সুপারম্যানের ব্ল্যাক স্যুটের আদ্যোপান্ত

মেট্রোপলিসের আকাশে স্বতঃস্ফূর্তভাবে উড়ে বেড়ানো লাল-নীল কস্টিউম সম্বলিত সুপারম্যানের সাথে মোটামুটি সবাই পরিচিত। কিন্তু লাল-নীলের আবরণ থেকে বেরিয়ে এসে শরীরে কালো রঙের পোশাক জড়ালে কি পাল্টে যাবে এই সুপারহিরোর চিরাচরিত চিত্রকাব্য? ১৯৯৩ সালে ডিসি কমিকস থেকে প্রকাশিত দ্য ম্যান অব স্টিল কমিকসের ২৫ নম্বর ইস্যু ‘রেইন অব সুপারম্যান’-এ সর্বপ্রথম ব্ল্যাক স্যুটে মোড়ানো সুপারম্যানের দেখা পায় কমিক পাঠকরা। ডেথ অব সুপারম্যান, ওয়ার্ল্ড উইথআউট সুপারম্যান-এর রেশ ধরেই নির্মিত হয়েছে বিখ্যাত এই কমিক উপাখ্যান। প্রিয় সুপারহিরোকে সেলুলয়েডের পর্দায় দেখার জন্য উদগ্রীব হয়ে ছিল সুপারম্যানের ভক্তকুল। যার ফলেই সুপারম্যানের ব্ল্যাক স্যুট সম্বলিত একটি অ্যানিমেটেড মুভি মুক্তি দেয়া হয়। এরপর থেকে বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন কারণে সুপারম্যানের ব্ল্যাক সুটের ইস্যু উঠে এসেছে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে। রূপালী পর্দায়ও এর অভিষেক ঘটানো হয়েছে কয়েকবার। ডিসি অ্যানিমেটেড ইউনিভার্স, অ্যারোভার্স, এবং ডিসি এক্সটেন্ডেড ইউনিভার্সের সর্বশেষ সংযোজন ‘জ্যাক স্নাইডার’স জাস্টিস লিগ’  সিনেমাতেও দেখা মিলেছে সুপারম্যানের বিখ্যাত সেই ব্ল্যাক স্যুটের। 

ব্ল্যাক স্যুটে সুপারম্যান; Image Source: DC

দ্রুত সূর্যরশ্মি শোষণ

ক্রিপ্টোনিয়ানরা সূর্য থেকে শক্তি শোষণ করতে সক্ষম। এক্ষেত্রে তাদের শরীর ব্যাটারির মতো সূর্য থেকে চার্জ সংগ্রহ করে। কাল-এলের শরীরে বিদ্যমান ক্রিপ্টোনিয়ান কোষের কারণেই সে সূর্য থেকে শক্তি শোষণ করতে পারে। ব্ল্যাক স্যুটে আলাদা ধাঁচের একটা শোষণ ক্ষমতা আছে, যা কাল-এলের শক্তি শোষণের হার ত্বরান্বিত করে।

ব্ল্যাক কস্টিউমে সুপারম্যান; Image Source: Art Station

আরোগ্য লাভে ব্ল্যাক স্যুটের ভূমিকা

কমিকে প্রাচীন ক্রিপ্টোনিয়ান দৈত্য ডুমসডের সাথে সুপারম্যানের মহাকাব্যিক এক লড়াই অনুষ্ঠিত হলে সেখানে নাটকীয়ভাবে প্রাণস্পন্দন থেমে যায় সুপারম্যানের। ওখানে সুপারম্যান ঠিক মারা যায় না, একেবারে ক্ষীণ হয়ে আসে তার হৃদস্পন্দনের গতি। কারণ, হলুদ সূর্য যতদিন থাকবে, সুপারম্যান ততদিন মরবে না। তার হৃদস্পন্দন এতটাই মন্থর হয়ে যাবে যে, আসলে মনে হবে সে মারা গেছে। কমিক অনুযায়ী, সেসময় ক্রিপ্টোনিয়ান এক রোবট তাকে কবর থেকে তুলে নিয়ে আসে, রিজেনারেশন স্যুট পরিয়ে রিকভারি সেলের মধ্যে ঢুকিয়ে রাখে। এরপর তাকে ফোর্ট্রেস অব সলিচ্যুডে রিজেনারেশন সুট/ব্ল্যাক সুট পরিয়ে রিকভারি সেলে রাখা হয়। ব্ল্যাক স্যুট পরিধানের মাধ্যমেই দ্রুত হারানো সকল শক্তি পুনরুদ্ধার করতে পারে সে।

