ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজিতে অনার্সে ভর্তি হলেন এক যুবক। আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইএসসি পাস করে আসা সেই যুবক বেশ ফিটফাট। হাতে সিগারেট, পায়ে দামী নাগরা, সাদা পাঞ্জাবিতে সোনার বোতাম লাগিয়ে ঘুরে বেড়ানো সেই যুবকের সৌখিনতার বাহার দেখে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকতেন অনেকেই। চল্লিশের দশকে স্টাইলিশ বলতে যা বোঝায় তার ষোলআনা একদম রপ্ত করে নিয়েছিলেন আবু নয়ীম মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী। শুধু স্টাইল কিংবা বাইরের চাকচিক্য দিয়েই নয়, এই যুবকের জ্ঞানের ধারও ছিলো বেশ প্রখর। শেক্সপিয়র, বার্নার্ড শ’ কিংবা ভিক্টর হুগো সবই পড়া হয়ে গেছে। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্যিক অঙ্গনে এসে আড্ডা জমাতে বেগ পেতে হয়নি তার।
১৯২৫ সালের ২৭ নভেম্বর সেই যুবকের জন্ম হয়েছিলো খানবাহাদুর আবদুল হালিম চৌধুরী আর উম্মে কবির আফিয়া বেগমের ঘরে। ইংরেজ আমলের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল হালিম ছিলেন ইংরেজী আর আরবির পন্ডিত। চৌদ্দজন ছেলেমেয়ের সবাইকে রীতিমত হাতে ধরে প্রাথমিক শিক্ষা দিয়েছেন তিনি। চাকরির বেতন পেয়ে মাসে মাসে বই কিনেছেন, বাড়ি জুড়ে গড়ে তুলেছেন বইয়ের সাম্রাজ্য। সন্তানদেরকে মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত ছড়িয়ে থাকা বইয়ের রাজ্যে ডুবে থাকার প্রেরণা দিয়ে গেছেন তিনি। আর এই অনুপ্রেরণা পেয়েই হয়তো একই পরিবার থেকে বেরিয়ে এসেছেন জাতীয় অধ্যাপক কবির চৌধুরী, অভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদার আর নাট্যকার মুনীর চৌধুরী। 1
কিন্তু মুনীর চৌধুরী শুরু থেকেই একটু আলাদা ছিলেন। ভাইবোনেরা তার সাথে পড়ায় পাল্লা দিয়ে পেরে উঠতেন না। উৎসাহ দেওয়ার জন্য বাবা তাকে সাতাশ খন্ডের এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন। চৌদ্দ বছর বয়সের মুনীর চৌধুরী বাবার দেওয়া এনসাইক্লোপিডিয়ায় ডুব দিলেন।
১৯৩৫ সালে মুনীর চৌধুরী ভর্তি হলেন ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে। স্কুলে তার হাতে পাঠ্য বইয়ের বাইরে হাজারো রকমের বই দেখে স্কুলের সহপাঠীরা তার নাম দিয়ে দিলো ‘চালিয়াত’। অনেকে তো সন্দেহ ভরে তাকে জিজ্ঞেস করতো, “মুনীর তুই কি আসলেই বই পড়িস, না লোক দেখাস” ? মুনীরও কম যেতেন না, বই হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলতেন, “প্রশ্ন করেই দেখ, বলতে পারি কিনা!”
