‘অ্যানিমেল ফার্ম’ ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক জর্জ অরওয়েলের রচিত একটি রূপকধর্মী ব্যঙ্গাত্মক উপন্যাস। ১৯৪৫ সালের ১৭ই আগস্ট ইংল্যান্ডে প্রথম প্রকাশিত হয় বিংশ শতাব্দীর ইংরেজি সাহিত্যে দাপুটে এই ব্যঙ্গাত্মক উপন্যাসটি। জর্জ অরওয়েলের মতে, বইটি ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবের ঘটনা এবং পরবর্তীতে সোভিয়েত ইউনিয়নে স্তালিন যুগের আবহ প্রতিফলিত হয়েছে। ১৯১৭ সালে যে বিপ্লব ঘটে স্তালিনের শাসনামলে এই বিপ্লবের আদর্শ পুরোটাই যেন নস্যাৎ হয়ে যায়। স্তালিনের সেই অসঙ্গতিপূর্ণ কর্মকাণ্ডকেই সার্বিকভাবে ব্যাঙ্গ করা হয়েছে এই উপন্যাসটিতে। বইটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন লেখা। তখন পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলোর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হিটলার শাসিত নাৎসিদের বিরুদ্ধে লড়াই করছিলো রাশিয়া। তাই রাশিয়া ছিল ব্রিটেনের মিত্র।
বইটি ছিল সে সময়কার সোভিয়েত সরকারের শাসনপদ্ধতির ওপর মর্মভেদী আক্রমণ আর তাই প্রকাশকরা চাননি রাশিয়ার বিরুদ্ধে কোনো লেখা প্রকাশ হোক এবং ব্রিটিশ-রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের কোনো অবনতি ঘটুক। এজন্যই এগিয়ে আসতে চাননি কোনো প্রকাশক। চার চারটি প্রকাশনা থেকে অরওয়েলের পাণ্ডুলিপি ফিরিয়ে দিয়েছিলো। অবশেষে ‘সিকার এন্ড ওয়ারবার্গ’ নামের একটি প্রকাশনা সংস্থা বিভিন্ন শর্তে বইটি প্রকাশ করে।
কাহিনী সংক্ষেপ
ম্যানর ফার্মের মালিক মি. জোন্স তার ফার্মের পশুদের ওপর দিনের পর দিন অবিচার করে আসছিলো। সে তাদের সময়মতো কখনো খাবার দিতো না, উপরন্ত প্রতিদিনই পানশালা থেকে মদ্যপ অবস্থায় ফিরে এসে নানা অত্যাচার চালাতো পশুদের ওপর।
এভাবে চলতে থাকে অনেকদিন। একদিন ফার্মের সবচেয়ে জ্ঞানী এবং বয়স্ক শূকর ‘বৃদ্ধ মেজর’ ফার্মের এক নির্দিষ্ট স্থানে সভা আহ্বান করে এবং সেই সভায় ফার্মের সব পশুই উপস্থিত হয়। বৃদ্ধ মেজর একে একে শোনায় তাদের উপর নির্যাতনের ইতিহাস। খামারের প্রত্যেক পশুরই খাবারের অভাবে প্রায় জীর্ণশীর্ণ অবস্থা। বৃদ্ধ মেজর শোনায় মুক্তির কথা, এই শোচনীয় অবস্থা থেকে সারা পশুকূলের মুক্তির কথা। সমস্ত পশুর ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা, মনুষ্যশ্রেণীর বিরুদ্ধে সংগ্রামের কথা। বৃদ্ধ মেজর ফার্মের সকল পশুদের এমন এক ফার্মের স্বপ্ন দেখায়, যে ফার্মে থাকবে না জোন্সের মতো অত্যাচারী মালিক। যেখানে সকল পশু সমান অধিকার পাবে। যেখানে কোনো পশুই ক্রীতদাস থাকবে না। যেখানে সকল পশু থাকবে নগ্ন, নিষ্পাপ এবং মুক্ত। ফার্মের সমস্ত পশু বিপ্লবী চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হয়।
