“I’m going to tell you a story about a man. His name is Bond, James Bond.”
শন কনারি, রজার মুর, পিয়ার্স ব্রসনান কিংবা নীল চোখের সাথে রূঢ় চেহারার ড্যানিয়েল ক্রেইগের নাম আমরা সবাই শুনেছি। তবে সেলুলয়েড জগতে তারা সবাই একটি নামেই পরিচিত- বন্ড, জেমস বন্ড! আপনি চাইলেও তাদের ভিন্ন কোনো চরিত্রে কল্পনা করতে পারবেন না। এর পেছনে একটি কারণ হচ্ছে বন্ডের আগে তাদেরকে আর কোনো বিখ্যাত চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায়নি।
তবে সবচেয়ে বড় কারণ হলো সেই ষাটের দশক থেকেই জেমস বন্ড চরিত্রের জন্য এমন কোনো অভিনেতাকে বেছে নেয়া হয়েছে, সিনেমার জগতে যার পরিচিতি ছিল তুলনামূলকভাবে কম। স্টুডিওর ধারণা, বন্ড চরিত্রের জন্যে বেছে নেয়া অভিনেতা যদি বন্ড চরিত্রের থেকেও বেশি সুপরিচিত হয়, তাহলে দর্শকদের কাছে ফ্র্যাঞ্চাইজির চেয়ে ঐ অভিনেতার সুখ্যাতি বেশি প্রতিফলিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
শন কনারি আর রজার মুর থেকে শুরু করে জর্জ লেজেনবি, টিমথি ডালটন, পিয়ার্স ব্রসনান এবং ড্যানিয়েল ক্রেইগ- কেউই বন্ড হওয়ার আগে তেমন বিখ্যাত ছিলেন না। তারা প্রত্যেকেই ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ মর্যাদাটা পেয়েছেন বন্ড চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমেই।
এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন, আমাদের আজকের বিষয় জেমস বন্ড। এখন পর্যন্ত অফিসিয়াল বন্ড সিনেমাগুলোতে অভিনয় করেছেন মোট ছয় জন অভিনেতা। আমরা আজকে আলোচনা করবো জেমস বন্ডের এই অভিনেতাদের নিয়েই।
শন কনারি
জেমস বন্ড হিসেবে শন কনারির অভিষেক হয়েছিল ১৯৬২ সালের দিকে, ‘ডক্টর নো’ সিনেমার মাধ্যমে। এর আগে বন্ড নিয়ে কয়েকটি সিনেমা তৈরি হলেও, তার অভিনীত এই চলচ্চিত্রটিই হচ্ছে প্রথম অফিসিয়াল জেমস বন্ড, যার প্রোডাকশনের দায়িত্বে ছিল ‘ইয়ন এন্টারপ্রাইজ’। এই ব্রিটিশ প্রোডাকশন কোম্পানি সেই ষাটের দশক থেকে এখন পর্যন্ত মোট ২৪টি বন্ড সিনেমা নির্মাণ করেছে।
প্রথম বন্ড হিসেবে দর্শক থেকে শুরু করে সমালোচকদের কাছেও ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছিলেন শন কনারি। তবে অবাক করা বিষয় হচ্ছে, বন্ডের লেখক ইয়ান ফ্লেমিং প্রথম দিকে কনারিকে বন্ড হিসেবে নিতে চাননি। লেখক বলেছিলেন, কনারিকে দেখতে একজন প্রবৃদ্ধ স্ট্যান্টম্যানের মতো লাগতো এবং তার মধ্যে কোনো চাকচিক্য ছিল না। তবে নিজের অভিনয়শৈলীর জোরে প্রথম ছবি দিয়ে তার মন জয় করে নেন কনারি। এমনকি লেখক খুশি হয়ে পরের বইতে কনারির সাথে মিল রেখে বন্ডেরও স্কটিশ পিতৃ-পরিচয় দেন।
কনারি ছিলেন প্রথম জেমস বন্ড এবং বেশিভাগ ভক্তদের মতে তিনিই সর্বশ্রেষ্ঠ। তার অভিনীত বন্ডের মধ্যে একধরনের রুক্ষতা ছিল, যা পরের কোনো বন্ডের মধ্যে ছিল না, কেবল একজন বাদে (পরে আসছি তার কথায়)। তবে বন্ড হিসেবে তার মধ্যে রসিকতার একটু কমতি ছিল, তার অধিকাংশ কৌতুকই ছিল সংক্ষিপ্ত, আকস্মিক এবং নির্ভর করতো তার অভিব্যক্তির উপর। তা-ও সকল বন্ড অভিনেতার মধ্যে একমাত্র তার সাথেই উপন্যাসের বন্ডের বেশিরভাগ মিল পাওয়া যায়।
