Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

জনবেনেট রামসে হত্যারহস্য: পেরিয়ে গিয়েছে ২১টি বছর!

মিষ্টি একটুকরো হাসি ভাসছে সারা মুখে, নীলচে চোখদুটো টলটল করছে মায়ায়। সোনালী হালকা কোকড়া চুলের সাথে মায়াবী এক চেহারা। মাত্র ছয় বছর বয়সেই সবার মন কেড়ে নিয়েছিল জনবেনেট রামসে। আর সেজন্যেই হয়তো মৃত্যুর প্রায় ২১ বছর পরেও মানুষ খুঁজে ফেরে জনবেনেটের হত্যাকারীকে। জানতে চায় কী হয়েছিল নিস্পাপ বাচ্চা মেয়েটির সাথে।

জনবেনেট রামসে; Source: Teen Vogue

১৯৯৬ সালের কথা। সেই বছরটা চমৎকারভাবে শুরু করেছিল রামসে পরিবার। জন রামসের প্রতিষ্ঠান অসম্ভব ভালো করেছিল সে বছর। তাই খুশীতে প্রায় উড়ছিল তারা। সেবারের ক্রিসমাস প্যারেডে অংশ নিয়েছিল জনবেনেট। তার বাবা-মায়ের মতে সেটাই ছিল তাদের ভুল। আর দশটা বড়দিনের মতো সেই বড়দিনটা যায়নি বেনেট পরিবারের। বড়দিনে সান্তার কাছ থেকে সাইকেল উপহার পায় জনবেনেট। ৯ বছর বয়সী বড় ভাই বার্কের সাথে প্রতিটি বড়দিনের মতো সেই বড়দিনটিও আনন্দে পার করে জনবেনেট। বাবার সাথে সাইকেল চালানোর চেষ্টা চালায় কিছুক্ষণ। এরপর বাবা-মা সন্ধ্যায় রাতের খাবারের দাওয়াতে চলে গেলে বেশ খানিকক্ষণ খেলাধুলা করে মেয়েটি। রামসে পরিবার ফিরে এসে মেয়েকে গভীর ঘুমে দেখে। তাই আর জাগানোর চেষ্টা করেনি তারা। জন রামসে মেয়েকে কোলে করে বিছানায় শুইয়ে দেন। আর তাকে সাহায্য করেন স্ত্রী প্যাটসি রামসে। সেই শেষবার দেখেন তারা মেয়েকে জীবন্ত অবস্থায়। সেই রাতটাই ছিল জনবেনেট রামসের শেষ রাত।

মা ও ভাইয়ের সাথে জনবেনেট; Source: Thought Catalog

মেয়েকে নিয়ে সবসময় অনেক আশাবাদী ছিলেন বাবা-মা। ভালো কিছু করবে জনবেনেট, এমনটা ঠিক জানতেন তার বাবা-মা। মা প্যাটসি রামসে ছিলেন সাবেক মিস ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া এবং মিস আমেরিকার একজন প্রতিযোগী। ছোটবেলা থেকেই তাই নানারকম সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে উৎসাহ প্রদান করেন তিনি জনবেনেটকে। আর সেগুলোর প্রায় সবগুলোই জিতে নেয় মিষ্টি মেয়েটি। লিটল মিস কলোরাডো উপাধি জিতে নেয় সে। সেইসাথে আরো আছে লিটল মিস চার্লিভয়েক্স, কলোরাডো স্টেট অল-স্টার কিডস কভার গার্ল, ন্যাশনাল টাইনি মিস বিউটি, আমেরিকা’স রয়্যান মিস সহ আরো অনেক খেতাব।

মেয়ের মৃত্যু নিয়ে বলতে গিয়ে সিএনএনকে জানান রামসে যে, তারা চাইতেন যেন জননেবেট কিছু প্রতিযোগিতা হেরে যায়। তাতে করে হার কী সেটা এবং জীবন সম্পর্কে আরো জানতে পারবে সে। জীবন অনেক কঠিন। সবকিছু সহজে পাওয়া যায় না। মেয়ে যেন তা শিখে যায় সেটা চেয়েছিলেন তারা। সেই সময়টুকু হয়নি জনবেনেটের। বেশিদিন বাঁচতে পারেনি সে জীবনকে শেখার জন্য। সেই অবসর হয়নি তার।