১৯৪১ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন মুনীর চৌধুরী। এবার বাড়ির কড়া নিয়ম থেকে বেরোতে পারবেন বলে মনে একটু আশা পাচ্ছিলেন। সুযোগও পেয়ে গেলেন। ভর্তি হয়ে গেলেন আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে। মুনীর চৌধুরী পরে একবার বলেছিলেন,
“আলীগড় আমায় মোহিত করতে পারেনি। তবে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের যা আমাকে আকর্ষিত করেছিল, তা হচ্ছে এর বিশাল পাঠাগার। বিশ্বের সকল লেখকের সাথে আমার ঘনিষ্ঠ যোগ হয় এই পাঠাগারে।”
বাড়ির বাইরে সকল অনুশাসন থেকে মুক্ত মুনীর চৌধুরী পাঠ্যক্রমের বাইরের পড়ায় এতটাই ডুব দিলেন যে, শেষপর্যন্ত আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত পরীক্ষার দুই পেপার সম্পূর্ণ না দিয়েই পালিয়ে বাড়ি ফিরলেন। দুই পেপার পরীক্ষা না দিয়েও সেকেন্ড ক্লাস পেয়ে গিয়েছিলেন আইএসসিতে। মার্কশিট বের হলে দেখা গেলো, কোনো কোনো বিষয়ে এত বেশি মার্ক পেয়েছিলেন যে দুটো পরীক্ষা ঠিকঠাক দিলে ফার্স্ট ক্লাসই পেয়ে যেতেন। এরপর ভর্তি হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে। আলীগড় থেকে জাঁকজমকটা বেশ ভালোই শিখে এসেছিলেন। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেই পরিচয় হলো রবি গুহ, দেবপ্রসাদ, মদন বসাক, সরদার ফজলুল করিমের মতো উজ্বল নক্ষত্রদের সাথে। বুঝতে পারলেন, জীবনে শেখার অনেক কিছু তখনও বাকী। এজন্যই হয়তো তিনি বলেছিলেন,
“তাদের সংস্পর্শে এসে দেখলাম আমার এতদিনের আভিজাত্য, চাকচিক্য, সৌখিনতা আর চালিয়াতি সব অন্তঃসারশূন্য, সব ফাঁকি। সে সময় পড়ুয়া ছাত্র হিসেবে আমার নাম হয়েছে। এদের চোখে জীবনকে উপলব্ধি করলাম।”
ধীরে ধীরে যুক্ত হয়ে পড়লেন বামপন্থী আন্দোলনের সাথে। অনলবর্ষী বক্তা হিসেবে মুনীর চৌধুরীর খ্যাতি তখন পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে। বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের ঢেউও তখন একটু একটু আছড়ে পড়ছিলো পূর্ব বাংলার বেলাভূমিতে। লেখালেখি করবেন বলে তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়েই পরিচয় হয় লিলি মির্জার সাথে। দুজনারই দুজনকে ভালো লেগে যায়। সেই ভালো লাগা কালক্রমে রূপ নেয় ভালবাসায়। 2
১৯৪৮ সালের শুরুর দিকে তিনি কলকাতায় গিয়েছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য। সেই বছরেই মুনীর চৌধুরী এমএ পাস করলেন, রাজনীতিও ছেড়ে দিলেন, ঢাকা থেকে দূরে গিয়ে পালিয়ে বাঁচতে চাইলেন রাজনীতির উত্তপ্ত ময়দান থেকে। অনেকটা সেই কারণেই খুলনার দৌলতপুরে ব্রজলাল কলেজে চাকরি নিলেন ইংরেজির প্রভাষক হিসেবে। তখন তার মাথায় ঘর-সংসার শুরুর চিন্তা বাসা বেঁধেছে। তাঁর ডায়েরিতে তিনি নিজের এই পরিবর্তন নিয়ে তিনি লিখেছেন,