১৯৬২ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত মোট ৬টি সিনেমাতে বন্ড হিসেবে ছিলেন শন কনারি; সেগুলো হচ্ছে, ‘ডক্টর নো’, ‘ফ্রম রাশিয়া উইদ লাভ’, ‘গোল্ডফিঙ্গার’, ‘থান্ডারবল’, ‘ইউ অনলি লিভ টোয়াইস’, ‘ডায়মন্ডস আর ফরেভার’।
জর্জ লেজেনবি
কনারি এবং কনারির ৬টি বন্ড সিনেমার মাঝামাঝি সময় একটি মাত্র সিনেমাতে জেমস বন্ড চরিত্রে অভিনয় করেন অস্ট্রেলিয়ান অভিনেতা জর্জ লেজেনবি।
কনারি এবং কনারি? হ্যাঁ ভুল শোনেননি, ১৯৬৭ পর্যন্ত ৫টি জেমস বন্ড মুভি করার পর শন কনারি বন্ড চরিত্র থেকে সরে দাঁড়ান। তাই ১৯৬৯ সালে মুক্তি পাওয়া ‘অন হার ম্যাজেস্টি’স সিক্রেট সার্ভিস’ সিনেমাতে বন্ড হিসেবে অভিনয় করেছিলেন জর্জ লেজেনবি। পরে ১৯৭১ সালে কনারি আবার ফিরে আসেন এবং তার শেষ বন্ড সিনেমা ‘ডায়মন্ডস আর ফরেভার’-এ অভিনয় করেন।
এখন পর্যন্ত ল্যাজেনবি একমাত্র নন-ব্রিটিশ অভিনেতা যিনি বন্ড চরিত্রে অভিনয় করেছেন। অনেকেই মনে করেন তার সিনেমাটি ভালো হলেও, বন্ড হিসেবে লেজেনবি ছিলেন জঘন্য। তবে আসলে তিনি ততোটা খারাপও ছিলেন না, যতোটা না বলা হয়। তার বন্ড চরিত্রের মধ্যে দারুণ এক দৃঢ়তা ছিল এবং অন্যান্য বন্ড অপেক্ষা একটু বেশি সংবেদনশীল ছিলেন তিনি। তবে সেটাই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কারণ একটু ব্যতিক্রমী ভাব আনতে গিয়ে তিনি বরং মানুষকে ভুল পথে নিয়ে গেছেন। শত সমালোচনার পরেও স্টুডিও তাকে দিয়ে আরও ৬টি সিনেমা বানাতে রাজি ছিল, কিন্তু তার প্রথম বন্ড সিনেমা দিয়ে তেমন একটা সাড়া জাগাতে না পেরে লেজেনবি পরে আর বন্ড চরিত্রে অভিনয় করতে রাজি হননি।
রজার মুর
আন-অফিসিয়াল বন্ড টেলিভিশন সিরিজের পাশাপাশি কনারি আর লেজেনবি বন্ড চরিত্র থেকে সরে দাঁড়ানোর পর নির্মাতারা ঠিক করলেন, সিনেমার ধারায় কিছু পরিবর্তন নিয়ে আসবেন। তাই লেজেনবির ব্যর্থতার পর কনারি আরো একটি সিনেমার জন্য ফিরে আসলেও শেষমেশ জেমস বন্ডের ম্যান্টল তুলে নেন ইংলিশ অভিনেতা স্যার রজার মুর। তার অভিনীত বন্ড সিনেমাগুলো ছিল কিছুটা কমেডি ধাঁচের এবং লাইট-হার্টেড। প্রায় ১২ বছর তিনি চরিত্রটির সাথে যুক্ত ছিলেন এবং অভিনয় করেছেন মোট ৭টি সিনেমাতে।
রজার মুর অভিনীত চলচ্চিত্রগুলো শুরুর সময় উতরে গেলেও পরে দ্রুত জনপ্রিয়তা হারাতে শুরু করে। বিশেষ করে ‘মুন রেকার’ ‘অক্টোপুসি’ এবং ‘এ ভিউ টু কিল’ এর মতো দুর্বল সিনেমার কারণে ফ্র্যাঞ্চাইজটি অনেকটা সেল্ফ-প্যারোডি পর্যায়ে পড়ে যায়।
মুরের বন্ড চরিত্রের সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে, তিনি খুব ভালো রসিকতা করতে পারতেন। আর তাকে সবচেয়ে সুদর্শন বন্ড বলা হলেও তার চরিত্রে কিছু গুরুতর সমস্যা ছিল। প্রথমত, তার বন্ড চরিত্রটি ছিল পুরোপুরি গ্যাজেট নির্ভর। ‘কিউ’র গ্যাজেটগুলো না থাকলে তার পক্ষে একশন সিকুয়েন্সগুলোতে টিকে থাকা কষ্টকর হয়ে যেতো। দ্বিতীয়ত, মারামারির দৃশ্যগুলোর বেশিরভাগ সময়ই তাকে দেখা যায় বেদমভাবে পিটুনি খেতে কিংবা দেয়ালের গায়ে ছিটকে পরতে। অবশ্য শেষমেশ গায়ে কোনো আঁচড় ছাড়াই তিনি লড়াই জিততে সক্ষম হতেন!
