‘নারী বিজ্ঞানী’ শব্দটি উচ্চারিত হলেই সবার আগে যার নাম আমাদের মাথায় আসে, তিনি হলেন মেরি কুরি। বিজ্ঞানের জগতে তিনিই সবচেয়ে নামকরা নারী বিজ্ঞানী। আর হবেনই বা না কেন, একাধারে পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নে নোবেল পুরস্কার জয়ের কৃতিত্ব যে আর দ্বিতীয় কোনো মানুষের নেই। বিজ্ঞানে তার অবদানের জন্য পৃথিবীর সকল বিজ্ঞানমনস্ক নারীর জন্য তাকে আদর্শ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
বিজ্ঞানমহল একরকম পুরুষশাসিত হলেও এখানে নারীদের সংখ্যা কিন্তু নেহায়েত কম নয়। মেরি কুরি সম্পর্কে তো আমরা সকলেই কম-বেশি জানি। পৃথিবীর প্রথম প্রোগ্রামার কিন্তু আসলে একজন নারীই ছিলেন। চার্লস ব্যাবেজের প্রথম কম্পিউটারের প্রোগ্রাম রচনা করেছিলেন গণিতবিদ আডা লাভলেস। ওয়াটসন ও ক্রিক ডিএনএ-এর গঠন উন্মোচন করে নোবেল পুরষ্কার পান ঠিকই। কিন্তু ডিএনএ এর এই ডাবল হেলিক্স আবিষ্কারের পেছনে আরেকজন বিজ্ঞানীর অবদান আড়ালে চলে যায়। তিনি হলেন রোজালিন্ড ফ্রাংকলিন।
বিজ্ঞানের ইতিহাসে এভাবে অনেক নারীর অবদানই পুরুষের আড়ালে চলে গেছে কিংবা একেবারে সাড়াই পায়নি। আজকের এই লেখাটিতে আমরা এমনই একজন নারী বিজ্ঞানী সম্পর্কে জানবো। এই বিজ্ঞানীর আগমন ঘটেছিল মেরি কুরি ও রোজালিন্ড ফ্রাংকলিনদেরও কয়েকশ বছর আগে। কিন্তু নারী বিজ্ঞানীদের তালিকায় তার নাম আর সমস্বরে উচ্চারিত হয় না। তিনি ইতালীয় পদার্থবিদ লরা ব্যাসি।
অনেক অপরিচিত একটি নাম মনে হলেও অষ্টাদশ শতাব্দীর ইউরোপে এই নামটি ততটা অপরিচিত ছিল না। কাগজে-কলমে তিনি পৃথিবীর প্রথম পেশাদার নারী বিজ্ঞানীদের মাঝে অন্যতম।
শৈশবেই বিজ্ঞানের পথে যাত্রা শুরু হয় লরা ব্যাসির
লরা ব্যাসি ১৭১১ সালে ইতালির বলোনা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা পেশায় একজন আইনজীবী ছিলেন। পারিবারিক অসুস্থতার কারণে ব্যাসি পরিবারে সন্তানের অকালমৃত্যু যেন এক নিয়মিত ঘটনা ছিল। লরা ব্যাসিই ছিলেন এই পরিবারের একমাত্র সন্তান, যিনি অকালমৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন।
মাত্র পাঁচ বছর বয়সেই ছোট্ট লরা তার প্রতিভার ঝলক দেখাতে শুরু করেন। এসময় তিনি নিজের আত্মীয় লরেঞ্জো স্তেগানির কাছে লাতিন, ফরাসি ভাষা ও গণিত বিষয়ের উপর অধ্যয়ন শুরু করেন। খুব অল্প সময়েই তিনি এই দুই ভাষায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন। নিজের মা প্রায়ই অসুস্থ থাকায় তাদের পারিবারিক ডাক্তার গায়তানো তাক্কোনি নিয়মিত লরার বাসায় যাতায়াত করতেন। অল্প বয়সেই লরার প্রতিভা আর শেখার আগ্রহ তার চোখে ধরা পড়ে। লরার বয়স যখন তের বছর, তখনই তাক্কোনি তার বাবাকে অনুরোধ করে বসেন মেয়ের পড়াশোনার দায়ভার নিজের হাতে নেওয়ার জন্য। এরপর প্রায় সাত বছর ধরে ডাক্তার ও বিশিষ্ট পন্ডিত গায়তানো তাক্কোনি লরা ব্যাসিকে দর্শনশাস্ত্র, পদার্থবিজ্ঞান, যুক্তিবিদ্যা ইত্যাদি বিষয়ে পারদর্শী করে তোলেন।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বদলে গৃহশিক্ষক প্রদত্ত শিক্ষা দিয়েই লরা ব্যাসি নিজের প্রতিভার প্রমাণ দিতে শুরু করেন। নিজ জন্মস্থান বলোনা শহরে তার এই প্রতিভার খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকে। বিভিন্ন শিক্ষাবিদ ও পন্ডিত ব্যাসি পরিবারের দরজায় কড়া নাড়েন বয়সের তুলনায় বুদ্ধিমতী এই মেয়েটিকে একবার দেখার জন্য।
