Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

কেয়ার অভ কাঞ্চারাপালেম: জীবনের চার অধ্যায় এক গল্পে

‘ভালোবাসা’ শব্দের অর্থ খুঁজতে গিয়ে কবি-সাহিত্যিকদের বেগ পেতে হলেও, ব্যাপারটা কিন্তু খুব সহজ। ভালোবাসা মানে, পছন্দের মানুষটার ডায়াবেটিসের ওষুধের কথা মনে করিয়ে দেওয়া। ভালোবাসা মানে, উঁচু পাহাড়ে ওঠার সময়ে সাথে চিনির শরবত রাখা, যেন সাথের মানুষটার সুগার লো হয়ে অসুস্থ হয়ে না যায়। 

ভালোবাসা আসে বিভিন্ন রূপে, বিভিন্ন বয়সে। প্রেমে ব্যর্থ হয়ে প্রেমিক কিংবা প্রেমিকা যেমন শোকে বছরের পর বছর কাটিয়ে দিতে পারে, আবার সেই ব্যর্থ প্রেমিক-প্রেমিকার জীবনেও আবার একদিন ভালোবাসা আসে। শোকের কারাগারে বন্দি মানুষটা মুক্ত বাতাসের স্বাদ অনুভব করতে পারে।

কেয়ার অফ কাঞ্চারাপালেম সিনেমার পোস্টার; ইমেজ সোর্সঃ filmibeat.com
কেয়ার অভ কাঞ্চারাপালেম সিনেমার পোস্টার; Image Source: filmibeat.com

ভারতের বিশ্বখাপাটনাম শহরের ছোট্ট একটি বসতি কাঞ্চারাপালেম। এ এলাকার জনবসতি খুব সামান্য বলেই, একজনের বাড়ির হাঁড়ির খবর আরেক বাড়িতে ঠিকই আসে। এ শহরেরই একজন বাসিন্দা, ৪৯ বছর বয়সী রাজু। অবিবাহিত এবং চাকরিজীবী। সমস্যার শুরু এখানেই। ৫০ এর কাছাকাছি বয়স, কিন্তু এখনো তার জীবনে কোনো নারীর আনাগোনা দেখতে পায় না কেউ। গ্রামের সবার চিন্তা যেন এই রাজুকে নিয়েই। কেন রাজু অবিবাহিত, এ চিন্তায় গ্রামের সবাই চিন্তিত। সবাই মিলে ছোটখাট গোলটেবিল বৈঠকেও বসা হয় এ বিষয়ে।

“তবে কি রাজু সমকামী? নাকি পুরুষত্বের অভাব?”

রাজুর বন্ধুরা আর রাজু নিজেও এ প্রশ্নের উত্তরে সকলকে আশ্বস্ত করতে পারল না। রাজুর বিয়ে করতেই হবে, সে যে করেই হোক না কেন। চিরকুমার এবং নিজের জীবন নিয়ে সন্তুষ্ট রাজুর জীবনে হস্তক্ষেপ করতে বড় থেকে ছোট কেউই যখন কমতি রাখছিলেন না, জীবনের এই মোটামুটি শেষ অধ্যায়ে রাজুর জীবনেও গুটিগুটি পায়ে প্রেম আসে।  

রাজুর জীবনে আসা প্রেমের মূহুর্ত; ইমেজ সোর্সঃ Suresh Productions
রাজুর জীবনে আসা প্রেমের মুহূর্ত; Image Source: Times of India

এলাকার মদের দোকানে কাজ করে গেদ্দাম নামের ছেলেটা। বয়স তিরিশের কাছাকাছি। এ দোকানেই কিছুদিন পরপর মুখে নেকাপ পরে এক মেয়ে মদ কিনতে আসে। মেয়ের দিকে একবার তাকাতেই ছন্নছড়া গেদ্দামের জীবনে তোলপাড় শুরু হয়। শুধু চোখে চোখ রেখেই গেদ্দাম তার প্রেমে মত্ত। বছরখানেক প্রেমে হাবুডুবু খেলেও সাহস করে কখনো বলতে পারেনা। প্রেমের প্রস্তাব তো দূরের কথা, কখনো দুটো কথাও গেদ্দামের মুখে আসেনি। তবে একদিন সাহস সঞ্চয় করেই ফেলল। দোকান থেকে মদের বোতল প্যাকেটে ভরে মেয়ের হাতে ধরিয়ে দিয়ে, অন্যদিনের মতো ফিরে যায়নি। আজ সে তার মনের কথা বলেই ছাড়বে বলে পণ করে। পিছু নিল মেয়ের, শুধু সময়ের অপেক্ষা। একসময় গেদ্দামের উপস্থিতি বুঝতে পেরে দাঁড়িয়ে যায় মেয়েটি। তারপর?

সালেমার সাথে গেদ্দামের দেখা; ইমেজ সোর্সঃ Suresh Productions
সালেমার সাথে গেদ্দামের দেখা; Image Source: Suresh Productions

গেদ্দামের দিকে তাকিয়ে নেকাপ খুলে ফেলে সে। গেদ্দাম তাকিয়ে দেখে, মেয়েটি আর কেউ নয়, সালেমা। সালেমা সেই দেহব্যবসায়ী নারী, যাকে তার বন্ধুরা কিছুদিন আগে ক্ষণিকের আনন্দের জন্য বাসায় নিয়ে এসেছিল। তার এই পরিচয় দেখে গেদ্দাম ভ্যাবাচেকা খেলেও পিছু হটেনি। কিন্তু একজন দেহব্যবসায়ীকে ভালোবাসা চাট্টিখানি কথা নয়। এর জন্য গেদ্দাম-সালেমা, দুজনকেই বেশ মূল্য চুকাতে হয়।

