বর্তমান বিশ্বের অভাবনীয় উন্নতির পশ্চাতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অবদান অপরিসীম। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সঠিক ও কার্যকরী ব্যবহারের মধ্য দিয়েই মানবজাতি ক্রমশ প্রাচীন যুগ থেকে আধুনিক যুগের দিকে অগ্রসর হয়েছে এবং ধাবিত হচ্ছে উত্তর–আধুনিক (post-modern) যুগের দিকে। কিন্তু একই সঙ্গে এই দীর্ঘ পথ অতিক্রমের সময় প্রযুক্তিগত বিভিন্ন আবিষ্কার মানুষের হাতে তুলে দিয়েছে অপরিসীম ধ্বংস সাধনের ক্ষমতা। এজন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অপব্যবহার এবং সামগ্রিক নেতিবাচক প্রভাব নিয়েও রয়েছে নানান আলোচনা–সমালোচনা।
এই সংক্রান্ত আলোচনা–সমালোচনা যে নতুন শুরু হয়েছে, এমনটা কিন্তু নয়। বহু আগে থেকেই নেতিবাচক বা ধ্বংসাত্মক উদ্দেশ্যে প্রযুক্তির অপব্যবহার নিয়ে সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়ে আসছে। এই সতর্কবাণী একদিকে যেমন রাজনৈতিক বক্তব্য ও আন্দোলন, প্রবন্ধ–নিবন্ধ ও বৈজ্ঞানিকদের ভাষ্যে প্রচারিত হয়েছে, তেমনি সাহিত্যের মাধ্যমেও অনুরূপ সতর্কবাণী ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এরকমই একটি সাহিত্যকর্ম হচ্ছে আনাতোলি দনেপ্রভ কর্তৃক রচিত বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীমূলক ছোটগল্প ‘ক্র্যাবস অন দি আইল্যান্ড’ বা ‘দ্বীপে কাঁকড়া’।
দুজন বিজ্ঞানী জাহাজে চড়ে সমুদ্রের গভীরে অবস্থিত একটি দ্বীপে পৌঁছান। বিজ্ঞানী দুজনের নাম কুকলিং এবং বাড। কুকলিং অপেক্ষাকৃত সিনিয়র এবং বাড জুনিয়র। পরবর্তী ঘটনাক্রম থেকে বোঝা যায় যে, কুকলিং দাম্ভিক ও উচ্চাভিলাষী প্রকৃতির মানুষ এবং বাড তাকে বিশেষ পছন্দ করে না। কিন্তু কুকলিং সিনিয়র হওয়ায় বাডকে তার সকল নির্দেশ মেনে চলতে হয়। কুকলিং ও বাড দুজনেই সামরিক বাহিনীর সদস্য, এবং পরবর্তীতে জানা যায়, তাদেরকে তাদের দেশের নৌ সদর দপ্তর থেকে দ্বীপটিতে প্রেরণ করা হয়েছে।
কুকলিং ও বাড দ্বীপে অবতরণ করার পর জাহাজের নাবিকরা তাদের প্রয়োজনীয় রসদপত্র ও অন্যান্য সামগ্রী জাহাজ থেকে দ্বীপে নামিয়ে দেয়। এর পাশাপাশি তারা নামায় ১০টি ভারী ক্রেট। ক্রেটগুলোতে কী আছে সেটা কেবল কুকলিং জানে, বাড জানে না। সব জিনিসপত্র নামানো শেষ হলে কুকলিং নাবিকদেরকে জাহাজসহ ফিরে যেতে বলে এবং ২০ দিন পর ফিরে আসার নির্দেশ দেয়।
সমুদ্রের মাঝখানে অবস্থিত এই নির্জন, রৌদ্রোজ্জ্বল দ্বীপে কুকলিং কেন এসেছে, বাড সেটা জানে না। কুকলিংকে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে কুকলিং জবাব দেয়, ডারউইনের তত্ত্ব পরীক্ষা করার জন্য তারা সেখানে এসেছে। কুকলিংয়ের উত্তরকে বাড উপহাস হিসেবে ধরে নেয়, কিন্তু পরবর্তীতে বোঝা যায়, কুকলিংয়ের উত্তরটি পুরোপুরি উপহাসমূলক ছিল না। এরপর অবশ্য ক্রেটগুলোতে থাকা জিনিসপত্র নামাতে বাড কুকলিংকে সাহায্য করে। বেশিরভাগ ক্রেটের জিনিসপত্র আর কিছুই না, কেবল বাতিল ধাতু।
অবশ্য ক্রেট থেকে আরো একটি বস্তু বের হয়– একটি ধাতব কাঁকড়া। কুকলিং ও বাড সেটিকে দ্বীপের একপ্রান্তে পানির কাছে রেখে আসে। পরবর্তী দিন সেখানে গিয়ে তারা একটির জায়গায় দুটি ধাতব কাঁকড়া দেখতে পায়। বাড নিশ্চিত ছিল যে, তাকে হতভম্ব করার উদ্দেশ্যে কুকলিং দ্বিতীয় ধাতব কাঁকড়াটি কোথাও লুকিয়ে রেখেছিল। কিন্তু কুকলিং জবাব দেয় যে, প্রথম ধাতব কাঁকড়াটি দ্বিতীয়টিকে তৈরি করেছে!