আহত ক্রিপ্টোনিয়ানদের জন্য ব্ল্যাক স্যুট একপ্রকার ইনকিউবেটরের মতো কাজ করে। তবে, ব্ল্যাক স্যুটের বদৌলতে সুপারম্যান শুধু নিজেকে দ্রুত চাঙা করে নিতে পারে। সে স্বাভাবিকভাবে যতটুকু শক্তি শোষণ করতে সক্ষম, এর বাইরে কোনো শক্তি শোষণ করতে পারবে না।

ব্যাটম্যান ভার্সাস সুপারম্যান সিনেমায় মৃত সুপারম্যান; Image Source: Warner Bros

সিনেমায়/ডিসিইউতে দেখানো ব্ল্যাক স্যুটের সম্ভাব্য অরিজিন

প্রশ্ন জাগতে পারে, শুধুমাত্র ফোর্ট্রেস অব সলিচ্যুডে প্রবেশের পরই ক্লার্ক কেন্ট কেন ব্ল্যাক স্যুটের দেখা পেল? এই ব্ল্যাক স্যুট ক্রিপ্টন গ্রহে সুপারম্যানের পরিবার, হাউজ অব এল-এর চিহ্ন বহন করে। এছাড়াও, এটা তার ট্র্যাডিশনাল কস্টিউমের মতো কিছু বহির্জাগতিক উপাদান দিয়ে তৈরি। তাই ধরে নেয়া যায়- এর সৃষ্টি ক্রিপ্টনেই। সিনেমাটিক ভার্সনে সুপারম্যানের বাবাকেও ব্ল্যাক স্যুট পরিধান করতে দেখা গেছে। ২০১৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ‘ম্যান অব স্টিল’-এ জর-এলের গায়ে যে কস্টিউম দেখা যায়, তা ছিল সাঁজোয়া পরিচ্ছদের সংমিশ্রিত এক সংস্করণ।

জর-এল; Image Source: Warner Bros

সম্ভাবনা ধরে মিলিয়েই নেয়া যায়, কাল-এলের এই ব্ল্যাক কস্টিউমের প্রকৃত উদ্ভাবক তার বাবা জর-এল। এছাড়া জর-এল ক্রিপ্টনের তুখোড় একজন বিজ্ঞানী হওয়ায়, সেই সম্ভাবনার পালে হাওয়া লাগে আরও প্রবলভাবে। বহরে করে কাল-এলকে পৃথিবীতে পাঠানোর সময় সন্তানের আশু বিপদের কথা ভেবে জর-এল হয়তো বিকল্প হিসেবে একটা স্যুটের ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন। যদিও এটা ক্যাননিক্যাল সুপারম্যানের স্টোরি নয়, তবে ডিসিইউতে তা কোনোপ্রকার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ছাড়াই যুক্ত করা যাবে।

বাবার হলোগ্রামের সাথে কাল-এল; Image Source: Warner Bros
অ্যান্টি-লাইফ ইকুয়েশনের সামনে ডার্কসেইড; Image Source: Screen Rant

ফ্ল্যাশপয়েন্ট স্টোরিলাইনে ব্ল্যাক-স্যুট

কমিকের ইতিহাসে ফ্ল্যাশপয়েন্টের স্টোরিকে গুরুত্বপূর্ণ এক বিপ্লবই বলা চলে। এটা নতুন এক ক্যাননিক্যাল ইউনিভার্স ‘The New 52’-এর পথ সুগম করে দেয়ায় আমূল পরিবর্তন এসেছিল ডিসির গুরুত্বপূর্ণ সকল সুপারহিরোর চরিত্রে।