এর কিছুদিন পরই মারা যায় বৃদ্ধ মেজর। কিন্তু থেমে থাকে না বিপ্লবের স্বপ্ন। এই বিপ্লবে নেতৃত্ব দেয় ফার্মের পশুদের মধ্যে সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী শুকর। একদিন সব পশু ঐক্যবদ্ধ হয়ে অতর্কিত আক্রমণের মাধ্যমে ফার্ম থেকে বিতাড়িত করে ফার্মের অত্যাচারী মালিক মি. জোন্সকে। তারপর শুরু হয় সম্পূর্ণ পশুদের রাজ্য। ‘ম্যানর ফার্মের’ নাম পালটে রাখা হয় ‘অ্যানিম্যাল ফার্ম’। আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয় ঘোড়ার জিন, ঠুলি, চাবুক এবং এমন সব জিনিস, যা পশুশ্রেণীর পরাধীনতার ইতিহাস মনে করিয়ে দেয়। খামারের মধ্যে ‘পশুবাদ’ প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করা হয় ৭টি নীতিমালা, যা ফার্মের সকল পশুর জন্য অবশ্য পালনীয়। নীতিমালাগুলো সকল পশুর সামনে ফার্মের দেয়ালে লিখে রাখে শুকরদের মধ্যে মেধাবী শুকর ‘স্নোবল’।
বৃদ্ধ মেজর মারা যাবার পর পশুদের মুক্তির জন্য তার স্বপ্নকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যারা মূল উদ্যোগ এবং বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে থাকে তাদের মধ্যে ‘নেপোলিয়ান’ এবং ‘স্নোবল’ অন্যতম। পশুরা সবাই মিলে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে থাকে। তারা জমিতে ফসল বোনে, পাকা ফসল তুলে নিজেদের মতো করে মাড়াই করে এবং সমস্তটা নিজেদের জন্যই সংরক্ষণ করে রাখে। এখন আর তাদের দুধ কেউ বাজারে বিক্রি করতে পারে না। ডিম বাজারে বিক্রি না করে সংরক্ষণ করে রাখা হয় আগামী দিনগুলোতে বাচ্চা ফুটানোর জন্য। স্নোবলের নির্দেশনায় পশুদের শিক্ষিত করার উদ্দেশ্যে শিক্ষাবিস্তার কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। পশুদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য নেওয়া হয় নানা পদক্ষেপ।
এরই মধ্যে হঠাৎ একদিন কবুতরেরা খবর নিয়ে আসে যে মি. জোন্স বন্দুক সহ কতগুলো মানুষ নিয়ে অ্যানিম্যাল ফার্মের দিকে আসছে। পশুরা সবাই ভীত-সন্তস্ত্র হয়ে পড়ে। তাহলে কি তাদের স্বপ্নের অ্যানিম্যাল ফার্ম পুনরায় হস্তগত করে নেবে অত্যাচারী মি. জোন্স?