কুকলিং ব্যাখ্যা করে, এই ধাতব কাঁকড়াগুলো প্রকৃতপক্ষে এক একটি ক্ষুদ্র রোবট, যেগুলোর মূল কাজ বাতিল ধাতু ব্যবহার করে নিজেদের অনুরূপ ধাতব কাঁকড়া তৈরি করা! পানির মাধ্যমে এগুলো তাদের ব্যাটারি পূর্ণ করে এবং সূর্যের আলোয় এগুলোর পিঠে থাকা আয়না ও সিলিকন ব্যাটারির মাধ্যমে এগুলোর শক্তি বিদ্যুতে রূপান্তরিত হয়। এটি তাদের সারাদিন কাজ করার জন্য এবং অ্যাকুমুলেটর চার্জ করার জন্য যথেষ্ট। রাতের বেলায় অ্যাকুমুলেটরে সঞ্চিত শক্তির সাহায্যে এগুলো কাজ চালিয়ে যেতে সক্ষম। আর বালু যেহেতু সিলিকনের একটি অক্সাইড, কাঁকড়াগুলো নিজেদের অভ্যন্তরে বৈদ্যুতিক আর্কের মাধ্যমে বালুকে বিশুদ্ধ সিলিকনে রূপান্তরিত করতে পারে।
বর্ণিত দ্বীপটি লোকচক্ষুর অন্তরালে অবস্থিত ও অত্যন্ত রৌদ্রোজ্জ্বল, সমুদ্রের মধ্যখানে হওয়ায় সেখানে পানির কোনো অভাব নেই এবং সেখানে প্রচুর বালু রয়েছে। এজন্য কুকলিং এই পরীক্ষা করার জন্য দ্বীপটিকে বেছে নিয়েছে। প্রতিটি ধাতব কাঁকড়া যেহেতু নিজের অনুরূপ কাঁকড়া তৈরি করতে সক্ষম এবং দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছে, সেহেতু তারা জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পেতে থাকবে এবং দিন দশেকের মধ্যেই লক্ষ লক্ষ ধাতব কাঁকড়ার সৃষ্টি হবে।
কুকলিং ব্যাখ্যা করে, এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য সামরিক। এই ধাতব কাঁকড়াগুলোর সাহায্যে শত্রুরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে অন্তর্ঘাত চালানো হবে। লক্ষ লক্ষ ধাতব কাঁকড়া শত্রুরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে ছেড়ে দেয়া হবে এবং এই কাঁকড়াগুলো নিজেদের অনুরূপ কাঁকড়া সৃষ্টির প্রক্রিয়ায় সেখানকার সকল ধাতু (যেগুলোর মধ্যে থাকবে ধাতুর তৈরি ট্যাঙ্ক, কামান ও যুদ্ধবিমান) নিঃশেষ করে ফেলবে। এভাবে কোনো যুদ্ধ ছাড়াই শত্রুপক্ষকে পদানত করা সম্ভব হবে। বাডের আর বুঝতে বাকি থাকে না যে, কেন নৌ সচিব কুকলিংয়ের পরিকল্পনায় এত আগ্রহী ছিলেন!