চারিত্রিক রদবদলের বেড়াজাল ছিড়ে বের হতে পারেনি স্বয়ং সুপারম্যানও। সেই গল্পে তার বহর ক্যানসাসের বদলে পতিত হয় মেট্রোপলিস শহরে। সেখানে সুপারম্যান ব্ল্যাক স্যুট পরিহিত ছিল। এছাড়াও, এই ফ্ল্যাশপয়েন্ট স্টোরি-লাইনের মাধ্যমেই আভাস পাওয়া গেছে যে, ডিসি এক্সটেন্ডেড ইউনিভার্সে প্রতিটি চরিত্রের ব্যতিক্রমী সংস্করণ আসার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।

ফ্ল্যাশপয়েন্টে সুপারম্যান; Image Source: Warner Bros

পৃথিবীতে ডার্কসাইডের আগমনী বার্তা

সুপারম্যানের মতো সুপারহিরোর অতিমানবীয় শক্তি যদি পৃথিবীর বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়, তবে কেমন বিধ্বংসী হবে তার পরিণাম? যদি শক্তিশালী কোনো ভিলেন ধ্বংস সাধনের জন্য নিজ দলে ভিড়িয়ে নেয় ক্রিপ্টনের শেষ বংশধরকে? এ রকম কিছু আকাশকুসুম কল্পনা ও প্রশ্ন বাস্তবে উঠে এসেছে কমিক বইয়ের রঙিন পাতায়।

ডিসি কমিকস ২০১৩ সালে আর্থ ২-এ ডার্কসাইড সেনাদলের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবার পাশাপাশি তুলে আনে এক নতুন ক্রিপ্টোনিয়ান চরিত্রকেও। সেখানে মহাজগতের ত্রাস হিসেবে খ্যাত ডার্কসাইড সুপারম্যানের এক ক্লোন তৈরি করে, যে মূলত তার ধ্বংসাত্মক মনোভাবের জন্য ‘ব্রুটাল’ নামে অধিক পরিচিত ছিল। সেই সুপারম্যানকে ডার্কসাইড পুরোপুরি বশীভূত করে ফেলে। আর সুপারম্যান ডার্কসাইডের প্রতি হয়ে ওঠে অতন্দ্র প্রহরীর মতো অনুগত। পরিধেয় হিসেবে সে ব্ল্যাক স্যুটই বেছে নিয়েছিল, যদিও তা সুপারম্যানের আসল ব্ল্যাক স্যুট থেকে ছিল ভিন্ন ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন।

জ্যাক স্নাইডার’স জাস্টিস লিগ –এর কল্যাণে সিনেপ্রেমীরা এখন একটু হলেও ইভিল সুপারম্যানের সাথে পরিচিত। ‘ব্যাটম্যান ভার্সাস সুপারম্যান‘ সিনেমায় ব্যাটম্যানের ড্রিম সিকুয়েন্স, সুপারম্যানকে পুনরুজ্জীবিত করার সময় ফ্ল্যাশের ফিউচার ইমাজিনারি, জ্যাক স্নাইডার’স জাস্টিস লিগের শেষ দিকে ব্যাটম্যানের আরেকটি নাইটমেয়ার- প্রতিবারই ইভিল বা করাপ্ট সুপারম্যানের আভাস পাওয়া গেছে। তাই, একদিক থেকে সুপারম্যানের ব্ল্যাক স্যুট পৃথিবীতে ডার্কসেইডের হামলার পূর্বাভাসের অশনি সংকেত দেয়।

বেপরোয়া ব্রুটাল সুপারম্যান ছাড় দেয়নি ডক্টর ফেইটকেও; Image Source: DC

খলনায়ক

আর্থ প্রাইম ইনফিনিটি আর্থের প্রি-ক্রাইসিসে সুপারম্যান প্রাইমের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছিল। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া, তার অরিজিন স্টোরি মোটামুটি আসল সুপারম্যানের অরিজিনের অনুরূপ। ব্যতিক্রমী দিকটাই তাকে আমাদের সামনে চির পরিচিত ক্লার্ক কেন্টের থেকে খানিকটা আলাদা রূপে তুলে ধরেছিল।