“খুলনার প্রফেসর মুনীর চৌধুরী আর ১৯৪৮ এর শুরুর ভাগের নেতা মুনীর চৌধুরী সম্পূর্ণ দুটি আলাদা মানুষ। শেষের মানুষটাই আসল। দুর্বল, ভীরু, পলাতক, সাধারণ, স্বাভাবিক, স্বাপ্নিক।”
কিন্তু পরীক্ষার প্রশ্নপত্র আর খাতা সংগ্রহ করতে এসেছিলেন ঢাকায়, আর সেই সুযোগেই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে বসলো। জেলের নিরানন্দ জীবনে তিনি আরো একটু একটু করে লেখালেখির অনুপ্রেরণা পেলেন। বাবা উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, তিনি সুপারিশ করলে হয়তো সহজেই ছাড়া পেয়ে যেতেন। কিন্তু তার বাবা তা করেননি। তাই জেলে বসে অলস সময়ে লেখালেখি, বই পড়া আর মুক্তির অপেক্ষায় দিন গুনছিলেন। তার গ্রেফতার নিয়েও বেশ হতাশ ছিলেন তিনি। জেলখানায় বসে লেখা ডায়েরিতে তিনি লিখেছিলেন,
“গোয়েন্দা পুলিশের বুদ্ধি বলিহারি! গভর্মেন্টের মুণ্ডু যখন মহোৎসাহে সর্বত্র সউচ্চ কন্ঠে চিবুচ্ছিলাম তোমরা তখন আমায় গ্রেফতার করলে না। তোমাদের সঙ্গে আপোষ করে একটা শান্তিপূর্ণ নতুন জীবন শুরু করব বলে যেই চাকরি নিয়েছি অমনি তুমি আমার ঘাড় মটকে জেলে ফটকের ভেতর ছুড়ে ফেলে দিলে।” 3
১৯৪৯ সালের চব্বিশ জুলাই তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। সেই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর লিলি মির্জাকে বিয়ে করেন মুনীর চৌধুরী। ১৯৫০ সালে ঢাকায় এসে জগন্নাথ কলেজে শিক্ষকতা শুরু করলেন তিনি। সেই বছরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন তিনি। ছাত্রজীবন থেকে রাজপথে বক্তৃতা তো আর কম দেননি। আর এই বাগ্মীতার কারণেই হয়তো খুব অল্প সময়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনপ্রিয় শিক্ষকদের একজন হয়ে ওঠেন মুনীর চৌধুরী।
রাজনীতির সাথে আপোষ করলেও ন্যায়ের সাথে কোনোদিন আপোষ করেননি তিনি। ১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলনে মায়ের ভাষার ন্যায্য দাবী আদায়ে রাস্তায় নামা শিক্ষার্থীদের মিছিলে পুলিশের আগ্রাসন আর হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে আওয়াজ তুলেন তিনি। শিক্ষকদের প্রতিবাদ সভায় বক্তৃতা করেন, ফলে আবারো বন্দী করা হয় তাকে।
জেলের অন্ধকারে নিক্ষিপ্ত হয়ে আরো জেগে ওঠেন মুনীর চৌধুরী। জেলে তখনকার রাজবন্দীদের খাতায় আবদুল হামিদ খান ভাসানী, আবুল হাশিম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, অলি আহাদ, মওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ, অধ্যাপক অজিত গুহ, রণেশ দাশগুপ্তের মতো বিখ্যাত ব্যক্তিদের পাশে যোগ হয় তরুণ শিক্ষক মুনীর চৌধুরীর নাম।