এভাবে এগিয়ে চলে ‘ক্র্যাবস অন দি আইল্যান্ড’ গল্পটির কাহিনী। গল্পটির বর্ণনাভঙ্গি অত্যন্ত প্রাঞ্জল এবং ভাষা অত্যন্ত সহজ, ফলে সাধারণ পাঠকের জন্য খুবই সহজবোধ্য। এটি মূলত একটি বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, কিন্তু বিজ্ঞান সম্পর্কে বিশেষ ধারণা নেই এমন পাঠকও সহজেই গল্পটির বিষয়বস্তু অনুধাবন করতে সক্ষম হবে।
গল্পটির মূল দুই চরিত্র কুকলিং ও বাড। দুজনেই বিজ্ঞানী, দুজনেই সামরিক বাহিনীর সদস্য। কিন্তু দুজনের স্বভাবপ্রকৃতি সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী। কুকলিং দাম্ভিক ও উচ্চাভিলাষী, আর বাড তুলনামূলকভাবে সাধারণ একজন মানুষ। কুকলিং ‘দেশপ্রেমিক’ এবং দেশের স্বার্থে প্রযুক্তির অপব্যবহার করে ভয়ানক অস্ত্রশস্ত্র তৈরি করতে সে বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করেনি। কিন্তু বাডের চরিত্রে মানবিকতাবোধ বেশি পরিস্ফুটিত হয়েছে এবং ধ্বংসের উদ্দেশ্য বিজ্ঞানের এই অপব্যবহারকে সে মন থেকে মেনে নিতে পারেনি। কুকলিংয়ের মধ্যে রয়েছে বাডের প্রতি এক ধরনের অবজ্ঞা, অন্যদিকে বাডের মধ্যে রয়েছে কুকলিংয়ের প্রতি বিতৃষ্ণা। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাড কুকলিংয়ের বিপদে তার দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। বস্তুত গল্পের চরিত্র দুটির মধ্য দিয়ে মানবপ্রকৃতির বৈপরীত্যকেই তুলে ধরা হয়েছে।
গল্পটির লেখক আনাতোলি দনেপ্রভের প্রকৃত নাম আনাতোলি মিৎস্কেভিচ। তদানীন্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের ইউক্রেনীয় সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের দনিপ্রোপেত্রোভস্ক শহর থেকে এসেছিলেন তিনি, এজন্য তার ছদ্মনাম ছিল দনেপ্রভ। পেশায় তিনি ছিলেন একজন পদার্থবিদ, কিন্তু একই সঙ্গে সমান উৎসাহী ছিলেন বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী রচনায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি লাল ফৌজের সদস্য ছিলেন, সুতরাং সামরিক বাহিনী কীভাবে প্রযুক্তিকে ধ্বংসের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে সেটি তার অজানা ছিল না।
গল্পের মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে সামরিক উদ্দেশ্যে, অর্থাৎ ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং এর পরিণাম। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নিজস্ব কোনো সত্তা নেই এবং এজন্য এগুলোর ব্যবহার নির্ভর করে যারা এগুলো ব্যবহার করে তাদের ওপরে। মানুষ চাইলে গঠনমূলক উদ্দেশ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারে, আবার চাইলে ধ্বংসাত্মক উদ্দেশ্যেও এগুলো ব্যবহার করতে পারে। এক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা পুরোপুরি মানুষের নিজের হাতেই ন্যস্ত।
গল্পের কুকলিং চাইলে মাননজাতির কল্যাণের উদ্দেশ্যে তার আবিষ্কারকে ব্যবহার করতে পারত। কিন্তু সেটা না করে সে যুদ্ধ ও ধ্বংসের উদ্দেশ্যে প্রযুক্তিকে ব্যবহার করেছিল। বাস্তবে কিন্তু এই ধরনের ঘটনা অসংখ্য বার ঘটেছে। যেমন: আলফ্রেড নোবেল ডায়নামাইট তৈরি করেছিলেন পাহাড়ি অঞ্চলে রাস্তাঘাট নির্মাণের সময় পথ পরিষ্কার সহজ করার উদ্দেশ্যে, কিন্তু একে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়েছে যুদ্ধের সময় বিস্ফোরক হিসেবে। পারমাণবিক প্রযুক্তির সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন যেমন সম্ভব, তেমনিভাবে মারাত্মক ধ্বংসক্ষমতার অধিকারী পারমাণবিক বোমা তৈরি করাও সম্ভব।