শুরুতে সে খলনায়ক হিসেবে জীবনযাপন শুরু করেনি। কিন্তু দুই ক্রাইসিস স্টোরির মাঝের সময়ে সবকিছু পাল্টে যায় নাটকীয়ভাবে। রোষাবিষ্ট সুপার বয় প্রাইম ক্রোধে আরক্ত হয়ে একসময় ভয়ংকর অগ্নিমূর্তির রূপ ধারণ করে। ক্ষ্যাপা ষাঁড়ের মতো সে তার সকল ক্ষোভ ও জেদের ঝাল মেটায় পুরো ইউনিভার্সের উপর। তার এই ধ্বংসযজ্ঞ থামানোর জন্য বাধ্য হয়ে থাকে সূর্যের মধ্যে বন্দি করে রাখতে হয়েছিল।

প্রাইম হলো ক্রিপ্টোনিয়ানদের শক্তিশালী এক সংস্করণ। একজন প্রাইমের নিকট পুরো ল্যান্টার্ন কর্পসকে ধসিয়ে দেয়ার পাশাপাশি, একটা গ্রহকে কক্ষপথ বিচ্যুত করা বাঁ-হাতের খেল মাত্র। সুপারম্যানের ঐ প্রাইম ভার্সন নিজ হাতে বানানো কালো স্যুটই পরিধান করত। সাইকোপ্যাথ এই সুপারহিরো এতটাই শক্তি অর্জন করেছিল যে, সে অনায়াসে পুরো জাস্টিস লীগকে টক্কর দেয়ার ক্ষমতা রাখত।

লোয়েস অ্যান্ড ক্লার্ক

২০১৫ সালের অক্টোবরে প্রকাশ হওয়া সুপারম্যান: লোয়েস অ্যান্ড ক্লার্ক কমিক বুক দর্শক ও সমালোচক মহলে ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়ে নিয়েছিল। কনভারজেন্স ইভেন্ট পরিসমাপ্তি ঘটার আগমুহূর্তে ব্যারি অ্যালেন, সুপারগার্ল, প্যারালাক্স, সুপারম্যান, লোয়েস আর তাদের ঔরসজাত সন্তান জোনাথান অ্যান্টি-মনিটরকে রুখে দেয়ার উদ্দেশ্যে অতীতে ভ্রমণ করে। সেই মিশনে তারা সফলতার মুখ দেখেছিল। কিন্তু এর ফলে পুনর্জন্ম হয় মাল্টিভার্সের। সুপারম্যান আর লোয়েস তৈরি হওয়া মাল্টিভার্সের নতুন প্রাইমারি আর্থে থেকে যাওয়ার ব্যাপারে মনস্থির করে।

ক্লার্ক কেন্ট ও লোয়েস দুজনেই সিদ্ধান্ত নেয়, তারা নিজেদের আগের পরিচয় গোপন রাখবে। আগের মতোই সুপারম্যানের গুরু ও লঘু দায়িত্বগুলোতে ব্রত থাকে। তবে তা সম্পূর্ণ গোপনে। Author X ছদ্মনামের আড়ালে লোয়েস লেন বের করতে থাকে অনেক বই, যা অপরাধীদের মুখোশ উন্মোচনে ব্যাপক সহায়তা করে। এদিকে, জোনাথন তার বাবা-মায়ের আসল পরিচয় বা এসব কর্মকাণ্ডের কথা একটুও জানত না।

এই কাহিনীতে ব্ল্যাক স্যুট পরিহিত সুপারম্যানের মুখে দাড়ি গজিয়ে উঠতে দেখা যায়। একটা জিনিস এখানে জানিয়ে রাখা ভালো, অ্যারোভার্সের কালো স্যুট পরিহিত সুপারম্যান এই চরিত্রের ব্যতিক্রমী সংস্করণ (অল্টারনেট ভার্সন) না-ও হতে পারে। সুপারগার্ল টিভি সিরিজের সিজন ২-এ ফোর্ট্রেস অব সলিচ্যুডে সুপারম্যানের ওই ব্ল্যাক স্যুট দেখা গিয়েছিল। সুপারম্যান তখন ব্যাখ্যা দেয়, নিজের পরিচয় গোপন করার জন্যই সে এই পোশাকের আশ্রয় নিয়েছে।