ঘটনা ঘনীভূত হয়। একদিন সভায় স্নোবল পশুদের বিদ্যুৎ সুবিধার জন্য বায়ুকল প্রতিষ্ঠার পক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করতে গেলে নেপোলিয়ন তার বিরোধীতা করেন। তার হুঙ্কারে আকস্মিকভাবে কতগুলো হিংস্র কুকুর এসে হাজির হয় যাদের ফার্মের পশুরা এর আগে কেউ কখনো দেখেনি। কুকুরগুলো নেপোলিয়নের নির্দেশে স্নোবলকে হিংস্রভাবে ধাওয়া করে ফার্ম থেকে বিতাড়িত করে দেয়।
এতে ফার্মের অনেক পশুই বিস্মিত হয়। এই কুকুরগুলো ছিলো মূলত নেপোলিয়নের পালিত বিশেষ কুকুরবাহিনী, যাদেরকে নেপোলিয়ন এতদিন এক গুপ্তকক্ষে লালনপালন করে বড় করেছে। ঘটনায় নেপোলিয়নের বিরোধীতাকারীরা কুকুরবাহিনীর হাতে বন্দী হয়। আর যারা বিরোধীতা করার সাহস পায় না তারা মৌনতা অবলম্বন করে। সবাইকে বোঝানো হয়, শুকররা যেহেতু তাদের মেধা দিয়ে অ্যানিম্যাল ফার্ম পরিচালনা করছে তাই তাদের অন্যান্য পশুদের তুলনায় বেশি খাওয়া দরকার।
নেপোলিয়ন ক্রমেই স্বৈরাচারী আচরণ শুরু করে এবং ফার্ম পরিচালনার জন্য একাই সকল সিদ্ধান্ত নেওয়া শুরু করে। অন্যান্য পশুরা শুকরদের এসকল কর্মকান্ডকে সন্দেহের চোখে দেখা শুরু করলে শুকর স্কুয়েলার পশুদের বোঝায় এসব করা হচ্ছে অ্যানিম্যাল ফার্মের মঙ্গলের জন্যই। স্কুয়েলার নেপোলিয়নের সমস্তু কাজকে পশুদের মাঝে মহৎভাবে উপস্থাপন করে। একসময় ফার্মে তীব্র খাদ্যাভাব দেখা দেয়, কিন্তু শুকরদের কোনো অসুবিধা হয় না।
এরই মাঝে একদিন বায়ুকল বিরোধী নেপোলিয়ন নিজের সুর পাল্টে ঘোষণা দেয় বায়ুকল নির্মাণ করতে হবে এবং পশুদের বলে যে, এই বায়ুকলের ধারণা এবং নকশা মূলত তারই। বায়ুকলের খরচ জোগানোর জন্য পশুদের খাবারের বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি দৈনন্দিন কর্মঘণ্টা বৃদ্ধি করা হয়, অথচ শুকরদের খাবারের বরাদ্দ কমে না। তাদের তেমন কাজ করতে হয় না, তারা শুধু তদারকি করে। পরিশ্রমী ঘোড়া বক্সার এবং ক্লোভার উপন্যাসের দুটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। বক্সার বৃদ্ধ হলেও সে নেপোলিয়নের নির্দেশ মতো পশু খামারের উন্নয়নের জন্য প্রাণপণ পরিশ্রম করে যায়। সে-ও স্বপ্ন দেখে এমন এক অ্যানিম্যাল ফার্মের যে অ্যানিম্যাল ফার্মের স্বপ্ন দেখিয়ে গিয়েছিলেন বৃদ্ধ মেজর।
নেপোলিয়নের কথা না শুনলে বিদ্রোহের ফলস্বরূপ বিদ্রোহীদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করা হয়। খামারের পশুদের মাঝে ক্রমেই অসন্তোষ দানা বেঁধে উঠতে থাকে কিন্তু কেউ কিছু বলার সাহস পায় না। ক্রমেই খামারের দেয়াল থেকে একে একে বিলুপ্ত হয় সবগুলো নীতিমালা। একসময় সকল নীতিমালা মুছে ফেলা হয় দেয়াল থেকে।
শুকরেরা নীতিমালার বাইরে গিয়ে মানুষের সাথে নানা কাজে জড়ায়। আর তাদের এ সকল কর্মকান্ডের পক্ষে নেপোলিয়নের তোষামদকারী স্কুয়েলার নিজের মতো করে যুক্তিও প্রদর্শন করে পশুদের কাছে। দিন যায়, ঋতু বদলায়। অনেক কিছুরই পরিবর্তন ঘটে অ্যানিম্যাল ফার্মের, কিন্তু পশুদের দূরাবস্থার কি পরিবর্তন ঘটে?