রণেশ দাশগুপ্ত মুনীর চৌধুরীকে অনুরোধ করেন ১৯৫৩ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি জেলেই মঞ্চায়ন করা যাবে শহীদদের স্মরণে ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট নিয়ে এমন একটি নাটক লিখবার জন্য।
জেলখানায় মঞ্চস্থ করার জন্য সেট আর পর্যাপ্ত আলো পাওয়া যাবেনা অনেকটা এই কারণ মাথায় রেখে নাটকের ঘটনাস্থল হয়ে উঠলো ‘গোরস্থান’ আর সময় ‘শেষ রাত্রি’। নাটকের শুরুতেই মুনীর চৌধুরীর নির্দেশ ছিলো,
‘মঞ্চে কোনোরূপ উজ্জ্বল আলো ব্যবহৃত হইবে না। হারিকেন, প্রদীপ ও দিয়াশলাইয়ের কারসাজিতে নাটকের প্রয়োজনীয় ভয়াবহ, রহস্যময়, অশরীরী পরিবেশকে সৃষ্টি করিতে হইবে।’
জেলখানায় রাতের আধারে বাতি নিভিয়ে এই নাটককে মঞ্চস্থ করার হবে এই চিন্তা থেকেই নারী চরিত্র রাখেননি তিনি। তবে নাটকের প্রয়োজনীয় মুহূর্তে ‘ইন্সপেক্টর হাফিজ’ নামের চরিত্র মাথায় চাদর টেনে নারীর অভিনয় করবেন। জেলখানাতেই রাজবন্দীরা মঞ্চস্থ করেছিলেন এই নাটক। তবে ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, নাট্যকার মুনীর চৌধুরী অন্য কক্ষে বন্দী থাকার কারণে এতে সরাসরি যোগ দিতে পারেননি।
‘কবর’ নাটকটি মুনীর চৌধুরীর অন্যতম সেরা সাহিত্যকর্ম। তবে নাটক যে অন্যায়ের প্রতিবাদের ভাষা হতে পারে, এই মনোভাব সৃষ্টির পেছনে মুনীর চৌধুরীর ‘কবর’ নাটকের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বাংলাদেশের অভ্যুদয় এবং পরবর্তীকালের নানা রাজনৈতিক প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে রচিত শত-সহস্র নাটকের বাতিঘর হিসেবে কাজ করে গেছে ‘কবর’।
তবে জেলে বসে ‘কবর’ ছাড়াও অনুবাদ করেছেন জর্জ বার্নার্ড শ’র ‘You never can tell’। অনূদিত গ্রন্থের বাংলা নাম দিয়েছিলেন ‘কেউ কিছু বলতে পারে না’। জন গলজ্ওয়র্দি’র ‘The Silver Box’ এর অনূদিত রুপের নাম দিয়েছিলেন ‘রূপার কৌটা’।
জেলে থাকাকালীন আরেক বন্দী অধ্যাপক অজিত গুহের কাছ থেকে বাংলা ভাষা আর সাহিত্যের পাঠ চুকিয়ে নিলেন। ১৯৫৩ সালে জেলে বসেই বাংলায় এমএ পরীক্ষা দেন। লিখিত পরীক্ষায় পাশের পর ভাইভা দিতে পুলিশের পাহারায় এসেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরীক্ষকের রুমে ঢুকে দেখলেন সবাই নিস্তব্ধ চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। পরীক্ষক হিসেবে থাকা ড. এনামুল হককে ড. শহীদুল্লাহ বলেছিলেন, “ওনাকে আর কী প্রশ্ন করবো? রেজাল্টটা জানিয়ে দিই।” 4
রেজাল্টটা ছিলো ‘প্রথম বিভাগে প্রথম’। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ইংরেজির ফুলটাইম অধ্যাপকের পাশাপাশি বাংলা বিভাগের খণ্ডকালীন অধ্যাপকের দায়িত্ব পেলেন। ১৯৫৬ সালে রকফেলার বৃত্তি নিয়ে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষাতত্ত্ব পড়তে গেলেন। ১৯৬৯ সালে বাংলা বিভাগের প্রধানও নিযুক্ত হয়েছিলেন মুনীর চৌধুরী।
