Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

পথের পাঁচালীর ১১টি অজানা গল্প

১৯৫৫ সালের ২৬ আগস্ট মুক্তি পেয়েছিল ভারতবর্ষের ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সিনেমা ‘পথের পাঁচালী’। সত্যজিৎ রায়; বাংলা সিনেমার জগতে অনন্য এই ব্যক্তিত্ব তার সমৃদ্ধ পথচলার শুরু করেন এই সিনেমাটি পরিচালনার মাধ্যমে। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত ‘পথের পাঁচালী’ সিনেমাকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। সিনেমা অনুরাগী ব্যক্তিমাত্রই যে এই ছবি দেখেছেন, তা সহজেই অনুমেয়। পর্দার সামনে পথের পাঁচালীর মনোজ্ঞ এক পরিবেশনা দেখতে পেলেও তার নির্মাণের পেছনের গল্পটা সবসময় সুখকর ছিল না। বলা যায় সম্ভব-অসম্ভবের দোলাচলে বারবার অনিশ্চয়তা দেখা দিচ্ছিল এই সিনেমা তৈরির গোটা সময়জুড়েই। ‘পথের পাঁচালী’র তেমন বেশ কিছু অজানা গল্প নিয়েই আজকের আয়োজন।

১.

এই সিনেমা নির্মাণের মাঝপথে বন্ধ হয়ে যায় শ্যুটিং। তাও আবার টাকার অভাবে। পরবর্তীতে পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ডা. বিধান চন্দ্র রায়ের নিজের উদ্যোগ গ্রহণের ফলে বাকি ফান্ড পাওয়া গিয়েছিল। সেটাও যে খুব সহজে পাওয়া গিয়েছিল তা নয়। ওই সময়ে রাজ্য সরকারের অনেকেই এটাকে ডকুমেন্টরি ধরনের হবে মন্তব্য করেছিল। শেষ পর্যায়ে এই টাকাটা ‘সড়ক ব্যবস্থাপনা’র জন্য ব্যয় হিসেবে পাবলিক রেকর্ডে তুলে সত্যজিৎ রায়কে দেওয়া হয়। 

© Producer: Government of West Bengal

২.

দীর্ঘ পাঁচ বছরের নির্মানযজ্ঞে অন্তত তিনটি ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা ছিল যা ঘটলে এই ছবির সকল প্রচেষ্টাই মুখ থুবড়ে পড়তো। এক. যদি অপুর গলার স্বর পরিবর্তন হয়ে যেতো; দুই. ইন্দিরা ঠাকরুন (অপুর দাদী) যদি মারা যেতেন; তিন. যদি দুর্গা বড় হয়ে যেতো। বলা বাহুল্য, এই তিনজনেরই বয়স এমন একেকটা পরিণতির দিকে যাচ্ছিল।

৩.

এই সিনেমার শ্যুটিংয়ের আগে সত্যজিৎ রায় কখনো কোনো দৃশ্য বা ছবি পরিচালনা করেননি। তার সিনেমাটোগ্রাফার সুব্রত মিত্রও এর কখনো সিনেমাটোগ্রাফি করেননি। এমনকি এই সিনেমা করার জন্য যে লেন্স ব্যবহার করা হয়, সেই ১৬ মি.মি লেন্সটিও তিনি ধার করেছিলেন অন্য একজনের কাছ থেকে। এই সিনেমার শিশুশিল্পীদেরকে একবারের জন্য স্ক্রিনটেস্টও করানো হয়নি শ্যুটিংয়ের আগে।

© Producer: Government of West Bengal

৪.

এই ছবির বাজেট যোগাতে গিয়ে একপর্যায়ে সত্যজিৎ রায়কে তার অনেকগুলো দুর্লভ এলপি (লং প্লেয়িং রেকর্ড) বিক্রি করে দিতে হয়। তিনি বিক্রি করে দেন তার জীবনবীমাও। স্ত্রী বিজয়া রায় বন্ধক রাখেন অলংকারাদি। 

৫.

এই ছবির পূর্ণাঙ্গ স্ক্রিনপ্লে তৈরি করা হয়নি। সংলাপসূত্র ঘটাতে বেশিরভাগ সংলাপ ও দৃশ্য সংগ্রহ করা হয় সত্যজিৎ রায়ের বিভিন্ন চিত্রকর্ম এবং নোট থেকে।

৬.

এই সিনেমার মায়ের চরিত্রে সর্বজয়া এবং কাল্ট ক্লাসিক চরিত্র দুর্গার ছোটবেলার চরিত্রে অভিনয় করা শিল্পীরা, বাস্তব জীবনেও মা-মেয়ে ছিলেন। সর্বজয়ার আসল নাম করুণা ব্যানার্জি, দুর্গার ছোটবেলার চরিত্রে অভিনয় করা শিল্পীর আসল নাম রুনকি ব্যানার্জি। দুর্গার কৈশোরের চরিত্রে অভিনয় করেন উমা দাশগুপ্ত।

© Producer: Government of West Bengal

 

© Producer: Government of West Bengal

৭.