তার অভিনীত বন্ড সিনেমাগুলো হচ্ছে- ‘লিভ এন্ড লেট ডাই’, ‘দ্য ম্যান উইথ গোল্ডেন গান’, ‘দ্য স্পাই হু লাভড মি’, ‘মুনরেকার’, ‘ফর ইউর আইস অনলি’, ‘অক্টোপসি’ এবং ‘এ ভিউ টু কিল’।
টিমোথি ডালটন
রজার মুরের দীর্ঘ বন্ড অ্যাডভেঞ্চারের পর ১৯৮৭ সালে মুক্তি পাওয়া বন্ড মুভিতে অভিনয় করেন ব্রিটিশ অভিনেতা টিমোথি ডালটন। ডালটনের হাত ধরেই বন্ড আবার তার গুরুগম্ভীর ধারায় ফিরে আসে। তার প্রথম সিনেমাটি বাণিজ্যিকভাবে সফল হয় এবং সমালোচকদের কাছেও ব্যাপক প্রশংসা পায়।
যদিও এখনও অনেকে মনে করেন, ডালটন তার পূর্বসূরিদের মতো করে বন্ডকে ফুটিয়ে তুলতে পারেননি। তাছাড়া তিনি রজার মুরের মতো ততোটা সুদর্শনও ছিলেন না এবং তার বন্ড ছিল অনেকটা হাস্যরসহীন। তবে তিনি মুরের মতো গ্যাজেট নির্ভর ছিলেন না। তার বন্ড ছিল অনেকটা কঠিন হৃদয়ের এবং বাস্তবধর্মী।
তিনি মোট দুটি বন্ড সিনেমাতে অভিনয় করেন। এর একটি হচ্ছে ‘দ্য লিভিং ডে-লাইটস’ এবং অপরটি হলো ‘লাইসেন্স টু কিল’।
পিয়ার্স ব্রসনান
১৯৮৭ সালে নির্মিত বন্ড সিনেমাতে এই আইরিশ অভিনেতার অভিনয় করার কথা থাকলেও শিডিউলজনিত জটিলতার কারণে রোলটি চলে গিয়েছিল টিমোথি ডালটনের হাতে। এর প্রায় ৮ বছর পর মুক্তি পায় বন্ড হিসেবে তার প্রথম চলচ্চিত্র ‘গোল্ডেন আই’। একদম প্রথম সিনেমা দিয়ে বন্ড ভক্তদের মনে জায়গা করে নেন পিয়ার্স ব্রসনান।
ব্রসনান অভিনীত প্রত্যেকটি সিনেমাতেই তিনি ধারাবাহিকভাবে শক্তিশালী অভিনয় করেছেন। কিন্তু দ্বিতীয় কিস্তি থেকেই তার সিনেমাগুলো প্রাঞ্জলতা হারাতে শুরু করে। তার পরের তিন চলচ্চিত্র বক্স অফিসে মোটামুটিভাবে আলোড়ন সৃষ্টি করলেও, সমালোচকদের মাঝে সেভাবে সাড়া জাগাতে পারেনি।
তেমন শক্তিশালী কিছু সিনেমা উপহার না দিতে পারলেও বন্ড হিসেবে ব্রসনান চমৎকারভাবে মানিয়ে গিয়েছিলেন। তার বন্ড এডাপশন ছিল অনেকটা কনারি এবং মুরের মিশ্রণ। তবে রজার মুরের দুর্বলতাগুলো তার মধ্যে অনুপস্থিত ছিল। সুদর্শন চেহারার পাশাপাশি তার রসিকতাবোধও ছিল প্রকট আবার সিরিয়াস মুহূর্তগুলোতে তার মধ্যে ফুটে উঠেছে টিমোথি ডালটনের ভয়ংকর রূপ।
তার অভিনীত বন্ড সিনেমাগুলো হচ্ছে- ‘গোল্ডেন আই’, ‘টুমরো নেভার ডাইজ’ ‘দ্য ওয়ার্ল্ড ইজ নট এনাফ’ এবং ‘ডাই এনাদার ডে’।
ড্যানিয়েল ক্রেইগ