‘সুপারম্যান: লোয়েস এন্ড ক্লার্ক’ কমিকের একটি দৃশ্য; Image Source: DC Comics

ফাইনাল নাইট

নিজের মৃত্যু ও পুনরুজ্জীবন সম্বন্ধীয় ঘটনাপ্রবাহ ঘটার পাঁচ বছর পর কাল-এলকে আবারও খানিক সময়ের জন্য ব্ল্যাক-স্যুট পরতে দেখা যায়। ১৯৯৭ সালে মুক্তি পাওয়া অ্যাকশন কমিকসের ৭২৯ নাম্বার ইস্যুতে এই কাহিনী উঠে এসেছে। ১৯৯৬ সালে ডিসি কমিকসের লাইন-ওয়াইড ক্রসওভার ইভেন্ট ফাইনাল নাইট –এ সুপারম্যানের সাথে ডেথ অব সুপারম্যান এর চেয়ে একটু ব্যতিক্রমী আচরণ করা হয়েছে। ডেথ অব সুপারম্যান কমিকসে সুপারম্যানের মৃত্যু ঘটলেও ফাইনাল নাইটে সে জীবিত ছিল। শুধুমাত্র সে হারিয়েছিল তার অসম পর্যায়ের দুর্দমনীয় শক্তি।

সান-ইটারদের (একপ্রকার অস্ত্র, যা দিয়ে মূলত নক্ষত্র ধ্বংস করা হয়) সাথে বিরামহীন যুদ্ধের ফলে প্রচুর শক্তিক্ষয় ঘটে সুপারম্যানের। তখন তার শরীরে একটা গাড়ি শূন্যে ভাসানোর মতো শক্তি পর্যন্ত মজুদ ছিল না। নিউ গডদের সাহায্যে রিজেনারেশন স্যুট হিসেবে খ্যাত ব্ল্যাক স্যুটের মাধ্যমেই সুপারম্যান তখন তার হারানো শক্তি ফিরিয়ে এনেছিল।

ব্যাটম্যান বিয়ন্ড

পরবর্তীতে সুপারম্যানকে কালো স্যুটে আবারও দেখা যায় ২০০০ সালের নভেম্বরে ব্যাটম্যান বিয়ন্ড-এর একটি এপিসোডে। সুপারম্যানের এই বিয়ন্ড সংস্করণের অভিষেক ঘটে দ্য কল নামক দুই খণ্ডের এক এপিসোডে। সেখানে সুপারম্যান নতুন ব্যাটম্যানকে জাস্টিস লিগে শামিল করার জন্য অনবরত চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে। তবে সুপারম্যানের রিজেনারেশন স্যুট সাধারণত কালো আর রূপালী রং খচিত হলেও, এই সিরিজে তা ছিল কালো এবং সাদা। স্যুটের ডিজাইন ভিন্ন হবার পাশাপাশি এর লোগোও ছিল আলাদা।

সুপারম্যান বিয়ন্ড; Image Source: Warner Bros.

ডিসিইউতে প্রথম দর্শন

২০১৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ডিসি এক্সটেন্ডেড ইউনিভার্সের প্রথম ইনস্টলমেন্ট ম্যান অব স্টিল সিনেমার মাধ্যমেই ব্ল্যাক স্যুটের ধারণা পুরোপুরিভাবে উঠে আসে দর্শকদের কাছে। সেখানে জেনারেল জড চেয়েছিল পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকে ক্রিপ্টনের বায়ুমণ্ডলে রূপান্তরিত করতে। সেজন্য সুপারম্যানের সাথে জেনারেল জড বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। সেসময় সুপারম্যান এক স্বপ্নের মাধ্যমে দেখা পায় পোস্ট-অ্যাপোক্যালিপ্টিক পৃথিবীর, যেখানে সে ডুবে যাচ্ছে কঙ্কালের মহাসমুদ্রে। অবাক করা বিষয় হলো, সেসময় সুপারম্যান ব্ল্যাক স্যুট পরিহিত অবস্থায় ছিল।

ম্যান অব স্টিল সিনেমায় ব্ল্যাক স্যুটে সুপারম্যান; Image Source: Warner Bros.