অডিশনে সত্যজিৎ রায় যখন অপু চরিত্রে কারো উপরেই সন্তুষ্ট হতে পারছিলেন না, তখন প্রতিবেশির সাথে খেলতে দেখা অবস্থায় সুবীর ব্যানার্জিকে নেওয়ার পরামর্শ দেন তার স্ত্রী বিজয়া রায়। সুবীরের বাবা যখন রাজি হচ্ছিলেন না তখন সত্যজিৎ তাকে বলেন, “আজ আপনার সন্তানকে বা আমাকে কেউই চিনে না। কিন্তু আমি এমন একটি সিনেমা বানাব যা গোটা বাংলা সিনেমার ইতিহাস বদলে দিবে। তখন গোটা বাংলা আমাদের দুজনকেই চিনে নেবে।”

কণ্ঠে যার এত আত্মবিশ্বাস ছিল, তার তো এমন সিনেমা বানিয়ে দেখানোই স্বাভাবিক।

৮.

এই ছবি সবার আগে দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন পণ্ডিত রবি শংকর। তিনি তখন কেবল তার ক্যারিয়ার শুরু করেছেন। এই সিনেমার মিউজিক কম্পোজিশনের সুবিধার্থে প্রথম অর্ধেকটা মুভি তিনি দেখার সুযোগ পান। তা দেখে উৎসাহিত হয়ে একদিনেই টানা ১১ ঘণ্টা সময় ব্যয় করে সব রেকর্ডিং সম্পন্ন করেন।

সত্যজিৎ রায় ও পণ্ডিত রবি শংকর; Image Source: The Daily

৯.

ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু সত্যজিতের আমন্ত্রণ পেয়ে এই সিনেমার প্রিমিয়ারে যান। সিনেমা দেখে অভিভূত হয়ে তৎক্ষনাৎ এটি কান চলচ্চিত্র উৎসবে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু অসংখ্য সিনেমা সমালোচক এই ‘পথের পাঁচালী’কে সিনেমা ভাবতে নারাজ ছিলেন। সমালোচনা উপেক্ষা করেই নেহেরু নিজের সিদ্ধান্তে এই সিনেমা কানে পাঠান। কানে এই চলচ্চিত্রটি যখন জুরি বোর্ডের সামনে প্রিমিয়ার হচ্ছিল, তার আগে তারা আরো চারটি সিনেমা দেখে নিয়েছেন। তাই গড়িমসি করছিলেন ভারতীয় সিনেমা না দেখার জন্য। কিন্তু আগের প্রিমিয়ারে দর্শকেরা অধিক গ্রহণযোগ্যতা দেখানোয় সিনেমাটি সেই মধ্যরাতেই দ্বিতীয়বার প্রিমিয়ার হয়। সেবার কান চলচ্চিত্র উৎসবে পথের পাঁচালী ‘বেস্ট হিউম্যান ডকুমেন্ট’ হিসেবে বিবেচিত হয়।

১০.

সত্যজিৎ রায় যখন এই ছবির ফান্ডিংয়ের ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী বিধান চন্দ্র রায়ের সিদ্ধান্তের আশায় দিন পার করছিলেন তখন একটি অদ্ভুত ঘটনা ঘটে। একটি সাদা পেঁচা তার বেডরুমের জানালায় এসে বসে। সাদা পেঁচাকে শাস্ত্রে লক্ষ্মীর সাথে সম্পর্কিত ধারণা করা হয় বলে তার প্রতিবেশিরা নানাভাবে ওই পেঁচাকে নিজেদের কাছে নিতে চাইছিলেন। কিন্তু পেঁচাটি কোনোভাবেই ওই জায়গা থেকে নড়ছিল না। টানা তিনদিন এক জায়গায় বসে থাকে এটি। ”এটি কোথা থেকে এলো, কোথায় বা হারিয়ে গেলো কেউই কিছু জানতে পারে নি”, সত্যজিৎ রায়ের স্ত্রী বিজয়া তার আত্মজীবনী ‘মানিক ও আমি’তে উল্লেখ করেন এই ঘটনাটি।

বিজয়া রায় ও সন্দীপ রায়ের সাথে সত্যজিৎ রায়; Image Source: Film History Pics/Twitter

১১.

১৯৯৩ সালের এক অগ্নিকাণ্ডে এই ছবির মূল নেগেটিভটি নষ্ট হয়ে যায়। পরবর্তীতে ওই নষ্ট ফিল্মকে ডিহাইড্রেটেড করে, স্ক্যান আর রিপেয়ারিংয়ের মাধ্যমে ‘ফোরকে’ রেজ্যুলেশন দেওয়া হয়। আমরা বর্তমানে বিভিন্ন মাধ্যমে যে পথের পাঁচালী ছবিটি দেখি তা মূলত ওই রিপেয়ারড ফিল্ম। 

তথ্যসূত্র:

হিন্দুস্থান টাইমস, এনডিটিভি, দি টাইমস অব ইন্ডিয়া, মানিক ও আমি (বিজয়া রায়ের আত্মজীবনী)

This article is on 11 facts about Pather Panchali, a film directed by Satyajit Ray.

Featured Image © Producer: Government of West Bengal

Related Articles