১৯৯৬ সালের ২৬ ডিসেম্বর মৃত্যু হয় জনবেনেট রামসের। সকাল থেকে বেশ একটা হুড়োহুড়ি চলছিল বাড়ির মধ্যে। প্রথমবারের মতো জন রামসের ব্যক্তিগত প্লেনে করে মিশিগানে যাওয়ার এবং সেখান থেকে ডিজনি ভ্রমনে যাওয়ার কথা ছিল সেদিন। প্যাটসি এবং জন রামসে খুব ভোরেই উঠে পড়েছিলেন। হঠাৎ একটা চিৎকার শুনে ছুটে যান জন। প্যাটসি করেছে চিৎকারটা। তার হাতে একটি তিন পৃষ্ঠার হাতে লেখা নোট। তাতে স্পষ্ট করে লেখা আছে, জনবেনেটকে অপহরণ করা হয়েছে আর তাকে ফিরিয়ে দেওয়ার বদলে চাওয়া হয়েছে বড় অঙ্কের অর্থ। স্ত্রীকে ৯১১-তে কল করতে বলেন জন। তবে কোনো কাজ হয়নি তাতে। জনবেনেটকে বাঁচানো যায়নি। পুরো দেশবাসীর কাছে এই মৃত্যু হয়ে গিয়েছে সবচাইতে অনাকাঙ্ক্ষিত আর রহস্যময় এক মৃত্যু।

কে বলবে ছবির এই হাসিমাখা মুখটি এখন আর হাসে না? Source: Us Weekly

তিন পৃষ্ঠার সেই নোটে বলা হয়, জনবেনেটকে ফিরে পেতে মোট ১,১৮,০০০ ডলার মুক্তিপণ দিতে হবে। কাকতালীয় কিংবা আশ্চর্যজনকভাবে এই টাকার পরিমাণটা ছিল জনের সেবারের বোনাসের সমান। বলা হয়েছিল, পরদিন সকাল ১০টার দিকে কল আসবে রামসের কাছে। জন ও প্যাটসি অপেক্ষা করেন। তবে সেই কল আর আসেনি। সারাদিন ধরে নিজের বন্ধুদের নিয়ে মেয়ের খোঁজে ঘোরাঘুরি করেন জন। তাই বাড়ির ভেতরে খুব একটা খোঁজা হয়নি।

একসময় তদন্তকারী অফিসার লিন্ডা আর্ন্ডট অনুরোধ করেন বাড়ির ভেতরটা ভালো করে খুঁজে দেখতে। কথামতন বাড়ির সবখানে খুঁজতে শুরু করেন জন ও তার বন্ধুরা। বাদ পড়েনি বাড়ির বেজমেন্টটাও। সেটা একসময় কয়লার ঘর হিসেবে ব্যবহৃত হত। সেটার দরজা খুলতেই সবাই দেখতে পান জনবেনেটকে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন তারা। যাক, পাওয়া গিয়েছে হারিয়ে যাওয়া মেয়েকে! তবে খানিক পরেই বুঝতে পারেন তারা, জনবেনেট আর বেঁচে নেই। দড়ির সাথে রঙয়ের ব্রাশ আটকে গলায় ও হাতে পেঁচিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে তাকে। জনবেনেটকে তো খুঁজে পাওয়া গেল। কিন্তু তার হত্যাকারীকে খোঁজা শুরু হলো এবার। উল্লেখ্য, দড়িতে ব্যবহৃত ঐ রঙয়ের ব্রাশটি ছিল জনবেনেটের মা প্যাটসির।

কে এই হত্যাকারী?

জনবেনেটের মৃতদেহ খুঁজে পাওয়ার পর প্রশ্ন ওঠে, কেউ জনবেনেটকে মেরে ফেললে মুক্তিপণ কেন চাইবে? প্যাটসি ও জনের হাতের লেখা মেলানোর জন্য তাদের নোটপ্যাড চাওয়া হয়। প্যাটসির নোটপ্যাড থেকে কাগজ ছিঁড়েই মুক্তিপণ দাবী করা হয়েছিল। কী হয়েছিল সেদিন? কে খুন করেছিল মিষ্টি মেয়েটিকে তাহলে? তার মা?