সবেমাত্র বয়ঃসন্ধিকাল পার করেছে জোসেফ। নিজের এলাকায় বেশ পরিচিত, গুণ্ডা-মাস্তান পরিচয়ে। এলাকার শীর্ষস্থানীয় বড় ভাইয়ের বিশ্বস্ত মানুষ জোসেফের পরিচয় হয় ব্রাহ্মণ ঘরের মেয়ে ভার্গবীর সাথে। কাঠখোট্টা জোসেফের জীবনে এবার সুন্দর দিন আসতে শুরু করে। ধীরে ধীরে মন গলতে থাকে জোসেফের। ভার্গবীর মতো রগচটা মেয়েটাও জোসেফের প্রেমে ডুবসাঁতার দিতে থাকে।  

ভার্গবী ও জোসেফ; ইমেজ সোর্সঃ Suresh Productions
ভার্গবী ও জোসেফ; Image Source: Suresh Productions

ধর্ম, জীবন, চলাফেরা সবকিছুতেই বিশাল ফারাক থাকলেও; কথায় আছে, প্রেম অন্ধ। ঠিক তেমনটাই হয়ে গেল এই দুজনের বেলায়। একসাথে সমুদ্র দেখা, বান্ধবীর বাসার নাম করে ভার্গবীর দেখা করতে আসা, একসাথে ধর্মপ্রচার শুনতে যাওয়াও যেন জীবনের অংশ হয়ে উঠছিল। কিন্তু একটা স্থায়ী ব্যবস্থা করতে হবে। ভার্গবীর বাবার কাছে গিয়ে ভার্গবীকে নিজের করে নেওয়ার অনুমতি নেওয়ার জন্য, জীবনের একটা গতি করতে হবে জোসেফের। একটা সম্মানজনক আয়ের উৎস দরকার। বড় ভাইয়ের সাহায্যে সেটার বন্দোবস্তও হয়ে গেল। এবার শুধু সময়ের অপেক্ষা। কাঞ্চারাপালেম ছেড়ে দূরে গিয়ে চাকরি শুরু করল জোসেফ। সারাদিন পরিশ্রম আর রাতে এসে ভার্গবীর স্মৃতি নিয়ে, এভাবেই দিন কাটতে থাকে। কিন্তু শেষমেশ কি তাদের মিলন হয়, নাকি বিচ্ছেদেই ঘটে সমাপ্তি?

কাঞ্চারাপালেমের সবচেয়ে ভালো প্রতিমা নির্মাতার ছেলে সুন্দরমের সাথে একই ক্লাসে পড়ে সুনিতা। সুনিতাকে দেখলেই যেন সুন্দরমের চারপাশটা গোলাপি আভায় ভরে যায়। আবার সুনিতার প্রিয় রঙটাও গোলাপি। সুনিতার মনের কোনায় একটু স্থান পাওয়ার জন্য সুন্দরমের দৌড়ঝাঁপের কমতি নেই। কখনো গান করা, কখনো সুনিতার পছন্দের রঙের জামা পরা; শুধুমাত্র একবার সুনিতার সাথে বন্ধুত্ব হয়ে যাক, এতেই খুশি সুন্দরম।

ওদিকে গণেশ চতুর্থির দিন ঘনিয়ে আসছিল। সুন্দরমের বাবার কাছে এক বিশাল গণেশের প্রতিমার তৈরির কাজের প্রস্তাব আসে। এ প্রতিমার পারিশ্রমিক দিয়েই অনেকদিনের অভাবের লাঘব ঘটবে এবার। দিন-রাত এক করে বাবা যেখানে প্রতিমা বানাতে ব্যস্ত, সুন্দরমের সেখানে দেবতার কাছে একটা প্রার্থনা, সুনিতার মনে একটুখানি জায়গা। শেষ পর্যন্ত দেবতা তার মনের আশা পূরণ করলেন। সুনিতার মনে জায়গা হলো। কিন্তু ঈশ্বর তাকে একদিক দিয়ে রাজার আসনে বসালেও, আরেকদিক দিয়ে কেড়ে নেন সবটা। কী হয় সুন্দরমের সাথে? 

পরিচালক ভেঙ্কটেশ মাহা; Image Source: Chai Bisket

‘কেয়ার অভ কাঞ্চারাপালেম’ সিনেমার কোনো অভিনেতা-অভিনেত্রীই তেমন পরিচিত মুখ নন। বেশিরভাগ কুশীলবকেই বাছাই করা হয়েছে কাঞ্চারাপালেম গ্রাম থেকে। এ সিনেমা দিয়ে ভেঙ্কটেশ মাহার অভিষেক হয় তেলেগু সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে পরিচালক হিসেবে। ৫০-৬০ লক্ষ রুপি বাজেটের এ সিনেমায় ক্যামেরাম্যান পুরোই পয়সা উসুল কাজ করেছেন। খুব সুন্দরভাবে প্রাকৃতিক আলোর ব্যবহার করে, পুরো সিনেমা জুড়ে একটা ঘরোয়া পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন সম্পাদক। যেন খুব কাছের বা নিজের এলাকার গল্পই দেখছি পর্দায়। জীবনের চার বয়সের চার রকম প্রেমের এই গল্পকে নির্মাতা কীভাবে এক সুতায় গেঁথেছেন, তা জানতে হলে সিনেমাটা অবশ্যই সম্পূর্ণ দেখতে হবে।

This article is in Bangla. It is a review of the movie 'C/o Kancharapalem'. C/o Kancharapalem is a 2018 Telugu-language slice of life anthology film written and directed by debutant Venkatesh Maha. It is produced by American filmmaker Praveena Paruchuri and distributed by Rana Daggubati under the banner of Suresh Productions.

Featured Image: Brown Girl Magazine

Related Articles