অ্যানিম্যাল ফার্ম যখন সমাজতান্ত্রিক রাশিয়ার রুপক
জর্জ অরওয়েল অ্যানিম্যাল ফার্মের মাধ্যমে মূলত তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নকে চিত্রিত করেছেন। খামারে প্রতিষ্ঠিত ‘পশুবাদের’ মাধ্যমে মূলত তৎকালীন সমাজতান্ত্রিক রাশিয়ার ‘সমাজতন্ত্র’কেই বোঝানো হয়েছে। মি. জোন্সের মাধ্যমে চিত্রিত করা হয়েছে বিপ্লব পূর্ববর্তী রাশিয়ার অত্যাচারী শাসক জার নিকোলাসকে। পশুদের বিপ্লবের মাধ্যমে চিত্রায়িত করা হয়েছে লেনিনের নেতৃত্বে ১৯১৭ সালের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবকে। খামারের বৃদ্ধ মেজরের মাধ্যমে চিত্রিত করা হয়েছে লেনিনকে, কেউ কেউ বলেন কার্ল মার্ক্সকে। বৃদ্ধ মেজর যেমন পশুদের পশুবাদের স্বপ্ন দেখিয়ে বিপ্লবে উদ্বুদ্ধ করেন এবং বিপ্লবের ফলভোগের পূর্বেই মারা যান, তেমনি লেনিনও সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের নেতৃত্ব দিয়ে বিপ্লব সাধনের পরই পরলোকগমন করেন।
উপন্যাসের স্নোবলের মাধ্যমে সোভিয়েত রাশিয়ার ১৯১৭ সালের অক্টোবর বিপ্লবের অন্যতম সংগঠক ট্রটস্কিকে চিত্রিত করা হয়েছে। আর নেপোলিয়নের মাধ্যমে তৎকালীন সমাজতান্ত্রিক রাশিয়ার স্বৈরাচারী শাসক স্তালিনকে চিত্রিত করা হয়েছে। রাশিয়ায় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব শেষে লেনিনের মৃত্যুর পর যেমন ত্রতস্কিকে স্তালিনের নির্দেশে সোভিয়েত রাশিয়া থেকে বিতাড়িত করা হয় এবং হত্যা করা হয় স্তালিনের বিশেষ গুপ্তবাহিনী কেজিবি দ্বারা।
উপন্যাসের পরিশ্রমী ঘোড়া বক্সারের মাধ্যমে চিত্রিত করা হয়েছে তৎকালীন সমাজতান্ত্রিক রাশিয়ার শ্রমিকদেরকে। বক্সার যেমন একটি স্বপ্নের পশু ফার্মের জন্য প্রাণপণ পরিশ্রম করতো এবং নেপোলিয়নের সব ধরনের নির্দেশ মেনে নিতো, তেমন করতো সমাজতান্ত্রিক রাশিয়ার সাধারণ শ্রমিকেরাও। তারা স্তালিনের সব নির্দেশ একবাক্যে মেনে নিতো শুধুমাত্র সাম্য ও স্বাধীনতার সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। উপন্যাসের বায়ুকলের মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে স্তালিনের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাকে। উপন্যসের নাটকীয় বাকিটা আসে তখন, যখন আপেল আর দুধ নিজেদের জন্য রেখে দেয় শুকরেরা। ১৯২১ সালে এরকম অধিকারবঞ্চিত হওয়ার প্রতিবাদে সোভিয়েত শাসনতন্ত্রের বিরুদ্ধে ধর্মঘট শুরু হয় লেনিনগ্রাদে। আর এই ধর্মঘটের সমর্থনে নাবিক বিদ্রোহ দেখা দেয় ক্রোনস্তাদৃত এ। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের নাবিক বিদ্রোহকে অরওয়েল উপন্যাসে চিত্রিত করেছেন ডিম বিক্রির প্রতিবাদে মুরগিদের বিদ্রোহের মাধ্যমে।
