Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বাঘ-কুমিরের সাথে লড়াই করে টিকে থাকার গল্প: ভাটির দেশ

জলে-জঙ্গলের দেশ সুন্দরবন। সে দেশে জলে কুমির, ডাঙায় বাঘ বাস করে। আর আছে বাঘ-কুমিরের সাথে লড়াই করে টিকে থাকা কিছু সর্বহারা মানুষ। মহাকাব্যিক স্বাদের এই উপাখ্যানে উঠে এসেছে ভাটির দেশের সেসব জীবন, জীবিকা, প্রকৃতি, ইতিহাস আর লোকপুরাণের জীবন্ত চেহারা। গল্পে সুন্দরবনের গন্ধ অাছে, অার অাছে নদীর একটা টান। অমিতাভ ঘোষের ‘ভাটির দেশ’ এক ভয়ংকর সুন্দর দেশের গল্প। অাসলে মোদ্দা গল্পটা হলো ভাটির দেশের গোড়াপত্তনের ইতিহাস। এ গল্প জীবনের কথা বলে, দেখায় এক অাদর্শ সমাজ ব্যবস্থার চিত্র।

যেখানে জীবন অন্যরকম; Image Source: Anandabazar

গত শতাব্দীর শেষ দিকের কথা। এই ভাটির দেশে এক অাদর্শ সমাজ গড়ার চেষ্টা করেন এক সাহেব, জন হ্যামিলটন নাম তার। কোম্পানি কাজের জন্য বিলেত থেকে তিনি পাড়ি জমান বঙ্গদেশে। পরিশ্রম করে প্রচুর অর্থ রোজগার করেছেন বটে, কিন্তু অন্য সবার মতো মদিরা অার নারীতে ডুব দিলেন না তিনি। জাহাজের কাজ করতে গিয়ে ভাটির দেশ দু’চোখ জুড়ে দেখেছেন। অার স্বপ্ন বুনেছেন এক অাদর্শ সমাজ গড়ে তোলার। সে স্বপ্নের সূত্র ধরে লেখা এই ভাটির দেশের ইতিহাসের গোড়াপত্তন ঘটে। খুব একটা সুন্দর ছিল না এ পথচলা। কী ঘটেছিল এই চলতি পথে?

উপন্যাস মানে বানানো গল্প অার কল্পলোকের বর্ণনা। বড়জোর খুব বেশি হলে একটা সাদা-কালো জীবনের গল্প। কিন্তু অমিতাভ ঘোষের ‘ভাটির দেশ’ নিছক কোনো গল্প নয়। একটু গল্প, একটু ইতিহাস অার বাকিটা উপন্যাস। তার থেকে বড় কথা ভূত অার ভবিষ্যতের কথা বলে এই গল্প। ঝড়-বন্যায় সুন্দরবন অামাদের রক্ষা করে, কিন্তু অামরা সুন্দরবনের জন্য কতটা ভাবি? সেই সুন্দরবন এলাকায় যাদের বসবাস তাদের কথা কতটা জানি?-এসব প্রশ্নও আসে পাঠকমনে, ভাটির দেশ পড়ার সময়। সময় যখন নিথর হয়ে যায় ভয়ের ধাক্কায়, তখন কী ঘটে সেখানে, কী হয় সেসব গল্পেরা? সেসব গল্পেরা ডানা বেঁধেছে এই উপন্যাসের পরতে পরতে।

যে বই থেকে অনুবাদ করা হয়েছে; Image Source: The Wandering Humanitarian

১৯০৩ সালের কথা, সুন্দরবন মানে ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের বাপের জমিদারি। শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই সত্যি। কিন্তু হ্যামিলটন সেসব কেয়ার করেন না। তিনি সরকারের কাছ থেকে দশ হাজার একর জমি কিনে ফেললেন এবং ঘোষণা করলেন, যে এখানে থাকবে, তাকে বিনে পয়সায় জমি দেওয়া হবে। শুধু গতরে খেটে নিজের অন্ন ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু এখানে কোনো জাতি, ধর্ম, উঁচু-নিচু প্রভেদ চলবে না। মানুষ তখন খেতে পায় না অবস্থা, ওদিকে অাবার জমিদারি প্রথায় প্রজারা দিশেহারা। দলে দলে মানুষ অাসতে লাগল সুন্দরবনের দ্বীপগুলোতে। নৌকা, ডিঙি, সাঁতরে- যে যেভাবে পেরেছে, এসেছে এখানে। কিন্তু পরিশ্রমই কি বাদাবনের ভাগ্য ফেরাতে পেরেছে?

