জনরা হিসেবে ‘অ্যাকশন’ ঠিক পছন্দের ক্যাটাগরিতে না পড়লেও, ‘অ্যান অ্যাকশন হিরো’- সিনেমার নামেই যখন অ্যাকশন, তা সত্ত্বেও সিনেমাটি দেখতে বসার কারণ নায়ক আয়ুষ্মান খুরানা নিজেই। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই একের পর এক ধারাবাহিকতার বাইরে সিনেমা উপহার দিয়ে আসছেন আমাদের। আন্ধাধুন, আর্টিকেল ১৫, ভিকি ডোনার, বালা, বাধাই হো, ডক্টর জি-র মতো সিনেমা বাছাই করে আয়ুষ্মান মুগ্ধ করে রেখেছেন সবাইকে। সেই বিশ্বাস থেকে এই সিনেমা যে শুধু অ্যাকশনে আটকে থাকবে না সেটুকু নিশ্চয়তা যেন ছিলই মনে।
২০২২ এর ডিসেম্বরে হলে মুক্তি পায় ‘অ্যান অ্যাকশন হিরো’। কিন্তু ২০২৩ এর ২৭ জানুয়ারি ওটিটি প্লাটফর্ম নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেলে বেশ সাড়া ফেলে। বলিউডের সেরা অ্যাকশন সিনেমা হিসেবে অভিহিত করেন অনেকে। হলিউডের অ্যাকশনের মাপকাঠিতে বিচার করে এগিয়ে রাখেন। এছাড়া মিশ্র অনুভূতিও দেখা যায় অনিরুদ্ধ আইয়ার পরিচালিত এই সিনেমা ঘিরে।
সিনেমার ভেতরে গল্প এবং সেখান থেকে নায়কের নিজের জীবনের গল্প নিয়ে সাজানো এই সিনেমায় সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব স্ক্রিপ্টরাইটারদের। একটি সহজ–সরল প্রতিশোধের গল্পকে কমেডি আর স্যাটায়ারের সাহায্যে অন্য মাত্রায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সংলাপের মধ্যে ডার্ক কমেডি যেন ব্রেইনের মধ্যে ‘অ্যাকশন’। যেমন, সিনেমায় টেলিভিশনের খবরে সাংবাদিক শাস্তি কী হতে পারে সেক্ষেত্রে জেল হলে T, দেশ থেকে বের করে দেওয়া হলে R, ফাঁসি হলে P এবং তিনটিই চাইলে TRP। আর TRP এর অর্থ Television Rating Point। এরকম ছোট ছোট স্যাটায়ারে ভরপুর সিনেমাটি।
গল্পটি একজন হিরোকে নিয়ে। ভারতের হরিয়ানায় নায়ক-নেতার দ্বন্দ্বে হয়ে যায় একটি খুন। সেই খুনের জন্যই হতে থাকে একের পর এক টুইস্ট। সিমেনায় বলিউড ইন্ডাস্ট্রির সেরা নায়ক মানব তার ক্যারিয়ারের সেরা সময় থেকে হয়ে গেলেন পলাতক আসামী। বলা বাহুল্য, মানবের চরিত্রের অভিনয় করেন আয়ুষ্মান খুরানা। খুনের দায় এড়াতে আদালতে সব সত্যি প্রমাণ করতে লন্ডনে যান তিনি, কারণ তিনি ধরা দিতে নারাজ। এরপর তাকে খুঁজতে গিয়ে ঘটতে থাকে একের পর এক ঘটনা, যা অনুমান করা প্রায় অসম্ভব।
সিনেমায় প্রধান খলনায়ক হিসেবে থাকেন জয়দীপ আহলাওয়াত। চরিত্রের নাম থাকে সেখানে বোরা সোলাংকি। যে ব্যক্তি খুন হয়, তার বড় ভাইয়ের চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। এছাড়াও নিরাজ মাধবকে দেখা যায় এই সিনেমায়। শেষ পর্যন্ত চলতে থাকে আয়ুষ্মান-জয়দীপের বিভিন্ন খেলা। ইন্টারন্যাশনাল ডনের আখড়ায় একই ধরনের খুনের ঘটনার পুনরাবৃত্তিতে নতুন গল্প সাজান।
‘অ্যান অ্যাকশন হিরো’ সিনেমায় কিছু ভালো গান ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে “Ghere’’ বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে। গানটি সিনেমার বিভিন্ন মোড় নেওয়ার সাথে মানানসই। এছাড়া দুটি আইটেম গানও রয়েছে, যেগুলোর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। কারণ, এখন আর সেই দিন তো নেই যে আইটেম গান দিয়ে দর্শককে আকৃষ্ট করতে হবে! এই দুটি গানে কাজ করেছেন মালাইকা শেহরওয়াত এবং নোরা ফাতেহি।
সিনেমায় পুলিশ এবং মিডিয়ার কর্মকান্ড এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। মানবের বিভিন্ন পরিস্থিতিতে তাদের রূপ বদল দিয়ে মিডিয়ার খারাপ দিকগুলো দেখিয়েছেন পরিচালক। পুলিশ কীভাবে হরিয়ানার নেতার কথায় বন্দী সেটাও দেখা যায়।
কিছু কিছু দৃশ্যের যুক্তি না খোঁজাই ভালো। গল্পের দুর্বলতা কিছুটা ধরা পড়ে এখানে। কীভাবে নিরাজের গাড়িতে জয়দীপ উঠে গেল, লন্ডনের বাড়িতে গিয়ে পৌঁছল ইত্যাদি ছোটখাট ব্যাপার এড়িয়ে গিয়ে বেশ আনন্দায়কই হবে সিনেমাটি।
তবে, প্রথম অনুচ্ছেদ পড়ে অ্যাকশনপ্রেমীদের ভয় পাবার কোনো কারণ নেই। আয়ুষ্মানের ভরপুর অ্যাকশন আছে এই সিনেমায়। ‘অ্যাকশন হিরো’ নিজের জীবনেও কতটা সিনেমার জন্য শেখা অ্যাকশনকে কাজে লাগায় সেটাই দেখা যায় এই সিনেমায়। এছাড়াও আছে অনুমান করতে না পারা একের পর এক দৃশ্য। সব মিলিয়ে দারুণ এক ‘প্যাকেজ’ বলা যায় ‘অ্যান অ্যাকশন হিরো’কে।