বাংলা সাহিত্যে উজ্জ্বল অবদানের জন্য ১৯৬২ সালে বাংলা একাডেমি পুরষ্কার, ‘মীর মানস’ গ্রন্থের জন্য ১৯৬৫ সালে দাউদ পুরষ্কার, পাক-ভারত যুদ্ধ নিয়ে তার রচনা সংকলন ‘রণাঙ্গন’ এর জন্য ১৯৬৬ সালে তিনি লাভ করেন ‘সিতারা-ই-ইমতিয়াজ’। ১৯৭১ সালের ১৫ই মার্চ বাঙ্গালীদের প্রতি অবিচার আর অনাচারের প্রতিবাদে ডাক দেওয়া অসহযোগে সাড়া দিয়ে এই সম্মান বর্জন করেন মুনীর চৌধুরী। 5
যে বাংলা ভাষার জন্য লড়াই করেছেন, জেল খেটেছেন, সেই বাংলা টাইপ করার জন্য উন্নতমানের কি-বোর্ডের প্রয়োজন তিনি অনুভব করছিলেন অনেকদিন ধরেই। শেষমেশ নিজেই খাটাখাটনি করে ‘মুনীর অপ্টিমা‘ নামের কি-বোর্ড দাঁড় করিয়ে দিলেন। এই কি-বোর্ড বাংলা টাইপিংয়ে দ্রুততা আনে, ফলস্বরুপ এর জনপ্রিয়তাও বাড়ে।
বাংলা আর বাঙ্গালীর প্রতি বৈষম্যের প্রতিবাদে সারা জীবন সোচ্চার ছিলেন তিনি। ১৯৬৬ সালে সরকার যখন রেডিও আর টেলিভিশনে রবীন্দ্রসংগীত প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারী করে তার প্রতিবাদে এগিয়ে আসেন মুনীর চৌধুরী।
ক্লাসরুম থেকে সাহিত্যসভা সব জায়গাতেই সমান জনপ্রিয় ছিলেন মুনীর চৌধুরী। এক সাহিত্য সভায় কবি আব্দুল কাদির চৌধুরী তাকে আগেই বলে নিয়েছিলেন,
‘ও মুনীর স্যার, আপনি কিন্তু পরে বলবেন, আমরা আগে বলে নিই। আপনি আগে বললে আমাদের কথা শোনার জন্য কোনো শ্রোতা থাকবে না।’
তুমুল জনপ্রিয়তা আর তুখোড় মেধার কারণেই হয়তো নীল নকশায় মুনীর চৌধুরীর নামটি ছিলো প্রথম সারিতে। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বাসা থেকে তাকে ধরে নিয়ে যায় পাকিস্তানী সেনাবাহিনীদের দোসর আল-বদরের সদস্যরা। বাংলাদেশকে পঙ্গু করে দেওয়ার মহাযজ্ঞে একজন একজন করে সোনালি সন্তান হারিয়ে যেতে থাকে রায়েরবাজারের বধ্যভূমিতে। রায়েরবাজারের সেই বধ্যভূমি থেকে অন্য আরো অনেক বুদ্ধিজীবীর মতোই আলাদা করে সনাক্ত করা যায়নি মুনীর চৌধুরীকে।
‘কবরে’র স্রষ্টা হয়তো ঘুমিয়ে আছেন সেই গণকবরেই, কিন্তু তার সৃষ্টিকর্ম, প্রতিবাদী চেতনা ধারণ করেই একটু একটু করে জেগে উঠেছে শিশু বাংলাদেশ।
তথ্যসূত্র:
- ‘মুনীর চৌধুরী রচনাবলী’ (১৯৮২); বাংলা একাডেমি; পৃষ্ঠা: ৬৮৮
- ‘দিনপঞ্জি-মনপঞ্জি-ডাকঘর’ (২০১৫); প্রথমা প্রকাশন; পৃষ্ঠা: ১১-১২
- ‘দিনপঞ্জি-মনপঞ্জি-ডাকঘর’ (২০১৫); প্রথমা প্রকাশন; পৃষ্ঠা: ২৪-২৫
- ‘মুনীর চৌধুরী রচনাবলী’ (১৯৮২); বাংলা একাডেমি; পৃষ্ঠা: ৬৯১
- ‘একাত্তরের দিনগুলি'(১৯৮৬); সন্ধানী প্রকাশনী; পৃষ্ঠা: ২৬
ফিচার ইমেজ: alalodulal.org