সবার নজর চলে যায় প্যাটসির দিকে। কিন্তু কোনোভাবেই পুলিশকে কোনো সহযোগিতা করতে রাজী ছিলেন না এই পরিবার। অন্তত পুলিশের কাছ থেকে সেটাই বলা হয়। তবে সেটা কেবল পুলিশের কথা। রামসে পরিবার জানান, প্রথমদিকে পুলিশকে সাহায্য তারা করেছিলেন। কিন্তু পুলিশ তাদেরকে সেই ভিডিও কিংবা জনবেনেটের লাশ- কোনোটাই দেয়নি। ফলে পুলিশকে পাশ কাটিয়ে মেয়ের মৃতদেহ নিয়ে প্রথমে সেটার সৎকার করেন তারা। এরপর ছেলেকে স্কুলে পাঠিয়ে দেন। সেটাই তার মানসিক অবস্থার জন্য ভালো হবে বলে ভাবেন তারা। এরপর ফিরে আসেন বোল্ডারে, পুলিশকে সাহায্য করতে। প্রায় ১৫০ ঘন্টার সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন তারা পুলিশের কাছে, এমনটাই জানান রামসে।

কে মেরেছিল জনবেনেটকে? Source: Vanity Fair

তবে হত্যাকারীকে খুঁজতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হয় সবাইকে। প্রায় যত রকমের সমস্যা তৈরি করা যায় কোনো তদন্তকে সঠিক পথে চালানোর বিরুদ্ধে, তার সবগুলোই করা হয়েছিল জনবেনেটের এই ঘটনাটির ক্ষেত্রে। হত্যার পর বাড়িতে এত মানুষ আসা-যাওয়া করেছে যে, সেখানে কোনো সূত্র পাওয়া সম্ভব ছিলো না।

জন মেয়েকে পাওয়া পর মুখ থেকে ডাক্ট টেপ খুলে ছুঁড়ে ফেলেন। জনবেনেটের মৃত্যুর কারণটাও পরিষ্কারভাবে খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি। মনে করা হয়, খুলিতে চাপ পড়ার কারণেই এই মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনার দুই বছর পর, সবকিছু যখন প্রায় চাপা পড়ে যাচ্ছিল, ঠিক সেই সময় বোল্ডারের এক জেলা আইনজীবী এক গ্র্যান্ড জুরি আহ্বান করেন। পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় আবার জায়গা করে নেয় জনবেনেট। জনসাধারণকে ভেতরের কোনো খবর জানাতে রাজী ছিল না এবার কেউ। তবে শেষপর্যন্ত জনবেনেটের হত্যাকে শিশু নির্যাতন এবং ফার্স্ট ডিগ্রী মার্ডার হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এরপর বেশকিছু ব্যাপার নিয়ে কথা চলতে থাকে। জনবেনেটের অন্তর্বাসে পাওয়া এক পুরুষের ডিএনএ প্রশ্ন তোলে সবার কাছে। পরিচিত কারো ডিএনএর সাথেই মেলেনি সেটা। সেদিন কিনে আনা নতুন অন্তর্বাস হওয়ায় যুক্তি দেওয়া হয় এভাবে যে, ঐ ডিএনএ অন্তর্বাস তৈরি কারখানার কোনো শ্রমিকের হতে পারে। ২০০৬ সালে আবার সামনে চলে আসে জনবেনেট হত্যা রহস্য।

মঞ্চে জনবেনেট; Source: New York Post

থাইল্যান্ডের এক আমেরিকান শিক্ষক নিজেকে জনবেনেটের হত্যাকারী হিসেবে স্বীকার করেন। জোন মার্ক কার নামের সেই মানুষটিকে বোল্ডারে নিয়ে আসা হলেও তার ডিএনএর সাথে সেই পুরুষের ডিএনএ মিলে না যাওয়ায় ছেড়ে দেওয়া হয় তাকে। মনে করা হয়, মানুষের কাছে পরিচিত হতে এমনটা করেছিলেন তিনি। পরবর্তীতে জনবেনেটের শরীরে থাকা অন্য সব কাপড় থেকে টাচ ডিএনএ (কোনোকিছু ছোঁয়ার সাথে সাথে যে ডিএনএ পাওয়া যায়) সংগ্রহ করা হয়। সেখানেও জনবেনেটের অন্তর্বাসে পাওয়া পুরুষের ডিএনএ পাওয়া যায়। নিশ্চিত হয় সবাই যে, প্যাটসি কিংবা জন নয়, অন্য কোনো পুরুষ জনবেনেটকে মেরেছিল। ক্ষমাপ্রার্থনা করা হয় জনবেনেটের বাবা-মায়ের কাছে। না, প্যাটসি কিংবা জন রামসে মারেন নি তাদের মেয়েকে। তাহলে কে? প্রশ্নটির উত্তর এখনও অজানাই রয়ে গিয়েছে।

ভালো থেকো জনবেনেট; Source: Astral Light’s Cloning Center Experiences – blogger

ফিচার ইমেজ: vice.com

Related Articles