নোলানের ব্যাটম্যানের পাশাপাশি ইথান হান্ট, জেসন বোর্নের মতো আধুনিক স্পাইদের ভিড়ে বন্ড সিনেমাগুলো যখন হারিয়ে যেতে শুরু করে, তখন এর কাঠামোগত পরিবর্তন ছিল অনিবার্য। তখন বন্ড হিসেবে পর্দায় হাজির হন ব্রিটিশ অভিনেতা ড্যানিয়েল ক্রেইগ। তার হাত ধরেই বন্ড বের হয়ে আসে গত কয়েক দশকের একঘেয়েমি থেকে এবং উপনীত হয় একবিংশ শতাব্দীতে।
ক্রেইগকে ভক্তরা প্রথমে বন্ড হিসেবে মেনে নিতে পারেনি। নেবেই বা কীভাবে? এর আগে কখনও সোনালি চুলের কাউকে বন্ড হিসেবে কাস্ট করা হয়নি। তাছাড়া অন্যান্য বন্ডদের উচ্চতা যেখানে ৬ ফুট ২ ইঞ্চির কাছাকাছি, সেখানে তার উচ্চতা মাত্র ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি। পেটানো শরীরের সাথে চেহারার রুক্ষতাও কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল তার জন্যে।
কিন্তু বন্ড হিসেবে তাকে অ্যাকশনে দেখার পর দর্শকদের মন গলতে শুরু করে। বিশেষ করে তৃতীয় সিনেমা দিয়ে বন্ড হিসেবে শন কনারির জনপ্রিয়তার ভাগ বসান ক্রেইগ।
একদম সেই প্রথম ছবি থেকেই ক্রেইগের মধ্যে একটু ব্যতিক্রম ‘আউট অফ দ্য বক্স’ কিছু ছিল, যা অন্য বন্ডদের ছিল না। প্রথম ছবিতে তার উপর এত স্পটলাইট এবং প্রেশার থাকার পরেও তার অভিনয় দেখে মনেই হবে না যে, বন্ড হিসেবে সেটা ছিল তার প্রথম চলচ্চিত্র। এখন পর্যন্ত মোট ৪টি চলচ্চিত্রেই তিনি অভিনয় করেছেন খুব সাবলীলভাবে। সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে, তার চরিত্রের মধ্যে এক ধরনের ধৃষ্টতা আছে, যা অন্য কোনো বন্ডের মধ্যে নেই। তার গোয়েন্দাগিরির ধরন, কমব্যাট স্টাইল, চরিত্রের সহনশীলতা, বডি মুভমেন্ট, পারসোনালিটি- সবকিছুই অন্যান্য বন্ডদের থেকে অনেক ব্যতিক্রমী। তার বন্ড চরিত্রে একধরনের ‘ব্যাডগাই-মার্কা’ ভাব রয়েছে, যার কাছে পিয়ার্স ব্রসনান কিংবা অন্য বন্ডদের নেহায়েত ‘চার্মিং’ একজন স্পাই মনে হয়। হয়তো সেটাই তাদের চরিত্রের বৈশিষ্ট্য ছিল। কিন্তু ‘চার্মিং বন্ড’ থেকে ক্রেইগের ‘ব্যাডএস বন্ড’ই যেন একটু বেশি বাস্তবসম্মত।
তার বন্ড নিয়ে ক্রেইগ নিজেই বলেছেন-
“বন্ড চরিত্রে অভিনয় করার সময় আমি প্রায়ই নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করি ‘আমি কি আদৌ ভালো মানুষ নাকি একজন খারাপ মানুষ, যে কিনা ভালোর পক্ষে লড়ছে?’ কারণ সবকিছুর পরেও বন্ড হচ্ছে একজন অ্যাসাসিন। আমি এর আগে এমন কোনো চরিত্রে অভিনয় করিনি, যার অন্ধকার দিকগুলো ঘাঁটানো উচিৎ হবে না। সিনেমার শেষে নয়, আমি মনে করি সিনেমার মাঝামাঝি সময়েই আপনি নিজেকে প্রশ্ন করবেন ‘কে এই বন্ড?’”
