ পরিচালনার কৌশল স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ঝুকভের সমরনীতির মূল বৈশিষ্ট্যগুলো ছিল ব্যক্তিগত গোয়েন্দা কার্যক্রমের ওপর গুরুত্ব আরোপ, নিজে থেকে উদ্যোগ গ্রহণ, বলিষ্ঠ আক্রমণাভিযান পরিচালনা, স্থল ও বিমানবাহিনীর সুদক্ষ সমন্বয় এবং প্রয়োজনের খাতিরে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে নেয়া।
খালখিন গোল যুদ্ধে ঝুকভের অর্জিত বিজয়কে ইতিহাসবিদরা তুলনা করে থাকেন রোমানদের বিরুদ্ধে বিখ্যাত কার্থেজীয় সেনানায়ক হানিবাল কর্তৃক ক্যানেইয়ের যুদ্ধ (Battle of Cannae) জয়ের সঙ্গে। মার্কিন ইতিহাসবিদ উইলিয়াম স্পারের মতে, ঝুকভ মঙ্গোলিয়ার শুষ্ক স্তেপভূমিতে ৭৪ কি.মি. প্রশস্ত এবং ২০ কি.মি. গভীর রণক্ষেত্রে ‘ডাবল এনভেলেপমেন্ট’–এর মাধ্যমে জাপানিদের পরাজিত করেন এবং তার এই বিজয় ২,০০০ বছর পূর্বে ক্যানেইয়ে হানিবাক কর্তৃক অর্জিত বিজয়ের সমতুল্য। উল্লেখ্য, হানিবালের উক্ত বিজয়টিকে ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ সামরিক বিজয়গুলোর একটি হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং এই বিজয়ের সঙ্গে ঝুকভের বিজয়ের তুলনা করার অর্থ ঝুকভের বিজয়কে সর্বোচ্চ মর্যাদা প্রদান করা।
খালখিন গোলের যুদ্ধে বিজয়ের পর ঝুকভ রাতারাতি সোভিয়েত ইউনিয়নের জাতীয় বীরে পরিণত হন। সোভিয়েত সরকার তাকে দেশটির সর্বোচ্চ সামরিক পদক ‘হিরো অফ দ্য সোভিয়েত ইউনিয়ন’ প্রদান করে। যুদ্ধ শেষে ঝুকভ মঙ্গোলিয়ার রাজধানী উলান বাটোরে চলে যান এবং তার পরিবার সেখানে চলে আসে। পরবর্তী প্রায় ৯ মাস ঝুকভ ও তার সিনিয়র কমান্ডার স্তের্ন উলান বাটোরেই অবস্থান করেন। এসময় তারা সেখানে মঙ্গোলিয়া ও মাঞ্চুকুয়োর মধ্যবর্তী সীমান্ত সুস্পষ্টভাবে নির্ধারণের জন্য পরাজিত জাপানিদের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছিলেন। আলোচনাটি প্রলম্বিত হয় এবং ১৯৪০ সালের জুনেই কেবল উভয় পক্ষের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তখন পর্যন্ত ঝুকভ মঙ্গোলিয়াতেই ছিলেন। ততদিনে ইউরোপ জুড়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে।
(এরপর দেখুন ৪র্থ পর্বে)