মাত্র ২০ বছর বয়সেই তুমুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তরুণী লরা ব্যাসি
সাল ১৭৩২। বছরটি লরা ব্যাসির জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। দীর্ঘ ৭ বছর তার গৃহ শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন পন্ডিত গায়তানো তাক্কোনি। এই ৭ বছরে তরুণী লরা একে একে গতিবিদ্যা, শারীরবিদ্যা, ইতিহাস, দর্শন, বীজগণিত, জ্যামিতি, প্রাচীন গ্রীক ইত্যাদি বিষয়ে পারদর্শী হয়ে ওঠেন। ভিন্নধর্মী এই বিষয়গুলোতে সমান পারদর্শী হওয়ায় তার গুরু তাক্কোনির নামও চারিদিকে ছড়িয়ে যায়। তাক্কোনি তার ছাত্রীকে আর ঘরে বসিয়ে রাখতে চাননি।
১৭৩২ সালের মার্চ মাসে লরা ব্যাসি বলোনা অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সের সদস্যপদ লাভ করেন। এখানে খুব দ্রুত তিনি বিভিন্ন পণ্ডিত ও শিক্ষাবিদের নজরে আসেন। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন আর্চবিশপ ও পরবর্তীতে নির্বাচিত পোপ প্রোস্পেরো ল্যাম্বারতিনি। বিশপ ল্যাম্বারতিনি লরা ব্যাসিতে মুগ্ধ হয়ে এই তরুণীর পৃষ্ঠপোষকতা শুরু করেন। তিনি ব্যাসির জন্য একটি উন্মুক্ত বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন, যেখানে তরুণী ব্যাসিকে পাঁচজন পণ্ডিতের মুখোমুখি হতে হয়।
এপ্রিল মাসে জনসম্মুখে অনুষ্ঠিত এই বিতর্কে লরা ব্যাসি পুরো ইতালিকে নিজের দক্ষতার প্রমাণ দেন। এখানে তিনি দর্শনের উপর নিজের ৪৯টি গবেষণামূলক প্রবন্ধ সফলভাবে উপস্থাপন করেন। ঐ দিনই বিশপ ল্যাম্বারতিনি লরা ব্যাসিকে নিজের বাসায় দাওয়াত দেন। ব্যাসিকে তিনি পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার সাহস জোগান। এছাড়া লরা ব্যাসির পেশাদারি জীবনের পুরো সময়েই ল্যাম্বারতিনি তাকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করেন।
নিজের দক্ষতার প্রমাণ দেওয়ার পর মে মাসে ইউনিভার্সিটি অফ বলোনা লরা ব্যাসিকে সম্মানসূচক ডক্টরেট উপাধি প্রদান করে। শীঘ্রই এই বিশ্ববিদ্যালয় তাকে অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেয়। তবে এজন্য লরাকে আরেকটি পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। এই পরীক্ষাতেও তিনি সফল হন এবং ইউরোপের প্রথম নারী পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে যাত্রা শুরু করেন। ত্রয়োদশ শতাব্দী থেকেই ইউরোপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী অধ্যাপক থাকার উদাহরণ পাওয়া যায়। কিন্তু লরা ব্যাসিই ছিলেন প্রথম পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক।
সংসারজীবন
১৭৩৮ সালে লরা ব্যাসি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও সহকর্মী জিওভানি গিসেপে ভেরাত্তির সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ভেরাত্তি ছিলেন দর্শনশাস্ত্রের অধ্যাপক। তাদের পরিবারে সন্তান সংখ্যা ছিল অগণিত। বিভিন্ন জায়গায় উল্লেখ আছে যে, তাদের মোট সন্তান সংখ্যা ছিল ১২। তবে বলোনার গির্জার নথিপত্রে তাদের মোট সন্তান সংখ্যা আটজন হিসেবে উল্লেখ করা আছে। দুঃখের বিষয় হলো, তাদের সন্তানদের মাঝে তিনজনই শৈশবকালে মারা যায়। এদের মাঝে দুই কন্যাসন্তানের নাম ছিল ক্যাতেরিনা ও এক পুত্র ফ্লামিনিও। যে পাঁচজন সন্তান জীবিত ছিল তারা হলো জিওভানি, সিরো, গিয়াকোমো, পাওলো এবং তৃতীয় কন্যাসন্তান ক্যাতেরিনা।