গল্পের কুকলিং শত্রুপক্ষের ধ্বংস সাধনের উদ্দেশ্যে প্রযুক্তিকে ব্যবহার করতে চেয়েছিল, কিন্তু এর শেষ পরিণতি ভালো হয় নি। বাস্তবেও এই ধরনের ঘটনার অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। যেমন: ১৯৪৫ সালের জুলাইয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকো অঙ্গরাজ্যের মরুভূমিতে বিশ্বের প্রথম পরীক্ষামূলক পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এর ফলে আশেপাশের অঞ্চলগুলোতে যে পরিমাণ তেজষ্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে, তার পরিমাণ ছিল নিরাপত্তা সীমার ১০,০০০ গুণ বেশি। এর প্রতিক্রিয়ায় এখন পর্যন্ত অঞ্চলটিতে শিশু মৃত্যুর হার যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য অঞ্চল থেকে অনেক বেশি। অর্থাৎ, মার্কিন পারমাণবিক বোমার প্রথম ভুক্তভোগী হিরোশিমা ও নাগাসাকির বেসামরিক জনসাধারণ ছিল না। মার্কিন শিশুরা ছিল মার্কিনিদের এই অস্ত্রের প্রথম ভুক্তভোগী।
২০১৯ সালের আগস্টে শ্বেত সাগরের তীরে নিয়োনোক্সা নামক স্থানে একটি অস্ত্র পরীক্ষার সময় বিস্ফোরণের ফলে ৫ জন রুশ বিজ্ঞানী নিহত এবং ৩ থেকে ৬ জন গুরুতরভাবে আহত হন। ধারণা করা হয়, ‘৯এম৭৩০ বুরেভেস্তনিক’ পারমাণবিক শক্তিচালিত ও পারমাণবিক অস্ত্রবাহী ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা করছিলেন। এই ধরনের ক্ষেপনাস্ত্র রুশরা বাস্তবে ব্যবহার করবে, এই সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ। কিন্তু ক্ষেপণাস্ত্রটির পরীক্ষা করতে গিয়ে এরই কিছু স্রষ্টার মৃত্যুর ঘটল। এই দুটি ঘটনার মধ্য দিয়ে এটি স্পষ্ট যে, অন্যের ধ্বংস সাধনের জন্য প্রযুক্তির ব্যবহারের ফল বুমেরাং হয়ে দেখা দিতে পারে এবং নিজেদেরই ক্ষতিসাধন করতে পারে। এই বিষয়টি দনেপ্রভের গল্পের অন্যতম একটি উপজীব্য।
সর্বোপরি, দনেপ্রভের গল্পটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৬৮ সালে। সেসময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে পূর্ণ মাত্রায় স্নায়ুযুদ্ধ চলছিল এবং উভয় পক্ষই কে কতটা ধ্বংসাত্মক অস্ত্র নির্মাণ করতে পারে সেই প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছিল। প্রযুক্তিকে তারা ব্যাপকভাবে ব্যবহার করছিল ধ্বংসাত্মক উদ্দেশ্যে, যে প্রক্রিয়া এখন পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। এমন সময়ে রচিত দনেপ্রভের ছোটগল্পটি ছিল এই বাস্তবতারই প্রতিফলন।
দনেপ্রভের গল্পের মূল শিক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে – ধ্বংসাত্মক ও নেতিবাচক উদ্দেশ্যে প্রযুক্তির ব্যবহারের পরিণতি ভালো হয় না এবং এজন্য এটি থেকে বিরত থাকাই উত্তম। কিন্তু মানবজাতি এই শিক্ষা এখন পর্যন্ত অঙ্গীভূত করতে সক্ষম হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয় না, বরং প্রযুক্তির অপব্যবহার আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। শেষ পর্যন্ত এর পরিণতি কী হয়, সেটিই এখন দেখার বিষয়।
বইটি সংগ্রহ করতে
বইয়ের নাম: ক্র্যাবস অন দি আইল্যান্ড
লেখক: আনাতোলি দনেপ্রভ
মূল ভাষা: রুশ
প্রকাশক: মির পাবলিশার্স
প্রকাশকাল: ১৯৬৮