উপন্যাসের আরেক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র স্কুয়েলারের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়েছে তৎকালীন স্তালিনশাসিত সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রচারমাধ্যমকে। তৎকালীন সোভিয়েত প্রচার মাধ্যম যেমন স্তালিনকে বহির্বিশ্বের কাছে মহান শাসকরূপে তুলে ধরতো, তেমনি উপন্যাসের মধ্যে স্কুয়েলারও নেপোলিওনের সমস্ত কাজকে পশুদের কাছে মহানরূপে বিশ্লেষণ করতো।
উপন্যাসের মি. ফ্রেডারিকের মাধ্যমে চিত্রিত করা হয়েছে অ্যাডলফ হিটলারকে। বায়ুকলের যুদ্ধটি সোভিয়েত রাশিয়ার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণের বিশেষভাবে স্তালিনগ্রাদের লড়াইয়ের প্রতিফলন। বায়ুকলের যুদ্ধে যেমন নেপোলিয়ন মি. ফ্রেডারিককে পরাজিত করে, তেমনি স্তালিনগ্রাদের যুদ্ধেও স্তালিন বীরবিক্রমে হিটলারকে পরাজিত করেন। তাসখেলা এবং মদের আসরে মি. ফ্রেডারিক এবং মি. পিলকিংটনের সাথে নেপোলিয়নের বন্ধুত্ব স্থাপনের চিত্র দেখানো হয়, সেই ঘটনার মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে ১৯৪৩ সালের তেহরান কনফারেন্সকে, যেখানে স্তালিন, উইন্সটন চার্চিল, এবং ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট মিলিত হন একটি চিরস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। যে ঘটনাকে অরওয়েল বিদ্রুপ করেন নেপোলিয়ন এবং মি. পিলকিংটনের একে অপরের সাথে তাস খেলায় প্রতারণার ঘটনার মাধ্যমে।
অ্যানিম্যাল ফার্ম যদিও প্রথমত রুশ বিপ্লবের ওপর একটি ব্যাঙ্গাত্মক রচনা, কিন্তু এর আবেদন ব্যাপক। লেখক এ ধরনের বিপ্লবের নাম দিয়েছেন- ‘হিংস্র ষড়যন্ত্রমূলক বিপ্লব’। ক্ষমতালোভীরা অন্ধের মতো ছোটে এই বিপ্লবের পেছনে এবং পরিণতিতে শুধু কর্তৃত্ব বদল হয়, সত্যিকারের সাম্য আসে না। এই বিপ্লবের আমূল পরিবর্তন আসবে তখনই, যখন জনতা সচেতন থাকবে নিজেদের অধিকারের ব্যাপারে এবং সতর্ক থাকবে অনিয়মের ব্যাপারে, যাতে তারা উৎখাত করতে পারে স্বৈরাচারী নেতাদের। পশুদের প্রতীকী ব্যঞ্জনার মধ্য দিয়ে মানব সমাজের এই অন্ধকার চিত্র এত উজ্জ্বলভাবে ফুটে উঠেছে যে গল্প, কৌতুকরস কোনোভাবেই ক্ষুণ্ন করেনি মূল ভাবার্থকে, অরওয়েলও বিন্দুমাত্র বিচ্যুত হননি তার সচেতন লক্ষ্য থেকে। তার কাছে কৌতুক মানে মানুষের বাগাড়ম্বর থামিয়ে দেওয়া এবং এজন্য মানুষকে তিনি উপস্থাপন করেছেন পশুর আদলে।
তিনি বলেছেন, “আমাদের ব্যঙ্গচিত্র পশুদের মাঝে আছে বলেই ওরা এত হাস্যকর।” অরওয়েলের মতে, যেকোনো ধরনের রঙ্গকৌতুক, এমনকি নিখাদ ফ্যান্টাসিরও মূল লক্ষ্য হচ্ছে মানুষকে দুম করে ভূতলে নামিয়ে আনা। অরওয়েল আরেকটি সুন্দর কথা বলেছেন, “মানুষের মর্যাদাহানী করো না, তবে তাকে স্মরণ করিয়ে দাও ইতোমধ্যে তার মর্যাদাহানি ঘটেছে।” অ্যানিম্যাল ফার্ম যেমন ভালো একটি গল্প, তার আক্রমণটাও তেমনি জোরালো। মজার ব্যাপার হলো, একদম শুরুতে কিছু পাঠক এই বইটিকে নিছক একটি জীবজন্তুর গল্প হিসেবে ধরে নিয়েছিল।
ফিচার ইমেজ: meanderingramblings.com