মানুষ খেতে পায় না; শিক্ষার আলো নেই, কী হবে এই মানুষদের ভবিষ্যৎ! লোনা মাটিতে ফসল হয় না। কেউ বাঘের পেটে যায়, তো কেউ কুমিরের পেটে। এভাবে চলতে থাকে বাদাবনের জনজীবন। ঠিক সে সময় এই বাদাবনে অাগমন ঘটে এক দেবদূত দম্পতির। সারা জীবন লেনিন পাঠ করা, সমাজতন্ত্রের গীত গাওয়া নির্মলের ভাবোদয় হয় এখানে এসে। কাজ শুরু হয় একটা স্কুলের শিক্ষকতা দিয়ে। তার স্ত্রী নীলিমা কাজ করে মহিলাদের অাত্মোন্নয়নে। অক্লান্ত পরিশ্রম অার ধৈর্যের ফলে গড়ে উঠতে থাকে সমাজটি। খুব একটা সহজ ছিলো না এই পথচলা। তাদের পরিশ্রমে গড়া সমাজ এখন ঐ অঞ্চলের অাদর্শ।

অনেকদিন পর একটি চিঠি পাওয়া যায়, চিঠির উপর নাম লেখা ‘কানাই’। নির্মলের লিখে যাওয়া এই চিঠিতে কী অাছে? যৌবনে কবিতা-গল্প লিখে খ্যাতির অাশা ছিল তার, কিন্তু এ কি তেমন কিছু? নীলিমা ডেকে অানে কানাইকে। শহর ছেড়ে প্রকৃতির মাঝে নদী বনের দেশে চলে অাসে কানাই। চিঠি খুলে তাজ্জব বনে যায় সে। এ কোনো চিঠি নয়, নয় গল্প-কবিতা। এ যেন এক ইতিহাস। ১৯৭৯ সালের এক গণহত্যার কথা অাছে এখানে। বাঙালি উদ্বাস্তু অার ভারত সরকারের কাছ থেকে পলায়ন করে অাসে এ বনে। দলিত বা হরিজন এই মানুষদের কি সেই ইতিহাস, কী অাছে এখানে লেখা? এই রহস্যঘেরা চিঠির ভবিষ্যতই বা  হয়েছিল?

ভাটির দেশের উপাখ্যান; Image Source: Amar Boi

অন্যদিকে বিদেশ থেকে দেশে পাড়ি জমায় পিয়া। গন্তব্য সুন্দরবন, উপকূলীয় অঞ্চলে ডলফিনদের উপর গবেষণা করা। ইংরেজি ছাড়া কোনো ভাষা জানে না সে। শৈশব-কৈশোর ঐ বিলেতে, তাই বাংলাটা শেখা হয়নি। এই গ্রাম্য পরিবেশ কেমন ছিল পিয়ার জন্য?  যাত্রাটা সহজ নয়, তবে সুন্দর; ভয়ংকর সুন্দর!

ওদিকে লুসিবাড়িতে নির্মল, নীলিমা মাসির বাদাবন ট্রাস্ট আর অন্যদিকে পিয়ার যাত্রা- দুয়ে মিলে চলতে থাকে উপন্যাসের ট্রেন। যাত্রাবিরতি অাছে, কিন্তু গন্তব্যের শেষ নেই। হয়তো শেষ অাছে, কিন্তু গন্তব্য যে অজানা পথে। পথিমধ্যে বিপদসংকুল বন, নদীর ঢেউ অার বাদাবনের ইতিহাস। সাবলীল বর্ণনায় বর্ণিত হয়েছে উপন্যাসের প্রেক্ষাপট। বনবিবির অজানা অধ্যায়, সুন্দরবনের জনজীবন, লোনা পলির গল্প। উপন্যাসের এই ইতিহাস পাঠে অাপনাকে স্বাগতম।

লেখক অমিতাভ ঘোষ; Image Source: Amitavghosh.com

ঔপন্যাসিক এ উপন্যাসের চরিত্র এবং স্থানের নামকে কাল্পনিক বলেছেন, কিন্তু ইতিহাসকে বলেছেন সত্য। উপন্যাস যেভাবে লেখা হয়েছে, ঠিক সেভাবেই একদিন গড়ে উঠেছিল সেখানকার সমাজ ব্যবস্থা। লেখকের জ্যাঠামশাই ছিলেন হ্যামিলটনের জমিদারির ম্যানেজার। সে সুবাদে তার জানা হয় এই অঞ্চলকে। মূল উপন্যাস অবশ্য ইংরেজি ভাষায় লেখা। কিন্তু সে ইংরেজি থেকে বাংলা করেছেন অচিন্ত্যরূপ রায়। মজার ব্যাপার হলো, এ উপন্যাসের বাংলা করার জন্য অনুবাদককে বহুবার সুন্দরবন ঘুরিয়েছেন লেখক। পরিচয় করিয়েছেন ওখানকার জেলে, শিক্ষক, সাধারণত মানুষদের সাথে। ওখানকার পরিবেশকে দেখিয়েছেন খুব কাছ থেকে। এবং লেখক নিজেও শব্দ অনুচ্ছেদ পরিমার্জন করেছেন বহুবার। তাই, এই বাংলা অনুবাদও একটি মূল উপন্যাসের মহিমাই রাখে।

বইটি অনলাইনে কিনতে চাইলে ক্লিক করতে পারেন নিচের লিংকে-

https://cutt.ly/UfjXzkE (বাংলা)

https://cutt.ly/9fjXxo5 (ইংরেজি)

This is a Bengali language article. It is a review of a book named 'Bhatir Desh' which is a bengali translation of the book 'The Hungry Tide' by Amitav Ghosh. The book was translated by Kanai Dutt.

Featured Image: Amar boi

Related Articles