দূরদর্শী জ্যাক স্নাইডার ডিসিইউয়ের প্রথম ইনস্টলমেন্ট থেকেই চৌকস ভঙ্গিতে ব্ল্যাক স্যুট সম্পর্কে দর্শকদের একটু একটু ধারণা দিয়ে যাচ্ছিলেন। ব্যাটম্যান ভার্সাস সুপারম্যান  সিনেমায় সুপারম্যানের প্রয়াণের পর স্নাইডারের পরিকল্পনা ছিল, তিনি জাস্টিস লিগে ব্ল্যাক স্যুটের মাধ্যমে রাজসিকভাবে সুপারম্যানের প্রত্যাবর্তন ঘটাবেন। তখন দর্শকরা হেনরি ক্যাভিলকে ব্ল্যাক স্যুটে দেখার জন্য মুখিয়ে ছিল। কিন্তু অসমাপ্ত জাস্টিস লিগের দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার পর, এই ব্ল্যাক কস্টিউমসহ তার তৈরি করা আরও অনেক ছান্দসিক পরিকল্পনা সিনেমা থেকে সরিয়ে ফেলে প্রোডাকশন হাউজ। জশ হুয়েডনকে এনে পরিচালনার বাকি কাজটুকু সামলে নেয় ওয়ার্নার ব্রাদার্স। তিনি ব্ল্যাক স্যুটের অংশটি সিনেমা থেকে বাদ দিয়ে লাল-নীল কস্টিউম সম্বলিত সুপারম্যানকে দর্শকদের সামনে উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন। ২০১৮ সালে বিষয়টি নিয়ে জাস্টিস লিগ সিনেমার কস্টিউম ডিজাইনার মাইকেল উইলকিনসন এক সাক্ষাৎকারে বলেন,

সুপারম্যানের প্রত্যাবর্তনের জন্য প্রথমদিকে ব্ল্যাক স্যুটের সিদ্ধান্তই গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু নতুন পরিচালক (জশ হুয়েডন) আসার পর আগের স্ক্রিপ্ট কাটছাট করে অনেক কিছু বাদ দেয়ার পাশাপাশি নতুন কিছু জিনিস ঢোকানো হয়। তখন পরিচালকের মনে হলো সুপারম্যানের লাল-নীল ক্লাসিক স্যুটই সিনেমার গল্প ও স্ক্রিপ্টের সাথে খাপ খাবে বেশি।

সেজন্য ২০১৭ সালে মুক্তি পাওয়া জাস্টিস লিগ মুভির হুয়েডন কাটে ব্ল্যাক স্যুটের দেখা পায়নি দর্শকেরা। সেই হতাশার ফাটল জ্যাক স্নাইডার অবশ্য ২০২১-এ পূরণ করে দিয়েছেন শ্রমলব্ধ হাতে। জ্যাক স্নাইডার’স জাস্টিস লিগ  সিনেমায় আপাদমস্তক ব্ল্যাক স্যুট পরিহিত সুপারম্যান দর্শকদের আকাশচুম্বী প্রত্যাশার পারদ মিটিয়েছে সফলতার সাথেই।

জ্যাক স্নাইডার’স জাস্টিস লিগ মুভিতে ব্ল্যাক স্যুটে সুপারম্যান; Image Source: Warner Bros.

গতানুগতিক ধারার সুপারম্যানের মধ্যে ভিন্নতা নিয়ে এসে মন্দ করেনি এই ব্ল্যাক স্যুট। বরং নতুনত্বের আভাস নিয়ে আসা সুপারম্যানের এই স্যুট ছিল নতুন ধারার এক সুপারম্যানের প্রবর্তক। ব্ল্যাক কস্টিউম দ্বারা সুপারম্যান তার শক্তি দ্রুত ফিরে পাওয়ার মাধ্যমে অধিষ্ঠিত হয় সিংহাসনে। যেহেতু এই ব্ল্যাক স্যুট সুপারম্যানের উত্থানের সাথে জড়িত, তাই ডিসি কমিকসের ইতিহাসে এই পোশাক গুরুত্বপূর্ণ, অর্থবহ, ও মহিমান্বিত এক দায়িত্ব পালন করছে।

Related Articles

Exit mobile version