পরিচালক মার্টিন ক্যাম্পবেল এবং অভিনেতা ড্যানিয়েল ক্রেইগ মিলে বন্ডকে তুলে ধরেছেন নতুন প্রজন্মের উপযোগী করে।তার অভিনীত বন্ড সিনেমাগুলো হচ্ছে- ‘ক্যাসিনো রয়্যাল’, ‘কোয়ান্টাম অফ সোলেস’, ‘স্কাইফল’, ‘স্পেকট্রার’ এবং বন্ড হিসেবে তার শেষ সিনেমা ‘নো টাইম টু ডাই’।
এদের মধ্যে কার অভিনীত বন্ড সেরা?
যারা আজ অবধি জেমস বন্ডের চরিত্রায়ন করেছেন, নিঃসন্দেহে তাদের প্রত্যেকেই ছিলেন দারুণ প্রতিভাবান, সম্ভাবনাময় এবং অতি অবশ্যই যোগ্য। তবে প্রশ্ন যখন সিনেমা জগতের সবচেয়ে পুরনো চরিত্রটি নিয়ে, তুলনাটা তাই চলে আসাটাই স্বাভাবিক।
কে সেরা বন্ড, এ নিয়ে জল্পনাকল্পনার অন্ত নেই। অধুনা পরিচালিত বেশ কিছু জরিপে যেমন উঠে এসেছে বর্তমান ‘ব্যাডঅ্যাস বন্ড’ ড্যানিয়েল ক্রেইগের নাম, তেমনি সর্বোচ্চসংখ্যক বন্ড সিরিজের মুভিতে অভিনয় করা রজার মুরও শীর্ষে রয়েছেন বেশ কিছু জরিপে। আবার বিশেষ শ্রেণীর কাছে শন কনারিও বেশ জনপ্রিয়।
তাছাড়া প্রথম বন্ড হিসেবে শন কনারির প্রভাব-প্রতিপত্তি যেন অন্যদের থেকে একটু বেশিই; তবে দীর্ঘদিন পরে সেখানে ভাগ বসিয়েছেন ড্যানিয়েল ক্রেইগ। তিনি প্রমাণ করে দিয়েছেন, তিনিই সময়োপযোগী বন্ড। এছাড়া মাঝামাঝি সময়ে পিয়ার্স ব্রসনানসহ আরও অনেকেই বন্ডের ম্যান্টল হাতে তুলে নিলেও কেউই সেভাবে সাড়া জাগাতে পারেননি। সেকারণে সেরা বন্ড নিয়ে প্রশ্ন উঠলেই নিতে হবে কনারি এবং ক্রেইগের নাম। তবে ক্রেইগের জেমস বন্ড কনারি থেকেও যেন আরো বেশি জটিল এবং বাস্তবসম্মত। এমনকি ল্যাজেনবি বাদে অন্য সকল বন্ড অভিনেতারাও তার বন্ডের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
দিনশেষে, বন্ডদের জনপ্রিয়তা এবং শ্রেষ্ঠত্বের বিশেষ কোনও মানদণ্ড নেই, যুগে যুগে বন্ড চরিত্রাভিনেতার সাথে সাথে বদলেছে বন্ডের হালচালও। যুগ পরিবর্তনের সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বদলেছেন বন্ডও, হয়ে উঠেছেন আরও প্রাণোচ্ছল, ভয়াবহ, ধুরন্ধর। ‘ডক্টর নো’ মুক্তির এতগুলো বছর শেষে আজও বন্ডের আবেদন বিন্দুমাত্র কমেনি। ‘বন্ড’ নামটি এখনও আমাদের রক্তে অ্যাড্রেনালিন রাশ এনে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট, কেননা- দ্য নেইম ইজ বন্ড, জেমস বন্ড!