অনেক বড় এই পরিবার ও কর্মজীবন একসাথে সামাল দিতে লরা ব্যাসিকে বেশ ঝামেলা পোহাতে হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু স্বামী জিওভানির সহায়তা ও অনুপ্রেরণার কারণে তিনি নিজের জ্ঞানচর্চা অক্ষুণ্ণ রাখতে পেরেছিলেন। স্বামীর কারণেই লরা ব্যাসির পরীক্ষামূলক পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে গবেষণার আগ্রহ বাড়তে থাকে। তাছাড়া বিবাহ পরবর্তী গবেষণাপত্রগুলোতে তিনি তার নামের পদবি ব্যাসি থেকে পরিবর্তন করে ভেরাত্তি রাখেননি। স্বামীর ইচ্ছাতেই তিনি এ কাজটি করেন।
নারী হওয়ায় কর্মজীবনে উপেক্ষিত হতে হয়েছে লরা ব্যাসিকে
বিপরীত লিঙ্গ হওয়ার কারণে বর্তমান সমাজের কর্মক্ষেত্রগুলোতে নারীদের প্রায়ই উপেক্ষা করা হয়। দু’শো বছর আগেও নারীদের এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছিল। উল্টো সেই সময় প্রাতিষ্ঠানিক কর্মজীবী নারীর সংখ্যা একেবারেই কম ছিল। তাই তাদের জন্য পরিবেশটাও ছিল বেশ প্রতিকূল।
বিয়ের পর লরা ব্যাসির জন্য পরিস্থিতি একটু কঠিন হয়ে পড়ে। বিভিন্ন নারীবিরোধী নিন্দুকেরা তার সমালোচনা করতে শুরু করেন। একজন বিবাহিত নারী ঘর-সংসার বাদ দিয়ে পুরুষদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জ্ঞানচর্চা করছেন, এটি অনেকের কাছে দৃষ্টিকটু লাগতে শুরু করে। নিজের চারপাশে এমন নেতিবাচক আবহ নিয়েই তিনি তার কাজ চালিয়ে যান।
পূর্ণকালীন অধ্যাপক হওয়া সত্ত্বেও লরা ব্যাসি তার বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত লেকচার দিতে পারতেন না। তিনি কেবল বিশেষ কিছুদিন লেকচার দিতেন, যখন তা সাধারণ মানুষ ও অন্যান্য নারীদের জন্য উন্মুক্ত ছিল। ১৭৩৯ সালে তিনি তার শিক্ষকতার সুযোগ আরো বৃদ্ধি করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেন। তবে কয়েকজন ছাড়া বেশিরভাগ মানুষই তার অনুরোধ নাকচ করে দেন। এর পরিবর্তে তারা সিদ্ধান্ত নেন লরা ব্যাসিকে বিশ্ববিদ্যালয় তহবিল থেকে অর্থসাহায্য প্রদানের জন্য, যাতে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবর্তে ঘরে বসে পদার্থবিজ্ঞানের নানা পরীক্ষামূলক গবেষণা চালিয়ে যেতে পারেন।
প্রতিকূল কর্মক্ষেত্র মোটেও দমাতে পারেনি লরা ব্যাসিকে
১৭৪০ সালে লরা ব্যাসির পৃষ্ঠপোষক ও অভিভাবক কার্ডিনাল ল্যাম্বারতিনি পোপ নির্বাচিত হন। এতে করে নিজের অভিভাবকের সাথে ব্যাসির দূরত্ব বাড়তে থাকে। তবে নানাভাবে তারা একে অপরের সাথে যোগাযোগ অক্ষুণ্ণ রাখেন। পোপ নির্বাচিত হওয়ার পর ল্যাম্বারতিনি পোপ বেনেডিক্ট ফোরটিন নাম ধারণ করেন। তিনি ইতালির বিভিন্ন জায়গা থেকে ২৪ জন বুদ্ধিজীবী নিয়ে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেন। এই কমিটির নাম দেওয়া হয় বেনেডিতিনি।
এমন খবর কানে আসার পর লরা ব্যাসি নিজেকে এই কমিটির ২৫ তম সদস্য হিসেবে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। পোপের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কমিটির বেশ কয়েকজন সদস্য লরা ব্যাসির আসন অস্বীকার করতে শুরু করেন। কিন্তু পোপ ছিলেন একইসাথে একজন ধর্মপরায়ণ ও বিজ্ঞানমনস্ক ব্যক্তি। লরা ব্যাসিকে কাছ থেকে জানার কারণে এবং যোগ্যতা ছিল বলেই তিনি এই নারীকে তার কমিটিতে ২৫ তম সদস্য হিসেবে যোগ করেন। তবে তার ভোটের অধিকার ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা অন্যান্য সদস্যদের থেকে কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তিনি ছিলেন এই অভিজাত কমিটির একমাত্র নারী সদস্য।
গৃহশিক্ষিকা হিসেবে লরা ব্যাসি
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবর্তে নিজ ঘরে গবেষণা করাতে একরকম সুবিধাই হলো লরা ব্যাসির। তার বাইরে যাওয়ার জন্য আলাদা সময় বের করার দরকার ছিল না। নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী তিনি কাজের সময় বের করতেন। তার কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণের জন্য দেশ-বিদেশ থেকে ছাত্রছাত্রী এসে তার বাড়িতে জড়ো হতো। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোনো হস্তক্ষেপ ছাড়াই তিনি স্বাধীনভাবে তার শিক্ষার্থীদের মাঝে জ্ঞান বিতরণ করতেন। ইউনিভার্সিটি অফ বলোনা তাকে যে বেতন দিত, তা দিয়ে তিনি নিজের ব্যক্তিগত গবেষণার সরঞ্জামও কিনতে পারতেন। এভাবেই তিনি আরামে ও স্বাধীনভাবে নিজের জ্ঞানচর্চা ও শিক্ষকতা চালিয়ে যান।
তৎকালীন সময়ে পদার্থবিজ্ঞানের তত্ত্ব মূলত দুজনের অভিমত দ্বারা বিভক্ত ছিল। একজন হলেন রেনে ডেকার্ট, এবং অপরজন স্যার আইজ্যাক নিউটন। লরা ব্যাসি নিউটনিয়ান বলবিদ্যার একজন একচ্ছত্র সমর্থক ছিলেন। তার যোগসাজশেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে নিউটনিয়ান পদার্থবিদ্যা সংযুক্ত করা হয়। বিভিন্ন বয়সের মানুষ তার কাছ থেকে পদার্থবিজ্ঞান শিখতে আসতেন। ঘরে বসে শিক্ষাদান করলেও লরা ব্যাসির খ্যাতি পুরো ইউরোপে ছড়িয়ে পড়েছিল।
প্রমুখ দার্শনিক ও বিজ্ঞানীর সাথে লরা ব্যাসির পরিচয় ছিল। দার্শনিক ভলতেয়ার লরা ব্যাসি সম্পর্কে বলেন,
লন্ডনে কোনো ব্যাসি নেই। আমি বেশ খুশি হতাম যদি আমি ইংরেজদের একাডেমির পরিবর্তে বলোনা সায়েন্স একাডেমিতে যোগ দিতে পারতাম। যদিও আমাদের একাডেমি নিউটনের মতো বিজ্ঞানী তৈরি করেছে।
বিদ্যুৎ নিয়ে কাজ করার জন্য লুইগি গ্যালভানির সাথে লরা ব্যাসির যোগাযোগ ছিল। তাছাড়া পদার্থবিজ্ঞানের অন্যান্য শাখাতেও তিনি সমান পারদর্শী ছিলেন। ঘরোয়া লেকচার ও গবেষণার জন্য ইউনিভার্সিটি অফ বলোনায় তার বেতনও অনেক বেড়ে যায়। ১৭৭৬ সালে তাকে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণামূলক পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়।
শেষ জীবন
বিভাগীয় প্রধান পদটি লরা ব্যাসি খুব বেশিদিন উপভোগ করতে পারেননি। ১৭৭৮ সালে ৬৬ বছর বয়সে তিনি পরলোক গমন করেন। তিনি ছিলেন বলোনা শহরের অন্যতম বিখ্যাত একজন মানুষ। তার শেষকৃত্যে প্রচুর মানুষ জড়ো হয়েছিল। একজন প্রতিভাবান বিজ্ঞানী ছাড়াও তিনি ছিলেন অত্যন্ত ধর্মপরায়ণ। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তার গবেষণার বেশিরভাগ কাজই তিনি অপ্রকাশিত রেখে গেছেন। চল্লিশের বেশি গবেষণাপত্র লিখলেও তার মাঝে মাত্র চারটি তিনি প্রকাশ করেছিলেন। তৎকালীন সময়ে তার মতো দ্বিতীয় কোনো নারী বিজ্ঞানী সমগ্র ইউরোপে খুঁজে পাওয়া দুস্কর ছিল। তার গবেষণা একেবারে মৌলিক না হলেও নিজের সময় অনুযায়ী তা যথেষ্ট প্রশংসার দাবীদার। তাই অন্যান্য বিখ্যাত নারী বিজ্ঞানীর সাথেও লরা ব্যাসি নামটি সমস্বরে উচ্চারিত হওয়া উচিত।